"...দেশ স্বাধীন হবার সময়ে আসামের মানচিত্রের অদল বদলের যেন ধুম পড়ে গেলো । প্রথমে শ্রীহট্ট পাকিস্তানে গেলো । তারপরে আসামের বেশির ভাগ পার্বত্য জেলা ভেঙ্গে ভেঙ্গে নতুন নতুন রাজ্য তৈরি হলো । যে প্রক্রিয়াটা আরম্ভ হয়েছিল তা সম্পূর্ণ হবে তখনই, যখন আসামের সাথে কৃত্রিম ভাবে জুড়ে থাকা বাংলাভাষী বরাক উপত্যকা আলাদা হবে বা আলাদা করা হবে । অসমীয়া ভাষার একমাত্র মাতৃভূমি আসামে অসমীয়া ভাষার লজ্জাজনক ভাবে সংখ্যালঘু হওয়ার কারণ হলো বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার আসামের সাথে সংযুক্তি । মূলতঃ সেই কারণেই আসামে অসমীয়া ভাষীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম বলে প্রমাণিত হচ্ছে । বাংলাভাষী বরাক উপত্যকা আসাম থেকে বেরিয়ে গেলে অসমীয়া ভাষা তার নিজভুমে সম্মান জনক প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা করা যায় । উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য রাজ্য গুলি আর বরাক উপত্যকা কোনদিনই আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না । এসব অঞ্চল বাধ্যতামূলক ভাবে আসামের সাথে ছিলো কিন্তু আসামের আত্মার সাথে তাদের যোগ কোনদিনই ছিলো না । এই অঞ্চল গুলি আসামের ভূগোলের অংশ হতে পারে কিন্তু ইতিহাসের নয় । বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। তাই যেমন অন্য পার্বত্য অঞ্চল গুলি আলাদা রাজ্য হয়ে আসাম থেকে বেরিয়ে গেছে সেরকমই বরাক উপত্যকাও আসামের থেকে বেরিয়ে গেলে সবারই মঙ্গল।"
প্রবন্ধ- হোমেন বরগোঁহাই
অনুবাদ- রাহুল বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য
পশ্চাদপট
বহুযুগ থেকেই আসামের একঅংশের বুদ্ধিজীবী চায়নি শ্রীহট্ট আসামে থাক। ১৯৩৩ সালের ১৬ এপ্রিল আসাম অ্যাসোসিয়েশন-এর এক বিশেষ রাজনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, কুলধর চালিহার সভাপতিত্বে। সম্মেলনে শ্রীহট্টকে আসাম থেকে পৃথক করার দাবি করা হয়। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাইয়ের গণভোটে শ্রীহট্ট ভাগ হয়ে যায়। সেদিন স্থানীয় নয় বলে চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার ছিল না। তা না হলে হয়তো ভারতবর্ষের অন্য ইতিহাস লেখা হত, মানচিত্রও। করিমগঞ্জ মহকুমা শহরের তিন থানা, বেশ কিছু চা-বাগান, বর্তমান বরাক উপত্যকা ভারতে থেকে যায়।
কিন্তু উল্লাসে ফেটে পড়েছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা। দেশভাগ ও সীমানা নির্ধারণের প্রাক মুহূর্তে আসাম জাতীয় মহাসভার প্রায় মুখপত্র, তখনকার একমাত্র ইংরেজি দৈনিক ‘আসাম ট্রিবিউন’ লিখল, "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিলেট পাকিস্তান চলে যাক"। সেই সঙ্গে মন্তব্য ছিল-“দ্য অ্যাসামিজ পাবলিক সিম টু ফিল রিলিভড অব আ বার্ডেন"। সীমানা ঘোষিত হওয়ার পর আহোম জাতীয় মহাসভার চার নেতা শিলং টাইমস পত্রিকায় এক বিবৃতি ছাপে। যাতে বলা হয়, “উইথ সিলেট জয়েনিং পাকিস্তান, আসাম হ্যাজ গ্রোন স্মলার ইন এরিয়া বাট অ্যাটেইন্ড গ্রেটার হোমোজেনিসিটি হইচ হ্যাজ প্রোমোটেড আসাম টু বি ফ্রি অ্যান্ড সোভরেইন"। এর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু চাপ। নির্মিত হতে থাকে আজকের আসামের অস্থিরতার প্রেক্ষাপট। প্রাক স্বাধীনতাপর্বে আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ-এর ঘোষণা, “ আসাম শুধুমাত্র অসমিয়াদেরই”।
আসামের সকল সাইন বোর্ডেই অসমিয়া ভাষায় লেখা বাধ্যতামূলক-এই দাবির ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালেই শুরু হয় আসামের জাতিদাঙ্গা। ১৯৫০ সালে দাবি ওঠে দেশভাগের পরবর্তী আসামে থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তাড়াতে হবে। ভাষা দাঙ্গার নৃশংসতা চরমে পৌঁছোয় প্রায় গোটা রাজ্য জুড়ে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার বাঙালী ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে আশ্রয় নেয় পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে। আরও প্রায় ৯০০০০ আশ্রয় নেন বরাক উপত্যকায় ও সন্নিবর্তী এলাকায়। ১৯৬০ সালে ঘোষণা করা হল আসামের রাজ্যিক ভাষা হবে অসমিয়া এবং ক্ষোভে ফেটে পড়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালি অঞ্চল। বরাক উপত্যকায় তারই প্রতিবাদে গড়ে ওঠে ৬১-এর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন।
হিন্দু-বাঙালী এবং মুসলিম-বাঙালী
১৯৪৮ সালের ৪ মে অসম মন্ত্রিসভার উদ্যাগে নীচের নিম্নলিখিত সরকারী বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়:
'পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চল থেকে প্রদেশে শরণার্থীদের প্রবাহের ফলে সৃষ্ট অবস্থা এবং শহরে ও গ্রামগুলিতে শান্তি, শৃংখলা ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করার লক্ষ্যে সরকার তার নীতি পুনর্ব্যক্ত করছে যে অ-আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে কোন পরিস্থিতিতেই জমি হস্তান্তর বা কোন সেটেলমেন্ট করা যাবে না। বর্তমান আপৎকালীন অবস্থায় যারা এই প্রদেশের আদিবাসী নয় সেইসব ব্যক্তিরাও অন্তর্ভূক্ত হবে, যারা অ-আদিবাসী বাসিন্দা কিন্তু এই প্রদেশেই ইতিমধ্যে নিজেদের জমি এবং ঘর তৈরী করেছে এবং আসামকে নিজস্ব ভূমি হিসাবে বিবেচনা করছে। (রাজস্ব বিভাগ সংখ্যা ১৯৫/৪৭/১৮৮ তারিখ ৪.৫.৪৮)।
লব্ধ জমি, জীবিকা, এবং নিরাপত্তা হারানোর ভয়ে দলে দলে বাঙালী নিজেদেরকে অসমীয়া হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করে। ৫১ সালের আগুপিছুতে চর এলাকার ময়মনসিংহ মুসলিমরা নিজেদের অসমীয়াভাষী হিসাবে ঘোষণা করে সেন্সাসে। ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যায় অসমীয়া ভাষাভাষীদের সংখ্যা শতকরা মাত্র ৩১.৪ % ছিল। কিন্তু ১৯৫১ সালে প্রথম স্বাধীনতা-উত্তর আদমশুমারিতে দেখা যাচ্ছে যে অসমীয়া ভাষাভাষী মানুষদের সংখ্যা ১৯৭৩২৫০ থেকে বেড়ে ৪৯১৩২৯২৯ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে বিশ বছরে প্রায় ১৫০% বৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে। এই অলৌকিক ঘটনা ঘটে কারণ ১৯৫১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী অভিবাসী বাঙালি মুসলমানরা তাদের মাতৃভাষা হিসাবে নিজেদের অসমীয়াভাষী হিসাবে ঘোষণা করেছিল।অসমীয়া ভাষা সংখ্যাগুরুর ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় আসামে।
১৯৬১ সালে বরাকউপত্যকার মুসলমানদের একটা অংশ ছিল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু অসমীয়াদের সঙ্গে। যার ফলশ্রুতিতে ঘটেছিল ১৯শে জুনের হাইলাকান্দি ফায়ারিং এবং ১১ জনের মৃত্যু।
এনআরসি নবায়ন
১৯৮১ সালে জনসংখ্যা গণনা হয়নি। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে অসমীয়াভাষীর সংখ্যা শতাংশ হিসেবে কমতে শুরু করে। এই সময় থেকেই অলক্ষ্যে হিন্দুত্ববাদীদের উত্থানপর্বের সূচনা। এবারে প্যরাডাইম শিফট হতে থাকে। আসুর বঙালখেদা সূক্ষ্ণভাবে রূপান্তরিত হতে থাকে মুসলিম খেদা অভিযানে। কেন? উত্তর লুকিয়ে আছে মাত্রই কিছুদিন আগে প্রকাশিত ধর্মভিত্তিক সেন্সাস রিপোর্টে। দেখা গেল আসামের মুসলমান হচ্ছে জনসংখ্যার ৩৪.২% যেখানে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ২৭%। হাইলাকান্দি, বরপেটা, নগাওঁ, ধুবরী, বঙ্গাইগাঁও, গোয়ালপাড়া, করিমগঞ্জ, দরং, মোরিগাঁও জেলায় মুসলমান সংখ্যাধিক্য। অতএব মূল কোপটা নেমে আসছে আসামের মুসলিমদের ওপর। অবশ্য বাঙ্গালী হিন্দু উদ্বাস্তুদের সমস্যা যে তাতে কিছুমাত্র লাঘব হলো তা কিন্তু নয়।
কথাগুলি বলতে হলো এটা বোঝাতে যে আসামের সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে হিন্দু-মুসলমান বাঙালীর একটা বিরাট অবদান রয়েছে। কিন্তু অসমীয়া রাজনীতিবিদেরা চিরকাল সাধারণ অসমীয়াকে বুঝিয়ে এসেছে বহিরাগতরাই আসামের দুর্গতির মূল কারণ। তাদের বিতাড়ন করতে পারলেই এই জমি, এই জলজঙ্গল, এই প্রাকৃতিক অকৃপন সম্পদ, ভাষা-ধর্ম সব কিছুতে আমাদের প্রভুত্ব চলবে। যে করে হোক আমাদের সংখ্যাগরিষ্ট প্রমান করতে পারলেই কেল্লা ফতে। আর তার জন্য প্রয়োজন এদেরকে যত বেশি সংখ্যায় বিতাড়ন। কিন্তু দেশভাগের পর উদ্বাস্তু স্রোত, একাত্তরে খানসেনার দাপটে আতংকিত হিন্দু মুসলিম শরণার্থী আর পরবর্তী সময়ে খেপে খেপে নিজস্ব ও সামাজিক- অর্থনৈতিক কারণে কখনও মুসলিম, কখনও হিন্দু অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে আসামে। আর আসামের রাজনৈতিক নেতৃত্ব শিউরে শিউরে উঠেছে। শুধু সংখ্যালঘু হয়ে যাবার ভয়ে নয়, আসলে তাদের রাজনীতির মূল চালিকা শক্তিই হারিয়ে ফেলার ভয়ে। তাদের এই প্যারানোইয়া একের পর এর জাতিগোষ্ঠিকে বাধ্য করেছে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব প্রদেশ গঠন করতে। যারা পারে নি (যেমন বোডো বা ডিমাসা,কখনও কখনও বরাকভ্যালি) তাদের সঙ্গেও বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। কিন্তু আসামের একবগ্গা নেতৃত্ব এই ক্ষতিকে ক্ষতি বলে স্বীকার করতেই রাজী নয় তা ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত। টানা আন্দোলনে এবং ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় আসামের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু বিতাড়নকে মূলমন্ত্র করে রাজনীতি চালানোর খেসারত আসামকে দিয়েই যেতে হচ্ছে।
এনআরসি এমনই এক বিতাড়ন প্রক্রিয়া। ১৯৮৩ সালে আইএমডিটি অ্যাক্ট চালু হবার পর গত বছর পর্যন্ত ডি ভোটার অর্থাৎ ডাউটফুল ভোটারের সংখ্যা ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৯,৬৩২ জন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো গেছে মাত্র ২০১৭ জনকে। এতদিনের বিদেশী মিথ ভেঙ্গে যায় যায়। তা তো আর হতে দেওয়া যায় না। অতএব সুপ্রিম কোর্টে আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিল করানো হলো এবং তার জায়গায় এলো এনআরসি। পঞ্চাশ থেকে সত্তর লক্ষ বিদেশীর গল্প আবার চালু হলো। যে মানুষটি আইএমডিটি অ্যাক্ট (যার উত্তরাধিকার হলো আজকের এনআরসি নবায়ন প্রক্রিয়া) এর বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চে আপীল করে আইনটি বাতিল করালেন, তিনি ছিলেন তৎকালীন এজেপি সরকারের এমপি সর্বানন্দ সোনোয়াল। কে এই সর্বানন্দ সোনোয়াল? এক কালের প্রবল পরাক্রমশালী বাঙালী বিদ্বেষী আসুর প্রেসিডেন্ট, অগপর শীর্ষনেতা এবং বঙালখেদা আন্দোলনের তাত্বিক স্থপতি হিসাবে "আসামের জাতীয় নায়ক"। কে এই সর্বানন্দ সোনোয়াল? বর্তমানে আসামের বিজেপি মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রী।
আসাম একটি জটিল রাজ্য। তার অসংখ্য টানাপোড়েন। জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নবায়ন প্রক্রিয়ার পিছনেও রয়েছে আরও বহুবিধ কারণ। সব এখানে আলোচনা করাও সম্ভব নয়। দু একটি প্রসঙ্গ মাত্র উত্থাপন করা হলো এখানে।বাকীগুলি নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে আরও বহু দশক ধরে।দেশভাগের মতই এ ক্ষত শুকাতেও সময় লাগবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬
এনআরসি-র সঙ্গে আরও দুটি শব্দ চালু হলো ওআই (অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট) এবং এনওআই (নন অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট)। অসমীয়া ভাষায় প্রথমটি খিলঞ্জীয়া, দ্বিতীয়টি বহিরাগত। এই খিলঞ্জীয়াদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ভাষা ধর্ম, মাটি, সম্পদ সব কিছুর সুরক্ষার জন্য এত আয়োজন। যত বেশি বিতাড়ন তত বেশি সুরক্ষিত হওয়া, এরকমটাই বোঝানো হয়েছে সাধারণ অসমীয়া মানুষকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় একটি রিস্ক ফ্যাক্টরকে কিছুতেই বাতিল করা যাচ্ছেনা। তা হলো বাতিলের তালিকায় যদি হিন্দু বাঙালীর নাম বিপুল সংখ্যক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কী হবে। হিন্দু হিন্দুকে বিতাড়ন করছে এটা ভারতের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ভুল বার্তার দ্যোতক। দ্বিতীয়ত বাঙালী হিন্দু বেশি বাতিল হলে বিজেপির ঘাঁটি এলাকা বরাকভ্যালিতে মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না। অতএব ভাল করে না ভেবেই এবং সারা ভারতে ফায়দা তোলার লক্ষ্যে বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ এনে হাজির করলো। বরাক ভ্যালিতে মুখরক্ষা হলো, সারা ভারতে মুখোজ্বল হলো, কিন্তু আসাম উত্তাল হয়ে উঠলো নতুন করে। এই বিলে মুসলিম বাদ দিয়ে বাকি সব ধর্মের মানুষ যারা ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে আক্রান্ত এবং ভারতবর্ষে শরণার্থী, তাদের ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অসমীয়া নেতৃত্বের মূল উদ্দেশ্যই আবারও ব্যর্থ হবার উপক্রম।
তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে মুসলমান বাদ দিয়ে অন্যান্য ধর্মের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব লাভের সম্ভাবনা উজ্বল। এনআরসি ভিত্তিবর্ষ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত প্রমাণপত্র থাকলে সবধর্মের মানুষের নামই পঞ্জীভুক্ত হবে। কিন্তু নাগরিকত্ব বিল অনুযায়ী ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য সব ধর্মের মানুষই নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছেন, অতএব নাগরিকত্ব পাবার অধিকারী। ফলে যা দাঁড়ালো ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা, মুসলিম ব্যতিরেকে অন্যসব ধর্মের মানুষই নাগরিক হবেন, এটা ধরেই নেওয়া হচ্ছে। ফলে এনআরসি নবায়নে শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যে কারা সঠিক ভারতীয় আর কারা অনুপ্রবেশকারী এটুকু ঠিক করলেই হতো। তবে কি এনআরসি আসলে মুসলিম নাগরিকপঞ্জীতে পর্যবসিত হতে চলেছে?
৩০শে জুলাই এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হচ্ছে। কেউ জানেনা কতজন বিদেশী হিসাবে চিহ্নিত হবে।কুড়ি লক্ষ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ যে কোনও সংখ্যা বাতাসে ভাসছে। কোন ধর্মের মানুষের সংখ্যা কত বেশি তার ওপর নির্ভর করবে আসামের রাজনৈতিক গতিপথ। হিন্দুর সংখ্যা বেশি হলে নাগরিকত্ব বিল দিয়ে পুলটিস মারবে বিজেপি। আর মুসলিম সংখ্যাধিক্য হলে ঐ বিলের আর প্রয়োজন থাকবে না। সেটিকে তাকে তুলে রাখা হবে। এখন আগামী বেশ কিছু ঘন্টা শুধু ফিঙ্গার ক্রস করে অপেক্ষার পালা।