“খিদেয় পেট জ্বলে গেল রে, মা। কখন খেতে দিবি?” বেড়ার ওপাশ থেকে ভল্লা চেঁচিয়ে উঠল। তারপর দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখল কমলিমা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে।
দরজা থেকে হাঁকডাক করে বলা ভল্লার ছদ্ম অভিযোগ কমলিমা বেশ উপভোগ করলেন। বহুদিন পর তিনি যেন সংসারের কেন্দ্রে অধিষ্ঠিতা হলেন। হোক না সে সংসার বাউণ্ডুলেদের সংসার। তাঁর চোখে ভ্রকুটি – কিন্তু মুখে হাল্কা হাসির আভাসটুকু টের পাওয়া যাচ্ছে। ভল্লা এবং রামালি দুজনেই যেমন আশ্চর্য হল, তেমন খুশিও হল।
কমলিমা কোমরে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বললেন, “বেলা সাড়ে তিন প্রহরে বাবুদের খাওয়ার কথা মনে পড়ল? যা গিয়ে মুখ-হাত-পা ধুয়ে আয়, আমি খাবার বাড়ছি”।
গতকাল রাত্রে কমলিমাকে তারা যে অবস্থায় দেখেছিল – একরাত্রেই তাঁর আমূল পরিবর্তন। একলা ঘরে যে মানুষটি শোকাচ্ছন্ন হয়ে, বেঁচে থাকার অর্থ হারিয়ে ফেলেছিলেন – সেই মানুষটিই আজ নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। ভল্লা আর রামালি ব্যাকুল হয়ে তাঁর কাছে মাতৃত্বের আশ্রয় দাবি করেছিল। দাবি বললেও ভুল হবে – গায়ের জোরে সে মাতৃত্ব তারা আদায় করার চেষ্টা করেছিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাত্রের অন্ধকারে তিনি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন, ভোর হলেই তিনি ফিরে যাবেন নিজের ঘরে। কিন্তু ভোরের আলো। স্নিগ্ধ বাতাস। গাছের নিবিড় পাতায় পাতায় মর্মরধ্বনি। অজস্র পাখির ডাক। উঠোনে ঘুমিয়ে থাকা দুরন্ত ভল্লার মুখ। আশৈশব মায়ের মমতা-বঞ্চিত রামালির ঘুমন্ত মুখের সরলতা। এই...এই সমস্ত কিছু নিয়ে উদয় হচ্ছে নতুন একটি দিন...। তাঁর অন্ধকার এবং অবসন্ন মনটিও যেন জেগে উঠল। মনে হল, যেতে তো হবেই... সবাইকেই একদিন চলে যেতে হয়। ঈশ্বর তাঁকে জীবন দিয়েছেন, দিয়েছেন খুশি, আনন্দ এবং পাশাপাশি তীব্রতম শোকসমূহ। দেখাই যাক না, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর জন্যে কী রেখেছেন ঈশ্বর? তার জন্যে এত তাড়াহুড়ো কিসের?
গতকাল রামালির বাঁধা পুঁটলি খুলে তিনি কাচা শাড়ি আর গামছা নিয়ে নিঃশব্দে পুকুরে গিয়েছিলেন। নিত্যকর্ম সেরে ফিরে এসেছিলেন জল-ভরা কলসি নিয়ে। বেড়ার দুয়ারে জলছড়া দিয়ে তিনি ডেকেছিলেন, ভল্লা ওঠ। রামালি উঠে পড় – আর কতক্ষণ ঘুমোবি, বাবা?
ভল্লা আর রামালি পাশাপাশি বসে খাচ্ছিল। সামনে বসে পরিবেশন করছিলেন কমলিমা। খেতে খেতে ভল্লা বলল, “রামালি কিন্তু ভালই রান্না করে, জানিস মা? ছেলের অনেক গুণ, হ্যাঁ। তবে যাই বলিস রামালি – মায়েদের হাতে রান্নার যে স্বাদ খোলে – তেমনটি হয় না”।
কমলিমা ভল্লার পাতে একটা রুটি আর একটু ব্যঞ্জন তুলে দিয়ে বললেন, “হয়েছে, আমাকে ভালাই বুলিয়ে লাভ নেই, ভল্লা। তাড়াতাড়ি খেয়ে ওঠ – বিকেল হতে আর বাকি নেই”।
“ওই দ্যাখ আবার রুটি দিলি? বেশি হয়ে গেল। কিন্ত আমি বলি কি মা, তুইও আমাদের সঙ্গে বসে পড় না মা। সবাই মিলে গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে”।
“ঠিক। জেঠিমা, তুমিও বসে যাও – সত্যিই বেলা তো পড়ে এল”। রামালিও বলে উঠল।
“তোদের হোক আমি খেয়ে নেব”।
ভল্লা থালা থেকে হাত তুলে নিয়ে বলল, “আমি আর খাবোই না। তুই খেতে শুরু কর, তারপর আমিও খাবো, নয়তো এই উঠলাম থালা ছেড়ে”।
কমলিমা যেন খুব বিরক্তভরেই থালায় রুটি আর ব্যঞ্জন বাড়লেন নিজের জন্যে। তারপর এক গ্রাস মুখ তুলে বললেন, “খুশি? সব ব্যাপারেই এমন জেদ করিস না ভল্লা, আমার একদম ভাল্লাগে না”।
ভল্লা গম্ভীর মুখ করে বলল, “কোনটা ভাল্লাগে না, রুটি-ব্যঞ্জন নাকি আমাদের দুজনকে?”
রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেললেন কমলিমা – হেসে উঠল ভল্লা এবং রামালি।
মাঠে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সকলের মহড়া দেখল ভল্লা। খুশিই হল ভল্লা। সকলকে ডেকে বলল, “চল আজকে আরেকবার আমাদের সেই পরিকল্পনাটা নিয়ে বসি। আজ কে আঁকবি – বাপালি আঁক – দেখি তোর কেমন মনে আছে?”
সকলে গোল হয়ে বসল মাঠের একধারে। সবার মাঝখানে নকশা আঁকল বাপালি। ভল্লা দেখে বলল, “বাঃ একবারেই ঠিকঠাক এঁকেছিস তো! কিন্তু এখানে একটা বিষয় জুড়তে হবে – আস্থানে আমাদের হানা দেওয়ার পর, চার কোনায় চারটে প্রহরা স্তম্ভ খাড়া করেছে উপানু। বারো হাত উঁচু মাচাতে দাঁড়িয়ে রাত্রে চারজন চার কোনা পাহারা দেয়। এটা আমরা জানতাম না, এখন জেনেছি। অতএব আমাদের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন করতে হবে।
গত দুদিনের আলোচনায় আমাদের পরিকল্পনাটা মোটামুটি ঠিক হয়েই গেছে, তবু আরেকবার খুব সংক্ষেপে আমরা সেটা আলোচনা করে নিই।
১। পূবদিকের দরজা দিয়ে আমরা ঢুকব। অতএব পূবদিকের দুই স্তম্ভের দুই প্রহরীকে আগে মারতে হবে। কাজটা যে করবে – তার নাম এখন আমি বলব না – ধরা যাক গোলোক। আমাদের দলের বন্ধু। আমাদের সঙ্গেই সে থাকবে।
২। এই দুই স্তম্ভে উঠে যাবে আমাদের দুজন আহোক আর কিশনা। ওরা উঠে সব দিক দেখে সংকেত দেওয়ার পরে পূবের দরজা দিয়ে ঢোকা হবে।
৩। আমরা চারজন – সুরুল, মইলি, রামালি, আমি – পূবের দরজা দিয়ে ঢুকে ওখানকার প্রহরীদের শেষ করব।
৪। প্রহরীদের থেকে চাবি নিয়ে দরজার তালাটা খুলে রাখব – কিন্তু দরজা খুলব না।
৫। উত্তর-পূর্ব কোনের স্তম্ভের প্রহরীকে গোলোক মারবে – স্তম্ভে উঠে যাবে মিকানি। মিকানি এবং আহোক সংকেত দিলে,
৬। ডানদিকে রক্ষীদের ঘরের দরজায় শিকল তুলে দেব – পরে সব ঘরেরই শিকল তুলে দেব।
৭। উপানুকে – সে নিজের ঘরে বা অন্য ঘরে যেখানেই থাকুক, দরজা খুলিয়ে তাকে শেষ করবো। তারপর আমরা সংকেত দেব।
৮। পশ্চিম দিকে রাস্তার ওপারে ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে থাকবে বিনেশ, দীপান, অমরা, বিশুন, বিনাই, কিরপা, বিঠল আর সুদাস। ওদের একটু পিছনে ঝোপঝাড়ের আড়ালে থাকবে আরও সাতজন। এদের কাজ হবে বিনেশদের মধ্যে কেউ আহত হলেই তার স্থানে একজন চলে যাবে। ওদের আরও একটু পেছনে থাকবে বাকি দশজন। এদের মধ্যে থেকে দুজন - সঙ্গে সঙ্গে আহত ছেলেদের খাটুলায় তুলে – দ্রুত রওনা হয়ে পড়বে। কোথায় যাবে সে কথা পরে বলছি।
৯। আমাদের সংকেত পেলে গোলোক দক্ষিণ-পশ্চিম কোনের প্রহরীকেও মারবে এবং সেখানে উঠে যাবে বাপালি। আর গোলোক বিনেশদের সঙ্গে যোগ দেব।
১০। বাপালি আর মিকানির থেকে সংকেত পেলে বিনেশরা ঝোপের মধ্যে থেকেই পশ্চিমের তিন বা চার - যত জনকে হয় মারবে বা গুরুতর আহত করবে। ওপর থেকে বাপালি এবং পিছন থেকে আমরা ওদের একই সঙ্গে আক্রমণ করবো।
১১। পশ্চিম দরজার প্রহরীদের শেষ করে, আমরা বন্দীশালায় ঢুকব। কবিরাজমশাইকে মুক্ত করে আনব। এর মধ্যে বিনেশরা সামনে চলে আসবে। গোলোক দরজা টপকে ঢুকে চাবিটা বের করবে – ও জানে চাবি কার কাছে থাকে। দরজা খুলে আমরা বেরিয়ে আসব। আমরা বেরিয়ে এলেই স্তম্ভের চারজনও দ্রুত নেমে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। তারপর রণপা চড়ে আমরা নোনাপুরের দিকে নয় – যাবো অন্যদিকে। কোনদিকে যাবো, এবং কোথায় গিয়ে আমরা গা ঢাকা দেব – সে জায়গাটা আমরা কাল দেখতে যাবো”।
কথা শেষ করে ভল্লা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। ছেলেদের কিছুটা সময় দিল, তারপর জিজ্ঞাসা করল, “কারো মনে কোন প্রশ্ন আছে?”
দীপান বলল, “কে কোথায় থাকবে যখন তুমি নাম ধরে ধরে বললে, তখন আমার একটু রাগ হয়েছিল – আমাকে কেন তোমাদের দলে রাখলে না? তারপর পুরোটা শুনে বুঝতে পারলাম – সবাই মিলে ভিতরে ঢুকে গুঁতোগুঁতি করে লাভের থেকে ক্ষতিই হবে বেশি… ভেতরে বাইরে সকলের অবস্থানই সমান গুরুত্বপূর্ণ”।
ভল্লা হাসল, বলল, “তোদের প্রত্যেকের ওপরে আমাদের প্রত্যেকের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করবে দীপান। সামান্য ভুল হলেই পুরো পরিকল্পনাটা ভেস্তে যাবে – আমাদের অনেককেই হয়তো প্রাণ দিতে হবে। আর কেউ আহত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদ স্থানে পৌঁছে সে যেন চিকিৎসা পায় – সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার একজন ছেলেকেও হারাতে চাই না। আর কেউ কোন প্রশ্ন করবি?”
সুরুল বলল, “উপানুকে কে মারবে, ভল্লাদাদা, তুমি?”
ভল্লা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “নাঃ। সে পুণ্য কাজটা রামালি আমায় করতে দেবে না। রামালি বলছে ও মারবে”।
সুরুল বলল, “রামালিদাদা কেন মারবে? ওর সঙ্গে উপানুর কিসের শত্রুতা? আমি ওকে মারব না রামালিদাদা – ওর মুখ আমি থেঁৎলে দেব – ভীলককাকাকে কীভাবে মেরেছিল আমি চোখের সামনে দেখেছি যে”।
রামালি সুরুলের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ, বলল, “ঠিক আছে – তুই তোর মতো কর, আমি শুধু ওর হাত দুটো কাটবো, যে হাত দিয়ে ও আমাদের প্রধানমশাই, ভীলককাকা, কবিরাজমশাইকে মেরেছে – সে হাতদুটো আমি নেব”।
সুরুল রামালিকে বলল, “এইবার ঠিক হয়েছে, তারপর হতভাগা বাঁচবে কি মরবে, সে তার ভাগ্য”।
সুরুল আর রামালির এই নিষ্ঠুর আলোচনার মধ্যে ভল্লা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিল অন্যান্যদের মুখভাব। বিকেলের মরা আলোয় ঠিক বোঝা গেল না – কিন্তু সকলেরই চোয়াল শক্ত এবং সকলেই সুরুল আর রামালির মুখের দিকে তাকিয়ে ওদের বিবাদের বিষয় শুনছিল মন দিয়ে।
ভল্লা বলল, “সুরুল, রামালি, তোদের দুজনকেই বলছি। উপানু কিন্তু দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং ধূর্ত রক্ষী – তোরা যত সহজ ভাবছিস – ততটা সহজ নাও হতে পারে। তোদের কারও বিপদ দেখলে আমি কিন্তু হাত চালাবো…উপানু মরবেই – কিন্তু সে যেন মরার আগে কোন মতেই চিৎকার করে ওর রক্ষীদের সতর্ক করতে না পারে - তাতে আমরা মরবো… মনে রাখিস”।
সুরুল বলল, “নিশ্চয়ই”। রামালি বলল, “সে তুমি যা ভালো বুঝবে”।
“পরিকল্পনা নিয়ে আমার এখন আর কিছু বলার নেই। কাল আবার আলোচনা…ও না কাল আমরা তো সকলে মিলে আমাদের গোপন আস্তানা দেখতে যাবো… হ্যাঁ জায়গাটা দেখে কিছু হয়তো পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিন্তু এখন আমি কয়েকটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের কথা বলব, সকলেই খুব মন দিয়ে শুনবি,
আমরা কেউ কারো নাম ধরে ডাকবো না…আমরা সবাই সবাইকে “জুজাক” বলে ডাকবো – আমিও “জুজাকদাদা” নই – শুধু জুজাক। গোলোকেরও নাম হবে - জুজাক। আমরা এখন থেকেই অভ্যাস শুরু করব। কেন? কোনভাবেই আমাদের আসল নাম বা পরিচয় আস্থানের কেউ যেন জানতে না পারে। ঠিক আছে?
আমরা সকলেই কালো ধুতি পড়ব। আমাদের সকলের কোমরে গোঁজা থাকবে দা – পেটের দিকে নয় – পিঠের দিকে। শত্রু কাছাকাছি চলে এলে দা চালাতে আশা করি তোদের অসুবিধে হবে না।
আমরা সকলেই মুখে কালিঝুলি মাখব – যাতে আমাদের মুখগুলো চট করে কেউ মনে রাখতে না পারে।
রণপা নিয়ে আমরা সবাই যাবো – একটু দূরে নির্দিষ্ট জায়গায় সেগুলো রেখে পায়ে হেঁটে আস্থানের কাছাকাছি যাব। ফিরে এসে সেখান থেকেই যার যার রণপা নিয়ে দ্রুত ফিরে আসব।
চার-পাঁচটা কাঠের হাল্কা খাটুলি বানাতে হবে – কে দায়িত্ব নিবি? কবিরাজমশাইকে বয়ে আনতে হবে – উনি হাঁটতে পারছেন না। তাছাড়া আমাদের মধ্যেও যদি কেউ আহত হয় – তাকেও ফেলে আসা যাবে না”।
সুরুল বলল, “বুঝেছি জুজাক, আমাদের গ্রামের ছেলেরা বানাবে – কাল দুপুরের মধ্যে দিয়ে যাবে – পাঁচখানা”।
“বাঃ। কিন্তু জুজাক – খাটুলিটা একটু অন্যরকম বানাতে হবে – রণপা চড়ে চারজনের কাঁধে খাটুলি বওয়া সম্ভব হবে না। মাঝখানটা ঠিক থাকবে – কিন্তু মাথার দিকটা ছোট হয়ে আসবে – যাতে একজনেরই দুই কাঁধে ঠিকঠাক বসে যায়। বোঝা গেল? চারজন নয় – সামনে পিছনে দুজন খাটুলি কাঁধে একসাথে দৌড়বে”।
সুরুল বলল, “বুঝে গেছি, ওভাবেই বানিয়ে দেব”।
ভল্লা বলল, “তোদের বাড়িতে পরিষ্কার পুরোনো কাপড় আছে? পারলে কালকেই সবাই একটা করে নিয়ে আসবি। সাদা যেন না হয় – গভীর রঙ - কালো হলে খুব ভালো। ওগুলো ছিঁড়ে মোটা ফালি করে আমরা সবাই মাথায় মুখে বাঁধব – আবার প্রয়োজনে কারো ক্ষতও বাঁধা যাবে”।
আমাদের চলাফেরা, গোপনে বসে থাকা যতটা নিঃশব্দে করতে পারবো, আমরা ততই নিরাপদ থাকবো। অতএব হাঁচি, কাশি, আওয়াজ করে হাঁই তোলা, ঢেঁকুর তোলা, বাতকম্মো করা নিষিদ্ধ। ধরা যাক প্রহরী স্তম্ভে আমাদের যে জুজাক বসে আছে – সে হঠাৎ হ্যাঁচ্চো করল – নীচেয় আমরা চমকে উঠবো, আর প্রহরীরা সতর্ক হয়ে উঠবে”। ভল্লা একটু থেমে বলল, “আজ এই অব্দিই থাক। বেশি দেব না, মাথা ঝিমঝিম করবে”।
রামালি বলল, “হ্যাঁ জুজাক, আমাদেরও এবার ফিরতে হবে, বালিয়া আসবে, বড়্বলা এসে বসে থাকবে”।
ভল্লা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আস্থানের নকশাটা মুছে ফেল। বেশি রাত করিস না। বাড়ি ফিরে ঘুমটাও জরুরি। চলি রে, কাল সকালে আসব, আর একটু বেলা করে আমরা যাব আমাদের গোপন আস্তানা দেখতে”।
-- -- --
কাজের কথা সেরে বালিয়া আর বড়্বলা চলে যেতেই, ভল্লা বলল, “এক ঘটি জল খাওয়াবি, মা? তেষ্টায় ছাতিটা ফেটে যাচ্ছে”। কমলিমা উঠে গেলেন জল আনতে, ভল্লা বলল, “তোর রাতের রান্না কী হয়ে গেছে, মা?”
কমলিমা জলের ঘটি ভল্লার হাতে দিয়ে বললেন, “খাবি তো সেই দুপুররাত্তিরে – বসাব এখন...”
“বলছিলাম, তোর আরেকটি ছেলে এই এল বলে, প্রতি রাত্রেই সে আমাদের সঙ্গে খায়। দুটো-তিনটে রুটি বেশি করিস মা”।
“সে ছেলে দিনে না এসে, রাতে কেন আসে?”
মারুলা বেড়ার কাছে চলে এসেছিল, ভল্লার বাসা থেকে মহিলার কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে থমকে দাঁড়াল।
ভল্লা টের পেয়ে বলল, “সে ছেলে নিশাচর, রে মা। পেঁচা কিংবা বাদুড়ের মতো। দিনের আলোয় চোখে অন্ধকার দেখে...ওই তো এসে গেছে...অনেকদিন বাঁচবি হতভাগা, এই যে মা, এর নাম মারুলা”।
মারুলা উঠোনে এসে দাঁড়াল, কমলিমায়ের পাঁ ছুঁয়ে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করল, “কমলিমা? আমার নামে কী বলছিল মা, মুখপোড়াটা? আমি পেঁচা, বাদুড়?”
কমলিমা হেসে ফেলে বললেন, “তার আমি কী জানি – সে তোমাদের বন্ধুদের ব্যাপার। কিন্তু তুমি আমাকে কী করে চিনতে পারলে, বাবা?”
“তোমাকে না চিনলে কী হবে, তোমার কথা এত শুনেছি এই ভল্লা আর রামালির কাছে – না চিনে যে উপায় নেই মা”।
কমলিমা হেসে বললেন, “তা বেশ বাবা, তোমরা বসে কথা বল, আমি রান্নার জোগাড় দেখি”।
ভল্লা বলল, “তোর সঙ্গেও দুটো কথা আছে মা, একটু বসে যা। আমাদের ছেলেদের একটা দল আছে নিশ্চয়ই শুনেছিস, মা। সেই দলের সবাই যদি নাম পালটে নিজেদের ‘জুজাক’ বলে ডাকে, তুই রেগে যাবি মা?”
কমলিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন ভল্লার মুখের দিকে, বললেন, “তার মানে? মরা মানুষটাকে নিয়ে হঠাৎ এ আবার কী পাগলামি?”
“দেখ মা। এই অমাবস্যায় আমাদের ছেলেরা আস্থান আক্রমণ করবে – সেখানে ছেলেরা নিজেদের নাম নিয়ে ডাকাডাকি করলে, আস্থানের রক্ষীরা তাদের চিনে নেবে। সেই কারণে সবারই নাম হবে জুজাক। রক্ষীরা বুঝবে এ আক্রমণ কিসের জন্যে – তারা হাড়ে হাড়ে টের পাবে একজন জুজাককে মারলে – তিরিশজন জুজাক তার শোধ নেবে...”
কমলিমার দুই চোখ জলে ভরে উঠল, কান্নার বেগ কিছুটা সামলে ধরা গলায় বললেন, “সত্যিই তোরা শোধ নিবি? রামালি সে রাত্রে বলেছিল বটে – ভেবেছিলাম ছেলেমানুষী আবেগ...”।
“না মা, এ আবেগ নয় – প্রতিজ্ঞা। তুই জানিস না মা – রামালি, সুরুল, আহোক, কিশনা এই ক’মাসে কী দারুণ লড়াই করতে শিখেছে। এই অমাবস্যায় সেই পরীক্ষা। রামালি আর সুরুল ঠিক করেছে – নিজের হাতে উপানুকে হত্যা করবে... উপানুর নাম শুনেছিস মা?”
কমলিমায়ের অশ্রুসিক্ত দুই চোখ যেন ঝলসে উঠল, বললেন, “অনামুখো, বাঁশবুকো মিনসের নাম শুনবো না? রামালিদের হাতে ও যেদিন ঘেয়ো কুকুরের মতো মরবে, সেইদিন শান্তি পাবো আমি এবং আমার প্রধান”।
রামালি উঠে এসে কমলিমায়ের হাঁটুতে হাত রেখে বসে, দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তুমি নিশ্চিন্ত থাক জেঠিমা – আমি আর সুরুল ওর এমন অবস্থা করব – ওকে চেনা যাবে না...”।
কমলিমা রামালির মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমি তোদের সবাইকে আশীর্বাদ করছি বাবা, তোদের প্রতিজ্ঞা নিশ্চিত পালন হবে – তোদের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগবে না...”।
একটু সময় নিয়ে ভল্লা খুব নরম করে বলল, “আমাদের দলের আমরা সবাই জুজাক, তাই তো মা?”
কমলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন, অস্ফুট অথচ দৃঢ় স্বরে বললেন, “হ্যাঁ জুজাক”।
“আরেকটা কথা আছে মা। আমাকে যেমন সেবা করে বাঁচিয়ে তুলেছিলি, আমার বা আমাদের ছেলেদের যদি তেমন সেবা দরকার হয়, করবি মা?”
কমলিমা উৎকণ্ঠায় বলে উঠলেন, “কেন কার কী হয়েছে?”
ভল্লা কমলিমায়ের একটা হাত ধরে বলল, “বালাই ষাট, কারও কিছু হয়নি। কিন্তু ওদিন যদি কেউ চোট-আঘাত পায় – বড়্বলা তাদের চিকিৎসা করবে আর তুই করবি সেবা...পারবি না, মা?”
কমলিমা বললেন, “তা করব না কেন? আমার আর কাজ কি? কিন্তু এই ঘরে তাদের রাখবি কী করে?”
ভল্লা নিশ্চিন্ত স্বরে বলল, “এ ঘরে নয় মা। এখান থেকে একটু দূরে আমাদের নতুন পাকা বড়ো বড়ো ঘর হয়েছে। অমাবস্যার দিন তোকে নিয়ে যাবো মা, সেখানেই আমরা সবাই মিলে কয়েকদিন থাকব”।
“আমার ছেলেদের সঙ্গে আমি সর্বদাই জুড়ে থাকব, ভল্লা, ভাবিস না। এখন উঠি – রাত হল অনেক...রান্না বসাই...”।
“আচ্ছা, আরেকটা কথা বলে রাখি মা, কাল থেকে আমাদের এখানেও পাকা ঘর বানানোর কাজ শুরু হবে। কাল সকালে কুলিকপ্রধান আসবে তার লোকজন নিয়ে। কোন অসুবিধে হবে না তো?”
“এখান থেকে একটু সরে করতে বলিস – হই-হট্টগোল আমার ভাল লাগে না। আর তারাও সবাই পুকুরে যাবে তো?” কমলিমা একটু উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন।
“তা তো যাবেই। কিন্তু ভাবিস না মা, ওদের বলে দেব। তোকে ওরা বিরক্ত করবে না”।
ভল্লা মারুলার দিকে তাকিয়ে বলল, “ওদিকের কী খবর?”
“বীজপুর থেকে অস্ত্র-শস্ত্র আজ রাতে রওনা হচ্ছে। আশা করি কাল রাত্রে আমাদের ভাণ্ডারে পৌঁছে যাবে। কিন্তু উপানু শালা কাঠি করতে শুরু করেছে। আজ সকালে শষ্পকের কাছে গিয়ে নাকি বলেছে, ওর কাছে খবর এসেছে, চারখানা গোশকট বোঝাই অস্ত্র-শস্ত্র, বীজপুরের পাশে জঙ্গলের মধ্যে রাখা আছে। কোন এক বণিক – তার নাম জানে না – আমাদের রাজধানী থেকে কিনে এপথে নিয়ে যাচ্ছে। বুঝে দ্যাখ, ভল্লা, হতভাগার আড়কাঠি সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে”।
“তা তো থাকবেই। আমাদেরও তো আছে – কিন্তু শুনে শষ্পক কী বলল?”
“শষ্পক আমাকে যা বলল, ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, “তোমার লোক বণিকের মোহর-পত্র দেখেছে?”
“দেখেছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু বণিক নিজে তো সঙ্গে নেই, আছে তার করণিক আর রক্ষীদল”।
“মোহর-পত্র যদি ঠিক থাকে, তোমার - আমার মাথাব্যথা কিসের? রাজধানী বুঝবে আর বুঝবে সেই বণিক”।
“তা ঠিক কিন্তু...”।
“কিচ্ছু কিন্তু নেই, উপানু। আমি এই আস্থান আর ওই দুই গ্রাম নিয়েই ব্যতিবস্ত হয়ে রয়েছি। আর বিপদ ডেকে এনো না””।
ভল্লা বলল, “শষ্পক তো ঠিকই করেছে। কিন্তু উপানু হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। ওর সেই চরটাকে খুঁজে বের করতে পারবি?”
“পারবো। বীজপুরের জনাই – আর ওই বণিকের রক্ষীসর্দার – ওদের থেকেই ব্যাটার সব তত্ত্ব জেনে নেব – তারপর ধরতে আর কতক্ষণ”?
“তবে আর কি? যা করার করে ফ্যাল। আর উপানুর আয়ু তো অমাবস্যা অব্দি, তাই তো রামালি?”
“ওই রাতের পর উপানুর আর বাঁচার কোন আশাই নেই – আমরা কমলিমায়ের আশীর্বাদ পেয়েছি, ভয় কি?”
কমলিমা রান্না করতে করতে বললেন, “ভল্লা, আমার রান্নার ভাঁড়ার কিন্তু বাড়ন্ত – বড়ো জোর দু একদিন চলবে...”।
ভল্লা হেসে বলল, “ভাবিস না মা, কাল ভোরে উঠেই দেখবি, তোর ঘরের দরজার সামনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রাখা আছে”।
ভল্লা মারুলাকে বলল, “বটতলির ছেলেদের তাহলে, পরশু সকাল সকাল পাঠাব – অস্ত্র-শস্ত্র আনার জন্যে?”
“পরশু সকালে? ঠিক আছে – বলে রাখব। ও হ্যাঁ, বটতলির ছেলেদের গয়না-পত্র বিক্রি হয়ে বীজপুর থেকে টাকা চলে এসেছে। কত টাকা, শুনলে চমকে যাবি”।
“কত?”
“তিনশ চল্লিশ রূপোর মুদ্রা!”
“বলিস কী? বটতলির ছেলেগুলোকে খুব হাল্কাভাবে নিয়েছিলাম – কিন্তু এখন দেখছি বেশ কাজের তো?”
“সে আর বলতে? আচ্ছা, কাল দুপুরে রামালি যাচ্ছিস তো? আর ভল্লা যাচ্ছিস বিকেলের দিকে, তাই তো?”
“হ্যাঁ রামালি দুপুরে খেয়ে সোজা চলে যাবে – আমি মাকে আর ছেলেদের নিয়ে ঘন্টা দুয়েক পরে যাবো”।
কমলিমা জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাকে নিয়ে কোথায় যাবি? কালকেই নতুন ঘরে চলে যাবি নাকি?”
“না রে মা, কালকে গিয়ে তুইও একবার দেখে নে। তোর প্রয়োজন মত, কোথায় কী করতে হবে বলে দিবি। তারপর সন্ধেতেই আমরা ফিরে আসব। তারপর অমাবস্যার বিকেলে আমরা সবকিছু নিয়ে চলে যাবো – কিছুদিনের জন্যে আমরা ওখানেই থাকব”।
মারুলা বলল, “কিন্তু কমলিমাকে নিয়ে তোরা হেঁটে যাবি নাকি?”
ভল্লা বলল, “সে চিন্তা তোকে করতে হবে না, সে মা জানে… তোকে একটা কথা বলে রাখি – সবই তো শুনলি মায়ের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে – আক্রমণের দিন আমরা সবাই সবাইকে
‘জুজাক’ বলে ডাকব – কারো কোন নাম থাকবে না। তুই, আমি, রামালি সবাই জুজাক – জুজাকদাদাও নয় – ঠিক আছে?”
মারুলা বলল, “ঠিক আছে”।
মারুলার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাইরে থেকে বণিক অহিদত্তের ডাক শোনা গেল, “ভল্লামশাই রয়েছেন নাকি?”
“রয়েছি - চলে আসুন বণিকমশাই, আপনার রক্ষীদের বলুন আমাদের বাসাটা ঘিরে থাকুক – কেউ যেন কাছে না আসতে পারে…” ভল্লা গলা তুলে সাড়া দিল।
অহিদত্ত উঠোনে এসে একটু চমকে গেলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, “কমলিমা না? বাঃ খুব ভালো করেছেন। ছেলেগুলোর মাথার ওপরে একজন মা থাকলে – ওদের শক্তি বেড়ে যাবে”।
ভল্লা বলল, “এখানে বসুন বণিকমশাই। তারপর পরিস্থিতি কী বলুন”।
ভল্লার পাশে বসে বণিকমশাই বললেন, “এমনিতে সবই ঠিক আছে, বার্তা পেলাম বীজপুর থেকে আমাদের শকট রওনা হয়ে গেছে – ওখান থেকে নতুন বলদ জুড়েছে, বেশ তাড়াতাড়িই টানবে মনে হয়। বলছে আগামীকাল দুপুরের আগেই... কিন্তু একটা আপদ এসে জুটেছে...এঁটুলির মতো”।
মারুলা বলল, “কোন ফেউ পিছু নিয়েছে?”
অহিদত্ত ভল্লার দিকে তাকালেন, ভল্লা বলল, “আমারই ভুল – আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি – ও হচ্ছে মারুলা – আমরা একসঙ্গেই...”
ভল্লার কথা শেষ করতে না দিয়ে অহিদত্ত বললেন, “মারুলামশাই – বিলক্ষণ রাজধানীতে আপনার কথাও বলেছে – আপনিই নাকি সবদিক দেখা শোনা করবেন। নমস্কার।”
মারুলাও নমস্কার করে বলল, “আপদটা কি?”
“আর বলবেন না, বীজপুরে ঢোকা থেকে কে একটা লোক আমাদের লোকগুলোর পিছনে পড়ে গেছে, মোহর-পত্র দেখেছে। জিগ্যেস করছে কোথায় যাবে, বণিকের নাম কী, এত অস্ত্র-শস্ত্র কী হবে...হাজারটা প্রশ্ন”।
“ও কি সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে?” মারুলা জিজ্ঞাসা করল।
“না – একটু পিছনে – নাগাড়ে অনুসরণ করে চলেছে...আমাদের রক্ষীরা কিছু করতেও পারছে না, অচেনা-অজানা – কার লোক কে জানে?”
মারুলা ভল্লার দিকে তাকাতে, ভল্লা ঘাড় নাড়ল – তারপর বলল, “ঠিক আছে ও নিয়ে চিন্তা করবেন না, বণিকমশাই। আপনার সঙ্গে লোকজন আছে তো? শকট খালি করে ভাণ্ডারে ঢোকাতে বেশ কিছু লোক লাগবে কিন্তু...”।
“লোক সঙ্গেই আছে, ওরা খালি করে শকট নিয়ে ফিরে যাবে। আর আছে আটজন সশস্ত্র রক্ষী, একজন করণিক, তার একজন সহকারী, আর চারজন ভৃত্য। ভাণ্ডারে সব কিছু ঢুকে গেলেই দরজায় তালা পড়ে যাবে - সকলে নিজের নিজের কাজ সামলাবে...”।
ভল্লা বলল, “বাঃ ব্যবস্থা তো ভালোই... আগামীকাল ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে নিশ্চিন্ত। ও আরেকটা কথা বণিকমশাই – আমাদের মায়ের রান্নার ভাণ্ডার প্রায় শেষ হতে চলল, আজ রাত্রে অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার এসে যাবে তো?”
অহিদত্ত বললেন, “হ্যাঁ আজ ওর আসার কথা তো, নিশ্চয়ই দিয়ে যাবে...”
“আরেকটা অনুরোধ – অমাবস্যার রাতে আমাদের একটা বড়ো কাজ আছে – ওই দিন থেকে আমরা বেশ কিছুদিন অস্ত্র ভাণ্ডারেরই একটা ঘরে সবাই থাকব – প্রায় চল্লিশজন – তাদের পেটের সমাধানটাও আপনাকেই করতে হবে... অমাবস্যার আগেই। কোন ঘরে রাখতে হবে মারুলা, করণিকবাবুকে বুঝিয়ে দিস”।
“অনুরোধ বলবেন না ভল্লামশাই – আপনি আমার থেকে কোনদিন কোন সাহায্যই নেননি – দু মণ তুলো আর বাদামের বীজ দিয়েছিলাম – তার মূল্যও আপনি পাই-পয়সায় মিটিয়ে দিয়েছেন...আমার কাছে আপনার যা মুদ্রা এখনও জমা আছে...তাতে চল্লিশজনের মাসখানেকের খাদ্যের সংস্থান হয়ে যাবে...ও নিয়ে মোটেও চিন্তা করবেন না। আমি বণিক - এটাই আমার কাজ”।
“ঠিক আছে, বণিকমশাই। এরপর আমাদের সময় করে একদিন বসতে হবে – কিন্তু সেটা ওই অমাবস্যার পরেই কোন একদিন – আপনাকে সংবাদ দেব। আমরা চারজন – আপনি, মারুলা, রামালি এবং আমি বসে দর-মূল্য সব ঠিক করে নেব – ওই দিন আদান-প্রদানও সেরে নেব...”।
অহিদত্ত অবাক হয়ে বললেন, “বলছেন কী ভল্লামশাই, আদান-প্রদানও...”।
ভল্লা মৃদু হেসে ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখল, “এখন আর কোন কথা নয়”।
অহিদত্ত হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, “আমি এখন আসি। কমলিমা, প্রণাম নেবেন। চললাম, দেখা হবে আবার”।
ক্রমশ...