১
ঘর? কোনদিকে আঁকা হয় শহরের পানপাশা অন্ধকার
কোনদিকে ভেসে গেছে ভাগাড়ের মৃত ডানা দীর্ঘ রামধনু
আসন্ন ঝড়ের লোভে ঝোলানো শহর, ব্রীজ-- গরিবের পুঁজি
কোনদিক থেকে ভেসে আসে শৈবালের চোখ রমণবিহারে
প্রাচীন পথের খাঁজে জেগে ওঠা সেই শিলালিপি মরুভূমি
তার পেট চিরে মাঝে কে আজ ঘুমায় দেখ নিশ্চিন্ত প্রয়াসে
গাল বেয়ে বয়ে আসে লালা থুতু কফ চিহ্ন সমুদ্রের তীর
২
কুড়িয়েছ অন্ধকার? দাবদাহ দুপুরের ছাই মৃত পাপ?
নগ্ন নগরীর চোখে বসিয়েছ পাহাড়ের লোভ? শূন্য গ্লাস?
প্রকাশ্য লুন্ঠনে দেখ ভেসে গেছে সেই নারীর প্রণয় গীত
দুস্যতার লোভে তুমি চারপাশে ছড়িয়েছে অন্নের ফলক
খুঁটে খুঁটে হেঁটে আসে, দেখ, পথ শিশু কফিন জড়িয়ে গায়
সময়ের কান্না বাজে, সময় ভুলায় মাতা পিতা এ সংসার
৩
দুপুর অধিক ভেবে, হাতপাখা বের করে কুমারী কুসুম
অপরাহ্ন চোখে লেখে তীক্ষ্ণ লোহার নজর নিদ্রাহীন বাঁকে
গোপন ভাটার টানে ফিরে ফিরে দেখে সেই মুগ্ধ বলাকার
চলন। গভীর রোদ। মোহানার দিকে সেও উড়ে অবশেষে
ওপাশে পরাগ গন্ধ ওপাশেই জলশব্দ বেজে ওঠে রোজ
ডিমের কুসুম লোভে অধিক অধিক মাছ মীনজন্ম ছেড়ে
কুমারীকে ছুঁতে চায়, দু'ঊরুর ফাঁকে--মৃত্যু পরিচয় ভেঙে
৪
প্রতিটা মুহূর্ত জুড়ে বেজে ওঠে জন্ম শিকারীর হানা, চাকু
ইঁদুরের গর্তে ঢুকে যায়-- সাপের খোলস; চরের শ্মশানে
কার দেহ ঝুলে আছে? সুন্দরের উপত্যকা জোরে হেসে ওঠে
শেয়ালের বাচ্চা ফেলে উড়ে উড়ে আসে হিংস্র শকুনের চোখ
মানুষের মাংস লোভে; চারপাশে পেতে রাখে ফাঁদ ও কৌশল
গর্জে ওঠে ইস্রাফিল, তার লাল ঘুম চোখ প্রচন্ড উদ্যমে
করুণ আবহ সুরে ছুটে, ঢেকে রাখে নগ্ন যুবতীর দেহ
৫
কে তাকে ভুলাবে আজ? কে যে তাকে বলে দেবে বংশপরিচয়?
সমাজের চোখে বাজে ক্ষোভ লোভ হিংসা দ্বন্দ্ব-- হরিণীর লাশ
বিমূর্ত কুহক জালে বেঁধে রাখা নাগপাশ আকাশের নাভি
ব্রজবিদ্যুৎ সহ হেঁটে ফেরে ঈশ্বরের হাত অন্নহীন চোখে
কোনদিকে ক্ষুধা আছে? কোনদিকে ফুটে আছে কুমারী কুসুম ?
দুধের বাটিতে রাখা চন্দ্রবড়া নাগিনির মিলন পরব
এ আকাশ সব বোঝে শূন্যতার ফেরেস্তায় প্রতিশ্রুত পানি
যে বনে পাখির ঠোঁটে ঝুলে থাকে মগ্ন হীন গাছের বিষাদ
৬
গণিকাপাড়ার খাটে শুয়ে আছে লুসাকার গভীর জঙ্গল
অন্ধকার এত ঘন? কোনদিকে যাবো আমি? নেশাতুর মনে
রাশিচক্র ভেঙে আজ মীনজন্ম ইশারাতে নিহত প্রেমিক
আগুনের লোভে তার পুড়ে গেছে হৃদয়ের ঘুমাচ্ছন্ন মাথা
অনেক শুশুক চোখ বরফের শাড়ি খুলে হাসুন হানার
বনে। চোখ মারে। আর নিশিডাকে খুলে দেয় নাভির আশ্বাস
বিপন্ন পাড়ার বাঁকে তখনই যে বেজে ওঠে কুকুরের স্বর
ঘুমন্ত চিতার পাশে ফিসফিস সুরে বলে-- বাড়ি যাবে? বাড়ি!
৭
নিরীহ ঘুমের দেশে অসুখের বিষ ঢেলে কী সুখ তোমার!
প্রত্যহ খুনের লোভে শিখে গেছ ততদিনে রক্তের দায়িত্ব
ইস্পাতের গুঁড়ো এসে ঢোকে চোখে মুখে--- ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে
নারী ও শিশুর লাশ। মহাশূন্যে খুঁজে ফেরে ক্ষীণ বাতিঘর
হরিণীর দেহ লোভে নখ আরও বড় হয়, আরও দীর্ঘ ছায়া
এ জনবসতি দেখে অন্ধ পউষের মাঠে বিদ্যুৎ নিশান
হঠাৎই খেলার ছলে তুমিও চিকিৎসা দেবে? দেবে সেবা? দয়া?
শরীর তো দয়া চায়--- কিন্তু মন চেয়ে বসে সেবা ভালোবাসা
৮
ঝড় শান্ত হলে পরে, শূন্যতা ফুঁপিয়ে কাঁদে মেঘ আস্তনায়
সন্তানের কচি মুখ ভেসে উঠে, পিতা ডাকে নিরীহ উদ্ভিদে
মানুষের আয়ু খেয়ে ততক্ষণে শ্বাপদের গোলাপি শরীর
রহস্যের মায়া পাতে, চাঁদের আলোর আঁকে ড্রাগনের মুখ
লকলকে জিভ, কালো ছায়া, চুম্বনের বিষ, মদ আর গান
নির্বিকার শূন্য হাতে বসে থাকে পরাজয় শিকারীর দল
ব্যথার আগুন বুকে পিতা ও মাতার দল, নীলষষ্ঠি ক্ষেতে
দুপুরের মেঘ দেখে হেসে ওঠে হা হা হি হি মাতাল জোয়ারে
চিতার সাহস বুকে জেগে ওঠে; ঝাঁপ দেয় কাঠের দরোজা
দক্ষ হাতে লিখে রাখে রক্ত ঘাম প্রকৃতির মৃত্যু ও জরায়ু