বাংলাদেশে আবারো খুন হলেন মুক্তমনা প্রকাশক, কবি ও কমিউনিস্ট নেতা শাহজাহান বাচ্চু(৫৫)। সোমবার (১১ জুন) বিকালে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কাকালদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহজাহান বাচ্চু ‘বিশাখা’ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধীকারী ও মুক্তমনা লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শাহজাহান বাচ্চু মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ বলছে, কাকালদী মোড়ে দুটি মোটরসাইকেলে করে চার দুর্বৃত্ত শাহজাহানকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার লাশ মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাচ্চুর মেয়ে দূর্বা জাহান সোমবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘আমার বাবা শাহজাহান বাচ্চু আজকে মরে গেছে। আমাদের গ্রামে। বাবাকে কারা যেন দুইটা গুলি করে মেরে ফেলেছে।’
পরে দূর্বা জাহান ফেসবুকে আরো লেখেন, ‘আমি থানায় গিয়ে বাবার লাশ ধরে দেখে আসছি। বুক বরাবর গুলি। লাশ ঠান্ডা। পোস্টমর্টেম করতে পাঠিয়েছে।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাবাজারের প্রকাশনা সংস্থা ‘বিশাখা’ প্রকাশনী নিয়মিতভাবে নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহার মতো প্রখ্যাত কবিদের কাব্যগ্রন্থ বের করত। প্রকাশক হিসেবে সজ্জন ছিলেন বাচ্চু।
শাহজাহান বাচ্চু খুন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাংলাদেশের প্রগতিশীল মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
নিহতর বন্ধু-সতীর্থরা জানান, ধর্ম, বিজ্ঞান, কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে শাহজাহান বাচ্চুর নিজস্ব মতামত ছিল। এ নিয়ে বন্ধু মহলে তর্ক-বিতর্ক করলেও কখনো তিনি এ নিয়ে কিছু লেখেননি। তবু কিছুদিন আগে তিনি মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছ থেকে হত্যার হুমকি পান। অনেকে তাকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া পরামর্শ দিলেও বয়সের কারণে তিনি রাজী হননি। অনেকটা নিভৃত জীবন যাপন করার জন্য তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।
শাজাহান বাচ্চুকে কারা হত্যা করেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয় তবে অনেকেই এ হত্যার জন্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করছেন।
সোমবার রাতেই ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়ন’ বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক ও রাজনীতিবিদ হত্যার এই খবর প্রকাশ করে(লিঙ্ক)।
বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিহত নাম উল্লেখ না করে সোমবার রাতেই ফেসবুকে লেখেন, ‘আগে ধর্মপ্রাণগুলো চাপাতি চালিয়ে সভ্য মানুষদের খুন করতো। এখন খুন করতে শুরু করেছে বন্দুক পিস্তল দিয়ে। এটি দিয়ে বেশি মানুষদের খুন করতে পারবে। সভ্যতার কবর দিয়ে দিতে পারবে ।’
নিহতর পার্টি, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফি লেখেন, ‘কবি, প্রকাশক, সিপিবি মুন্সিগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাজাহান বাচ্চু ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মুক্তমনা লেখক ও গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ লেখেন, ‘এত বন্দুকযুদ্ধ, এত অভিযানের পরও প্রকাশ্যে রাস্তার মোড়ে খুন হন শাহজাহান বাচ্চু...। নির্বাচনের আগে কত জটিল হিসাব নিকাশ মেলাতে আরও কত প্রাণ ঝরবে, কে জানে!’
প্রসংগত, প্রায় একমাস ধরে চলমান র্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ দেড়শরও বেশী মানুষ নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের অফিসে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক, ফয়সল আরেফিন দীপন, যিনি মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করেছিলেন।
একইদিন জঙ্গি হামলায় লালমাটিয়ার কার্যালযে গুরুতর আহত হন অভিজিৎ রাযের আরেক প্রকাশক, ‘শুদ্ধস্বর’ এর আহমেদুর রশিদ টুটুল, তার বন্ধু রণদীপম বসু ও তারেক রহিম। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় তারা স্বুস্থ্য হয়ে দেশ ত্যাগ করেন।
এর আগে ২০১৫ সালেই ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলায় খুন হন অভিজিৎ।
অভিজিতের পর সিরিজ জঙ্গি হামলায় ব্লগার নীলাদ্রী নিলয়, অনন্ত বিজয় দাশ ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর বাবুকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা।