এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শ্রদ্ধা 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৬৮ বার পঠিত
  • কাল পনেরই আগস্ট। অখিলেশের জানা আছে এটা স্বাধীনতা দিবস। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছে ভারত নাকি বিদেশীদের কব্জা থেকে বেরিয়ে আসে এই দিনে। বেরিয়ে এসে নিজেরা নিজেদের মতো  ছাঁচে ঢেলে নিয়ে দেশ চালাচ্ছে আর কি।
    অখিলেশের বাবা বিধূভূষণ মন্ডল  অনেক ঘাটের জল খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত সদস্য হবার পর সংসারটাকে দাঁড় করাল।
    বিধূভূষণ দুটো মাছের ভেড়ি কিনেছিল। দুর্জনে বলে ও দুটোর মালিকানা ছিল অসিত দাসের। বিধূভূষণ জবরদস্তির সঙ্গে ফেরেব্বাজির কৌশল মিশিয়ে ভেড়ি দুটো দখল করেছিল। তারপর থেকে লালে লাল। দোতলা বাড়ি তুলেছিল গৌরসুন্দর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পিছনে। ওই স্কুলে প্রত্যেক বছর প্রজাতন্ত্র দিবস আর স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাংলার মাস্টার অবিনাশ পোড়েলের সঞ্চালনায় গোটা চারেক বাংলা দেশাত্মবোধক গান গাওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে লুচি আলুর দম আর বোঁদে খাওয়ানো হয়। ছাত্র ছাত্রীদের কাছে সেটাই অমোঘ আকর্ষণ। লুচি বোঁদের মনোরম রসায়নে নবীন নিষ্কলুষ কিশলয়দলের চোখমুখ বোধহয় স্বদেশকে আনুগত্য নিবেদনের ঔজ্জ্বল্যে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। তার আগে অবশ্য প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্করবাবু স্বদেশী আন্দোলনের শহীদদের মহান আত্মত্যাগ এবং এখনকার এই বালক বালিকা, কিশোর কিশোরীদের যথার্থ চরিত্র গঠন এবং শুধুমাত্র আত্মস্বার্থের কথা না ভেবে দেশের দশের সেবার মানসিকতা অর্জনজনিত কথামালার ছাঁচে ঢালা  বক্তৃতা উগরে দেন প্রতিবছরের মতো। আর হ্যাঁ, স্কুলের ক্রমাগত পরিবর্ধন এবং উন্নতির পেছনে সেক্রেটারি বিধুভূষণ মন্ডলের মহান অবদানের কথা তার বাগবিস্তারের নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গ হিসেবে থাকে ফি বছরে এই দিন দুয়েকের দেশভক্তি চর্চায়। দিন দুয়েক মানে স্বাধীনতা দিবস আর প্রজাতন্ত্র দিবস। বিধূভূষণের অবশ্য এতসব কথাবার্তা আসে না। তিনি কর্মযোগী পুরুষ। তিনি স্মিতমুখে প্রসন্নচিত্তে তার চেয়ারে বসে থাকেন এবং মনে মনে উসখুস করতে থাকেন দু এক কথায় উপস্থিত এবং অনুপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পর শেষ দৃশ্যের জন্য যখন তিনি ‘ছেলেপুলে’-দের লুচি বোঁদের প্যাকেট বিতরণ করবেন  জনা চারেক উন্মুখ, অতি তৎপর  ফটোগ্রাফারকে সাক্ষী করে। প্যাকেট বিতরণের সঠিক ‘পোজ’ দিতে তিনি পারদর্শী তা ফটোওয়ালারা জানে। লোক্যাল তিনটে ট্যাবলয়েডে তা পরদিন সকালে সযত্নে প্রকাশিত হবে এটাও সকলেরই জানা ঘটনা। আর একটা ছবিও অবশ্য ছাপা হবে। সেটা হল বিদ্যানিকেতনের উন্নতিকল্পে  স্কুল কর্তৃপক্ষের একজনের হাতে একটা  দশহাজার টাকার চেক অর্পণের দৃশ্য। শত্রুরা বলে ও টাকাটা স্কুলের ফান্ড থেকেই ‘ঝাড়া ‘ ।

       বিধূভূষণের কলকাতায় ভালরকমই যাতায়াত আছে নানা কাজে। তা গ্রামের লোকের সুখ দু:খ নিয়ে কাজ করতে গেলে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ তো রাখতেই হবে। নদীর বাঁধের আজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে বেহাল দশা। আগের বছরের বন্যায় বাওড়দের  ঘরদোর সব ভেসে গেছে।এখনও কিচ্ছু ব্যবস্থা হয়নি। শ্মশানের পাশের জমিতে কোনরকমে মাথা গুঁজে আছে। মল মূত্রের দুর্গন্ধে ওদিক মাড়ানো যায় না। ব্যবস্থা তো একটা করতেই হয়। টাকা স্যাংশান করাবার জন্য কলকাতায় দরবার করতেই হয়।এখন নাকি কেন্দ্রীয় স্তরে টাকাপয়সার খুব টানাটানি চলছে। কিন্তু টাকা না হলে এদের ঘর তোলা হবেই বা কিভাবে।টাকা হাতে এসে গেলে কাজ হয়ে যাবে ঝপাঝপ। বিধূভূষণের বাঁধা ঠিকেদার  আছে। ঝপাঝপ কাজ তুলে দেবে তারা। সে বাঁধের কাজই হোক আর নদীর জলে ভেসে যাওয়া ঘর খাড়া করার ব্যাপারই হোক। টাকাটা স্যাংশান হওয়ার খুব দরকার। 
       ভেড়ি দুটো হাতছাড়া হয়ে যাবার পর থেকে অসিত দাস খুবই আর্থিক সংকটে পড়েছে। বাজারের পাশে একটা মুদির দোকান দিয়েছে। আগের মতো রোজগার না থাকলেও মোটামুটি ভালভাবে সংসার চলে যাচ্ছে।এক এক সময়ে মনে হয় ভেড়ির আপদ গেছে একরকম ভালই হয়েছে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে সে নিশ্চিন্ত হয়। পাত্র দেখাশোনা চলছে। সামনের ফাল্গুনে কাজটা সেরে ফেলার ইচ্ছে।মেয়ের নাম শ্রদ্ধা। কমার্স নিয়ে পড়ে মাতঙ্গিনী গার্লস স্কুলে। এবারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।ভেড়ি সংক্রান্ত গন্ডগোলের ব্যাপারটা অসিত দম্পতি মেয়েকে কোনদিন  কিছুই জানায়নি।
    শ্রদ্ধা ছাতে দাঁড়িয়েছিল বিকেলবেলায়। রাস্তার ওদিকে পুকুরের জল আকাশ ভাঙা রাঙা আলোয় মাখামাখি হয়ে আছে । গৌরসুন্দর বিদ্যামন্দির স্কুলের ছুটি হয়েছে। দল বেঁধে বাড়ি ফিরছে। নিজেদের মধ্যে কিচিরমিচির করছে।গৌরসুন্দর-এ ক্লাস এইট পর্যন্ত আছে। শ্রদ্ধা ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ওখানেই পড়েছে। হেডস্যার শিবশঙ্করবাবু খুব ভাল লোক ছিলেন। কিন্তু কি কারণে কে জানে বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। শ্রদ্ধা কানাঘুষোয় শুনেছে এর মূলে নাকি বিধুভূষণ মন্ডল আছে। ঘটনার ভিতরে ঢুকতে তার কোনদিন ইচ্ছে হয়নি। তবে বাবার বন্ধু পাশের বাড়ির অনিলকাকুকে বলতে শুনেছে বিধু মন্ডল খুব ‘ধড়িবাজ’ লোক।
       শ্রদ্ধা ছাত থেকে দেখতে পেল অখিলেশ আসছে স্কুলের উল্টোদিক দিয়ে। অখিলেশ নামটা কেমন যেন পুরনো আমলের। শ্রদ্ধা ভাবে তাতে তার কি। এমনিতেই তো ওর বাবার খুব সুনাম নেই এলাকায়। তার ওপর ওদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সম্পর্ক ভাল না।
    অখিলেশ তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে মাথা নীচু করে হেঁটে চলে গেল। শ্রদ্ধা স্কুলের ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিল। অখিলেশ এক পলকের জন্য চোখ তুলে তার দিকে তাকাল। শ্রদ্ধার মনে হল অখিলেশের মুখটা কেমন লাল মতো হয়ে গেছে। দ্রুত চোখ নামিয়ে অখিলেশ হাঁটতে থাকল নিজের রাস্তায়। এরকম আগেও অনেকবার হয়েছে গত এক বছরে। শ্রদ্ধার মনে কোন দাগ কাটেনি। এবারে কিন্তু শ্রদ্ধা বুকে যেন আচমকা একটা ধাক্কা খেয়ে গেল। অনেক চিন্তা করেও সে অখিলেশের ভাব ভঙ্গীতে ‘ধড়িবাজি’-র কোন লক্ষণ আবিষ্কার করতে পারল না।
       স্বাধীনতা দিবসে স্কুল এবং এলাকার অন্য জায়গার কর্মসূচি সেরে পরের দিনই একবার কলকাতা যেতে হবে। বাঁধ মেরামত আর নদীর ধারে ঘর তৈরির টাকাটা মঞ্জুর না করালেই চলছে না। তাছাড়া ইদানীং অসিত দাসের হাবভাবও যেন সুবিধের মনে হচ্ছে না। দোষীদের মনের তলায় একটা অপরাধবোধের কাঁটা বিঁধেই থাকে। সেটাকে উপড়ে ফেলা সহজ কাজ নয়। অন্যায় রাস্তায় অসিতের আইনসঙ্গত সম্পত্তি, ওই ভেড়ি দুটো হাতাবার অপরাধদংশন তো একটা আছেই। বিধূভূষণ ভাবে শত্রুর কোন গোড়া রাখতে নেই। কখন কোনদিক দিয়ে বাঁশ আসে তা কে জানে। অসিতকে হাতে না মারা যাক ভাতে তো মারা যেতেই পারে। বিধূভূষণ মনে মনে ঠি ক  করে অসিতের দোকানটাকে হাওয়া করে দিতে হবে ....... তবেই ব্যাটা কড়া বেকায়দায় পড়বে।

      বোরো ধান তোলা হয়ে গেছে। আউশের চারা রোয়া হচ্ছে। রেললাইনের ওপারে বিধুভূষণের ধানজমি আছে বিস্তর। ভাগচাষী, মুনিষ, ক্ষেতমজুর মিলে অনেক লোক করে খাচ্ছে বিধুভূষণের কৃপায়। অখিলেশ অনেকবার প্রায় চল্লিশ বিঘে জমির একধারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এপার ওপার দেখা যায় না। একবার সন্ধের মুখে রেললাইন পেরিয়ে, আরো প্রায় আধঘন্টা হেঁটে জমির ধারে পৌঁছে গিয়েছিল। কোন কাজে না।এমনি ইচ্ছে হল, তাই গিয়েছিল। ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ  লাগে অখিলেশের। সেবার যখন গেল, পশ্চিম আকাশে আবীর ছড়িয়ে  সূর্য তখন পাটে যাচ্ছে। চারপাশের আঁধারে ছাওয়া গাছগাছালিতে কুলায় ফেরা কত পাখির কলকাকলি শোনা যাচ্ছে। ম্লান পাঁশুটে আকাশ। ওই অনেক দূরে বাসরাস্তার ধারে অনেক আলো জ্বলে উঠেছে। দূরের ওই আকাশতলে যেন কত মানুষের জীবনের জোনাকি জ্বলে উঠছে। জমির ধারে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ শ্রদ্ধার মুখ ভেসে উঠল। সবুজ আদিগন্ত ছড়ানো ধানক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা ম্লান আকাশের নীচে সহসা ফুটে উঠল শ্রদ্ধার মুখ। সেই মুখের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অখিলেশের চোখে জল এসে গেল। বিধুভূষণ মন্ডলের বিপুল সম্পত্তির একমাত্র ওয়ারিশার চব্বিশ বছরের অখিলেশের চোখ কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই ভিজে উঠল। সে ওই দূর বাসরাস্তার চুমকি আলোগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।ক্ষেত চাষিরা কাজের শেষে নয়ানজুলির জলে হাত পা ধুচ্ছে। অখিলেশকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একজন বলল, ‘ দাদাবাবু এখানে
    দাঁড়িয়ে.... বাবু পাঠিয়েছেন বুঝি কাজ দেখতে ? ‘
    অখিলেশ বলল, ‘না , এমনি ....’

       পরদিন দুপুরে ব্লক অফিসে গিয়ে প্রচন্ড চেঁচামেচি শুরু করল বিধূভূষণ।মৌরিতলায় পনেরই আগস্টের অনুষ্ঠানে তাকে   নেমন্তন্নই পাঠানো হয়নি। ওদিন ওখানে নাকি সভাপতি হবে এবং পতাকা তুলবে অশেষ পাত্র। অশেষ ডিস্ট্রিক্ট কলেজের প্রফেসর। কোন সাবজেক্টের তা বিধূভূষণ ঠি ক জানে না। অত জানার দরকার কি। তার গাত্রদাহের বড় কারণ হল অশেষের সঙ্গে অসিত দাসের ভাল দহরম মহরম আছে।বিধূভূষণের মন নানা সন্দেহের কীটে ভরা। সেগুলো যখন তখন কিলবিলিয়ে ওঠে।

       আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস।এটা কত নম্বর যেন.... শিবশঙ্করবাবুকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। চুয়াত্তর নম্বর বোধহয়। বেফাঁস কিছু বলে বসলে প্রেস্টিজ ঝুলে যাবার চান্স আছে। চারদিকে সবজান্তা দেশপ্রেমিকরা কামরাঙাতলায় পাকা কামরাঙার মতো গড়াগড়ি যাচ্ছে। দেখে শুনে পিত্তি জ্বলে যায় বিধু মন্ডলের। পরণে নেই চাম, মুখে হরেকৃষ্ণ নাম। কেরামতি সব জানাই আছে। পয়সার দরকার হলেই তো এই শর্মার কাছে হাত পাততে হবে।সুভেনির বার করে শুধু ডোনর স্পেসে নাম ছাপিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দায়িত্ব খালাস। মুরোদ সব জানা আছে। বড় বড় বোদ্ধা, বিজ্ঞ দেশপ্রেমিক সব। সাজিয়ে গুছিয়ে ভাষণ  দেওয়া বিধুর আসে না। সেই নিয়ে তার একটু  হীনম্নন্যতা আছে। রাগের মাথায় অসিতের কথাটা আবার মনে এল। দুশ্চিন্তাটা আবার মাথা চাড়া দিল। ব্যাটাকে পথে না বসাতে পারলে শান্তি নেই। শত্রুর গোড়া রাখতে নেই ..... সামনেই ইলেকশান। কখন কি হয় কিছু বলা যায় না।সাবধানের মার নেই। দেশহিতৈষীর তো অভাব নেই এলাকায়।
      বিধুভূষণ যখন এইসব সাতপাঁচ ভাবছে অখিলেশ এসে ঘরে ঢুকল। বাবা ছেলের সাক্ষাতকার খুব কমই হয় আজকাল। স্ত্রীর সঙ্গে দেখাশোনাই বা কতটুকু। বিধুবাবুর স্ত্রী স্বামীর কর্মকান্ডে কোনভাবেই নিজেকে জড়ান না। মানে, জড়াবার কোন ক্ষমতাই তার নেই। নিজের ঘরসংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি।
      অখিলেশকে দেখে বিধূভূষণ বললেন, ‘ খুশি তোর কি খবর ?’
    খুশি অখিলেশের ডাক নাম।
    অখিলেশ বলে, ‘ হ্যাঁ বাবা.... তুমি তো ব্যস্ত থাক। তোমার সঙ্গে দেখাই হয় না। শরীর ঠি ক আছে তো। বেশি ধকল নিতে যেও না। বয়স বাড়ছে ..... ‘
    — ‘ তা বললে কি হয় রে ! ধকল তো নিতেই হবে । সব কাজ কি আর অন্য লোক দিয়ে হয় ? তাও তো বিমলেন্দু  আমার প্রচুর কাজ করে দেয়। কিন্তু সব কাজ তো আর .... যাক ওসব কথা, তোর পড়াশুনার কি খবর ?’
    অখিলেশ সামনের খাটে বসে। বলে, ‘ সি এ ইন্টার কমপ্লিট করেছি। গত সপ্তাহে রেজাল্ট বেরিয়েছে। এখন একটা অডিট ফার্ম খুঁজতে হবে। নেটে সার্চ করছি। ‘
    ব্যাপারটা কি বিধূভূষণ ঠিক বুঝল না। তার জগৎ এ সবের থেকে অনেক দূরে। আর একজন পঞ্চায়েত সদস্যের ব্যস্ততার বহর কি করে প্রায় প্রধানমন্ত্রীর মতো হয় সেটা ভেবে দেখার মতো ব্যাপার। যাই হোক সে হৈ হৈ করে বলে উঠল, ‘ আরে এ তো দারুণ খবর। এতদিন বলিসনি আমাকে.... কি আশ্চর্য ! টাকাপয়সার ব্যাপার থাকলে বলিস ।’
    অখিলেশ চুপচাপ বসে থাকল। তার ঋজুরেখ-এর কথা মনে পড়ল। ঋজুরেখ ব্যানার্জি।মাসছয়েক আগে বীরভূমে একটা ব্যাঙ্কে অডিট করতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ট্রেনি কোর্স ছিল। দুপুরবেলায় পাইস হোটেলে ভাত খেতে গিয়ে দেখা হল।
    ঋজুরেখ খুব ধীর স্থির চরিত্রের যুবক। তিরিশের নীচে বয়স। বলল, ‘ এ প্যাট্রিয়ট ইজ প্রাউড অফ হোয়াট হিজ কান্ট্রি ডাজ অ্যান্ড এ ন্যাশানালিস্ট ইজ প্রাউড অফ হোয়াটেভার হিজ কান্ট্রি ডাজ। দেশের তিয়াত্তর পারসেন্ট সম্পদ দেশের এক পারসেন্ট লোকের হাতে। সুতরাং দেশপ্রেমের পারসেন্টেজ কোন স্কেলে ভেরি করা উচিৎ ?’
    দুজনে দুটো মিলের অর্ডার দেয়। হোটেলের ছেলেটা বলে, ‘মাছ শেষ হয়ে গেছে, ডিম হবে .... ‘
    — ‘ তাই দাও ‘ ঋজুরেখ জানিয়ে দেয়। অখিলেশ সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে।
    — ‘ একমুঠো .....হ্যাঁ দুমুঠো নয় একমুঠো, খাবার যোগাড়ের জন্য নিজের অবোধ কচি বাচ্চাকে ভাড়া দেয়..... ডেলি পঞ্চাশ টাকা হিসেবে। এর মস্ত চক্র আছে। বিবর্ণ মলিন মহিলা, এমনকি কিশোরিদের কোলে শিশু ধরিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতার রাস্তায় প্রাইভেট কার এবং ট্যাক্সির জানলার ধারে ছেলে কোলে নিয়ে ভিক্ষের জন্য হাত পাততে হয়। ভিক্ষার টাকা থেকে মিডলম্যানদের বখরা দিতে হয়। শিশু সাধারণত: থাকে ঘুমের জগতে অজানা অচেনা মহিলার কোলে যাকে সে নিজের মা ভেবে আঁকড়ে ধরে থাকে। একটা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশানে আছি প্রায় পাঁচবছর.... এন জি ও । এগুলো বড় গোলোকধাঁধা চক্র .... আমাদের আর কতটুকু ক্ষমতা ..... সাধ্যমতো করে চলেছি আর কি ..... তোমাদের মতো ছেলেদের খুব দরকার। কেরিয়ার মেনটেন করে যতটুকু হয়। ভলানটারি অর্গানাইজেশান।আমরা তো সবাই দেশের নাগরিক। আমরা যেমন ওরাও তেমনি। দেশপ্রেম শব্দটা এসব শিশুদের কাছে একটা অচেনা দুর্বোধ্য শব্দই থেকে  যাবে। ওদের মা বাবার কথা বাদই দিলাম। ‘
    অখিলেশ তার সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকে। হোটেলের ছেলেটা ডিমভাত পরিবেশন করল। অখিলেশ এবং ঋজুরেখ মোবাইল নম্বর বিনিময় করল।
    — ‘ তোমার এলাকায় কোন শিশু হাতবদলের খবর পেলে একটা কল দিও আমার নম্বরে।’
    অখিলেশ খেতে খেতে মাথা নাড়ে।

    বিধূভূষণ বলে, ‘ কিরে কি হল ? কি ভাবছিস এত। যা ভাল মনে করিস কর না । টাকার জন্য ভাবিস না । আমি তো আছি।’
    — ‘ না না সেসব না। অন্য কথা ভাবছি ...... ঠিক আছে আমি আসছি এখন। একটু বেরোতে হবে ।’ অখিলেশ উঠে চলে যায়।

      স্টেশনের বাইরে একপাশে একটা ছোটখাটো মঞ্চ তৈরি হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হবে।গৌরসুন্দর স্কুলের প্রোগ্রামটা সেরে বিধূভূষণেরও এখানে আসার কথা মঞ্চ আলোকিত করার জন্য। অখিলেশ যাচ্ছিল ট্রেন ধরার জন্য। কদম্বগাছি যাবে এক বন্ধুর বাড়ি।
    মাচার সামনে খান কুড়ি চেয়ার পাতা আছে। সেখানে কেউ কেউ বসে আছে। বেশির ভাগই দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে অঞ্চল সভাপতি কে মঞ্চে তোলা হয়েছে।একটু পরে অনুষ্ঠান শুরু হলে একটি বালিকা তাকে মাল্যদান করবে। তারপর সঞ্চালকের আহ্বানে তিনি দেশাত্মবোধক বক্তৃতা শুরু করবেন। তাকে একটা আইসক্রীমের কাপ দেওয়া হল। বোধহয় কিছুটা সময় কেনার জন্য। কারণ বিধুভূষণ মন্ডল এখনও এসে পৌঁছননি। তিনি না পৌঁছলে ‘পোগ্রাম’ স্টার্ট করা যাচ্ছে না।
    সে যাই হোক, অঞ্চল সভাপতির আপাতত কোন তাড়াহুড়ো নেই । তিনি চামচ দিয়ে আইসক্রীম খেতে লাগলেন। খাওয়া হয়ে গেলে খালি কাপটা স্টেজের একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।ওখানে ঋজুরেখের ভাষায় দুজন ‘বিবর্ণ’ ও ‘মলিন’ সাত আট বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল কৌতূহলি চোখমুখ নিয়ে ...... স্বাধীনতা দিবসের ‘পোগ্রাম’ দেখবে বলে। গতবার হিন্দী সব হিট গানের সঙ্গে দারুন লচকদার নাচ হয়েছিল।
    অঞ্চল সভাপতির খাওয়া আইসক্রীমের কাপটা মাটিতে পড়া মাত্র একটা মেয়ে ছোঁ মেরে কাপটা তুলে নিল এবং একটু দূরে সরে গিয়ে কাপের ভেতরটা চাটতে লাগল। তার সঙ্গিনী মেয়েটি ধৈর্য ধরে সতৃষ্ণ চোখে অপেক্ষা করতে লাগল তার সুযোগ আসার জন্য।
       অখিলেশকে এখানে কেউ চেনে না। সে দাঁড়িয়েছিল কৌতূহলবশত: । ওই তাৎপর্যহীন অতি সাধারণ এক টুকরো ঘটনা ছিটকে ওঠা পাথরের টুকরোর মতো তার চোখে এসে লাগল। সে ছুটে গিয়ে মেয়েটার হাত থেকে আইসক্রীমের এঁটো কাপটা ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। প্রবল উত্তেজনায় হাঁফাতে হাঁফাতে ওয়ালেট থেকে দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে দুজনকে দিল। দেবার পরে কি জানি কেন শ্রদ্ধার মুখটা আবার ভেসে উঠল বাতাসে।
    এই সময়ে দেখা গেল বিধূভূষণ মন্ডল রিক্শা থেকে নামছে। তিনি বোধহয় পতাকা উত্তোলন করবেন।
      অখিলেশ পকেট থেকে মোবাইল বের করে ঋজুরেখ ব্যানার্জির নামটা বের করল এবং তাতে আঙুল ছোঁয়াল।

    এর দুদিন পরে অখিলেশ বাজারের সেলুনে যাচ্ছিল চুল কাটতে । একটা গোলমাল শুনে পেছন দিকে গিয়ে দেখে তার বাবার সাকরেদ বিমলেন্দু পাত্র প্রায় জনা দশেক লোক নিয়ে অসিত দাসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অখিলেশ একটা আড়াল থেকে দেখতে লাগল।হতচকিত বিভ্রান্ত অসিতবাবুর সামনে দাঁড়িয়ে বিমলেন্দু পাত্র অভদ্রভাবে হাত পা নেড়ে বলছে, ‘ ভালোয় ভালোয় গুটিয়ে নিন। নইলে ভাঙার অর্ডার আছে। এ স্পটে দোকান তোলা বেআইনি। খুব মুশ্কিলে পড়ে যাবেন।’ অসিতবাবু ভালোই বুঝতে পারলেন যে এ কর্মকান্ডের আড়ালে আছে বিধূভূষণ মন্ডল। এখনও তার সঙ্গে কিসের শত্রুতা তিনি বুঝতে পারলেন না। লোকটা তাকে একেবারে ধ্বংস না করে ছাড়বে না।
    অসিত দাস সাহস সঞ্চয় করে বললেন , ‘ কোর্টের অর্ডার আছে ?’
    এর উত্তরে বিমলেন্দু ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, ‘ সব অাছে ..... স...ব আছে ..... তোমায় দেখাতে হবে নাকি  শালা ? অ্যা-ই  ভাঙত ... শালা ভাঙ দোকান ভাঙ ...’
    চার পাঁচজন লোক তেড়ে মেরে দোকানের দিকে হামলে পড়তে গেল। হাতে শাবল কোদাল কাঠারি ডান্ডা সব কিছুই দেখা গেল। বাধা দেবার কেউ নেই। গোলমালের ভয়ে অনেক দোকানে ঝাঁপ পড়ে গেল। অনেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে লাগল।
    অখিলেশ কোন মজা দেখতে চাইল না। দৌড়ে গিয়ে দোকানের সামনে বিপন্ন জড় পদার্থের মতো দাঁড়িয়ে থাকা অসিত দাসের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
    বিধূভূষণের পার্শ্বচর বিমলেন্দু পাত্র চমকে উঠল — ‘ একি ছোটবাবু আপনি এখানে ! দয়া করে সরে যান।আমাদের কাজ করতে দিন .... ‘
    অখিলেশ তিন পা এগিয়ে এসে অসিতবাবুকে আড়াল করে দাঁড়াল । কঠিন স্বরে ঘোষনা করল, ‘ এদিকে আর এগোতে গেলে আমার ডেডবডির ওপর দিয়ে এগোতে হবে ...... ‘
    দূরে দেখা গেল খুব সম্ভবত: বাবার দোকানে গোলমালের খবর পেয়ে শ্রদ্ধা এদিকে আসছে।
    ওখানে লম্বা একটা শিরিষ গাছে বাঁধা একটা জাতীয় পতাকা পুবে হাওয়ায় হিল্লোলিত হচ্ছে ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪০737278
  • আপনার প্রত্যেকটা লেখা খুব ভাল হচ্ছে। 
  • . | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৪০737282
  • জ্জিও! অসাধারণ।
  • Anjan Banerjee | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:৪৬737292
  • অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:47e:d0c7:f5d1:***:*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৮737306
  • সুন্দর 
  • Anjan Banerjee | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩737311
  • একরাশ ধন্যবাদ ও নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা রইল। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন