তারপর বলিলেন-কর্ম তোমার অতি উচ্চ কর্মই বাবা। তোমার ভাবনা কি! যাঁরা কবি, তাঁরাই তো সংসারে মহাজন, তাঁরাই তো সাধক। কবির গানে ভগবান বিভোর হন। চণ্ডীদাসের পদাবলী শুনে মহাপ্রভু ভাবে বিভোর হয়ে নাচতেন। ... প্রভুর সংসারে নীচ কেউ নাই বাবা। নিজে, পরে নয়-নিজে নীচ হলে সেই ছোঁয়াচে পরে নীচ হয়। নীল চশমা চোখে দিয়েছ বাবা? সূর্যের আলো নীলবর্ণ দেখায়। তোমার চোখের চশমার রঙের মত তোমার মনের ঘৃণা পরকে ঘৃণ্য করে তোলে। মনের বিকারে এমন সুন্দর পৃথিবীর উপর রাগ করে মানুষ আত্মহত্যা করে মরে। আর বেশ্যা? বাবা, চিন্তামণি বেশ্যা-সাধক বিল্বমঙ্গলের প্রেমের গুরু।
সব যেন দুলিতেছে। ভিতরটা জ্বলিতেছে; দুনিয়াটা তুচ্ছ হইয়া যাইতেছে! এখন সে সব পারে। সে কালের ভীষণ বীরবংশী বংশের রক্তের বর্বরত্বের মৃতপ্রায় বীজাণুগুলি মদের স্পর্শে-জলের স্পর্শে মহামারীর বীজাণুর মত, পুরাণের রক্তবীজ হইয়া অধীর চঞ্চলতায় জাগিয়া উঠিতেছে। ... অশ্লীলতা, কদর্য ভাষা, ভাব নিতাইয়ের অজানা নয়। কিন্তু জীবনে সামান্য শিক্ষা এবং কবিয়ালির চর্চা করিয়া সে-সব এতদিন সে ভুলিতে চাহিয়াছিল। সে-সবের উপর একটা অরুচি, একটা ঘৃণা তাহার জন্মিয়াছিল। কিন্তু আজ বসন্তের কাছে আঘাত খাইয়া সেই আঘাতে ক্ষোভে নির্জলা মদ গিলিয়া সে উন্মত্ত হইয়া গেল। মদের নেশার মধ্যে দুরন্ত ক্ষোভে অর্জন-করা সব কিছুকে ভুলিয়া সে উদ্গীরণ করিতে আরম্ভ করিল জান্তব অশ্লীলতাকে।
(চলবে)