এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • রুটি ও গোলাপ চাই

    দোলন গঙ্গোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩০৯৯ বার পঠিত
  • আজ সকাল থেকে পুলিস-পিসিকে মনে পড়ছে। পুলিস-পিসি আমাদের বাগবাজারের বাড়ির প্রতিবেশি ছিলেন। পুলিস-পিসি লালবাজারে কর্মরতা ছিলেন।সে আমলে মানে সত্তরের দশকের শুরুতে মহিলা পুলিস সচরাচর দেখা যেত না।আমাদের চারপাশে অন্তত ঐ একজনই ছিলেন।পুলিশ-পিসি ছিলেন অবিবাহিত, কড়া ধাঁচের মানুষ। আমরা পাড়াসুদ্ধ কচিকাঁচারা ওকে ভয় পেতুম।শুধু ছোটরাই নয়, পাড়ার বড়রাও, এমনকি মুরুব্বিরাও পুলিস-পিসিকে বেশ সমঝে চলত।মহিলারা ওর সঙ্গে খানিকটা সম্ভ্রম আর খানিকটা ‘আহা বেচারী, বিয়ে হোল না’ গোছের অনুভূতির মিশেল এক দূরত্ব বজায় রাখতেন।আজ মনে হয়, আমাদের সেই গোপীমোহন দত্ত লেনের সাবেকি পাড়ার জীবনে পুলিস-পিসিকে খানিক ব্রাত্যই করে রাখা হয়েছিল।

    কিন্তু কেন পুলিস-পিসি পাড়ায় থেকেও এমন ‘আলাদা’ থেকে গেলেন?আর শুধু কি পাড়ায়? তাঁর নিজের পরিবারেও কি তিনি মূলস্রোতের বাইরে ছিলেন না? পুলিস-পিসি বাস করতেন তার বাবার বাড়িতে, এক মাঝারি সাইজের একান্নবর্তী পরিবারে।রোজ ঘড়ি ধরে সকাল নটায় পুলিস-পিসি কাজে বেরোতেন। পিসি কাজে বেরোনো অবধি নিজের প্রাত্যহিক রুটিনে চলতেন আর কাজ থেকে ফিরেই সেতার বাজাতে বসে যেতেন নিজের ঘরে। পরিবারের সঙ্গে তার লেনাদেনা ছিল নিতান্ত কেজো এবং নিক্তিতে মাপা। সংসারে থেকেও তিনি ছিলেন সংসারের বাইরে।

    এই যে পুলিস-পিসি সংসার, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক জীবন কাটালেন, তার কারণ কী? আজ যখন ভাবি, মনে হয়, পিসির পেশাই পিসিকে খানিকটা আম-মানুষের থেকে আলাদা কেরে রেখেছিল।সে আমলে মেয়েদের জন্য পুলিশের চাকরি প্রথা-বহির্ভূত ছিল।তাই যে মেয়ে ‘মেয়েদের জন্য নির্ধারিত’ পেশা আঁকড়ে থাকতে চাইতেন না সমাজ তাকে ব্রাত্য করত। শুধু সে আমলেই নয়, আজও মেয়েদের কাজের জগতের নিয়ন্ত্রণ মেয়েদের হাতে নেই। মেয়েরা কী পেশা বাছবেন, কেন বাছবেন, তাদের বাইরের কাজের সময় কী হবে, কাজের জায়গা কত দূরত্বে হবে, সে সবই ঠিক করে তার পরিবার। যদিও সময় পাল্টাচ্ছে, বহু মেয়ে কল সেন্টার অথবা প্রযুক্তি সেক্টরে কাজ করছেন, রাত দুপুরে বাড়িও ফিরছেন, তথাপি এখনও মেয়েদের জন্য পরিবারের পছন্দসই পেশা হল, শিক্ষকতা, সরকারি অফিসের দশটা-পাঁচটার কাজ অথবা ঘরে বসে আংশিক সময়ের কাজ।

    লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের তুলনায় নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত বেশি। অবশ্য গরীব পরিবারেও সেই পরিবারের ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জীবিকা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত। অর্থাৎ সব স্তরেই মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য তার পেশা নির্বাচনের অধিকার পরিবারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রশ্ন হল, কেন এই নিয়ন্ত্রণ?

    একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, মেয়েদের জন্ম থেকেই শেখানো হয় ঘরই তার আসল জায়গা আর ঘরের কাজই তার মূল কাজ। অথচ পরিবারের প্রয়োজনে মেয়েদের বাইরের কাজেও পাঠানো হয় এবং তার রোজগার পরিবারের সম্পত্তি হিসেবে ধরা হয়। ২০১৪ সালের ন্যশনাল স্যাম্পেল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী ভারতে ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ে মূলত ঘরের কাজে যুক্ত।যদিও এই মেয়েরা অনেকেই ঘরের কাজের পাশাপাশি পরিবারের চাষের জমিতে, রান্নাঘর সংলগ্ন বাগানে, পারিবারিক মুদি দোকানে অথবা ঘরে বসে সেলাই, ছাতা তৈরি, পেনের ঢাকা তৈরি ইত্যাদি অর্থকরী কাজ করে, কিন্তু সেই কাজের রোজগার মেয়েটির আয় হিসেবে নয়, পারিবারিক আয় হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নথিভুক্ত হয়। বাস্তবেও এই রোজগার পরিবারেরই, মেয়েদের নিজের রোজগারে সাধারণত কোন হক থাকে না, যদি না সে একক নারী হয়। অনেকসময়ই মেয়েরা জানেও না তার পরিশ্রমের ফলে কত টাকা পরিবারে এল। ২০১৭ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনেরালের হাই-লেভেল প্যানেল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এদেশে মেয়েরা যে পরিমাণ কাজ করে সেই কাজের ৫১% কাজই বিনা মজুরীর কাজ।

    এই যে মেয়েদের ঘরের কাজে এবং ঘরে বসে অর্থকরী কাজে আটকে রাখার সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতির নাম পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি কিছু মানুষের জন্য বেশ সুবিধাজনক। ঘরের কাজের বোঝা যদি মেয়েদের ঘাড়ে চাপানো যায় তাহলে পরিবারের অন্যদের, বিশেষত পুরুষের এবং পরিবারে ক্ষমতাবান সদস্যদের পরিশ্রম করতে হয় না। সকালে যদি বাড়া ভাত মুখের কাছে পাওয়া যায়, ইস্ত্রী করা জামা থেকে শুরু করে কাচা অন্তর্বাস পর্যন্ত হাতের গোড়ায় পাওয়া যায়, তাহলে জীবন বেশ আরামদায়ক হয়। আর এই আরামের জীবন তখনই পাওয়া সম্ভব যখন পরিবারের মেয়েটি কাকভোরে উঠে উদয়াস্ত খাটেন।মেয়েদের শ্রমের ওপর দাঁড়ানো এই সুবিধা শুধু পরিবারই ভোগ করে না।যে পু্রুষকে ঘরের কাজে নিজের শ্রমশক্তি ব্যয় করতে হয় না, সে কাজের জায়গায় তার কর্মক্ষমতার একশোভাগ দান করতে পারে, তার শ্রমের ফলে কাজের জায়গা লাভের মুখ দেখে এবং মালিকের আয় বাড়ে। মালিকের আয়বৃদ্ধি হলে সে রাষ্ট্রকে বেশি কর দিতে বাধ্য এবং সেই করের টাকায় রাষ্ট্রের অর্থভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। অতএব প্রকারান্তরে মেয়েরা পরিবারের রোজগেরে পুরুষটির আরাম-আয়েসের দায়িত্ব নেয় বলেই দেশের অর্থভাণ্ডারে আয় খানিকটা হলেও সুনিশ্চিত হয়। মেয়েদের বিনে মাইনের হেঁসেল ঠ্যালার ওপর দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করে। আর গ্যাঁটের কড়ি খরচ না করে এই লাভ, এই আয়েস পাওয়া যায় বলেই পরিবার থেকে রাষ্ট্র সবাই বলে, “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”।

    আজ যদি মেয়েরা উল্টো পথে হাঁটেন, যদি আজ মেয়েরা বলেন, আমরা একাই ঘরের কাজ করব কেন, ঘরের কাজে পুরুষকেও হাত লাগাতে হবে, নারী-পুরুষ দুজনেই যখন কাজে বেরোবে তখন বাচ্চা ও বুড়োমানুষদের দেখাশোনার জন্য সরকারকে ক্রেশ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে, তখন কিন্তু মেয়েদের হাড়ভাঙা খাটুনির ওপর দাঁড়ানো এই সাংসারিক এবং রাষ্ট্রব্যাবস্থা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে। তাই-ই সমাজশুদ্ধ মানুষ মেয়েদের ‘গৃহকর্মনিপুণা’ হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী। মেয়েদের রোজগারের কাজও তাই ঘরে বসে হলে অথবা ঘরের সব কাজ সামলে বাঁধা সময়ের বাইরের কাজ হ’লে সংসার খুশী হয়।বহু মেয়ে ঘরে বসে বিড়ি তৈরি, চিকনের কাজ, ব্যাগ তৈরি, ধান সেদ্ধ অথবা টিউশনি পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ভাতের হাঁড়ি নামান, বাচ্চাকে ঘুম পাড়ান, শ্বশুরের শ্রূশুষা করেন।যে মেয়েরা বাইরে কাজে যান তারাও বাচ্চা স্কুল থেকে ফেরার আগে বাড়ি ফিরতে পারবেন অথবা সকালে স্বামী কাজে বেরোনোর পর কাজে যোগ দেবেন, এই ধরণের কাজ খোঁজার চেষ্টা করেন।সেইজন্যই পেশা নির্বাচনের সময় মেয়েদের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। আর এই সীমিত সুযোগের বিরুদ্ধে মেয়েরা পাছে বিদ্রোহ করে, সেইজন্য জন্ম থেকেই তাদের মাথায় ঢোকানো হয় যে, সব পেশা মেয়েদের উপযোগী নয়।এই বৈষম্যের নকশা অটুট রাখার জন্যই সমাজে মেয়েদের কাজ এবং ছেলেদের কাজে ভাগাভাগি করা হয়।অথচ একটু ভাবলেই দেখা যাবে, বুকের দুধ খাওয়ানো আর গর্ভধারণ করার মত দুটি নিতান্ত প্রাকৃতিক কাজ ছাড়া আর সব কাজই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই করতে পারে।

    এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে যে মেয়েরা আমার বাল্যবেলার পুলিশ-পিসির মত সমাজের নকশা ভেঙে প্রথা-বহির্ভূত পেশায় আসতে চান, তাদের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। পরিবারের, পাড়া-প্রতিবেশির নিষেধ, ঘরের কাজের পর্বত-প্রমাণ বাধা, নিজের মনের দ্বিধা কাটিয়ে মেয়েরা যখন প্রথা-বহির্ভূত কোনো পেশা নির্বাচন করেন, তখন তাদের পথ মসৃণ হয় না মোটেই। প্রসঙ্গত রচনার (নাম পরিবর্তিত) কথা মনে পড়ছে। রচনা গাড়ি চালানো শিখে আজ পেশাদার ড্রাইভার। কিন্তু এই পেশায় সফল হওয়ার পথ তার জন্য সহজ ছিল না। দুই স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ের মা রচনা। নিত্য স্বামীর মারধোর জুটতো রচনার কপালে। কোনোদিনও সংসার সামলে ঠিক সময়ে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণে আসতে পারত না সে। কিন্তু রচনার ছিল অদম্য জেদ। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও, নেহাৎ মার খেয়ে হাঁটাচলায় ব্যাঘাত না ঘটলে, সে ক্লাস কামাই করত না। এইভাবেই সে বেশ ভালো গাড়ি চালাতে শিখে গেল। এরপর এল চাকরির পরীক্ষার দিন। পরীক্ষায় রচনার ফেল করার কোনো প্রশ্নই ছিল না। বেশ ভালো গাড়ি চালায় সে তখন। কিন্তু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সবাইকে অবাক করে দিয়ে রচনা ফেল করল। জানা গেল, সে এমন এমন ভুল করেছে, যেগুলো নিতান্ত অজ্ঞ-ও করে না। রচনাকে আড়ালে জিজ্ঞেস করা হল, কী হয়েছিল ওর? খানিক নীরব অশ্রুপাতের পর ও যা বলল তার নির্যাস হল এই যে, পরীক্ষায় বসতে দেবে না বলে ওর স্বামী আগের দিন সারা রাত বেধড়ক মারধোরের ওপর ওকে বারংবার ধর্ষণ করেছে। গায়ে, যৌনাঙ্গে তীব্র ব্যথা নিয়ে, অপমানের বহ্নিশিখা বুকের ভেতর লুকিয়ে পরীক্ষকের সামনে গাড়ির চালকের আসনে বসেছিল সে। তাই সেদিন সে অনুত্তীর্ণ। পরে অবশ্য সে পরীক্ষায় পাস করে এবং বর্তমানে সে একজন সফল পেশাদার ড্রাইভার। স্বামীও এখন ১৮০ ডিগ্রি ভোল বদলে নাকি রচনার খুব বশংবদ! সে এখন রচনা কাজে বেরোলে বাচ্চাদের দেখাশোনা, রান্নাবান্না অনেককিছুই করে রাখে।

    এ তো গেল বাইরের অন্তরায়। মেয়েদের নিজেদের মনের বাধা, যুগসঞ্চিত আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, শারীরিক জড়তা, এসবও কম সমস্যার নয়। প্রথাবহির্ভূত পেশায়, বিশেষত সে পেশা যদি রাস্তাঘাটে টইটই করে ঘুরে বেরানোর হয়, তাহলে সেই পেশায় মেয়েদের সাবলীল হতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। কারণ বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, পথি নারী বিবর্জিতা।রাস্তাঘাট পুরুষের মৌরসীপাট্টা। অতএব সেখানে মেয়েদের সাবলীল বিচরণ সইবে কেন? ফলে পেশাগত কারণে মেয়েরা যখন রাস্তায় বেরোন, রচনার মত পাক্কা ড্রাইভারের বেশে যখন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেন, তখন তাদের ওপর নেমে আসে টিটিকিরি, হেনস্থা, অত্যাচার। আশার কথা, শুরুতে মেয়েরা একটু ইতস্তত করলেও, আস্তে আস্তে বেশিরভাগ মেয়েই শিখে যান কিভাবে এসবের মোকাবিলা করে পথের দখল নিতে হয়।

    লক্ষ্যণীয় হল, মেয়েদের প্রথা-ভাঙা কাজে সরকারেরও তেমন মদত থাকে না সচরাচর। মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধির যে প্রকল্পগুলি আসে, নির্দিষ্টভাবে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর নামে যে দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হল, সেখানেও মেয়েদের জন্য প্রথাবহির্ভূত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হল না।মেয়েদের নিয়ম ভাঙা, তা সে পেশাগত কারণেই হোক, অথবা অন্য যে কোণ কারণেই হোক না কেন, আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্র কেউই তেমন ভালো চোখে দেখে না। সেইকারণেই সম্ভবত আমাদের দেশে মেয়েদের কর্মীবাহিনিতে অংশগ্রহণ ক্রমশ কমছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩১টি দেশের মধ্যে মেয়েদের কর্মীবাহিনিতে অংশগ্রহণে ভারতবর্ষের স্থান ১২১। ১৯৯৩ থেকে ২০১৩-র মধ্যে মেয়েদের এই অংশগ্রহণ কমেছে ৩৪.৮ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশ।

    এমতাবস্থায় দাঁড়িয়ে যখন আন্তর্জাতিক নারীদিবস উদযাপনের ক্ষণ আসে, তখন মনে হয়, ১৮৫৭ সালে আমেরিকার বস্ত্রশিল্পের শ্রমিক নারীরা তাদের কর্মীসত্ত্বার স্বীকৃতির, তাদের প্রাপ্য অধিকারের যে দাবি তুলেছিলেন, সেই স্বীকৃ্তির দাবি আজও কি প্রাসঙ্গিক! একথা ঠিকই যে অনেক লড়াই হয়েছে, অনেক জয়ও হয়েছে, কিন্তু প্রতিবার যুদ্ধে হেরে পিতৃতন্ত্র নতুন করে অস্ত্রে শান দিয়েছে, নতুন করে নখ-দাঁত বার করেছে। তাই কর্মী নারীর সংগ্রাম আজও চলছে, কর্মী হিসেবে নারীর সর্বস্তরে স্বীকৃতি আজও অধরা। আমাদের পূর্বসূরী সেই ১৯১২ সালের ম্যাসাচুসেটসের লরেন্স টেক্সটাইল ধর্মঘটের মেয়েদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটা আজও আমাদের শেষ হয় নি, আজও তাদের সঙ্গে আমরা গলা মিলিয়ে গাই, “আমরা গান গাই/রুটি ও গোলাপ চাই”।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৮ মার্চ ২০১৮ | ১৩০৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুতপা | ***:*** | ০৮ মার্চ ২০১৮ ০২:০৯85020
  • লেখাটি অত্যন্ত দক্ষতায় বিশ্লেষন করেছে মেয়েদের পেশাপ্রবেশের সীমাবদ্ধতাকে। আরেকটি বিষয় বলতে চাই অপ্রাসঙ্গিক হবে না বোধহয়। শিক্ষকতার মত 'নরম' পেশায় ও নারী যদি কর্তৃত্ব দেখায় পেশারই প্রয়োজনে, যদি নিয়ম নিষ্ঠ হয় ও অন্যায় জোরের কাছে, যা প্রায়শই পুরুষের থেকে আসে, যদি সে মাথা নীচু না করে তবে তাকে 'জাঁদরেল', 'জাঁহাবাজ' উপাধি পেতে হয়। নারীর জন্যে যে পেশাগুলি সুবিধাজনক মনে করে সমাজ, সেখানেও কিন্তু তাকে নিরন্তর পুরুষ হয়ে ওঠার সংগ্রাম করতে হয়, নিজের দক্ষতা প্রমাণের তাগিদে, নিজের পেশাগত অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখার খাতিরেই।
  • | ***:*** | ০৮ মার্চ ২০১৮ ১০:৪৫85019
  • এই লেখাটা খুব ভাল লাগল। কিছু দিন আগে আনন্দবাজারে ষাটের দশকে মহিলাদের পর্বতশৃ`ঞ্গ্গ অভিযানে বাধাদানের গল্প পড়েছিলাম। আর চোখের সামনে তো কতই দেখি দেখছি।
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ০৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৬85021
  • সময়োপযোগী লেখা। বিশ্লেষণ খুব ভাল
  • Kaktarua | ***:*** | ১০ মার্চ ২০১৮ ০৬:৩৭85022
  • লেখাটা খুব ভালো লাগলো আর সুতপা র ওপরের কমেন্টে বড় ক। একটু প্রথা বহির্ভূত পেশা হলেই পুরুষ হয়ে ওঠার নিরন্তর সংগ্রাম। এখনকার আমাদের ইন্ডাস্ট্রি র ভাষায় either a bitch or incompetent কোনো রাস্তাই নেই একজন মহিলা ওই উপাধি দুটোর একটাও অর্জন না করে কি ভাবে কাজ করবেন। আর আমি বলছি কানাডা র কথা যেটা নাকি পৃথিবী তে মহিলাদের জন্য ওয়ান অফ the বেস্ট কান্ট্রি।
  • pi | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৬85023
  • '২০১৪ সালের ন্যশনাল স্যাম্পেল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী ভারতে ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ে মূলত ঘরের কাজে যুক্ত।যদিও এই মেয়েরা অনেকেই ঘরের কাজের পাশাপাশি পরিবারের চাষের জমিতে, রান্নাঘর সংলগ্ন বাগানে, পারিবারিক মুদি দোকানে অথবা ঘরে বসে সেলাই, ছাতা তৈরি, পেনের ঢাকা তৈরি ইত্যাদি অর্থকরী কাজ করে, কিন্তু সেই কাজের রোজগার মেয়েটির আয় হিসেবে নয়, পারিবারিক আয় হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নথিভুক্ত হয়। বাস্তবেও এই রোজগার পরিবারেরই, মেয়েদের নিজের রোজগারে সাধারণত কোন হক থাকে না, যদি না সে একক নারী হয়। অনেকসময়ই মেয়েরা জানেও না তার পরিশ্রমের ফলে কত টাকা পরিবারে এল। ২০১৭ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনেরালের হাই-লেভেল প্যানেল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এদেশে মেয়েরা যে পরিমাণ কাজ করে সেই কাজের ৫১% কাজই বিনা মজুরীর কাজ।
    '
    ইন্টারেস্টিং।

    এই ৬০% এর কতজন অর্থ্সকরী কাজ করেন, সেই তথ্য আছে বা, পাওয়া যাবে?

    আর ঐ ৫১% বিনা মজুরির কাজের কতটা ঘরের কাজ আর কতটা এরকম ঘরে থেকেই অর্থকরী কাজ, সেই ব্রেকাপটা পাওয়া যাবে?
  • দোলন গঙ্গোপাধ্যায় | ***:*** | ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৭85024
  • সবাইকে ধন্যবাদ। সুতপা এবং সকলের মতামত খুবই গুরুতপূর্ণ। সময়াভাবে উত্তর দিতে দেরী হল। ন্যশনাল স্যাম্পেল সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের স্টাডিটা গুগল সার্চ দিলেই পাবেন। এই ব্রেক আপটা এই মুহূর্তে হাতের কাছে নেই, কিন্তু ঐ স্টাডি রিপোর্ট দুটোয় এ বিষয়ে তথ্য পাবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন