এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • স্বর্গ ছেঁড়া

    শাহনাজ মুন্নী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩০৬০ বার পঠিত
  • সেটা ছিল, রোদে পেঁচানো উত্তপ্ত এক গ্রীষ্মদিন। জ্বলন্ত রাস্তায় একটা হাড় জিরজিরে বুড়ো বাস চলছিল ধুঁকে ধুঁকে। বাসযাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে একে অন্যের সাথে প্রায় গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সবার গায়ে গরম জলের মতো জবজবে ঘাম, সে ঘামের স্বাদ নোনতা, গন্ধ নোনতা। বাসের লেডিস সীটে বসেছিল কয়েকজন শাড়ী পরা এবং কয়েকজন সালোয়ার কামিজ পরা লেডিস। তারা কথা বলছিল না, কেবল শ্যাওলাপড়া পাথরের ম্লান স্থাপত্যের মতো সামনে তাকিয়েছিল চুপচাপ। বাসের উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে হয়তো তারা কালো রাস্তার গা চিরে বয়ে যাওয়া হলুদ, সাদা, দাগ দেখছিল।

    বাসের মতো বাসের ড্রাইভারও ছিল বৃদ্ধ। তার তোবড়ানো গাল জুড়ে চিত্রলতার মতো লতিয়ে ছিল নিস্প্রভ সাদা দাড়ি, ঝানু গোয়েন্দার মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে চারপাশ দেখে এ্যাকসিডেন্ট এড়িয়ে ধীরেসুস্থে গাড়ি চালাচ্ছিল সে। বাসের যুবকযাত্রীরা সে কারণে ঈষৎ বিরক্ত, তারা চায় রোমাঞ্চপূর্ণ গতি এবং বয়স্করা নিশ্চিন্ত, তারা চায় স্বস্তিকর নিরাপত্তা। মধ্যবয়সীদের অবশ্য এই সংক্রান্ত কোনো অনুভব ছিল না, তারা কেউ পরিবার, কেউ ভবিষ্যত, কেউ গন্তব্য, কেউবা বস, গ্যাস, পানির বিল, চাকরি, প্রমোশন এইসব ভাবছিল। এতগুলো লোক অথচ কোনো কোলাহল নেই, সবার মুখ বিকৃত হয়ে ছিল ক্লান্তিতে।

    হঠাৎ করেই গুমোট স্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান। বাসের পেছনদিকে হৈ চৈ। শক্ত সীটে বসে যারা ঝিমুচ্ছিল তারা সোজা হয়ে বসল, মহিলারা উৎসুক হল ঘটনা জানার জন্য, তারা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির কাছে জানতে চাইল ব্যাপারটা, লোকটি তার পেছনের যাত্রীকে জিজ্ঞেস করল, সে শুধাল পরবর্তী যাত্রীর কাছে, এইভাবে জানা গেল, এক যুবক ছাত্র পরিচয় দিয়ে কন্ডাকটরকে হাফ ভাড়া দিতে চেয়েছিল যদিও যুবকের কাছে কোন পরিচয়পত্র ছিল না, এই নিয়েই এসব তর্কাতর্কি। ঘটনা জানাজানি হবার পর আবার নেতিয়ে পড়ে কথাস্রোত।

    অল্পকিছু পরেই বাসের মাঝামাঝি থেকে ভেসে আসে কান্না ও চিৎকারধ্বনি। এক ভদ্রলোকের পকেট কাটা গেছে। তিনি হাত পা আছড়ে বিলাপ শুরু করেছেন। পকেটমার নাকি তার একমাসের পুরো বেতনটাই নিয়ে গেছে মানিব্যাগশুদ্ধ। বাসের কেউ পকেটমারের শাস্তি দাবি করল না, সহানুভূতি জানাল না কেউ। ভদ্রলোকের অসহায় কান্না ধীরে ধীরে ফোঁপানীতে নেমে এল। দু’হাতে মাথা চেপে তিনি নীরবে চোখের জল ফেলে চললেন-- যে জলের স্বাদ নোনা।

    বাসের সামনের অংশ এতক্ষণ নীরব ছিল, নীরবতা ভাঙ্গল নারীকণ্ঠের গর্জনে। মহিলা তার সামনে রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বাসযাত্রীকে সজোরে ধমকাচ্ছেন,

    -এই যে, আপনি সরে দাঁড়ান তো, এভাবে গায়ের উপর পড়ছেন কেন?

    যাকে উদ্দেশ করে মহিলার এই রক্তচক্ষু, সে কোনো কথা না বলে একটু সরে দাঁড়ায় মাত্র। মহিলা এতে সন্তুষ্ট নন, তিনি লোকটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কটাক্ষে বললেন, নারীকে প্রত্যেক পুরুষই মনে করে লোভনীয় কেক অথবা পায়ের জুতো।

    লোকটি এবার কেশে গলা পরিষ্কার করে নেয়, তারপর স্পষ্ট উচ্চারণে বলে, ‘দেখুন ম্যাডাম, আমার মাথার সবগুলো চুল কালো, আর আপনার অর্ধেক চুল সাদা, শোনেন, বাসি কেক ছোঁয়ার ইচ্ছে আমার নেই, ব্যবহৃত জুতোও আমি পরি না।’

    হেসে ফেলল অনেকেই, কেউ খুব রাগ করল।

    এই জাতীয় অশোভন কথা বলার মানে কি? মহিলাদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান নাই? ভদ্রতা নাই? সৌজন্যজ্ঞান নাই? দেশ থেকে কি আদবকায়দা উঠে গেল?

    মহিলাও হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মাঝখান থেকে ড্রাইভার বাদ সাধল, তার শরীর ক্ষীণকায় হলেও কণ্ঠ সবল। দৃষ্টি সম্মুখে রেখেই বাজখাঁই কণ্ঠে হাঁক দেয় সে,

    ‘চিল্লাচিল্লি বন্ করেন, কোনখানে যামু খেয়াল নাই?’

    যাত্রীরা থেমে যায়। আবার দীর্ঘক্ষণ পথ চলা। পথের শেষ রেখায় সম্ভবত নিশ্চিত গন্তব্য, গন্তব্যে অসম্ভব সুগন্ধী শান্তি, প্রিয়তোষ জীবন, সুখের কোমল হাওয়ায় প্রলম্বিত বিশ্রাম।

    চলতে চলতে কেশে উঠে হঠাৎ থেমে পড়ে বাসটা। জায়গাটা পূর্ণিমায় ভেসে থাকা একটা অলস বিষণ্ণবাজার। ‘বাসের হৃদপিণ্ডে পানি চাই, তাই এই হঠাৎ ব্রেক’ কৈফিয়ত দেয় ড্রাইভার। কন্ডাকটর ছোটে পানি সংগ্রহে।

    ‘এই বাস কই যাইবো গো?’

    বাজারের কয়েকজন কৌতূহলী লোক গলা বাড়িয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞেস করে।

    ‘স্বর্গছেঁড়া।’

    লোকেরা বিভ্রান্তিতে চোখ নাচায়, কয়েকবার অনিশ্চিত দৃষ্টি ছুড়ে দেয় দিগন্তে, তাদের কণ্ঠে বিস্ময়,

    ‘স্বর্গছেঁড়া? নামটা তো নতুন শুনলাম, জায়গাটা কোনখানে? দয়া করে যদি বৃত্তান্ত বলেন... যদি বিবরণ শোনান...’

    এইবার একজন মহিলা যাত্রী কথা বলে, তার চশমার ফ্রেমে খেলা করে রামধনু রঙের অজস্র বিচিত্র বেলুন, মোহনীয় সুরে সে ফিসফিস করে,

    ‘স্বর্গ চেনো না, মিয়ারা, বেহেশত চেনো না, জান্নাতের কথা শুনো নাই কোনদিন?’

    ‘শুনছি, শুনছি।’

    লোকেরা বলাবলি করে, ‘স্বর্গের আছে মণিমুক্তাখচিত সোনার তৈরি দরজা, সেইখানে সকল দালানের ইট সোনা রূপায় তৈরি, মাটি খাঁটি জাফরানের, কাঁকর হইল মণিমুক্তা আর ইয়াকুত পাথর, আবে রহমতের নদী সুরম্য স্পন্দনে সারক্ষণ বয়ে চলে সেখানে, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, স্বর্গের গাছগুলো সোনা ও রূপার, ফলগুলি নিকটবর্তী, বাতাস মোলায়েম, জান্নাতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেই সোনা রূপার পাত্রে তোমার সামনে চলে আসে সুস্বাদু বেহেশতি খানা, আসে মাছের কলিজার কাবাব, আসে সুমিষ্ট ফলফলাদি, আসে শীতল পানীয় ভর্তি পানপাত্র। আরো নাকি সেইখানে আছে নূর দিয়া তৈরি অলৌকিক হুর। তারা নব্যকুমারী, অতিশয় সুন্দরী, নম্র ও নরম। তারা পরিচ্ছন্ন, স্বপ্নমানসী। হুর বালিকার মৃদু হাসিতে চারদিক আলোকিত হয়, একবিন্দু থুতুতে মিঠা হয়ে যায় দরিয়ার সমস্ত পানি...’

    ‘আহ্ স্বর্গ, যেখানে আছে আমাদের ক্লান্ত ও ভারতপ্ত হৃদয়ের প্রশান্তির পরম আশ্বাস, আছে অনিন্দ্য সুখ সৌরভ, আছে জীবনের নব রূপায়ন, মিলন মধুর অমল নিদ্রার রাত শেষে সুখ স্বচ্ছ অমলিন ভোর... আহ স্বর্গের অনুপম আনন্দময় জীবন..।’

    ‘হ্যাঁগো মিয়ারা, সেই স্বর্গেরই একখানা টুকরা ভাগ্যক্রমে ছিঁড়া পড়ছে ওই পূর্বদক্ষিণে, মহা দক্ষিণে, সেই স্থানের নামই স্বর্গছেঁড়া, আমরা সেইখানে যাবো, সেই মহাশান্তির দেশে।’

    বাজারের লোকেরা কেমন শিহরণে স্বয়ংক্রিয় গুঞ্জন তোলে,

    ‘আমরাও সেইখানে যেতে চাই, আমাদের নিয়া যান’

    ‘না, না, বাসে আর কোনো সীট নাই, একটু জায়গাও নাই, নাই, নাই’

    ‘তবে আমাদের পথের ঠিকানা বলেন, মানচিত্র এঁকে দেন, আমরা নিজেরাই স্বর্গছেঁড়া খুঁজে নিব।’

    যাত্রীদের এইবার মনে পড়ে তারা রয়েছে নিতান্তই অন্ধকারে, তারা বেকুবের মতো বলে,

    ‘আমরা তো সেই পথ চিনি না, সেই পথ চেনে শুধু আমাদের বৃদ্ধ ড্রাইভার--’

    একটা কোলাহলময় ভীড় এবার জড়িয়ে ধরে ড্রাইভারের চারপাশ,

    ‘পথের ঠিকানা দ্যান জনাব, একবার সেই সুন্দর স্বপ্নের দেশে নিয়া চলেন’

    ‘সে পথ বড় দূরের, বড় কষ্টের সে পথ’

    ‘আমরা যাব, তবুও যাব’

    ‘তবে ভাইসব, সবুর করেন, খোদ রাজধানী থেকে ঊনসত্তরজন লোকে ভরেছে এই দুর্বল যান, এক ট্রিপ দিয়া আসি, পরবর্তী ট্রিপে যাবেন আপনেরা, কেউ দরজায় ঝুলবেন না, বাম্পারে উঠবেন না, উঠলে বাস যাবে না, ভাইসব সবুর করেন।’

    জনগণ গলাকাটা মাছের মতো একটা ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে যায়, তাদের চোখ মৃত মাছের মতো ঠাণ্ডা ও ঘোলাটে রূপ ধারণ করে, বাজারের প্রাণ যেন ভেসে যায় অমাবস্যায়। বাস আবার চলতে শুরু করে। পথের কৌণিক দূরত্ব হিসাব করে ধীরে সুস্থে ড্রাইভার স্টিয়ারিং ঘুরায়।

    যেন অনন্ত অপেক্ষার সড়কে গড়িয়ে যায় দীর্ঘ দীর্ঘ সময়ের স্বেচ্ছাচার, বাসযাত্রীরা, যারা নতমুখী অস্থির ও আজব তারা ক্রমশই আক্রান্ত হয় ছোয়াচে একঘেয়েমিতে, একটু একটু করে জন্ম নেয় জাঁদরেল অসন্তোষ।

    যার শুরুটা হয় বক্রতায়, একজন যাত্রী চেহারায় যার দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও গোয়ার্তুমির নিপুণ জ্যামিতি, সে, তার ছেঁড়া ময়লা লুঙ্গি উরু পর্যন্ত তুলে ঘ্যাশ ঘ্যাশ শব্দে হাঁটু চুলকাচ্ছিল, যেন সে তার চুলকানি আক্রান্ত ত্বক ও গুমোট স্তব্ধতার উপর মনের সমস্ত ঝাল মেটাচ্ছিল, ভুলে গিয়েছিল তার চারপাশ, যেন এভাবেই ত্বকের উপর আঁচড়ে, খামচে, চুলকিয়ে সে ভেঙে দেবে তার সময়ের এই নিঃশব্দ স্থবিরতা।

    তখন হঠাৎ তার কাছেই বসা কে একজন সুবেশী ভদ্রলোক নাকটাক কুঁচকে হুংকার দিয়ে উঠল,

    ‘এই ব্যাটা, লুঙ্গি নামা, আদবকায়দা, শরম-লেহাজ কিছুই নাই? অসভ্য, বদমাইশ কোথাকার ..’

    অকম্মাৎ ধমকে থতমত খেয়ে লোকটি তাৎক্ষণিক লুঙ্গি নামাল ঠিকই কিন্তু সেই সাথে উদ্ধত ঘাড় বেঁকিয়ে জানতে চাইল, কোন সাহসে তাকে অসভ্য, বদমাশ বলা হয়েছে? গরীব বলে এই অপমান? এক কথা, দু কথা থেকে এইসব কথা কাটাকাটি গড়াতে গড়াতে গিয়ে থামল বৃদ্ধ ড্রাইভারের ওপর,

    ‘ওই ড্রাইভার ব্যাটা আমাদের আর কত দূরে নিয়ে যাবে? কোথায় সেই স্বর্গছেঁড়া? আর কতক্ষণই বা লাগবে ওখানে পৌঁছুতে?’

    বৃদ্ধের মুখে শিশিরের মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম, চেহারা মরা ঘাসের মতো ফ্যাকাশে,

    ‘শান্ত হোন, ভাইসবেরা, শুনেন শান্ত হয়ে, সম্ভবত আমরা পথ হারাইছি’

    মুহূর্তে সমস্ত বাস জুড়ে নামে বনভূমির নিস্তব্ধতা, একটি ভয়ার্ত কণ্ঠ যেন গহীন পাতাল থেকে আর্তনাদ করে উঠে,

    ‘কি? কি বল্লা?’

    ‘কথা বোঝেন নাই? আমরা পথ হারাইছি’ বৃদ্ধ পুনরায় স্পষ্ট কণ্ঠে বলে।

    একটা সবুজ বৃক্ষ যেন চোখের নিমেষে শুকিয়ে যায়, বার বার সে গাছের পাতা ঝরে। চূড়ান্ত এক অসহায়ত্ব সকলকে গ্রাস করে নেয়। দ্রুত ধ্বংস হয় সমস্ত প্রত্যাশা-আনন্দ-স্বপ্ন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একদল হতাশ মানুষ ফুঁসে ওঠে হিংস্রতায়, তাদের সমস্ত আশা যেন ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। সবাই প্রতারিত হওয়ার অনুভব নিয়ে নির্মম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃদ্ধ ড্রাইভারের উপর। মূহূর্তে কি যেন ঘটে যায়। ড্রাইভারের কপাল ফেটে দরদর করে রক্ত পড়ে, তার দুর্বল হাত পা ভারসাম্য হারায়।

    ‘প্রতারক, বাটপার, ঠগ, জোচ্চোর’-- এমন গণ-চিৎকারের মধ্যে বৃদ্ধ ড্রাইভারের দুর্বল গোঙানী চাপা পড়ে যায়। হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা যাত্রী তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠেন,

    ‘ওরে মারামারি করিস না, থাম্, বুড়াকে মারলে এইখান থেকে ফিরবি কেমনে? এইখানে, এই অকূল পাথারে যে আটকা পড়বি সবাই, ওরে ছাড়, ছাড়রে বাপধনেরা, রক্তারক্তির ফল ভালো না, তোরা থাম, থাম তোরা।’

    ধীরে ধীরে উন্মত্ত মানুষগুলি যেন সম্বিত ফিরে পায়। কোমলমতি মহিলারা এগিয়ে আসে বৃদ্ধ ড্রাইভারকে শুশ্রূষা করতে, কিন্তু তারা অচিরেই টের পায় বৃদ্ধ ড্রাইভার সবার দৃষ্টি এড়িয়ে চলে গেছে নাগালহীন ঊর্ধ্বে, নিঃশব্দে। চারপাশে তখন নোনা বাতাসের বিবর্ণ দাপাদাপি, নারীরা সুর করে বিলাপ করে, পুরুষেরা বুক চাপড়ায়।

    ‘এই দেশ তো চিরসন্ধ্যার দেশ, এখানে রাতও নামে না, সকালও হয় না’

    কন্ডাকটরদের একজন চারিদিক জরিপ করে ঘোষণা দেয়।

    বাসযাত্রী যুবকেরা সকলের উদ্দেশ্যে ইতস্তত রংচটা সান্ত্বনার কথা বলে। এইভাবে সেই অচেনা ধূ ধূ উপত্যকায় কাটে অনেকটা সময় যদিও কতটা সময় তা ঠিক বোঝা যায় না। নোনা ঘাম, নোনা চোখের পানি ক্রমেই বাতাসকে করে তোলে আরো ভারী, আরো লবণাক্ত, আরো আর্দ্র। ঝড়বৃষ্টিকে সঙ্গী করে নোনা বাতাস প্রবল দাপটে ডানা ঝাপটায়। ঘন, বিষণ্ণ হয়ে নামে অন্ধকার, কিয়ৎক্ষণ পর শূন্য জীর্ণ বাসটি পড়ে থাকে একেলা। সব মানুষেরা কিংবা বলা চলে স্বর্গলোভী বাসযাত্রীরা, দিগবিদিক ছোটে আশ্রয়ের খোঁজে, কেউ হয়তো ফিরে যায় নিজস্ব নির্ধারিত সীমানায়, কেউ হয়তো পথ হারায় আর প্রাচীন বিধ্বস্ত বাসটি চুপচাপ ভিজতে থাকে।

    তারপর অবিরত অক্ষম দিন যায়। সেই বাজারের লোকেরা অপেক্ষায় থেকে থেকে হয়ে যায় কঠিন শুষ্ক সারি সারি পাথর এবং একদা আগুনবরণ ফাগুন মাসের শেষ তারিখে ভোর সকালে রাজধানী শহরের প্রান্তে এসে দাঁড়ায় একটা জরাজীর্ণ বৃদ্ধ বাস। দুইজন তরুণ কন্ডাকটর লোকজনের কানে কানে শোনায় ‘স্বর্গছেঁড়া’র মধুময় কাহিনী। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসটার পেট ভরে উঠবে। স্বপ্নবাজ যাত্রীরা দাঁড়াবে ঠাসাঠাসি করে। বেলা দ্বিপ্রহরে একজন সফেদ সাদা বৃদ্ধ ড্রাইভার ধীরে ধীরে বাস ছাড়বে ‘স্বর্গছেঁড়া’-র উদ্দেশ্যে।

    "নির্বাচিত গল্পপাঠ (প্রথম খণ্ড)" থেকে নেওয়া (https://www.guruchandali.com/book.php?&page=3 )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ৩০৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৪৪92319
  • এমনি করেই বুঝি স্বপ্নবাজ মানুষেরা উঠে দাঁড়ায়,  করোনাকালের চিরসন্ধ্যার পর। যেন খুবই প্রাসঙ্গিক এই বাসযাত্রা।  

    এপারে নয়ের দশকের কবি, সাংবাদিক সহকর্মীর লেখা অনেকদিন পর পড়লাম। বইটিও সংগ্রহ করতে  হবে।  গুরুতে আরো লিখুন। 

  • একলহমা | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১১:৫৮92348
  • বা:! খুব ভালো লেখা।

  • রঞ্জন | 172.69.***.*** | ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৩:১৫92356
  • অসাধারণ কলমের জোর । আপনার লেখা আরও পড়তে চাইছি।

  • najmul hasan papon | 14.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৬92455
  • ইয়াবা চাই
    পাই কোথায় ?
  • সুদেষ্ণা মৈত্র | ২৮ এপ্রিল ২০২০ ১০:১১92759
  • 'স্বর্গছেঁড়া' নামটি চমৎকার।আমিও স্বপ্নবাজ।লেখাটিও সার্থক।শুধু ওই হুর পরী'টুকু বদলে ফেলব,স্বপ্ন যখন আমার এবং আমারই

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন