ট্রপিকাল থেকে ছাড়া পেয়েছি প্রায় দু’মাস। এখনও দুই সপ্তাহান্তে একবার যেতে হয় হাসপাতালের আউটডোরে। লাইন দিতে হয়। টিকিট কাটতে হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন খিটখিটে দিদিটা নাম ধরে ডাকবে। কোন ডাক্তার যে দেখবে, ভগা জানে। কমবয়সী ডাক্তারগুলো হেসে কথা বলে, আমার সঙ্গে নয় সবার সঙ্গে। মৃদু কথা বলে। কেন? এখনও তালেবর হ’য়ে ওঠেনি তাই ? আমাকে ওরা পরীক্ষা করে, তারপর বসিয়ে রাখে ডাক্তার সাহার জন্য। তিনি এলে আবার পরীক্ষা করেন। ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধের জন্য ফার্মাসীতে দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তারপর উইণ্ডোতে পৌঁছালে ভোরিকোনাজল আছে কি না সেটা দেখতে স্টোরে পাঠানো হয়। থাকলে পেয়ে যাই। নৈলে পরদিন লাইন। একদিন তো অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডাক্তার সাহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন’ বলে রাস্তার পাশে একটা হাফ ওয়ালে বসেই পেট টিপে, স্টেথো লাগিয়ে, অজস্র প্রশ্ন করে তবে ছাড়লেন। লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য রুগী সাক্ষী রইলেন এই অপূর্ব চিকিৎসার।
আর.আই.ও তে অবশ্য এতটা স্মুথনেস নেই। লাইন অনেক বেশী দীর্ঘ। এক একটা ডাক্তার আউটডোরে একশোর বেশী রুগী দেখছেন। তিতিবিরক্ত। কথা বল্লেই খেঁকিয়ে উঠছেন। এখানে দারিদ্র আরও বেশী। টেস্ট এবং অপারেশন আরও বেশী। দরিদ্র মুসলিম এর সংখ্যা বেশী। অ-চিকিৎসক কর্মীদের দাপট বেশী। চিৎকার চেঁচামেচি বেশী। কিন্তু সবটাই বিনামূল্যে। তিনটে টেস্টের জন্য তিন দিন সময় নিতে হলো। যেটা শংকর নেত্রালয়ে দশ ঘন্টায় হয়ে গেছিল। অবশ্য তার জন্য দক্ষিণা দিতে হয়েছিল প্রায় দু হাজার টাকা। এখানে সর্বসাকুল্যে খরচ দু’টাকা।
সমস্যা হলো অন্যত্রে। আমার স্বজনেরা ছাড়া কেউ মন থেকে বিশ্বাস করতে চাইছে না, যে মেনে নিতে পারলে এবং উপায়ান্তর না থাকলে সরকারী হাসপাতালেও ভালই চিকিৎসা হয়, সুস্থও হয়। মানুষ কি গাণ্ডু না কি যে দু’টাকায় একটা বেটার চিকিৎসার এনভায়রনমেন্ট ছেড়ে দু লক্ষ বা কুড়ি লক্ষ টাকার ইনফিরিয়র চিকিৎসার এনভায়রনমেন্ট এর পিছনে দৌড়োবে ? উপায়ান্তর না থাকলেই লোকে বেসরকারী তে যায়। এদের চেষ্টা করেও বোঝাতে পারিনি যে চিকিৎসার এনভায়রনমেন্ট আর চিকিৎসা এক নয়। বেসরকারী হাসপাতাল চিকিৎসার এনভায়রণমেন্ট এর যোগান দেয় ঠিকই, কিন্তু তার জন্য গুনে গুনে মূল্য নেয়।রুগীদের কাছ থেকে সে মূল্য আদায় করতে পারলে, বা করলে,সরকারী হাসপাতালেও বেসরকারী চিকিৎসার এনভায়রনমেন্ট যোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তাতে দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের কী হবে? নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তদেরই বা কী হবে?
“আসলে তোর চারপাশে তো একটা ইন্টেলেকচুয়াল অরা আছে, যাতে ঘাবড়ে গিয়ে সরকারী হাসপাতালের মূর্খগুলো স্পেশাল কেয়ার নিয়ে ফেলে। তোর জায়গায় আমি হলে গুনে মূল্য নিতো। প্লাস শুনেছে তোর সরকারী মহলে যোগাযোগ আছে, তোর ছবি দিয়ে প্রগ্রেস রিপোর্ট আনন্দবাজারে ছাপা হয়, ফলে তোকে শুধু প্রদীপের আলোটুকু দেখানো হয়, আমাদের জন্য পড়ে থাকে শুধু অন্ধকার। এসব কথা বিভ্রান্ত করে দেয়, ভাবি সত্যিতো একটা যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, নিজের ঘটিবাটি বিক্রি করার জন্য বেসরকারী হাসপাতালে যাবে কেন? আমি এতদিন যেতাম কেন ? যায় যদি যাক প্রাণ, কর্পোরেট সেক্টরের ডাক্তার ভগবান…বলে ঝাঁপিয়েছি কেন ? যখন আমি এটাও জানতাম এই সরকারী হাসপাতাল আমার… আমারও করের টাকায় এর চলন। ভাবি আর লিখে রাখি। দেখতে দেখতে সেটা এক তুলনামূলক সারণীর রূপ নেয়। সংখ্যাতত্ব কন্টকিত সমীক্ষা-সারণী নয়, আমার বোধগম্যতার জন্য নেহাৎই দশটি পয়েন্টের একটা তুলনা ও প্রতিতুলনা।
বেসরকারী হাসপাতাল | সরকারী হাসপাতাল | |
১ | বেসরকারী হাসপাতাল আসলে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যার মালিক আছে, অথবা মালিকপক্ষ আছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় তাদের দ্বারা এবং তাদেরই অর্থানুকূল্যে চলে। ফলতঃ তাদের মুনাফাই প্রথম এবং শেষ কথা। | সরকারী হাসপাতাল মূলতঃ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। চলে সরকারী অনুদানে। অর্থাৎ জনগণেরই করের টাকায় চলে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার, বাজেট, থেকে শুরু করে ডাক্তারদের ফিজ, ওষুধ সবই করের টাকায়।পরিচালনও তাই। স্বাস্থ্যদপ্তরের। |
২ | বেসরকারী হাসপাতাল এর খরচ তুলনামূলক ভাবে সরকারী হাসপাতালের চাইতে বহুগুণ বেশী। | সরকারী হাসপাতালের পরিষেবা বেশীরভাগ সময়েই হয় বিনামূল্যে নয়তো স্বল্পমূল্যে দেওয়া হয়। |
৩ | বেসরকারী হাসপাতালে টাকা বেশী থাকলেই সব সমস্যার সমাধান। দীর্ঘ ক্লান্তিকর অপেক্ষার ঝক্কি নেই। ঝটাঝট পরীক্ষা, ফটাফট টাকা। টাকা থাকলে ঝক্কি শূণ্য। | সরকারী হাসপাতালে বিরক্তিকর দীর্ঘ লাইন। এমনকি ইউ.এস.জি, এক্স-রে, স্ক্যান বা অন্য কোনও পরীক্ষার জন্য ডেট নিতে বহু সময় ব্যয় হয়। |
৪ | বেসরকারী হাসপাতালে দামী এবং আধুনিকতম যন্ত্রাদির বহুল ব্যবহার, এবং কেয়ারফুল ব্যবহারের জন্য সেগুলির আয়ুও অনেক বেশী। নিত্য নতুন যন্ত্র আর নিত্য নতুন খরচ। রুগীদের মধ্যেও ধারণা হচ্ছে যত দামী যন্ত্র, তত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। নো রিস্কি ট্রিটমেন্ট। | সরকারী হাসপাতালে যদিও দামী ও আধুনিক যন্ত্রাদির কোনও অপ্রতুলতা নেই, কিন্তু প্রচুর ব্যবহার ও যত্নহীন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি প্রায়শঃই বিকল হয়ে থাকে। নিজস্ব অভিজ্ঞতার জন্যই ডাক্তারেরা প্রায়শঃই অধুনা বিলুপ্তপ্রায় ক্লিনিকাল আই এর ওপর নির্ভর করেন। | ৫ | যেহেতু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত রুগীর সংখ্যাই বেসরকারী হাসপাতালে বেশী, তাই রুগী প্রতি ডাক্তারের সংখ্যাও বেশী। প্রচুর অর্থব্যয়ের ক্ষমতা সম্পন্ন রুগীর প্রতি ডাক্তারের মনোযোগ বেশী হবার কথা। যদিও প্রফিট মোটিভেশান প্রায়শঃই কদাকার রূপ ধারণ করে। | যেহেতু দরিদ্রতম রুগীর সংখ্যাই সরকারী হাসপাতালে বেশী, ফলতঃ বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য প্রচুর পরিমান রুগীর চিকিৎসায় ডাক্তার যথেষ্ট মনোযাগ দিতে পারেন না। ডাক্তার নিজেই রুগী দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পরেন। রুগী প্রতি ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম। | ৬ | যেহেতু বেশীর ভাগ বেসরকারী হাসপাতালের নিজস্ব ডায়গোনিস্টিক সেন্টার রয়েছে, ফলে ডাক্তারের মধ্যেও অকারণে বিভিন্ন টেস্ট লিখে দেওয়ার তাগিদটা বেড়ে যায়। ওপর মহলের (একজন সি.ই.ও-র মাসিক আয় ১৪-১৫ লক্ষ টাকা) চাপও থাকে। যে বিপুল পরিমান অর্থ এই ডাক্তাররা পান, তা কড়ায় গণ্ডায় উসুল করে নেবার চাপ । | সরকারী হাসপাতালে ডাক্তারদের মধ্যে নন-প্রফিটেবল ডায়গোনিস্টিক টেস্ট করানোর প্রবণতা কম। এর প্রভাব পড়ে ডায়গোনিস্টিক সেন্টারের কর্মীদের ওপর। যদিও বিরল প্রজাতির কিছু ডাক্তার যারা চিকিৎসাকে এখনও সেবা বলে গণ্য করেন তারা বাইরে কিছু নির্দিষ্ট ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন। | ৭ | আমাদের দেশে চিকিৎসা হচ্ছে সবচাইতে লুক্রেটিভ ব্যবসা। ফলতঃ ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে বেসরকারী হাসপাতাল আর মাঝারী মানের নার্সিং হোম। যেখানে অতি উন্নত মানের অ-চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানেই বেসরকারী হাসপাতাল খদ্দের টানে। সরকারী ডাক্তাররা বেসরকারী হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন, ফলে প্রাইভেট আর সরকারী চিকিৎসায় প্রায় কোনও পার্থক্যই নেই। | স্বাস্থ্যখাতে সরকারের যে বাজেট, তার ধারেকাছে পোঁছাতে পারেনা বেসরকারী হাসপাতালের সম্মিলিত বাজেট। তবু যে তারা ভাল সার্ভিস দিতে পারেনা সে গলদের কারণ লুকিয়ে আছে সরকারী সিস্টেমে। ফলে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে নয়, নানাবিধ অ-চিকিৎসা পরিষেবা বিষয়ে ভোগান্তির কারণেই মধ্যবিত্ত মানুষ সরকারী হাসপাতাল এড়িয়ে চলে। জেলা স্থাস্থ্যকেন্দ্র গুলির অবস্থা আরও খারাপ। | ৮ | বেসরকারী হাসপাতালে সামান্য রোগের জন্য কোনও স্পেশালিস্ট ডাক্তার (আজকাল অবশ্য সব ডাক্তারই স্পেশালিস্ট) এর কাছে গেলে দিনে খরচ হয় কনসাল্টেশন ফিজ বাবদ ৫০০ টাকা, পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ ১০০০ টাকা আর ওষুধ বাবদ ৩০০ টাকা অর্থাৎ কমপক্ষে ১৮০০ টাকা। খদ্দেরএর জটিল অপারেশন বা খরচসাপেক্ষ চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা এঁদের সরকারী হাসপাতালের সুবিধাও পাইয়ে দিয়ে থাকেন। | সরকারী হাসপাতালে এই সবটাই বিনামূল্যে, যদি না কোনও বিশেষ ডায়গোনিস্টিক টেস্ট বাইরে কিংবা হাসপাতালেরই পিপিপি সেন্টারে করতে হয়। ওষুধের ক্ষেত্রেও তাই। বহুমূল্যবান ওষুধের ক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্য অথবা বিনামূল্যে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের মধ্যে সরকারী হাসপাতালের রুগী ভাঙ্গিয়ে বেসরকারীতে নিয়ে যাবার প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। কেননা রুগীভিত্তিক কোটা পূরণ এইসব ডাক্তারদের কাছে বাধ্যতামূলক। | ৯ | বেসরকারী হাসপাতাল মূলতঃ বিক্রি করে নন-মেডিক্যাল সার্ভিস। পেশেন্ট আসলে তারই দাম চোকায়। ব্যবসার সিস্টেম মেনে বেসরকারী হাসপাতালগুলি এখন প্রচুর বিজ্ঞাপন করে। যা সরকারী হাসপাতাল করে না, প্রয়োজন নেই বলে। বেসরকারী মানেই ভাল, এ এক ধরণের মগজ ধোলাই এর ফল। বড় একটা চক্র কাজ করে এর পেছনে। | সরকারী হাসপাতালে নন-মেডিক্যাল সার্ভিস খুব বাজে। টয়লেট বাজে, জেনারেল হাইজিন খারাপ, গ্রুপ-ডি থেকে শুরু করে মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার দের ব্যবহার খুব খারাপ, ডাক্তারদের হাইহ্যাণ্ডেডনেস ডক্টর-পেশেন্ট রিলেশানশিপ নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। সরকারী মানেই খারাপ, এটা অনবরত মাথায় প্রবিষ্ট করানো হয়। | ১০ | বেসরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থার দুটি ক্রম। এক হাসপাতাল দুই প্রাইভেট নার্সিং হোম। প্রাইভেট নার্সিং হোমে ডাক্তাররা (অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা সরকারী ডাক্তারও বটে) ভিজিট নেন কিন্তু রসিদ দেন না। ফলে এই টাকাটা ব্ল্যাক মানি হিসাবেই গণ্য হওয়া উচিৎ। আর হাসপাতালে রসিদ দেওয়া হয়, কিন্তু ডাক্তারের ওপর চাপ থাকে মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রুগীদের কাছ থেকে খিঁচে নেবার জন্য। | সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রায় সব পরিষেবাই বিনামূল্যে। ফলে কতিপয় কমিটেড ডাক্তার ছাড়া বাকীরাও বিশ্বাস করেন সরকারী ব্যবস্থায় সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। প্রথম কারণ এই ডাক্তারী শিক্ষায় প্রবেশমূল্য (ক্যাপিটেশন ফী) বাবদ যা খরচ, অতি দ্রুত তুলে ফেলা একমাত্র বেসরকারীতেই সম্ভব। দ্বিতীয় কারণ বেসরকারীতে অর্থাগমের বিভিন্ন পন্থা উন্মুক্ত থাকে। তৃতীয় কারণ অবশ্যই ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া। |
ফিরে আসার পর থেকে এখনও অ্যাসপারজিলেসিস আমায় ছেড়ে গেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। ভোরিকোনাজল খুব কম ডোজে খেতে হচ্ছে। তাতেই সারা শরীর সানবার্ণ হয়ে যাওয়া আটকানো যায়নি। বাঁচোখে দেখতে পাচ্ছি বটে কিন্তু দু চোখে দু রকমের ভিশন, ডাবল ইমেজ দেখছি। পড়তে লিখতে অসুবিধা তো হচ্ছেই। হাত পা গুলো ল্যাগব্যাগ করছে, দু দিন সিঁড়িতে স্টেপ মিস হয়ে পড়েও গেলাম। কিন্তু লাস্ট ল্যাপ যত এগিয়ে আসছে উত্তেজনা বাড়ছে।
এর মধ্যে মমতা ব্যানার্জীর সরকার “পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিকাল এসটাব্লিশমেনেট (নথিভুক্তি, পরিচালন এববং স্বচ্ছতা) বিল,২০১৭” বিধানসভায় প্লেস করেছেন এবং তা পাশও হয়ে গেছে। যেহেতু বিলের অনুপুংখ বর্ণনা ইন্টার নেটে সহজেই পাওয়া যায়নি, তাই তার আলোচনা বিস্তারে যাচ্ছি না। শুধুমাত্র এইটুকু বলার যে মিডিয়ায় প্রকাশিত বিলের প্রতিটি শব্দ বেসরকারী হাসপাতালগুলির রক্তচোষা চরিত্র এবং অমানুষিক ব্যবহারের স্বরূপ উদ্ঘাটন। পরবর্তী কোনও সময়ে এই বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতেই পারে। আজ নয়।
“….তুমি তো প্রহর গোনো /ওরা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি/ তাদের ভণ্ডার পূর্ণ/ শূণ্য মাঠে কংকাল করোটি / তোমাকে বিদ্রূপ করে /হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে/ কুজ্ঝটি তোমার চোখে/ তুমি ঘুরে ফেরো দুর্বিপাকে…” সুকান্ত ভট্টাচার্য।
আমার বক্তব্য খুব সহজ। সরকারী হাসপাতাল যদি আমার নিজস্ব হয়, আমার মধ্যে যদি ওনারশিপ ফিলিং থাকে…তবে বেসরকারী নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, আমি/আমরা আমাদের সরকারী হাসপাতাল গুলিকে সুস্থ করতে চেষ্টা করিনা কেন ? আমার বিশ্লেষণে আমি আগেই বলেছি, সরকারী হাসপাতালে নন-মেডিক্যাল সার্ভিস খুব বাজে। টয়লেট বাজে, জেনারেল হাইজিন খারাপ, গ্রুপ-ডি থেকে শুরু করে মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার দের ব্যবহার খুব খারাপ, ডাক্তারদের হাইহ্যাণ্ডেডনেস ডক্টর-পেশেন্ট রিলেশানশিপ নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। সরকারী মানেই খারাপ, মাথায় প্রবিষ্ট এই আতংকের সূত্রগুলোকে যদি পরিবর্তন করা যেতো! বাজেট বৃদ্ধি আর তার সঙ্গে ভাল এবং পর্যাপ্ত নন-মেডিকাল সার্ভিসের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা যেতো, পেশেন্টদের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভিজিল্যান্স রাখা, স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে সমস্যাগুলি নিয়ে যোগাযোগ রাখা যেতো, মুমূর্ষূ রুগীকে টয়লেট ইউজ শেখানোয় পণ্ডশ্রম না করে ক্লিনিং স্টাফ, নার্সিং স্টাফ বেশী নিয়োগ করা হতো, তাহলে এভাবেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে উন্নত করা সম্ভব ছিল। তা না করে বেসরকারী হাসপাতালের কুষ্ঠি গাললে কোন লাভ নেই। আজ বখরা নিয়ে বিরোধ হলে, কাল আমে দুধে মিশ ও খেয়ে যেতে পারে। আঁটি জনগনের তখন রাস্তায় গড়াগড়ি খাওয়াই ভবিতব্য। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের কাজ। ডিফেন্স আর ল-অ্যাণ্ড-অর্ডারের চাইতে অনেক বেশী জরুরী। বেসরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা জাহান্নামে যাক। আমি দেখেছি সরকারী চিকিৎসায় অসংখ্য প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে মাত্র এক মাস। আমার এখন দীর্ঘ লাইন দেখলে গা গুলায় না। এসি নেই বলে কান্না পায়না, এমনকি বিভিন্নজনের দাঁত খিঁচুনিও গা সওয়া হয়ে গেছে। কেননা দিনের শেষে লাভবান তো আমিই। দু’টাকায় চিকিৎসা। সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তো এভাবেই বেঁচে আছেন।
শেষ দুটো কিস্তিতে আমি এই সব বিষয় নিয়েই আমার ভাবনা গুলি বলবো। আজ্ঞে হ্যাঁ, ফেসবুকেই, এবং গুরুচণ্ডালীতেই। আর কে আমায় এসব উদ্ভট অন্তঃসারপূর্ণ ভাষণ দেবার সুযোগ দেবে, এত বায়বীয় পাঠকসমেত?