এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • দেবকী বসুর 'কবি' - একটি অটেকনিকাল পাঠ (দশম ও শেষ প্রবাহ)

    ত্রিদিব সেনগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সিনেমা | ৩০ মে ২০১১ | ১৬৬৯ বার পঠিত
  • 344
    00x34x46,200 --> 00x34x48,300
    (Bhojpuri folk song.)[47]
    _She went to bring water._

    345
    00x34x48,400 --> 00x34x58,200
    1, 2, 3 ...
    _From the cemented well_
    5, 6, 7,8, 9,10.

    346
    00x34x59,100 --> 00x35x22,100
    _From the cemented well._
    _All my friends left me, o lover._
    _Lift my pot and put the lid._
    _Now go back happily, o lover._

    পানিয়াভরন গইলি ...
    এক দো তিন ...
    পাকওয়া ইনারওয়াসে ...
    পাঁচ, ছে, সাত, আট, ন, দস।
    পাকওয়া ইনারওয়াসে
    সব সখি ছোড়াকে গেলাই হো সিপহিয়া।
    আরে ঘালাওয়া উঠায়ে দেহু
    মোহাওয়া মিলায়ে দেহু
    খুশিমনসে চলা যাহু ঘর হো সিপহিয়া।

    আগেই উল্লেখ করে নি, অনেকবার শোনার ও দেখার পরেও এই গানটা আমি নিজে নিজে উদ্ধার করতে পারিনি। আমি সাহায্য নিয়েছিলাম আমার কলেজেরই হিন্দী বিভাগের সহকর্মী রেখা সিং এবং সূরজ শাহের। এই অভিজ্ঞতাটাই আমার খুব নতুন লেগেছে, একটা বাংলা ফিল্মে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ভোজপুরি গান, এবং যা গাওয়া হয়েছে বেশ যত্নে ও সঠিক উচ্চারণে, ওরা দুজনেই আমায় বলেছে। সংক্ষেপে অনুবাদটা এরকম: জল আনতে গেল (নারী), বাঁধানো পাকা ইঁদারা থেকে, সব সখি ছেড়ে গেল, ওহে প্রেমিক। জলের ভাণ্ডটা তুলে দাও (মাথায়), তার ঢাকনাটাও দিয়ে দাও, খুশি মনে চলে যাও, ওহে প্রেমিক। ভোজপুরী লোকগীতিতে সিপহিয়া নাকি প্রেমিক, কেন, কী করে, কবে থেকে, এসব ওর আর আমায় বলেনি, কিন্তু আমি প্রচুর ঘাবড়েছি। ইংরেজ ফৌজে চলে যেত যে জঙ্গী প্রেমিক, তার জন্য গ্রামে রয়ে যাওয়া প্রেমিকা দু:খ করত? কোন যুদ্ধ? সিপাহী বিদ্রোহ, নাকি মেসোপটেমিয়া যুদ্ধ? কে জানে? যাকগে, কলস মাথায় নারী, সে তার প্রেমিকের সাহায্য নিতে চায় - একটুও কি চেনা লাগছে? আমাদের ফিল্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা যদি ছেড়েও দিই, রাধাকৃষ্ণ আলোচনার সঙ্গে এটার দূরত্ব শুধু দুধ আর জল। আর রাধাদের গোয়ালা ঘরে কী হয় আমরা সবাই জানি, তারা দুধে জল মেশায় না, মেশায় জলে দুধ। জলের একটা যোগান খুব জরুরি থাকে। যাকগে, একটা আলোচনা থেকে এভাবেই গজিয়ে ওঠে, বেড়ে ওঠে অন্য নানা আলোচনা। সেটা ছেড়ে দিয়ে এই চলচ্চিত্রের নিরিখে এই ভাষাগত ঘটনাটার গুরুত্বের কথায় আসি।

    বালিয়ার প্রসঙ্গে অনেক আলোচনা আমরা আগেই করেছি। সেখানেই আমরা উল্লেখ করেছিলাম এই গানটার কথা। এবার একটু মেলানো যাক একে উপন্যাসের ভাষাবিষয়ক সূত্রগুলির সঙ্গে। আমরা আগেই আলোচনা করেছি, প্রচুর বাঙলা সাহিত্যের পটভূমি পশ্চিমে বা অন্যত্র অবাঙলাভাষী এলাকায় হওয়া সত্ত্বেও, সেখানকার জীবন ভাষা ইত্যাদি অত্যন্ত অপ্রতুল, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী বা শরদিন্দুর কিছু লেখা বাদ দিলে। কিন্তু মহাস্থবির জাতকে যেমন, বা শরদিন্দুতেও, ওই ভিন্নতাটাই সেখানে বক্তব্য বস্তু। ভিন্নতা যেখানে উপপাদ্য নয়, সেখানেও, স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার জীবন বা ভাষা লেখায় এসে যাওয়ার একটা উদাহরণ আছে "কবি' উপন্যাসে। কাশী গেল নিতাই, সেখানকার বাস্তবতা ও ভাষা তার কাছে পৌঁছল একদম প্রথম সাক্ষাতেই, হিন্দি ও বাংলা যেখানে পাশাপাশি।

    ব্রিজের উপর ট্রেনের জানালা দিয়া কাশীর দিকে চাহিয়াই সে মুগ্ধ হইয়া গেল। বাঁকা চাঁদের ফালির মত গঙ্গার সাদা জল ঝকঝক করিতেছে - সমস্ত কোল জুড়িয়া মন্দির, মন্দির আর ঘাট, আরও কত বড় বড় বাড়ী। নিতাইয়ের মনে হইল মা গঙ্গা যেন চোখঝলসানো পাকা বাড়ীর কণ্ঠি গাঁথিয়া গলায় পরিয়াছেন। ট্রেনের যাত্রীরা কলরব তুলিতেছে-জয় বাবা বিশ্বনাথ-অন্নপূর্ণামায়ী কি জয়।
    বা, তার একটু পরেই,

    ... বাংলাদেশের শেষ হইতেই সে একটা অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করিতেছিল। ট্রেনে ক্রমশই ভিন্ন-ভাষাভাষী ভিন্ন বেশভূষায় ভূষিত লোকের ভিড় বাড়িতেছিল।
    ভাষার ও রকমের এই ভিন্নতাটা নিতাইয়ের চোখে পড়ছে। যা পুরনো বাঙলা সাহিত্যে খুব বহুল নয় আদৌ, আমরা আগেই বলেছি। যেমন আমরা আগেই বলেছি, অন্য ভাষা ও সংস্কৃতির সামনে এসেই একটা জাতি-পরিচিতি বা আইডেন্টিটি নিজেকে নিজে বলে চিনতে পারে, তার খুব চমত্‌কার উদাহরণ আছে "কবি' উপন্যাসেই, যখন এক ভাষাগোষ্ঠী অন্য এক ভাষাগোষ্ঠীকে, তার ভাষাকে, বুঝতে চেষ্টা করে। একদিন নিতাই গঙ্গার পাড়ে গেল। বসে বসে গান গাইছিল।

    গান শেষ হইলে-অল্প কয়েকজন লোক, যাহারা শেষে আসিয়া জমিয়াছিল-তাহাদের একজন তাহাকে কিছু বলিল-তাহার বক্তব্য সম্পূর্ণ বুঝিতে না পারিয়া নিতাই সবিনয়ে বলিল-কি বললেন প্রভু? আমি বুঝতে পারতা নাই।

    একজন হাসিয়া বাংলায় বলিল-তুমি সবে এসেছ দেশ থেকে?

    -আজ্ঞে হ্যঁ¡।

    -উনি বলছেন হিন্দী ভজন গাইতে। তোমার এমন মিষ্টি গলা, তোমার কাছে হিন্দী ভজন শুনতে চাইছেন।

    -হিন্দী ভজন? নিতাই জোড়হাতে বিনয় করিয়া বলিল-আজ্ঞে প্রভু, আমি তো হিন্দী ভজন জানি না।

    বাঙ্গালীটি হিন্দী-ভাষী প্রশ্নকারী লোকটিকে যাহা বলিল, আন্দাজে নিতাই সেটা বুঝিল; বোধ হয় বলিল-হিন্দী ভজন ও জানে না।

    জনতার অধিকাংশই এবার চলিয়া গেল। যেন তাহার মধ্যে উপেক্ষা ছিল বলিয়া নিতাইয়ের মনে হইল।
    এই হিন্দি ভজনকে ঘিরে নিতাইয়ের প্রতিক্রিয়াটা ছিলই। সেটা নিয়েই সে শুয়েছিল গভীর রাতে গঙ্গার পাড়ে।

    চারিদিক নিস্তব্ধ। কেবল ঘাটের নীচে গঙ্গাস্রোতের নিম্ন কলস্বর ধ্বনিত হইতেছে। সেই শব্দই সে শুনিতে লাগিল। অপরিচয়ের পীড়ায় পীড়িত অস্বচ্ছন্দ তাহার মন অদ্ভুত কল্পনাপ্রবণ হইয়া উঠিয়াছিল-গঙ্গার স্রোতের শব্দ শুনিতে শুনিতেও নিতাইয়ের মনে হইল-গঙ্গাও যেন দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলিতেছে। কাটোয়ায়, নবদ্বীপেও তো সে গঙ্গার শব্দ শুনিয়াছে; কাটোয়ায়, যে দিন বসন্তর দেহ পোড়াইয়াছিল, সে দিন তো গঙ্গা স্পষ্ট ভাষায় কথা বলিয়াছিল। এখানকার সবই কি দুর্বোধ্য ভাষায় কথা কয়? ...

    অকস্মাত্‌ তাহার মনে হইল-বিশ্বনাথ? বিশ্বনাথই তো যে এই রাজ্যের রাজা; তবে তিনিও কি-এই দেশেরই ভাষা বলেন? তাঁহার এই ভক্তদের মতই তবে কি তিনি তাহার কথা-তাহার বন্দনা বুঝিতে পারেন না? হিন্দী ভজন? হিন্দী ভজনেই কি তিনি বেশী খুশী হন? "মা অন্নপূর্ণা'? তিনিও কি হিন্দী বলেন? ক্ষুধার সময় তিনি যদি নিতাইকে প্রশ্ন করেন-তবে কি ওই হিন্দীতে কথা বলিবেন? তবে? তবে? তবে সে কাহাকে গান শুনাইবে?

    হিন্দি আর বাংলা এই দুই ভাষা বর্গের মাধ্যমিক আন্ত:বর্গ ভূমিটাকে চিহ্নিত করছে নিতাই, বারবার। "কবি' উপন্যাসে এটা ঘটছে চণ্ডীতলা গ্রামে নয়, কাশীতে গিয়ে। আর "কবি' চলচ্চিত্র সেটাকে নিয়ে এসেছে চণ্ডীতলা রেল ইস্টিশনে। সেখানে বালিয়া আছে, যে তার বাচনে ("লাই হো মত' গালাগাল হিসাবে বেশ দড়, আমি দুচারবার লোকজনকে দিয়েও দেখেছি) ও সাঙ্গীতিক প্রতিভায় ওই একই বাস্তবতাকে খুলে দিচ্ছে নিতাইয়ের সামনে। কাশীতে ঘটমান বর্গসঙ্করতা এসে পৌঁছে গেছে চণ্ডীতলায়, রেলের দাক্ষিণ্যে, পুঁজি ও প্রকৌশলের আধুনিকতায়। ভোজপুরি লোকগীতি এসে পৌঁছে যাচ্ছে কবিগানের একই ভূমিতে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিথস্ক্রিয়া ঘটেই চলেছে, বিভিন্ন বর্গ ও তাদের পরিচিতিকে নিয়ে। এটাই রাজনের মেসোপটেমিয়া যুদ্ধ ও রেলের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট। খেয়াল রাখবেন, ব্রিটিশের এই মধ্যপ্রাচ্য অধিকার, তাকে কেন্দ্র করেই এল রেল ও মিলিটারি, সেখানেই এক মার্শালের সঙ্গে, না না ছি ইনি কোনও যুদ্ধের মার্শাল নন, একটি বাঙালি রাখাল বালক মিলে, ইনিও সত্যি সত্যি গরু চরাতেন না, আবিষ্কার করে ফেলল ঋগ্বেদের হরয়ূপিয়া। আমরা আমাদের অতীতকে জানলাম, যা আর্যদের বহু আগে থেকে শুরু। "কবি' চলচ্চিত্রের এই বিরাট মহাকাব্যিক প্রেক্ষাপটটা এসে গেছে রেলের বাস্তবতাকে এই ভাবে গেঁথে ফেলায়, কবিয়ালের সাংস্কৃতিক পটভূমির সঙ্গে। এর ভ্রূণ বা ইশারাটুকু মাত্র ছিল "কবি' উপন্যাসে, চলচ্চিত্র এই সম্ভাবনাটাকে বিস্ফোরিত করে দিয়েছে।

    হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে নেটে এখন তোলা হয়েছে পুরনো অনেক বাংলা ও অন্যান্য পত্রিকার আর্কাইভ (http://www.savifa.uni-hd.de/thematicportals/periodicals/overview.html)। ১৮৬৭ সালের, বৈশাখ বঙ্গাব্দ ১২৭৪, "বামাবোধিনী' পত্রিকার ৪৫ নম্বর সংখ্যায়, বেথুনের সাহায্যে স্থাপিত নিবাঁধই বালিকা বিদ্যালয়ের একটি আট বছরের বাচ্চা মেয়ের তিনটি প্রশ্নের উত্তর ও একটি রচনা তুলে দিয়ে "স্ত্রী-শিক্ষার উন্নতি' নামে একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। আমার পড়তে গিয়ে কেমন গা ছমছম করছিল। তখন, মাস চারেক আগে, "কবি' ফিল্মের ইংরিজি সাবটাইটল করায় হাত দিয়েছি। সেটাও মাথায় একটা পরিপ্রেক্ষিত হিসাবে কাজ করছিল। এই বাচ্চা মেয়েটির উত্তরগুলিতে একাধিক বার করে এসেছে দুটো জায়গা। এক, সীতার পতিনিষ্ঠা।

    রাম কর্ত্তৃক সীতা এত কষ্টে পতিতা হইয়াও ভ্রমে কখন রামের অমঙ্গল চিন্তা করেন নাই, ইহার দ্বারা সীতার পতি পরায়ণতার একশেষ প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে অর্থাত্‌ ঈদৃশ নির্ম্মল প্রেম সংসারে অতি দুর্ল্লভ।
    দুই, জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে কুসংস্কার ভাঙা।

    যে মনুষ্য বিদ্যোপার্জ্জন দ্বারা জ্ঞান ধর্ম্মে আত্মার উন্নতি সাধন করিতে যত্নবান হয়, এবং মৃত্যুকে উপস্থিত জানিয়া ও ঈশ্বরকে লক্ষ্য জানিয়া জ্ঞানাস্ত্র অবলম্বন করত সংসারের মোহরাশিকে জয় করিয়া জনসমাজে উন্নতিসাধন করণানন্তর ইহলোক হইতে অবসৃত হয় সেই প্রকৃত মনুষ্য নামের উপযুক্ত। ... কুসংস্কারাপন্ন স্বদেশস্থ ভ্রাতা ভগ্নীগণের হৃদয়ে সত্যধর্ম্মের জ্যোতি: বিকীর্ণ করিবার জন্য যিনি চিরজীবনের স্বাস্থ্যরূপ অমূল্য রত্নকে বিসর্জ্জন দিয়া দ্বারে দ্বারে ভ্রমণ করিতে ও সময় বিশেষে ধর্ম্মার্থে জীবন পরিত্যাগেও কাতর হয়েন না;
    "সত্যধর্ম্ম' এই শব্দটায় নিশ্চিত ভাবেই মিশনারি উপস্থিতি আছে। খেয়াল রাখবেন নিবাঁধই বালিকা বিদ্যালয় শুরু হয়েছিল বেথুনের হাতে। এটা যদি ছেড়েও দিই, অবশ্যই যে লিখছে, যে তাকে শেখাচ্ছে সেই শিক্ষক যার প্রচুর প্রশংসা আছে লেখাটিতে, এবং এই গোটাটা নিয়ে যে প্রতিবেদন লিখছে, এদের কারুর কাছেই উপরের এই দুটো জায়গার মধ্যে কোনও বিরোধ ছিল না। রামের প্রতি সীতার নিষ্ঠা এবং কুসংস্কার মোচনে জ্ঞানধর্ম এই দুটোকে এক সঙ্গে বয়ে নিয়ে শিক্ষিত হচ্ছে যে মেয়েটি, ১৮৬৭ সালে তার বয়স ছিল আট। তার মানে, ১৯১৫ সালে যখন মেসোপটেমিয়া যুদ্ধ শুরু হচ্ছে, তার বয়স তখন ছাপ্পান্ন। তার যদি ১৬ বয়সে বিয়ে ও ১৮-য় ছেলে হয়ে থাকে, তাহলে ছেলে জন্মেছে ১৮৭৭-এ, যার কুড়িতে ছেলে হয়ে থাকলে, ১৯১৫ সালে তার বয়স ১৮। তার মানে সে মেসোপটেমিয়া যুদ্ধে গিয়েই থাকতে পারে। যে পরিবারে শিক্ষার শুরু তার ঠাকুমা থেকে, সে নিশ্চিত ভাবেই জওয়ান বা কুলি হতে পারে না। আমাদের ওই ছবিতে যে ভারতীয় সহকারীরা রয়েছে সাহেব অফিসারের পাশে, তাদেরই কেউ সে হতেই পারে। যুদ্ধফেরত সে নিশ্চিত ভাবেই বাবু হয়েছিল, তাকেই কি আমরা দেখেছিলাম কবির লড়াইয়ের সভায়? শৃঙখলার প্রতি তার যেরূপ নিষ্ঠা তাদৃশ দৃষ্টে, এবং মেরুদণ্ড খাড়া করে তার বসার ভঙ্গীতে, এটাই মনে হয় যে তার কোনও ফৌজি ইতিহাস থাকলেও থাকতে পারে। উনি চরিত্রও বটে, আবার, যেমন আগেই বললাম, ছুটির দিন দুপুরে কাজ না থাকলে উনি পাঠকও বটে। হয়ত বাংলা উপন্যাস পড়ে তার অন্দরমহল এবং চাকরবাকরেরাই, কিন্তু যে পাঠক মাথায় রেখে তারাশঙ্কর লিখতেন, তিনি তাদেরই একজন। বাবু বিপ্রদাসকে মনে করুন, হেভি পড়তেন, তার লাইব্রেরিতে বন্দনা খেই হারিয়ে ফেলছিল প্রায়।

    উল্টোদিকে আমাদের রাজনকে ভাবুন। মুচি ঘরের ছেলে রাজন যদি ১৯৩৮ সালে (যে বছর উপন্যাস লেখা হচ্ছে) আটত্রিশ বয়স্ক বলে ধরে নিই, তাহলে ১৯১৫ সালে মেসোপটেমিয়া। তারপর? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই, ১৯২০ সালে শুরু হল, তখনকার ভারতবর্ষের পাঞ্জাব প্রদেশে, মার্শাল-রাখালের খোঁড়াখুড়ি। তার আগেই, ব্রিটিশ রেলের লাইন পাততে গিয়ে কুলিরা টেনে আনছিল রাশি রাশি ইঁট, সেগুলোর বিশেষত্ব একটাই, হুবহু একই মাপের সেই ইঁটগুলো জন্মেছিল যীশুর জন্মেরও কয়েক হাজার বছর আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ, রাজন, কুলি হিসাবে কাজ করে থাকতেই পারে সেখানে, চণ্ডীতলা ইস্টিশনে তার হোম-পোস্টিং-এর অনেকটা আগে। এই দুটো প্রবাহকে খেয়াল করুন। কুসংস্কার-বিরোধী নিষ্ঠাবান সীতাকে নিয়ে বাবুসমাজের জমকালো পিতৃতন্ত্র। আর এর বিপরীতে, নিরন্তর পিতৃতন্ত্র থেকে পিছলে যেতে থাকা রাজনদের নিতাইদের বাস্তবতা। তারা কুলি হিসাবে কী টেনে আনছে পিঠে, পাঁচ হাজার বছরের নাকি পাঁচ মাসের ইঁট, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। ব্রিটিশ রেলের হাত ধরে প্রকৌশল, প্রকৌশলের সঙ্গে বিজ্ঞান ও তাড়ির দোকান, তার সঙ্গে সঙ্গে প্রদেশ থেকে প্রদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে বালিয়ারা। একটা বড় সংখ্যক এসেছে সেই বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকেই, যা আধুনিক ভারতের জন্ম দিয়েছিল, তার খনিজে আর খনিজে। গাঙ্গেয় উপত্যকার অতটা অরণ্য উপড়ে আর্যরা ঢুকে এসেছিলই তো ওই বিহারের পাটনা বা পাটলিপুত্রের জন্যে, যেখানে লৌহ আকরিক আছে।

    অন্য কথায় চলে যাচ্ছি, "কবি'-তে ফেরা যাক। কুসংস্কারমুক্ত সীতা থেকে ন্যাশনাল সে?শালিস্ট মহান্ত - পিতৃতন্ত্র এভাবেই দিন কাটাচ্ছিল। এর মাঝখানে বাড়তে শুরু করল মুচি রাজন ডোম নিতাই আর ভোজপুরী মজুর বালিয়ার বাস্তবতা। "কবি' চলচ্চিত্রের জোরটা এইখানে যে সে এই অন্য বাস্তবতাটাকে নিয়ে এল সেই একই পিতৃতন্ত্রের কাছে। দর্শক তো সে-ই যে তারাশঙ্করের পাঠক ছিল, কিন্তু দর্শনীয় গেল নড়ে। যতটা নড়ার সম্ভাবনা ছিল উপন্যাস "কবি'-তে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি করে। তারাশঙ্করের অন্তর্বিরোধ, তাঁর লেখাতেই মহান্তের যে নীল চশমার কথা পেলাম, সেই নীল চশমা দিয়ে তিনি যে নিজেই দেখছেন, তাঁর শিল্পীসত্তার সমস্ত পর্যবেক্ষণ ও আবিষ্কারের পরও, তার অবস্থানই তার চোখে ওই চশমাটা গুঁজে দেয়, এই জায়গাটাই আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে "কবি' চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে। লেখাটা এবার ক্রমে গুটিয়ে আসছে। চলচ্চিত্রে আমরা পৌঁছেছি পঁয়ত্রিশ মিনিটের কিছু বেশি, তার মানে মোট দৈর্ঘের এক তৃতীয়াংশেরও কম। এখনও পরপর দৃশ্য ধরে, উপাদানগুলোকে পরপর স্পষ্টতায় নিয়ে আসাই যায়। কিন্তু কোনও নতুনতর দৃষ্টিকোণ নয়, তা হবে এতক্ষণ ধরে তুলে আনা দৃষ্টিকোণগুলো দিয়েই বারবার আলাদা আলাদা উপাদানকে দেখানো। এবং সেটা এখন আপনারা নিজেরাই করে চলতে পারবেন। আমি এই লেখাটা শুরু করেছিলাম, দেবাশিসের মত আমার ছাত্রস্থানীয় কারুর কারুর জন্যে, কেন "কবি' চলচ্চিত্রটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝাতে, ওই নানা সম্ভাব্য দৃষ্টিকোণগুলো সামনে ধরে দিতে। সেগুলো এতক্ষণে মাথায় বসেই গেছে। এর পরেই আসছে নিতাইয়ের নিমন্ত্রণ, মহাদেব কবিয়ালের কাছ থেকে, দিন প্রতি ছয় টাকা বায়নায়। টাকাটাকে বাজারদরের সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন, মনে করুন, মেলায় এসে যে মালাটা দর করেছিল ঠাকুরঝি, তার খুব বেশি দাম মনে হয়েছিল, সেটার দাম ছিল ছয় পয়সা। এই প্রথম অর্থনৈতিক রকমে সেই স্বীকারটা এসে পৌঁছতে শুরু করল, যেটা এতক্ষণ আমরা সাংস্কৃতিক রকমে দেখছিলাম।

    আগে যদি নিজে থেকে নাও পড়ে থাকে, এতক্ষণের আলোচনার পর, এবার আপনাদের নিজেদের চোখেই পড়ে যাবে ঠাকুরঝির ব্যক্তি আবেগের সেই মহাকাব্যিক মুহূর্তটা। নিতাই ঠাকুরঝিকে বলেছিল, পরে যেদিন আসবে চণ্ডীতলা গ্রামে সেদিন ঠাকুরঝি যেন নিতাইয়ের দেওয়া মালাটা ফেরত নিয়ে আসে। নিতাই রাজন আর তার বৌয়ের কথোপকথন থেকে জানতে পেরে গেছিল, সেটার সূত্রে গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে ঠাকুরঝিকে, ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ভেবেছে ও দুধের পয়সা চুরি করে কিনেছে মালাটা। ঠাকুরঝি জানত না নিতাই এটা জানে, এবং নিতাইকে সে এই অত্যাচারের বৃত্তান্ত বলার দরকারও মনে করল না, যখন নিতাইকে সে জানাল, নিতাইয়ের দেওয়া মালাটা তার সঙ্গেই থাকে, এবং সেটা সে দেবে না। সে চিতায় উঠলে নিতাই যেন খুলে নেয়। এটা সেই একই আত্মবিশ্বাস, "আমার মন' বলায় যেটা উচ্চারিত হয়েছিল। এই নারীকে "কবি' চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোন রূপারোপে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। এবং এটা কোনও ভুঁইফোড় আত্মবিশ্বাস নয়। ঠাকুরঝির বাস্তবতায় বহু অত্যাচারই চিত্রিত হয়েছে, এটা হল অত্যাচারিতের আত্মবিশ্বাস, সে জানে দুচারটে অত্যাচার বেশি বা কমে তার কিছু এসে যাবে না। সে ঠিক সয়ে যেতে পারবে। এটা কোনও রোমান্টিকতা নয়, একদম রক্তমাংসের আত্মবিশ্বাস। স্পার্টাকাস তার সঙ্গীদের যা বলেছিল, তার সঙ্গে বেশ যেতে পারে এটা। হেগেল তার ফেনোমেনোলজি অফ স্পিরিটে যে দাসের আত্মবীক্ষার কথা বলেছিলেন।

    আপনাদের চোখে পড়বে দু-দুবার বসন, একটি নারী, দুটি আলাদা আলাদা পুরুষকে চড় মারছে। সত্যি সত্যিই পর্দায় দেখানো হবে সেই দুটি চড়ই। এবং এর একবার, পুরো আলোয়, একটি চড় মারার পর, আর একটি মারার জন্যে উদ্যত হাতে অপেক্ষা করছে বসন, সেটাও দেখানো হবে। নারী আদুরে আব্দেরে হাতে চড় মারছে, বুকে কিল মারছে, এ রুটিন ভুলে যান, এটা সত্য সত্যই চড়, ব্যথা দেওয়ার জন্যে মারা। এই চিত্রনও আমি আর কোথাও দেখেছি বলে তো মনে করতে পারছি না। এই বসনের সঙ্গে নিতাইয়ের সম্পর্কের মধ্যে দেখতে পাবেন, দুটি ডিসকোর্সের বা আলোচনার, বৈষ্ণব এবং শাক্ত, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা। সাক্ষর বসনের বৈষ্ণব পদাবলীর খাতার সঙ্গে আদানপ্রদানে আসছে নিতাই। দুজনের দুটি রকম, একটি অন্যটির সঙ্গে মিশ্রিত হচ্ছে।

    যে অর্থনৈতিক স্বীকৃতির কথা আসছে এর পরেই মহাদেব কবিয়ালের নিমন্ত্রণে, সেটা ক্রমে স্পষ্টতর হয়ে উঠল। নিতাই যোগ দিল ঝুমুরদলে। সেখানে যোগ দেওয়ার পর, শিল্পের শুদ্ধসত্তা সংক্রান্ত নিতাইয়ের ধারণা, আর বাণিজ্যীকরণের ভিতরকার লড়াই, সে খেউড় গাইবে কিনা, গাইতে পারবে কিনা, গাইতে গেলে তাকে মদ খেতে হয় কিনা, এই সমস্ত প্রশ্ন আসতে দেখবেন। এবং দেখবেন, প্রথমে ডোম হিসাবে, এবং পরে, কবিয়াল হিসাবে, ঝুমুরদলের বেশ্যাদের সঙ্গে থাকা কবিয়াল বলে, নিতাই সবসময়েই কেমন উচ্চবর্গ থেকে পিছলে যাচ্ছে, হয়ে উঠেও হয়ে উঠতে পারছে না। এটাও কবি চলচ্চিত্রের নিজস্ব। নিতাইয়ের উচ্চবর্গীকরণকে এমন ঝুলিয়ে রাখা। বর্গীকরণটা যেখানে শুধুই পৃথক এবং স্থগিত হয়ে যাচ্ছে, নিতাইয়ের অনায়াস আয়ত্ত হয়ে উঠছে না কিছুতেই। এখানেও একটা ঔপনিবেশিক পুঁজির সমাজে একটি পরাধীন ভাষার ও সংস্কৃতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন জড়িয়ে যেতে থাকবে নিতাইয়ের চলচ্চিত্রায়নে। প্রচুর এই বর্গসঙ্করতা সংক্রান্ত উপাদানও আসবে। শুধু আগের আলোচনাগুলো মাথায় রেখে চলচ্চিত্রের পরবর্তী অংশটা দেখে যান। আমার ধারণা, আমার বক্তব্যের মূল প্রতিটি রকমই আপনাদের কাছে পৌঁছে গেছে। এবার আমার কাজটা আপনার, যদি এই কাজটা পছন্দ হয়ে থাকে আদৌ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩০ মে ২০১১ | ১৬৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন