Stephen Levy. Hackers: Heroes of the Computer Revolution (New York:Penguin Non Classics,1984); Pp 464, $11.00, ISBN 978-0-141-00051-0
'This is our world now... the world of the electron and the switch, the beauty of the baud. We make use of a service already existing without paying for what could be dirt-cheap if it wasn't run by profiteering gluttons, and you call us criminals. We explore... and you call us criminals. We seek after knowledge... and you call us criminals. We exist without skin color, without nationality, without religious bias... and you call us criminals. You build atomic bombs, you wage wars, you murder, cheat, and lie to us and try to make us believe it's for our own good, yet we're the criminals.'
এই বইয়ের আলোচনা শুরু করার সময় হ্যাকার ম্যানিফেস্টোর এই অংশটুকু ছাড়া আর কিছুর কথা মনে আসে না। বেশির ভাগ লোকের কাছে আজ হ্যাকার শব্দটা একটা গালি - একদল ধ্বংসাত্মক পাগল যারা বিভিন্ন কোম্পানির ডেটা চুরি করে, যারা সরকারি ওয়েবসাইটে পর্ণোগ্রাফি বসিয়ে দেয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গোলমাল পাকায়। অথচ হ্যাকার মানে একসময় তা ছিল না। নতুন একটা শব্দ তৈরি হয়েছে - এথিকাল হ্যাকার - ভারতের অঙ্কিত ফাড়িয়া তাদের মধ্যে একজন। মজাটা হল এথিকাল হ্যাকার শব্দটা দিয়ে যেন এটাই বলতে চাওয়া হয় যে এমনিতে হ্যাকিংটা খুব একটা ভাল জিনিস নয়। অথচ স্টিভেন লেভির ভাষায় হ্যাকারতন্ত্রের সংজ্ঞা আর রিচার্ড স্টলম্যানের ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের মূল কথার মধ্যে অনেক মিল - স্টলম্যান নিজে হ্যাকারগোষ্ঠীরই একজন ছিলেন। এবং ফ্রি সফটওয়্যার সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখায় এই বইটার কথা বার বার ফিরে আসে।
গল্পের বই বলা যায় কি? সম্ভবত না। কিন্তু ক্লান্তিকর টেকনিকাল বইও নয়। গল্পের বইয়ের মতই। নইলে কঠিন দার্শনিক প্রশ্ন না তুলে কোনো এক পিটার স্যামসনকে নিয়ে শুরু হবে কেন -
Just why Peter Samson was wandering around in Building 26 in the middle of the night is a matter that he would find difficult to explain.
মাঝরাত্তিরে দুটোর সময় এমআইটির ক্যাম্পাসে পিটার স্যামসন ঘুরে বেড়াচ্ছে - লক্ষ্য কোনভাবে যদি ওই ছাব্বিশ নম্বর বাড়ির বেসমেন্টে EAM রুমে ঢোকা যায়। ইলেক্ট্রনিক অ্যাকাউন্টিং মেশিনারির ঘর - এমন একটা ঘর যেখানে অনেকগুলো কম্পিউটারের মতন মেশিন আছে। মনে রাখতে হবে এটা ১৯৫৯-এর গল্প - তখন সাধারণ লোক তো কোন ছাড়, তাবড় অ¡কাডেমিকরাও সকলে কম্পিউটারের নাম শোনেননি, দেখা তো দূরের কথা। এমআইটির ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে স্যামসন যন্ত্রটাকে দেখেছিল - আর তার ফলেই তার এমআইটিতে ভর্তি হওয়া - লোকাল ভাষায় 'কেমব্রিজ আর্চিন' যারা ওই কেমব্রিজ ক্যাম্পাসে চলে আসে মাধ্যাকর্ষণের মতন এক অদৃশ্য টানে। নানারকম বিশ্ববিদ্যালয় গোষ্ঠীর মধ্যে স্যামসন যোগ দেয় 'টেক মডেল রেলরোড ক্লাব'-এ - যারা
HO
গেজের মডেল ট্রেন নিয়ে খেলাধুলো করতো। ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুটো ভাগ - একদল ম্যালার্ড বা ফ্লায়িং স্কটসম্যানের আদলে ছোট রেল মডেল বানাতো, আরেকদল তার জন্য প্রয়োজনীয় অসংখ্য সুইচ, রিলে, সিগন্যালিং সিস্টেম নিয়ে মাথা ঘামাত - এই দ্বিতীয় গ্রুপের কিছু ছেলেই শুরু করে প্রথমদিকের হ্যাকিং। এদের কাছে হ্যাকিংএর মানে দাঁড়াল কিছু সৃজন - যেখানে বুদ্ধি, টেকনিকাল ক্ষমতা এবং উদ্ভাবনশক্তি উপচে পড়বে। শুধু বড় বড় অংক নয়, সংখ্যা সাজিয়ে সাজিয়ে অন্যথা বোবাকালা যন্ত্র হঠাৎ করে গানের সুর বাজিয়ে ফেলবে।
বইটা চার অংশে ভাগ করা। প্রথম অংশটা শুরুর দিকের হ্যাকারদের নিয়ে - স্যামসন, অ্যালান কোটক, জ্যাক ডেনিস বা বব সন্ডার্সদের মতন টেক মডেল রেলরোড ক্লাবের তুখোড় মুখগুলোর কথা। এদের কথা বলতে বলতে বইয়ে উঠে আসে হ্যাকিংএর আদর্শ, নৈতিকতা ইত্যাদির কথা - যা তৈরি হয় মেশিন আর মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক থেকে। কোন লিখিত দলিল নয়, অথচ নি:শব্দে চলে আসা কিছু নৈতিক বিষয় - যার পরে 'এথিক্যাল হ্যাকার' শব্দটারই আর কোন মানে দাঁড়ায় না। এর পরের দুটো অংশ - হার্ডওয়্যার হ্যাকার এবং গেম হ্যাকার - হ্যাকিং থেকে আজকের কম্পিউটারের বিবর্তনের ইতিহাস। শেষ অংশ লাস্ট অব দ্য ট্রু হ্যাকারস-এর কথা - শেষ হ্যাকার নয়, লেভির ভাষায় আসল হ্যাকারদের মধ্যে শেষজনা - রিচার্ড ম্যাথু স্টলম্যান, হ্যাকিং দুনিয়ায় যিনি পরিচিত আরএমএস হিসেবে - তাঁর চোখের সামনে দিয়ে এমআইটি-র ল্যাবরেটরি থেকে আস্তে আস্তে এই প্রতিভার লোকগুলোর আস্তে আস্তে সরে যাওয়া। স্টলম্যান তখন দু:খ করে লিখেছিলেন যে যারা পড়ে রইল - প্রফেসর, ছাত্র,গবেষক - তারা কেউ আর কমপিউটারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়তে আগ্রহী ছিল না। সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা সকলে বাণিজ্যিক সফটওয়ার এর দিকে ঝুঁকে পড়ল, এল লাইসেন্সিং এর বাণিজ্য, স্টলম্যানের ভাষায় ফ্যাসিজম। হ্যাকিং সংস্কৃতির শেষ এই এম আই টি র ল্যাবরেটরিতেই।
অধিকাংশের কাছে হ্যাকার মানে আজ হয় সন্ত্রাসবাদী, নয়তো বিভিন্ন সাইটে পর্ণোগ্রাফি বসাতে ব্যস্ত কিছু লোক বা অঙ্কিত ফাড়িয়ার মতন তথাকথিত এথিকাল হ্যাকার - কেউ দুষ্কৃতি, কেউ বড় কর্পোরেট হাউজের প্রোজেক্টেড মুখ। তবে এই ধারণা অল্প হলেও কি পাল্টাচ্ছে? প্রথম প্রকাশের দশ বছর পরের একটি বিচিত্র সংযোজনী রয়েছে বইয়ের শেষে - যেখানে লেভি ইন্টারনেট-পরবর্তী যুগের কথা লিখেছেন কিছুটা - বলছেন হ্যাকিং এর মূল নৈতিক ধারণা আবার সামনে আসছে - ওপেন সোর্স আর ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলনের পাশাপাশি।
Mondo 2000
বা
Wired
মত পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গী প্রায় হ্যাকিং এর মূল ঐতিহাসিক নৈতিকতার সমান্তরাল। আর সেই পুরনো দিনের হ্যাকারদের কথাও ফিরে এসেছে - যারা প্রায় সকলেই হ্যাকিংএর দিনগুলো ফেলে এগিয়ে গেছেন - একজন ছাড়া - স্টলম্যান। স্টলম্যান এখনো এমআইটি-র আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ল্যাবরেটরির একটি মৌলিক প্রস্তাবনায় বিশ্বাসী -
Information should be free.
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
--
অরিজিত মুখার্জি, পেশায় কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক, আগ্রহ কপি-লেফট এবং ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলন, যোগাযোগ
arijit72@gmail.com