
১
হিন্দু পরিবারে জন্মেছি। ছোটবেলা থেকেই মুসলিম বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা খুব কম। এখনও, বাইরে বাইরে যা-ই বলি না কেন, ঈদ বা মহরম 'ওদের' উৎসব হয়েই রয়ে গিয়েছে। কাজকর্মের সূত্রে প্রতি বছরই কয়েকটা ইফতার পার্টিতে যেতে হয়। ভাললাগে না। আড়ম্বরে চোখ ঝলসে যায়। বরং, অনেক বেশি কাছের মনে হয় রমজানের বিকেলগুলোকে। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট থেকে লালবাজারের রাস্তায়, ওদিকে নাখোদা মসজিদের আশেপাশের অলিগলিতে, স্টেটসম্যান হাউজ থেকে চাঁদনির দিকে হাঁটার সময়, কলুটোলায়, ওয়েলিংটন থেকে মৌলানা আজাদা কলেজ পেরিয়ে পার্ক সার্কাসের দিকে যেতে যেতে রোজা শেষ হওয়া দিনটাকে ঈষৎ দূর থেকে দেখতে ভাললাগে। আমার কাছে ঈদ বলতে এইটুকুই। এর বাইরে ঈদ বলতে বুঝি, কয়েকজনের বাড়িতে বচ্ছরকার নেমন্তন্ন। বিরিয়ানি, সেমাই, হালিম। ব্যস। আর রইল জাকারিয়া স্ট্রিট। আমাদের সেকুলারিজমের প্র্যাকটিক্যাল খাতা।
ঈদ নিয়ে তাই আমার বলার কিছু নেই। করোনা, লকডাউন আর সাইক্লোনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সময়ে তেমন করে ঈদ এলই বা আর কই! আমি বরং বলি কয়েকজন খুচরো মানুষের গল্প, যাঁদের আজ, এই ঈদের সন্ধেয় আচমকা মন পড়ছে, অকারণেই। একজন বর্ণহিন্দুর চোখ দূর থেকে দেখেছে যে 'অপর'দের, তাদেরই কয়েকজন।
২
মেডিক্যাল কলেজকে ডান হাতে রেখে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ দিয়ে একটু এগিয়ে বাঁ দিকে বেঁকে ঢুকে পড়তে হবে কলুটোলা স্ট্রিটে। সারবাঁধা পুরনো বাড়ি আর কড়িবড়গার আপিস-ঘর দেখতে দেখতে খানিকটা এগোলেই আসবে একটা জমজমাট মোড়। সেখানে হলদেটে আলো মেখে ছোট ছোট ভ্যানের উপর হাঁড়িভর্তি হালিম নিয়ে বসে থাকা সৌম্যদর্শন বৃদ্ধদের জিজ্ঞাসা করলেই আপনি অ্যাডামস কাবাব শপের খোঁজ পাবেন। ফিয়ার্স লেন, চুনা গলি। রংচটা লুঙ্গি আর ফতুয়া গায়ে সেই দোকানের একচিলতে ছোট্ট ঘরে অপেক্ষা করছেন বছর ষাটেকের মহম্মদ সালাউদ্দিন। তাঁর ঠাকুর্দার তৈরি করা দোকান। বসার জায়গা নেই। থার্মোকলের প্লেটে কাবাব নিয়ে দাঁড়িয়ে খেতে হবে। দু'পা হাঁটলেই পাবেন হাজি আলাউদ্দিনের মিষ্টির দোকান। তার বয়স শতক পেরিয়েছে। সেখানে মোট আট রকমের হালুয়া পাওয়া যায়। কাবাবের স্বাদ নিয়ে কথা বলার মানে হয় না, অত ভাষাজ্ঞান নেই আমার।
কাবাবশিল্পী সালাউদ্দিনের সামনে কয়লার আগুন জ্বলতে থাকে একটানা। গোরুর মাংসের সুতা কাবাবের দাম পঁচিশ টাকা। বটি কাবাব ত্রিশ টাকা। বটি কাবাব বানাতে দশ মিনিট সময় লাগে। সালাউদ্দিন জাস্ট পাত্তা দেবেন না আপনাকে। সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন না, বা পেলেও ছাড়া ছাড়া। লম্বা লোহার শিক থেকে মাংস যাতে পড়ে না যায়, সেই জন্যই সুতোর ব্যবহার। একটানা দেখলে ঠাকুমা-দিদিমাদের সোয়েটার বোনা দুপুরের কথা মনে পড়ে।

সালাউদ্দিন, কাবাব বানান।
----
কাবাব তৈরি হতে হতে আপনার সঙ্গে পরিচয় হবে জাকারিয়া স্ট্রিটের ন্যাপথলিন ব্যবসায়ী ইসমাইল বা কলুটোলার বাড়ির দালাল শোয়েবের। আপনি শুনবেন, কীভাবে পুলিশ টাকা তোলে, ব্যবসার হাল কেমন, বৃষ্টিতে জল জমে কি না- এই সব। নম্বর দেওয়ানেওয়া হবে। নিছক আড্ডা মারতেই পরদিন বিকেলে আপনি আবার হাজির হবেন ফিয়ার্স লেনে। বন্ধুত্ব বাড়বে। ক্রমশ আড্ডার বাঁকবদল হবে। তবে সে সব অন্য গল্প।
৩
কেমন আছেন সালাউদ্দিন? কেমন কাটছে ঈদ? জানি না। গতকাল থেকে বহুবার ফোন করেও লাইন পাইনি। অবশ্য খবর নেওয়ার আছেই বা কি! খিদের খবর, রোজগার বন্ধ হওয়ার খবর, রিলিফের লাইনে হাত পাতার খবরগুলো এই ক'দিনে বড্ড বেশি চেনা হয়ে গেছে। ফিয়ার্স লেনেই সেমাই বিক্রি করে আমির। আমারই বয়সী। একটা সময় পর্যন্ত এলাকায় কোনও গোলমাল হলে 'খবর' দিত নিয়ম করে। লকডাউনের বয়স যখন মাসখানেক, আমির ফোন করেছিল। একটা পয়সা নেই ঘরে। রোজগার বন্ধ। বলছিল, "আমরা সারাটা বছর বসে থাকি এই মাসখানেকের জন্য। লোক জাকারিয়ায় আসে, ফিয়ার্স লেনে আসে। খাওয়াদাওয়া করে, ছবি তোলে। এই এক মাসের দম নিয়ে বছরভর সংসারটা টেনে নিয়ে যাই..."। আমিরকে আর ফোন করিনি। লকডাউন ক্রমাগত বেড়েছে। হয়তো আরও বাড়বে। কী বলব ফোন করে?
মনে পড়ছে আসিফ আখতারের কথা। নিউমার্কেট এলাকায় কাবাব বিক্রি করত। সেই সূত্রেই পরিচয়। খিদিরপুরের ছেলে। বিয়ে করেছে মহম্মদ আলি পার্কের কাছে৷ এই মাসখানেক জাকারিয়ায় রাস্তায় স্টল দিত কাবাবের। বছর তিনেক আগে যখন আমাদের বন্ধুত্বের শুরু, তখন পাঞ্জাবি পরতাম নিয়মিত। ফ্যাব ইন্ডিয়া অথবা খাদি। আসিফ বলেছিল, "এসব ফালতু ডিজাইন। আমি তোমায় বেস্ট পাঞ্জাবি কিনে দিচ্ছি।" আমরা গেছিলাম নাখোদার নীচে। আমার পছন্দ হয়নি। আসিফ কেমন আছে? কেমন কাটছে ঈদ? ভাল নেই। একদম ভাল নেই। রোজগার বন্ধ। ওর বউ বাঙালি। সপ্তাহখানেক আগে বলছিল, আসিফ সবজির ভ্যান নিয়ে বেরচ্ছে। যা হয়... আসিফ প্রতিবছর ঈদে যেতে বলে। যাওয়া হয় না। ঈদে কোনও না কোনও বন্ধুর বাড়ি যাওয়া থাকে। মুসলিম নামের বন্ধু। খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা, সুমন, কোহেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত। আসিফের বাড়ি যাওয়া হয়নি একবারও। এবছর অবশ্য যেতে বলেওনি।
৪
জামাল মোমিনের কথা মনে পড়ছে। মনে আছে জামাল মোমিনকে? জামাল মোমিন। একজন পরিযায়ী শ্রমিক। মালদহে বাড়ি। বাঙালি মুসলমান। জামাল মোমিন একবার ট্রেনে আসার সময় একটা ক্যুইজ খেলতে বাধ্য হয়েছিল। কয়েকজন লোক ওকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম, গাইতে বলছিল জাতীয় সঙ্গীত। জামাল পারেনি। ছড়িয়েছিল। ওই লোকগুলো তখন জামালকে পরপর চড় মেরেছিল৷ অনেকগুলো চড়। আর খিস্তি দিয়েছিল। জামাল চুপচাপ মার খেয়েছিল। এই না পারা এবং শাস্তিবিধানের পুরো এপিসোডটা মোবাইলে রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই আমি জামাল মোমিনের কথা জানতে পারি। আমি জামালকে ফোন করি। জামালের পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। না, কোনও মানবিক জায়গা থেকে ফোন করিনি। খবর লিখব বলে ফোন করেছিলাম। জামাল আমায় বলে, ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। ওর আর ভুল হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম নরেন্দ্র মোদী। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও মুখস্ত করে নেবে। ঈদ কেমন কাটছে, জামাল মোমিন? জাতীয় সঙ্গীত মুখস্ত হয়েছে? অনেকদিন তো হল হে জামাল, গাও দেখি- '... মঙ্গলদায়ক জয় হে..'। আজ একবার মনে হল, জামাল মোমিনকে ফোন করি। জামাল মোমিন। একজন পরিযায়ী শ্রমিক। মনে হল জিজ্ঞেস করি, জামাল, তুমি কি হাঁটছ? তোমার মতো আরও অনেকে তো হাঁটছে। তুমি? হাঁটছ?
জামাল মোমিনকে ফোন করিনি। আমি সরি বলতে পারব না। জামাল এই লেখাটা পড়বে না। তাই লিখতে পারি, জামাল তোমায় যারা চড়াচ্ছিল, তাদের মধ্যে আমার হাতও ছিল। আমার বাবার, মায়ের, কাকুর, জেঠুর হাতও ছিল। জামাল, ঈদের শুভেচ্ছা।জামাল, ক্ষমা করে দাও। জামাল, মনে রাখো, মুখস্ত করো, আমার দেশের নাম ভারত। প্রধানমন্ত্রীর নাম নরেন্দ্রমোদী। ঈদের শুভেচ্ছ, জামাল মোমিন। তুমি আমায় একটা পেজ ওয়ান বাইলাইন দিয়েছিল।
৫
এই লেখাটা সৎ। দেখুন, আমি একবারও জামালকে 'আপনি' করে লিখিনি। বড় হয়ে যাচ্ছে৷ এবার শেষ করি।
৬
আজ, এই ঈদের সন্ধেবেলা আমার খিদিরপুরের বেশ্যাপাড়ার কথা মনে পড়ছে৷ জাহাঙ্গীর, আয়েশা, সালাউদ্দীনের কথা মনে পড়ছে। এই গল্পটা ভাল। সম্প্রীতির। জামালের গল্পটার মতো নয়।
খিদিরপুর মুন্সীগঞ্জ রেড লাইট এরিয়া হিসাবেই পরিচিত। বছর দু'য়েক আগে ঠিক পুজোর আগে আগে যখন গিয়েছিলাম, তখন সেখানকার ফাইভ স্টার ক্লাবের দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক ছিলেন শেখ জাহাঙ্গীর। এখন আর বেঁচে নেই। দেখেছিলাম, জাহাঙ্গীর সাহেব দেবীপক্ষের সূচনা থেকে নিরামিষ খাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করতে জানালেন, প্রতিবছরের মতো এবারও পুরোহিতের সঙ্গে দুর্গাপ্রতিমার সামনে বসতে হবে তাঁকে! দুপুরবেলা ঘুম থেকে উঠে এসে আলসে গলায় জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘‘সারা বছর সব রকম খাবার খাই তো, তাই এই ক’দিন একটু শুদ্ধ থাকছি। আগে আমার মামা সাহিদ আলি পুরোহিতের সঙ্গে বসতেন। এখন আমি বসি। বুঝতেই পারছেন, বড় দায়িত্ব।’’
ওই পাড়াতেই দেখা হয়ে গিয়েছিল কোহিনূর বেগম, আয়েশা বিবি, সাবিনা বেগমের সঙ্গে। যৌনকর্মী সকলেই। জাঙ্গীরের বন্ধু বিকাশ রায়ের স্ত্রী পূজার সঙ্গে সিঁদুর খেলবেন তাঁরা। প্রসাদের ফল কাটা থেকে শুরু করে বরণ— অন্য বছরগুলির মতো এ বারও সব কিছুই করবেন একসঙ্গে। ঠিক যেমন জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন, আল আমিনদের সঙ্গে প্রতি বছর নিয়ম করে ঈদের সময় রোজা রাখেন বিকাশ।
পুজো কমিটির সহ-সম্পাদক মহম্মদ সালাউদ্দিন লেবারের কাজ করেন। অসম্ভব ঝকঝকে আর স্মার্ট। হাসিখুশি। সালাউদ্দিন বলছিলেন, ‘‘এই যে প্রতিমা দেখছেন, এর ঠিক সামনেই আমরা মহরমের দিন তাজিয়া সাজাই। লাঠিখেলা হয়, ঢোল বাজাই, মিছিল বেরোয়। এই বছর দুর্গাপুজো আর মহরম একসঙ্গে হওয়ায় অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমাদের কিন্তু সুবিধাই হয়েছে।’’ কেন? হাসতে হাসতে সালাউদ্দিন বুঝিয়ে দেন, ‘‘আমাদের এটা তো গরীবপাড়া, লোকের হাতে টাকাপয়সা তেমন থাকে না। উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা ওঠে কম। এবার সবমিলিয়ে দেড় লক্ষ টাকা উঠেছে। ওই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে পুজো আর মহরম পালন করছি। একসঙ্গে হওয়ায় খরচ কমেছে।’’
পুজোটা ঠিক কতদিনের পুরনো, নির্দিষ্টভাবে বলতে পারলেন না প্রায় কেউই। জাহাঙ্গীর জানিয়েছিলেন, অন্তত আশি বছর তো হবেই! তাঁর ঠাকুরদার আমল থেকে শুরু হয়েছে। এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় প্রথম থেকেই প্রধান উদ্যোক্তা তাঁরাই। পাশাপাশি হিন্দুরাও আছেন।
মুসলিম হয়ে এ ভাবে আচার-অনুষ্ঠান মেনে পুজো করেন! সমস্যা হয় না? জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘‘মাঝেমাঝে বাইরে থেকে সমস্যা তৈরির চেষ্টা যে হয়নি, তা নয়। তবে আমরা পাত্তা দিইনি কখনও। এই এলাকায় ও সব কোনওদিন ঢুকতে পারবে না।’’ এরপরই তাঁর সংযোজন ছিল, ‘‘দাদা, আপনারা বিষয়টাকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে দেখছেন, আমরা তা দেখি না। পুজো, মহরম, ঈদ— সবগুলোই তো উৎসব। কোনওটা আনন্দের, কোনওটা শোকের। আমরা গরীব মানুষ, উৎসবে একসঙ্গেই থাকি।’’
বিকাশ রায় পুজো এবং মহরমের কোষাধ্যক্ষ। তাঁর কাছে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলে বলেছিলেন, ‘‘আমি শুনেছি, এতে শরীর সুস্থ থাকে। তাছাড়া বন্ধুরা সবাই রাখে, তাই আমিও রাখি। ভাললাগে। ভাসানে নাচতাম, মহরমের দিন আগে লাঠি খেলতাম, এখন বয়স বেড়েছে তো, তাই শুধু ঢোল বাজাই।’’

জাহাঙ্গীর। খিদিরপুরের। এটা সুমন সেনগুপ্তের তোলা ছবি।
----
জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। বিকাশ, আসিফ, আল আমিন, নূরজাহানরা গরীব মানুষ। কেউ সিপিএম করেন, কেউ তৃণমূল। মহরমের দিন রাস্তার উপরে একসঙ্গে পাত পড়ে সবার। শরবত আর ভেজ বিরিয়ানি তৈরি হয়। উৎসবের সময় যৌনপল্লীতে বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসেন। মাংসজাতীয় কিছু রান্না হলে যদি তাঁদের খেতে সমস্যা হয়, তাই ভেজ বিরিয়ানির আয়োজন। দেখেছিলাম, একচিলতে ক্লাবঘরে দুর্গা মন্ডপ সাজানোর সরঞ্জামের পাশেই রয়েছে তাজিয়া সাজানোর জিনিসপত্র।
দাঙ্গার কথা শুনেছেন নিশ্চয়? পারবেন এভাবে একসঙ্গে থাকতে? জানতে চাওয়ায় কিছুটা যেন বিরক্তই হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। বলেছিলেন, ‘‘আপনাকে বলছি তো বারবার, এমনটাই থাকব আমরা। এটা গরীবপাড়া। আমাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি বন্ধুত্ব। আপনি হিন্দু-মুসলমান করছেন কেন! এই বিকাশ দাঁড়িয়ে আছে, ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার কিছু হলে ও রক্ত দেবে না! ওর কিছু হলে সালাউদ্দিন আসবে না! এমনটা হয় না কি কখনও! আমরা সব একসঙ্গেই করব। এই মহল্লায় বিভেদ ঢুকবে না, সোজা কথা!’’
কেমন কাটছে ঈদ, সালাউদ্দিন? কেমন কাটছে, বিকাশ, আসিফ, নূরজাহান? বিকাশের বাড়িতে আজ সিমাই পৌঁছে দিয়ে গেছেন আসিফ। বিকাশ চিকেন রেঁধেছেন নিজে হাতে। অনেকদিন পর। পয়সা নেই। মাংস কেনাই দায়। চারটুকরো চিকেন নিয়ে যাবেন আসিফের বাড়ি। নূরজাহানের রোজগার বন্ধ অনেকদিন। লজ্জা লজ্জা গলায় বললেন, "কাউকে কিছু দিতে পারিনি ভাই, ভাল সময় এলে ঠিক দেব।"
৭
ভাল সময় কবে আসবে, দিদি?
- আসবে। আল্লা যখন চাইবেন, আসবে।
৮
শিখেছিলাম, মানুষের কাছে যেতে হবে। কারণ, মানুষই শিক্ষক। শিখেছিলাম, বাধ্য ছাত্রের মতো নতজানু হয়ে বসতে হবে মানুষের কাছে। শিখতে হবে। যেমন কৃষক পাঠ নেন প্রকৃতির কাছে। শিখেছিলাম, মানুষ, কেবলমাত্র মানুষই পারে স্নান দিতে। মানুষ, একমাত্র মানুষই পারে সব ক্লেদ মুছিয়ে দিতে আদরে আদরে। আজ ঈদের দিন এমনই কয়েকটুকরো মানুষের কথা মনে পড়ল।
মুগ্ধ এবং নতজানু প্রতিটি চরিত্র-চিত্রের কাছে।
অর্পণ সেনগুপ্ত | 42.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ০০:০৬93679আহা
চোখে জল নিয়ে পড়লাম।
শুভ | 2409:4060:38a:f4c0:ac9:63da:a27e:***:*** | ২৬ মে ২০২০ ০১:৪৮93685শেষের দিকে শান্তি পেলাম। মাঝ পথে কেঁদে ফেলেছি। এমন লেখার জন্যে কি বলতে হয় জানিনা। ভালো থাকবেন শুধু..
aranya | 162.115.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ০৩:১৪93691
সৈয়দ ফাইজুল হাসান | 103.102.***.*** | ২৬ মে ২০২০ ১৪:২১93716শব্দ দিয়ে এমন চিত্র আঁকা, এক কথায় অসাধারণ।
মোহাঃ দাউদ হোসেন | 2409:4061:79b:b69c:de35:92b5:b944:***:*** | ২৬ মে ২০২০ ২০:৫১93735ডান চোখের কোণে জল চলে এলো।
শঙ্খ | 103.242.***.*** | ২৭ মে ২০২০ ১৫:১৬93770কে জানে এই করোনা ক্রান্তিতে কতোজন ভিখিরি হয়ে গেছেন! লেখার মানবিক আবেদনটুকু ভাল লাগলো।
এই অহিংস, সাম্য, মৈত্রীর দেশ এপারে- ওপারে একদিন নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠা হবে। একদিন আগামীর ভোর...