এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • বিপ্লবের আগুন - পর্ব পনের

    কিশোর ঘোষাল
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৪৩৪ বার পঠিত
  • [প্রাককথাঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ হোক কিংবা প্রাচীন রাজতান্ত্রিক সমাজ – বিদ্রোহ, বিপ্লব সর্বদাই প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। নিরীহ, অনুন্নত এবং প্রান্তিক মানুষরা যুগেযুগে কীভাবে উদ্বুব্ধ হয়েছিলেন এবং হচ্ছেন? তাঁরা কীভাবে এগিয়ে চলেন বিপ্লবের পথে? কীভাবে তাঁরা অস্ত্র সংগ্রহ করেন? কোথা থেকে তাঁরা সংগ্রহ করেছেন সেই বহুমূল্য অস্ত্রসম্ভার? যার শক্তিতে তাঁরা রাষ্ট্রশক্তির চোখে চোখ রাখার বারবার স্পর্ধা করেছেন? কখনও তাঁরা পর্যুদস্ত হয়েছেন, কখনও ক্ষণস্থায়ী সাফল্য পেয়েছেন। আবার কখনও কখনও প্রবল প্রতাপ রাষ্ট্রকে তাঁরা পরাস্ত করে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতেও পুরোন বিদ্রোহ-বিপ্লবের আগুন নেভে না কেন? রাষ্ট্রের পরোক্ষ মদতেই কি এ বিপ্লব চলতে থাকে আবহমান কাল ধরে?]

    ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়


    ১৫




    নোনাপুর গ্রামের সীমানার বাইরেই ঘন একটা ঝোপের আড়ালে মারুলা রয়ে গেল। ভল্লা তার কাছেই রণপাজোড়া রেখে পায়ে হেঁটে গ্রামের ভেতরে ঢুকল। ঘন গাছপালার আড়ালে, বিড়ালের মত নিঃশব্দ পায়ে দৌড়ে চলল গ্রামপ্রধানের বাড়ির পিছনদিকে। জ্যোৎস্না রাত, ঝিঁঝিঁর একটানা শব্দ আর গাছের পাতায় পাতায় হাওয়ার মর্মর-রব ছাড়া কোথাও কোন শব্দ নেই। পাড়ার কুকুরগুলোও আজ রাত্রে চুপচাপ। তারাও হয়তো বোঝে এ গ্রামে আজ শোকের পরিবেশ। সারাদিন ঘরে ঘরে আজ একটাই আলোচনা – হানোর মৃত্যু। সারাদিনের পর এই চাঁদনি রাতও আজ যেন সকলের কাছে অশুভ। কোথাও একটা পেঁচা দুবার ডেকে উঠল গম্ভীর সুরে। তারপরেই হঠাৎ ডেকে উঠল একটা দাঁড় কাক। সে শব্দে অবাক হল গাছের ডালে বসে ঘুমিয়ে থাকা কাকগুলো। পেঁচাটাও যেন ভয় পেয়ে নিঃশব্দে উড়ে গেল দূরের পাহাড়ি ঝোপঝাড়ের দিকে।

    কমলিমা ঘরের দরজা খুলে নিঃশব্দে বেরিয়ে এলেন। ঘরের পিছনে এসে দেখতে পেলেন বড়ো একটা গাছের ছায়ায় ভল্লা দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত পায়ে ভল্লার কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কমলিমা, ভল্লা ইশারা করল চুপ। তারপর কমলিমায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল, একটু দূরে। ছায়াময় বিশাল এক বটগাছের তলায় নিয়ে গিয়ে মোটা একটা শিকড় দেখিয়ে বলল, “এই খানে বস মা, কেমন আছিস বল”? তারপর নিজে বসল কমলিমায়ের পায়ের কাছে।

    “আমার কথা ছাড়, তুই কেমন আছিস বল? এতদিন পর তোর কমলিমাকে মনে পড়ল?”

    মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল ভল্লা, তারপর মুখ তুলে বলল, “ভাল আছি তো বলতে পারবো না, মা। সে কথা বললে মিথ্যে বলা হবে। তোর কাছে যে কদিন ছিলাম, বড়ো নিশ্চিন্তে আর স্বস্তিতে ছিলাম। এখন চলে যাচ্ছে, কোন মতে। নির্বাসনে থাকা একজন অপরাধীকে তো এভাবেই থাকতে হবে, মা”। কমলিমা ভল্লার মাথায় হাত রাখলেন। তার চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে, বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া তাঁর বড় পুত্রকেই যেন অনুভব করলেন। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও ভল্লা বুঝতে পারল, কমলিমায়ের দুচোখ এখন জলে ভরে উঠেছে।

    “প্রধানমশাই ভাল আছেন তো?”

