এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • দেবকী বসুর 'কবি', ১৯৪৯ - একটি অটেকনিকাল পাঠ : প্রথম কিস্তি

    ত্রিদিব সেনগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সিনেমা | ২৩ নভেম্বর ২০১০ | ১৪৫৫ বার পঠিত
  • দেবকী বসুর "কবি' ফিল্মটার একটা সাবটাইটল বানালাম, এই ২০১০-এর পুজোর আগে পরে, ছুটির দিনগুলোয়, দিনে পনেরো ষোল ঘন্টা করে পরিশ্রম করে। আমার এক পুরনো ছাত্র জিজ্ঞেস করল, এত পরিশ্রম করলাম কেন? কী আছে সিনেমাটায়? সিনেমায় তো সিনেমাই থাকে, কিন্তু তা থেকে কী পাই, এটাই বোধহয় প্রশ্ন। "কবি' থেকে আমি বহু কিছু পাই। যতবার দেখি, ততবারই পাই। "কবি' উপন্যাস থেকেও পাই, কিন্তু "কবি' ফিল্ম থেকে পাওয়াটা শুধু উপন্যাসনির্ভর পাওয়া নয়। তার চেয়েও বেশি কিছু কিনা নিশ্চিত নই, কিন্তু অন্যরকম তো বটেই। এবং বোধহয় কোনও কোনও জায়গায় "কবি' ফিল্ম "কবি' উপন্যাসকেও পেরিয়ে গেছে।

    কবি আমি প্রথম পড়ি ক্লাস সিক্সে বা সেভেনে। হিন্দুস্কুলে পড়তাম আর মধ্যমগ্রামে বাড়ি, বাড়ির লোকেরা রমেশদা বলে একজনের সঙ্গে আমায় ফিরতে বলত। রমেশদা কাজ করত এস কে লাহিড়ি বলে একটা বইয়ের দোকানে। প্রেসিডেন্সির উল্টোদিকের ফুটে। "কবি' উপন্যাসটা পড়েছিলাম ওখানে বসে। আরও অনেক বই আমি প্রথমবার পড়ি ঐ এস কে লাহিড়িতে বসেই, "রামতনু লাহিড়ি ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ' , বা "আরণ্যক' । দোকানে বসে বই পড়াটা, এখন আর কলকাতায় তেমন দেখি না, বিদেশে নাকি হয়, বা আমাদের বোম্বাই টোম্বাইয়ে। কিন্তু তখন কলকাতায় এটা বেশ চলত। শুধু রমেশদার সূত্রে ঐ এস কে লাহিড়ি দোকানটাতেই নয়, আমাদের স্কুলের নিচু ক্লাসের ছেলেদের আক্রমণ বেজায় সহ্য করতে হত কলেজ স্ট্রিটের দাশগুপ্ত দোকানটাকেও। এটা সত্তরের দশকের একদম গোড়ার কথা বলছি। মানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংলাপে যে সময়টাকে বারবার "সত্তর থেকে সাতাত্তর' বলে উল্লেখ করা হয়। দাশগুপ্তর ঐ ভদ্রলোককে সেদিনও দেখলাম, হঠাৎ করে এক বন্ধুর সঙ্গে একটা বই কিনতে গিয়ে। খুব ইচ্ছে করল একটু কথা বলি, তারপর সঙ্কোচ হল। ওনার কাছে তো আমি ছিলাম অনেক বাচ্চার একজন, আমাকে আর মনে করতে পারবেন না। খুব বয়স্ক হয়ে গেছেন, কিন্তু টাক ছিল ওঁর সেই তরুণ বয়সেও, এবং মোটা কাঁচের চশমা, ভারি সুন্দর লাগত মুখটা সেই ক্লাস সিক্স-সেভেন-এইট বয়সে। হয়তো আরও ঐ স্নেহপ্রবণতার কারণেই ভালো লাগত। একই সঙ্গে তিন জন, চার জন ছেলে আমরা নাক ডুবিয়ে বই পড়ে যাচ্ছি কমিকস থেকে উপন্যাস, এরকম প্রায়ই ঘটত। বিশেষ করে কমিকস, ইংরিজি কমিকস কেনা তখন আমাদের মত নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে অচিন্ত্যনীয় ছিল।

    এস কে লাহিড়িতে বসে "কবি' উপন্যাসটা পড়ার মুহূর্তটা আমার আজও মনে আছে। উঁচু টুলে বসে পড়ে যাচ্ছি, ডানদিকে কাউন্টারে কাত হয়ে, বইয়ের আলমারিতে হেলান দিয়ে। বসনের ঝুমুর নাচের যৌনতাটা আমি অনুভব করছিলাম, উত্তেজনাও হচ্ছিল একটা, একটু আশঙ্কাও হয়ত, অন্য কারুর চোখে পড়ে যাচ্ছে না তো। কিছু শব্দও ছিল, সেই অর্থে যা দেখলেই নিষিদ্ধ শব্দ মনে হয়, অন্তত: সেই কলকাতায় হত, যেমন "উলঙ্গবাহার শাড়ী'। সেটা আমায় সচেতন করে দিয়েছিল, মনে আছে, অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না তো, আমি কী পড়ছি। চোখে ছটা লাগিল তোমার আয়না বসা চুড়িতে - এই গানটাও একটা অন্য রকম উচ্ছাস দিয়েছিল, মনে আছে। আমি এখনও যেন ঐ বইটা, ঐ পাতাটা, ঐ লাইনগুলো দেখতে পাই। এটা ভয়ানক ভাবে আছে "আরণ্যক' উপন্যাসেও। ঐ কালোর উপর সবুজ সাদা গাছের প্রচ্ছদ, লবটুলিয়া বইহার নাড়া বইহার, সত্যচরণের মেস - এই গোটা স্মৃতিটাই যেন আলাদা করে উপন্যাসের স্মৃতি নয়, ঢুকে আছে ঐ এস কে লাহিড়ি, তার সারি সারি কালচে সবুজ আলমারি, তার উঁচু টুল এইসবের মধ্যে। "আরণ্যক' মনে পড়লেই ওটা মাথায় এসে যায়। যাকগে। বুড়ো বয়সের এইসব বাহুল্য ছেড়ে "কবি' -র কথায় ফেরা যাক। "কবি' ফিল্মটায়, আমার যা লাগে, উপন্যাসের একটা বিরাট গতিবিজ্ঞানই সম্পূর্ণ এসেছে, এবং হয়ত বাড়তি কিছুও এসেছে। সেই জায়গাটা আমি ঠিক কী পাই, সেটা দেখানোর জন্যেই এই লেখাটা। এবং এই অভিধায় এই "অটেকনিকাল' শব্দটা লাগানো একদমই আত্মসম্মান বাঁচানোর তাগিদে। দিন চারেক আগে লেখাটায় হাত দিলে, বোধহয়, শব্দটা থাকত না। যদিও "অটেকনিকাল' শব্দটা ব্যবহার করে আমার আগেও প্রবন্ধ আছে, এবং একই নাম বারবার ব্যবহারের একটা অভ্যাস আছে আমার। একই "মনোজ' বা "ত্রিদিব' নামও ব্যবহার করে গেছি আমার গল্পের পর গল্পে, বা উপন্যাসে, বারবার। ঐ অভ্যাসেই হয়ত, নাম দিতাম "দেবকী বসুর কবি - একটি পাঠ' , ঠিক অমনই নামে, "নওলপুরার বাঘ : বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর "বাঘ বাহাদুর' - একটা পাঠ' নামে প্রবন্ধ লিখেছিলাম "প্রতিক্ষণ' পত্রিকায়, আজ থেকে একুশ বা বাইশ বছর আগে। কী লিখেছিলাম তাও ভাল মনে নেই। এই লেখাটার নামে "অটেকনিকাল' শব্দটা গুঁজে দিতে হল অনিন্দ্যর গুঁতোয়। সেই গল্পটা বলে নিই আগে।

    অনিন্দ্য (সেনগুপ্ত) আর ওর বৌ সেঁজুতি (দত্ত), মানে এখন বিয়েটা হচ্ছে, যতদিনে লেখাটা আপনারা পড়বেন, ততদিনে বৌ হয়েই যাবে, এসেছিল এই "কবি' ফিল্মের সাবটাইটল, নোটস আর ফিল্মটা নিতে। অনিন্দ্য চলচ্চিত্রবিদ্যা পড়ায় যাদবপুরে। সেদিন আমরা তিনজনে একবার সাবটাইটল সহ "কবি' দেখছিলাম। একটা জায়গায় একটা দীর্ঘ নাচের দৃশ্য আছে। কথা নেই গান নেই, শুধু নীলিমা দাশের নেচে চলা। বেশ দীর্ঘ একটা দৃশ্য, তিরিশ সেকেন্ড জুড়ে, ১ ঘন্টা ৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ড থেকে ১ ঘন্টা ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড। বারবারই দৃশ্যটা দেখতে দেখতে আমার লাগে কী একটা বাড়তি চাপ দৃশ্যটায় আসছে, আমায় খুব টানে দৃশ্যটা। সেদিন দেখতে দেখতে ওদেরও বললাম এই টানার ব্যাপারটা। অনিন্দ্য দৃশ্যটা দেখার পরে বলল, কেন তোমায় টানে বলো তো, দাঁড়াও দেখাচ্ছি। ও ফিরিয়ে নিয়ে গেল দৃশ্যটার মাঝামাঝির একটু আগে। বলল এই দেখো এখানে একটা ফাঁকা জায়গা, জায়গাটা ফাঁকা রাখা হয়েছে ওখানে এসে অনুভা গুপ্তা দাঁড়াবে বলে, ক্যামেরা যেন পূর্বানুমান করছে। এবং দেখো যেই এসে দাঁড়াচ্ছে, তার দৃষ্টিকে ধরে ক্যামেরা ফেরত আসছে নীলিমা দাশে। অর্থাৎ, এই দুই নারীর আবেগের টানাপোড়েনটা দৃশ্যে ঢুকে আসছে। এরকম আরও কিছু সেঁজুতিও বলল। এবং দেখলাম, একদম ঠিকই তো, মোক্ষম সব জিনিস বলছে। একদম ঠিক।

    কিন্তু ওরা চলে যাওয়ার পরে মেজাজ বেশ খিঁচড়ে গেল। ওরা সব পুঁচকে ছেলেমেয়ে। তারা বুঝছে, অথচ আমি বুঝতে পারছি না, কী কাণ্ড। একবার ভাবলাম, লিখব না আর লেখাটা। তারপরে আর একটা সমস্যাও ছিল। বাংলায় লিখব, না ইংরিজিতে? আমি যা লিখতে যাচ্ছি তা বাংলা-দর্শকদের তো এমনিতেই মাথায় আসবে। কিন্তু অন্য ভাষার লোকদের আসবে না। আবার মনে হল, বাংলায় দেখা লোকদের একটা আবেগ তৈরি হবে ফিল্মটা দেখে, আর একটু খতিয়ে দেখার ইচ্ছেও জাগবে। এর মধ্যে গুরুচণ্ডালী সাইটের ঈপ্সিতা আমায় চিঠি দিল - একটা লেখা লেখো না। সঙ্গে পেদ্রো আলমোদোভারের দুটো ছবির উল্লেখ, যেগুলো আবার অনেক দিন আগে আমিই ওকে পাঠিয়েছিলাম, ওগুলো নিয়ে লিখতে বলেছিলাম। সেটা আমাকেই ফেরত পাঠাল। বলল, তুমি লেখো। তখন ওকে লিখলাম, তুই জানিস না, আমি একটু ঘেঁটে গেছি এই বাচ্চাদের সঙ্গে আমার ফিল্ম বোঝার পার্থক্যটা এমন বিচ্ছিরি ভাবে আবিষ্কার করে। "কবি' নিয়ে লেখাটা আর আদৌ লিখব কিনা তাই ভাবছি। এত এত ফিল্ম দেখি আমি, গুষ্টি গুষ্টি, দিনরাত, তারপরেও এইটুকু বুঝতে পারিনা। ওরা কী সুন্দর টকাটক সব বুঝে ফেলল। তারপর, ঈপ্সিতাকে চিঠিটা লিখেই মনে হল, না:, লেখাটা লিখেই ফেলি।

    তাই প্রথম থেকেই এটা বুঝে নিন, এটা কোনও ফিল্ম-সমঝদার লোকের লেখা নয়। আমি প্রচুর ফিল্ম দেখি, সেগুলো দেখতে দেখতে কোনও কোনওটা আমায় প্রচণ্ড টানে, কোনও কোনওটা টানে না। যেটা টানে সেটা কেন টানে তা আমি বোঝার চেষ্টা করি নিজেই। এই লেখাটা সেই চেষ্টারই একটা লিখিত রূপ। প্রত্যেক লেখাই লেখা হয় একটা বা কয়েকটা মুখকে কপালের মধ্যে রেখে। এটায় সেই মুখটা আমার ঐ পুরনো ছাত্রের, যেন তাকে আমি এটা বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলছি। আর আমার ফিল্ম বোঝার দৃষ্টান্ত তো আগেই দিলাম, কোনও চলচ্চিত্রবোধের আশা করলে এই লেখাটা পড়বেন না। আমি রাজনীতি, আর তার সূত্রে রাজনৈতিক অর্থনীতি, নিয়ে খুব মাথা ঘামাই। ওটা একটা অসুখের মত। কিছুতেই না-ভেবে পারিনা। যে কোনও গরুই, শেষ অব্দি, আমার হাতে পড়লে এসে হাজির হয় ঐ শ্মশানেই। এটা শুধু যে আমার কাজের জায়গা তাই নয়, এটা সত্যিই কোথাও একটা আমার নিজের কাছে নিজের অর্থ খোঁজারও একটা পরিসর। গল্প উপন্যাস লিখি আমায় সেগুলো পায় বলে, একটা ভরগ্রস্ততার চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার দায় থাকে, আর একটা থাকে মাথায় থাকা কিছু সন্নিবিষ্ট আধা-এলোমেলো আবেগ-অনুভূতি-চিন্তার শেষ অব্দি লিপিবদ্ধ আকারটা কী দাঁড়ায় এটা খুঁজে পাওয়ার একটা উল্লাস বা আরাম। আবার বহু বছর ধরে এই গল্প উপন্যাস আখ্যানগুলো লিখতে লিখতে এই সাহিত্য-জীবন-বাস্তবতা এই ভাবনাগুলোও মাথায় এক ভাবে বিন্যস্ত হয়ে গেছে। তারও কিছু উপাদান উত্তেজিত হয়ে পড়ে "কবি' ফিল্মটা দেখতে দেখতে, নিতাইয়ের জীবন আর তার সাহিত্যরচনা, মানে তার কবিয়াল গানগুলি বা ঐ কাঠামোতেই তাৎক্ষণিক ভাবে রচনা করে তোলা ছড়াগুলো - এই দুয়ের ভিতরকার কিছু অতিনিয়ন্ত্রণ বা পারস্পরিক কার্যকারণ সম্পর্ক, এটাও মাথায় চলে আসে। তারাশঙ্করের উপন্যাসটায় এটা রয়েছে আরও অব্যর্থ রকমে, কিন্তু "কবি' ফিল্মেও যতটুকু এসেছে সেটাও বিরাট। সেই ভাবনাগুলো কিছু চলে আসবে এই লেখাটায়।

    যে সব হাতে গোনা বইয়ের উল্লেখ আসবে আলোচনার সূত্রে, সেগুলো লেখার মধ্যে মধ্যেই দেব। আর খুব আসবে ঐ সাবটাইটল আর নোটসের কথা, এখনও যা মনে হচ্ছে। আমার ব্লগে (http://ddts.randomink.org/blog/?=153) সবকটা সাবটাইটল ফাইল আর নোটস ফাইলই পেয়ে যাবেন। ফিল্মটা এমনিতে ভিসিডিতে পাওয়া যায়, দেখবেন তার নামঠিকানা দেওয়া আছে ওখানে। আর কারাগার্গা (http://karagarga.net) এবং বাংলা-টরেন্টস (http://www.banglatorrents.com) এই দুটো টরেন্ট সাইটেও সেই এভিআই-গুলো আছে যার সঙ্গে এই সাবটাইটল ম্যাচ করে। কোনও ভাবেই যদি না পান, আমায় (dipankard@gmail.com) ঠিকানায় মেল করুন, কিছু একটা ব্যবস্থা করা যাবে।

    যাই হোক ফেরত আসা যাক "কবি' ফিল্মের প্রসঙ্গে। মজার কথা এই যে, "কবি' ফিল্মের সঙ্গে আমার মোলাকাত খুব বেশি দিনের নয়। হেমোপমদা (দস্তিদার) জয়পুরিয়া কলেজের মাস্টারমশাই ছিলেন, অবসর নিয়েছিলেন আমি যোগ দেওয়ার সামান্য দিন পরেই, যদিও মজার কথা, আজ পর্যন্ত কলেজ সূত্রে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা যার সাথে হয়েছে আমার, সে ঐ হেমোপমদাই। হেমোপমদা প্রথম যেবার আমার বাড়ি আসেন, অন্তত তেরো চোদ্দ বছর আগে, আমাকে একটা ক্যাসেট দেন। সেটা ঐ "কবি' ফিল্মের সম্পাদিত সাউন্ডট্রাক, বা, কোনও শ্রুতিনাটক, ঐ চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করে, ঐ একই শিল্পীদের দিয়ে। ঠিক কোনটা তা আমি নিশ্চিত নই। ক্যাসেটটা কালের গর্ভে হজম হয়ে গেছে তাও আজ বহুকাল, এমনকি সেই ক্যাসেট প্লেয়ারও। কোনও ক্যাসেট প্লেয়ারই নেই ঘরে তাও আজ বছর বারো তো বটেই। কম্পিউটার আসার থেকেই, যা হয়, সবই কম্পিউটার-নির্ভর হয়ে গেছে।

    কিন্তু যা হজম হয়নি তা হল নীলিমা দাসের ঐ বসনের চরিত্রের শ্রুতি-অভিনয়। বাপরে বাপ। কী দম আটকানো লাগত, "কেন করব আমি গোবিন্দের নাম, সে কী দিয়েছে আমায়?' এতটাই চাপ তৈরি করত যে আমি বারবার শুনতেও পারতাম না। মধুর ভান্ডারকরের "চাঁদনী বার' বা বার্গম্যানের "ভার্জিন স্প্রিং' ফিল্মে যেমন হয়েছিল আমার, কিছুতেই একবারে পুরোটা দেখতে পারতাম না। বা আরও অনেক কিছুতেই হয়েছে, ঐ দুটোর নামই মাথায় এল এই মুহূর্তে। তারপর মাঝে মাঝেই ভাবতাম নীলিমা দাশের সঙ্গে একবার দেখা করতে গেলে হয়। আমার এক বন্ধু বেলঘরিয়ায় নাটক করে, ওকে দিয়ে ওনার নাম-ঠিকানা যোগাড়ও করলাম, তারপর যাব যাব করতাম, সঙ্কোচও হত, কী বলব, নাটক অভিনয় এসবের কিছুই তো জানিনা, কী বলব গিয়ে। তারপর একদিন জানলাম, নীলিমা দাশ মারাই গেছেন। এরকম আমার আরও বেশ কয়েকবার হয়েছে।

    এরপর হঠাৎ করে, গত বছরে মানু একদিন পুজোর ঠিক আগে আগে আমায় এনে দিল, "কবি' ফিল্মের জোড়া ভিসিডির কালেক্টর এডিশন, এঞ্জেল ভিডিও-র। কী ছাইয়ের কালেক্টর এডিশন, ভাগ্যিস প্রথমেই এমপ্লেয়ার দিয়ে স্ট্রিম-ডাম্পটা নিয়ে নিয়েছিলাম হার্ড ডিস্কে, এই সাবটাইটল করাকালীন একদিন বার করে দেখলাম, সেই একবার চালানোতেই, এই এক বছরেই সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। তা যাক, যা বলছিলাম, ডাম্পটা চালানোর আগেই আমার গা শিরশির করছিল, চালানোর পরে আমি সত্য অর্থেই নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলাম। প্রচুর জায়গার অডিও খুব খারাপ, যেমন ভিসিডি-গুলোয় প্রায়ই হয়ে থাকে। হার্ডডিস্কে থাকায় যতবার খুশি চালিয়ে চালিয়ে উদ্ধার করতে পেরেছি পরে। কিন্তু সেসব সমস্যা নিয়েই আমার উপর যেন ভর হল "কবি' ফিল্মটার। তখন থেকেই সাবটাইটল করব ভেবেছিলাম, কিন্তু কিছুতেই সময় পাচ্ছিলাম না। আমার শেষ বইটা, কম্পিউটিং ও সফটওয়ার জগতের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে, আগেই তো বলেছি ওটা আমার স্থায়ী শ্মশান, কিছুতেই শেষ হতে চাইছিল না। শেষ হল এসে অগাস্টের শেষ দিকে। সেপ্টেম্বরেই হাত দিলাম সাবটাইটলে। প্রচণ্ড সময় লাগছিল। একটা আলগা হিসাবে দেখেছিলাম, গড়ে প্রতি মিনিট ফিল্ম-সময়ের জন্য আমার শ্রম লাগছে তিন ঘন্টারও বেশি। এবার দুই ঘন্টা পাঁচ মিনিট ফিল্মে মোট শ্রমের পরিমাণটা ভাবুন। তাই পুজোর ছুটি পড়বার মুহূর্ত থেকে একদম ঝাঁপ দিয়ে পড়লাম। পুজোর দিন দশেক ষোল সতরো আঠারো ঘন্টা কাজ করে সমাপ্ত করেছি ওটা।

    কিন্তু অত শ্রম করেও একটা অদ্ভুত আরাম হয়েছে। বোরহেস যেমন লিখেছিলেন, কাফকার সূত্রেই বোধহয়, আমাদের পিতা আমরা নিজেরাই নির্বাচন করি। আমাদের ঐতিহ্য কী তা খুঁজে নেওয়া আমাদেরই হাতে। "কবি' ফিল্মটা যে সেই ঐতিহ্যের একটা খুব জোরালো জ্যান্ত জায়গা এই নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। তাই বরং এটা আমার কাছে ছিল একটা সুযোগ, সম্মান জানানোর। দেবকী বসু মরে ফৌত হয়ে গেছেন, বোধহয় সমস্ত শিল্পীরাও তাই, তারাশঙ্কর তো বটেই। তাই তাদের আর কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি নেই এতে, কিন্তু আমার আছে, আমি তো এখনও মরে যাইনি। এই সাবটাইটল করে, বা তারপরে, আমার এই লেখায় যদি "কবি' ফিল্মটা দশটা বাড়তি লোকের কাছেও পৌঁছয়, আমার বেশ একটা আরাম হয় তাতে, যাক, কিছু একটা করলাম, এইরকম বিরাট একটা কাজের একটা হোর্ডিং লেখার তো সুযোগ পেলাম। কলেজের মাস্টারমশাইরা তো আজকাল শেয়ার বা গাড়ি / কোটের ব্রান্ড ছাড়া কিছু বোঝে না, লেখাপড়ার কাজ তো বহু আগেই পুরনো দিনের প্রাচীন কুসংস্কারের মত লুপ্ত হয়ে গেছে। যা টিকে আছে তা কিছু ব্যক্তি মানুষের আত্মরতিরত পাগলামিতে। ঠিক সেই মন্তব্যটাই করেছিলেন আমার এক সহকর্মী, আমার বৌয়ের কাছে, "কী, ঐ সেই পাগলামি চালিয়ে যাচ্ছে তো, এই কাজে মালকড়ি তো কিছুই হবে না।' বিশ্বাস করুন, আমি একটুও নাটকীয় করছি না, ঐ "মালকড়ি' শব্দটাই তিনি ব্যবহার করেছিলেন। সত্যিই "কবি' ফিল্মটা আমার বিরাট একটা কিছু লেগেছে। তুলসী চক্রবর্তীর অলৌকিক ঐ অভিনয় নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই, সবসময়ই তিনি ঐরকম অভিনয়ই করে এসেছেন। কিন্তু, তার চোখের মুদ্রায়, কদর্য নাচের ভঙ্গীতে, যে ভাবে উঁচু জাতের দম্ভ এবং হিংস্রতাটা এসেছে, সেটা বোধহয় তুলসী চক্রবর্তীর পক্ষেই সম্ভব। নীলিমা দাশের কথা আগেই বললাম। অনুভা গুপ্তা, নীতিশ মুখোপাধ্যায়, হরিধন, এদের সকলেরই অভিনয়, সঙ্গে রবীন মজুমদারের গান, এবং অনিল বাগচীর সঙ্গীত পরিচালনা, এর একটাও যদি সঠিক মানে না-পৌঁছত, "কবি' বোধহয় তার নিজের জায়গায় পৌঁছতে পারত না। নৃত্য পরিচালকের নাম দেখলাম প্রহ্লাদ দাস। তাঁর সম্পর্কে আর কিছুই আমি জানি না, কিন্তু প্রত্যেক বারই তুলসী চক্রবর্তীর ঐ বিকট নাচ দেখতে দেখতে আমার নৃত্যপরিচালকের কথা মাথায় আসে। একজন পঞ্চাশোর্ধ ভারি চেহারার মানুষের শরীরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ঐ নাচের ভঙ্গীর উদ্ভাবন তো সহজ কাজ ছিল না। এই রকম অজস্র টুকরো টুকরো কথা মাথায় আসে আমার। আক্ষরিক অর্থেই এগিয়ে পিছিয়ে এগিয়ে পিছিয়ে "কবি' ফিল্ম আমি অজস্রবার দেখেছি। আপনারা দেখুন, আমার প্রতিক্রিয়া যদি আপনাদের প্রতিক্রিয়ায় স্থানান্তরিত হতে পারে, সেটাই এই কাজের সাফল্য।

    এবার ফিল্ম নিয়ে কথা শুরু করব আমরা। ব্যাপারটা সবচেয়ে সরল, একরেখ, এবং কম পরিশ্রমসাধ্য করার স্বার্থে, আমি ফিল্মটার সঙ্গে সঙ্গে এগোব, এবং ব্যবহার করে চলব আমার ঐ সাবটাইটল ফাইল থেকে উদ্ধৃতি। এতে সময়রেখাটাও স্পষ্ট থাকবে, এবং দরকার মত আপনারা সঙ্গের নোটস ফাইলও পড়ে নিতে পারবেন। আগেই আমার ব্লগের ঠিকানা দিয়েছি, যেখান থেকে আপনারা ঐ সাবটাইটল ফাইল দুটো, [kabi - 1.srt এবং kabi - 2.srt] , আর তার সঙ্গে পড়ার নোটসগুলো, [kabi - 1.notes.pdf এবং kabi - 2.notes.pdf] নামিয়ে নিতে পারবেন। সাবটাইটল ফাইলগুলো হল সরল টেক্সট ফাইল, যে কোনও প্লেইন টেক্সট এডিটরে খুলতে পারবেন, আর পিডিএফের জন্য কোনও একটা পিডিএফ রিডার লাগবে। দেবাশিস (দাস), আমার যে ছাত্রের কথা আগেই বলেছি, তার সঙ্গে বসেই যেন আমি আবার দেখছি ফিল্মটা, এবং মাঝেমাঝেই থামিয়ে কিছু কথা বলে নিচ্ছি। কথার শুরুতেই থাকছে সাবটাইটল ফাইল থেকে উদ্ধৃতি, পুরো সেই এϾট্র বা নথীটাই, প্রথমে সাবটাইটলের ক্রমিক সংখ্যা, তারপর সময়রেখা, তারপর পর্দায় দৃশ্য লেখাটুকু। এটুকু ইংরিজিতে। তার নিচে বাংলায় আমাদের আলোচনা। এবং, যেমন বলেছি, ফিল্মবিদ্যাগত ভাবে লেখাটা হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ অটেকনিকাল এবং অশিক্ষিত, কারণ আমিই তাই। আর আমার ছাত্রদের সঙ্গে আমি যে ভাবে কথা বলি, যা মাথায় আসে তাই কোনও একটা সম্পর্কিত রকমে বলে যাই, একটা অ্যাকাডেমিক লেখায় যে দায়িত্বপালনটা অন্ত:শীলা থাকে সেটার আদৌ পরোয়া না করে, এই লেখাটাও হতে যাচ্ছে তাই। আমার এক ছাত্রের সঙ্গে আমার কথা বলে চলা। আমি কেন "কবি' ফিল্মে উত্তেজিত হয়েছি সেটাই তাকে আমি পৌঁছে দিতে চাইছি, সঙ্গে সঙ্গে নিজেও বুঝে উঠতে চাইছি। আর সবাই জানে মাস্টারমশাইরা একটু বক্তিয়ার খিলজি হয়, তাই কিছু অতিকথনও থাকতেই পারে। লেখার সঙ্গে একটু একটু নুন লাগিয়ে পড়বেন। সেই অর্থে এটা কোনও গম্ভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ লেখাই নয়, একবার সিনেমাটা চালিয়ে চালিয়ে দেখছি সেই ছাত্র আর আমি, এবং দেখাকালীন ফিল্ম থামিয়ে যা মাথায় আসছে, যতটুকু মাথায় আসছে বলে যাচ্ছি। এমনকি কোথায় কোথায় থামাচ্ছি তাও খুব নির্দিষ্ট কিছু নয়। অন্য আর এক বার দেখাকালীন হয়ত অন্য আরও কোথাও থামতাম।

    শুরু করা যাক প্রথম সাবটাইটল ফাইল kabi - 1.srt থেকে। একদম উপরে নম্বরটা হল সাবটাইটল ফাইলের এটা কত নম্বর এϾট্র, তারপর সময়রেখা, ঠিক কোন জায়গায় সাবটাইটলটাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে, আর একদম নিচে কী ফুটিয়ে তুলতে হবে। যার সঙ্গে দেখুন একটা নম্বরও দেওয়া আছে, নোটস ফাইলে এটা কত নম্বর নোটস।

    [8
    00:02:32 , 990 -- 00:02:35 , 789
    (( Train whistle )) [01]]

    ফিল্মটার সাবটাইটল দেখে আমার এক বন্ধু জিজ্ঞেশ করেছিলেন, এরকম গর্দভের মত আমি ট্রেনের ভোঁ-টাও চিহ্নিত করে দিয়েছি কেন। আসলে স্ট্রেস মানেই তো ওভারস্ট্রেস। চিহ্নিত করে দেওয়া মানেই অবশিষ্টের থেকে পৃথক একটা সত্তায় জেগে ওঠা। কিন্তু চিহ্নিত করতে খুব বেশি করেই চেয়েছিলাম, এতে কোনও সন্দেহ নেই। নোটসেও যেমন লিখেছি, ট্রেন এবং রেলওয়ে এক কথায় বললে ব্রিটিশ আমলে বাংলায় তথা ভারতে সামাজিক গতিবি"¡নের সবচেয়ে বড় প্রতীক। শরৎচন্দ্রের "শ্রীকান্ত' উপন্যাসের তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে, শরৎ সমিতি সংস্করণের গ্রন্থপরিচয় অনুযায়ী। তারাশঙ্করের "কবি' উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪২-এ, কিন্তু তার আগে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল পাটনার "প্রভাতী' পত্রিকায়, ১৯৩৮ থেকে, মিত্র ও ঘোষ সংস্করণের গ্রন্থপরিচয় অনুযায়ী। এবং পরে আমরা যেমন দেখব, "কবি' উপন্যাসের তথা ফিল্মের ঘটনাগুলি ঘটছে দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে, তার মানে ১৯১৯ থেকে ১৯৩৯-এর মধ্যে। তার মানে, "শ্রীকান্ত' আর "কবি' এই দুই উপন্যাসই প্রকাশকাল অনুযায়ী যথেষ্ট নিকট। "শ্রীকান্ত' উপন্যাসের এগার অধ্যায় থেকে রেলওয়ে বিষয়ে একটু পড়া যাক।

    রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তকে না জানিয়ে বক্রেশ্বর তীর্থদর্শনে চলে যাওয়ায় অভিমানী শ্রীকান্ত বাড়তি উৎসাহে বেরিয়ে পড়ে তার বন্ধু সতীশ ভরদ্বাজ অসুস্থ জেনে। সতীশ রেলওয়ের কন্সট্রাকশন ইনচার্জ। তার ক্যাম্পে গিয়ে কলেরাক্রান্ত সতীশের শুশ্রূষা তথা তার প্রেম ও মৃত্যুর উপাখ্যান ভারি জমকালো, সেই বিষয়ে আর যাচ্ছি না। সতীশ এবং সেই ক্যাম্পের আরও অনেকের মৃত্যুর পর, সতীশের "অমর কীর্তি তাড়ির দোকান অক্ষয় "দেখে, শ্রীকান্ত একসময় ফিরতি পথে রওনা হল। পথে দুজন ছাতা মাথায় ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হল, যাঁরা সতীশ সম্পর্কে জানালেন, "মাতাল, বদমাইস, জোচ্চোর।' পরে এও বললেন, "দোষ নেই মশায় ... কোম্পানি বাহাদুরের সংস্পর্শে যে আসবে সে-ই চোর না হয়ে পারবে না। এমনি এদের ছোঁয়াচের গুণ!' পরে হাঁটতে হাঁটতে কথা প্রসঙ্গে আরও অনেক কিছু জানালেন এই রেল কোম্পানির ব্রিটিশ ব্যবসা সম্পর্কে।

    কর্তারা আছেন শুধু রেলগাড়ি চালিয়ে কোথায় কার ঘরে কি শস্য জন্মেছে শুষে চালান করে নিয়ে যেতে। ... সমস্ত অনিষ্টের গোড়া হচ্ছে এই রেলগাড়ি। শিরার মত দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রেলের রাস্তা যদি না ঢুকতে পেত, খাবার জিনিস চালান দিয়ে পয়সা রোজগারের এত সুযোগ না থাকত, আর সেই মানুষ যদি এমন পাগল হয়ে না উঠত, এত দুর্দশা দেশের হতো না। ... মশাই, এই রেল, এই কল, এই লোহা-বাঁধানো রাস্তা - এই তো হল পবিত্র vested interest- এই গুরুভারেই তো সংসারে কোথাও গরীবের নি:শ্বাস ফেলবার জায়গা নেই।

    এই গোটা আলোচনাটা আমাদের একটুও অপরিচিত নয়। আমি শুধু একটু মনে করিয়ে দিলাম। এই বেদনার জায়গাটা এবং এর বিপরীতে ক্রমপ্রসারমান যুদ্ধ আর বাণিজ্যের বেলোয়ারি রৌদ্রের ছটা ঐ আলোচনার পরিসরেও এসেছে, এবং ব্যাপক ভাবে এটা এসেছে মার্ক্সের প্রচুর লেখায়। যেমন, দি ফিউচার রেজাল্টস অফ ব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া, প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউনে, ১৮৫৩-য় (http://www.marxists.org/archive/marx/works/1853/07/22.htm) । এরকম আরও অনেক আছে। মার্ক্স খুব ভাল ভাবে ব্রিটিশ ভারতে শিরা-উপশিরার মত বিস্তৃত রেলপথজালের অভ্যন্তরীণ গতিবিজ্ঞানটাকে চিহ্নিত করেছেন। তার সার্বিক ঘাতটাকে, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্তরেও, অনেক দূর অব্দি লক্ষ্য করেছেন। কী ভাবে ভারতীয় সমাজকে সেটা ভিতর থেকে বদলে দিচ্ছে, সেটাকে মার্ক্স লক্ষ্য করেছিলেন। ভারত রাষ্ট্র বলে আজ যাকে আমরা চিনি, তা অনেকটাই সৃষ্টি হয়েছে ব্রিটিশের এই রেলের হাতে। বাজারের নিরিখে, আদানপ্রদানের নিরিখে, ভূমি ও ভূগোলের বোধের নিরিখে। বিভূতির অজস্র গল্পে এটা এসেছে। খুব প্রতিনিধিস্থানীয় এরকম একটা চিহ্ন রয়েছে "ক্ষণভঙ্গুর' সঙ্কলনের "সিঁদুরচরণ' গল্পে। "এই পিথিমির কি কোনও সিমেমুড়ো নেই' জাতীয় বিস্ময়কে তার আঞ্চলিকতার ধারণায় আচ্ছন্ন বলে আমরা সহজেই চিনে নিতে পারি, যখন দেখি তার বিস্ময় তৈরি হওয়ার রসদ রেলপথের মাপে দাঁড়ায়, চব্বিশ পরগনা থেকে নদীয়া, বনগাঁ থেকে কৃষ্ণনগর। "আপনি কেষ্টলগর চেন? ... বাহাদুরপুর কেষ্টলগরের দু' ইস্টিশনের পরে' - আমাদের পরিচিত ভূগোলে সিঁদুরচরণের বিস্ময়ের পৃথিবীকে অনুবাদ করে দিচ্ছেন লেখক। আর সেই ভূগোলটা নিতান্তই রেলপথ-নির্ভর, দূরত্বের একক "ইস্টিশন' । আবার "ইছামতী' উপন্যাসের শেষে এসে আমরা দেখি, সমাজজীবনে নতুন ধরনের সব গতিময়তার সূচনা হচ্ছে। তিলু বিলু নীলুদের স্থানান্তর এবং যানের ধারণাটাই বদলে যাচ্ছে, রেলপথের অভিঘাতে তৈরি হচ্ছে একটা উল্লসিত বিস্ময়।

    আর ছোট মা তো কিছু জানেই না। কলের গাড়ীতে উঠে সেদিন দেখলে না? পান সাজতে বসলো। রাণাঘাট থেকে কলের গাড়ী ছাড়লো তো টুক করে এলো আড়ংঘাটা। আর ছোট মার কি কষ্ট! বললে, দুটো পান সাজতি সাজতি গাড়ী এসে গেল তিনকোশ রাস্তা! হি হি - ।
    শরৎচন্দ্র অসুখ ও বেদনাটাকে ধরেছিলেন, কিন্তু এই সৃষ্টিশীল গতিমুখটাকে ধরতে পারেননি, বা চাননি ধরতে। শরৎচন্দ্রের মধ্যে ঐ বিষয়ী-অবস্থানটা (যাকে বাংলায় বলে সাবজেক্ট পোজিশন) থাকতই। বাস্তবতাকে তার নিজের মতামত ও মূল্যায়ন দিয়ে সাজিয়ে নেওয়া তো বটেই, এমনকি তার বিপরীত-যাত্রাতেও পাঠিয়ে দেওয়া। যেমন, কলকাতার ও জেলার আদালতগুলিতে যখন পরের পর একান্নবর্তী পরিবার ও সম্পত্তিভাগের মামলা বেড়ে উঠছে, ব্রিটিশ আমলের শেষ ভাগে নতুন ধরনের পুঁজি ও বাজার সৃষ্টির গতিতে, ঠিক সেই সময়ই শরৎচন্দ্র লিখে যাচ্ছেন "বিন্দুর ছেলে' , "রামের সুমতি' জাতীয় আখ্যান, যাতে পরিবার ও সম্পত্তি ফের জোড়া লেগে যাচ্ছে। এটার মধ্যে ব্যক্তি লেখকের নিজের ভাল লাগা মন্দ লাগা ঔচিত্য অনৌচিত্য বোধের ছাপ থাকছে। হয়ত ব্যক্তি লেখকের নিজের স্বপ্নপূরণ থাকছে, যা ঘটুক বলে তিনি চাইতেন। আমি জানিনা, বাস্তবতার চিত্রণ থেকে এই বিচ্যুতি কোনও সমস্যা বলে ডাকা যায় কিনা। আমার এক নাট্য-পরিচালক বন্ধু যেমন বলে, অভিনয়ের কথা যদি বলো, তাহলে এই গ্রহের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত অভিনয় করেছে "খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' সিনেমায়, না সরি, উত্তমকুমার নয়, ঐ গরুটা যেটা ঘাস খাচ্ছিল বাড়ির বাইরে। তাই বাস্তবতার চিত্রণটা গুরুত্বপূর্ণ, নাকি তার ভিতর অনুপ্রবেশটা, তা বলতে পারি না। এবং যা দেখছি ক্রমে, যত দিন যাচ্ছে, যা যা জানতাম বা বুঝতাম বলে ভাবতাম, তা সবই ক্রমে আরও ঘেঁটে যাচ্ছে। আমার যুবক বয়সে, মার্ক্সবাদী রাজনীতির সক্রিয়তার বয়সে যেমন মনে হত, এ তো এক রকমের ইচ্ছাপূরণ, যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটবে, আরও কিছু পরে, হাফপ্যান্ট পরা নাতি-হয়ে-যাওয়া ধর্মেন্দ্র আর ফ্রক-পরা অন্যূন-বয়স্কা যোগিতা বালির ইস্কুলের সিলিপ ঘিরে নাচ-গানে। আমার তখনকার এক বামপন্থী বন্ধু লিখেছিল রাজ কাপুরের একটা মতামতের কথা, পরে আমি বহু খুঁজেও আর সেটা কখনও পাইনি, তাই জানিনা সেটা খুব সঠিক কিনা, আর সেই বন্ধুও মারা গেছে। তার লেখায় ছিল, রাজ কাপুর বলেছেন, আমি চাইলেই একজন বেশ্যাকে ফোনে ডাকতে পারি, ভারতের খুব কম মানুষেরই সেটা সামর্থের মধ্যে পড়ে, তাই তাদের এই যৌন আনন্দ দেওয়ার জন্যেই আমি ফিল্ম বানাই। আজ মনে হয়, রাজ কাপুর তো ভুল কিছু বলেন নি, ক্ষতি কী এমনধারা ফিল্মে? বাংলা "শিল্প' শব্দটার ইংরিজি তো "আর্ট' আর "ইন্ডাস্ট্রি' দুইই। তাহলে অসুবিধা কোথায়? ইচ্ছাপূরণের ইন্ডাস্ট্রিতে? সেটা গ্রেট আর্ট হয়ত হবে না, কিন্তু তাতে তো ইতিহাস এক ভাবে বিধৃত থাকবেই। আর্ট আর ইন্ডাস্ট্রি দুই-ই তো শেষ অব্দি যায় একই ইতিহাসের চাঁড়িতে।

    কিন্তু এটুকু বলাই যায়, শরৎচন্দ্রের অনেক অবেক্ষণই প্রবলভাবে তার মনোভঙ্গী দ্বারা আক্রান্ত থাকত। যেমন ঐ শ্রীকান্ততেই, ব্রাহ্ম ও হিন্দু ধর্মের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে তাঁর যার তীক্ষ্মতাটা অনস্বীকার্য, কিন্তু তার ইতিহাস-সম্মতিটা বিচারের অপেক্ষায় থাকে। রেল সম্পর্কে তার মতামতটা একটু একপেশে লাগে। আরও সেই "শ্রীকান্ত' লেখকের যার চতুর্থ পর্ব তথা গোটা উপন্যাসটাই শেষ হবে বিষন্নতার ঐ অলৌকিক চিত্রণে, কমললতা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে রইল, ট্রেনটা চলতে শুরু করল, একের পর এক কামরার আলো তার মুখে পড়ছে, আলোকিত হচ্ছে, আবার অন্ধকারে চলে যাচ্ছে - এবং অস্পষ্ট হতে হতে ক্রমে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। এই রূপকল্পটা যাঁর হাতে তৈরিই হতে পারত না, যদি রেল না থাকত। কিন্তু "কবি' ফিল্মে আমরা দেখব, রেলপথ আসছে পুরো একটা নতুন ধাঁচের গতিময় উন্মুক্ততার প্রতীক হয়ে। এবং "কবি' উপন্যাসে যতটা এসেছে তার চেয়েও বেশি করে এসেছে "কবি' ফিল্মে। রেল / রেলপথ / রেল-ইস্টিশন / রেলযাত্রার প্রসঙ্গ বা উল্লেখ বা ছবি বা শব্দ ফিল্মটায় এসেছে কয়েকশো বার। শুরুও হচ্ছে রেলগাড়ির ভোঁ দিয়ে, আবার শেষও হচ্ছে রেল লাইনের ছবি দিয়ে, দুই সমান্তরাল রেখা চলে গেছে সোজা অনন্তের দিকে ... ক্রমে কাছে আসছে, কিন্তু মিলছে না কখনঐ। এমনকি প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটমানতাতেই বদলের সচেতনতা এনে দিচ্ছে ট্রেনের আওয়াজ বা উল্লেখ। এটা এত বেশি সংখ্যায় যে প্রতিবার খেয়াল করানো সম্ভবও নয়, কোনও মানেও হয় না। তাই, একদম প্রথমেই এটা উল্লেখ করে দেওয়া। রেলের এই উপস্থিতি সেই সময়ের ঘটমান ভারতীয় সমাজ জীবনের একটা নিরবচ্ছিন্ন চিহ্নের মত রয়েছে গোটা "কবি' ফিল্ম জুড়ে, উপন্যাসে যতটা আছে ফিল্মে তার চেয়ে অনেক বেশি করে।

    বিভূতিভূষণের "ইছামতী' উপন্যাসে, ঐতিহাসিক ভাবেই, আমরা কেবল রেল-উপস্থিতির শুরুটা দেখছি। তাও বেশ কয়েকটি মন্তব্যে সেটা ধরা আছে উপন্যাসের শেষের দিকটায়। আর অপ্রতিরোধ্য ভাবে সেটা এসেছে "পথের পাঁচালী' উপন্যাসে। "পথের পাঁচালী' ফিল্মটির নাম "পথের পাঁচালী' হলেও, তার গোটা "বল্লালী বালাই' অংশটি বাদ দিয়ে ফিল্মের শুরু "আম আঁটির ভেঁপু' থেকে। তাতেও, "পথের পাঁচালী' ফিল্মে রেলের সেই জীবন্ত দৃশ্যটা আমরা সকলেই জানি, কাশফুলের বন পেরিয়ে অপুর রেল দেখা। তাও, আমার বারবারই মনে হয়, ঠিক "বল্লালী বালাই' -এর মত, সমাজ ইতিহাসের জ্যান্ত বাস্তবতাটা বেশ বড় রকমেই বাদ পড়ে গেছে "পথের পাঁচালী' ফিল্মে। সত্যজিত রায় বোধহয় সমাজ বাস্তবতার চেয়ে ব্যক্তি আবেগ-অনুভূতির টানাপোড়েনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এই রেল নিয়েই যে তীব্রতা "পথের পাঁচালী' উপন্যাসে এসেছিল, তার খুব কাছাকাছি ছিল বরং "অপরাজিত' ফিল্মের একটি দৃশ্য। দৃশ্যটার শুরু "অপরাজিত' ফিল্মের ৩৯ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সর্বজয়া দেখলেন, মনিব-বাড়ির কাজেরই অংশ হিসাবে তামাকের টিকায় ফুঁ দিচ্ছে অপু। ৩৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে এই গোটাটা নিয়ে ত্রস্ত দুশ্চিন্তিত সর্বজয়া নিজের ভিতরে ডুবে গেলেন, ৪০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে গিয়ে রেলের ভোঁ শুরু হল, সর্বজয়া বাইরের দিকে তাকালেন, ৪০ মিনিট ২২ সেকেন্ডে পর্দায় চলে এল ট্রেন, ৪০ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে এসে দেখা গেল ট্রেনে আসীন সর্বজয়া অপুদের। পুরো বাহান্ন সেকেন্ড জুড়ে তৈরি এই বিপন্নতাটা, সর্বজয়া আঁকড়ে থাকার একমাত্র আশ্রয় অপু ঠিক মানুষ হবে তো, তার চাপ, তার নাটক, তার থেকে তৈরি কাশী থেকে নিশ্চিন্দিপুরে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত - এই গোটা মোচড়টা হাজির হয়ে গেল এই ট্রেন দৃশ্যে। যে গতিশীলতার অভাব আমি অনুভব করি "পথের পাঁচালী' ফিল্মে। শুধু ট্রেন না, পরিবারকে অসম্ভব বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে পরিবারের বাইরের বাস্তবতাটাকে খুব লঘু করে দেওয়া হয়েছে, "পথের পাঁচালী' উপন্যাসের তুলনায় ফিল্মে, এরকমই লাগে। বরং "কবি' ফিল্মে ঠিক তার উল্টোটা মাথায় আসে। এই ফিল্মের চিত্রনাট্য এবং সংলাপ তারাশঙ্করেরই করা। ধরে নিচ্ছি ১৯৪৯-এর ফিল্মের চিত্রনাট্য তিনি ১৯৪৮-এ লিখেছিলেন। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ এই দশ বছর সময় পেয়েছিলেন তারাশঙ্কর আরও পরিণত হয়ে ওঠার। চিত্রনাট্য করার সময়ে যে বেমক্কা রকমের ভাল করে খুঁটিয়ে পড়তে হয়েছিল তাঁর নিজেরই উপন্যাসটা, তার ছাপ ছড়িয়ে আছে গোটা ফিল্মে। যে গানগুলো মূল উপন্যাসে আছে, তার অনেকগুলৈ বদলেছেন, ঘটনার সংস্থানকে বদলেছেন, নতুন অনেক উপাদান এনেছেন। যার অনেকগুলৈ আমার অত্যন্ত লাগসই লেগেছে। কয়েক জায়গায় আমি চিহ্নিতও করব কোনও কোনও বিশেষ বিষয় উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্যে প্রকটতর হওয়ার বিষয়টি। বিশেষ করে রেলকেন্দ্রিক গতি ও ঘাতটার বেলায় যা খুব বেশি করে সত্যি। তাই আমার যে বন্ধু আমায় গর্দভ বলেছিল ঐ রেলের ভোঁ-টা আলাদা করে খেয়াল করানোয়, সে এটা বোঝেনি গর্দভের মত ডাকছিলাম হয়ত, কিন্তু প্রয়োজনীয় জায়গাতেই ডাকছিলাম।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৩ নভেম্বর ২০১০ | ১৪৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন