জীবন্ত পুড়িয়ে মারা – কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। অপহরণ, ধর্ষণ, খুন। তবু ঘটনার পরে পরে যে সব রিপোর্ট বা লেখা পড়ছি, সব জায়গাতেই দেখছি দোষীদের নাম আসছে ধর্ষকের বিশেষণে। নাঃ খুনী শব্দটা এখনো চোখে পড়ে নি। তাহলে কি ধর্ষণটা এমন-ই অপরাধ যা খুনেরও বাড়া? সম্ভ্রমহানির যন্ত্রণা কি জীবনের থেকেও বেশি? হয়তো তাই। জীবনের মূল্য নেই আমাদের কাছে। তাই আমরা নির্দ্বিধায় অন্যের মৃত্যুদন্ড চাইতে পারি! রেপিস্টদের কেন ট্যাক্সপেয়ারের পয়সায় খাওয়ানো হবে জেলে বসিয়ে সেই দুঃখে উদ্বেল হয়ে উঠি! কেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হয়ে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে না সেই আলোচনায় বাজার গরম করি। কিন্তু নিজেদের প্রশ্ন করতে ভুলে যাই, ঠিক কোন মানসিকতা থেকে আসে এই খুনের উপরেও ধর্ষণকে জায়গা দেওয়ার ইচ্ছে? এও কি পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা নয়?
আমাদের দেখার চোখটা তো অবশ্যই প্রিভিলেজড। শিক্ষিত, শহুরে, কিঞ্চিৎ বিত্ত-ওয়ালা চোখের চাওয়ার সঙ্গে আপামর ভারতবাসীর দেখা কতটা মেলে তা জানি না। তাই শিউরে শিউরে উঠি যখন শুনি তের- চোদ্দ বছরের ছোট মেয়েদেরই নাকি তবু ধর্ষণ হতে পারে – তার থেকে বড় যারা তাদের নাকি মেয়েদের নিজেদের সম্মতি ছাড়া তথাকথিত ধর্ষণ হতে পারে না। এ রায় হরিয়ানার সাধারণ মানুষের। পুরোটা দেখতে –বুঝতে চাইলে এখানে পাবেন
অথচ কি আশ্চর্য! হরিয়ানার স্কুলের ছেলেরা যখন বলে মেয়েরা হাসে, জিন্স পরে – এগুলো তো ছেলেদের আমন্ত্রণ করার জন্যেই – তার সঙ্গে কেমন মিলে যায় মধ্যবিত্ত ঘরণীর স্বর, গা দেখানো পোশাক পরার জন্যই আমরা বিপদ ডেকে আনি। বোঝা যায় যৌনতা আর হিংস্রতার কোন তফাৎ থাকে না আমাদের মনে। আর তাই এ দেশে মারিট্যাল রেপের কথা কোন আলোচনায় আসে না। সে নাকি ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী। অফিসের আলোচনায় পুরুষ সহকর্মীরা বলে ওঠেন, ধুর ওসব শিক্ষিত বাড়ীতে হয় নাকি! কি আশ্চর্য মেক-বিলিভ জগতে বাস করি আমরা!
নাকি আদতে ভাবনাটা এই যে, যে বস্তুটি আমার হাতের আওতার মধ্যে তার আবার মতামত কি? মতামত কার থাকে? যে প্রাণহীন বস্তু নয়, তারই থাকার কথা। জড় পদার্থের অবশ্য থাকে না। অবশ্য এই মতামতের বোধটা সবার এক নয়। কেউ কেউ ভাবেন যে দিনের পর দিন একটি মেয়েকে উত্যক্ত করে গেলে বা অ্যাসিড মারার ভয় দেখালে সে যখন একটি খাঁচায় পরা ইঁদুরের মত হ্যাঁ বলে সেও সম্মতি। রাজেশ খান্নারা তাই শিখিয়েছেন। কিশোরকুমাররা গানের সুরে তাকে মোলায়েম, দৃষ্টিনন্দন করেছেন মাত্র। আবার কারও কারও মনে হয় সময়বিশেষে এই মতামতের কোন দরকার নেই। আজকের দিনেও। এমনকি শিক্ষিত মানুষেরাও তাই বলেন। তাই উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন প্রেমিকার বাড়ির সামনে ধর্নায় বসে তাকে বিয়েতে বাধ্য করেন প্রেমিকপুরুষটি - তার মধ্যে কোন হিংসা দেখতে পান না অনেকেই। ঠকানোর অভিযোগ থাকলে পুলিশে যাওয়া উচিত, অসম্মতিতে বিয়ে কেন – এর উত্তরে বলে ওঠেন ওই সব “নো মিন্স নো” র শহুরে ন্যাকামি গ্রামে চলে না। সম্মতির সংজ্ঞাতেও যখন এই গ্রাম-শহরের বিভাজন ওঠে তখন মনে হয় সত্যিই কি আর হরিয়ানা আর পশ্চিমবঙ্গে কোন তফাত আছে!
শিউরে উঠতে হয় প্রাজ্ঞ মানুষেরও কথায়। ২ রা ডিসেম্বরের আনন্দবাজার দৈনিক কাগজে কৈশোরের অপরাধপ্রবণতা বাড়ার একটা কারণ দেখাতে গিয়ে কলকাতার প্রথম সারির মনোরোগ চিকিৎসক যখন “জিনগতভাবে অপরাধের যোগ থাকা”কে একটি যুক্তি হিসেবে দেখান। জ্ঞান-বুদ্ধি কম, জানি না জেনেটিক্সের কোন ধারায় অপরাধ-ইচ্ছা বহনকারী জিনটিকে শনাক্ত করা গেছে কিনা। এবং এই যে কলকাতার নাবালকগুলি ধরা পড়েছে, তাদের কোন শারীরিক টেস্টে সেই জিনের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে কিনা। তেমন প্রমাণ বর্তমান থাকলে আমাকে কেউ জানাবেন প্লীজ। তবে সে জানার আগে অবধি বক্তব্যটার মধ্যে কেমন সেই কলোনিয়াল যুগের শবর, লোধাদের অপরাধপ্রবণ জাতি হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় চুকিয়ে ফেলার প্রবণতার ছায়া দেখছি। তীব্র অর্থনৈতিক বৈষম্য, গরীব বা নিচু জাত হিসেবে সমান সমান মানুষের ব্যবহার না পাওয়ার ক্ষোভ, চারিদিকের জীবনের সীমাহীন উচ্ছ্বলতার পাশে পাশে নিজেদের কিছু-না-থাকার দুঃখের যন্ত্রণাও যে মানুষকে অপরাধের দিকে ঠেলে যায় এই কঠিন সত্যটাকে যতক্ষণ চোখ বুজে না দেখা যায় ততই ভালো।
হ্যাঁ এমনকি ধর্ষণের পিছনেও এটা একটা কারণ হতে পারে। একটা মানুষ। শ্রেণীর বিচারে সমাজের নীচের সারিতে। জন্মগতভাবে সে জানে মেয়েরা যৌনতা সম্পাদনের যন্ত্র। তার বেশি কিছু না। তাকে রাখতে হয় পায়ের নিচে। মানে ওই শহুরে লিঙ্গসাম্য তার কাছে বাবুদের ব্যাপার। তার জীবনে সেটা জরুরী নয়। আর হ্যাঁ যৌন নির্যাতনও তার জীবনের অঙ্গ। তার মা দিদি বোন যায় বাবুদের বাড়িতে, কারখানায়, ইটভাটিতে – সেখানে এসব আখছারই হয়। ( বিশ্বাস না হলে এ দেশে দলিত মেয়েদের ধর্ষণের রেটটা একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে। ) যত সে বড় হয়, ততই দেখে যে সমাজে তার কিছুই প্রাপ্য নেই। সবই উচুঁতলার মানুষদের জন্য। তার মনে জমতে থাকে ঈর্ষা। সেটা ক্রোধে পরিণত হয় যখন সে দেখে যে প্রতিটি জায়গায় তাকে মাথা নীচু করে বাঁচতে হচ্ছে। এমনকি ওঁদের মেয়েগুলোও কেমন নিজের কৃতিত্বে তরতরিয়ে উপরে উঠে যায়। আর নাগাল মেলে না। রাগ হয়। লোভও। বা লালসা। মেয়েগুলো কেমন মাখন মাখনপারা। ঘরের বৌ মেয়েদের মত নয় মোটেই। এইবার সুবিধামত যদি একটা মেয়েকে হাতে পাওয়া যায়, ওই রাগ হিংসে লোভ লালসা সব একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে যায়। উপরতলার লোকগুলোকে তো হাতে পাওয়া যাচ্ছে না, শোধটা এর উপর দিয়েই তোলা যাক। ধর্ষণ করলে অবশ্য ধরা পড়লে শাস্তি। তাহলে জ্বালিয়ে দাও। তার রোজকার দিনযাপনের ক্রুডিটির সঙ্গে এই স্যাডিজম বেশ খাপে খাপ বসে যায়। এইবার ধরা পড়ার পরে যে হট্টগোল শুরু হয়, তাতে কিন্তু সে ঘেঁটে যায়। বাবুরা যখন তাদের ঘরের মেয়েদের ধর্ষণ করে তখন তো এর কানা কড়ি চেঁচামেঁচিও হয় না।
না এটা কোন জাস্টিফিকেসন নয়। শুধু এটা বলতে চাওয়া যে অপরাধের বোধ এবং কার্যকারণ সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রকমের। উপরে বলা কারণগুলির সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই এক নয় কামদুনির ঘটনা। বা সল্টলেকের রাস্তায় যে নব্য রোমিওরা মেয়েদের উত্যক্ত করে বেড়ায়, অন্ধকার পথে লাঞ্ছনা করে, তার কারণ অন্যত্র নিহিত। বা বন্ধুদের পার্টিতে যখন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে ড্রাগ খাইয়ে বেহুঁশ করে ধর্ষণ করে তার সঙ্গে কালীঘাটের ভিখারী শিশুটিকে যে নাবালকটি ধর্ষণ করল তার কারণও কি আর এক? বা আত্মীয়-পরিজনের হাতে শিশুদের যৌন লাঞ্ছনার কারণ-ই বা কি এগুলোর সঙ্গে এক? মনে হয় না। অথচ এই কারণগুলি খুঁজে বার করা আর সেগুলির দূরীকরণে কাজ করা আশু প্রয়োজনীয়। বার করা দরকার কোন গণবোধের থেকে আজও ভোট প্রার্থী বলেন তাঁরা নির্বাচনে জিতলে বাল্যবিবাহ আইন-সম্মত করবেন এবং তার পরেও তাঁদের ব্যক্তিহিংসায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য সাজা হয় না।
ভিন্ন হয় নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়াও। কার উপর অপরাধ হল, আর কে করল সেই সমীকরণের উপর প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে বই কি। তাই তেমন তেমন অপরাধ ঘটে গেলে শুধু মুন্ডু চাই আর লিঙ্গ কেটে নাও বলে দুদিন চেঁচিয়ে আমরা যে নাগরিক কর্তব্য পালন করি, তার বাইরে বোধহয় অনেকখানি কাজ করার জায়গা থেকে যায় আচষা। প্রথমতঃ সমাজের সর্বস্তরে লিঙ্গসাম্যের দাবী পৌঁছে দেওয়া। যাতে আর একজনও না মনে করেন যে ঠিক মত কাজ না করলে বাড়ির বৌকে পেটানো পুরুষের মৌলিক অধিকার। এবং সেই সঙ্গে সুস্থ যৌনতা আর হিংস্র যৌনতার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখান। সন্দীপণ মজুমদার এ বাবদে জনশিক্ষার দাবী তুলেছেন। খুবই ন্যায্য দাবী। সরকারকে এ বাবদে একাউন্টেবল করা উচিত তো বটেই। দ্বিতীয়তঃ এই কথা তুলে লাভ নেই যে কেন “দুপুর ঠাকুরপোর” মতন সিনেমা তৈরি হবে। কেন মেয়েরা নিজেদের খোলামেলা ভিডিও আপলোড করবে! বা কেন একজন মেয়ে খোলামেলা পোশাক পরবে। আমার ব্যক্তিগত রুচিবোধ কেউ মেনে না নিলেই তার প্রতি হিংসাকে আমি মেনে নিতে পারি না। বরং সম্মতির বিষয়টি মাথায় গজাল ঠুকে ঢোকান দরকার। সর্ব ক্ষেত্রে, সর্ব পরিস্থিতিতে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও। এমনকি গ্রামেও। সম্মতি কোন সম্পর্ক-ভিত্তিক বা অঞ্চল-ভিত্তিক ধারণা হতে পারে না। হতে পারে না শ্রেণীভিত্তিকও। মানে আমার পুত্রটি যদি নিজের বান্ধবী বা আমার বন্ধুর কন্যাদের সঙ্গে অতিশয় ভদ্র ব্যবহার করে অথচ বাড়ির কাজের মেয়েটিকে তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে সবার আড়ালে ঠেসে ধরে, তাহলে তার অপরাধের মাত্রা একটুও কমে না এটা বোঝা। তৃতীয়তঃ নিজেকে ক্রমাগত প্রশ্ন করা - এমন কি সমাজের উচ্চস্তরেও নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যেস জারী থাক। সমাজমান্য সংস্কৃতিবান ভদ্রলোকটি যখন ছেলের বিয়ের কথা বলতে মেয়ের বাড়িতে এসে হেসে হেসে বলেন, আমাদের বাড়ির বৌরা কিন্তু বিয়ের পরে বাপের বাড়ি যায় না, তখনও কিন্তু লিঙ্গসাম্যের ধারণাটি টোল খায়। বা বিয়ের পরে আবেগঘন মুহুর্তে যখন একজন অন্যজনকে বলে ওঠেন, “এটা আমার সম্পত্তি”, তাতেও। আজকের উদ্বেগে-আবেগে উদ্বেল কন্যাসন্তানের পিতাটি যখন অতীতে বৌ-এর চাকরী করার পথে বিপুল বাধা তৈরি করে, বৌকে ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও বাইরের কাজ করতে দেন নি, তাতে কি আর আমরা লিঙ্গসাম্যের অমর্যাদা দেখতে পেয়েছিলাম? উদাহরণ দিতে গেলে মহাভারত, আর আমরা জ্ঞানপাপী। তাই অলমিতি বিস্তারেণ। তবে জানেন নিশ্চয় সামাজিক মুল্যবোধও কিছুটা উপর থেকে নীচে চুইয়ে ঢোকে। তাই আপনার দেখে কেউ শিখছে, এবং সেটা আপনার অজান্তেই, এটা মাথায় রাখা ভাল। চতুর্থতঃ এই যে তুমুল অর্থনৈতিক অসাম্য, এবং সেই সঙ্গে জাত-ধর্ম নিয়ে নিরন্তর আকচা-আকচি এও যে প্রকারান্তরে সমাজে হিংসা বাড়ায় যার জের এসে পড়ে মেয়েদের উপর, এটা নিয়ে কি আমরা একটু ভাবতে পারি না? একটা বদল দরকার। শুধু রাজনৈতিক নয়, একদম গোড়া থেকে সামাজিক পালাবদল।
তবে এর কোনটাই তাৎক্ষণিক নয়। দীর্ঘমেয়াদি কাজ। বন্ধুদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। দুই বন্ধু, সুদীপ আর অরিন্দ্রাজিতা একটা সুন্দর তাৎক্ষণিক সমাধানের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। কেন আমরা একটা ইমার্জেন্সী রেসপন্স টিমের কথা ভাবব না? পুলিশের পক্ষ থেকে ১০০ ডায়াল করার কথা বার বার উঠছে বটে। কিন্তু সত্যি সে সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই। সে কি আমেরিকার ৯১১ এর মত কাজ করে? ফোন করলে পাওয়া যায়? ফোনে কিছু না বলার সুযোগ পেলেও কি পুলিশটিম আসে তদন্ত করতে? জানা নেই। যদি সত্যিই এসব হয়, তাহলে তো দাবী জানাব যে সরকার থেকে সে সম্বন্ধে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা হোক। বারে বারে। কে না জানে কমপক্ষে ৮ বার কিছু না শুনলে মানুষের মাথায় ঢোকে না। আর এমনিতেই আমাদের দেশে পুলিশ নিয়ে মানুষের যা ধারণা, তাতে পুরো ভরসা আসা খুব মুশকিল। এমনকি সাম্প্রতিক ঘটনাতেও পুলিশ যেভাবে মেয়েটির পরিবারকে রাতের বেলায় থানা থেকে থানায় ঘুরিয়েছে, রাতের অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছে , বলেছে পরের দিন সকালে আসতে, তাতে ভরসা থাকা সম্ভব না। সে যতই সে পুলিশ পরে সাসপেন্ড হোক। সরকার কি পারে না এই ভরসা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কিছু কাজ করতে?
তবে একটাই ভরসার কথা – সামাজিক বদল কিছু কিছু হচ্ছে। নির্ভয়ার বেলায় অপরাধীদের বাড়ির লোকেরা বলেছিল আমাদের বাড়ির লোকেরা এইসব করেই নি, মিথ্যে ফাঁসানো হয়েছে, তাঁদের উকিলদেরও বয়ানে ছিল অসীম ঔদ্ধত্য। এবার ধৃতদের মায়েরা অন্তত বলেছেন, তাঁদেরও কন্যা আছেন – অপরাধী সন্তানের শাস্তি চেয়েছেন। নাগরিক সমাজেরও সামান্য হলে টনক নড়েছে। যেমন কাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গেছে বহু মানুষের স্বতঃ-প্রণোদিত বয়ানে – নিজের মোবাইল নম্বর আর এলাকার নাম দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন যে কোন মেয়ে সেই এলাকায় কোন বিপদে পড়লে যেন তাঁদের ফোন করেন। তাঁরা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। সাধু প্রস্তাব। তবে কিনা আমি নিজে কি বিপদে পড়লে বাড়ির বাইরে কাউকে ফোন করতে স্বচ্ছন্দ হব? মনে হয় না। আর যদি আচমকা কোন জায়গায় গিয়ে পরি, সেখানে বিপদ হলে ওই বিপদতারণ ফোন নং টি পাওয়াও মুশকিল। তাই সামাজিক সুরক্ষা আসুক বিনা প্রশ্নে। “অসুবিধা হলে ট্যাক্সিতে যান” জাতীয় উপদেশ-দেওয়া মানুষের পরিবর্তে বরং বেশি সংখ্যায় পথে ঘাটে থাকুন সেই সব মানুষেরা, যারা নির্দ্বিধায় গর্ভবতী কাউকে একা অন্ধকার পথে হাঁটতে দেখলে পাশে সাইকেল থামিয়ে বলবেন, “মা, তুমি চাইলে আমার সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসতে পারো, আমি তোমায় পৌঁছে দেব। আমার বাড়িতে তোমার মত মেয়ে আছে, মা।” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বাইশ বছর আগের। তবু আজও মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।