এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শিক্ষা: বদলে যাওয়া জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ জুলাই ২০২৪ | ৪১০ বার পঠিত
  • শিক্ষা : বদলে যাওয়া জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে
    সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।
     
     
    কয়েকটি ছোট ছোট টুকরো কথা দিয়ে আজকের কথা শুরু করি। ব্যাপারটা হয়তো অনেকটাই সিনেমা তৈরির মতো হবে। মাল্টিপ্লেক্সের অন্ধকার আরামঘরে বসে যখন সিনেমা দেখতে বসি তখন কি একবারও মনে হয় যে অসংখ্য ছোট ছোট টুকরো দৃশ্যপটকে জুড়ে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটানা উপভোগ করার মতো একটি চলচ্চিত্র! মনে হয়না নিশ্চয়ই? আমিও সেভাবেই একটা প্রতিবেদন লেখার চেষ্টা করবো কতগুলো দৃশ্যপট তথা কাহিনিকে জুড়ে নিয়ে।
     
     দৃশ্যপট  : এক
    শহর ব্যাঙ্গালুরু। মালভূমির ওপর এই শহরের অবস্থান। বিগত দু দশকেরও কিছু বেশি সময়ে অবিশ্বাস্য গতিতে এই শহরের ভোল বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া রামাইয়াকে খুব অবাক করে। সেই কবে বাবার হাত ধরে এই শহরে এসেছিল সে। ফেলে আসা দিনগুলোকে কেমন স্বপ্নের মতো মনে হয় তার। রামাইয়ার নিজের‌ই এখন সংসার হয়েছে। আগে অবশ্য একাই থাকতো সে। এখন স্ত্রী কাবেরী আর মেয়ে নেহা তার সঙ্গেই থাকে শহর লাগোয়া মালেশ্বরমের এক ঘুপচি বস্তিতে। রামাইয়া অটোরিকশা চালায়। কাবেরী দু বাড়িতে রান্নার কাজ করে। দুজনের আয়ে টেনেটুনে চলে যায়। বড্ড খরুচে শহর ব্যাঙ্গালুরু।
    নেহার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে কয়েকদিন। এ বছর শহর জুড়ে জলের বড়ো টানাটানি শুরু হয়েছে। রামাইয়াকে বেরোতেই হয় । সংসারের চাকা যে তার অটোর চাকার সঙ্গে বাঁধা। অটোর চাকা না ঘুরলে চলবে কী করে? কাবেরীও কামাইয়ের কথা ভাবতে পারে না। সে না গেলে দুই কাজের বাড়িতে হেঁসেল চলবে না। অগত্যা নেহাকেই বাড়িতে থাকতে হয়। পুর নিগমের গাড়ি ওদের বস্তিতে জল দিতে আসে ঠিক বেলা নটায়।তখন তো মা বাবা দুজনেই বাইরে। জলের ট্যাঙ্ক এলেই মহল্লার লোকজন সব হামলে পড়ে গাড়ি ঘিরে। নেহা অন্যদের মতো লড়াই করতে পারেনা। এভাবে তার অনেকটা সময় কেটে যায়। স্কুলে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনা। সে স্কুলে শুনেছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কথা। রাতে যখন তিনজনে একসাথে খেতে বসে, তখন জল ধরার লড়াইয়ের পাশাপাশি পৃথিবীর বদলে যাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তনের গল্পও উঠে আসে। মুখে কিছু না বললেও রামাইয়া বুঝতে পারে লেখাপড়া শেখার গুরুত্ব। বাতাবরণের বদলে যাওয়া তার নেহার পড়াশোনার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে দিচ্ছে তা ভেবে কষ্ট পায় মনে মনে।
     
    দৃশ্যপট  : দুই 
     
    নদীর ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বিশাল বট গাছের নিচে আনমনে বসে ছিল আমিরুল। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে ওঠা ভাগিরথী নদীর দিকে। সর্বগ্রাসী নদীর ভাঙনে একে একে তলিয়ে গিয়েছে তাদের ঘর বাড়ি, চাষের জমি, ফলের বাগান,মক্তব সব। তাদের ছোট্ট স্কুলটির কী পরিণতি হবে ,তা ভেবে থৈ পায়না আমিরুল। এবছর‌ই ক্লাস সেভেনে উঠেছে। আমিরুল বড়ো হয়ে পাইলট হতে চায়। কিন্তু এমন এক টালমাটাল অবস্থায় সেই স্বপ্নের ভবিষ্যৎ কী হবে আমিরুল তা জানেনা। আমিরুল তার আব্বুর কাছে শুনেছে যে পৃথিবীর সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা মানুষের সাজানো গোছানো জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে বারংবার। আমিরুলের স্কুলে যেতে খুব ভালো লাগে। স্কুলে অনেক বন্ধু বান্ধব তার। তবে নদীর ভাঙনে তাদের স্কুল শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কিনা আমিরুল তা জানেনা। অনেক পরিশ্রম করে তাদের গ্রামে স্কুল তৈরি হয়েছিল। আজ নদীর গ্রাসে এতকষ্ট করে গড়ে তোলা এই স্কুলটাই যদি হারিয়ে যায় তাহলে কী হবে? এই নিয়ে সবসময় একটা আতঙ্কে দিন কাটাতে হয় নদী পাড়ে বসত করা সকল মানুষকে। আম্মু বলেন এমন অনিশ্চয়তা থাকলে মানুষের মন, মানুষের জীবন এক ঠাঁয়ে থিতু হয় কী করে? আমিরুল ছোট হলেও বেশ বুঝতে পারে এই বদলে যাওয়া পৃথিবীতে তাদের মতো স্বপ্ন দেখা কিশোরের এগিয়ে যাওয়া ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। সাতসকালে এই সব ভাবতে ভাবতে আমিরুলের মন ভারী হয়ে ওঠে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির পথে পা বাড়ায়।আজ স্কুলে যেতে হবে।
     
    দৃশ্যপট : তিন 

    খানিক আগে অটোরিকশা করে এ তল্লাটে আসা থানাদার বাবুরা ঘোষণা করে গেছে ঝড় আসার খবর – "অনুগ্রহ করে শুনবেন। আবহাওয়া দফতর থেকে পাঠানো বুলেটিন অনুসারে আগামীকাল সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ….ল সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। এই ঝড়ের গতিবেগ সর্বাধিক ১৫০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের তরফে এই অঞ্চলের সমস্ত অধিবাসীদের জানানো হচ্ছে যে তারা যেন অবিলম্বে নিজেদের অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ……অনুগ্রহ করে শুনবেন।"
    এমন ঘোষণার সঙ্গে জন্ম ইস্তক পরিচিত সুধা আর সুধন্য। ওরা জানে এই পরিস্থিতিতে ওদের কী করণীয়। সেইমতো হাত চালিয়ে মা বাবাকে সাহায্য করে ওরা। সুধন্য দিদি সুধাকে বলে – “ দিদি, কেমন জীবন আমাদের বল, সবসময়ই দুলতেছে। থিতু হবার কোনো লক্ষণ নাই। গেল বারের কথা চিন্তা কর। রাতের আঁধারে সমুদ্দুরের লোনা জল আসি ঢোকলো গাঁয়ের ভিতর।রাত দুকুরেই হৈহৈ করি সবাই উঠলাম জেগে। ব‌ই পত্তর,খাতা, ব্যাগ, জুতা সব ভিজা জবজবে , যেন রসে ডোবা মালপো।” নিজের রসিকতায় নিজেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলো সুধন্য।
     আসন্ন বিপদের সময় ভাইয়ের এমন মশকরা মোটেও ভালো লাগেনা সুধার । সে জানে প্রতি বছর এমন বিপদ ঘনিয়ে আসা মানেই হলো তাদের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া। স্কুলের দিদিদের মুখে সে শুনেছে বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা।গোটা দুনিয়া জুড়েই চলছে এর দাপট। বহু মানুষের জীবন তছনছ হয়ে যাচ্ছে এর ফলে। সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব। সুধা জানেনা এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা? সে শুধু জানে তাদের প্রতিদিনের জীবন কেবলই পরম অনিশ্চয়তায় ভরা। 
     
    দৃশ্যপট :  চার
     
    বাড়ির উঠানের একধারে জড়ো করে রাখা কাঠ কুটো গুলোকে দা দিয়ে কেটে ছোট ছোট করে রাখছিল বুধন– বুধন মান্ডি। দিন কতক ধরে আকাশে গনগনিয়ে ওঠা সুর্য ঠাকুরকে কেমন নির্লজ্জ,নির্দয় মনে হয় বুধনের। এমনিতেই তাদের জেলায় বৃষ্টি কম। তার ওপর এ বছর বৃষ্টিহীন টানা খরার দাপট। তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে দিন দশেক ধরে। রুখা শুখা মাটির দেশে মানুষের কষ্ট সমানে বেড়ে চলেছে।শেষ কবে বৃষ্টি ভেজা দিন দেখেছে তা মনে করতে পারে না বুধন। স্কুলে এখন গরমের ছুটি। প্রবল তাপ প্রবাহের জন্য হয়তো আরও কয়েকটা দিন ছুটি বেড়ে যাবে, কিন্তু বুধন জানে এতে তাদের সমস্যা কিছুই মিটবে না। ক্ষেতমজুর পরিবারের সন্তান বুধনের জীবন কেবলই অনিশ্চয়তায় ভরা।স্কুলে না পৌঁছাতে পারলে সবটাই অন্ধকারে ঢাকা থাকবে। বুধন সমস্যাটা বুঝতে পারে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।
    মা মালতী ঘরা কাঁখে জল আনতে যাচ্ছে দেখে বুধন বলে ওঠে – "মা তু রুখ যা, হামি জলটো আইন্যে দিছি বটে।" মার কষ্টটা বুঝতে পারে সে। এখন মালতী আপত্তি করে না। তাঁর চিন্তা ছেলেটার পড়াশোনায় এভাবে বাধা পড়ে যাচ্ছে বলে। অসম্ভব এক খরা পরিস্থিতি তাঁদের জীবনের ওপর থাবা বসিয়েছে। এ কেমন বিচার ওপর‌ওয়ালার! আকাশের দিকে হাত তুলে মালতী বলে – "মোদের ছেলেটোরে ভালো রেখো ভগবান। ছেলেটোরে ভালো রেখো।"
     
    গল্পগুলো অনেকটাই বড়ো প্রেক্ষাপট জুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও তাদের গোড়াটা এক‌ই ভাবনার সুরে বাঁধা। পৃথিবী এক অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। পৃথিবীর বাতাবরণ তার এতো দিনকার চেনা ছন্দ ছেড়ে এক ছন্নছাড়া পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গোটা দুনিয়াকে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে যে কি অস্থিরতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের প্রায় প্রতিদিনই। বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীর গ্রীন রুমে আরও অনেকেই অপেক্ষমান।  তাই পরস্পর বিচ্ছিন্ন ব্যাঙ্গালুরুর নেহা, মুর্শিদাবাদ জেলার আমিরুল, সুন্দরবনের সুধা ও সুধন্য, কিংবা পুরুলিয়ার বুধন - সকলেই এক‌ই সূত্রে বাঁধা।

    খরা,বন্যা,ভূমিক্ষয়, ভূমিকম্প, ভূমিধস ,দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস – একেরপর এক বিপর্যয়ের মাত্রাহীন অভিঘাতে আমাদের প্রিয় আবাসভূমি আজ বিপন্ন। এমন টালমাটাল অবস্থা বারংবার দিশেহারা করে দিয়েছে আমাদের জীবনকে। সমস্যা যে শুধু এদেশের ভৌগোলিক সীমানায় সীমায়িত থাকছে তা কিন্তু একেবারেই নয় , গোটা দুনিয়া জুড়েই চলছে এমন বিশৃঙ্খলা।
    বৃহত্তর নাগরিক জীবনে এসবের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ,অনেক সময় ধরে তিলতিল করে সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়া মানুষের জীবন চরম অনিশ্চয়তায় ভরে উঠছে ।তাকে সামলে নেওয়া এককথায় অসম্ভব। জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিদিন আমাদের কর্মকাণ্ড তথা যাপন প্রক্রিয়াকে এতো গভীর ভাবে প্রভাবিত করে চলেছে যে তা আজ আর কেবল একটি মাত্র দিনের মহাবিপর্যয়ের ঘটনা বলে চিহ্নিত করার উপায় নেই। এমনি সব ধারাবাহিক বিপর্যয়ের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে আমাদের জীবন যাপনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্র , বিশেষতঃ শিক্ষা। খুব সম্প্রতি ইউনেস্কোর তরফে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে – Global Education Monitoring Report । এই সমীক্ষা রিপোর্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে পার্থিব জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে যেসব মানবিক বিকাশের ক্ষেত্র গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রচল শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা যা শিখি তা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক তথা সার্বিকভাবে বৌদ্ধিক বিকাশের নতুনতর স্তরে উন্নীত করে। সেই কারণেই এই বিকাশের ধারা ব্যাহত হলে মনুষ্যত্বের জয়যাত্রা ব্যাহত হয়।

    বিগত কয়েক বছরের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিসংখ্যানের ওপর নজর রাখলে আমরা দেখবো কিভাবে তীব্র দাবদাহ, বিধ্বংসী দাবানল, প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়, সর্বগ্রাসী বন্যা, দীর্ঘমেয়াদী বৃষ্টিহীন খরা পরিস্থিতি, প্রবল ভূমিকম্প, কোভিড মহামারী সহ অন্যান্য রোগব্যাধির মারণ সংক্রমণ কিংবা সমুদ্র জলতলের বেড়ে যাওয়া উচ্চতা মানুষের জীবন, বিশেষতঃ মানুষের শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর এদের একক এবং সম্মিলিত প্রভাব সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
    ইউনেস্কোর মতে , এই বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হয়তো পৃথিবীর সর্বত্র সমানভাবে অনুভব করা যায়নি। পৃথিবীর বিকাশশীল দেশগুলোর শিক্ষা পরিকাঠামো আগাগোড়াই একটা দুর্বল, নড়বড়ে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, নানান অপূর্ণতায় ভরা ছিল এমনসব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিঘাতে তা একেবারেই ভেঙে পড়েছে বলা যায়। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সংঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে পঠনপাঠনের কাজ বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। এর ফলে গভীর শূন্যতা গ্রাস করেছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। স্কুল বন্ধ থাকার অর্থ‌ই হলো শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠন ব্যাহত হ‌ওয়া, অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হ‌ওয়া।
     
    ইউনেস্কোর দীর্ঘ মেয়াদী সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বিগত দুই দশক সময়কালের মধ্যে চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এরফলে ৫ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়। সুতীব্র দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বন্যার কারণে বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে । পাশাপাশি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল পরিমাণ স্কুল বাড়ি । এই ক্ষয়ক্ষতি অপূরণীয়। আমাদের নিবন্ধে উল্লিখিত আমিরুলের স্কুল বাড়িটি যদি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলকুল লোপাট হয়ে যায়, তাহলে সে বা তার সহপাঠীদের পঠনপাঠনের কি হাল হবে? অসমের সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঘরছাড়া। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এদের সকলের ঠাঁই হয়েছে ফ্লাড শেল্টার হিসেবে তড়িঘড়ি গড়ে তোলা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে।এর অর্থ হলো বিদ্যালয়গুলোতে পঠনপাঠন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া , যে কারণে পঠনপাঠনের জগৎ থেকে কয়েক লক্ষ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের দূরে সরে থাকতে হবে একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য। অনেক গ্রামীণ শিশু শিক্ষা কেন্দ্র তাদের অস্তিত্ব হারিয়েছে এই ভয়ঙ্কর বন্যায়। সংবাদপত্রের পাতায় উঠে এসেছে এমনই সব খবর।
     
    জলবায়ুর পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই কারণেই ক্ষয়ক্ষতির ছায়া ঘনিয়েছে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মহাদেশেই। বিগত দুই দশকের সময় সীমায় ২৫০০ এর‌ও বেশি ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর নানা অংশে আছড়ে পড়েছে। ইউনেস্কোর সমীক্ষায় বলা হয়েছে ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ইডাই মোজাম্বিকের ওপরে আছড়ে পড়ায় সেই দেশের প্রচলিত শিক্ষা পরিকাঠামো অকল্পনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ইডাইয়ের দাপটে সেই দেশের ৩৪০০ শ্রেণিকক্ষ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যার ফলে ৩০৫,০০০ সংখ্যক শিক্ষার্থীর পঠনপাঠন নিদারুণ সংকটের মধ্যে পড়ে। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ,ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সাম্প্রতিক সময়ে বারংবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়েছে। এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিক সম্পদের শিক্ষা নির্মিতি। মানব সম্পদের বিকাশের ক্ষেত্রে এই বাধা সহজে দূর করা সম্ভব নয়। ইউনেস্কোর সমীক্ষায় উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁদের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, যে সমস্ত গৃহে পঠনপাঠনের কাজ পরিচালনা করা হয় তার ৫০-৯০ শতাংশ স্কুল বাড়ি ঝড় বা ভূমিকম্পের দাপট সামলানোর উপযুক্ত নয়। শিশুর শিক্ষা নিয়ে কি গভীর অবহেলা! উন্নয়নশীল বলে চিহ্নিত পৃথিবীর সকল দেশেই শিক্ষা পরিকাঠামোর হাল এমন‌ই নড়বড়ে, অনুপযুক্ত। বলতে দ্বিধা নেই যে ভারত সহ দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো, সাব সাহারান আফ্রিকার দেশ সমূহ, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ দেশ‌ই বিগত দুই দশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। ফলে এইসব দেশের শিক্ষা প্রসারের প্রচেষ্টা বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা হলো এক ধরনের নিবিড় নির্মাণ ।  তাই এই অবনমনকে মূল্যবান   পার্থিব মানব সম্পদের বিকাশের অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
     
    বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। এর ফলে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অধোগামী। একথা সহজেই বুঝতে পারি যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হলে সর্ব ক্ষেত্রেই তার গভীর ছাপ পড়ে। শিক্ষা জগৎ উষ্ণায়নের ফলে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাভাবিক গড় উষ্ণতার অতিরিক্ত তাপ শিক্ষার্থীদের শিখন সামর্থ্যের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।বিশেষত একেবারেই ছোট যারা, তাদের পক্ষে অতিরিক্ত উষ্ণতার সঙ্গে শারীরিক ভাবে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়না। এই বছর উপমহাদেশের গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা সহনসীমার অনেকটাই ওপরে ছিল। ফলে স্কুল কলেজ সব বন্ধ রাখতে হয়েছে। মনে রাখতে হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ প্রান্তিক পরিবারের শিশুরা গৃহশিক্ষণের সুযোগ লাভে বঞ্চিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম প্রজন্মের এইসব পড়ুয়াদের পঠনপাঠন সম্পূর্ণ নির্ভর করে স্কুলেরই ওপর। সুতরাং তীব্র দাবদাহের কারণে স্কুল বন্ধ রাখা হলে তারা এক অসহায় অবস্থায় পড়ে। 
     
    উপরন্তু স্কুল বন্ধ রাখা হলে বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীরা মধ্যাহ্ন কালীন আহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা এরফলে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয়। এই ঘাটতি খুব সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়।
    তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ার ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের সামর্থ্যের ওপরেও তা গভীর প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পঠনপাঠনের উৎকর্ষতা তাপমাত্রার স্বাভাবিক থাকার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা অথবা অতি শীতলতা , কোনোটাই পঠনপাঠনের জন্য আদর্শ নয়। অথচ নানা কারণেই পৃথিবীর তাপীয় ভারসাম্য আজ দোদুল্যমান। এমন হলে পড়ুয়াদের শিখন ও শিক্ষকদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। 
    পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর পক্ষে এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেবার জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় । এরফলে পঠনপাঠন প্রক্রিয়ার ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সেভাবে পড়েনা। অথচ আমাদের মতো দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেবার মতো কোনো আয়োজন করা সুদূর পরাহত। এরফলে পঠনপাঠনের স্তরে বৈষম্য বেড়ে যায়।
     
    ইউনেস্কোর সমীক্ষায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় বৃষ্টিপাতের চরিত্র বদলের প্রভাবের বিষয়টিও 
    উঠে এসেছে। এই পরিবর্তন বয়ে এনেছে অশুভ বার্তা। একথা মাথায় রাখতে হবে যে পৃথিবীর এই অঞ্চলেই বসবাস করে বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ। মুখ্যত কৃষিজীবী মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে । ফলে বৃষ্টিপাতের শৃঙ্খলায় কোনো রকম অনিয়মিতি যেমন এই অঞ্চলের কৃষি সমাজের বিপন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় , ঠিক একই ভাবে পঠনপাঠনের স্তরেও তার বড়ো প্রভাব ফেলে ।২০১০ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রবল বন্যার প্রকোপে পড়ে। এই বিপর্যয় শিক্ষার্থীদের মানসিক সংবেদনের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে তা সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় যে , সরাসরি বন্যা কবলিত জেলার শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালীন পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ অনাগ্রহী।এমন অনাগ্রহ বন্যা প্রভাবিত নয় এমন জেলার শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। 

    আফ্রিকার মহাদেশের ১০টি দেশের ছাত্রছাত্রীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে বৃষ্টিপাতের দীর্ঘ মেয়াদী স্বল্পতা শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার সময়কালকে অনেকটাই প্রলম্বিত করেছে , সেখানে ছয় মাসের খরার প্রভাবে প্রায় ৬.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় পর প্রাথমিক শিক্ষার পর্বটিকে শেষ করেছে। শিক্ষা পর্বের সময়কালের এমন হেরফের আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলেই ঘটছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। আসলে পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে পারিবারিক ক্রিয়াকলাপ সুস্থিত থাকে। আবহাওয়া , জলবায়ুর বিরূপতা আয়ের ক্ষেত্রটিকে নড়বড়ে করে দিলে পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার পর্বটিও স্বাভাবিক ভাবেই বিঘ্নিত হয়। এটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। আসলে আমাদের মানসিক সুস্থিতি ও উন্নতির মূল সুরটি বহিঃপরিবেশের স্থিতিশীলতার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে। সেখানে বদলের জন্য আমরাও প্রভাবিত হ‌ই।

    ভারতের ছাত্রছাত্রীদের ওপর বৃষ্টিপাতের অনিয়মিতির প্রভাব সম্পর্কে গবেষণায় উঠে এসেছে যে, শিক্ষা জীবনের প্রথম দিকে অনিয়মিত বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ফলে স্বল্প শিক্ষিত অভিভাবকদের পরিবারের বালক ও শিশুদের ভাষা শেখা, গণিত এবং নন কগনিটিভ দক্ষতা অর্জনের সামর্থ্যের ওপরেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আসলে বৃষ্টির জলের অভাব মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। 
     
    নতুন শিক্ষা জীবনের শুরুতে এমন ছন্দপতন ঘটলে শিক্ষার্থীদের তার প্রতিফল পরবর্তীতে বহন করতে হয়। শিক্ষার প্রারম্ভিক পর্যায়ে নিয়মিতভাবে বিষয় চর্চা করাটা খুব জরুরি। সেক্ষেত্রে পারিবারিক আবহে বাবা মা দুজনেই যদি শিশুর শিক্ষা ব্যবস্থার সদর্থক সহযোগী না হতে পারেন তাহলে শিক্ষা কখনও সম্পূর্ণতা পায়না। স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারেও একটা সুতীব্র অনীহা গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে বৃষ্টিপাতের অনিয়মিতির বিষয়টি একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করে মাত্র।
     
    জলবায়ুর পরিবর্তন আগামী পৃথিবীর চেহারাটাকে কতদূর পর্যন্ত বদলে ফেলবে তা এখনও আমাদের অজানা। পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত বা আভাস আমরা পাচ্ছি তা যে রীতিমতো আৎকে ওঠার মতো সেকথা আলাদা করে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। শিক্ষালাভের প্রক্রিয়া এই নিয়মের দ্বারাই প্রভাবিত হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটেছে। মুশকিল হলো,এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রথম শিকার হন সমাজের তথাকথিত প্রান্তিক পরিবারের সদস্যরা। ইউনেস্কোর সমীক্ষায় দেখা গেছে বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতি ১০ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ৮ টিই হলো আর্থিক বিকাশের নিরিখে পিছিয়ে থাকা দেশ। সমীক্ষায় যে ৩৩টি দেশকে শিশুদের পক্ষে বিপদজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে ২৯ টি দেশ‌ই হলো তথাকথিত তৃতীয় দুনিয়ার উন্নয়নকামী রাষ্ট্র। ফলে এইসব দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়ন এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ যা একবার ভেঙে পড়লে আবার নতুন করে গড়ে তোলা মোটেই সহজ নয়। এরফলে বিপর্যয় নেমে এলে প্রাণ রক্ষার তাগিদটাই বড়ো হয়ে ওঠে, শিক্ষা তলিয়ে যায় অতলান্ত সমস্যার আবর্তে।
     
    পৃথিবী আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এতোদিন ধরে একটু একটু করে বিধি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে তা এক লহমায় বদলে যাওয়ার ভ্রুকুটির সামনে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন ব্যবস্থাপনাকে কায়েম করা খুব সহজ নিশ্চয়ই নয়। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন মানে মানুষের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের অতীত ব্যবস্থাকে বাতিল করে সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলা। কিন্তু এটাও যে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অস্তিত্ত্বের সংকট ঘনায়মান হলে মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হয়ে গেছে।গত ২০২২সালে গোটা দুনিয়া জুড়ে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মানুষ তাদের পূর্ববর্তী আবাস ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শিকড় ছেঁড়া গাছ যেমন বাঁচেনা, ঠিক একই ভাবে শিকড়ের থেকে উৎসন্ন মানুষ‌ও টিকে থাকার সংগ্রামে বিধ্বস্ত হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি দেশে – ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, তুভালু এবং ভিয়েতনাম – বাস্তুচ্যুত মানুষের বিশিষ্ট প্রব্রজন রীতি ধরা পড়েছে সমীক্ষায়।
    বলাবাহুল্য এই সব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এর ফলে নানা ধরনের পুনর্গঠনের সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। ফলে বারবার ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার সময়োপযোগী এবং সর্বজনীন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া।
     
     পৃথিবীর আগামী দিনের শিক্ষার কাছে এ হলো এক বড়ো চ্যালেঞ্জ। জলবায়ুর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের অন্তর্লীন যাপনের মূল সুরটিকেই বদলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আগামী দিনের শিক্ষাকে নিয়ে আজ গভীরভাবে ভাবতে হবে। মনে রাখবেন এখনকার পৃথিবীটাই আগামীদিনের শিক্ষার্থী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতার ডালি নিয়ে আসবে। মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যের ওপরেই নির্ভর করবে আমাদের আগামী প্রজন্মের নাগরিকদের নির্মিতি। ঢেলে সাজাতে হবে সবকিছুকেই। আমরা যেন সর্বোতভাবে তার জন্য প্রস্তুত থাকি।
     
     
     তথ্যসূত্র 
    Global Education Monitoring Report - 2024 UNESCO 
    বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | 2404:4404:1732:e000:d53d:9451:63ba:***:*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ১৩:৫০535100
  • দীর্ঘ লেখা। একটা মেসেজ যে উষ্ণায়ণের কারণে ছেলেপিলেদের পড়াশোনা লাটে উঠবে। এখন এর পরিপ্রেক্ষিতে পড়াশোনার ধরণ ধারণ, স্কুল নির্ভর পঠনপাঠন নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে যে কথাগুলো আপনার লেখায় এলে ভাল লাগত। কোভিডের দরুণ আমাদের একটা শিক্ষা হয়েছে, তবে সেই শিক্ষা কে কতটা শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে কে জানে। হাহুতাশ বাদ দিয়ে ভাবনাচীন্তার একটা সদর্থক দিক আছে, আসুন সেইগুলো নিয়ে ভাবি।
  • সৌমেন রায়। | 2409:40e1:10fc:1fc4:8000::***:*** | ২১ জুলাই ২০২৪ ১৫:০৯535101
  • পরিবেশ সমস্যার একটি নতুন আঙ্গিক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। পরিবেশ যেমন সমস্যা তৈরি করছে দারিদ্র্যও একই রকম  পড়াশোনা কে বিঘ্নিত করছে। এই দুটি রোধ করা বা দুর করা কষ্টসাধ্য।ফলে অসাম্য ক্রমশ বাড়ছে।
    তবে এর বাইরে যেটা প্রভাব ফেলছে সেটা হলো সামাজিক পরিস্থিতি। উপরুক্ত দুটি সমস্যা না থাকলেও ছেলেমেয়েরা এমনি এমনি স্কুলে আসছে না। এলেও অত্যন্ত অনিয়মিত আসছে। প্রবন্ধেই আছে  নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া পড়াশোনা সম্ভব নয়।
  • আশীষ | 116.206.***.*** | ২২ জুলাই ২০২৪ ১০:০১535155
  • বেশ হৈছে ম্যষ্টর॥
  • Sandip | 80.157.***.*** | ২২ জুলাই ২০২৪ ১৭:২৬535164
  • দাদা এটা নিয়ে একটা ডকুমেন্টরি বানানো দরকার। অসাধারণ লেখনী। 
  • অঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায় | 2409:4060:2d4e:ac8d:90e2:34ac:c68c:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৫:১৫535176
  • একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন লেখক। জলবায়ুর পরিবর্তন সন্দেহাতীতভাবে আমাদের চলতি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে । এই অবস্থার মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব তা শিক্ষাপ্রশাসকদের কাছে অজানা। মহামারীর সময়ে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনাকে সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় বলে ভাবতে গিয়ে এক নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। বিপুল সামাজিক , অর্থনৈতিক , সাংস্কৃতিক তথা রাষ্ট্রনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে বৈশ্বিকভাবে। খুব চটজলদি সমাধান বের করতে পারা সহজ নয়, কেননা সমস্যাটি ধর তক্তা মার পেরেক গোছের ভাবলে ভুল ভাবা হবে বলে মনে হয়। তবে ভাবতে হবে জোরকদমে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে আবশ্যিকভাবে।
  • উন্মেষ | 2402:3a80:1967:a6e7:478:5634:1232:***:*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ২০:১০535260
  • শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান
    জলবায়ুর পরিবর্তন কেড়ে নিচ্ছে অর্থনৈতিক পিরামিডের নিচের তলার সবকিছু। 
  • সুমিত | 2401:4900:4bbe:1a23:1:0:f5f:***:*** | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১২:২৬535507
  • জরুরী লেখা, আমাদের অবধারিত ভবিষ্যতের ছবি।
  • শাশ্বতী পাইক | 122.17.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২০:৪৭535655
  • অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী লেখা। আমি এই বিষয়ে কিছু লেখালেখি করেছি। আমার পরিচিত বহু এলাকার সঙ্গে এই ঘটনাগুলির মিল খুঁজে পেলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষের তৈরি করা দুর্যোগ ও ক্রমশ বাড়ছে। যত বেশি শৈশব আক্রান্ত হচ্ছে ততই মানবসমাজের আগামী দিনগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। 
  • মিহির মাইতি | 2405:201:8000:b1a1:83a:cdf:b257:***:*** | ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২২:৫৮535663
  • জলবায়ুর পরিবর্তন সন্দেহাতীতভাবে আমাদের চলতি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এমন বিপর্যয়ের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। এমন ঘটনা হয়তো তাঁদের এক অন্যরকম শিক্ষায় শিক্ষিত করে, তবে এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অগ্রগতি নিদারুণভাবে ব্যাহত হয়। জীবনের স্থূল অস্তিত্ব বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকলে পাঠক্রমের পঠনপাঠন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক ওয়েনাড়ের ঘটনা এই সত্যটাকে নির্মমভাবে তুলে ধরলো।
    এমন একটি বিষয়কে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
  • পলি মুখার্জি | 2405:201:8000:b1a1:d524:3b03:9a4f:***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:২৭538025
  • খানিক আগে টিভিতে বানভাসি বাংলার ভয়াবহ পরিস্থিতির ছবি দেখছিলাম। কলকাতা শহরের বুকে পায়ের পাতা ডোবা জল দেখেই আমরা যাঁরা তুমুল হইচই করি তাঁরা কি বলবো! এই প্রেক্ষাপটে লেখকের এই লেখাটি নতুন চিন্তার খোরাক যোগায়। প্রকৃতি পরিবেশের পরিবর্তন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ভুক্তভোগী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। এটা একটা বিশ্বময় সমস্যা। লেখক তার প্রতি নজর দিয়েছেন। সবাইকে এর উত্তরণের কথা ভাবতে হবে।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন