এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক গর্ভবতীর হত্যা ও কিছু গম্ভীর প্রশ্ন 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২১৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • এক গর্ভবতীর হত্যা ও কিছু গম্ভীর প্রশ্ন

    গত ১৫ আগস্ট তিলোত্তমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কলকাতা শহর জুড়ে যখন নাগরিক সমাজের পবিত্র ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে ধিকিধিকি করে, ঠিক তখনই কলকাতা শহর থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলে এক গর্ভবতী হস্তিনী বনদপ্তরের‌ই হুলা পার্টির সদস্যদের আক্রমণে নিদারুণভাবে আহত হয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ঝাড়গ্রামের মিনি চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসাকেন্দ্রে। শরীরে গরম লোহার শিক ঢুকিয়ে দেবার ফলে তৈরি হয়েছিল গভীর ক্ষত। তার‌ই চিকিৎসা চলে দিন দুই ধরে। তবে ক্ষতটি এতটাই গভীর ও প্রাণঘাতী ছিল যে চিকিৎসকের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে আহত হস্তিনীটি গত ১৮ আগস্ট মারা যায়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে আমরা সবাই যে খুব বিচলিত হয়েছি তা বোধহয় নয়। কলকাতার‌ই কিছু পশু প্রেমিক মানুষ ও তাঁদের সংগঠনের সদস্যরা অবশ্য প্রতিবাদে পায়ে পা মিলিয়ে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এর বেশি কিছু নয়। চোখের জলে তাকে বিদায় দিতে পারিনি আমরা। অথচ…..

    একটু পিছিয়ে যাই। খুব বেশিদিনের কথা নয়। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পুদুচেরির শ্রী মানাকুলা বিনয়াগর মন্দিরের পোষ্য হাতি লক্ষ্মী ৩২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সকালে তার দুজন মাহুত তাকে প্রতি দিনের মতো সকালে শহর পরিক্রমায় নিয়ে বেড়িয়েছিল, কালভে কলেজের সামনে রাস্তার ওপরে হঠাৎই লুটিয়ে পড়ে লক্ষ্মী। নিমেষেই মৃত্যু হয় তার। ছোট শহর তায় ঐ শহরে বসবাসকারী মানুষজনের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। আমিও দেখে এসেছি তাকে ২০১৯ সালে। লক্ষ্মীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয় না। শহর ভেঙে পড়ে মন্দিরের সামনে। হাজার হাজার মানুষ জলভরা চোখে বিদায় জানাতে হাজির হয়। ক্রেনের সাহায্যে লক্ষ্মীকে তুলে আনা হয় মন্দিরের সামনে শেষ বিদায় জানানোর জন্য। হাজার হাজার পদুচেরী শহরবাসী চোখের জলে বিদায় জানায় তাকে। হস্তিনীর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর তামিল্লিসাই সুন্দররাজন, পূর্ত দফতরের মন্ত্রী কে. লক্ষ্মীনারায়ণ, পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী ভি. নারায়ণস্বামী সহ আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষেরা। লক্ষ্মী অমলিন হয়ে যায় পুদুচারীবাসীর স্মৃতি পটে।

    একটি পোষ্য প্রাণির মৃত্যু ও একটি বন্যপ্রাণির মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের প্রতিক্রিয়া যে কখনোই সমান হবে না এটা হয়তো খানিকটা স্বাভাবিক কিন্তু ঝাড়গ্রামের হস্তিনীর মৃত্যু আমাদের সবার সামনে কতগুলো গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। বাড়ির টমি বা জেসির চলে যাওয়া আর পাড়ার লালু, ভুলুর মৃত্যুতে কি আমরা সমান ব্যথিত হ‌ই ? প্রশ্নটা ঠিক এটা নয়, চিন্তা বাড়ছে মানুষ ও পশুর ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ বা সংঘাত নিয়ে। পশুদের বশ মানানোর মধ্য দিয়েই মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল সুদূর অতীতে। সেই ধারা আজ‌ও বহমান। মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা তাকে সর্বশক্তিমান করে তুলেছে একটু একটু করে। অথচ শারীরিক সক্ষমতার বিচারে মানুষ পশুদের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। তাই তাদের শায়েস্তা করতে মানুষের অবলম্বন শস্ত্র। কিন্তু এই সময়ের বৃত্তে দাঁড়িয়ে কী দেখছি আমরা? সারা দুনিয়া জুড়েই বাড়ছে বন্যপ্রাণি ও মানুষের সংঘাত, Human - Animal Conflicts । এই অবস্থা নিশ্চয়ই কাম্য নয়,কারণ এর ফলে মানুষের পাশাপাশি মৃত্যু হচ্ছে বন্যপ্রাণিদের। ঝাড়গ্রামের হস্তিনীর মৃত্যু এমন ঘটনার সাম্প্রতিক উদাহরণ। এর ফলাফল গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে আমাদের পৃথিবীর বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যের ওপর – সম্পত্তিহানি, জীবিকার অবচয় সর্বোপরি জীবন নাশ – এসবের পরিণতি যে সুখকর নয় তা বোধহয় বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাস্তুতন্ত্রের সমস্যা শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম বা সমস্যা নয় এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা আর তাই এভাবে তন্ত্রের আবাসিকদের বিদায় নিতে হলে গোটা ব্যবস্থাপনাই নড়বড়ে হয়ে যায়। যেহেতু আমরা মানে হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির প্রাণিরা এই তন্ত্রের‌ই অধীনস্থ তাই আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো আখেরে। তাই এমন বিষয় নিয়ে আমাদের আরও আরও সরব হ‌ওয়া দরকার অথচ আমরা ততটা প্রতিবাদ মুখর ন‌ই।

    আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে মানুষ ও পশুর অস্তিত্ব এক সহাবস্থানের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আজকে হাতি,বাঘ বা গণ্ডারের সংরক্ষণ নিছক এক একটি প্রাণি প্রজাতির সংরক্ষণ নয়, সহাবস্থানের মতাদর্শের পরিপালন ও সংবর্ধন‌ও বটে। এক্ষেত্রে মানুষের দায়িত্ব অনেক বেশি কেননা তাঁদের অবস্থান বাস্তুতন্ত্রের একেবারে শীর্ষে। আসলে এই ক্রমবর্ধমান সংঘাতের পেছনে রয়েছে মানুষের আগ্রাসী মনোভাব। বন্যরা বনেই সুন্দর, বনেই তাদের আবাস, জীবনের যতেক আয়োজন। মানুষ‌ও তো একদা বনচারী ছিল, কিন্তু উন্নত মস্তিষ্কের গরিমায় আচ্ছন্ন হয়ে যেদিন থেকে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলো বিসম্বাদের সূচনা সেদিন থেকেই। মানুষের সংখ্যা যত বেড়েছে ততই কমেছে প্রকৃতির মুক্ত আবাসনের পরিসর তত কোণঠাসা হয়ে গেছে বনের একান্ত আবাসিকরা। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রীতিতে ভাঙচুর শুরু হয়েছে। হাল আমলে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। ফলে একসময়ের বহুল পশু সংখ্যা আজ কমতে কমতে নিশ্চিহ্ন হবার অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।

    ইউ টিউবে মাঝে মাঝেই ভেসে আসে মানুষ - পশুর দ্বৈরথের ছবি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাতিকে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখি বনের মধ্য দিয়ে চলা কোনো যাত্রীবাহী বাস,লরি বা ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর। প্রবল বিক্রমে শুঁড়ের আঘাতে গুড়িয়ে দিতে চায় গাড়িটিকে। দেয়‌ও। গাড়িতে থাকা মানুষদের তখন সঙ্গিন অবস্থা। গাড়িটিকে ভেঙেচুরে দিয়েও তার ক্রোধের উপশম হয় না। আরোহীদের পিষে ফেলতে চায়। আমরা মোবাইল ফোনে এমন রোমহর্ষক দৃশ্য দেখে শঙ্কিত হ‌ই, যাঁরা প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী তাঁদের কি হয় বুঝতে অসুবিধা হয় না। বন হলো তাদের আশ্রয়, নিভৃত যাপনের লীলাভূমি অথচ বনের মধ্য দিয়েই প্রসারিত হয়েছে সড়ক, রেলপথ। তাহলে ওরা কি করে ? জঙ্গলের ক্ষেত্রফল যত কমছে ততই বাড়ছে মানুষ - পশু সংঘাত।

    অতি সম্প্রতি পশু পীড়নের এক নতুন তামাশা শুরু হয়েছে পর্যটন শিল্পের হাত ধরে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে অবাধে চলছে গাড়ি। প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্ব থেকে বন্য প্রাণিদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে বন দফতর। করবেট ন্যাশনাল পার্ক,রনথম্ভোর টাইগার রিজার্ভ, তাদোবা প্রভৃতি ব্যাঘ্র আবাসের পরিচালকরা গ্যারান্টি দিয়ে বাঘ দর্শনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পর্যটকরা হামলে পড়েছে। উৎসাহী পর্যটকদের উল্লাস, ক্যামেরার ঝলকানি বন পরিবেশের ভারসাম্যকে নিয়ত বিঘ্নিত করছে। এও এক পীড়ন , এও এক গর্হিত কাজ। কে শোনে কার কথা। ইউ টিউবে মাঝে আপলোড করা এক ভিডিওতে দেখা যায় একদল লোলুপ পর্যটকের গাড়ির সামনে দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে শাবক সহ এক বাঘিনী। একবার হালুম বলে প্রতিবাদে গর্জে উঠলে কি হবে? এমন সব ছবির ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে বীরপুঙ্গবেরা দেদার পয়সা কামাচ্ছে। এতেই আনন্দ।

    নগর জীবন প্রবলভাবে কেড়ে নিচ্ছে বনচারী প্রাণিদের আবাস ক্ষেত্রের পরিসর। পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ার অর্থই হলো ভূমি সম্পদের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। কৃষির সম্প্রসারণ, বসতি এলাকার প্রসার ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন এসব‌ই প্রাণিদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রের বিনিময়ে ঘটেছে। সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল বাস্তু পরিবেশের শৃঙ্খলা আজ বিপন্ন কেবল বেড়ে যাওয়া বসতির কারণে। ঐ অঞ্চলের মানুষ মাছ,মধু, কাঁকড়া, মীন সংগ্রহ করতে প্রবেশ করছে অরণ্যের গভীর থেকে গভীরতর অংশে এবং বাঘের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বন্য প্রাণিদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রের ওপর মানুষের এমন অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে মানুষ - পশুর দ্বৈরথের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উভয়েই। এমনটা কোনো অবস্থায়ই অভিপ্রেত নয়। অথচ আমরা চাই বা না চাই এমন ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

    বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাবার পাশাপাশি পরিবেশ মানের ব্যাপক অবনমনের ফলেও এমন অনভিপ্রেত সংঘাতের সংখ্যা নিয়ত‌ই বেড়ে চলেছে। অতি সম্প্রতি বন্যায় বানভাসি গুজরাট রাজ্যে বসতি অঞ্চলে কুমীরের হানাদারির ঘটনা সকলের‌ই নজরে পড়েছে। জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে আসার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন মানুষের দৌরাত্ম্যে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য হারিয়ে গেছে। ভাদোদরার বিশ্বামিত্র নদের জল আজ মানুষের যথেচ্ছাচারের ফলে ভীষণভাবে কলুষিত। নোংরা জলে থাকতে বাধ্য হ‌ওয়ার ফলে মানসিক পীড়নের মাত্রা বেড়ে যায়, তাদের মধ্যে তৈরি হয় অসহিষ্ণুতা, আর তখনই তারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। নদীতে স্নান করতে অথবা গৃহস্থালি কাজে আসা মানুষজন কুমীরের আক্রমণের মুখে সহজ শিকার হয়। এও পারস্পরিক সংঘাতের এক অনিবার্য প্রতিফল। গবেষকরা জানিয়েছেন যে বন্যপ্রাণিরা নিজেদের মতো নিরিবিলিতে থাকতে ভালোবাসে, তাদের এলাকায় মানুষের অবাঞ্ছিত খবরদারি তাদের বিলকুল না পসন্দ। সেকথা মানুষ মানবে কেন ? আসলে মানুষ‌ই তার বিবিধ কাজকর্মের সূত্রে নিরন্তর সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে চলেছে।

    পাশাপাশি এ কথাও মাথায় রাখতে হবে যে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষ ও পশু উভয়ের জন্যই বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে আনছে। উষ্ণায়নের ফলে জমে থাকা বরফের স্তূপ গলে যাচ্ছে, সেই জল বাড়িয়ে দিচ্ছে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা যার দরুন তলিয়ে যেতে পারে উপকূলীয় এলাকার বিস্তির্ণ পরিসর। বিপদের কবলে পড়তে পারে সুন্দরবন। আচ্ছা,তেমনটা যদি সত্যি হয় তাহলে বাঘেরা কোথায় যাবে? নিজেদের বাঁচাতে লোকালয়ে চলে এলে কি হবে ? আমরা ভেবেছি সে কথা? গবেষকরা জানিয়েছেন জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বন্য প্রাণিদের পরিযান পথের পরিবর্তন ঘটছে , বাড়ছে মানুষ পশুর দ্বৈরথের মাত্রা।

    এই বিষয়টি আজ আমাদের কাছে হয়তো পরিস্কার হয়ে গেছে, যে পারস্পরিক সহাবস্থানের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত বাস্ততান্ত্রিক ভারসাম্যের বিষয়টি তা আজ বিপন্ন। গভীর চিন্তার বিষয় হলো এই যে আমাদের দেশের নানান প্রান্তেই এমন সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এই পারস্পরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে পশুকুলের যারা কাঠগড়ায় হাজির তাদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে হাতি। এছাড়াও আছে বাঘ, সিংহ, চিতা, নেকড়ে। হাতির আক্রমনে মানুষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। ঝাড়গ্রামের হস্তিনীর কথাই ধরা যাক। মাঠে মাঠে এখন হালকা বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে কচি ধানগাছ। দীর্ঘ খরার সময় পেরিয়ে দেখা মিলেছে বৃষ্টির। কৃষকদের মনে স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। হেনকালে হায় হাতির হানা! হাতি তাড়াতে ডাক পড়ল বন দফতরের হুলা পার্টির যারা হাতি খেদানোর কাজ করে। এই দলের সদস্যদের ছোড়া বর্শার আঘাত স‌ইতে না পেরেই মারা যায় হস্তিনীটি। ময়নাতদন্তের পর জানা গেল সে গর্ভবতী ছিল। কি করুণ পরিণতি! ঝাড়গ্রাম তথা মানভূম অঞ্চলের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে এই মৃত্যু ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মন্ত্রী মহোদয়া প্রতিকারের আশ্বাস দিয়েছেন, এসেছে নতুন ধরনের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত রকেট লঞ্চার গজশস্ত্র। বারুদের পরিবর্তে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে কার্বাইড। এই নতুন প্রযুক্তি যদি হাতিদের হানা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তাহলে তা স্বাগত।

    মানুষ - পশুর এমন সংঘর্ষের ঘটনায় সবথেকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সমাজের একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের। সুন্দরবনের মানুষকে রুজি রুটির জন্য জঙ্গলে যেতেই হয় ,ফলে বাঘ বা কুমীরের সহজ শিকার হয় তাঁরা। এভাবেই জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী পশুপালক, কৃষক, কাঠুরে অথবা বনবাসী মানুষজন বন্য প্রাণিদের আক্রমণের মুখে পড়ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের বার্ষিক ফসল, বাগিচা, ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে জীবন পর্যন্ত। আবার বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে। বাঘ জাতীয় পশু, বর্তমানে ক্রম ক্ষীয়মান এক অনন্য প্রাণি। তাকে সংরক্ষণ করা দরকার। এই বিষয়ে কেউই দ্বিমত পোষণ করবেন না। কিন্তু তারজন্য যদি আবাসিক মানুষকে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয় তবেতো প্রতিবাদ হবেই।

    এই মুহূর্তে ভারতে টাইগার রিজার্ভের সংখ্যা ৫৫ টি। মোট ৭৮০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এগুলো যা দেশের মোট ক্ষেত্রমানের ২.৩ % । সরকারের সিদ্ধান্ত এই এলাকা বাড়াতে হবে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে প্রায় ৫.৫ লক্ষ লোক এই সম্প্রসারণের ফলে বাস্তুচ্যুত হবেন। মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষদের এই সমস্যায় ভুগতে হবে। এও যে বাস্তবে মানুষ পশু সংঘাতের‌ই একটা রূপ তা বুঝতে পারি আমরা। এই মুহূর্তে সংঘাত কমানোর জন্য সর্বাত্মক প্রয়াসের প্রয়োজন। অরণ্যের প্রাকৃতিক পরিসরকে বাড়াতে হবে যে কোনো উপায়ে,পশুদের আবাসভূমিতে পর্যাপ্ত খাবারের সংস্থান করতে হবে যে কোনো মূল্যে। চাই সংবেদনশীল দৃষ্টিতে সমস্যার মূল্যায়ন। পর্যটনের নামে বনাঞ্চলের ভেতরে অবাধে মানুষের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। একদিনেই সব বদলে যাবে এমনটা নয়, তবে এখন আর বিলম্ব নয়। আজ সংঘাতের ক্ষেত্রগুলোকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করে এই পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিকে পুনর্মূল্যায়নের করার প্রয়োজন রয়েছে যাতে আমাদের সহাবস্থানের আদর্শের প্রতি সকলেই বিশ্বস্ত থাকতে পারি। এমন ভাবনার বাস্তবায়ন আশু লক্ষ্য হোক।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:1078:f2f1:8000::***:*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:২০537885
  • এক দরদী অবলাপ্রেমিকের অন্তর্যন্ত্রনার চিত্র । সত্যি আমাদের  যেন প্রকৃতিকে ও তার অপর অপত্যদের অধিকারেই আনন্দ। সহাবস্থানের সুখে আমরা সন্তুষ্ট নই। 
    লক্ষ্মীকে লেখক আবার মনে করিয়ে দিলেন।
  • Ritabrata Gupta | 103.68.***.*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:১২537888
  • আমরা  হাইওয়ে ,  এয়ারপোর্ট ,  কল  কারখানা  বানাতে  গিয়ে  কোথায়  চলেছি ?  আমাদের  ধ্বংস  আসন্ন !
  • পলি মুখার্জি | 2409:4060:111:7706:57bb:7b3b:edaa:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:২০537943
  • মানুষের কাছে জীবকুল জাস্টিস চাইছে। মানুষের হেলদোল নেই। এ সবের জন্য মানুষকেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে। মূল্যবান লেখা। এসব নিয়ে কবে আমরা মুখ খুলবো ?
  • বিপ্লব রহমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৩537962
  • আমরা সভ্য হচ্ছি, সভ্য হচ্ছি, আরও সভ্য হচ্ছি!? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন