সাহেব - বিবি - গোলাম
শ্রীদর্শিনী চক্রবর্ত্তী
রঙ নীলাভ কেন সন্ধ্যের,
নাকি সন্ধ্যে বলেই নীলাভ
সে তো জানা নেই, আর জানবার মত আহত হব না বুঝছি -
ভেঙে যাচ্ছে রাস্তারা সব,
নাকি রাস্তা বলেই ভাঙছে
যারা হেঁটেছিল তারা বোঝেনি তা, নাকি ভেঙে দিয়ে যেতে বাধ্য --
পরিবর্তন - তবু সোচ্চার
কেন উন্মাদ শুধু ল্যাংটো?
কারা প্রতিবার এই ফুটপাথ থেকে বেচে দিয়ে গেছে যুক্তি -
যারা কিনছে, তারা সম্রাট,
যারা পেলোনা তারাও মন্ত্রী
তুমি দারুণ সত্যি ঠোঁটে চেপে রেখে পার হয়ে আসো তর্ক।
কেন সন্ধ্যের রঙ নীলাভ,
নাকি নীলাভ হতেই চাইছে
আমি ভীষণ উষ্ণ চায়ের মধ্যে ডুবিয়ে খাচ্ছি কৌতুক।
জ্ব র
রমিত দে
কয়েক বিঘা পেরোলেই শুকনো মাটি
এভাবেই রোগা একটা চাঁদ সাহস জোগাচ্ছে আমাদের;
গান যতক্ষন চলছে জনৈক চাদরে গা মুছছে স্রেফ একটা চিৎকার
চিৎকার অবদি মিশে যাচ্ছে ভাত আর ভানের ফেরিওলাটি....
চিড় ভেবে ছুরি থেকে সে গড়িয়ে দিল চমৎকার পাথরগুলো
লিখে কেটে দিল আলো শব্দের মানে...
বরফ পড়ার আগেই মিলিয়ে দিল মর্হাঘ্য বিন্যাস
আর টুকরোগুলো ঢাললো ভেতরের উঠোন দেখাবে বলে...
গাছ বলতেই পাখি নিয়ে ঢুকছে প্রবনতাগুলো
নদী ফেলা হচ্ছে নিঁখোজের মাপে
যে কোনো লিচুবন, যাকে খুঁজতে এসেছো, ঘাম শুকোয়, দোল খায়
বরাদ্দ রেলিঙের শেষে...
মেঘেরা মোরামে মেশেনা, চুরি করে কষা সেঁকা একটি গদ্যকবিতা ,
শুধু দু একটি ঘুড়ি নিশ্চিত হারায় লেত্তির অজুহাতে
চশমাটা খোলা থাকে তার ছাদে.....
চাঁদ আর তারায় সাজানো হয়েছে সুতোটুকু ,
যে সেজে এসেছে সে কি ডিঙি নৌকোয় এসেছে !
কাদা পায়ে এসেছে !
ভিজে যাবে ভেবে জলের দানায় লুকিয়ে রেখেছো আয়নাদের
কি করে জানবে ভেতরের জ্বর কতটা বিযুক্ত ?
বাজিগর
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
স্মরণাতীত কালে ফেলে দিচ্ছি তোমায় এবং তৎকালীন আমি কে
এখন জল বিভাজিকারা স্পষ্ট করছে দাগ
ফুলে ওঠা গাদা গাদা গল্প , ঠিক গল্প নয় , ঐ আর কি , ক্ষতের প্রলেপ
টান টান ছিলায় নিয়মিত টঙ্কার অন্তর্লীন তন্ত্রীতে
না শোনার ভানে বহু চেষ্টা ক্রমে সত্যিই বধির এখন
তোমার কুণ্ডলী হারিয়েছে , বলেছিলে , মনে আছে
তা হলে আর দ্বিধা কেন , ওলট পালট করে দাও
যা যা হবার কিমবা হবার নয়
আপন ইচ্ছাবলে দূরে যাও বা কাছেই আস
আমারও তো আছে স্বেচ্ছা লিখনের অধিকার ,
স্বেচ্ছা পাপ , প্রচুর ভুল , না মানুষী অন্ধি সন্ধির অন্ধকার
ঠোঁটে শুকিয়ে ওঠা ভেজা চুমু , অতলে ঘনায়মান তরল
ক্রমশ কঠিন হতে থাকা অবয়ব স্নেহরসে জারিত
আপাত নির্মোহ অযৌক্তিক নির্মাণ কাছে এসে প্রিয়তম
সুতরাং সিদ্ধান্ত , বাজিগর তাকেই বলে যে হেরে গিয়ে জিতে যায় ...
বিমূর্ত স্বর
ত্রিশাখ জলদাস
এক.
জেলের নৌকায় বসে তুমি উড়ন্ত মাছের খেলা দেখ,
আর কাঁকর বিছানো পথে একটি বেড়াল দৌড়ে যাচ্ছে—
এই দৃশ্য দু টি আমি পাশাপাশি
এঁকে যাচ্ছি ক্যানভাসে
বারবার বদলে যায় আদল
প্রতিটি প্রাণের ভেতরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিনাশ।
দুই.
অনন্তের নিসর্গ কন্যারা শুয়ে আছে নক্ষত্রের বনে
আর একটি অন্ধকার দীর্ঘায়িত হচ্ছে
সমর্পিত ছায়ার ভেতর।
এসবই নির্ণীত খোলসাবৃত
এবং দৃশ্যমান
ক্রমাগত ক্রিয়াশীল প্রাণে ও উদ্ভিদে...
দ্বিধান্বিত মানুষেরা ভীতু ও সাহসী,
বৃক্ষের শেকড়ে জমা থাকে জলজ আখ্যান।
তিন.
শাদা মৃত্যুর ভেতর একাকী নিঃসঙ্গতা, অনিশ্চিত রাত্রি—
কী নিপুণ ছায়া বিকশিত হচ্ছে এক খণ্ড ঘুমে;
আর আস্ত একটি আকাশ শুয়ে আছে সমর্পিত ফ্রাই-পেন
শাদা মৃত্যুর ভেতর সমর্পণ,
উড়ন্ত পাখপাখালি।
চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো প্রসন্নতা;
হাওয়ার ভেতর ঘুরছে জলকল,
খণ্ড খণ্ড নদী ভারী হয় স্নান ঘরে।
শাদা মৃত্যুর ভেতর শঙ্খচূড়, বিষাক্ত ময়াল -
ক্রমাগত দৃশ্যমান ছায়া-অন্ধ মানুষের জিভ।
শীতকাল
দীপ্তেন
মাউসকে বলি "যা তুই, নিজেই খুঁটে খা'।
বয়স তো হোলো। আর সেই বাসী হাপসোল,
সিরসিরে হাওয়া দেওয়া কৈশোরের সন্ধ্যা।
সেই আবছা হয়ে যাওয়া বৃষ্টি।
ডালমুট আর ট্রাম আর হরমোন।
আর ভাল্লাগে না রে পোদো...।
আর ইচ্ছে করে না সেই সেই সেই অক্ষরের পাঁচালী বুনতে।
বরম , রে মাউস, তুই একা একাই কী বোর্ডে
নেচে কুঁদে যাহোক কিছু লিখে ফ্যাল। একটু সৃষ্টি হোক।
বাবুদের তালপুকুরে আমি চুপচাপ ঘটি ডুবিয়ে জল গুনে যাই।
শীতকাল তো এসে গেলো।
লিবিডো (১)
সমুদ্র যেটুকু বাকি থাকে
সে জল দেখিনি আমি
সেই জল দেখেনি আমাকে ।
আমাদের স্বপ্নসঞ্চয় --
অগুনতি মাছের ঝাঁকে সমুদ্রের তটে
ধাক্কা দেয় মাঝে মধ্যে (নিয়মিত নয়) ।
সেখানে নীলের বাস
সমুদ্রাভ নীল, ঘন ঝাউ ...
দৃশ্যান্তর ঘটে --
উলটো পরেছে ভেবে একটি পাগল বুড়ি
খুলে ফেলে ব্লাউজ ...
এক শীত থেকে আরেক শীত
সায়ন্তন গোস্বামী
এক শীত থেকে আরেক শীত
ময়ান দেওয়া রোদ মেখে , আমি
বাঁচি , বেঁচে থাকি ।
পাখি ? কোথায় ডানা , জলই বা
কই , যা আছে তা শুধু খড় ,
পালকে বিপথগামী ।
এই কি তবে খাঁচা ? শিক্ ?
কুয়াশায় করে ভর , কিছুটা হলেও
প্রভু , আমিই সঠিক ।
কবন্ধকথা
উদয়ন ঘোষচৌধুরি
প্রশংসাঘুমের ফুটপাথ জুড়ে বসে আছে কিছু নীলকণ্ঠী। দানবীয় মধ্যদেশ বিদীর্ণ হয়ে ছিটকে পড়েছে রঙিনমাছ। সমস্তদিন শিকার-না-পাওয়া বাজ যাবতীয় ক্ষুধা ডুবিয়ে দিয়েছে সান্ধ্যতারল্যে। জলীয় উচ্ছলতা নারীসঙ্গীত হলে সারণী স্বৈরিণী, তার পদ্মস্থলে বিঁধে আছে দুইখানি কাঁটা।
অতিজাগতিক আলোর উড়ান ফুটপাথ জুড়ে। লেজের আছড়ায় ফেটে পড়ছে রুদ্রাক্ষ। ছড়িয়ে পড়ছে মুগ্ধতুষার। দাম্পত্য। কৌলীন্য। কুৎসিত ধানের মত পোকারা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে আমাদের রোমকূপ। একটি স্বপ্ন আমাকে ভাঁজ করে রেখে টেনে চলেছে আর একটি স্বপ্নের দিকে।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে মানুষেরা মাথাটা ঠিক কোনদিকে রাখে?
অবগাহন...
সৌনক দত্ত তনু
জল ও আমার মাঝখানে
ছোঁয়াছুঁয়ি আর লুকোচুরি
কাল মুগ্ধ হতে চেয়েছিল
আবক্ষ-শরীর,তার পুরনো বেদনা
তুমি ফেরালে তারে
সে মুহূর্তে মাথা থেকে উড়ে গেল
জল ফড়িং,মাথায় আজ ভীমরুল বাসা
নতুন অসুখ
তুমি পারো কথা ভেবে নিতে শুধু
মেঘে মেঘে সাদা ফুল ছুঁয়ে যেতে
দুরত্ব
তোমার পাশে উঁকি মারি
আমি অসহায় তবু বোঝাতে পারি না
মনে পড়ে ভুল বাসে একা উঠে পড়া
আশ্চর্য জলের শব্দ,গিরিখাত..ঝরনাজল
আমার ভুল ঠিকানায় বাড়ি খুঁজে ফেরা
এই ঝড় এই বৃষ্টি তুচ্ছ ঠেকছে আজ
তোমার চোখের কাছে দুটি চোখ রেখে
অন্ধের মতন অন্ধ ভালবাসা চাই
বৃষ্টিতে পুড়ে রৌদ্রে ভিজে
যদিও আমি জেনে গেছি সেই কবেই
চোখের প্রকৃত কোনও আলো নেই
তবুও মুগ্ধ হতে চাই একবার
পুরনো ছন্দের মতো
কাদাজল,মগ্নমাছ আর স্মৃতি হয়ে যাওয়া
শালিক জোড়ার মলিন বেদনার মতো
একবার শুধু একবার তুমি
ছায়া ভাঙো ছায়ার শরীরে
আমি খুঁজে নেব জমি বাড়ির সুলুকসন্ধান
জল ও আমার মাঝখানে
বেঁচে উঠবার আকাঙ্খা আমার...
আয়না কিম্বা ফুলঝুরি
মজনু শাহ
*
যতভাবেই চিন্তা করি, চাঁদ এক পাণ্ডুলিপি ছাড়া কিছু নয়। এবং সব পথ ঘুরে, সত্য ঘুমায় শেষে তরমুজ বনে। মরীচিকাগুলো স্কুল। মায়া আসলে তরবারি।
প্রতিটি পরিচয়ের ভেতরে আছে আশ্চর্য এক ঘুঘু। এমন রাতে, বেতের মাদুরে শুয়ে আমি তোমার দ্বিধাগুলো নাড়াচাড়া করি। এত ভিজে ওঠে কেন কোনো কোনো দ্বিধা, ওগো, কেন! একটা গিরগিটি আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। স্বপ্নরক্ষার পর পরই সত্যরক্ষার প্রসঙ্গ। এ-সময় চাঁদও তাকায়, সম্ভবত সেও কিছুটা নিহিলিস্ট।
*
নৌকা নর্তকী নুন নুনু নবমীর চাঁদ পর্যন্ত কথা গড়ায়। তবু, সব কথাই তো আর আয়না কিম্বা ফুলঝুরি নয়। খৈ-বৃষ্টির ভেতর, এসে পড়ে পঙ্ক্তিগুলো। অগ্নিচক্ষু মাছিরাও।
বিরল দর্শন তারা, শ্বেতবাক্যসকল, শিংসহ দিগন্তে উপস্থিত। ভেবেছিলাম কিছু কথা খুলে নেব রেশমগুটি থেকে, মাঝে, বাধা হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। ঘুমিয়ে পড়ি, জুড়িগাড়ি ফিরে আসে বুঝি, রঙরাক্ষস পদচ্ছাপ রেখে যায় আঙিনায়। আর ভ্রান্তি ছড়ানো জ্যোৎস্নার ভেতর সাপলুডু বোর্ড যেন সমস্ত চরাচর।
*
মাঝে মাঝে এক বাজিগরকে স্বপ্নে দেখি। একটু পরে, প্রতিফলিত চাঁদের দিকে লাফ দেবে তন্ময় হরিণ। রাত নিজেই তার উপসংহার লিখছে এখন। দুটো পাথরের মূর্তি অনেকক্ষণ চুম্বনের পর নেমে গেল সমুদ্রে। পালকের বালিশে মাথা রাখামাত্র আজকাল শুনতে পাই, তুমিই তবে সেই অলৌকিক মশলাচোর?