আমি মোটেই এইসব লিখতে চাইনি। একটাই কথা আমার বলার ছিল, লেখার অনুরোধ পেয়ে প্রথম যে কথাটা লিখেছিলাম, সেটা হল ‘আমি নবারুণ সেভাবে পড়িনি।’
এখন ব্যাপার হল ঐ যে সেভাবে পড়িনি কথাটাকে অনুরোধকর্তা পাত্তা দিলেন না।
অথচ এই ‘সেভাবে’ কথাটাই সব ও সত্য। আমি নবারুণের লেখার অতি অদীক্ষিত পাঠক। যেভাবে পড়লে নবারুণ যা লিখতে চেয়েছিলেন ঠিক সেইটা নিয়েই কথা বলা যায়, মতাদর্শ-সাহিত্যের যে দুর্লভ ট্রানজিশন সত্যিই তাঁর লেখায় সফল ভাবে এসেছে, তা নিয়ে সেমিনাল আলোচনা করা যায়; সেভাবে আমি নবারুণকে পড়িনি। তথ্য, কল্পনা, পরাবাস্তবের যে চতুর মিশেল তিনি তৈরি করেছেন তার মধ্যে যে রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে তা অনুধাবন করার মতো ব্যাকগ্রাউন্ড পড়াশুনো-ও আমার নেই। প্রথম পাঠে নবারুণ আমাকে তাঁর গদ্য পড়তে বাধ্য করেছেন তাঁর গদ্যের শাণিত স্মার্টনেস দিয়ে। বেশির ভাগ সময়েই নবারুণের গদ্যের কথকতা অসম্ভব সুচিন্তিত, যত্ন করে গড়া, পলিশড, বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনার চিত্রকল্প তৈরি করা কিংবা একটি আখ্যানকে অন্য একটি আখ্যানে জুড়ে দেওয়া, খুবই আকর্ষণীয়, এক কথায় দারুণ স্ট্রীট স্মার্ট লেগেছে। (এই প্রতিক্রিয়া থেকে আমি কাঙাল মালসাট বা পুরো ফ্যাতাড়ু সিরিজকে বাদ রাখছি) ঠিক কি লিখতে চেয়েছিলেন নবারুণ তা তিনি বারংবার বিভিন্ন লেখায় ডিফাইন করেছেন, পাঠকের জন্য স্পেস কম রেখে, নিজেই তিনি বলেছেন, তাঁর গদ্যের উৎস শুধুই আনন্দ দেওয়া বা নেওয়া নয়। "আরও গভীরতম এক অ্যালকেমি যেখানে বিস্ফোরণের ঝুঁকি" রয়েছে, "রাস্তার কুকুরদের শীতকালের বরাদ্দ রোদ কেড়ে নেবে হাইরাইজ আর নিরাপদ সাহিত্যের ঢ্যামনামি করব"…"এটা হয় না"। এইখানে এসে নবারুণের গদ্যসাহিত্যের সঙ্গে পাঠক হিসাবে আমার রাস্তা ভাগ হয়ে যায়। যে সাহিত্য পূর্বনির্দিষ্ট পরিণতি নিয়ে গড়ে ওঠে তার সঙ্গে আমি-পাঠকের ঝগড়া আছে। মানে, ঠিক আছে, তুখোড় সব হিউমার, ঝকঝকে ভাষা, প্রতীক এবং পরাবাস্তবের সঙ্গে তথ্যের চমৎকার মিশেল, একটা ধাঁধা সমাধানের চ্যালেঞ্জ, সুচতুর গঠনে পাঠককে একটা ল্যাবিরিন্থ-এর মধ্যে দিয়ে হাঁটানোর তাগিদ নিজের টার্গেটে পৌঁছে দেওয়ার আগে, কিন্তু টার্গেটটা সুনিশ্চিত। একটা বিস্ফোরণ শেষ অব্দি ঘটবে। এই বিস্ফোরণটা নবারুণ ঘটান, সব লেখাতেই, কিন্তু বিস্ফোরণগুলোকে না আমি বিশ্বাস করতে পারি, না গোটা প্রসেসে নিজের জায়গাটা খুঁজে পাই। যে লোকগুলোকে তিনি ব্যবহার করেন তাদেরও আমি চিনতে পারি না শেষ পর্যন্ত। এই প্রি-প্ল্যানড লেখায় আমি, পাঠক হিসেবে যে সহজিয়াত্ব খুঁজি তা পাইনা। গদ্যের মধ্যে যে আত্মমগ্নতাও চাই, যে সততাও চাই, যাতে চরিত্রেরা নিজেরা গড়ে ওঠে, সেটা গাদ্যিক নবারুণ আমাকে ভীষণ অল্প অফার করেন। বেসিক্যালি সেই এক্স ফ্যাক্টরটা খুঁজে পাই না আমি প্রথম পাঠে। সেটার সাথে আমার মেয়ে হওয়ার কতোটা যোগাযোগ আছে বলতে পারি না। তাঁর গদ্যসাহিত্যে চরিত্র এবং পাঠকের উপর একটা প্যারালাল কন্ট্রোল এক্সারসাইজ করেন নবারুণ, করে মজা পান। আমি সেটা উপভোগ করিনি।
এই কন্ট্রোল সব চেয়ে কম রয়েছে হয়তো, আমার পড়া লেখাগুলির মধ্যে, হারবার্টে। এই একটি লেখায় নবারুণ তাঁর মায়াকে দৃষ্টিগোচর রেখেছেন। তাই আবার দ্বিতীয় পাঠে যখন হারবার্ট পড়ি, চোখে পড়ে প্রতি পরিচ্ছেদের মুখবন্ধ হিসেবে কালানুক্রমিক কবিতার ব্যবহার। চোখে পড়ে ‘হারবার্ট দেখতে পেত বিকেল ফুরিয়ে গেলে যখন ছায়া ছায়া হতে থাকে, একটা দুটো করে আলো জ্বলে, উনুনের ধোঁয়া নদীর মতো ভেসে যায়,তারও একটু পরে ঐ ছাদটাকে আর ফাঁকা বলে মনে হয় না’ বা শ্যাওলা পড়া ‘ব’ অক্ষরটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। ‘কিছু যেন একটা বলার ছিল আর এই বাড়িতে ঐ চিলছাদটা নেই’ অথবা ‘দোহারা চেহারার একটি ছেলে এসেছিল একদিন। তার মা-র জন্যে। সদ্য বোধহয় কলেজে ঢুকেছে। যাওয়ার সময় বলে গেল-যা কিছু আপনি বলছেন সবই ভেগ। একটা কংক্রিট কথাও বলতে পারেননি। আসলে আমার আসাটাই উচিত হয়নি। ছেলেটি চলে যাবার পরে হারবার্ট কিছুক্ষণ চুপ করে করেছিল।
তারপর বলেছিল - আসাটাই উচিত হয়নি। বাপের বানচোৎ ছেলে। আমি আসতে বলেছিলুম?’
এই যে অন্যতর দৃষ্টির ঝলক, এই বোধটা হারবার্টের কাছে কতটা প্রত্যাশিত? নবারুণ হারবার্টকে ঠেলে দ্যান তাঁর নিজস্ব বোধের ডুবজলে, সেখানে মাঝে মাঝেই সে ছটফট করে। অচেনা সেই লেয়ারগুলো, যেগুলো আমরা জানিনা ঠিক কোথায়, কিন্তু হারবার্টের সেগুলো আছে, আসলে প্রতি মানুষেরই আছে, শুধু সেগুলোকে ভাষায় সংহত করতে একজন কবির দরকার হয়। একেকটা ছোট্ট ঘুলঘুলি যেগুলো দিয়ে হঠাৎ আলো আসে। এসেই নিভে যায়। এই ধূসর স্পেসগুলো দেওয়ামাত্র একটা দ্বিতীয় লেয়ার তৈরি হয়, ওতপ্রোত একটা কবিতার স্রোত, এই ভাষা হারবার্টের নয়, লেখকের। এই ধোঁয়ার মধ্যে পাঠককে দাঁড়াবার এবং গল্পকে বদলে নেওয়ার সুযোগ ব্রেডক্রাম্বসের মতো ছেড়ে ছেড়ে যেতে থাকেন লেখক, আমার মতো কবিতাভিক্ষুর জন্য। যে আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবীতে প্রতি জীবনের মধ্যে স্ফুলিঙ্গ থাকে এবং একসময় ফেটে পড়বেই তারা, পৃথিবীকে বদলে দেবে, বদলের জন্য বিস্ফোরণ অনিবার্য, আমার মতো যারা জ্যাঠাইমার গান শুনতে পায় - সখি, কেমনে যমুনাজলে যাই, আর আর পাগল জ্যাঠামশাইয়ের চোখের মমতা যাদের কাছে খুব দামী মনে হয়, মায়ার টান চিলছাদ থেকে কাকের ডাক সবাইকে ছুঁয়ে যায়, সেইটুকু প্রতিবিপ্লবই যাদের কাছে যথেষ্ট, কারণ আমরা যারা জানি সকলের বিছানার নিচে বিনুর ভূত বিস্ফোরক হয়ে লুকিয়ে থাকে না, সেই আমাকে গল্পটা বদলে নেবার স্পেস দ্যান নবারুণ শেষপর্যন্ত। তিনি নিজে এই সুতোগুলো লুজ এন্ডের মতো ফেলে যান। আমি তা তুলে নিই। আমার পঠনের জায়গাটুকু খুঁজি। তো একে কেউ মেয়েলি পঠন বলতে পারেন, আমি আপত্তি করবো না। নবারুণের গদ্যের আখ্যানের সাথে আমার সখ্যতা হয় না, কিন্তু লেখক গদ্যের মুঠি আলগা করা মাত্র আমি টুকরো কবিতা খুঁজে পেতে থাকি, সহজিয়া নবারুণকে খুঁজে পেতে থাকি। সেই চোখে খুব মমতা। নবারুণ বলেন ‘আমার মনে হয় এদের কথা যদি কলমে তুলে না ধরি তা হলে জীবনটা একটা বেইমানের জীবন হয়ে যাবে’। কিন্তু ‘এদের’ কথা ঠিক কতটা লেখেন তিনি আর কতটা নিজের কথা, তা নিয়ে ধন্দ আমার থেকে যায়। যাই হোক, নবারুণ কি লিখবেন তা বলে দেওয়ার আমি কে? কিন্তু তিনি যে ঐ সুতোগুলো তুলে নিলেন না তার দুঃখ আমার যায় না। যে মুহূর্তগুলো জীবন হয়ে উঠতে পারত সেগুলো ছেড়ে অবলীলাক্রমে কোনো এক কমিটেড পরিণতি খুঁজতে যান তিনি, যা পরাবাস্তব হয়, কিন্তু জীবন হয় না।
আমি আমার নবারুণ পাঠের চিলছাদ খুঁজে নিয়েছি কবিতায়। হারবার্টের একটা চিলছাদ ছিল, সেই চিলছাদে সে হাতের শিরা কাটে না, কাউকে দোবেড়ের চ্যাং দেখাতে চায় না, ফেটে পড়ে না, বোকাসোকা একটা ছিটিয়াল মানুষ হয়ে সে বেঁচে থাকে। আমি তুমি নবারুণ প্রতিমা কিংবা সোমনাথ সবারই একটা চিলছাদ থাকে। মাঝে মাঝে সেই চিলছাদ আমাদের বাঁচায়, যখন আমরা চিত হয়ে শুয়ে একটা কেটে যাওয়া ঘুড়ির মৃত্যুদৃশ্য দেখি, সেই চিলছাদটা আমাদের আড়াল দেয় বিদ্যুৎগ্রস্ত তারের পাশে লুটিয়ে পড়া মাতৃদেহের বাস্তব থেকে, রেহাই দেয় তুমুল শিলাবৃষ্টির থেকে। ‘প্রত্যেকবার ভোটের দিন ও যখন কোথাও না গিয়ে চিলছাদে বসে থেকেছে। সেটা ওর কাছে বিনুর প্রতি ট্রিবিউট বলে মনে হয়েছে।’ ট্রিবিউট? এটি নবারুণেরই বোধ, হারবার্টের নয়, যা হারবার্টের মধ্যে ভুল করে ঢুকে পড়ে। গদ্যের সচেতন নির্মাণের মধ্যে এইরকম ছোট ছোট স্পেস উঁকি মারে, কবিতার চারা নিয়ে। আমার নবারুণ পড়া, অতঃপর, বদলে যায়। এবং বদলে গেলে সেইসব লুকোনো অবিশ্বাস্য পদ্যপংক্তি চমকে ওঠে:
‘চলে যাচ্ছি ট্রামলাইন
চলে যাচ্ছি ফোয়ারা
চলে যাচ্ছি জেব্রা ক্রসিং, বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাফিকের আলো,
বর্শা দিয়ে বানানো রেলিং
চলে যাচ্ছি আকাশে কাটাকুটি খেলা কেবলের তার
রোলের দোকানে, তাওয়ার এরিনাতে খণ্ড খণ্ড ক্লাউন মাংসের ওলট-পালট খাওয়া,
চলে যাচ্ছি হতভম্ব জলের কল, ঝাঁঝরি, পিঁপড়েতে খেয়ে নেওয়া গাছের গুঁড়ি, দাঁত উপড়ে নেবার চেয়ার,
চলে যাচ্ছি, চলে চলে যাচ্ছি দলে দলে’
[লুব্ধক, নবারুণ ভট্টাচার্য]
‘জল কথা বলে। জল কথা না বললে গাছ, প্রাণী, মানুষ, ওরা কেউ থাকতে পারত না।
.....
তুমি যখন জলকে স্পর্শ করো, তখন আরো কত কী যে তোমাদের স্পর্শ করে তোমরা ভাবতে পারবে না।
তোমরা কি মনে করো জল মৃত? তার প্রাণ নেই?
.....
জল বিষমুক্ত হতে চায়। নিজের চেষ্টাতেই সে বিষমুক্ত হয়
মানুষ .....জলকে আহত করেছে, কিন্তু জল
সবসময়
মানুষকে ক্ষমা করে এসেছে, জানো?’
[খেলনানগর, নবারুণ ভট্টাচার্য]
‘কেনাকাটা। আমি শুধু ভাবি
মানুষ কত সাজে সাজতি চায়। এই দেকলাম মশানপীর মা কালী তো ঐ দ্যাখো
টঙ্গর বাশুলী মহাকাল, গোলকনাথ, রতিপতি কামদেব,
পঞ্চ বেতাল, ভুজঙ্গ জননী, পতরচণ্ডী, চামুণ্ডা, ভূতভবেশ্বরী সব ঘোরাফেরা করতিছেন
উঃ ডাইনে ধবলদেবী তো বাঁয়ে আসে কালভৈরবী,
ওলাবিবি, মড়িবিবি, ঝেঁটুনেবিবি, আজগৈবিবি, বাহড়বিবি, আসাবিবি তারপর তোমার গে
মানিকপীর, যাঁতাল, মাকাল, বিবিমা, খুকিমা সব দরশন হয়ে গেল -
এইবার ঘরে চলো মিতিলবাবু।’
[ভোগী, নবারুণ ভট্টাচার্য]
কবি নবারুণকে চেনা বেশি সোজা। তাঁর কাব্যের সঙ্গে আমার সখ্যতা হয়।
‘খড়-কাঠের বাড়ি
বাড়িটাতে ছিল
একটাই ঘর
রামধনু উঠত আকাশে
যেন ভাঙা চুড়ি
ও হ্যাঁ, ঐ ঘরটাতে থাকত
একটা বুড়ো আর তার বউ
একটা বুড়ি
একদিন খড়-কাঠের বাড়ির দরজাটা
উড়ে চলে গেল
তারপর খড়-কাঠের ছাদটাও
রাস্তা আর আকাশ
যখন দখল করেই নিয়েছে
কি আর করা
সেই বুড়ো আর বুড়িটাও
উড়তে উড়তে আকাশে চলে গেল।’
[খড়-কাঠের বাড়ি]
‘আমি একটা লোক
আমি একলা লোক
আমার একটা নামও আছে
কেউ কেউ নামটাও জানে
আর সেইখানেই যত মুশকিল।’
[আমি - দুই]
কিম্বা
‘বুর্জোয়া বন্দরে
সেধে ডিউটি-ফ্রি অবসাদ ক্রয় করি
বিক্রি করি মৃত কবিতার মাংস
ব্রয়লার কাহিনী বা কবন্ধ-আখ্যান
লজ্জা বলে কিছু নেই
গণিকানগরে’
[আমি - এক]
তো এই নবারুণকেই আমি পড়বো এবং মনে রাখবো, গদ্যে খুঁজে খুঁজে পড়বো এবং পদ্যে গদ্য এড়িয়ে পড়বো, কারণ নবারুণের বেশিরভাগ কবিতাই অকৃত্রিম। এবং দুঃখও কিছুটা থেকেই যাবে যে অদীক্ষিত ও অবিশ্বাসী পাঠক হওয়ায়, হয়তো আবেগ-জোবড়ানো পাঠক হওয়ায়, তাঁর গদ্যের প্রকৃত শক্তি আমি বুঝতে পারলাম না, ওদিকে গদ্যের শক্তিকে অনেকটা উপরে ঠাঁই দিতে গিয়ে কবি নবারুণ আমাকে তাঁর সবটা দিলেন না। আধ-লাগা শঙ্খ। কেন যে আমার মনে হয় ভোগী কিংবা হারবার্ট কিংবা লুব্ধক আসলেই একেকটা কবিতা হতেই পারত! আসলে কোথাও একটা প্রবল ফারাক ….. যে পিতা সন্তানের মৃতদেহ শনাক্ত করতে ভয় পায় নবারুণ তাকে ঘৃণা করেন। আমার যে ঘৃণা হয় না, কষ্ট হয়। ঘৃণা করতেও তো কেউ কেউ কষ্ট পায়। আমাকেও কবি নবারুণ পছন্দ করেন না - আর আমার খুঁজে নেওয়া কবিকেও তিনি অস্বীকারই করেন -
‘তোমাকে বোকা বললে
পুরোটা বলা হল না
ওয়েস্টপেপার বাস্কেটরাও
চিৎকার করে বলছে -
তোমার কবিতা তারা নিতে চায় না’
[ওহে কবি]
কিন্তু তার পরেও সযত্নে সে সব কাগজ নিজেই ভরান তিনি, যা বাজে কাগজের ঝুড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। সে স্ববিরোধিতা থাকায় নবারুণকে একটু বেশি মানুষ মনে হয় -
"কেন চেয়ে আছ গো মা
চিত হয়ে শুয়ে টেবিলের ওপরে
মাথায় রক্তমাখা, ব্যান্ডেজ না পতাকা
কিছু কি দেখছ তুমি? ...... বলতে চাইছ কোনো কথা?
না কি শব্দহীন মর্গে দৃশ্যমান ঠান্ডা নীরবতা।
না-শোনাই ভালো ঐ ঘাতকের নির্লজ্জ দামামা
... ...
কৃষ্ণকের হলুদ, আকাশে বাটনার ছোপ,
শিলাবর্ষণের ডগর
সব তোমার
শিশিরফোঁটার ছোটো-ছোটো হাত পা,
চমকানো গঙ্গাফড়িং
মেঘলোকে উড়ন্ত বিদ্যুৎ
সব তোমার
সমুদ্র-থেকে-উঠে-আসা শাঁখা,
দুধ ও কাজলের দেয়ালা
গঙ্গাপুজোর মেলার আলো
সব তোমার
রাতের উঠোনে উলু, হ্যাজাকে বিবাহপালা,
মাদুরের দেহস্পর্শ
সব তোমার
সব তোমার সব তোমার সব তোমার সব তোমার"
[অভাগীর স্বর্গ]
এমনভাবে দুহাতের অঞ্জলি ভরে দেবার ক্ষমতা যাঁর করায়ত্ত তিনি কেন মুঠি কৃপণ করে রাখলেন? আর এও মনে হয়, যে জন্য রাখলেন, তা কি সফল হয়েছে কোথাও? তিনি যাঁদের হয়ে সওয়াল করে গেলেন, অ্যাকাডেমিক আলোচনার বাইরে তাঁদের কোনো কাজে কি আসবে নবারুণের লেখা? কোনো কবি বা কোনো কবিতা তো শেষ কথা বলে না! কোনো প্রতিক্রিয়াও কি আনে? শেষ অব্দি আকাশের বোমারু বিমানকে পরম বিশ্বাসে পাখির ঝাঁক ভেবে নেওয়া মানুষরাই তো আমরা।
(এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পাঠপ্রতিক্রিয়া, আলোচনা-সমালোচনা নয়।আগেই বলে নিয়েছি, উপযুক্ত বিশ্লেষণী লেখার মতো জ্ঞানগম্যি আমার নেই। এই বিদেশ বিঁভুইয়ে কবিতার পাতা স্ক্যানিয়ে দেবার জন্য সোমনাথকে ধন্যবাদ। আরেকটি কথা: আমি গদ্যের মধ্যে থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করে সেগুলি কবিতার মতো সাজিয়েছি, এইটুকু বলার জন্য যে এগুলো যেন এক একটি স্বতন্ত্র কবিতা। আশা করি তাতে কোনো কপিরাইট ভায়োলেশন হয়না।)