সূর্যাস্ত হয়ে গেলেও পশ্চিম আকাশ এখনও কিছুটা রঙ আর আলো ধরে রেখেছে। পূবের আকাশে সে রঙের কোন আভাস নেই। গোটা আকাশটাকে অজস্র তারার চুমকি বসানো কালো পর্দার আড়ালে ঢেকে দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে সন্ধ্যাকাল। যেমন অপেক্ষা করছে নিশাচর জীবেরা – রাত্রি নামলে তারা বের হবে জীবিকার সন্ধানে। অন্যদিকে সারাদিন জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত পাখিরা এখন বাসায় ফিরছে। আশেপাশের গাছগুলি থেকে তাদের কলধ্বনি কানে আসছে। সন্ধ্যা আসছে, তার পিছনে আসছে রাত্রি।
এই সন্ধিক্ষণেই গ্রামপ্রধান জুজাক নিজের ঘরের দাওয়ায় বসে আছেন, কাঠের খুঁটিতে হেলান দিয়ে। তাঁর পিছনে ঘরের দরজার পাশে মাটি-লেপা দরমার দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন কমলিমা। দুজনেই দূরের পাহাড়, ঝোপঝাড়-জঙ্গল, পূবের আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। নির্লক্ষ্য বোবা, নির্বিকার দৃষ্টি মেলে। সবকিছুই তাঁদের দৃষ্টিতে ধরা দিচ্ছে, কিন্তু তাঁদের মনে কোন ছায়া পড়ছে না। এই জীবন, ওই প্রকৃতি, দিন-রাত্রি এসবই তাঁদের কাছে আজ যেন মূল্যহীন মনে হচ্ছে। মাত্র হাত তিনেক দূরে বসে থাকা দুই জীবনসঙ্গী নিজেদের মধ্যে কথাও বলছেন না। দীর্ঘ দাম্পত্যের প্রেম-ভালোবাসা-ক্ষোভ-অভিমান-অভিযোগের কথা। কিংবা সাধারণ সাংসারিক সুখদুঃখের কথা, প্রয়োজনের কথা। সব কথাই যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাঁদের জীবন থেকে যেন ফুরিয়ে গেছে সমস্ত অনুভব।
কেন এবং কতক্ষণ তাঁরা এভাবে বিমনা বসে আছেন, সে কথা একবারের জন্যেও তাঁদের মনে আসেনি। তাঁদের সম্বিৎ ফিরল কবিরাজদাদার ডাকে, “জুজাকভায়া, বাড়িতে একা একা বসে কী করছ?” জুজাক দাওয়া থেকে তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন উঠোনে। “আসুন আসুন, কবিরাজদাদা। কী আর করব, এই বসে ছিলাম একটু…”।
“সন্ধ্যে হয়ে গেল, আলো জ্বালাওনি, তুলসীতলায় প্রদীপ দেখাওনি। কী ব্যাপার? চুপ করে দাওয়ায় বসে দুটিতে কী ভাবছিলে বলো তো, মা?”
কবিরাজদাদার ডাকে কমলিমাও উঠে পড়েছিলেন। আড়া থেকে আসন পেড়ে, দাওয়ায় বিছিয়ে দিয়ে, বললেন, “আসুন কবিরাজদাদা, বসুন। সত্যিই বড়ো ভুল হয়ে গেছে”। তিনি তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে প্রদীপ জ্বালালেন। কাচা কাপড় পরে প্রদীপ হাতে, দ্রুত পায়ে নেমে গেলেন উঠোনের তুলসীতলায়। প্রথমে হাতজোড় করে নমস্কার করলেন, তারপর গলায় আঁচল জড়িয়ে মাটিতে গড় হয়ে প্রণাম সারলেন। তারপর ঘরে ঢুকে প্রদীপ জ্বালিয়ে, সলতেটা ছোট করে বাইরে দাওয়ায় এসে বসলেন, নিজের জায়গাটিতেই। ঘরের স্তিমিত আলোয় এবং বাইরের ক্ষুদ্র দীপালোকে – অন্ধকার কিছুটা ফিকে হয়ে উঠল। আর তখনই পুবের পাহাড় চূড়ায় দেখা দিল চাঁদ। গতকাল পূর্ণিমা ছিল, আজ কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ। গতকালের পূর্ণতা আজ তার আর নেই – আগামী প্রতিদিনই সে শীর্ণ হতে থাকবে।
কবিরাজদাদা জুজাকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “গ্রামের পরিস্থিতি কী বুঝছো, জুজাক?”
মুখে বিষণ্ণ হাসি নিয়ে জুজাক বললেন, “তুমি কী বুঝছো, কবিরাজদাদা?”
কবিরাজ দাদা মাথা নেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “মোটেই ভালো বুঝছি না, হে। দিনকাল আগের মতো থাকছে না। অবশ্য দিনকাল যে চিরদিন একই রকম থাকবে, তা না। বদল হবেই। কিন্তু এ বদল যেন বড্ডো তাড়াতাড়ি ঘটে চলেছে”।
জুজাক একই রকম বিষণ্ণ সুরে বললেন, “সব কিছুই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, কবিরাজদাদা। আমাদের বোধ-বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে আর তাল রাখতে পারছি না”।
সকলেই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর জুজাক বললেন, “শুনলাম গত রাত্রে আস্থানের শিবিরে নাকি ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতদের হাতে নাকি তিন-তিনজন রক্ষী প্রাণ দিয়েছে। তুমি আমি এই গ্রামেই আশৈশব বড়ো হলাম, দাদা। এমন ডাকাতির কথা কোনদিন শুনেছ? আমাদের গ্রামের কথা ছেড়েই দাও আশেপাশে যত গ্রাম আমি চিনি কোথাও কোনদিন এমন ঘটনা ঘটেনি। আজ কারা এইসব করছে? কে তাদের সাহস যোগাচ্ছে?”
কবিরাজদাদা মন দিয়ে জুজাকের কথা শুনছিলেন। ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসি নিয়ে তিনি বললেন, “তোমার নিজের প্রশ্নগুলির উত্তর তুমি তো নিজেই দিয়ে ফেললে জুজাক”। জুজাক কবিরাজদাদার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকালেন, কোন কথা বললেন না।
কবিরাজদাদা বিষণ্ণ হেসে বললেন, “বুঝতে পারলে না, না? আচ্ছা, গতকাল আমাদের গ্রামের পনের-ষোলোজন ছেলে রাত্রে বাড়িতে ছিল না”।
“হ্যাঁ। ওরা তো রামকথা শুনতে গিয়েছিল”।
“আশেপাশের গ্রামগুলোতে এমনকি আমাদের এই গ্রামেও নানান উৎসবে, পূর্ণিমায় এমন রামকথা তো প্রায়ই হয়। এ সব ধর্ম কথা শুনতে গ্রামের মহিলারা যায়...বয়স্ক মানুষরা যায়। অনেক ভক্ত আমাদের প্রতিবেশী গ্রামগুলিতেও যায়। কিন্তু জুজাক, তুমি আমায় বলো তো – আমাদের ছোকরা ছেলে-পুলেদের এত বড়ো দল কবে কোথায় গিয়েছে ধর্মকথা শুনতে? তাও কাছাকাছির মধ্যে প্রতিবেশী গ্রামে নয়, গভীর জঙ্গল-পথে এতটা হেঁটে, পাশের রাজ্যে? আমার তো মনে পড়ে না”।
জুজাক চমকে উঠলেন, “তার মানে? ওরা কাল রাত্রে রামকথা শুনতে যায়নি? তাহলে কোথায় গিয়েছিল?”
কবিরাজদাদা বললেন, “তা তো জানি না, ভাই। আরও একটা কথা - পাশের সুকরা গ্রামের চারজন গতকাল রাত্রে সত্যিই বটতলি গ্রামে গিয়েছিল রামকথা শুনতে। আমাদের ছোঁড়াগুলো যদি রামকথা শুনতে নাই গিয়ে থাকে, তাহলে ওই চারজন এসে ওদের সঙ্গে কোথায় জুটল? কেন জুটল?”
জুজাক বললেন, “তুমি কি গতকাল আস্থানে ডাকাতির সঙ্গে আমাদের ছেলেদের সংযোগ খুঁজে পাচ্ছ”?
কমলিমা এতক্ষণ কোন কথা বলেননি, শুধু শুনছিলেন। এখন উত্তেজিত হয়ে বললেন, “কী বলছো, এ কোনদিন হতে পারে? আমাদের ছেলেরা যাবে আস্থানে ডাকাতি করতে? কবিরাজদাদা, তুমি কি সত্যিই তাই সন্দেহ করছো? আমাদের ছেলেদের তুমি চেন না? তারা করবে ডাকাতি?”
কবিরাজদাদা ম্লান হেসে বললেন, “কেন চিনব না? খুব ভালো করেই চিনি, মা। কিন্তু প্রথমেই যে বললাম, অনেক কিছু খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে”।
কবিরাজদাদার কথাটা কমলিমার মনঃপূত হল না, বললেন, “তাই বলে ডাকাত?”
কবিরাজদাদা কমলিমায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে স্নেহের সুরে বললেন, “ডাকাত বলতে সাধারণ চোর-ডাকাতের কথা আমি বলিনি, মা। যাদের কথা আমরা সাধারণতঃ শুনে থাকি। তারা হিংস্র, লোভী, স্বার্থপর। পরের ধন-সম্পদ লুঠ করা তাদের জীবিকা। আস্থানে যে ডাকাতির কথা শুনলাম, মা, তাতে আর কিছু নয়, লুঠ হয়েছে প্রচুর অস্ত্র-শস্ত্র। কর সংগ্রহের সময় আস্থানের ভাণ্ডারে যথেষ্ট শস্য এবং অর্থ সঞ্চিত থাকে বা রয়েছে – এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এই ডাকাতরা আস্থানের শস্যভাণ্ডার কিংবা অর্থভাণ্ডার স্পর্শও করেনি। কেন? এই ডাকাতির সঙ্গে সাধারণ ডাকাতির কোন মিলই খুঁজে পাচ্ছি না। এই ডাকাতির উদ্দেশ্য অন্য কিছু…”।
কমলিমা মানতে রাজি নন, তিনি বললেন, “এ কেমন তর ডাকাতি আমি বুঝি না, কবিরাজদাদা। কিন্তু তুমি যে বললে আস্থানে তিনজন রক্ষী নিহত হয়েছে। আমাদের ছেলেরা হত্যা করতে পারবে? একথা তুমি বিশ্বাস করো?”
কবিরাজদাদা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, কিছু বললেন না। এই গ্রামে বধূ হয়ে আসা থেকে তিনি কমলিকে চেনেন, স্নেহ করেন নিজের ভগ্নীর মতো। এই মেয়েটির মনে বিরাজ করে, সারল্য, বিশ্বাস, মায়া, ভালোবাসা আর মাতৃত্ব। তার ছোট্ট মনোজগতের বাইরের বিশাল জগৎ যে সর্বদা নিষ্ঠুর তঞ্চক ক্রূর ও কুটিল খেলায় মগ্ন রয়েছে, সে কথা কমলির কাছে কোনমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। অনেকক্ষণ পর কবিরাজদাদা তুলসীতলার দীপ শিখাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “কিন্তু আমি যে টের পাচ্ছি, মা, ধিকিধিকি আগুন জ্বলা শুরু হয়েছে”।
জুজাক অনেকক্ষণ পর কথা বললেন, “এই আগুনের উৎস কি ভল্লা, কবিরাজদাদা?” কবিরাজদাদা উত্তরে “হ্যাঁ” কিংবা “না” কোন কথাই বললেন না, একই ভাবে তাকিয়ে রইলেন মঙ্গলময় স্নিগ্ধ দীপ শিখাটির দিকে। কিন্তু জুজাকের প্রশ্নের উত্তরে কবিরাজদাদা কিছু না বলাতে, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কমলিমা, বললেন, “যারে দেখতে নারি, তার চলন ব্যাঁকা? এ তোমাদের ভীষণ অন্যায় কবিরাজদাদা। ছেলেটাকে তোমরা কোনদিনই সহজ চোখে দেখতে পারো না। ছেলেটা আমাদের গ্রামের ছোঁড়াদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। কাজ নেই কর্ম নেই, তারা অলস দিন কাটাতো। সেই আলসেমি কাটিয়ে, সে তাদের মানুষ করে তুলছে...”। প্রাথমিক উত্তেজনায় কমলিমা এতগুলো কথা বলে ফেলে একটু শান্ত সংযত হলেন, তারপর আবার বললেন, “সেই কোন কাল থেকে তোমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে নালা বয়ে চলেছে। সেই জলকে কাজে লাগিয়ে যে চাষ করা সম্ভব, সে কথা কেউ তো বলতে পারেনি। ছেলেটা সেটাও করে দেখিয়েছে। আজ আমাদের নোনাপুর এবং সুকরার কিছু চাষি নতুন কিছু আবাদী জমি পেয়েছে। নতুন কিছু ফসল ফলানোর সুযোগ পেয়েছে। এ কি কম কথা, কবিরাজদাদা?”
কমলিমায়ের কথা শেষ হতে কেউই কোন কথা বললেন না, অনেকক্ষণ চুপ করে বসে নিজেদের মনে চিন্তা করতে লাগলেন। অনেকক্ষণ পর কবিরাজদাদা বললেন, “ভল্লা অসুস্থ অবস্থায় যখন এসেছিল, প্রথম দেখাতেই আমি বলেছিলাম – এ ছোকরা অসাধারণ এবং বীর যোদ্ধা। মনে আছে? পরে আমরা জানলাম, ছোকরা নির্বাসন দণ্ড পাওয়া অপরাধী। যদিও মানবিক দিক দিয়ে বিচার করলে এত গুরু দণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ কী ও করেছে? আমাদের সহজাত বিবেচনায় মনে হয়, না করেনি। দু-পাঁচ বছরের কারা দণ্ডই হয়তো ওর ন্যায্য শাস্তি হতে পারত”।
কবিরাজদাদা কিছুক্ষণ বিরতি দিলেন, কিছু চিন্তা করলেন। তারপর আবার বললেন, “প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নির্বাসন হয়েছে - কিন্তু নির্বাসনের জন্যে, তাকে এতদূরে রুক্ষ, উষর পশ্চিম প্রান্তে আসতে হল কেন? আমার মনে হয়েছে ও পূর্বাঞ্চলের লোক। সেক্ষেত্রে রাজধানী থেকে পূর্ব সীমান্তের দিকেই যাওয়াই ওর পক্ষে স্বাভাবিক হত। রাজধানী থেকে আমাদের পশ্চিম সীমান্তের দূরত্ব, পূর্ব সীমান্তের থেকে অনেকটাই বেশি। ছোকরা তাহলে কেন আমাদের সীমান্তে এসে উপস্থিত হল। প্রশাসনের নির্দেশে?”
যদিও দুজনের মনোভাবে বিস্তর ফারাক, কিন্তু জুজাক এবং কমলিমা অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে কবিরাজদাদার কথা শুনছিলেন। কবিরাজদাদা একটু থেমে আবার বললেন, “রাজধানীতে যা যা ঘটেছিল, ভল্লার মুখে আমরা সবাই শুনেছি। যাদের রাজধানীতে নিত্য যাওয়া আসা আছে, তাদের মুখেও যা শুনেছি - ভল্লা এতটুকুও মিথ্যা বলেনি। এও শুনেছি রাজধানীর সাধারণ মানুষ ভল্লার প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল এবং এই ঘটনার পর ভল্লা সাধারণের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে”।
জুজাক নির্বিকার মনেই শুনছিল, কিন্তু কমলিমা ঘাড়ে ঝটকা দিয়ে কবিরাজদাদার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তবে? মানুষ চিনতে আমি মোটেই ভুল করিনি, কবিরাজদাদা”।
কবিরাজদাদা কমলিমায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, “ঠিক। কিন্তু আমিও ওকে চিনতে এতটুকু ভুল করিনি, মা। শুধু দেখার চোখটাই যা আলাদা। যে কথা বলছিলাম, রাজধানীর ঘটনাটা যেদিন ঘটেছিল, শুনেছি সেই রাত্রেই ভল্লা রাজধানী থেকে রওনা হয়েছিল। রাজধানী ছাড়ার পর চতুর্থ দিন ভোরে সে আমাদের গ্রামে এসে পৌঁছেছিল পায়ে হেঁটে। বিপর্যস্ত অবস্থায়। রাজধানী থেকে আমাদের গ্রামের যা দুরত্ব, সেটা তিনদিন, তিন রাত পায়ে হেঁটে আসা অসম্ভব। বিশেষ করে ওরকম অসুস্থ অবস্থায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে ও বেশিরভাগ পথটাই এসেছিল হয় ঘোড়ায় চড়ে অথবা রণপায়”। একটু থেমে আবার বললেন, “আমাদের গ্রাম থেকে সবথেকে কাছের চটি হল বীজপুরের জনাইয়ের চটি। সেখান থেকে ভোর ভোর রওনা হলে, পায়ে হেঁটে পরের দিন ভোরে আমাদের গ্রামে হেসেখেলে পৌঁছে যাওয়া যায়। ভল্লার মতো ছোকরাদের পক্ষে ছয়-সাত প্রহরই যথেষ্ট। কিন্তু ভল্লার অনেকটাই বেশি সময় লেগেছে, কারণ ও তখন ভয়ানক অসুস্থ”।
কথা শেষ করে কবিরাজদাদা অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এঃ লক্ষ্যই করিনি রাত্রি অর্ধ প্রহর পার হতে চলল, আমি এখন আসি”।
জুজাকও যেন সম্বিৎ ফিরে পেল, বললেন, “চলো, তোমাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিই”।
“তুমি আবার বেরোবে কেন, জুজাক? চাঁদের আলোয় টুকটুক করে চলে যাবো”।
“তা হোক, তোমার সঙ্গে কিছুটা যাই”।
কবিরাজদাদা হাসলেন, উঠোনে দাঁড়িয়ে বললেন, “চলি রে, মা। রাগ করিস না। অনেক কথাই বললাম, তোর হয়তো ভালো লাগল না”।
কমলিমা সংকোচের সুরে বললেন, “আমিও অনেক কথা বলে ফেললাম, রাগ করবেন না কবিরাজদাদা”।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুজনে নিঃশব্দে হেঁটে চললেন বেশ কিছুক্ষণ, তারপর জুজাক চাপা স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “ভল্লা কেন এখানে এসেছে, কিছু বুঝতে পারলে, কবিরাজদাদা? তার উদ্দেশ্যটা কি?”
“ভল্লার এখানে আসার ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্যই নেই জুজাক। ভল্লা এসেছে প্রশাসনের নির্দেশে কোন বিশেষ একটা কাজের দায়িত্ব নিয়ে। ভল্লার পিছনে আছে প্রশাসনের অদৃশ্য হাত”।
“কী বলছ, কবিরাজদাদা? তাহলে তার এই নির্বাসন দণ্ড। আস্থানে শষ্পকের ওরকম অশ্রাব্য গালিগালাজ। মৃত্যুদণ্ডের হুমকি…এ সব কেন?”
কবিরাজদাদা বললেন, “সবটাই সাজানো – নাটক। সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া…। তবে এটাও ঠিক ভল্লা রাষ্ট্রের ওপর এতটাই বিশ্বস্ত, এ কাজে সে নিজের প্রাণ পণ রাখতেও এতটুকু দ্বিধা করবে না। সে কাজে যদি তার বিবেকের সায় না থাকে – তাও”।
বিস্মিত জুজাক জিজ্ঞাসা করলেন, “এভাবে একটা অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করায় রাষ্ট্রের কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?”
কবিরাজদাদা মাথা নাড়লেন, জানেন না। তারপর বললেন, “তুমি এবার এসো জুজাক, আমি তো প্রায় এসেই গেছি। এবার বাড়ি যাও – কমলিমা একলা রয়েছে বাড়িতে”।
- - - -
বটতলির ছোকরা পাঁচজন চলে যাওয়ার পর, ভল্লা চুপ করে বসেই রইল দণ্ড তিনেক। জঙ্গলের অন্ধকারে চুপচাপ বসে নানান চিন্তাভাবনা করতে তার ভালই লাগে। আঁধারে চোখের কাজ সীমিত হয়ে যায়। অবশ্য আজ কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ। জঙ্গলের বাইরে পূর্ণিমার মতোই জ্যোৎস্না ফুটেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু জঙ্গলে ঘন গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে তার ঝিলিমিলিটুকুই চোখে পড়ে। সেই আলো-আঁধারী ছায়া-প্রচ্ছায়াতে চোখে বেজায় বিভ্রম সৃষ্টি করে। এ সময় ভল্লা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার কানের ওপর। ভল্লার মনে হয়েছিল এসময় রামালি আসতে পারে। কিন্তু সন্ধের পর প্রায় তিন দণ্ড পার হয়ে গেল, রামালি এল না দেখে, সে রান্নার যোগাড়ে লাগল।
কিছু কাঠকুটো জ্বেলে গুঁজে দিল উনুনের গর্তে। তারপর পোড়া মালসায় জল নিয়ে তিন মুঠো ভুট্টার দানা ঢেলে দিল তাতে। চাপিয়ে দিল আগুনের ওপর। শুকনো পাতা আর গাছের ডালের টুকরো ঠেলে দিল জ্বলন্ত উনুনের গর্তে। আগুন উলসে উঠল ভালোই। তারপর ঘর থেকে আনল একটু নুন আর গোটা পাঁচেক গোলমরিচের দানা। আর কাঁচা লঙ্কা ভেঙে ফেলে দিল উষ্ণ হতে থাকা মালসার জলে। এখন তার আর কিছু করার নেই, আগুনটাকে উস্কে তোলা ছাড়া। জল ফুটবে। ভুট্টার দানা সেদ্ধ হবে, সময় নেবে – দণ্ড খানেক তো বটেই।
হঠাৎ তার পিঠে কেউ হাত রাখল, কর্কশ শক্তিশালী হাত। ভল্লা বিদ্যুৎ বেগে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত তুলল আঘাত করার জন্যে, আগন্তুক ভয় পেয়ে মাথা নামিয়ে বলল, “আরেঃ শালা, মারবি নাকি রে?” ভল্লা চিনতে পারল, মারুলা। হেসে ফেলে হাত নামিয়ে বলল, “ওঃ তুই”?
“তা নয়তো কাকে ভেবেছিলি? এই জঙ্গলে তোকে সেই কখন থেকে খুঁজছি জানিস? কিছুতেই আর ঠাহর করতে পারছিলাম না। শেষে ওই আগুনের আলোয় বুঝতে পারলাম তুই এখানে। কী রাঁধছিস? ভুট্টার ঝোল? আমার জন্যেও দু মুঠো ফেলে দে, ভল্লা। খিদে পেয়েছে বেশ”।
“তুই এখানে হঠাৎ কোত্থেকে উদয় হলি, হতভাগা”? বলতে বলতে ভল্লা উঠে ঘরে গেল, মুঠো তিনেক ভুট্টা এনে মালসায় ঢেলে দিয়ে, আরও একটু নুনের ছিরিক মেরে দিল। “আমি এখানে আছি সে বার্তা তোকে কে দিল?”
মারুলা বলল, “তোকে এখানে যারা পাঠিয়েছে, তারাই আমাকে বলেছে তোর পোঁদে লেগে থাকতে। এঁটুলির মতো। কিন্তু একটা কথা ভল্লা, তুই কিন্তু বেশ ভোঁদা মেরে গেছিস। আমি তোর এত কাছে চলে এলাম, তোর পিঠে হাত রাখলাম, তার আগে পর্যন্ত তুই টেরই পেলি না? যে ভল্লাকে আমরা সবাই চিনি, সে ভল্লা তো তুই নোস। কী হয়েছে, ভল্লা?”
ভল্লা একটু লজ্জাই পেল। মারুলা অত্যন্ত দক্ষ গুপ্তচর। ভল্লার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছে। নিঃশব্দ চলাফেরায় মারুলা তার মতোই দক্ষ। কিন্তু তার এত কাছে এসে পড়া সত্ত্বেও ভল্লা টেরই পেল না, এটা আদৌ স্বস্তির বিষয় নয়। ভল্লা নিজেও চিন্তিত হল। বলল, “ঠিকই বলেছিস, মারু। আমার আরো সতর্ক থাকা উচিৎ ছিল”।
মারুলা একটু হাল্কা সুরেই বলল, “ঠিক আছে...হয়তো আগুন জ্বলার শব্দ, জল ফোটার শব্দ, তার ওপর মাথায় চিন্তার জট পাকানোর শব্দ – কিছুটা আনমন হয়ে গিয়েছিলি। আচ্ছা, একটা কথা মনে পড়ে গেল, তুই কোনদিন জঙ্গলে হাতির কাছাকাছি গিয়েছিস?”
ভল্লা হেসে ফেলল, বলল, “বেশ কয়েকবার। প্রাণ হাতে করে, চুপটি করে লুকিয়ে থেকেছি ঝোপের আড়ালে। তখনই শুনেছি হাতির পেটের শব্দ। সাত-আট হাত দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যায় – বড়ো জালার মধ্যে জল ফোটার মতো, কিংবা তার থেকেও ভয়ংকর। সেই শব্দের কথাই বলছিস তো?”
“আমাদের কিংবা আমাদের কর্তাদের মগজে যখন নানান কুবুদ্ধি খেলা করে বেড়ায় তখনও নিশ্চয়ই ওরকম আওয়াজ হয় – ভুটভাট, শোঁ শোঁ...”।
ভল্লা হাসতে হাসতে বলল, “তুই কি আমাকে হাতির বাতকম্মো শোনাতে এসেছিস? কী ব্যাপার বল তো?”
মারুলা একটু চাপা স্বরে বলল, “অনেক কথা আছে, পরে বলব, এখানে নয়, অন্য কোথাও। তোর এই ঘরে আমি জানি অনেক লোকের যাতায়াত...। ততক্ষণ একটু ফকড়েমি করি না। তুই আর শালা কোনদিন শুধরোবি না। চব্বিশ ঘন্টা পোঁদে আটা লাগিয়ে কাজ আর কাজ। তাও যদি মুতিকান্ত না হয়ে একটু রতিকান্ত হতে পারতিস...” বলে খিঁক খিঁক করে ফিচেল হাসতে লাগল। ভল্লাও হেসে ফেলল, বলল, “তুই শালা পারিসও বটে”।
রতিকান্ত আর মুতিকান্ত রাজধানীর রক্ষী শিবিরে প্রচলিত অত্যন্ত চালু রসকথা – অবশ্যই আদিরসাত্মক। দীর্ঘদিন নারীসঙ্গবর্জিত রক্ষী শিবিরের একঘেয়ে জীবনে শব্দদুটি অত্যন্ত অর্থবহ। পুরুষের একটি বিশেষ প্রত্যঙ্গ দুটি কর্মে ব্যবহৃত হয়, প্রস্রাব কর্মে এবং রতিকর্মে। অধিকাংশ পুরুষ প্রাকৃতিক কারণেই দ্বিতীয় কর্মে সেই প্রত্যঙ্গের বহুল ব্যবহার কামনা করে। কিন্তু রক্ষীরা সে ভাগ্য করে আসেনি। রাজ্য-রাজধানীর সুরক্ষার জন্যে তাদের প্রায়ই মাঠে-ঘাটে, জঙ্গলে-পাহাড়ে, আদাড়ে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। অতএব তাদের পুরুষাঙ্গটি শুধুমাত্র যত্রতত্র প্রস্রাব করাতেই ব্যবহার হয়। অতএব তারা সকলেই মুতিকান্ত। কিন্তু রাজার শ্যালক রতিকান্ত সারারাত প্রস্রাবের থেকে রতিকর্মেই বেশি ব্যস্ত থাকেন, তাই তিনি সার্থকনামা।
কাঠের হাতা দিয়ে দু-তিনটে ভুট্টার দানা তুলে, ভল্লা টিপে টিপে দেখল, সেদ্ধ হয়েছে কিনা। হয়নি, আরেকটু হবে। দানাগুলো মালসার জলে ছেড়ে দিয়ে তাকাল মারুলার দিকে। আগুনের কমলা রঙে, মারুলার মুখটাও লালচে দেখাচ্ছে। ভল্লার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মারুলা এক চোখ টিপে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ভুট্টার দানা টিপেই টিপেই রাত কাটাবি, ভল্লা?”
মারুলার ইশারাটা বুঝে ভল্লা মিচকে হাসল, বলল, “সে হিসেব তোকে দেব নাকি রে, মদনা? এমন ভাব করছিস, তুই যেন রোজ রাতে টিপতে পাস?”
মারুলা নিরীহ মুখে বলল, “সে টেপাটেপি তো করতেই হয়, বন্ধু। সারাদিন হেঁটেহেঁটে পায়ে যা ব্যথা হয়, রেড়ির তেল নিয়ে পাদুটো টিপলে বেশ ভালই লাগে। তুই কোন টেপার কথা বলছিস, ভল্লা?”
ভল্লা মুখ বেঁকিয়ে হাসল, বলল, “ন্যাকা, তুই শালা পা টেপার কথা বলছিলি, বুঝি?”
মারুলা আকাশ থেকে পড়ল, বলল, “তুই কী ভেবেছিলি? এ রাম, ছি ছি, তোর মনটা শালা মাছির মতো, গুড়ের কলসি দেখলেই ভনভন করে জুটে যাস...”। ভল্লা এবার উনুন থেকে একটা জ্বলন্ত কাঠের টুকরো বের করে হাসতে হাসতে মারুলার দিকে এগিয়ে নিয়ে বলল, “আজ তোকে ষাঁড়-দাগা করেই ছাড়বো, হতভাগা ধর্মের ষাঁড়”।
দুহাত বাড়িয়ে আত্মরক্ষার ভঙ্গি করে মারুলা বলল, “তোর সঙ্গে দুটো রসের কথা বললাম বলে তুই ষাঁড় বললি? তোর সঙ্গে কাজের কথা ছাড়া আর কোন কথাই বলব না”। কপট অভিমানে মুখ গোমড়া করে বসে রইল মারুলা। ভল্লা জ্বলন্ত কাঠটা উনুনে গুঁজে দিতে মারুলা বলল, “তুই ছোটবেলায় পাঠশালে গেছিলি ভল্লা”?
মারুলা কথাটা কোনদিকে নিয়ে যেতে চায় বুঝতে না পেরে, ভল্লা সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল মারুলার দিকে, বলল, “গিয়েছি বৈকি, বছর দুয়েক মতো”।
মারুলা বলল, “দু-বছর? তাহলে তুই তো পণ্ডিত রে? আমি তো শালা ছমাসের মাথায় পণ্ডিতমশাইয়ের হাতে এমন গোবেড়েন খেয়েছিলাম, তারপর আর ওই মুখো হইনি”।
“কেন?”
“সে আর বলিস না। আচ্ছা, তুই বল, ভল্লা, ষণ্ড মানে ষাঁড়, ভণ্ড থেকে ভাঁড়, তাহলে গণ্ড থেকে যে গাল হবে আমি কী করে বুঝবো বল তো? পণ্ডিতমশাই শুধোলো – গণ্ড মানে কি? বললাম। আমার উত্তর শুনে পাঠশালের অন্য ছেলেরা হ্যা হ্যা করে এমন হাসলে – পণ্ডিতমশাই একেবারে জ্বলে উঠল। তারপর গাল দিয়ে আমার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে করতে ছড়ি দিয়ে এমন পেটাল, বাপের নাম ভুলিয়ে দিয়েছিল শালা...”।
ভুট্টার মালসা নামিয়ে, ঘরের ভেতর থেকে দুটো মাটির সরা আনল ভল্লা। গরম ভুট্টাসেদ্ধ সমান দুভাগ করে ঢালল সরায়, তারপর মারুলার হাতে একটা সরা তুলে দিয়ে বলল,
“কোথায় পেটাল, তোর গণ্ডে?”
মারুলা খুবই বিষণ্ণ মুখে বলল, “তুই আর সেই ভল্লা নেই রে। আগে বন্ধুদের জন্যে তোর কত দরদ ছিল, আজ তুই আমার দুর্দশার কথায় ঠাট্টা করছিস?”।
ভল্লা কিছু বলল না, ভুট্টা খেতে লাগল মন দিয়ে। মারুলা ঝোলে চুমুক দিয়ে বলল, “বেড়ে বানিয়েছিস তো শালা? দুদিন আগে জনাইয়ের চটিতে গমের রুটি আর এরকমই ভুট্টার ঝোল খেয়েছিলাম। অ্যাঃ সে শালা মুখে তোলা যায় না। আর তুই এখানে এই জঙ্গলে, হাতের কাছে মশলাপাতি কিছুই নেই, এমন ঝোল বানালি কী করে?”
দুজনেরই খাওয়া সাঙ্গ হতে উনুনের আগুন নিভিয়ে দিয়ে ভল্লা ঝোপের মধ্যে লুকোনো দুজোড়া রণপা বের করল। একজোড়া মারুলাকে দিয়ে বলল, “এবার চল, কোথাও গিয়ে বসে কাজের কথাগুলো সেরে ফেলে যাক। কিন্তু তার আগে নোনাপুর গ্রামের সর্বশেষ পরিস্থিতি কেমন সেটা জানা দরকার। আজ সারাদিন নোনাপুর গ্রামের ছেলেরা কেউই আসেনি। তাদের আসা সম্ভবও নয়। তাই ভাবছি একবার নোনাপুর গ্রামে যাবো”।
“পাগল হয়েছিস নাকি? এত রাত্রে কে তোর জন্যে বসে থাকবে?”
ভল্লা হাসল, বলল, “আছেন, একজন আছেন, আমার কমলিমা। যে সংবাদ আমি জানতে চাইছি, তাঁর থেকে ভাল আর কেউ বলতে পারবে না”।
“কমলিমা? মানে গ্রামপ্রধানের বউ? বোঝ, গ্রামপ্রধানের বুড়ি বউ তোকে কী খবর দেবে? তোকে দেখলে হয়তো খানিক কান্নাকাটি করে পাড়া মাথায় তুলবে”।
“না রে, বুড়ি মোটেই আউপাতালে নয়, বেশ শক্ত মনের মানুষ। কমলিমার থেকে গ্রামের আজকের পরিস্থিতিতে জুজাক কী ভাবছে, কী বলছে, সেটা সহজেই জেনে যাব। সেই সঙ্গে, ভাগ্য ভাল হলে, আরেকজনার কথাও”।
“আরেকজন কে?”
“কবিরাজ”।
“কবিরাজ! হ্যাঁ কবিরাজের কথা আস্থানেও শুনেছি। শুনেছি বুড়োটা খুব ধূর্ত”!
ভল্লা বলল, “ধূর্ত বলিস না, বল বিচক্ষণ, দূরদর্শী। আমি যদি রাজরক্ষী না হয়ে, এই গ্রামের লোক হতাম, বুড়োকে বুকে করে রাখতাম। বুড়োর গায়ে এতটুকু আঁচড়ও লাগতে দিতাম না। কিন্তু কে জানে… হয়তো আমাদের কাজের স্বার্থে...। যাগ্গে শোন বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। তুই গাঁয়ের বাইরেই কোথাও আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে থাক। কমলিমায়ের সঙ্গে দেখা করে – আমি তোর কাছে আসছি...”।
“তাই হোক”
দুজনেই রণপায়ে চড়ে জঙ্গলের পথে রওনা হল নোনাপুর গ্রামের দিকে।
ক্রমশ...