এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • বাঁধের বিরুদ্ধেঃ একটি পীড়নের ধারাবিবরণী ৫

    প্রিয়াঙ্কা বরপূজারী লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ৩১ জুলাই ২০১২ | ৮৬৬ বার পঠিত
  • ১১ই মে’র সন্ধ্যে থেকে পোড়া ট্যাঙ্কারটা চাউলধোয়া আউটপোস্টেই পড়ে রয়েছে। ইন্সপেক্টর ইনচার্জ উৎপল চাংমাই একজন নম্র ভদ্র অফিসার হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। “কিন্তু সেই রাতে উনি যে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়ালেন, তারপর আমরা আর ওনার মিষ্টি কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছি না” – ন্যশনাল হাইওয়ে ৫২র ওপর সুবানসিরি ব্রিজের বাসিন্দারা এরকমই বললেন।


    লখিমপুর পুলিশের অন্তর্গত চাউলধোয়া আউটপোস্ট ন্যশনাল হাইওয়ে ৫২র ওপরে সুবানসিরি ব্রিজের বেশ অনেকটা আগেই। কংক্রিটের অফিসবাড়ির সামনে অনেকটা খোলা জায়গা। তিনজন সি আর পি এফ বসেছিলেন একটা ফ্ল্যাগপোস্টের নিচে। অন্যপ্রান্তে একটা ইন্ডিয়ান অয়েল ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে ছিল, তার সামনেটা একটা হলুদ প্ল্যাস্টিকের চাদরে ঢাকা। হাইওয়ে থেকে দেখা যাবে না, তবে ট্যাঙ্কারের পাশেই রয়েছে একটা টেম্পো। এর মধ্যে কিছু তেলের ড্রাম রাখা আছে। কিছু ঘর্মাক্ত শীর্ণ মানুষ, পরনে একটিমাত্র গামছা, ট্যাঙ্কার থেকে ড্রামে তেল নিয়ে আসছে। কয়েকজন পুলিশ নজরদারি করছে। চাংমাই একটা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে ওনার সাথে কথা বলতে চাইলাম। উনি বললেন ওনার সিনিয়রের সাথে কথা বলতে। তিনিও সেখানেই ছিলেন।


    ভদ্রলোকের নাম ইমদাদ আলি – অ্যাডিশনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (সিকিউরিটি), লখিমপুর ডিস্ট্রিক্ট। ওনাকে বললাম আমি একটা সিরিজ করছি বড় বাঁধের ওপর (কথাটা মিথ্যে নয়)। উনি বললেন তেমন কিছু বলার নেই – “আমরা বাঁধের ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমরা এ বিষয়ে কিছু করছিও না। আমাদের কাজ এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।” বেশ খানিকক্ষণ অনুরোধ-উপরোধ চলার পর চাংমাই, আলি এবং আরেকজন আমার সাথে বসতে রাজি হলেন। সবুজ রঙের সাদামাটা অফিস ঘর। ফাইলের বোঝা নেই, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি নেই। ঘরে আসবাব বলতে একটা তালা দেওয়া স্টিলের আলমারী আর সাজসজ্জার মধ্যে দরজা-জানলায় ঝোলানো পর্দাগুলো। জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম তেল বহনকারী শ্রমিকদের।



    আলি পাঁচ মিনিট ধরে আমার জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চালালেন। আমার নাম, ঠিকানা, কোথা থেকে আসছি, কোন কাগজে চাকরি করি, কবে এই অঞ্চলে এসেছি, কোথায় থাকছি, কাদের সাথে থাকছি, কিভাবে এই পুলিশ আউটপোস্টে এলাম, কার সাথে, কোন গাড়িতে, কোন কোন জায়গায় ঘুরেছি এখনও পর্যন্ত, আমার ফোন নাম্বার এই সমস্ত কিছু জানানোর পর আমি জানতে চাইলাম এবার কি আমি ওনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি? উনি রাজি হলেন, তবে ভিডিও করা চলবে না এই শর্তে। একমাত্র এস পির মিডিয়ার সাথে কথা বলার অনুমতি আছে।


    প্রিয়াঙ্কাঃ যে ট্যাঙ্কারটা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কি তদন্ত হয়েছে?
    আলিঃ আমরা এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ আমি শুনেছিলাম ২১ জন। ২১ না ১৪?
    আলিঃ ২১
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু আজ আরেকজন অ্যারেস্ট হন নি?
    চাংমাইঃ হ্যাঁ।
    প্রিয়াঙ্কাঃ তাহলে ২২?
    আলিঃ হ্যাঁ।

    (এই কথোপকথন ১৭ই মে’র। এখনও পর্যন্ত ২৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।)

    প্রিয়াঙ্কাঃ তো একজ্যাক্টলি কি হয়েছিল?
    আলিঃ ঘটনাটা ঘটেছিল ১১ই মে। এখান থেকে আন্দাজ একশো মিটার দূরে। ঠেকারগুড়িতে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ গ্রামের মধ্যে? নাকি...
    আলিঃ আমরা আপনাকে এত ডিটেলস দিতে পারবো না। এগুলো আমাদের তদন্তের অঙ্গ। আপনি নিজে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।
    প্রিয়াঙ্কাঃ আমি শুধু দূরত্বটা...
    আলিঃ হাইওয়ে থেকে দুশো মিটার দূরে ঘটেছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ যাদের অ্যারেস্ট করেছেন তাদের থেকে কিছু জানতে পেরেছেন?
    আলিঃ তারা জেল কাস্টডিতে আছেন। আমরা কিছু ইনফরমেশন পেয়েছি। তদন্ত এখনও চলছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ গাড়িটায় কি ছিল?
    আলিঃ ১২,০০০ লিটার ডিজেল
    প্রিয়াঙ্কাঃ ওটা কি এন এইচ পি সি বাঁধের দিকে যাচ্ছিল?
    চাংমাইঃ হ্যাঁ
    প্রিয়াঙ্কাঃ ঘাগর থেকে বাঁদিকের রুটটা দিয়ে?
    আলিঃ না, ওটা যাচ্ছিল গোগামুখ চারি-আলির (চৌমাথা) দিকে। সেখান থেকে বাঁয়ে গিয়ে গেরুকামুখের দিকে যেত।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু যখন আগুন ধরানো হয়েছিল তখন কোন বিস্ফোরণ হয়নি?
    আলিঃ হ্যাঁ, ভাগ্যক্রমে ট্যাঙ্কারটায় আগুন লাগেনি। শুধু কেবিনটায় ক্ষতি হয়েছে। তাই বিস্ফোরণ হয়নি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কতক্ষণ লেগেছিল ফায়ার ব্রিগেড আসতে?
    আলিঃ ১৫-২০ মিনিট
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু সবচেয়ে কাছের ফায়ার ব্রিগেড তো নর্থ লখিমপুর টাউনে। এখান থেকে ৩৫ কিমি দূরে...
    আলিঃ ফায়ার ব্রিগেডের কতক্ষণ লেগেছে এত ডিটেলে আপনার কী দরকার? ফায়ার ব্রিগেড ডাকা হয়েছিল। তারা এসেছে। আগুন নিভিয়েছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ আমি জিজ্ঞাসা করছি কারণ দূরত্ব আর সময়ের একটা ব্যাপার আছে...
    আলিঃ ফায়ার ব্রিগেড এসেছে ২৫-৩০ মিনিটের মধ্যে
    প্রিয়াঙ্কাঃ তো প্রথমে আপনি বললেন ১৫ মিনিট, তারপর ২০ মিনিট, তারপর ২৫ মিনিট, তারপর ৩০ মিনিট...
    আলিঃ আপনি খুব বেশি ডিটেলে যাচ্ছেন।
    প্রিয়াঙ্কাঃ আপনারা কি আরো লোক খুঁজছেন?
    চাংমাইঃ (ঘাড় নাড়েন যার অর্থ হয় হ্যাঁ)
    আলিঃ তদন্ত এখনও চলছে। এখনই সব কথা বলা যাবে না।
    প্রিয়াঙ্কাঃ শুনছিলাম একটা বাচ্চা ছেলেকে মারা হয়েছে...
    আলিঃ না, আমরা কোন বাচ্চাকে মারি নি। যখন ট্যাঙ্কারে আগুন লাগল, তখন আমাদের একটা অস্থায়ী ক্যাম্প ভাঙতে হয়েছিল। কিছু সংস্থা আটচল্লিশ ঘন্টার বনধ ডাকল লখিমপুর আর ধীমাজিতে। এরা ছোট বাচ্চাদের দিয়ে চলন্ত গাড়িতে পাথর ছুঁড়িয়েছে। পরের দিন, ১২ই মে, আমরা এই ছেলেটিকে ধরি। ওকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। তারপর ওর অভিভাবকদের ডাকা হয়। তারা ওকে বাড়ি নিয়ে যান।
    প্রিয়াঙ্কাঃ অভিভাবক কারা এসেছিলেন?
    আলিঃ ওর বাবা-মা আসতে পারেন নি। ওর মামা আর কাকা এসে ওকে নিয়ে গেছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু আপনার মনে হয় না যে ধারায় এই অভিযুক্তদের চার্জ করা হয়েছে সেটা খুব বেশি কঠোর?
    আলিঃ দেখুন, যখন একটা এফ আই আর ফাইল করা হয় তখন সেটা লেখা হয় সেই মুহূর্তে কেসটার উপাদানগুলোর ওপর ভিত্তি করে। তদন্ত চলার সময় যদি আমরা বুঝি নতুন কোন সেকশান জুড়তে হবে তাহলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাহায্য নিয়ে আমরা সেটা করে থাকি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু আপনি কেন প্রথমে বললেন বাঁধ বিরোধী আন্দোলনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই?
    আলিঃ পুলিশ এখানে এসেছে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। আমাদের বাঁধ নিয়ে কোন কৌতূহল নেই। যদি কেউ আইন ভাঙে, আমরা সেটা দেখার জন্য আছি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ বেশ সেক্ষেত্রে আমি এস পির সাথে কথা বলব। আপনার যখন আমাকে এর বেশি ডিটেল দিতে অসুবিধে আছে।
    আলিঃ হ্যাঁ, প্লিজ তাই করুন।
    প্রিয়াঙ্কাঃ তো এখন তাহলে তেল সরানো হচ্ছে...
    আলিঃ দেখুন ড্যাম সাইটে চারটে কোম্পানি কাজ করছে NHPC-র সাথে - L&T, Soma, Alstom and Texmaco। এই ট্যাঙ্কারটা পাওয়ার হাউসের ওপর কাজ করছিল। যাচ্ছিল L&T-র দিকে। এখন ট্যাঙ্কার খালি করা হচ্ছে। তারপর তেল পাঠিয়ে দেওয়া হবে ওখানে।




    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরের আন্দোলন, যার ফলে ঘাগরের ক্যাম্পটা তৈরী হল, তার পরে ড্যাম সাইটে জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য কী ধরনের চুক্তিতে আসা হয়েছে?
    আলিঃ আমরা জানি না NHPC কি চায়। আমরা সে নিয়ে ভাবিতও নই। ওদের যা দরকার আমরা তার যোগান দেব। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এবার এমন ঘটল। তো এখন উপরতলা থেকে অর্ডার এসেছে যে কোন রকম বেআইনি জমায়েত বা ক্যাম্প করা চলবে না কারন CrPC-র ১৪৪ ধারা এখানে জারি হয়েছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কখন থেকে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা?
    আলিঃ যখনই ১৪৪ ধারা জারি হয়, তিনমাস পরে সেটা তুলে নেওয়া হয়। শেষবার ১৫-২০ দিন আগে আবার জারি হয়েছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ ১৪৪ ধারা আগেও ছিল? কিসের ভিত্তিতে?
    আলিঃ হ্যাঁ, এরকম হয় কখনও কখনও। ১৪৪ আগেও ছিল। এটা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্ত, পুলিশের নয়।
    প্রিয়াঙ্কাঃ তার মানে ১৪৪ আবার জারি হয়েছে – বিহুর আগে বা পরে (সরকারী ভাবে ১৪ই এপ্রিল বিহু পালন হয়, তবে উৎসব তার পরেও চলতে থাকে) 
    আলিঃ আমার ঠিক দিনটা মনে নেই, তবে...
    চাংমাইঃ বিহুর পরে
    প্রিয়াঙ্কাঃ এবং কিছু রক্ষীও নিযুক্ত হয় এখানে?
    আলিঃ হোম গার্ড এখন নিযুক্ত হয়নি। ওরা আগে থেকেই ছিল।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু SPO? 
    আলিঃ হ্যাঁ, SPO সাম্প্রতিক কালেই... (বাক্য অসমাপ্ত)। আসলে বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হোমগার্ডদের এক জায়গায় আনা হয়েছে। এদের কেউ কেউ সাড়ে চার হাজার টাকা মাইনে পায়। কিন্তু যেহেতু আমরা বাইরে থেকে সাহায্য পাচ্ছি, তাই হোমগার্ডদের অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এটা জেলার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। প্রয়োজন হলে আমরা হোমগার্ডদের ব্যবহার করতে পারি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে SPO নিযুক্ত করা হয়নি কি? 
    আলিঃ আমি এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে পারবো না। একমাত্র এস পি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। আপনার আর প্রশ্ন আছে?
    প্রিয়াঙ্কাঃ তেমন কিছু না। বিশেষ করে আপনি যখন এস পির কাছে যেতে বলছেন!
    প্রিয়াঙ্কাঃ তা ১৪৪ কতদিন জারি থাকবে এখানে?
    আলিঃ তিন মাস মত... জুন পর্যন্ত।
    প্রিয়াঙ্কাঃ তারমানে গোটা হাইওয়ে এবং গোগামুখে নজরদারি বহাল থাকবে?
    আলিঃ দেখুন, আমরা কোন মানুষকে রেস্টুরেন্ট বা বাজার বা কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তো গ্রেপ্তার করতে পারি না। কিন্তু ক্যাম্পে বহু লোক আছে যারা চলন্ত গাড়িতে পাথর ছুঁড়ছে। এই ধরনের ঘটনার জন্যই ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। এখন যদি সাতজন সাংবাদিক আমাদের সাথে দেখা করতে আসে, তখন ১৪৪ জারি হবে না। কিন্তু এই লোকগুলো এস পির গাড়িতে পাথর ছুঁড়ছে! কিন্তু যদি কোন অসুস্থ মানুষকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় কারণ সে হাঁটতে পারছে না, বা যদি নারী বা শিশু থাকে মোটরসাইকেলের পেছনে তাহলে অবশ্যই তাকে ১৪৪-র আওতায় ফেলা হবে না। প্রশাসন তো কমন সেন্স বাদ দিয়ে নয়।
    প্রিয়াঙ্কাঃ কিন্তু যারা গ্রেপ্তার হল এই কারণে...
    আলিঃ না, যথাযথ তদন্তের পরেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটা মানুষকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয়েছে যখন তার সাথে কোন ঘটনার যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ ... কিন্তু তাহলে যেসব মেয়েরা গ্রেপ্তার হয়েছে, যারা হেনস্থা হয়েছে পুরুষ পুলিশের হাতে...
    আলিঃ দেখুন, মিথ্যে অভিযোগ সব সময়েই থাকবে, যেমন সব জায়গাতেই থাকে...
    প্রিয়াঙ্কাঃ ... হ্যাঁ, নিশ্চয়ই মিথ্যে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু প্রত্যক্ষ সাক্ষীও থাকতে পারে তো...
    আলিঃ ... প্রত্যক্ষ সাক্ষী আপনি কাকে বলেন? কেউ কিছু দেখেছে বললেই তাকে আমাকে প্রত্যক্ষ সাক্ষী মানতে হবে? প্রত্যক্ষ সাক্ষী তাকে বলে যে নিজের চোখে দেখেছে। কিছু করতে গেলে মিথ্যে দোষারোপ আসবেই। লোকে বলেছে পুলিশ নাকি নদীতে মেয়েদের চান করা দেখে। ভিত্তিহীন কথা সব! এটা সব সময়েই বলা হবে যে মেয়ে পুলিশ ছিল না। কিন্তু আজকাল এটা খুবই কমন যে মেয়ে পুলিশ থাকবেই। মিডিয়া সব সময় তৈরী হয়ে আছে পুলিশের ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্য...
    প্রিয়াঙ্কাঃ ... না স্যার, আমি পুলিশকে সম্মান করি কারণ আমাকেও পুলিশের সাথে নিয়মিত কাজ করতে হয়। আমি এখানে শুধুমাত্র এই কেসটার দিক থেকে দেখতে চাইছি ব্যাপারটা।
    আলিঃ দেখুন, আমাদের সারা জীবন ধরে নানা জায়গায় বদলি হতে হয়। আমাদেরও বাড়িতে মেয়েরা আছে। আমরা কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারি না। তাই পুলিশের হাতে মেয়েদের ‘হেনস্থা’ একটি ভুল অভিযোগ। দু-একজন পুলিশকে দিয়ে সবাইকে বিচার করা যায় না...
    প্রিয়াঙ্কাঃ ... আমি সেটা করছি না। যদি করতাম তাহলে আমি নিজেই একা পুলিশ স্টেশনে আসতে ইতস্তত করতাম অথবা সাথে কোন পুরুষকে নিয়ে আসতাম নিরাপত্তার জন্য। আমার হাতে যা তথ্য আছে তার ভিত্তিতে আমি কথা বলছি। আর আমি যখন বলছি ‘হেনস্থা’ করার কথা তখন সেই ঘটনাটার কথা ভাবছি যেখানে একটি মেয়েকে পুলিশ মাথার চুল ধরে টেনে নিয়ে গেছে।
    আলিঃ তাহলে আপনার সেভাবে প্রশ্ন করা উচিত।
    চাংমাইঃ আমি খুব খুশি হলাম আপনি পরিষ্কার করে বললেন বলে। সেজন্যই আমি আপনাকে অনেস্টলি জিজ্ঞাসা করছি, কারোর কি এখানে কোন অসুবিধে হয়েছে? রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামানো হয়েছে? এই ঘটনাটা ঘটার আগে কোন মানুষের কোন রকম হেনস্থা হয়েছে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ স্যার, আমি এখানে ঘটনাটা ঘটার আগে ছিলাম না। এখন আমি যা দেখছি চারদিকে সশস্ত্র মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষ তো কৌতুহলী হবেই, ভয় পাবেই, যদি রাস্তাভর্তি পুলিশ ঘুরে বেড়ায়। এটা তো ঠিক কোন পজিটিভ আবহাওয়া নয়। এখানকার লোকের কাছে যা শুনেছি, এই রকম পরিবেশ এখানে আগেও তৈরী হয়েছিল।
    আলিঃ দেখুন, ২০১১-র নভেম্বরে একটা প্রেশার শাফট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল NHPC–তে। কিছু মানুষ সেটাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তারপরে হাইওয়ে ব্লক করে NHPC–তে কোন জিনিস সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। তারপর তারা ঘাগরে ক্যাম্প তৈরী করে। তখনও আমরা ওদের জামিনযোগ্য চার্জে ফেলেছি, যদি গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে। এবারেও এক ঘটনা ঘটল। ওরা হাইওয়ে ব্লক করল। তারপর ট্যাঙ্কার পোড়ানো হল। আজকালকার দিনে যদি কোথাও হাইওয়ে ব্লক হয়, তাহলে সেন্টার পর্যন্ত খবর চলে যায়। হাইওয়ে বন্ধ হলে কত মানুষ অসুবিধায় পড়ে – বুড়ো মানুষ, গর্ভবতী নারী, বাজারে যারা যাবে তারা। আপনি অন্য কোথাও এই ধরনের হাইওয়ে ব্লক দেখবেন না এখানে ছাড়া। কারণ এখানে এটা করলে সেন্টারে সরাসরি খবর চলে যায়। হাইওয়ে ব্লক হলে, বড় বড় নেতারা আসবে এবং তখন তারা নিজেদের দাবি জানাতে পারবে। তাই এখন আমাদের ওপর অর্ডার আছে হাইওয়ে যেন বন্ধ না হয়। যখনই কোন ঝামেলা হয় পুলিশ চলে আসে।
    প্রিয়াঙ্কাঃ শেষ প্রশ্ন এবং ব্যক্তিগত – এই আন্দোলন এবং আন্দোলনের পিছনে কারন নিয়ে আপনারা পুলিশ ক্যাডাররা কি ভাবেন?
    আলিঃ দেখুন, আমরা সাধারণ পুলিশ। ২০০৭ সালের আসাম পুলিশ অ্যাক্ট অনুযায়ী আমাদের একমাত্র কাজ হল অপরাধ দমন ও প্রতিরোধ করা। আইন- শৃঙ্খলা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে আমরা আগ্রহী নই।
    প্রিয়াঙ্কাঃ ... কিন্তু এটা একজন অসমীয়া আরেকজন অসমীয়াকে প্রশ্ন করছে সে বাঁধ প্রকল্প নিয়ে কী ভাবছে।
    আলিঃ দেখুন, এই প্রকল্প রূপায়ণ করছে ওপরতলার মানুষেরা। সাধারন মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে অনেকরকম দৃষ্টিভঙ্গী আছে – কেউ মনে করে বাঁধ হওয়া উচিত, কেউ মনে করে উচিত নয়। আমরা এর মধ্যে যেতে চাই না।
    প্রিয়াঙ্কাঃ আমি শুধু জানতে চাইছি আপনি বাঁধ সম্পর্কে কি ভাবেন, যখন লোকে বলছে এটা গোটা অসমকে ধ্বংস করে দেবে আর এখান থেকে আসামের ১০% বিদ্যুৎও উৎপাদন হবে না...
    আলিঃ আমি এখন আমার পুলিশের উর্দিতে আছি। আমি আপনাকে বলতে পারবো না আমি কি ভাবছি। যদি আপনি আমার বাড়ি আসেন, যেখানে আমি একজন পুলিশ নই, তখন আমি আপনাকে বলতে পারি।
    প্রিয়াঙ্কাঃ বেশ, তাহলে তার জন্যই অপেক্ষা করবো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।


    সূত্রঃ http://www.priyanka-borpujari.blogspot.com/2012/05/administration-is-nothing-but-common.html 


    অনুবাদ: শুচিস্মিতা 


    (চলবে)

    \
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ৩১ জুলাই ২০১২ | ৮৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন