

রাজার সিংহাসনের পাশে গিয়ে মহামন্ত্রী রাজার কানেকানে বললেন, “রাজামশাই, আজকে এই সভার অধিবেশন যদি একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে পারেন, তাহলে আমাদের জরুরি কিছু কথা আলোচনার আছে – সেগুলো সভার পরে সেরে ফেলতে পারতাম”।
রাজামশাই ভুরু কুঁচকে মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “বোঝো কাণ্ড, তাড়াতাড়ি সভা ভঙ্গের কথায় আমি ভেবেছিলাম, আপনি অকালে ছুটি দিয়ে দিলেন। ভালই হল, আমি বিদূষকের সঙ্গে বসে দু হাত চতুরঙ্গ খেলে নেব। কিন্তু সে গুড়ে বালি – আপনি সভার পরে আবার মন্ত্রণাকক্ষে বসাবেন?”
মহামন্ত্রীমশাই হেসে উত্তর দিলেন, “কী করি রাজামশাই, রাজকার্যে বড়ো ঝামেলি – কখন যে কোন বিষয়টা জরুরি হয়ে পড়ে আগে থেকে তার কোন অনুমান করা যায় না”।
সভা ভঙ্গ হতে রাজামশাই ও মহামন্ত্রীমশাই মন্ত্রণা কক্ষে গেলেন। চারদিকে কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। রাজা বা মহামন্ত্রীর বিশেষ অনুমতি ছাড়া এই কক্ষে এমনকি কক্ষের আশেপাশেও কারও দাঁড়িয়ে থাকার কোন অবকাশ রাখা হয় না। মন্ত্রণাকক্ষের নির্দিষ্ট আসনে বসার পর, মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “সংগ্রামপুর থেকে অস্ত্রবিশারদ অসিবল্লভ এসেছেন, রাজামশাই। ওঁর সঙ্গেই আমাদের জরুরি আলোচনা। তাঁকে ডেকে নিই, রাজামশাই?”
রাজামশাই সম্মতি দিতে, মহামন্ত্রীমশাই প্রহরীকে আদেশ দিলেন, অসিবল্লভকে ভেতরে পাঠানোর জন্যে। অসিবল্লভ অচিরেই মন্ত্রণা কক্ষে ঢুকলেন, প্রথমে রাজামশাইকে প্রণাম করে তাঁর হাতে একটি রত্নখচিত তরবারি উপহার দিলেন, তারপর মহামন্ত্রীমশাইকেও প্রণাম করলেন।
স্মিতমুখে রাজামশাই জিজ্ঞাসা করলেন, “কী সংবাদ, অসিবল্লভ? তোমার অস্ত্রশালায় কোন গণ্ডগোল হয়নি আশা করি। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে।”
বিনীত সুরে অসিবল্লভ বললেন, “না মহারাজ, আমাদের অস্ত্র নির্মাণশালায় কোন বাধা-বিঘ্ন উপস্থিত হয়নি, সব ঠিকঠাক চলছে। প্রকৃতপক্ষে আপনার রাজ্যের সর্বত্রই অখণ্ড শান্তি ও নিবিড় নিরাপত্তা বিরাজ করছে। আমাদের মতো সাধারণ প্রজাদের পক্ষে সেটি খুবই আনন্দের বিষয় নিঃসন্দেহে। কিন্তু সেই কারণেই আমি অস্ত্রনির্মাণকারী হিসেবে বিশেষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি, মহারাজ। আর সেই কথাটিই আমি মহামন্ত্রীমশাইকে নিবেদন করেছিলাম”।
বিস্মিত রাজামশাই বললেন, “রাজ্যে শান্তি আর নিরাপত্তার কারণে তোমার দুশ্চিন্তা কেন? ঠিক বুঝতে পারলাম না, অসিবল্লভ। মন্ত্রীমশাই আপনি বুঝেছেন?”
“কিছুটা বুঝেছি, রাজামশাই। সে কথা বলার জন্যেই আজকের এই মন্ত্রণার আয়োজন। খুব সংক্ষেপে অসিবল্লভ মহাশয়ের উদ্বেগের কারণটা আমি আপনাকে বলি, বাকি যা কথা আছে উনিই বলবেন”।
রাজামশাইয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “আপনার রাজত্বকালের পনের বছর পূর্ণ হতে চলল। প্রথম দুবছরের কিছু গৌণ বিদ্রোহ এবং দু-একটা ছোটখাটো যুদ্ধের পর এই রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে। অতএব অস্ত্র-শস্ত্রের কোন ঝনৎকার বহুদিন শোনা যায়নি। অসিবল্লভের সমস্যাটা ঘটছে সেখানেই। অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, অস্ত্র-শস্ত্রের চাহিদা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের কোন প্রয়োজনই থাকছে না। অসিবল্লভের কথায় ওর অস্ত্রনির্মাণশালায় যে ভাণ্ডারগুলিতে ও নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণ করে, সেগুলিতে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। উপরন্তু, সংরক্ষিত অস্ত্রশস্ত্রগুলির অনেকাংশই দীর্ঘ অব্যবহারে জং ধরে এবং ধুলো পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে”।
রাজামশাই চিন্তিত মুখে বললেন, “হুঁ। তার মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন, রাজ্যের পক্ষে নিরঙ্কুশ শান্তিও কাম্য নয়”?
মহামন্ত্রীমশাই সবিনয়ে বললেন, “সেটাই আমাদের এখন বিবেচনার বিষয়, মহারাজ। মহারাজ এই প্রসঙ্গ ছাড়াও আরও একটি জরুরি বিষয় আছে। যুদ্ধ হোক বা না হোক, প্রতিবেশী বিরোধী রাজ্যগুলির সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অস্ত্র-শস্ত্র নির্মাণের উন্নতিসাধন জরুরি। সে কাজটাও আমরা সর্বদাই চালিয়ে যাচ্ছি। তার ফলে দশ বছরের পুরোনো অস্ত্রশস্ত্র, আমাদের সদ্য বানানো আধুনিক অস্ত্র সম্ভারের কাছে নেহাতই লোহা-লক্কড়ের টুকরো হয়ে উঠছে। এখন কথা হল, আমরা কি তবে পুরোনো অস্ত্র-সম্ভার গালিয়ে আবার লোহার তাল বানিয়ে ফেলব, এবং তার থেকে আধুনিক অস্ত্র বানাবো। কিন্তু তাতে বেজায় খরচ, মহারাজ। আর যুদ্ধ-টুদ্ধ যদি না ঘটে, প্রতি বছরের বানানো নতুন অস্ত্র, পরের বছরেই পুরোনো হতে থাকবে। আর তাকে গালিয়ে আরো আধুনিক অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়াও চলতেই থাকবে! অর্থাৎ প্রতিবছরই রাজকোষ থেকে প্রভূত অর্থের এরকম অনর্থক অপচয় হতেই থাকবে”।
রাজামশাই মন দিয়েই মহামন্ত্রীমশাইয়ের কথা শুনছিলেন আর মাথা নিচু করে চিন্তা করছিলেন। অনেকক্ষণ পর মুখ তুলে বললেন, “সমস্যাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আধুনিক ও উন্নততর অস্ত্র বানানোর গবেষণা ও উৎপাদন তো আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে। এ ছাড়া আর অন্য উপায় তো দেখছি না। বহুকাল ধরে শান্তি বজায় রয়েছে বলে, আমরা অস্ত্র উৎপাদন তো বন্ধ করে দিতে পারি না। কবে কোন প্রতিবেশী রাজার কী মতিগতি হয় কোন ঠিকানা আছে? তার জন্যে সতর্ক থাকাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। তাই না?”
মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “একদম যথার্থ বলেছেন মহারাজ। কিন্তু আমি বলছিলাম, পুরোনো অস্ত্রগুলি যদি আমরা কোনভাবে বিক্রি করতে পারি, তাহলে আমাদের নতুন অস্ত্র বানানোর যে খরচ সেটা আমাদের গায়ে লাগবে না এবং অপব্যয় বলেও মনে হবে না। এমনকি বলা যায় না, আমাদের অস্ত্র-পসরার ঠিকঠাক প্রচার করতে পারলে রাজ্য-কোষাগার হয়তো দু-পয়সা লাভের মুখও দেখতে পারে!”
রাজামশাই অবাক হয়ে মন্ত্রীমশাই ও অসিবল্লভের মুখের দিকে তাকালেন, বললেন, “সে কী করে সম্ভব? কে কিনবে? আপনিই তো বললেন, আমাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের তুলনায় আমাদের পুরোনো অস্ত্রগুলি লোহা-লক্কড়ের সমান - সেই বাজে লোহা-লক্কড় কিনবে কোন আহাম্মক?”
অসিবল্লভ সবিনয়ে বললেন, “কেনার লোক এখন নেই, কিন্তু হতে কতক্ষণ, মহারাজ? তীক্ষ্ণ কূটবুদ্ধি সম্পন্ন কিছু যোগ্য গুপ্তচরকে নিয়োগ করে, আমরা রাজ্যের সীমান্তে দু-চারটে বিদ্রোহ বানিয়ে তুলতেই পারি!”
রাজামশাই আরও অবাক হলেন, বললেন, “কি বলছেন, অসিবল্লভ, আমরা আবার কাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বানাবো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না”।
অসিবল্লভ নিজের দুই কান ও নাক মুলে বললেন, “ক্ষমা করবেন, মহারাজ, আমার ওভাবে বলা উচিৎ হয়নি। মহারাজ আমরা কারও বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবো না - বরং আমরাই আমাদের বিরুদ্ধে কিছু মানুষকে বিদ্রোহী করে তুলবো”।
রাজামশাই কিছু বললেন না, তিনি যেন বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। কী বলছে এরা সব? যেখানে কোথাও কোন অশান্তি নেই, সেখানে নিজেরাই খাল কেটে কুমীর ডেকে দাঙ্গা-লড়াই বাধিয়ে তুলবে? তিনি অসিবল্লভের মুখের দিকে নির্বাক তাকিয়ে রইলেন।
অসিবল্লভ একটু ইতস্ততঃ করে আবার বললেন, “সত্যি বলতে আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ আপনার বিরুদ্ধে কিছু লোককে আমারা নানান উস্কানি দিয়ে বিদ্রোহী করে তুলবো। তাদের মাথায় ঢোকাবো অস্ত্র ছাড়া বিদ্রোহ সম্ভব নয়। তারা যেখান থেকে সম্ভব অর্থ সংগ্রহ করবে, অস্ত্র কেনার জন্যে। আর সেই অর্থের বিনিময়ে আমরা আমাদের পুরোনো অস্ত্র-সম্ভার তাদের কাছে বিক্রি করবো”।
“কিন্তু সে বিদ্রোহ যদি আমাদের রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়?”
“কক্খনো হবে না, রাজামশাই। তার আগেই আমাদের সুশিক্ষিত সৈন্যদল আমাদের বানানো আধুনিক অস্ত্র দিয়ে তাদের দমন করবে। হ্যাঁ মহারাজ, তারা বিদ্রোহীদের নিঃশেষ করবে না, শুধু দমন করবে। যাতে আমাদের সৈন্যদল ফিরে এলেই বিদ্রোহীরা আবার কিছুদিনের মধ্যেই নতুন করে তাদের বিদ্রোহ শুরু করতে পারে”।
রাজামশাই এ প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হলেন না, তিনি মহামন্ত্রীমশাইকে বললেন, “আমার কিন্তু এ প্রস্তাব একেবারেই পছন্দ নয়। এতো আমাদের প্রজাদের সঙ্গে সরাসরি তঞ্চকতা, শঠতা? তাদের জেনেবুঝে অনিশ্চিত এক বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া... না, না, এ হতে পারে না। আপনি কী বলেন, মহামন্ত্রীমশাই?”
“আমিও একমত, রাজামশাই। তবে রাজ্যের সকল প্রজাদের মঙ্গলের জন্যে সামান্য কিছু প্রজাকে বিড়ম্বনায় ফেলা তেমন কিছু দোষাবহ নয়, অন্ততঃ শাস্ত্রে সেরকমই বলে থাকে। তাছাড়া অন্য একটা দিকও ভেবে দেখবেন, রাজামশাই। আমাদের সুশিক্ষিত সৈন্যরা কৃষিকাজ করে আর অলস বসে থেকে দিনদিন অপদার্থ হয়ে উঠছে। কোন রাজ্যের সঙ্গে সত্যিসত্যিই হঠাৎ যদি যুদ্ধ লেগে যায়, আমাদের আধুনিক অস্ত্র নিয়ে তারা কতটা কী প্রতিরোধ ও আক্রমণ করতে পারবে – সে বিষয়ে আমার ঘোর সন্দেহ হয়, রাজামশাই। তাছাড়া তেমন যুদ্ধ যদি লেগেই যায়, এমনও হতে পারে তাদের অনেকেই যুদ্ধ করতে রাজিই হবে না। কারণ দীর্ঘদিন নিশ্চিন্ত গৃহবাসী হয়ে, তাদের মানসিকতায় রণক্ষেত্রের উত্তেজনা, হিংস্রতা, শক্তির অহংকার অনেকটাই মিইয়ে যেতে বসেছে। সেদিক থেকে মাঝে মাঝে – বছরে এক দুবার - বিদ্রোহ দমনের জন্যে তাদের সীমান্তে পাঠাতে পারলে তাদের পুরোনো অভ্যাস এবং দক্ষতা কিছুটা ঝালিয়েও নেওয়া যাবে”।
মন্ত্রীমশাই এবং অসিবল্লভের কথাগুলো উত্তরে রাজামশাই কিছু বললেন না। সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে গেলেন গবাক্ষের দিকে। অনেকক্ষণ বাইরে তাকিয়ে রইলেন, সবুজ রম্য প্রাসাদকাননের গাছপালা, ফুলের সমোরোহ দেখতে লাগলেন। মহামন্ত্রীমশাই ও অসিবল্লভ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন, দু তিনবার চোখে চোখে কথাও বলে নিলেন দুজনে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রাজামশাই মহামন্ত্রীর দিকে ফিরে চিন্তিত মুখে বললেন, “আপনাদের প্রস্তাবগুলিকে প্রত্যাখ্যান করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ – যুদ্ধবাজ দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা কোনদিনই হতে চাইনি, সে কারণে মন থেকে ঠিক সায় পাচ্ছি না। আবার একথাও ঠিক, সুষ্ঠু রাজ্যশাসনের জন্য রাজাকে অনেক সময়েই অপ্রিয় কাজ করতে হয়। অতএব আপনি বলুন, সীমান্তে বিদ্রোহ বানিয়ে তোলার জন্যে আপনারা কী চিন্তা করেছেন?”
মহামন্ত্রীমশাই বললেন, “আমাদের রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলটির অনেকটাই রুক্ষ অনুর্বর। সেই কারণে অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ অনুন্নত। অতএব ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা আমাদের রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই দরিদ্র। নিত্য-অভাব মানুষের মনে কখনও ঈশ্বরের প্রতি আবার কখনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার করে। সেই ক্ষোভটাকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই মহারাজ। আমাদের গুপ্তচর গিয়ে ওখানকার প্রজাদের বিচ্ছিন্ন ক্ষোভগুলিকে উস্কে তুলতে থাকুক এবং একমুখী করে তুলুক। জমে উঠতে থাকা সেই ক্ষোভের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করলেই, আপনি যদি অনুমতি দেন, আপনার শ্যালক শ্রী রতিকান্ত মহাশয়কে ওই ক্ষোভ প্রশমনের জন্যে আমরা পাঠাতে পারি...”।
মহারাজ চমকে উঠলেন, “রতিকান্ত? কী বলছেন মহামন্ত্রী। ও করবে প্রজাদের ক্ষোভ নিরসন? বিলাসী- ইন্দ্রিয়ের দাস, বিবেক-বুদ্ধিহীন গোঁয়ার...তাকে আপনি এই দায়িত্বে নিয়োগ করতে চান?”
অসিবল্লভ অতি বিনীতভাবে হাত কচলে বললেন, “ওঁকেই যে দরকার মহারাজ। এ রাজ্যের আপামর জনগণ আপনাকে শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে এবং বিশ্বাস করে। প্রজাদের ক্ষোভ যতই উস্কে তোলা যাক, তারা আপনার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ করতে শতবার দ্বিধা করবে। কিন্তু আপনার প্রতিনিধি হয়ে শ্রীযুক্ত রতিকান্ত মহাশয়ের মতো প্রশাসক ওদের মধ্যে গিয়ে পৌঁছলে, অচিরেই তাদের ক্ষোভ বিদ্রোহে পরিণত হয়ে উঠবে। মহারাজ, এ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তবে শ্রী রতিকান্ত মহাশয়ের সুরক্ষা ব্যবস্থায় আমরা কোন কার্পণ্য করব না, সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন”।
মহারাজার এই শ্যালকটি তাঁর তৃতীয় রাণির ভ্রাতা। রাজধানীতে তার নানান উপদ্রবে তিনি প্রায়শঃ ব্যতিব্যস্ত থাকেন। রাজপ্রাসাদ থেকে অদূরে, তার নিজস্ব প্রমোদকাননে সে সর্বদাই মদ্যাসক্ত অবস্থায় থাকে। নিত্যনতুন শয্যাসঙ্গিনীদের সঙ্গে সে রাত্রি যাপন করে। বেলা দ্বিপ্রহরে তার নিদ্রাভঙ্গ হয়। বিলাসী রতিকান্ত প্রতি হেমন্তে মৃগয়া অথবা রাজ্যভ্রমণে বের হন। তার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী থাকলেও, মহারাজ তার ভ্রমণ পথের সর্বত্র তাঁর বিশ্বস্ত কিছু অনুচরদের নিযুক্ত রাখেন। পথের ধারের গ্রাম, জনপদ এবং নগরের সাধারণ প্রজাবৃন্দ যেন কোনভাবেই রতিকান্তর লালসার শিকার না হয়ে পড়ে, সে দিকে তিনি তীক্ষ্ণ নজর রাখেন।
অতএব মহামন্ত্রীর এই প্রস্তাবে প্রথমে বিরক্ত হলেও, তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। এবং একথাও তাঁর বুঝতে বাকি রইল না, মূর্খ, অশিক্ষিত ও বিবেকহীন রতিকান্তই হয়ে উঠবে মহামন্ত্রী ও অসিবল্লভের হাতের পুতুল। সে যত বেশি উদ্ধত হবে, অত্যাচার-অনাচার করবে - ক্ষুব্ধ প্রজারা তত তাড়াতাড়ি বিদ্রোহের পথে এগোবে। অন্যদিকে রাজধানী থেকে রতিকান্ত বিদায় হলে, তাঁকেও সর্বদা তটস্থ থাকতে হবে না। রতিকান্তর দিদি অর্থাৎ তাঁর তৃতীয় রাণিও জানলে খুশি হবেন, মহারাজা তাঁর ভ্রাতাটিকে এতদিনে চিনতে পেরেছেন। এবং ভরসা করে রাজ্যের কোন এক অঞ্চলের প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত করেছেন। অন্দরের অভিমান এবং বাইরের বিপদ দুটো দিক থেকেই তিনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
মহারাজা বললেন, “সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আমাকে এক-দুদিন চিন্তা করার সময় দিন মহামন্ত্রীমশাই। আজ আমাদের মন্ত্রণা এখানেই স্থগিত থাক, আগামী পরশুদিন এই বিষয়ে আমার মতামত জানাব”।
অসিবল্লভ মহারাজা ও মহামন্ত্রীকে বিনীত অভিবাদন করে মন্ত্রণাকক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ক্রমশ...
সঞ্জীব দেবলস্কর | 2405:201:a803:815c:b597:d51a:2a3:***:*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৭530352
বিতনু চট্টোপাধ্যায় | 110.224.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৫৯530359
Debanjan Banerjee | 2409:4060:2ec6:2cfd:4a3e:dc:6bfd:***:*** | ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৮530392
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০১:২৮530431
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৫১530433
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০২:০৩530435
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৫৯530440
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:০০530441
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:০০530442
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:০৮530443
&/ | 151.14.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৫০530444
যোষিতা | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:০০530445
&/ | 151.14.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৩530446