আমাদের খামার, ডিসেম্বর ২০১৯
ঠিক যখন ভোরের নরম আলো পূবদিকের জানলা দিয়ে বিছানায় চুঁইয়ে পড়ে, উত্তরদিকের জানলার বাইরে কর্কশ গলায় গগনভেদী চিৎকার জোড়ে সাদা-নীল মাছরাঙাটা, প্রতিদিন। আমি ঘুম থেকে উঠলেই, ও ঠিক উড়ে যায় পশ্চিমে পুকুরপাড়ে, নিজের কাজে। যেন ওর রোজকার প্রথম কাজটা হল সারা। তিতিবিরক্ত আমি ঘুম চোখে গুটি গুটি পেছনের দরজা খুলতেই বিস্ময় -- এখনও, রোজ দেখি তবুও! তাজা বাতাসে খোলতাই বুকভরা নিঃশ্বাস, রঙ-রস-সুগন্ধ-সুরে ভরা প্রকৃতির বিভিন্ন স্তরে প্রাণ বৈচিত্র্যের জোয়ার। ফলসা গাছে মৌমাছিদের মোচ্ছব, গোলাপজাম গাছে সিকাডাদের orgy, ডালিম গাছে শীর্ষাসনরত টুনটুনিদের দল, পাকা পেঁপে তাক করা একখানি দোয়েল, কিম্বা পুকুরের ওপারে সার দেওয়া কলাগাছে বাদাবকের হাট -- সব মিলে যেন ব্যস্তসমস্ত প্রকৃতির প্রাচুর্যের প্রদর্শনী চলছে। মনে মনে ভারি আহ্লাদিত হয়ে পড়ি এই ভেবে যে ভাগ্যিস চলে এসেছিলাম আমরা শহুরে চাকরিনির্ভর পরজীবী জীবন ছেড়ে, বহুদূরে। গতজীবনের কুড়ি ভাগের এক ভাগও রোজগার না করে দিব্যি চলে যাচ্ছে তো জীবন, প্রায় বছর ছয়েক ধরে। ঐ জীবনের অর্থনির্ভরতার মধ্যে স্থায়ীভাবে নিহিত থাকা যে এক নিরাপত্তাহিনতাবোধ আর সেই সংক্রান্ত মানসিক চাপ এই জীবন থেকে কখন যে (আর কেনই বা) উবে গেছে তা বুঝতেও পারিনি। বোধহয় এই জল-জঙ্গল-জমি নির্ভর জীবনে গোলা ভরা ধান, বস্তাভর্তি ডাল কিম্বা পুকুরের মাছ এক অন্যরকম স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে খুব সহজপথে সরাসরি এনে দেয়, যা শহুরে জীবনের ব্যয়বহুল, অজানা উৎসের উপার্জন নির্ভরশীল জীবনযাপন কোনভাবেই দেয় না। ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে বিষাক্ত খাবার কিনে আনার বদলে প্রতিটি আহারের আগে বাগানে গিয়ে টুকটুক করে পৃথিবীর সবচেয়ে টাটকা, বিষহীন, স্বাদেগন্ধে ভরপুর দুচারটি শাকসবজি সংগ্রহ করে রান্না করে খাওয়া যে ঠিক কতটা পরিতৃপ্তির তা আগে কখনো ভাবিনি। নিজেদের খামারে উৎপন্ন করে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, শাকসবজি, ফল, মাছ, হাঁসের ডিম কিম্বা কখনো নিজেদের তৈরি করা পাউরুটি বা পিৎজা যখন নিজের সন্তানের সামনে পরিবেশন করি, তখন সত্যিকারের একধরনের ভালোলাগা এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ গড়ে ওঠে আমাদের মনের গভীর কোণে।
নিউ ইয়র্ক সিটি, এপ্রিল ২০০৫
সারা রাত ড্রাইভ করার ক্লান্তি মিলিয়ে গেল কোথায়। এই নিয়ে তৃতীয়বার, কিন্তু ঘোর কাটে না, মোহ ঘোচে না, দুই চোয়াল কিছুতেই এক হয় না, যতবার দেখি হাডসন খাঁড়ির নীল জলের পাড়ে সার দিয়ে দাঁড়ানো গগনচুম্বী ইমারতের সারি। গাড়িটা যখন দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে ওয়াশিংটন ব্রিজের উপর দিয়ে, তখন মনে হয় ছুঁয়ে ফেলেছি স্বপ্ন -- ছোটবেলায় কতবার দেখা, সিনেমায় টিভি পর্দায় ম্যাগাজিনের পাতা থেকে উঠে আসা ছবি। এই দৃশ্যের আচমকা অভিঘাতে ত্বরান্বিত হৃদস্পন্দন যে ঠিক কতটা সহজাত, আর কতটাই বা লব্ধ, তা বুঝে উঠতে পারি না। ইউনাইটেড নেশনস থেকে মেট্রোপলিটন আর্ট গ্যালারি, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে সেন্ট্রাল পার্ক, বিশ্বের সব দেশের রেস্তরাঁ, বার, পাব, নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ব্রডওয়ে শো -- টুকরো টুকরো সংকেতের মতো ফটোক্রোমাটিক ডোজে প্রতিনিয়ত গিলতে গিলতে কখন যেন চাক্ষুষ দেখার খিদেটা মস্তিষ্কের ‘বাসনা’-সেগমেন্টের কোনো গহীন রন্ধ্রে গিয়ে প্রবেশ করেছিল! টাইম স্কোয়ারের আলোঝলমলে চলমান হোর্ডিং কিম্বা দিনরাতব্যাপী বহতা জনস্রোত ঝিমধরা আঠালো নেশার মতো আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এও যে একধরনের মগজধোলাই। মনের মধ্যে কোনও এক জাদুশক্তির বলে গেঁথে গেছে একধরনের ক্রমিক সংখ্যার বোধ, সাফল্যের মাপকাঠি। পৌঁছে গেছি পৃথিবীর এক নম্বর শহরে। ফিনানশিয়াল হাউস আর ফরচুন 500 কোম্পানিগুলোর অনেকগুলোর সদর দপ্তর এখানে -- এই তথ্যকে বোধ হয় অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় আমাদের পুঁজিবাদী সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মস্তিষ্ক। ভয়ঙ্করভাবে অগ্রাহ্য করে আরও প্রয়োজনীয় তথ্য -- বেঁচে থাকার জন্য সবথেকে জরুরি উপাদান, জল আর খাদ্যের উৎসস্থল এখান থেকে ঠিক কত দূরে? নির্বোধের জগতে অর্থনৈতিক চাকচিক্যের অনেক তলায় চাপা পড়ে থাকে জীবনের আসল রসদের সুলুক। প্রকৃতি অলক্ষ্যে হাসে।
টাইমস স্কোয়ার, ২০০৫
গ্রহ পৃথিবী, মার্চ ২০২০
পৃথিবী ত্রস্ত করোনার দাপটে। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে লকডাউন ঘোষণা করছে রাষ্ট্রনেতৃত্ব। ভারতে ২৫শে মার্চ লকডাউন চালু হল। মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি, যারপরনাই আতঙ্কিত। খুবই অল্পসংখ্যক লোক, যারা নিতান্তই প্রয়োজনে বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরা মাস্ক পরিহিত, কাছাকাছি অন্য কোন মানুষ দেখলে লম্ফ দিয়ে দশ হাত তফাতে সরে যাচ্ছেন, স্বাভাবিক সৌজন্য বিনিময়ে একেবারেই অনুৎসাহী। ঠিক যেন হলিউডি সাই-ফাই মুভির কোনও ডিসটোপিক দৃশ্য। ওয়ার্ল্ডওমিটার-এ দ্রুত বাড়তে থাকে রোগাক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। চারিদিকে থমথমে ভাব। সামাজিক জীব মানুষ যখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি, বাস্তব যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন ভেঙ্গে পড়েছে, একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম যখন আন্তর্জাল কিম্বা টেলিফোন, সামাজিক বুনোটগুলি আলগা হতে থাকে ক্রমশ, বিচ্ছিন্ন হতে থাকি আমারা একে অপরের থেকে, দুর্বল হয়ে পড়ি। এই মনস্তাত্বিক আবহে আমাদের গোগ্রাসে গিলতে থাকে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবেশিত তথ্যের প্লাবন, তত্বের কুটিল জাল। একাকী আমাদের উপায় থাকে না কোনকিছু যাচাই করার। বিশ্বজুড়ে এইসব গণমাধ্যমগুলি নিয়ন্ত্রণ করে মুষ্টিমেয় কিছু ক্ষমতাশালী মানুষ। ফলে এই পরিস্থিতিতে সমস্ত মানুষের বোধ অনুভূতি, বা ভাবাবেগ কোনও অভীষ্ট দিশায় চালনা করা এই মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে হয়ে দাঁড়ায় অতীব সহজ ব্যাপার।
আমাদের খামার, ২৫শে মার্চ, ২০২০
মাছরাঙাটা এসব গুরুগম্ভীর পরিস্থিতির কিছুই বোধ হয় ঠিক মতো ঠাহর করতে পারে নি। রোজকার মতো আজও প্রাত্যহিক হাঙ্গামা বাধিয়ে দিলো। আমি হুড়মুড়িয়ে উঠে প্রতিদিনের মতোই খামারের প্রকৃতি উপভোগে নিজেকে নিয়োগ করলাম। একটু বেশিই যেন চুপচাপ চারপাশ। শুধুই প্রকৃতির নিজস্ব শব্দ, কী একটা যেন নেই। হঠাৎ খেয়াল হল যে অজানা উৎস থেকে ভেসে আসা কোন যান্ত্রিক শব্দ নেই , খেয়াল হল আজ থেকে লকডাউন শুরু। স্বাভাবিক মানুষের দুঃসময়োচিত সহজাত উৎকণ্ঠা নিয়ে বারান্দায় ফিরে এলাম। খাবারের মজুত ঠিক আছে তো? বারান্দার সার দেওয়া ধানের বস্তা আশ্বাস দিলো, আছে। দূরে দু কাঁদি কাঁচকলা, গাছভরা পেঁপে, ডুমুরের থোকা মাথা ঝুঁকিয়ে জানান দিল, আছে। টিনে রাখা মুসুরির ডাল, রান্নাঘরে ঝুলন্ত বিনুনি বাঁধা পেঁয়াজের সারি ভরসা যোগাল। পুকুরে সাঁতার কাটতে যাওয়ার আগে ফল কুড়িয়ে আনল আমাদের মেয়ে একটা ছোট্ট ঝুড়ি ভর্তি করে -- সবেদা, পাকা পেঁপে, গোলাপজাম, কাঁচা আম। রোজকার মতো বাগানের কাজ, গৃহস্থালির কাজ, রান্নাবান্নার কাজ করতে করতে কখন যেন মাথা থেকে উবে গেল যে আজ অন্যরকমের একটা দিন, আমাদের আর পাঁচটা দিনের থেকে আলাদা। দুপুরবেলা খেতে খেতে দুশ্চিন্তা হল আমাদের পাড়ার বাকি লোকজনের জন্য। আমাদের নয় খাবার দাবার মজুত আছে, ওদের কী হবে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমরা গ্রামে যে পাড়াটায় থাকি, এখানে বেশির ভাগ পরিবার ভূমিহীন, দিনমজুরি করে সংসার চালায়। বিকেলে এক কাঁদি কাঁচকলা নামিয়ে ভাগ করে রাখলাম পাড়ার কয়েকটি পরিবারকে পরের দিন দেবো বলে। কিন্তু কাউকে কিছু দেওয়ার আগেই, এক পরিবার থেকে আমাদের জন্য ঝিনুকের ঝোল রেঁধে পাঠানো হল। পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ধরা ঝিনুক। মূলস্রোতা অর্থনীতির সবচেয়ে নিচের ধাপের পরিবার নিজেদের জন্য খাবারটুকু রেখে বাকিটা বিলিয়ে দিলো। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার, পরিবর্তে ওদের দিই কাঁচকলা! এইভাবে বিনিময় প্রথায় কখনো আসে আধখানা লাউ, কখনো আসে শাক। আমরাও কখনো পেঁপে, কখনো কাঁচকলা, কখনো পুকুরের মাছ দিতে থাকি। ওদের নিশ্চিন্ত ভাব, প্রাত্যহিক রুটিনে বাঁধা জীবনযাপন, আমাকে আরও ভরসা যোগায় যে এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব, সবাই মিলে, একসাথে। আমূল বিপরীত চিত্র পাই আমার মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, শহুরে বন্ধুবান্ধবকে দূরভাষে ধরলে -- সে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডন কিম্বা সানফ্রান্সিসকো যেখানেই হোক না কেন। বিশ্বায়নের দুনিয়ায় সর্বত্রই এক চিত্র। আসন্ন মহামারির ভয়, খাদ্যসংকটের ভয় তো আছেই, তার সাথে যোগ দেয় গভীর অনিশ্চয়তা -- করোনা-উত্তর যে অর্থনৈতিক মন্দা আসছে তাতে চাকরিটা টিকবে তো! কী ভাবে তাহলে চলবে সংসার, আসবে কোত্থেকে ই এম আই-এর টাকা?
নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্চ ২০২০
সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখো না -- বিজ্ঞজনের এই প্রবাদ থেকে বহুদূরে সরে এসে মূলস্রোতা অর্থনীতি চায় যে পৃথিবীর প্রত্যন্ত ডিমও যেন এসে পড়ে এক কেন্দ্রীভূত ঝুড়িতে আর তার নিয়ন্ত্রণ থাকে যেন স্বল্পসংখ্যক ঝুড়িওয়ালাদের হাতে। সেইসব ঝুড়ি বা ঝুড়িওয়ালাদের বেশিরভাগের বাসভূমি, যাকে বলে মূলস্রোতা অর্থনীতির পীঠস্থান, সেখানে কী ঘটছে দেখা যাক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আনাগোনা, বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সাথে বাণিজ্য, বিমান যোগাযোগ এই শহরের। অনতিবিলম্বে অতিমারী এসে পৌঁছোয় এখানে। জনঘনত্বের কারণে তা ছড়াতে থাকে দ্রুত বেগে। হাসপাতালের বেড উপচে পড়ে রোগাক্রান্ত মানুষের ভিড়ে। অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া পরিষেবা মৃত্যুর মিছিল সামলাতে হিমসিম খেয়ে যায়। অফিস কাছারি শপিং মল সব বন্ধ -- জরুরি পরিষেবা বাদে। আন্তর্জালে দেখতে থাকি ছবি। জনশূন্য টাইম স্কোয়ার। সেন্ট্রাল পার্কে নেই কোন চুম্বনরত যুবক-যুবতী কিম্বা হেলমেট-স্কেটিংবোর্ডঅলা কিশোর-কিশোরী। দুই সারি অট্টালিকার মাঝে ঝকঝকে রাস্তায় কোন এক জাদুবলে মুছে গেছে স্বাভাবিক জনস্রোত। ঘণ্টা-মজুরদের চাকরি নেই। জানে না পরের আহার আসবে কোত্থেকে। কিম্বা বাড়ি ভাড়ার বিশাল অঙ্ক। জানে না জীবন আবার স্বাভাবিক হবে কবে। স্কুল ছুটি। একবেলার ফ্রি মিলের উপর নির্ভরশীল পড়ুয়ারা অভুক্ত, অল্পভুক্ত। বেঁচে থাকার সবচেয়ে জরুরি উপাদান খাদ্যের ব্যাপারে পরজীবী শহর ধুঁকছে আতঙ্কে, সুদীর্ঘ সরবরাহ শৃঙ্খলে টান পড়লে যে অতিমারীর সাথে সাথে দুর্ভিক্ষও এসে কড়া নাড়বে দরজায়!
টাইমস স্কোয়ার, মার্চ ২০২০
(সূত্র: https://www.reddit.com/r/woahdude/comments/fjskpk/times_square_because_of_coronavirus/)
করোনা-পরবর্তী দুনিয়া রচনা
এ যেন এক ছবির লড়াই -- এক ধরণের ছবি বনাম অন্যধরনের ছবি। কোন ছবির দিকে ঝুঁকবে দুনিয়া, করোনা-পরবর্তী সময়ে? দুনিয়া মানে তো শুধু বিশ্ব নেতৃত্ব নয় -- দুনিয়া মানে আমরাও, আমি, আপনি, আমরা সাধারণ মানুষ! আমাদের ক্ষমতা কিন্তু খুব সীমিত নয়। আমাদের ক্ষমতা এবং অবশ্যই সক্ষমতার উপর দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতি। দুধরনের ছবিই আঁকার চেষ্টা করেছি আমি, এখানে। এই লকডাউনের অবসরে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে, সত্যি বা সত্যি-মিথ্যে মেশানো খবর, কিম্বা কোন রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্বে গা না ভাসিয়ে, আসুন বরং মানসচক্ষে দেখার চেষ্টা করি ভবিষ্যতের দুনিয়াটা।
ছবি একঃ বুদবুদ-অর্থনীতি ও উন্নয়নের গতানুগতিক মায়াজাল
প্রথম ধরণের ছবিতে খুব একটা সৃজনশীলতা নেই -- আমাদের কোনরকম প্রচেষ্টা বা ভাবনাচিন্তাবিহীন, গতানুগতিক। লকডাউনের আগের মতোই ছবিটা -- কিন্তু আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি ভয়াবহ। অর্থনৈতিক মন্দা আসন্ন। চাকরি ছাঁটাই, মাইনে কাটাই -- এইসব দাওয়াই নিয়ে আসছে একেকটা কোম্পানি। সাধারণ মানুষ দিশেহারা আয়ের উপায়গুলি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায়, যার পরিণামে সর্বত্র হতে চলেছে ব্যয় সংকোচ -- মানুষ অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনবে কম। কিন্তু এই ফাঁপা মুলস্রোতা অর্থনীতির ভিত্তিই যে হল উপাদানের প্রবাহ (material flow)। প্রকৃতি দোহন করে, প্রাণ বৈচিত্র্য নষ্ট করে, পরিবেশ দূষিত করে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জীবনধারণের সমস্ত সম্পদ লুঠ করে, একদিকে বানিয়ে যেতে হবে আর অপরদিকে কিনতে থাকতে হবে অপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য। একমাত্র তাহলেই সম্ভব অর্থনৈতিক উন্নতি। তা এই দীর্ঘস্থায়ী আশু মন্দার মধ্যে টিকে থাকার ক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র স্বল্পসংখ্যক বৃহৎ পুঁজির, আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে স্বল্প ও মাঝারি পুঁজির ব্যবসা। ফলে আমরা দেখতে পাব যে একের পর এক ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা গিলে নিচ্ছে বৃহৎ সংস্থা। আরও বেশি করে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ – জল-জঙ্গল-পাহাড়ের আসল মালিকানা। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল আরও দীর্ঘ হবে। এবং পরবর্তীকালের অতিমারী কিম্বা অন্য কোন বিশ্বব্যাপী সংকটের মুখে তা হয়ে পড়বে আরও বেশি দুর্বল ও ভঙ্গুর।
অন্যদিকে এই ভাইরাসের বাজারে, গণমাধ্যমগুলি মোটামুটি একটা জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যে মানুষের নিজেদের ভালোর জন্যই এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে সরকারের তরফে আরও আরও নজরদারি শুরু করা প্রয়োজন। বিশ্বের তাবড় তাবড় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা এবং সরকার এক্কেবারে প্রস্তুত ছিল নজরদারির অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি নিয়ে। শুধু দরকার ছিল এই জনমতের, সুযোগ করে দিলো করোনা। মানুষের ব্যক্তিগত পরিধিতে ঢুকে সমস্ত তথ্য কুক্ষিগত করতে পারলে খুব সহজ হয়ে যায় শাসন ও শোষণ। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রকৃতি দোহনের পথ আরও মসৃণ রাখা হল সরকারের অন্যতম কাজ। তাই পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ক্রমাগত লঘু করা থেকে জঙ্গল কেটে, পাহাড় কেটে খনি খোদনের অনুমতিদান, কোনরকম প্রতিরোধকে ‘উন্নয়নের পরিপন্থী’ বলে দেগে দিয়ে রাষ্ট্রশক্তি কাজে লাগিয়ে দমন, ইত্যাদি কাজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার খুব যত্ন সহকারে, দায়িত্ব সহকারে করে আসছে। এবং আগামীদিনে উত্তরোত্তর আরও বাড়াবে, কারণ প্রাকৃতিক সম্পদ তলানির খুব কাছাকাছি। কোনও প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে আমল দিলে চালান-জোগানের এই চলমান কনভেয়ার বেল্ট ব্যাহত হবে। সুতরাং যতরকমের নজরদারি-প্রযুক্তি আছে, কাজে লাগিয়ে মানুষকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে, যে কোন আন্দোলন এক্কেবারে গোড়াতেই নির্মূল করতে হবে। পৃথিবীর শেষ জঙ্গল, শেষ পাহাড়, শেষ নদী নিংড়ে না নিলে উচ্চবিত্তের পুঁজি আর মধ্যবিত্তের চাকরি কিম্বা ভোগবাদী জীবনের রসদ আসবে কোত্থেকে? সুতরাং ভবিষ্যতের দুনিয়ায় আরও বেশি করে দেখতে চলেছি কাগুজে গণতন্ত্র, লুপ্তপ্রায় মানবাধিকার, ক্রমবর্ধমান একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, এবং বিষাক্ত পৃথিবী।
ছবি দুইঃ বিকল্প সুস্থায়ী স্বনির্ভর অঞ্চলভিত্তিক অর্থনীতি
বিকল্প ছবিতে নেই চাকচিক্য। ছুটিছাটাতে টুক করে বেরিয়ে আমরা যেমনটা খুঁজে থাকি, অনেকটা সেরকম। জল, জঙ্গল, জমি, পশু, পাখি, বিশুদ্ধ খাবার, তাজা নিঃশ্বাস। আর আছে এইসবকে ভিত্তি করে একদম মাটি থেকে গড়ে ওঠা বিকেন্দ্রিক স্বনির্ভর স্থানীয় অর্থনীতি। এই অর্থনীতি টেঁকসই, এর গভীরতা হাজার হাজার বছরের। গ্রাম কিম্বা জঙ্গল নাগালের মধ্যে না থাকলে, শহরেও গড়ে তোলা যায় এই ধরণের অর্থনীতি। নব্বই-এর দশকে আমেরিকা কিউবার উপর অবরোধ জারি করার পর, কিউবা হেঁটেছিল এই রাস্তায়। ভাবতে পারেন, কলকাতার মতো একটা বড় শহর হাভানা তার খাদ্য চাহিদার 90% উৎপন্ন করে নিচ্ছিল শহরের মধ্যেই?
এই জীবনচর্যায় প্রতিনিয়ত আমাদের প্রতিবেশ নিরীক্ষণের মাধ্যমে জানতে হয় বুঝতে হয় সব রকম স্থানীয় সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষমতা, স্থায়িত্ব আর পুনর্নবীকরণযোগ্যতা সম্বন্ধে। এক চিলতে রোদ্দুর, বৃষ্টির জল, ছাদে-ফুটপাথে-বারান্দায়-পার্কের ফাঁকা জায়গার উন্মুক্ত মাটি, রান্নাঘরের-বাগানের-বাজারের বর্জ্য, ঝরে পড়া শুকনো পাতা, ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া গাছের ডাল, আপনার আমার মিলিত উদ্ভাবনী শক্তি, শিক্ষা, কর্মক্ষমতা, সংগঠিত করার ক্ষমতা -- এসবই এলাকার স্থানীয় সম্পদ। অন্য কোনও দূরবর্তী অঞ্চলের প্রকৃতি-প্রতিবেশকে শোষণ না করেও এই সব সম্পদকে ভিত্তি করে গড়ে তুলতে পারা যায় এক বিকল্প অর্থনীতি। অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বন্ধ করতে হবে প্রথমেই। ফলে ব্যয় কমবে। প্রকৃতির উপর চাপ কমবে। নিজেদের উপরও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের চাপ কমবে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে হবে -- স্থানীয় সম্পদ, নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সেই জল কাজে লাগিয়ে চারপাশের ফাঁকা জায়গায় চাষ করতে হবে শাকসবজি, খাদ্যশস্য, লাগাতে হবে প্রচুর ফলের গাছ। জৈব এবং যতদূর সম্ভব স্থানীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য মাটির উর্বরতা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। খাদ্যের ব্যাপারে যতদূর সম্ভব স্বনির্ভর হতে হবে। স্থানীয় উপাদান কাজে লাগিয়ে স্থানীয় খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে, পরিবহণ কমবে, দূষণ কমবে এবং যে কোনরকম বিশ্বসংকটের মুখে তা আমাদের ভরসা জোগাবে। বাড়ীর, বাগানের, বাজারের ও নিকটবর্তী পার্কের জৈব বর্জ্য থেকে তৈরি করতে হবে compost সার। এই সার আমাদের বাগানের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট, এবং কোনও রকম অর্থ, সরকার বা কোম্পানির উপর এর জোগান নির্ভর করে না। স্থাপত্য নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে ঠিক কী কী স্থানীয়, প্রাকৃতিক এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য উপাদান দিয়ে বসবাস নির্মাণ করতে পারি, যা কি না শক্তি সাশ্রয়ীও হবে -- বাতানুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে দরকার পড়বে না শক্তিঅপচয়ী কোনও সরঞ্জামের। বাস, ট্রাম, ট্রেনের মতো গনযানবাহন, এবং সাইকেল ব্যবহার করতে হবে বেশি করে। সাইকেল লেন রাখতে হবে প্রতিটি রাস্তায়, যাতে যানবাহনজনিত দূষণ কমে এবং সাশ্রয় হয়। ছোট্ট পরিসরে আমাদের যা কিছু দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি তার সদ্ব্যবহার করে প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন জরুরি সামগ্রী তৈরি করে নিতে হবে। এজন্য দরকার হলে নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমাদের অর্থ, শ্রম ও বুদ্ধি স্থানীয় অঞ্চলে বিনিয়োগ করে আমাদের চারপাশে যত দূর সম্ভব গড়ে তুলতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ কমিউনিটি -- তাতে চালু করতে হবে পরিপূরক সামগ্রী ও পরিষেবার বিনিময় ব্যবস্থা। নতুন প্রজন্মকে আমাদের অর্জিত দক্ষতা এবং জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের মধ্যে যারা এখনই গ্রামে বসবাস করছি বা বসবাস করার কথা ভাবছি, তাদের দেখতে হবে গ্রাম-শহরের সম্পর্ক যেন খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে পারে। আজকের দিনের গ্রাম, বছর চল্লিশ হল স্বনির্ভরতার রাস্তা থেকে সরে এসে শহুরে অর্থ নির্ভরতার দিকে ঝুঁকেছে। সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আছে গ্রামে, আছে সামগ্রী তৈরির দক্ষতাও। অন্যদিকে গ্রামের মানুষকেও বেঁচে থাকতে গেলে খেতে হয়, নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে হয়। ফলে উৎপাদন-ব্যবহারের চক্র যত ছোট করা যাবে, ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রকৃতির সীমাবদ্ধতার বিষয়ে অঞ্চলের মানুষের স্পষ্ট ধারণা থাকবে। একেকটি অঞ্চলের প্রতিবেশের ধারণক্ষমতা এবং আঞ্চলিক উদ্ভিদ-প্রাণী-মাটি-বৃষ্টি-রোদ্দুর-ঝড়কে মাথায় রেখে গড়ে উঠবে আঞ্চলিক জীবনচর্যা।
বিকল্প ছবি, না গতানুগতিক?
ইতিহাস বলে, সংকট মানুষকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, সমাধানের পথ বাৎলে দেয়। করোনাভাইরাস থমকে দিয়েছে উন্মত্ত পৃথিবীর অর্থহীন দৌড়, হয়ত সাময়িকভাবেই। অভূতপূর্ব এই বিশ্বজোড়া মানুষের এতটা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা, নিজের ঘরের চৌহদ্দিতে। এই পড়ে-পাওয়া সময় হয়ত প্রকৃতির দান, কিম্বা প্রকৃতির পাঠানো কোনো সংকেত -- অন্তর্দর্শনের ডাক। আরও অনেক বড় বড় সঙ্কটের সূচনায় করোনা হয়ত এক ছোট্ট যতিচিহ্নের মতো -- পেট্রোলিয়াম নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, অব্যবহার্য হয়ে পড়া বিষিয়ে যাওয়া জল-জঙ্গল-জমি, বিশ্ব উষ্ণায়ন কিম্বা আরও বড় অতিমারীর মতো ভয়ঙ্কর সব সংকট সার বেঁধে অপেক্ষা করছে। দশ লক্ষ বছর হল এসেছি এই পৃথিবীর বুকে, বাস করেছি অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে। আবিষ্কার করেছি প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানের হালহকিকত। ধ্বংসের লীলায় না মেতেও সৃষ্টি করেছি, নির্মাণ করেছি বাসযোগ্য পরিবেশ। হঠাৎ মাত্র দু'শ বছরে, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে, হারিয়ে ফেলেছি পথ। জ্বলন্ত বারুদের মতো খাক করে দিচ্ছি আমাদের নিজেদের বসত, কয়েক মুহূর্তের ঝলকানির লোভে। শেষ সময়ের এই আলোয় হয়তো বা আমরা চিনে নিতে পারবো ঠিক ছবিটাই!
[লেখক এবং তাঁর পরিবার বীরভূমের রূপপুরে গড়ে তুলেছেন নিজেদের পার্মাকালচার ফার্ম, Smell of the Earth (https://www.facebook.com/SmellOfTheEarth/)। সপরিবারে সেখানেই থাকেন, নিজেরা স্বহস্তে চাষবাস করেন, এবং বছরে কয়েকবার পার্মাকালচার বিষয়ে একটি রেসিডেন্সিয়াল কোর্স করান নিজেদেরই ফার্মে।]
থাম্বনেল গ্রাফিক্স: pexels.com
দেবলদা, লোভে পরে গেলাম !
লেখা টা পরে ভালো লাগলো।
লেখা টা পরে ভালো লাগলো।
বন্ধু,
দারুন likhexhis... Asole মাঝে মাঝে আমার ও এই রকমই কিছু একটা মনে হচ্ছিলো... Jai hok... ভালো লাগলো....
Sagarnil
ওনার ব্যাপারে অনেকদিন থেকেই জানি। কিন্তু এত ফিনান্স পুঁজির ছ্যাবলামি এবং অর্থনীতির গ্রেমভারি ভানকে এত সহজে বাংলায় লেখার জন্য ধন্যবাদ
দেবলদা, এত ভালো লিখেছ কী বলব! তেমনিই লোভ দেখাচ্ছে তোমাদের যাপনটা।
তোমার পুরোনো জীবন থেকে এই যাপনে পৌঁছনোর ধাপগুলো যদি একটু শেয়ার করো খুব ভালো হয়। খুব উপকারও হয়।
লেখাটা ভালো লাগলো...
উম্মাহ! চশমা খোলার পর এই ভারতকে দেখতে পাচ্ছি।
খুব ভাল লেখা। করোনা একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, আমরা এতদিন যে বাঁচা বেঁচেছিলাম তার বেশির ভাগটাই অতিরিক্ত উপকরণে ঠাসা। নিজেরাই ঠেসেছি। অথচ নিজেদের চারপাশের সম্পদে বাহুল্য বর্জিত হয়ে অনায়াসে বাঁচা যায়। আমরা বাঁচছি। প্রায় তিন মাস ধরে।প্রকৃতিকে না ঘাঁটিয়ে বেঁচে থাকাটা আখেরে আমাদেরই লাভ। এই সত্যটা শিল্পপতিদের বুঝতেই হবে। তাহলেই প্রশাসকেরা আর সেই পথ মাড়াবেন না।
প্যানিক করলেই এখানে ঘ্যাচাং ফু !! দিদি, তোমার খুড়ে থুড়ে পেন্নাম!
একদমই প্যানিক করেনি দেবল। খুব সঠিক কথাই বলেছে। শেষ দিকে এসে যে "ছবি দুই" ও দেখিয়েছে, তাতে কারও কোনও আপত্তি তো থাকতেই পারেনা। শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে বলেওনি। শহর হাভানা র উদাহরণ ও দিয়েছে। শহর-গ্রাম-মফঃস্বল বলে দর্শন তো বদলাতে পারেনা! যে যেখানে আছি, যে যতটা নিয়ে আছি, লড়াই টা করার কথা ভাবি। আর এই ভাবনার উস্কানি দেওয়া দেবল কিন্তু কোনও করোনা বিলাসী মানুষ মাত্র নন। এর পিছনে তার অনেক দিনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আবার অর ভাবনা মিলে যাচ্ছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে যাওয়া "transition town" এবং "eco village" আন্দোলনের সাথেও। একেবারেই ভুঁইফোঁড় হঠাৎ আসা ভাবনা এগুলো নয়। তেলের শেষ হয়ে যাওয়া, জলবায়ু সঙ্কট, আই পি সি সি রিপোর্ট ... সবকটি আসলে একটি মালাকে তৈরি করছে। এখন সেই মনিহার আমার চাই কিনা সে আলাদা কথা।
মোদী "আত্মনির্ভর ভারত" হঠাত কাল বলেছে, আবার দুই সপ্তাহ আগেও পঞ্চায়েতের প্রধানদের সাথে আলোচনার সময় বলেছে গ্রাম গুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে... এগুলো কি স্রেফ কথার কথা? শের সাহের শাসন নিয়ে রচনা লিখতে গিয়ে কিছু না জেনেও তিন পাতা লিখে ফেলার মাধ্যমিকের খাতা? আমার মনে হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভেঙ্গেচুরে পড়া এখন সময়ের অপেক্ষা। সবুজ এবং বিকল্প জীবন নিতেই হবে। উনি এখনও India’s self-reliance এবং technology-driven system কে মেলাতে চাইছেন। কারণ মাত্র ৫০ দিনের ধাক্কা লেগেছে এখন অবধি। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে ২০৩০ এর মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫০ ভাগ না কমাতে পারলে আমাদের কপালে অসীম দুর্ভোগ। আর তা কমাতে গেলে technology minimum system বানাতে হবে।
দেবল মজুমদার, দেবল দেব, এবং আরও অনেকে বলে চলেছেন। দেখা যাক আমাদের কানে জল কতদিনে ঢোকে।
@!@#$...
"কিন্তু এর আবেদনটা সীমিত বলে মনে হয়। লেখক গ্রামে ফিরে একটা সাস্টেনেবল রোজগার করেন, সব সুন্দরভাবে চলে যায়। আর পূর্বজীবনে তার কুড়িগুণ রোজগার করতেন।
তো গড়পরতা আর পাঁচটা মানুষের থেকে বিশাল বেশি পরিমান রোজগার করে, পৃথিবীর চাকচিক্য দেখে, প্রিভিলেজ অভিজ্ঞতা করে তারপর মূলের কাছে ফিরে আসার যাত্রাটা হলো, সবরকম অ্যাসপিরেশন ফুলফিল করে ফেরা (সবরকম কি আর হয়, বেশিরভাগ মানুষের তারপরেও থাকে, আর না হলে আম্বানিও সন্ন্যাসী হয়ে যেতেন, লেখক এখানে অবশ্যই ব্যতিক্রমী ও ভিশনারি) - সেটা একরকম"
বিষয়টা অন্যভাবেও দেখানো যায়, সকলে যে জায়গায় যেতে অ্যাসপায়ার করে, সেইখানে পোঁছে তার অন্তঃসারশূন্যতা বোঝা। এই উপলব্ধিটা অন্যদের মাঝে ছড়াতে পারলে তাদের মায়ামৃগের পিছনে দৌড়ে ঠেকে শিখতে হবে না।
লেখাটি অসামান্য। কিন্তু প্রাকৃতিক জীবনে যে ফিরবে মানুষ, ভারতে কি তা সম্ভব ? জমি কোথায় ? ভূমি সংস্কার হয়েছে সমস্ত ভারতে ? ধনীর ফার্ম হাউসের কথা তো শোনা যায় সমস্ত দেশেই। পশ্চিমবঙ্গে বিনয় চৌধুরী যেভাবে ভূমি সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, তা হয়নি। জমি ফেরত গেছে বড় চাষীর হাতে। সিঙ্গুরে ইচ্ছুক চাষী কারা ? অনুপস্থিত জমি মালিক। আগে সঠিক ভূমি সংস্কার হওয়া দরকার। প্রকৃত কৃষকের হাতে জমি যাক। আমেরিকায় মানুষ কম জমি বেশি। ভারতে মানুষ বেশি, জমি কম। আর দুর্নীতিতে এই দেশ সেরা।
পৃথিবীর সবাই তো একরকম ভাববে না। আমার একটা নতুন প্রোডাক্ট এলেই আবার সেটার দাসত্ব করে ফেলতে হবে দেখে বিবমিষা জাগে। পৃথিবীর সবাই আমার মতনও ভাবে নে।
আ হা! ❤❤