ইখারাণীর কথা অনুযায়ী, সেই দিন থেকে পুলিশ প্রত্যেক রাত্রে গ্রামে টহল দিচ্ছে। কম বয়সী ছেলেপুলেরা দূর গ্রামে পালিয়ে যায় আর মহিলারা গ্রামেই থেকে যায়। “একবার পুলিশ আমাকে মারতেও যায় কিন্তু মনে হয় সঙ্গে বাচ্ছা আছে দেখে মারে না।”, বলে ইখারাণী। এখনও পর্যন্ত একবারই সে গগনের সঙ্গে জেলে দেখা করতে গিয়েছে। আর তাছাড়া সে ঠিক জানেও না গগনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সে বলে, “গগনকে ছাড়া সংসার চালানো কষ্টকর। এক প্রতিবেশীকে দিয়ে আমাদের দোকানের জন্য কেনাকাটা করাচ্ছি। খালি আশা করছি কেএমএসএস একটা ভালো উকিল জোগাড় করে ওকে ছাড়িয়ে আনবে। ও নির্দোষ। ও বাঁধ বিরোধী সভাগুলোতে যেত বটে, কিন্তু আগুন লাগানোর মত কাজ ও কখনও করবে না
দেবো নাথের পরিবার কাছেই ঠেকেরাগুড়ি গ্রামে থাকে। এই গ্রামের কাছেই ট্যাঙ্কারটায় আগুন লাগানো হয়। দেবোর ক্লাস টুয়েলভ পাঠরত বোন পরিস্মিতার কথায় এবং আওয়াজে পরিষ্কার ভয় অনুভব করা যায়। দেবো সুবনসিরি কলেজে স্নাতক স্তরে আর্টসের ছাত্র, আর কাছেই একটা দোকানও চালায়। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় দেবোকে মে ১২ তারিখে তার দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আমি জিজ্ঞেস করি, “দেবো কি জানত যে ওর গ্রেপ্তার হওয়ার আগের রাত্রে ট্যাঙ্কার পোড়ানো হয়েছিল?”
পরিস্মিতা বলে, “আমরা সেরকমই কিছু শুনেছিলাম কিন্তু ও ব্যপারে কিছুই জানতাম না। আমরা এটাও শুনেছিলাম যে পুলিশ কিছু লোককে তুলেওছে কিন্তু দেবো ভেবেছিল যেহেতু ও এই ব্যপারে জড়িত নয় তাই ওর কিছু হবে না আর তাই ও সেদিন দোকানে গিয়েছিল।”
“তোমার কোনো ধারণা আছে ওকে কেন গ্রেপ্তার করা হল?”
“না।”
“দেবো কি কখনো ঘাগোর ক্যাম্পে গিয়েছিল?”
“না।”
“ও কি বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের কোনো সভায় যোগ দিয়েছিল? তোমাদের গ্রামে তো কয়েক মাস আগে খুব বড় মিটিং হয়ে গেল?”
“না।”
“ও কি বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিল?”
“না।”
“বাঁধ তৈরি হওয়ার কথা শুনেছ?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে তো কেএমএসএস-এর মতো সংস্থাদের নাম শুনেছ?”
“না।”
পরিস্মিতা যেভাবে সবকিছু অস্বীকার করছিল তা মেনে নেওয়া কঠিন হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বোধগম্য হয়।
দেবোকে ছাড়ানোর জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় যে ওকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে, সে কথাটা পরিস্মিতাকে বুঝিয়ে দিয়ে আমরা গেলাম রূপহি বালিগাঁও-বোঙ্গালি বস্তি, নবজ্যোতি কামাং-এর সাথে দেখা করতে। ওনার রূপহিতে কিছু জমি আছে আর ওঁর দুই ছেলেমেয়ে এক প্রতিবেশীর তত্ত্বাবধানে ওখানে পড়াশুনা করে। পরে নবজ্যোতি আমাদের বলেছিলেন ওঁর নিজের বাড়ি ছেড়ে এখানে আসতে পারেন না কারন উনি চাকরি করেন ভিমপুরা জুনিয়ার কলেজে আর রূপহি থেকে সেখানে রোজ যাতায়াত করাটা ওনার পক্ষে খুবই ক্লান্তিকর হয়ে দাঁড়াবে।
রূপহি বালিগাঁও-বোঙ্গালি বস্তিতে যাওয়া মানে আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো ক্ষুধার্ত শুয়োরের পাশে কালো কাদায় পড়তে পড়তে এগোনো। অনেক মিশিং পরিবারই শুয়োর পোষে। আগের দিন রাত্রে এলাকায় হঠাৎ বৃষ্টি হওয়াতে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে তৈরি হওয়া ছোট পুকুর বা ঝর্ণা দেখতে সুন্দর লাগে ঠিকই কিন্তু বাইকে করে যেতে গেলে হাঁটু পর্যন্ত পা কাদায় ডুবে যায়।
একই চৌহদ্দির মধ্যে আরও অন্যান্য বাড়ির মত নবজ্যোতি কামাংও ছাং ঘরে থাকেন। অনুমান করা যায় ওখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও থাকেন। ওনার ১৩ বছরের ছেলে পবন সিং বাঁশের নড়বড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। পবন ওর বোনের সঙ্গে রূপহির বাড়িতে থাকত। ওখানেই সে রান্না, খাওয়া, পড়াশোনা সব করত। মে ১২ তারিখ দুপুরে সে না-আলি তিনিয়ালি গিয়েছিল লঙ্কা কিনতে, যখন পুলিশ ওকে ধরে ও মাথার পিছনে বার বার মারতে থাকে। যতক্ষণ পুলিশ ওকে মারতে থাকে ও চুপ থাকে। এর পরে ওকে থানায় নিয়ে গিয়ে দু’ঘণ্টা আটকে রাখে।
নবজ্যোতি বলেন, “আমি অনেক রাত্রে এই ঘটনার কথা জানতে পারি। পুলিশ আমার ছেলেকে ছাড়ার আগে অপেক্ষা করতে থাকে কিছু লোকের কাগজে সই করতে আসার জন্য। ও কি করে ট্যাঙ্কারে আগুন লাগাতে পারে? ও তো একটা বাচ্ছা ছেলে!”
নবজ্যোতি পরের দিন সকালেই ওঁর ছোট মেয়ে আর পবনকে ওঁর কাছে বাড়িতে নিয়ে আসেন। “যেদিন থেকে আমি ওকে বাড়িতে এনেছি, ও বিছানাতেই শুয়ে আছে। কিছুই খেতে চায় না। কোনো রক্ত না পড়লেও আমি বুঝতে পারি ওর মাথা ফুলে আছে। এক স্থানীয় ডাক্তার ভেষজ চিকিৎসা করছে আর তাতে পবন ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছে।”
আমি নবজ্যোতিকে জিজ্ঞেস করি যে ও পুলিশে অভিযোগ করার কথা চিন্তা করছে কিনা। তাতে তিনি হাতজোড় করে প্রায় ভিক্ষা চাওয়ার মত করে বলেন, “আমি সাধারণভাবে জীবন কাটাতে চাই। আমি আমার পরিবারকে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমার খুশী হওয়া উচিত যে ওরা পবনের খুব বেশি ক্ষতি করেনি। যা হয়েছে সেটা সামলে নিতে পারব। আমি জানি যা হয়েছে তা সব ওই বাঁধ আর তার বিরোধী আন্দোলনের জন্য কিন্তু আমি আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি চাই না। আপনারা খোঁজখবর নিতে এসেছেন তার জন্য ধন্যবাদ কিন্তু না, আমরা আর কোনো ঝামেলা চাই না।”
নবজ্যোতি আশা রাখেন যে পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে পবনকে রূপহিতে আগের ইস্কুলে পাঠাতে পারবেন কারন ওটা অনেক ভালো ইস্কুল। ওনাদের আবাসিক গ্রামের ইস্কুলটা প্রায় না থাকার মতই। উনি বলেন, “আমাকে কোনো একটা উপায় বার করতে হবে। আমাদের সবার পক্ষে রূপহিতে গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। এখানে আমার চাকরি আছে, আমার স্ত্রী এবং মেয়েরা এখানে তাঁত চালায়। এখানে আমাদের শুয়োর আছে। হ্যাঁ, আমি পবনের জন্য ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চাই কিন্তু ওকে আবার রূপহিতে ফেরত পাঠাতে ভয় লাগে।”
--x--
মে ১১ এবং ১২ তারিখে যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় তারা হল ভরত সাহু, তারিণী ডেকা, প্রদীপ গগৈ, জুতি গগৈ, নিতুমণি গগৈ, কল্পনা গগৈ, গগন বোরা, ভানু ভুঁইয়া, দেবো নাথ, দীপেন মুদোই, অপুল নাথ, অঘুনা ভুঁইয়া, লক্ষেশ্বরী চুটিয়া ও প্রতিভা চুটিয়া।
পুলিশ যেভাবে প্রদীপ গগৈ আর তার স্ত্রী জুতিকে আক্রমণ করে তাতে স্থানীয় আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে ভয় পেয়ে যায়। ওরা ঘাগোর ক্যাম্পের ঠিক উল্টোদিকে একটা ধাবা চালাত। ওরা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য রান্না করে দিত, যদিও ওদের মেনুর হিসেবেই খাবারের দাম দেওয়া হত। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে গগৈএর ছেলে রূপঙ্কর আর তার বন্ধু ভরত সাহুকে ধরার পর পুলিশ এদের দুজনকে ১১ তারিখ রাত্রে মারধোর করে ও রাস্তায় টেনে আনে। পুলিশ ছোট ছেলেদের মারতে শুরু করতেই গগৈ ওদের দিকে তেড়ে যায় আর তখনই পুলিশ গগৈ আর তার স্ত্রীকে আক্রমণ করে ও গ্রেপ্তার করে। গগৈএর হাত ভাঙ্গে, ভরত গ্রেপ্তার হয় আর রূপঙ্কর নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়।
চুলধোয়া পঞ্চায়েতের (এই পঞ্চায়েতের বিস্তৃতি অনেকটা এলাকা জুড়ে) গ্রামগুলোতে অনেক ঘুরেও কেউ রূপঙ্করের সন্ধান দিতে পারে না। গগৈএর বাবার বাড়ি (রূপঙ্করের দাদু) বাসন্তীপুরে পৌঁছে একটা ঠাণ্ডা ঔদাসিন্য অনুভব করলাম। অনেক জোরজার এবং বোঝানোর পর যে আমরা পুলিশের লোক নই বা আসাম সরকার আমাদের পাঠায়নি, ওনারা রাজি হলেন রূপঙ্করকে ‘খুঁজতে’। কয়েক মিনিট পরে স্থানীয় এক আন্দোলনকারীর সঙ্গে সে এল। সেদিনের ঘটনার পর থেকে কুড়ি বছরের রূপঙ্কর খুবই মানসিক আঘাত ও ভয় পেয়েছে। সঙ্গের ভিডিওতে সে মে ১১ তারিখ রাত্রের সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করে। ও বলে কিভাবে পুলিশ এবং সিআরপিএফ ওকে ও ভরত সাহুকে আক্রমণ করে; কিভাবে অস্ত্রধারী কিছু লোক ধাবার আশেপাশে ওরা যে শুয়োরগুলো পুষছিল সেগুলোকে এমনভাবে মারে যে তাদের পিছনের চামড়া উঠিয়ে নেয়।
যেভাবে গগৈয়ের পরিবার আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে নিজেদের জড়িয়েছে, সেইভাবেই দীপেন মুদোইও যখনই সম্ভব হয়েছে ঘাগোর ক্যাম্পে থেকে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। কাটোরিসাপোরি ভরতপুর গ্রামের বাসিন্দা ৩৫ বছরের দীপেন তার বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে থাকত।
মুদোই-এর বাড়ির বারান্দায় কয়েকজন মহিলা একসঙ্গে বসেছিলেন। এদের মধ্যে একজন ওর বৌদি গীতালি। তিনি বলেন কিভাবে দীপেন আর তার ভাই মনোজ হাজারিকা বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। “দীপেন না-আলি তিনিয়ালির কাছে একটা মুদিখানা চালায়। কখনো কখনো দোকানের কাজ আগে শেষ করলে ঘাগোর ক্যাম্পে গিয়ে কিছু সময় কাটাত বা চেকপোষ্টে গাড়ি যাচাই করার কাজ করত। মে ১১ তারিখ রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়ি আসেনি। আমি ভিতর থেকে এই ভেবে দরজা বন্ধ করিনি যে হয়ত কোনো কারণে ওর আসতে দেরি হবে। পরের দিন সকালে আমরা ওর মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু ফোন ‘সুইচড অফ’ আসতে থাকে। যখন মে ১২ তারিখ দুপুর পর্যন্ত অর কোনো খবর পাইনা তখন চারপাশে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি। আর তখনই আমরা ওর গ্রেপ্তার হওয়ার খবর জানতে পারি। আমাদের চিন্তা হতে থাকে কারন ওই একই সময় আমরা ট্যাঙ্কারে আগুন লাগানোর আর আরও কিছু লোকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাই।”
গীতালি আর মনোজ দীপেনের সঙ্গে একবার জেলে দেখা করতে যান। তখন ও জানায় যে ও ভালো আছে। গীতালির পাশে বসা বয়স্ক মহিলা বলেন, “কিন্তু ওকে বার বার জিজ্ঞেস করলেও আমরা উদ্বিগ্ন হব, এই চিন্তা করে ওকে মারধোরের কথা ও বলবে না।” তিনি আরো বলেন, “ও খুবই চাপা ছেলে। ও যদিও আন্দোলনের একজন কিন্তু ও সেটা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। ও সেটাই করবে যেটা ওকে করতে বলা হয়েছে। ওকে কোনো কিছু করতে বললে সহজেই করে ফেলে। আমি কখনো ওকে রাগতে দেখিনি। এটা অবিশ্বাস্য যে ও ট্যাঙ্কারে আগুন লাগাবে, কারণ আমি শুনেছি ওকে এরকম কিছু একটা করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ও কখনই এ কাজ করতে পারে না। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।”
দিবাকর সইকিয়ার মা ঈলাশীও মনে করেন তাঁর ছেলেকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর ছেলের কেসের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হলেন না। যেভাবে দিবাকরকে গ্রেপ্তার করা হয় তার সঙ্গে মানবাধীকারী ডক্টর বিনায়ক সেনের গ্রেফতারের মিল আছে।
সইকিয়ার বাড়ি এনএইচ ৫২র ওপরে আর সুবনসিরি ব্রীজের থেকে আধ কিলোমিটার দূরে। এখনো পর্যন্ত যত বাড়িতে গেছি এটা তাদের থেকে আলাদা। সুন্দর গোলাপী রঙ করা কংক্রীটের পাকা বাড়ি। ওর মা ঈলাশী সুপুরি কাটতে কাটতে আমাদের সঙ্গে অল্প কথায় আলোচনা করেন। সইকিয়া একটা পাথর ভাঙ্গার কল চালায় আর কয়েকদিন আগেই ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ঘাগোর ক্যাম্প থেকে একটু এগিয়ে একটা জমি কিনেছে।
ওর মা জানায়, “দিবাকরের জমি কেনার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক ছিল। আর এ ব্যপারে ও ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিল। মে ১৪ তারিখে ও একটা ফোন পায় যে ডিসি ওর সঙ্গে উত্তর লখিমপুরে দেখা করতে চান। ও যখন সেখানে যায়, ওকে জানানো হয় যে ডিসি ওকে ডেকেই পাঠাননি। বাড়ি ফেরার পথে ওর কাছে আবার ফোন আসে যে এসপি ওর সঙ্গে দেখা করতে চান। এসপি’র অফিসে পৌঁছতেই ওকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
ও কি বাঁধ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল? তিনি জোর দিয়ে বলেন, “দেখুন, আমরা নদীর খুব কাছে থাকি। নদীর কিছু হলে আমরাদের ওপরেই সবার আগে তার প্রভাব পড়বে। কেউ বলছে বাঁধ হলে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে, আবার একই সময় আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও শুনতে পাচ্ছি। এ ব্যপারে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে ব্যবসায়ী, কোনো আন্দোলনকারী নয়।”
এই সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত থাকা অন্য এক আত্মীয় দিবাকরের কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক বা আন্দোলনকারী দলের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রচন্ডভাবে অস্বীকার করতে থাকেন। তিনি বলেন, “দিবাকর শুধু ব্যবসা করে আর তার জন্য তাকে নানান লোকের সঙ্গে মিশতে হয়, এইটুকুই। ও কোনো দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নয়।”
শ্রীমতী সইকিয়াকে একটা ফোটোর জন্য অনুরোধ করায় তিনি বার বার বলতে থাকেন, “দয়া করে আমাকে আর ঝামেলায় জড়াবেন না।”
ওদের বাড়িতে আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন দিবাকরের স্ত্রী সেখানে ছিলেন না, তিনি কোনো একজন লইয়ারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কেসের খবর নেওয়ার জন্য আমি তাঁর ফোন নম্বর চেয়ে নি। কিন্তু রাত্রে যখন ওই নম্বরে ফোন করি, দেখা যায় নম্বরটা ভুল। স্পষ্টতই দিবাকরের পরিবার খুবই ভয় পেয়েছে। সেই সঙ্গে ভয় পেয়েছে গোটা অঞ্চলটাই। লোকজনের সঙ্গে দেখা করা সহজ ছিল না; এদের মধ্যে অনেকেরই একাধিক ফোন নম্বর আছে যার মধ্যে বেশ কয়েকটাতেই যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। যেমন বেদান্ত লস্কর, কেএমএসএস-এর অন্যতম নেতা, বলেন, “সরকার যেনতেন প্রকারে বাঁধ সম্পূর্ণ করতে চায়। তার জন্য যেভাবে পারে সমস্ত আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে। এর জন্য আজ ভালো পুলিশ অফিসারদেরও ঠিক করে চিনতে পারা যাচ্ছে না।”
মূল লেখা ঃ http://www.priyanka-borpujari.blogspot.com/2012/05/damning-dam-protesters.html
লেখিকার যোগাযোগ - aa.priyanka@gmail.com
অনুবাদ : মীনাক্ষী মণ্ডল
(চলবে)