    “হুঁ। ভালোই আছে”।

    “প্রধানমশাই যে আস্থানের আধিকারিককে কিছু কর ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, সেটার কী হল, কিছু জানিস, মা?”

    “দেয়নি। গ্রামের লোক তোকে আশ্রয় দিয়েছে। চিকিৎসা করে তোকে সারিয়ে তুলেছে। এসব শুনে রাজা নাকি বলেছে এই গ্রামের জন্যে কোনরকম দয়া বা অনুগ্রহ দেখানো যাবে না”।
    ভল্লা কিছু বলল না, দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল।

    কমলিমা হঠাৎ ক্ষুব্ধ স্বরে বলে উঠলেন, “সেই জন্যেই তো তোর ওপরে ওদের খুব রাগ”।

    “কাদের, মা?”

    “প্রধান আর ওই বুড়ো কবিরাজদাদা”!

    ভল্লা হেসে ফেলে বলল, “তুই বড্ডো বাড়িয়ে বলিস মা। রাগ কেন করতে যাবেন? হ্যাঁ বিরক্ত হতেই পারেন। একটা মরণাপন্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাষ্ট্রের রোষদৃষ্টিতে পড়া...। একদিকে বিবেক বলছে যা করেছি ঠিক করেছি, আর অন্যদিকে বাস্তববুদ্ধি বলছে, বিবেক দেখিয়ে পোঁদপাকামি করার কী দরকার ছিল? এখন তার ফল ভোগ করো...”।

    কমলিমা অবাক হয়ে গেলেন ভল্লার কথায়, তিনি আলো-আঁধারিতে ভল্লার মুখের দিকে তাকালেন। ভাবলেন ছোঁড়ার আশ্চর্য চিন্তাশক্তি তো! তিনি এভাবে কখনো ভাবতে পারেননি। তিনি ঘরে থাকেন, কাজকর্ম করেন, গ্রামের মধ্যেই তাঁর সীমানা। তাঁর চিন্তা একমুখী। কিন্তু প্রধান বা কবিরাজদাদার তো তা নয় – তাঁদের চাষবাস করতে হয়, বাইরের লোকজনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় রাখতে হয়। এই গ্রামের সকল মানুষের স্বার্থ চিন্তা করে, গ্রামবাসীদের হয়ে রাজাধিকারিকদের সামনে গিয়েও তাঁদের দাঁড়াতে হয়। তাঁদের বিবেক এবং বাস্তব বিবেচনা – দুই কূলই সামলে চলতে হয় বৈকি।

    “চুপ করে কেন, মা? কি ভাবছিস, বল তো? যাগ্‌গে ওসব কথা ছাড়, হানোর বাড়ির কী পরিস্থিতি? শুনলাম হানো নাকি সাপের কামড়ে মারা গেছে?”

    ভল্লার আগের কথায় কমলিমায়ের মনটা একটু নরম হয়েছিল, এখন এই প্রশ্নে তিনি আবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বললেন, “সে কথাই তো বলছি, আজ সন্ধের সময় কবিরাজদাদা এসেছিল, প্রধানের সঙ্গে অনেক কথা বলল। কিন্তু দুজনের কেউই হানোকে নিয়ে একটা কথাও বলল না। অমন একটা জলজ্যান্ত তরতাজা ছেলে চোখের সামনে মরে গেল – দুজনের কারো মনেই যেন হেলদোল নেই”!

    ভল্লা হেসে ফেলল, বলল, “আজ দেখছি খুব রেগে আছিস মা? কী ব্যাপার বল তো? কী বলল কবিরাজবুড়ো?”

    ভল্লার কথাটা কমলিমায়ের বেশ মনঃপূত হল, বললেন, “যা বলেছিস। বুড়ো তো বুড়োই – মনে হয় ভীমরতি ধরেছে। যতসব মনগড়া কথা বলে প্রধানের আর আমার মনে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেল। আমাকে বোঝাতে পারেনি, তবে প্রধানের মাথাটি মনে হয় চিবিয়ে ফেলেছে”।

    ভল্লা একটু জোরে হেসে উঠেই সতর্ক হয়ে গলা নামিয়ে বলল, “বলিস কী মা? কবিরাজবুড়ো ওষুধ না দিয়ে এখন সাপের মতো বিষও ঢালছে নাকি? তা সে বিষ কেমন একটু শুনি”।

    “তুই হাসছিস? কী বলেছে শুনলে তুই চমকে যাবি। বলে কিনা আমাদের গ্রামের কোন ছেলেই নাকি কাল পাশের রাজ্যে রামকথা শুনতে যায়নি? তারা আস্থানে গিয়েছিল ডাকাতি করতে। গতকাল রাত্রে আস্থানে ডাকাতি হয়েছে শুনেছিস তো? কবিরাজদাদা বলল, ডাকাতের দল সেখানকার তিনরক্ষীকে নাকি মেরে ফেলেছে! হরে দরে যা বোঝাতে চাইল, সে সব নাকি আমাদের এই গ্রামের ছেলেদেরই কাজ”।

    ভল্লা খুব সতর্ক দৃষ্টিতে কমলিমায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। এবং অবাক হল কবিরাজবুড়োর আশ্চর্য অনুমান ক্ষমতায়। তবু খুব হাল্কা চালে বলল, “আচ্ছা? ছেলেরা রামকথা শুনতে না গিয়ে, আস্থানে গেছিল ডাকাতি করতে – এ সংবাদটা তোর কবিরাজদাদা কী করে টের পেল বল তো? কবিরাজবুড়ো কী আজকাল জ্যোতিষচর্চাও শুরু করছে নাকি?”

    “কে জানে? বুড়োর মাথায় যত রাজ্যের কুচুটে চিন্তা দিনরাত কিলবিল করছে। পুঁইয়ে সাপের মতো। প্রধানকে বললে, ছোকরাদের অত বড়ো দলকে একসঙ্গে কোনদিন রামকথার আসরে যেতে দেখেছ? সে আমাদের গ্রামেই হোক বা পড়শি গ্রামে? তারা কিনা ঠিক কালকেই দল বেঁধে জঙ্গল পার হয়ে এতটা পথ হেঁটে পাশের রাজ্যে গেল রামকথা শুনতে? আচ্ছা, ছেলে ছোকরাদের মতিগতি কি আমাদের মতো বুড়ো-বুড়ীদের ভাবনা-চিন্তার মতো হবে? তাদের মাথায় কখন কোন বাই চাপে কে বলতে পারে?” ভল্লা নিঃশব্দে শুনতে লাগল কমলিমায়ের কথা। তার দৃষ্টি এখন তীক্ষ্ণ, চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। কবিরাজবুড়ো অত্যন্ত বুদ্ধিমান – সন্দেহ নেই। কিন্তু এত সব বুঝে ফেলে তিনি যে নিজের সমূহ বিপদই ডেকে আনছেন – সেই কথাটা বুড়ো বুঝছেন না কেন?

    কমলিমা কিছুটা উত্তেজিত সুরে আরও বললেন, “কত কি আবোল-তাবোল যে বকে গেল – শুনলে তোরও মাথা গরম হয়ে যেত ভল্লা! বলে কিনা রাজধানীতে মারধোর খেয়ে, তুই যে রাত্রে রওনা হয়েছিলি – আর এখানে এসে তুই যেদিন ভোরে পৌঁছলি – হেঁটে এলে ওই সময়ের মধ্যে পৌঁছনো নাকি কক্‌খনো সম্ভব নয়”।

    ভল্লা মনে মনে চমকে উঠল। কবিরাজবুড়ো যে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে দৌড়ে চলেছেন, এখন তার মনে আর কোন সন্দেহ নেই। তবু চোখেমুখে মুচকি হাসির রেশ ধরে রেখে বলল, “তোর কবিরাজদাদা, শুধু চিকিৎসার কবিরাজ নয় মা, কবিরাজ – মানে কল্পনা দিয়ে কাব্য রচনার কবিরাজও বটে”!

    কমলিমা সে কথায় কান না দিয়ে বললেন, “ও হ্যাঁ আরও বলল, ডাকাতি মানে আমরা জানি ডাকতরা টাকা-পয়সা, শস্য-টস্য, অস্ত্র-শস্ত্র যা পায় সবই লুঠ করে। কিন্তু আস্থান থেকে নাকি শুধু অস্ত্র-শস্ত্রই ডাকাতি হয়েছে? সত্যি? তুই জানিস?”

    নিরীহ গলায় ভল্লা বলল, “আমি কী করে জানব বল তো, মা?”

    কমলিমা কেমন এক ঘোরের মধ্যে বলে চললেন, “এ কেমন ডাকাতি কবিরাজদাদা বুঝতে পারছেন না। আমি একবার ঝেঁজে উঠেছিলাম। বললাম, ছেলেটা গাঁয়ের আলসে আর ঝিমোনো ছেলেদের নিয়ে দল বানিয়ে তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করে তুলছে। মাথা খাটিয়ে নালায় বাঁধ দিয়ে চাষের নতুন জমি বানিয়ে তুলল। সেই ছেলেকে নিয়ে তোমরা এভাবে বদনাম করছ?”

    ভল্লা কিছু বলল না, অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল কমলিমায়ের মুখের দিকে। কমলিমায়ের থেকে যতটুকু জানার সে জেনে গেছে, বুঝে গেছে। এবার তাকে ফিরতে হবে।

    ভল্লা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “তুই এবার ঘরে যা, মা। অনেকক্ষণ বাড়ির বাইরে আছিস। আমিও পালাই। কেউ দেখে ফেললে আরও অনেক কথা উঠবে। তুই এবং প্রধান দুজনেই বিপদে পড়বি”।

    কমলিমা উঠে দাঁড়ালেন, ধরা গলায় বললেন, “তোর জন্যে কত রাত যে জেগে কাটিয়েছি...এতদিনে তোর মায়ের কথা মনে পড়ল? কোথায় আছিস, কী খাচ্ছিস কিছুই তো জানা হল না। কী সব আজেবাজে কথায় সময়টা পার হয়ে গেল। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা, তোর নিজের বাড়ি কোনদিকে রে?”

    ভল্লা খুবই সতর্ক হয়ে উঠল কমলিমায়ের এই প্রশ্নে, বলল, “কেন বল তো? রাজধানী থেকে পূবে”।

    “বুড়োটা তার মানে ঠিকই বলেছে”।

    ভল্লা উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, “কী ঠিক বলেছে, রে মা?”

    একটু আনমনা হয়ে কমলিমা বললেন, “বলল, তোর নির্বাসন দণ্ড যদি হয়ে থাকে, তাহলে রাজ্যের পূর্বসীমান্ত তো কাছে – এতদূরে পশ্চিমদিকে তুই এলি কেন? আমার সামনে আর কিছু বলতে সাহস পায়নি। বুড়োর বাড়ি ফেরার সময় প্রধান তার সঙ্গে গিয়েছিল একটু এগিয়ে দিতে। তাকে নাকি বলেছে – তোর এই নির্বাসন-টির্বাসন একদম মিথ্যা কথা, তুই এসেছিস প্রশাসনেরই কোন কাজে…”।

    ভল্লা এবার রীতিমত বিভ্রান্ত বোধ করতে লাগল। কমলিমা এসব নিয়ে তাকে সরাসরি কোন প্রশ্ন করলে, তার পক্ষে সব কিছু ঢেকেঢুকে, সাজিয়ে-গুছিয়ে মিথ্যে বলা এখনই তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। অতএব সে হাসতে হাসতে কমলিমাকে থামিয়ে দিল, বলল, “তোর ওই বুড়ো কবিরাজদাদা হয় গাঁজা খায় নয়তো আফিং। কবিরাজ তো, ওরা ভালই জানে কোন গাছ-গাছড়ায় নেশা জমে ওঠে – সন্ধের মুখে এসেছিল বললি না, মা? তার আগেই চড়িয়ে এসেছে…” আবার খানিক হাসল ভল্লা, তারপর বলল, “তোর থেকে এমন মজার গল্প আরও শুনব মা, তবে আজ নয়, পরে আরেকদিন। আজ চলি রে, মা, তুইও ঘরে যা, প্রধান টের পেলে খুব রেগে যাবে”।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে কমলিমা উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, “আবার কবে আসবি?”

    ভল্লা হাসল, বলল, “যত শিগ্‌গির পারি আসব, মা। তুই ভাবিস না। এখন যা। আরেকটা কথা আমার সঙ্গে তোর যে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে – একথা কাউকে বলবি না, মা। প্রধানকেও না। আমার দিব্ব্যি দিলাম”।

    “এই মাঝরাতে ওভাবে কেউ দিব্ব্যি দেয়, তাও মায়ের কাছে…হতভাগা, মুখপোড়া…?” বলতে বলতে বিরক্ত মুখে কমলিমা ত্রস্ত পায়ে ঘরের আড়ালে চলে গেলেন। ভল্লা নিঃশব্দ দ্রুততায় দৌড়ে চলল, গ্রামের সীমানায় – যেখানে মারুলা তার জন্যে অপেক্ষা করছে।

    * * *

    মারুলা আর ভল্লা রণপা নিয়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকে একটা নির্দিষ্ট বিশাল গাছে উঠে বসল। বিশাল এই মহানিম গাছের মস্ত মোটা একটা ডালে দুজনে মুখোমুখি বসল, পা ঝুলিয়ে, বেশ আরাম করে। তাদের পায়ের নীচে এবং মাথার ওপর ঘন পাতার ছাউনি। নীচ থেকে কেউ ওপরে তাকালেও সহজে তাদের কেউ খুঁজে পাবে না। তার ওপর মধ্যরাতের একটানা হাওয়ায় পাতায় পাতায় যে রকম ঝরঝর শব্দ হচ্ছে, তাতে গাছের তলা থেকে তাদের কোন কথাই, নীচের থেকে শুনতে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। গাছের ডালে রণপা জোড়া ঝুলিয়ে রেখে মারুলা বলল, “কী বলল, তোর কমলিমা?”

    ভল্লা খুব চিন্তিত ও বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল, “খুবই খারাপ বার্তা রে মারু। যে কাজটা করতে আমার মন থেকে একটুও সায় নেই...সে কাজটাই এখন খুব শিগ্‌গির আমাকে করতে হবে অথবা কাউকে দিয়ে করাতে হবে”।

    অবাক হয়ে মারুলা বলল, “কী কাজ? কী করতে হবে তোকে?”

    ভল্লা উপরের দিকে তাকিয়ে ঝিলিমিলি পাতার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্নায় আলোকিত আকাশের দিকে চোখ রেখে বলল, “যে কবিরাজের কথা তোকে তখন বলছিলাম না? সেই কবিরাজ। হতভাগা বুড়ো বড়ো বেশি বুঝে ফেলেছে। বুঝেছিস তো বুঝেছিস, সে বেশ কথা, নিজের মনে চুপ করে থাকলে কোন ক্ষতি ছিল না। কিন্তু তা না, বুড়ো সেসব কথা লোককে বলেও বেড়াচ্ছে। গ্রামপ্রধান জুজাক জানে, জানে কমলিমা...হয়তো আরও অনেকে”।

    মারুলা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কী বুঝে ফেলেছে?”

    ভল্লা বলল, “আমি এ গাঁয়ে আসার পরেই, জানিস নিশ্চয়ই, ওই বুড়োই আমার চিকিৎসা করেছিল। শুনেছি, আমি যখন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম – সে সময়েই নাকি বুড়ো বলেছিল, এ ছোকরা, অর্থাৎ আমি, নাকি সাধারণ লোক নই। বলেছিল, বহুদূর থেকে আসা, ভয়ংকর অসুস্থ এই ছোকরা আমাদের গ্রামে যে আচমকা এসে পড়েছে – এমনটা হয়তো নয়। হয়তো এখানে আসার পিছনে বড়ো কোন পরিকল্পনা আছে”!

    “বলিস কী? এ কথা শষ্পককে বলেছিলি?”

    “না, বলিনি। আসলে সে সময় বুড়োর কথায় আমি কেন, গাঁয়ের কেউই তেমন কান দেয়নি। কিন্তু আজ জানতে পারলাম, বুড়ো অসাধারণ বুদ্ধি ধরে। জুজাককে সে বলেছে, গত রাত্রে নোনাপুর গাঁয়ের কেউই নাকি রামকথা শুনতে যায়নি। তার মানে, এই গাঁয়ের ছোকরারাই যে আস্থানে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত – সে ইঙ্গিতও বুড়ো দিয়ে গেছে”।

    “কী বলছিস? বুড়ো তো তার মানে সবটাই বুঝে গেছে”।

    “হুঁ। সবটাই। আমার সঙ্গে রতিকান্তর রাজধানীতে ঘটা সেই ঘটনার দিন থেকে মাত্র তিনরাত-তিনদিনে, কীভাবে আমি নোনাপুর পৌঁছলাম, বুড়োর মনে সেটাও সন্দেহ জাগিয়েছে। কোন সুস্থ সবল মানুষের পক্ষেও ওই সময়ে এতটা পথ পায়ে হেঁটে আসা সম্ভব নয়। অতএব, আমি অধিকাংশ পথই যে ঘোড়ায় চড়ে বা রণপায়ে এসেছি...সেটা এই বুড়ো অনুমান করে নিয়েছে। নির্বাসনে যেতে সুবিধে হবে বলে, কোন প্রশাসন একজন অপরাধীকে ঘোড়া দিয়ে সাহায্য করে বল তো?”

    “অর্থাৎ, তুই হয় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিস। অথবা তোকে রাষ্ট্রই পাঠিয়েছে অত্যন্ত গোপন কোন উদ্দেশে”।

    “ঠিক তাই। বুড়োর মনে হচ্ছে দ্বিতীয়টা”।

    “সর্বনাশ, এসব কথা পাঁচকান হলে, আমরা সকলেই ফেঁসে যাবো রে...। তা, তুই এখন কী করতে চাইছিস?”

    ভল্লা ম্লান হেসে বলল, “আগেই বললাম না, যে কাজটা করতে আমি চাইছি না - সেটাই খুব তাড়াতাড়ি করাতে হবে। কবিরাজবুড়োকে সরাতে হবে”। ভল্লা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “নিজের গ্রাম, প্রতিবেশী গ্রামের মানুষজন এমনকি এই রাজ্যের সকলের ভালোর জন্যে সারাজীবন চিন্তা করে গেছে যে বুড়ো। অত্যন্ত বিদ্বান, বুদ্ধিমান কিন্তু বড্ডো সরল এবং একরোখা সেই বুড়োটা মরবার সময়েও বুঝতে পারবে না, ঠিক কী অপরাধে ওর মৃত্যু হল…”। ভল্লা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল অনেকক্ষণ।

    মারুলা ভল্লার কাঁধে হাত রেখে বলল, “ও ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দে ভল্লা। বুড়োর আয়ু ফুরিয়ে গিয়েছে, হয়তো আগামী দিনটাই তার শেষ...”।

    নিজের কাঁধে রাখা মারুলার হাতটা ধরে ভল্লা বলল, “দেখিস আমার নাম যেন কোনমতেই সামনে না আসে”

    “নিশ্চিন্ত থাক, ভল্লা। তোর নাম সামনে আসবে কেন?”

    “প্রশাসনের হাতে বুড়োর মৃত্যু হলে - আমার কাজটা অবশ্য এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে”।

    মারুলা ভল্লার কাঁধে চাপড় মেরে বলল, “তোর মতো তিলে খচ্চর আমি আর দুটি দেখিনি ভল্লা। একদিকে তুই বলছিস, বুড়োকে তুই বেজায় শ্রদ্ধা করিস। অন্যদিকে তুই তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে দিলি। আবার আমাদের হাতে বুড়ো মরলে, গাঁয়ের ছেলেদের মনে যে ক্রোধ জমবে – সেটাকে ভাঙিয়ে তুই বিদ্রোহের আগুনটা আরও উস্কে নিবি। এই না হলে, তুই শালা ভল্লা?”

    ভল্লা কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে বলল, “হ্যাঁ, রাজনীতি ব্যাপারটা আদতে খচ্চরদেরই সৃষ্টি। ভালো আর মন্দ, ঔদার্য আর তঞ্চকতা, সহমর্মীতা আর নিষ্ঠুরতাকে মনের মধ্যে পাশাপাশি বসিয়ে রাজনীতির চর্চা করতে হয়। কবিরাজবুড়োর জন্যে আমি বাইরে শুধু লোক-দেখানে কাঁদব - তা নয়, মনে মনে সত্যিই কষ্ট পাবো। তাঁর বিচক্ষণতার জন্যে রাষ্ট্রের অভিনব এই পরিকল্পনাটাই হয়তো ভেস্তে যাবে। অতএব মরতে তাঁকে হবেই। কিন্তু সে মৃত্যুতে বোধহয় আমিই সব থেকে বেশি আঘাত পাবো। তবে মনে মনে একথা চিন্তা করে সান্ত্বনা পাব যে, উনি নিজের জীবন দিয়ে আমার কাজটাকেই অনেক সহজ করে দিয়ে গেলেন। জীবনে বহুবার দেখেছি, প্রত্যেক অশুভ কাজের মধ্যেও মঙ্গল লুকিয়ে থাকে, বুঝেছিস মারুলা?” কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে, ভল্লা নিজের আবেগটা সামলে নিল, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “যাগ্‌গে এবার ওদিকের সংবাদ বল? শষ্পকের নির্দেশ কী?”

    মারুলা বলল, “আস্থানের ডাকাতির সংবাদ শষ্পক রাজধানীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেক তেলমশলা মাখিয়ে বাড়িয়ে-চাড়িয়ে। কিন্তু ডাকাতির কারণে উনি এখনই কোন গ্রামের ওপরে কোন পদক্ষেপ করতে চাইছেন না। বলছেন যে তাতে তোর চেলারা ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যাবে”।

    ভল্লা মাথা নাড়ল, “না, না আমার মনে হয় এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আস্থানের রক্ষীদল গ্রামে এসে আমাকে পাগলের মতো খুঁজুক। সরাসরি ছেলেদের নয় – বয়স্কমানুষগুলোকে ভয় দেখাক, অপমান করুক। এক কথায় বেশ গভীর একটা সন্ত্রাসের আবহ পাকিয়ে তুলুক। বাবা-জ্যাঠার অপমান হলে গ্রামের ছেলেগুলো আরও তেতে উঠবে। শুধু এই গ্রামেই নয়, আশেপাশের গ্রামগুলোতেও। এর মধ্যেই তো কবিরাজের মৃত্যুটা হতে হবে। কীভাবে সেটা তোরাই ঠিক করে নিস। আর গ্রামপ্রধান জুজাকেরও যেন ভালোরকম অপমান হয়। তবে না খেলা জমবে”।

    মারুলা অবাক হয়ে ভল্লার কথা শুনছিল, ভল্লার কথা শেষ হলে বলল, “ঠিক আছে তাই বলবো। আর একটা কথা, শষ্পক বলেছেন চৈত্র মাসের পূর্ণিমাতে তিনি এদিকের আস্থান তুলে উত্তরের দিকে রওনা হবেন। তোর কথা মতো জায়গাতেই অস্থায়ী শিবির ফেলে পক্ষকাল বিশ্রাম নেবেন”।

    “চৈত্রের পূর্ণিমা? গতকাল মাঘের পূর্ণিমা গেল। তার মানে মোটামুটি মাস দেড়েক। ঠিক আছে, কতদূর কী করা যায়, দেখি! আজ বিকেলেই পাশের রাজ্যের কিছু ছোকরা এসেছিল। তারাও তাদের রাজার বিরুদ্ধে লড়তে চায় এবং প্রচুর অস্ত্র-শস্ত্র কিনতে চায়। শষ্পককে জিজ্ঞাসা করিস, কোন অস্ত্রের কত মূল্য ধরা হবে, সেটা যেন তিনি নির্দেশ করে দেন। অথবা যে বণিক এই অস্ত্র-শস্ত্র বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছে সে যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেয়, তাহলে বাকিটা আমি বুঝে নেব”।

    “আমার মনে হয় প্রতিবেশী রাজ্যের বিদ্রোহীদের অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রির নির্দেশ রাজধানী কখনোই দেবে না। প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতার সম্পর্ক। তারা যদি জেনে যায়, তাদের রাজ্যের বিদ্রোহীদের আমরা অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছি, তাতে দু রাজ্যের সম্পর্ক নষ্ট হবে। নষ্ট হবে বাণিজ্যিক সম্পর্কও”।

    ভল্লা একটু বিরক্ত হয়েই বলল, “না বুঝেই পোঁদপাকামি করিস না তো, মারুলা। আমাদের প্রশাসন ওদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিচ্ছে নাকি? দিচ্ছি তো আমি! আমি কে? আমি এ রাজ্যের একজন বিদ্রোহী রাজরক্ষী। আমার অপরাধের জন্যে রাষ্ট্র আমাকে অনেক দিন আগেই নির্বাসন দণ্ড দিয়েছে। আমি রয়েছি আমার রাজ্য-সীমানার বাইরে। আমি যদি কাউকে অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রি করি – রাষ্ট্রের দায় কোথায়?”

    “তা হয়তো ঠিক। কিন্তু তুই অস্ত্র পাচ্ছিস কোথা থেকে? তোর তো আর নিজস্ব অস্ত্রের কারখানা নেই”!

    মারুলার সরলতায় ভল্লা এবার হেসে ফেলল, বলল, “আমাদের রাষ্ট্রীয় অস্ত্রাগার থেকে পুরোন অস্ত্র-শস্ত্র বাতিল করে, বিশেষ কয়েকজন বণিককে বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই বণিক সেই অস্ত্র কিনে কী করবে - মাটির তলায় পুঁতে দেবে। নাকি নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে। নাকি খেলনার মতো ভিন্ন রাজ্যের ছোকরাদের হাতে বেচে দেবে – সে তো বণিকদের মাথাব্যথা। তাতে রাষ্ট্রের কী করার আছে? আমি, জনৈক নির্বাসিত অপরাধী হলাম, একজন মাধ্যম – যার কাজ ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেওয়া। সম্পূর্ণ ব্যাপারটার মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রের ভূমিকা কোথায়?”

    মারুলা তাও ইতস্ততঃ করে বলল, “কী জানি আমার তাও মাথায় ঢুকছে না, ব্যাপারটা এতই সহজ? রাষ্ট্র এত সহজে দায় এড়াতে পারবে? আমাদের মন্ত্রী আর প্রশাসনিক কর্তারাই শুধু ধূর্ত – আর ও রাজ্যের প্রশাসন একেবারেই বোকাসোকা-ভোঁদাই এমন তো হতে পারে না।”

    “ছাড় না। আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খোঁজে আমাদের কী প্রয়োজন? রাষ্ট্র কী করবে সেটা রাষ্ট্রকেই বুঝতে দে। আমাদের দায়িত্ব প্রশাসনের নির্দেশ মতো কাজ করা। ব্যস্‌। রাত্রি শেষ হতে আর হয়তো দণ্ড তিনেক বাকি আছে। তুই কেটে পড়। আমার সঙ্গে তোকে কেউ দেখে ফেললে, ভবিষ্যতে অসুবিধেয় পড়তে হবে। শষ্পককে সব কথা জানাবি। বলবি, তাঁর পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আমি রইলাম”।

    মারুলা গাছে থেকে নেমে আসার উদ্যোগ করতেই, ভল্লা বলল, “মারুলা, কবিরাজকে মেরে না ফেলে, আমাদের উচিৎ তাঁকে একটা সুযোগ দেওয়া, তাই না রে?”

    মারুলা কিছু বলল না, ভল্লার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল চুপ করে। ভল্লা বলল, “না মানে বলছিলাম, বুড়োকে কিছুটা মারধোর করে, আস্থানের বন্দীশালায় যদি ফেলে রাখা হয়। বিনা বিচারে। এখানে বিচার করবেই বা কে? বিচার তো হবে সেই রাজধানীতে। অতএব বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন বন্দী। বুড়ো জব্দ হবে, কিন্তু প্রাণে তো বেঁচে থাকবে। কী বলিস?”

    মারুলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভল্লাকে বলল, “ঠিক আছে, তাহলে শষ্পককে গিয়ে আমি তাই বলি?”

    “কাজের সূত্রে আমি বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছি, মারুলা। তারা কোনদিন আমার মনে তেমন কোন দাগ কাটেনি। কিন্তু আমাদের হাতে ইনি মারা গেলে, আমার হাত থেকে ওঁর রক্তের দাগ কোনদিন মুছে উঠতে পারব না। হ্যাঁ শষ্পককে গিয়ে তাই বল, আপাততঃ বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাসই হোক ওঁনার ভবিষ্যৎ”।

    গাছ থেকে নেমে মারুলা রওনা হল আস্থানের দিকে। মারুলা নেমে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর ভল্লা রণপা জোড়া কাঁধে নিয়ে মাটিতে নামল। ধীরেসুস্থে হাঁটতে লাগল তার বাসার দিকে। সে এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দের দ্বিধাদ্বন্দ্বে তার মন এখন বিক্ষিপ্ত।

    নির্দিষ্ট ঝোপের আড়ালে দুজোড়া রণপা আগে লুকিয়ে রেখে, নিজের বাসার সামনে এসে চমকে উঠল ভল্লা। রামালি! রামালি শুয়ে আছে, তার ঘরের সামনে মাটিতে। অঘোরে ঘুমোচ্ছে ছেলেটা।




    ক্রমশ...




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৪৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2409:4061:313:2ca4::1ce0:***:*** | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১২:০৪535417
  • ভালো লেগেছে, ভালো লেগেছে ।
  • | ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৪২535423
  • পড়ছি। 
    কিন্তু এই পর্বে আবার ভাষা নিয়ে অসুবিধে হচ্ছে। এর আনুমানিক সময়কাল কী? সেটা জানলে  বোঝা যাবে ভাষাটা সময়ানুগ কিনা। 
  • Kishore Ghosal | ২৯ জুলাই ২০২৪ ১২:২৩535506
  • @ অসিতবরণ বিশ্বাস - অনেক ধন্যবাদ। 
     
    @ দ - আনুমানিক সময় কাল প্রাচীন মধ্যযুগে কোন একটি ভারতীয়  রাজ্য - ধরে নিয়েছি সেসময় সমাজে তিনটি ভাষা প্রচলিত ছিল। রাজভাষা ছিল সংস্কৃত এবং প্রাকৃত - আর সাধারণের মধ্যে প্রাকৃত এবং দেশী। প্রাকৃত ভাষায় অজ্জ (<অদ্য) পিয় (<প্রিয়) আজ্জ (<আর্য) ধম্ম (<ধর্ম) ইত্যাদি বর্জন করে - আধুনিক বাংলা ভাষায় প্রচলিত তৎসম শব্দ ব্যবহার করেছি। সত্যি বলতে প্রাকৃত ভাষায় গল্প লেখার মতো বিদ্যে আমার নেই - তাছাড়া আজকাল শিক্ষিত বঙ্গ সমাজে বাংলা পড়ারই তেমন চল নেই - প্রাকৃত ভাষায় গল্প লিখলে - কী হবে - সে আর বলে কাজ নেই। 
    এছাড়া ব্যবহার করেছি দেশী শব্দসমূহ - যেগুলি আধুনিক বাংলা ভাষা থেকে আজ অবলুপ্ত হয়ে ইংরিজি হয়ে গেছে - যেমন পটি করা,পি করা, ফার্ট করা ইত্যাদি  যেমন "কিক অন হিজ অ্যাস" - দারুণ সভ্য কথা - কিন্তু " ব্যাটার 'ইয়েতে' লাথি মার"-  এত অশ্রাব্য শব্দ আর দ্বিতীয় হয় না... ।   হ্যাঁ আর চেষ্টা করেছি - আরবি,ফারসি সহ সকল বিদেশী শব্দও যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে। 
     
    অনেক ধন্যবাদ শুরুর থেকে সঙ্গে থাকার জন্যে।     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন