এই লকডাউনের কালে ঘরে বসে টিভিতে, ইউটিউবে নানান পুরোনো হিন্দি সিনেমা দেখলাম। তাতেই এই লেখাটা মনে বুড়বুড়ি কাটছিলো। বন্ধু বিষাণের প্ররোচনায় সেই সব বুড়বুড়ি সকল সোডার মতো ভসভসিয়ে গেলাস উপচে এলো।
আমাদের নাগালে চারটি হল ছিলো - প্রদীপ, দীপ্তি, ভবানী আর মেনকা। দীপ্তি ছিল বাঙালী মালিকের। ওদের মূল ব্যবসা লন্ঠনের – 'দীপ্তি লন্ঠন'। প্রদীপের মালিকও বাঙালী, সেটা পরে জেনেছি। মেনকা বা ভবানীর মালিকের খোঁজ রাখিনি। প্রদীপের বিজনেস মডেল, পুরোনো হিট হিন্দি সিনেমা। এই মডেলে চলতো ভবানীপুরের কালিকা আর রূপালী (দুটোই উঠে গেছে)। দীপ্তি আনতো কারেন্ট "সি" গ্রেড সিনেমা। 'হিরো দারা সিং', 'রনধাওয়া', 'হিরোয়িনি' - হেলেন, নিশি, মুমতাজ(ইয়েসস আমাদের মুমুজান)। তার একটা বিশাল ক্লায়েন্টাল ছিলো। আমার নিজের মামা 'দারা সিং'-এর ফ্যান ছিলো। দীপ্তিতে প্রথমবার "এ" গ্রেড কারেন্ট সিনেমা এলো ১৯৬৯এর পূজোয় 'নানহা ফরিস্তা'। এই সময় দীপ্তিও প্রদীপের বিজনেস মডেল শুরু করলো। ভবানী প্রথম দিকে, মানে ১৯৬৮/৬৯ পর্যন্ত "বি" গ্রেড হিন্দি ছবি আনতো। ঠাকুর দেবতার সিনেমা, ঐতিহাসিক থিমে সিনেমা ইত্যাদি। চেতলার 'রূপায়ণ' ঐ মডেলে চলতো। ধীরে ধীরে সকলেই 'প্রদীপ' মডেলে চলে আসে। দীপ্তি আর ভবানীর ফ্রন্ট স্টল ছিলো ১৯৬৫ অবধি ৫০পঃ, পরে বেড়ে ৬৫পঃ হয়। সেই টিকিট কাটার লাইনও ছিল এক রোমহর্ষক বিষয়। তুমি যত আগেই লাইন দাও, ঠিক টিকিট দেওয়া শুরু হবার আগেই সে লাইন ভেঙ্গে যেতো। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত যে সাদা পোষাকের খোচোরেরা ডান্ডা চালিয়ে লাইন ঠিক করতো, তারা সেই সময়টা ফুসমন্তর হয়ে যেতো এবং ব্ল্যাকাররা লাইনের দখল নিতো। তাদের সাথে হাত পা চালিয়ে টিকিট পেয়ে হলে ঢোকার আগে শার্ট বা গেঞ্জি অবধারিত ছিঁড়তো। সেসব নিয়ে বাড়িতে নানান গপ্পো বানাতে হতো। সেই তো আমাদের সৃজনশীল রচনায় হাতেখড়ি। মেনকা ছিলো ভদ্দরলোকের হল। ওদিকে খুব একটা যেতাম না। মেনকায় আমার দেখা প্রথম সিনেমা 'আরাধনা'। সে যাকগে।
আর ছিলো নানান আওয়াজ নানা সিচুয়েশনে ওফ! সেগুলোও আমাদের সিনেমা দেখার জরুরী অংশ ছিলো। শেষ দিকে হিরো মার খাচ্ছে মাটিতে পড়ে, ভিলেন তার কোমরের দুপাশে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে "খুন পী জাউঙ্গা" বলছে - পাশে বসা সহদর্শক ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে - "মার শালার টমটমে।" কিমাশ্চর্য হিরো তাই করলো ! সেই সহদর্শক চেয়ারের উপর উঠে ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে এবং তা সাথে সাথে অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে পর্দায় !! সকলে মিলে তাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে – "লিঃ লি-ই-ই-ইঃ পুরপুরি………" কিন্তু কোশ্ন কোংকোয়ে হলো ? পর্দার হিরো কোন যাদুবলে সেই সহদর্শকের 'আদেশ' পালন করে গেলো ? আসলে, ওনার এটি চতুর্থ কি পঞ্চম শো!! হ্যাঁ, তখন অনেকেই এক সিনেমা ৫ বার ৬ বার এমনকি ১২-১৩ বারও দেখতো। নইলে কি আর এমনি এমনি ৫টা হলে একই সিনেমা ২৫ সপ্তাহ চলতো !!! অন্য এক আওয়াজের কিস্যা বয়াঁ করি। অনেক পরে 'নিশান্ত', হ্যাঁ শ্যাম বেনেগালের, দেখতে গেছি বসুশ্রীতে, ঐ ৬৫পঃতেই। শাবানা ধর্ষিতা হয়ে পড়ে আছেন অমরেশ পুরীদের গোয়ালে - খুব ছিন্নভিন্ন কাপড় থাই ছাড়িয়ে উঠে গেছে। স্যাঁৎ করে সিটি পড়তেই কে যেন চ্যাঁচালো - তোর মা বে !! আমার শোনা সবচেয়ে দুর্ধষ মন্তুব্য।
হ্যাঁ, পয়সা পড়তো প্রদীপে। যারা কলকাতায় ৬০-৭০এর দশক থেকে আছেন, তাদের কাছে প্রদীপ নামটাই যথেষ্ট। অন্যদের জন্য - প্রদীপের ভৌগলিক অবস্থান টালিগঞ্জ ব্রিজের তলায়। টালিগঞ্জ ব্রিজ মানে, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে নিউ-আলিপুরগামী রাস্তায় আদি গঙ্গার উপর যে সেতুটি আজও বিরাজ করে, সেটি। প্রদীপ হল (হ্যাঁ হল) আদি গঙ্গার পাড়ে। ফলতঃ প্রদীপের ছাদ ও ব্রিজের রাস্তা একই লেভেলে। রাস্তার ওপর টিকিট ঘর। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হতো। প্রদীপে টিকিট ছিলো ৫০ ও ৬৫ পঃ। ব্যালকনি নাই। কারণ থাকা সম্ভব নয়। থাকলে টিকিটের দাম হতো ১টাকা। ও কেউ কিনতো না। ১টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার বিলাসিতা ঐ অঞ্চলে কারুর ছিলোনা। সামাজিক অবস্থান। কে পি রায় লেন, ইউ কে মন্ডল লেন সংলগ্ন অঞ্চল। কলকাতার বেশ পুরোনো লালবাতি এলাকা ও বাংলার ঠেক। একটি সরকারী গাঁজা-চরস-আফিমের আবগারী দোকানও ছিলো। সে সত্যযুগে সরকার এসবও বেচতেন। হাজার হলেও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র। ফলে প্রদীপে সিনেমা দেখতে যাওয়ার নিষিদ্ধ যাত্রা কদাপি বড়দের কানে গেলে কান কামস্কাটকায় চালান অবধারিত। কিন্তু আমরা তবে কেন যেতাম ? নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার অদম্য আদমীয় ইচ্ছে, তার উপর কম করে ৪ থেকে ৬ বছর আগেকার হিট ছবি ওখানে আসতো। আমি ওখানেই জিতেন্দ্রর প্রথম ছবি 'গীত গায়া পাত্থরোঁনে' দেখেছি। তাছাড়া 'গুনাহো কা দেবতা', 'ফর্জ' (কু ক্কু - মস্ত বাহারঁ কা ম্যায় আশিক), এগুলোও। ওখানেই শাম্মির 'তিসরী মঞ্জিল', 'অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস', 'ব্রহ্মচারী', মনোজ কুমারের 'পত্থর কে সনম', দেবের 'গাইড', 'জুয়েন থিফ' (যে ফিল্ম থেকে দেবের মাথার সিঙ্গারাটি হাওয়া হয়ে পেতে আঁচড়ানো চুল আর জুয়েল থিফ টুপি আর বোতামওয়ালা স্টিফ কলার), 'দুনিয়া', শশীর 'হাসিনা মান জায়েগী' (শশীর নাচ দেখতে চান তো এই ফিল্মের দিলবর দিলবর গানটি দেখুন), 'যব যব ফুল খিলেঁ', ধর্মেন্দ্রর 'ফুল ঔর পাত্থর', 'ইয়কিন', ধর্মেন্দ্র একই সাথে হিরো ও ভিলেন। ভিলেন ধর্মেন্দ্রর চোখের মনি নীল। সে, হিরো ধর্মেন্দ্র সাজতে গিয়ে, কালো কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে। সেই প্রথম আমরা কন্ট্যাক্ট লেন্স শুনি। ভিলেন ধর্মেন্দ্র ধরা পড়ে এক চোখে কন্টাক্ট লেন্স পড়তে ভুলে যাওয়ায়। সে এক বিভীষিকা। ক্লোজ আপে ধর্মেন্দ্র এক চোখ কালো এক চোখ নীল। ওফ। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, পয়সা ছোঁড়া। "ইন্তেকামে আ জানে জাঁ" গানটি আর তিসরী মঞ্জিলে "আজা আজা" - আমি ৫বার চলতে দেখেছি। পয়সা পড়ছে - আওয়াজ উঠছে - ফিন সে - ফিন সে। হলের এক কর্মী এসে পর্দার সামনে থেকে পয়সা কুড়িয়ে হাত নাড়লে গান আবার চলছে। হামজোলীর "টিক টিক টিক মেরা দিল বোলে" - মমতাজ-জিতেন্দ্রর নাচ ৩/৪বার চলেছিলো। আমরা কমেডিয়ানদের জন্যও ফিল্ম দেখতে যেতাম। মেহমুদ, জনি ওয়াকর, জুনিয়ার মেহমুদ, রাজেন্দ্রনাথ, মোহন চোট্টি......। আর হ্যাঁ, প্রদীপে সিনেমা দেখার একটি ঝকমারী ছিলো আদি গঙ্গার জোয়ার। তখন জোয়ার আসতো। সে সময়ের আদি গঙ্গায় নৌকো করে বিচালী, মাটির হাঁড়ি-কলসী মায় কালীঘাটে বিয়ে সেরে বর-বউ যেতেও দেখা যেতো। সিনেমা চলতে চলতে ১০ সেকেন্ডের জন্য নোটিস ফুটে উঠতো – জোয়ার আসিতেছে পা তুলিয়া বসুন। চট করে চটি দুটি কোলে তুলে সিটে পা তুলে দিতে হতো। কুলকুল করে মা গঙ্গা সিটের তলায় বয়ে যেতেন। সময় মতন চটি না সামলালে ও চটি আর ইহ জনমে পাওয়া যেতো না। সিনেমা শেষে খেয়াল করে পা নামাতে হতো। গোড়ালী পর্যন্ত পলি পড়ে থাকতো মেঝেতে। সাবধানে না হাঁটলেই পপাত চ।
আহা সেসব দিন ছিলো অন্য। বিপ্লব-টিপ্লব এসে কি যে মাথায় অপসংস্কৃতি ঢোকালো! ধ্যুস!
প্রদীপে এখন মালায়ালী সফট পর্ন দেখানো হয়। এখন আর জোয়ারের জল ঢোকে না, জোয়ারই আসে না আদি গঙ্গায়। ফিনসে…… হয় কিনা জানি না। যাহোক, হলটি বিদ্যমান।
'জঞ্জীর' থেকে অমিতাবচন (অমিতাভ বচ্চন - অতো বড় নাম বলতে বহু সময় ব্যয়) বোম্বে সিনেমাকে নষ্ট করে দিলে। তা না হলে 'আওয়ারা'-'ওয়ক্ত'-'আদমী'-'গাইড'-'ব্রহ্মচারী'-'অভিনেত্রী'-'নীলকমল' ইত্যাকার সিনেমাই আমার কাছে বোম্বে সিনেমা। অসম্ভব রোমান্টিক। ঝাড়পিট এট্টু থাকতো শেষের দিকে, যখন ঝাড় খেয়ে হয় ভিলেন শুধরে যেতো বা "না" হয়ে যেতো। এই সব "হিংস্রতা" আমাদের কাছে রান্নায় শুকনো লঙ্কা ফোড়নের মত স্বাদ বদল করতো মাত্র। নইলে প্যার হি প্যার বেশুমার। আমরা মানে যারা ৬০এর দশকে বড় হচ্ছি, প্রেম কত্তে শিখেছি, রাজ কাপুর-দেবানন্দ-শাম্মি-রাজকুমার(জানি)-শশী-দিলীপকুমারের থেকে। না, রাজেশকে বাদ রাখলাম। আমরা খুব একটা নম্বর দেই না ওকে। হ্যাঁ, এদের ক্ষমতা ছিলো দুনিয়ার সবচে অবাস্তব গল্প/সিচুয়েশনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার। আর গানে নায়কদের নাচ/ভঙ্গী (নায়িকাদের নয় - কারণ নায়িকারা মুখ ও চুল বাঁধার কায়দা ছাড়া সবাই একই ছাঁচের) - প্রত্যকের আলাদা। পাড়ার মোড়ে মাইকে বাজা গানের সাথে ঐ ভঙ্গী দেখেই বোঝা যেতো বুলুদা কাকে দেখাচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু লোকে শাম্মির গান দেবানন্দের ভঙ্গীতেও করে দেখাতে পারতো। সেগুলোর ফরমাশ হতো - এবার জিতুর গান দেবের মতো, এবার মনোজের গান শশীর মতো ইঃ ইঃ। আর তাতেই পাড়ার ওয়াহিদা-বৈজন্তী-আশা-সাধনা-ববিতা লাট্টু। আগাম কোন মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই হিন্দি সিনেমা দেখতে বসেছি , আজও তাইই। কালই আবার, এই লকডাউনকালে (সম্ভবতঃ ১৬ কি ১৮তম বার) তিসরী মঞ্জিল দেখলাম টিভিতে। তবে হ্যাঁ, সিনেমা হলে ছাড়া দেখে মজা নেই। সিটি পড়ে না - কেউ মন্তব্য করে না - ধ্যুস। ওই জন্যই তো উত্তম-সুচিত্রা-সুপ্রিয়া পোষাতো না। শুধু গুরু গুরু করে - কেমং দাদু টাইপ।
হ্যাঁ। নিউ এম্পায়ারে সিনেমা দেখা না বললে কথকতা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এটি একমাত্র হল যার ফ্রন্ট স্টলটি (মানে, দামের হিসাবে) সর্বোচ্চ তলে অবস্থিত। ৬৫পঃ-র টিকিট কাউন্টারের থেকে প্রায় ৫০ জনের মতো খাঁচা। খাঁচায় ঢুকে লাইন দিলে টিকিট পাওয়া ৫০০% নিশ্চিত। টিকিট কেটে সিঁড়ি দিয়ে চার তলায় উঠে বসার জায়গা। সিট নম্বর নাই, ফলে আসারও নাই। আরামসে প্যাসেজের ধাপেও বসা যায় এবং ইহাই একমাত্র হল যাহার ৬৫পঃ স্টলে ধূমপান অনুমোদিত। কেসটা বুইলেন ? সোফিয়া লোরেন, উরসুলা এন্ড্রোজ, মার্চেলো মাস্ত্রোয়ানি, পিটার ওটুল, ওমর শরীফ, মার্লন ব্রান্ডো..... ভিসকন্তি, ডি সিকা, ফেলিনি, ত্রুফো দেখছি, চারমিনার ধরিয়ে - ওফ। ততোদিনে আঁতে চে দাড়ি গজিয়েছে। ফলে মস্তির লেভেলটা ভাবুন মহয়। ঋত্বিক নেই। মৃণাল ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো - বিপ্লবী পরাকাষ্ঠার চূড়ান্ত। অনেক পরে, ঐ নিউ এম্পায়ারেই ঋত্বিকের নাগরিক ১৯৭৭এ। ব্যাকগ্রাউন্ডে আন্তর্জাতিক ঝমঝম করে বেজে উঠছে। সে এক বিশুদ্ধ ফাটাফাটি। ছিলো গ্লোব, লাইট হাউস (আছে কি?) , মেট্রো(নেই), এলিট ও মিনার্ভা (এখন চ্যাপলিন - আছে কি?) । মিনার্ভায় দেখেছিলাম জাব্রাস্কি পয়েন্ট। শেষ দৃশ্যে এস্টাব্লিশমেন্ট বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, দারিয়ার কল্পনায়। সে আর এক যাচ্ছেতাই ক্যাডাভ্যারাস। গ্লোবে দেখেছিলাম সোফিয়া-পিটার ওটুলের ম্যান অফ লা মাঞ্চা - পিটার ওটুল ডন কিহাতো - কথার জায়গাই নেই। এ সবই ৬৫পঃর লাইনে। তখন হপ্তায় ৭টাকা পেতুম। ১৯৭৩-৭৫ দিনে ১টাকার হিসাব - (১০+১০) ২০ পয়সার বাস ভাড়া গোলপার্ক(সাউথ সিটি - না মল নয় কলেজ) থেকে এস্প্ল্যানেড অ্যান্ড ব্যাক। বাকি ৮০পয়সা। ৬৫পয়সার টিকিট। বাকি ১৫ পয়সা। একটা চা ৫পয়সা। বাকি ১০পয়সা। দুটো চারমিনার। খেল খত্তম।
জম্পেশ নস্টালজিয়ার নষ্টামি
শশী র গানটি অবশ্য দিলবর দিলবর নয়
ও দিলবর জানিয়ে .... তেরে হায় হাম তেরে
দিলবর দিলবর অনেক পরে আমাদের বাঙালি মেয়ে আতি নেহি স্বরূপ প্রেমিকের কোলে উঠে হিল্লোল তুলে গাইলেন সির্ফ তুম ছবি তে
পার্ট 2 আসবে নাকি এ লেখার ?
আরও হোক।
বাপ্রে! কী দুর্দান্ত কিশোর কাল, কল্লোল দা!
অনেকদিন পর কল্লোল দার লেখা পরে পুরনো সিনেমা ও হলগুলো দেখার ইচ্ছে জাগলো। সময় করে কিছু দেখে ফেলবো নিশ্চয়ই, অবশ্য অনেক হলই তো আর নেই।
ফ্রন্ট স্টলে মারামারি করে টিকিট যোগাড়, ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি, একই সিনেমা পাঁচ-ছয়, এমনকি ১০-১৫ বার দেখা, সিনেমা হলে গংগার জোয়ারের পানি, ঝুল বারান্দায় চারমিনার ফুকে সোফিয়া লরেন --- পুরো প্যাকেজটি এখনকার হোম ভিডিওর যুগে খুব অবিশ্বাস্য মনে হয়।
আর শৈশবে মামা-চাচাদের মুখে শোনা গল্পে এপারে সিরাজগঞ্জের মফস্বলে ঠিক তেমন না হলেও অল্প-বিস্তর আরেক সিনেমা বেলার সংগে সামান্য যেন মিল খুঁজে পাচ্ছি।
অনেক শুভ কামনা
মুগ্ধ, অনুভূতির স্ফুরণ
ঠিক
এই গান টা ভুলে মেরে দিয়েছিলাম
গড়িয়াহাট এই হল টা বোধ হয় আলেয়া নয় . আমার কৈশোর কেটেছে গড়িয়াহাট এ , মনে আছে আলেয়া তে নতুন বাংলা আর পুরোনো কিন্তু এ গ্রেড মুভি আনতো এত লিস্ট ৮৮ -95
আলেয়া তে বা গ্রেড লাগতে দেখিনি
আলেয়া ১৯৯৮ এ উঠে যায়
আমার আলেয়া তে দেখা যা মনে আছে
তিনমূর্তি ৩ বার
জুগনু ধরম সাব ২ বার
স্বর্গসুখ জয় ব্যানার্জী আলপনা
প্রতিশোধ মহানায়ক সুখেন বোধ হয় বার চারেক
আরেকটা আকর্ষণ ছিল পাশের ফ্যান্টাসি রেস্তোরাঁ র মোগলাই , সেটাও উঠে গ্যাছে
বি গ্রেড হবে
এনকোর! এনকোর!!
ফিন সে...
দারুণ! আরো আসুক, আসতে থাকুক।
নিউ এম্পায়ারের খাঁচা - সত্যি, সে এক কান্দি ছিল বটে।
আজ আর মনে নেই কোথায় - ফ্রেন্ডস দেখেছিলাম। কাউকে আর ওটার নাম করতে শুনিনি। পরে আর কোথাও পাইওনি।
হ্যাঁ সেই দিলবর নাচ দেখলুম বটে , তবে প্রচুর বিভঙ্গ আর কঠিন ঝঁআকুনি থাকলেও ইস্টাইল হিসাবে ওনার দাদার পুওর ম্যান্স এডিসন ছাড়া আর কিছু নয়
মনে হচ্ছে বাড়িতে দাদা বেত হাতে নিয়ে প্রাকটিস করিয়েছেন
ইনোভেটিভ স্টেপ কিছু নেই
innovative এটায় দেখুন
তো আলেয়ার কথা হচ্ছিলো যে ওখানে কি ১৯৮৫ এর আগে বি গ্রেড ছবি আস্ত নাকি ? কেউ জানেন ?
টাইগার ছিল আলু র গুদাম কনভার্টেড টু সিনেমা হল
বি গ্রেড ইংলিশ লাগতো আর ওখানেও মাঝখানে হঠাৎ দু মিনিট ঐসব সিন কাঁচি মেরে ঢুকিয়ে দিতো
কসবা বাজার এ ছিল পূর্বাশা
গুরু র আখরি রাস্তা 1 st ডে শো তে লোকে কাট আউট এ 100 টাকার মালা ঝুলিয়ে ছিল মনে আছে
আরেকটা ছিল কালিকা কালীঘাট এর কাছে আর জগু বাজার এ রুপালি
প্রদীপ , কালিকা আর রুপালি তে সস্তার টিকেট এ চেয়ার থাকতোনা , বেঞ্চ এ বসে দেখেছি . এই বেঞ্চ জোন এ বিড়ি র অবাধ স্বাধীনতা ছিল আর ফ্লোর এ খৈনির থুথু তে ভর্তি
তো মেনোকায় একবার নুন শো এ লোনলি লেডি এলো , আমরা স্কুল কেটে যথারীতি হাজির , কর্তৃপক্ষ হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলো স্কুল ড্রেস এলাও নয় . লাইট ম্যান ঢুকে টর্চ মেরে সব ইউনিফর্ম দের বার করে দিলো
কি কেলো , তো আমাদের বন্ধু কিভাবে জানি চারু মার্কেট থেকে সস্তা টি শার্ট ধার করে নিয়ে এলো তার বন্ধুর ফুটপাথ এর দোকান থেকে
তো আধ ঘন্টা পর তো স্কুল ড্রেস এর ওপর ওই টি শার্ট পরে ঢুকলাম . এদিকে হয়েছে কি এক 18/19 গোছের দেখতে কলেজ কাট ছোকরা তার ইস্কুল ড্রেস পরা বান্ধবী কে নিয়ে এসেছিলো দেখে মনে হয়েছিল কেলাস এইট ফেইট হবে
ছেলেটি র সাধারণ ড্রেস থাকায় শুধু কচি মেয়েটিকে বার করে দিয়েছে , আমরা দ্বিতীয়বার ঢোকার সময় দেখি তিনি একা একা দাঁড়িয়ে ফুচকা সাঁটাচ্ছেন . অদ্ভুত ভাবে বয়ফ্রেইন্ড টি পুরো মুভি দেখে আমাদের সঙ্গে বেরিয়ে দাঁত কেলাতে কেলাতে সঙ্গিনী নিয়ে লেক অভিমুখে যাত্রা করলেন
ওমেন্স রাইট এর একশো আট