২৫শে মে সকাল সাড়ে আটটায় সাইক্লোন ইয়াস-এর ঝাপটায় বুড়িগঙ্গার প্রবল জলপ্লাবন সুন্দরবনের পশ্চিমের দ্বীপগুলো কার্যত ডুবিয়ে দেওয়ার তিনদিন পরে ঝিনাই নদীতে আবার নৌকো নামে। সেই প্রথম খেয়ায় নদী পেরিয়ে ওপারে মৌসুনি দ্বীপের ফেরিঘাটে পা রাখছি যখন, তখনও ধ্বংসের দৃশ্যগত উলঙ্গ চেহারাটা কেমন হতে পারে আমার জানা ছিল না। প্রথম পদক্ষেপেই এক হাঁটু কাদায় গেঁথে গিয়ে বুঝতে পারি এই মাটি আমার আজন্ম চেনা নির্ভরযোগ্য, ধারণক্ষম মাটি নয়। এ মাটি সুন্দরবনের মাটি। ধারক। আবার ঘাতকও।
তখনও দ্বীপের সমস্ত ধানজমি জলের তলায়। বিধ্বস্ত বাঁধের পিঠ, কংক্রিটে ঢালাই চারফুটের সড়ক, টিউবওয়েলের বাঁধানো পাড় কোনোক্রমে জলের ওপর জেগে আছে। বাঘডাঙা গ্রামের ১১টা টিউবওয়েলের ৮টাই ওগড়াচ্ছে নোনা জল। বাকি তিনটেতে বানভাসি মানুষের নিঃশব্দ ভিড়। প্লাস্টিকের ফাঁকা ড্রাম জলে ভাসিয়ে অসীম প্লাবন সাঁতরে গ্রামের ছেলেরা আসছে জল ভরতে। মিষ্টি জলের মাছেরা নোনা জলের ঢেউ-এ যুঝতে না পেরে মরে ভেসে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে, তিনদিনের ভ্যাপসা গরমে পচে গিয়ে দ্বীপময় ছড়িয়ে দিচ্ছে চাপা দুর্গন্ধ। সুন্দরবনে ধ্বংসের পচনগন্ধও বড়ো তীব্র।