প্রথমেই বলে নেওয়া প্রয়োজন, আমার অসুস্থতাটা কী ছিল ? আমার দশ বছরের সিরোসিস অব লিভার। ক্রিপ্টোজেনিক, মানে অজানা কারণে। ডক্টর অশোকানন্দ কোনার, ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী, ডাঃ সুজিত চৌধুরী হয়ে বর্তমানে ডাঃ কৌশিক দাশের আণ্ডারে চিকিৎসাধীন। তিন বার ভ্যারিসিয়াল ব্লিডিং হয়েছে, একবার রক্তবমি, দুবার ম্যালিনা। আঠারোটা ব্যাণ্ডিং, তিনবার অ্যাসাইটিস নিয়ে দিব্য বেঁচে ছিলাম। আলুনি জীবন ছাড়া কোনও সমস্যা ছিল না। এবারে সমস্যা হলো।
প্রথমে কপালে চিনচিনে ব্যথা। সবাই বল্লো চোখ দেখা। পাওয়ার পাল্টানো হলো, কিছুই হলো না। এরই মধ্যে এক শুভসন্ধ্যায় নাক থেকে রক্ত বেরুতে শুরু করলো। এর আগে বেসিন ভর্তি রক্তবমি করেও যে ভয় হয়নি এবার হলো। প্রথমে ভাবলাম ব্রেন টিউমার। তবু রিক্স নিয়ে গেলাম চেনা ই এন টি কল্লোল দাশের কাছে। তিনি বল্লেন ও কিছু নয়, কমে যাবে। কমে গেলও ব্লিডিং, কিন্তু বাকী সব যে কে সেই। আমার বন্ধু এবং সহকর্মী অসীম আর মৃণাল বল্লো নিউরো দেখাও। দুজনেই বল্লো সন্দীপ পাল। তো গেলাম সন্দীপ পালের কাছে। প্রায় চল্লিশ মিনিট পরীক্ষা করে তিনি বল্লেন এটা নিউরোর কেসই নয়। আপনি ই এন টির কাছে যান। আগে যে ই.এন.টি-র কাছে গেছিলাম, বল্লাম। তিনি বল্লেন তাহলে আগে গ্লোকোমার পসিবিলিটি এক্সক্লুড করুন। গেলাম সি এম আর আই এর ডাঃ দেবাশিস চক্রবর্তীর কাছে। তিনি বল্লেন দু চোখেই গ্লোকোমা কিন্তু মাথার ব্যথা তার জন্য কিনা বলতে পারি না। লেজার ট্রিটমেন্ট হলো কিন্তু ব্যথা কমলো না। সন্দীপ পাল তবুও বলে চলেছেন আমি বলছি এটা নিউরো নয়। তবু যখন আপনাদের সন্দেহ যাচ্ছে না একটা ব্রেন স্ক্যান করে নিন।
কোয়াড্রা থেকে স্ক্যান রিপোর্টে প্রথম জানা গেল ব্রেন ক্লিন কিন্তু লেফট স্ফেনয়েড রিজিয়নে ইনফেকশন এবং ইরোশন। সন্দীপ পাল বল্লেন আবার ই এন টি র কাছে যান। আবার ছুটলাম কল্লোলদার কাছে। তিনি রিপোর্ট দেখে খুবই বিরক্ত হলেন এবং বল্লেন ব্রেন সিটি স্ক্যান করে এসব বোঝাই সম্ভব নয়। আমি বলছি সাইনাসে কিছু হয়নি। তাহলে কী জন্য এই অসহ্য ব্যথা। তিনি বল্লেন এটাকে বলে প্যানিক হেডেক। বলে দু একটা অ্যান্টি ডিপ্রেশন আর ট্র্যাঙ্কুলাইজার দিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে মাস চারেক কেটে গেছে। ব্যথা উত্তরোত্তর বাড়তে বাড়তে রাতে ঘুমানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশে ইন্দ্রাণী আর বিহানও জেগে বসে থাকছে রাতের পর রাত। মাথায় কখনও গরম জল কখনও ঠাণ্ডা জল ঢালছে, কেননা কেউই জানেনা কী করিতে হইবে। আমার মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল ছেঁটে ফেলতে হলো ভোলিনি স্প্রে করার জন্য। মাত্র দেড় মাসে চুলে পাক ধরে গেল। দিনের পর দিন নিজস্ব প্রসক্রিপশনে দিনে একটা, দুটো, তিন-চার-পাঁচ-ছয় করে প্যারাসিটামলের ডোজ বাড়িয়েই চলেছি। যা কিনা আমার লিভারের জন্য নিষিদ্ধ।
আর তারপরই হঠাৎ এক সু প্রভাতে আবিষ্কার করলাম বাঁ চোখে সামনের কিছু দেখছি না। অদ্ভূত অপার্থিব ক্যালাইডোস্কোপের মত চেঞ্জিং প্যাটার্ন যা ভাল করে দেখতে গেলেই মিলিয়ে যায়, অন্য প্যাটার্ন চলে আসে। ডান চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিলেই বিশ্বময় শুধুই যেন কোনও বিচিত্র ক্রাফটসম্যানের নিপুণ দক্ষতায় আঁকা আল্পনা। আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার শরীর বলতে তখন শুধুই মাথা ভর্তি আল্পনা আর যন্ত্রণা। পাপু (ভাস্কর) আর দেরী না করে ছুটলো কৌশিকের কাছে। ডক্টর কৌশিক দাশ, পিজির হেপাটোলজিস্ট, অল্পবয়সী ছেলে, যিনি আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন সিরোসিসের হাত থেকে। চোখের বিষয়টি শুনে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন নিউরোলজিস্ট বিমান রায় কে। গোটা বিষয়টা বললেন। অ্যাডভান্সড নন-কমপেনসেটেড সি-এল-ডি, তাই জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া করা রিস্কি এটাও বললেন। পরদিন পিজিতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে বিমানবাবুর কাছে পৌঁছানো গেল। তিনি সেই ব্রেন স্ক্যান প্লেট দেখেই বল্লেন এটা নিউরো কেস নয়। আপনারা ই-এন-টির কাছে যান। বলেই পিযূষ রায়কে ফোন করলেন। বল্লেন আমাদের হেপাটোলজির কৌশিক একজনকে পাঠিয়েছে, তাকে আমি তোমার কাছে রেফার করছি। আবার লাইন। নতুন টিকিট। অনন্ত প্রতীক্ষা। অবশেষে তিনি এলেন।
পিযূষ রায় পিজির সিনিয়ার ই-এন-টি। আমার থেকে খুব বড় হবেন না । কিন্তু প্রায় সবাইকে তুই তুমি করে কথা বলেন। ঘর ভর্তি পেশেন্ট বা তার আত্মীয়স্বজন। তাদের সামনেই চিৎকার করে আমার কেস হিস্ট্রি পড়লেন। খুব বিরক্ত লাগছিল। এবার বললেন জিভ বার করো। করে ঈঈঈঈঈঈঈ বলো। এ তো মহা সমস্যা। ঈঈঈঈঈঈঈঈ করতে গেলেই জিভ ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। দু তিন বার চেষ্টার পরেই তিনি অধৈর্য হয়ে পড়লেন। টেবিল থেকে একটা কাঁচের বাটিতে রাখা দু টুকরো গজ তুলে নিলেন।তারপর বল্লেন এবার জিভ বার কর আর ঈঈঈঈঈঈঈঈ বল। হঠাৎ করে তুই তে নেমে যাওয়ায় আমি জিভ বার করলাম বটে কিন্তু কোনও শব্দই বেরুলো না। তিনি এবার অদ্ভূত দক্ষতায় খপ করে বাঁ হাতে আমার ভ্যাংচানো জিভ চেপে বল্লেন বল ঈঈঈঈঈঈঈঈঈ, নৈলে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। এতক্ষণে আমার গলা দিয়ে ঈঈঈঈঈঈঈ বেরুলো। ডান হাতে একটা টর্চ নিয়ে তিনি দেখলেন এবং বললেন লেফট স্ফেনয়েডে যে মাস টা আছে সেটাকে অপারেট করতে হবে, তারপর সেটার বায়াপ্সি হবে, বায়াপ্সি বোঝো তো, ক্যানসার হয়েছে কিনা দেখবে। স্যাম্পল নিয়ে রায়-ত্রিবেদী যাবে। ওখানে ভাল করে। সেটার রিপোর্ট দেখে তারপর চিকিৎসা শুরু হবে। তবে একটু সময় লাগবে। নিউরোলজিস্ট থাকবে, হেপাটোলজিস্ট থাকবে, অ্যানেসথেসিস্ট থাকবে আর আমি থাকবো অপারেট করে মাস টাকে বার করার জন্য। ভর্তি থাকতে হবে, আমি বিমানের সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।
বেরোনোর সময়ই সিদ্ধান্ত নিলাম অপারেশন করাতে হলে বাড়ির পাশে কল্লোলদার কাছেই করাবো। আর ম্যালিগনেনসি থাকলে কিচ্ছু করাবো না, দিব্য রোদে পিঠ দিয়ে বসে বিক্রমের গান শুনে, টিউবে আমাদের যুগের কিছু গান শুনে কাটিয়ে দেবো। আমার বন্ধু মৃণাল আদতে ক্যামেরাম্যান, কিন্তু চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোনও বিষয় ওর কাছে বেশী আকর্ষণীয়। আমার এই মাথা ব্যথা বিষয়টা ওই ডিল করেছে। বাকী তিনজন ইন্দ্রাণী, সুবর্ণা আর ভাস্কর (পাপু) তো বাড়ির লোক। তো মৃণাল ফোন করলো অগতির গতি সন্দীপ পালকে। তিনি তখন গাড়িতে। খানিকটা শুনেই বললেন আমার কাছ কী চাইছেন। মৃণাল বল্লো একজন ভালো ই.এন.টি সার্জন। বললেন ফোনটা হোল্ড করুন। তারপর নিজেই ফোন-ব্যাক করলেন আজ রাতে কাঁকুড়গাছিতে ডক্টর ইন্দ্রনাথ কুণ্ডুর কাছে চলে যান। আমি কথা বলে নিয়েছি। গেলাম। প্লেট দেখলেন এবং বল্লেন এটা ফাঙ্গাল ইনফেকশান। একটা উলবোনার কাঁটার মত কিছু নাকের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে, মনিটর দেখিয়ে, বললেন এই দেখুন ফাঙ্গাস নাক অবধি নেমে এসেছে। অপারেট করতে হবে। তারপর যা বললেন হুবহু ডাঃ পিযূষ রায়ের কথা। কিন্তু সফিস্টিকেটেড ভাষায়। মিনমিন করে বল্লাম ডাক্তারবাবু কোথায় করবেন অপারেশনটা। তিনি বল্লেন ড্যাফোডিলে। আমি ভেবেছিলাম আর.জি.কর বলবেন, কেননা তিনি ওখানকারই ডাক্তার। প্রশ্ন করলাম আমার একলাখ টাকার মেডিক্লেইম আছে তার মধ্যে হবে তো। তিনি গম্ভীর মুখে বল্লেন হয়ে তো যাওয়া উচিৎ। তবু একটা এম.আর.আই করিয়ে নিন ব্রেনের। ব্রেন স্ক্যান করতে আমি খুবই উৎসাহী কারণ প্রতিবারেই মনে হয় ছোটবেলায় শোনা গল্প আইনস্টাইনের ডাবল ব্রেন ছিল। প্রতিবারেই মনে হয় আমার রিপোর্টে এমনই কিছু বেরুবে। শুধু ফাঙ্গাল ইনফেকশানের রিপোর্ট বেরোয়। এবারো তাই বেরুলো।
যেহেতু আমি সি.এল.ডি পেশেন্ট, খেলাটা সহজ হয়ে গেল। জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া করা যাবে না, তাই স্পেশাল অ্যানেসথেসিস্ট ডাকতে হবে, ড্যাফোডিলে করা যাবে না, অ্যাপোলো গ্লেনঈগলস এ করতে হবে, হেপাটোলজিস্ট ছাড়া করা যাবে না, তার জন্য মহেশ গোয়েঙ্কার আণ্ডারে অ্যাডমিশান নিতে হবে….গোটাটা তখন হাতের বাইরে। আমি দশ বছরের সিরোসিস পেশেন্ট। কিন্তু আমি সিরোসিস পেশেন্ট কিনা জানতে, আমার ফাইব্রোস্ক্যান থেকে শুরু করে এণ্ডাস্কোপি, এমনকি এ.এফ.পি (লিভর ক্যানসার হলো কিনা জানতে), পি-টাইম, কমপ্লিট হেমোগ্রাম, এল.এফ.টি সব করে আবিষ্কার করা হলো যে আমি একজন সিরোসিস পেশেন্ট। তবে অপারেশন করা যাবে। আমাদের বরাকে চালু কথা ছিল হারাইয়া, মারাইয়া, কাশ্যপ গোত্র। এও তাই দাঁড়ালো,শুধু একলাখের এস্টিমেশানটা চড়াং করে দু লাখ হয়ে গেল। বায়াপ্সি রিপোর্ট বেরুলো ফাঙ্গাল ইনফেকশান…নো ম্যালিগন্যান্সি। বাকী রইলো ফাঙ্গাসের চরিত্র নির্ধারণ। সেটা একমাসের আগে কিছুতেই জানা যাবেনা। এদিকে মাথাব্যথা বেড়ে গেল টেন ফোল্ডস, বাঁচোখে নেমে এলো সম্পূর্ণ আঁধার, আর ডান চোখ ঝাপসা যেন হারাঙ্গাজাও এর কুয়াশা ঝরো ছে। সন্দীপ পাল সব রিপোর্ট দেখলেন, আমাকে আবারও দেখলেন এবং বললেন এখনও ফাঙ্গাসের ট্রিটমেন্ট শুরু হয়নি? দুটো অ্যান্টিবায়োটিক তো আমিই দিতে পারতাম। কিন্তু ফাঙ্গাসের চিকিৎসা আলাদা। ইমিডিয়েটলি এমন কারও কাছে যান যিনি ফাঙ্গাসের চিকিৎসা করেন এবং মনে রাখবেন এ চিকিৎসা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী। কার কাছে যাবো এমন কাউকে তো চিনিই না । তখনই উঠে এলো ডক্টর বিভূতি সাহার নাম। এই মুহূর্তে এই বিষয়ে কোলকাতায় যাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই।
ডক্টর বিভূতি সাহা সব শুনে বললেন কালই গিয়ে অ্যাপোলো থেকে বায়াপ্সির স্লাইড গুলো চেয়ে এনে রায়-ত্রিবেদীতে রিভিউএর জন্য জমা দিন। কিন্তু …। কালই জমা দিয়ে দিন। ডাক্তার সাহা কম কথার মানুষ। ঠিক দুদিন পর রায়-ত্রিবেদি রিপোর্ট দিল ফাঙ্গাসের নাম অ্যাসপারজিলোসিস। ভর্তি হলাম কারমাইকেল স্কুল অব ট্রপিকাল ডিজিসেস। আর উপায়ান্তরও ছিল না। অ্যাপোলো সব টাকা খেয়ে নিল যে। অ্যাসপারজিলোসিস এর চিকিৎসার দুটো মাত্র পদ্ধতি। এক ইন্টারভেনাস লাইপোজোমাল এফ-বি, আর একটা ভোরিকনোজল। যেহেতু আমি লিভারের পেশেন্ট, ঠিক হলো যে লাইপাজোমাল দেওয়া হবে। কাজ হলো মিরাকলের মত। গত আট মাসের মধ্যে আমি প্রথম অনুভব করলাম মাথা ব্যথা ছাড়াও মানুষের ঘুম হয়। যে ঘুমের ওষুধ এবং এনার্জী বুষ্টআপের ওষুধ এতদিন কাজ করে নি তারাও কাজ করতে শুরু করেছে। আমার নষ্ট চোখের চিকিৎসার জন্য ট্রপিকাল থেকেই পাঠানো হচ্ছিলো মেডিকাল কলেজের আর.আই.ও (রিজিওনাল ইনসটিটিউট অব অপথালমোলজি)তে। প্রথম দু'তিন দিন নিশ্ছিদ্র অন্ধকার, তারপর একদিন ভর দুপুরে আবিষ্কার করলাম আলো ক্রমে আসিতেছে।
তবু অসুখ সারলো না। লাইপোজোমাল দেবার সঙ্গে সঙ্গে চড়চড় করে ক্রিয়েটিনিন .৮৭ থেকে বেড়ে ৩.৫ হয়ে যাচ্ছিল। পনেরোটা ভাইলের জায়গায় আটটার বেশী দেওয়া গেলনা। অতএব শুয়ে থাকা ছাড়া কোনও কাজ নেই। চোখে দেখিনা। লেখা পড়া দুটোই গেছে। বড়দিনে সান্টা ক্লজ এসে ঘুরে যাবে, আমায় পাবেনা। বিহান পুপে তরী-কে দেখি না মাস খানেক হতে চললো। আমার বাড়ি, আমার বই, আমার ল্যাপটপ ছুঁয়ে দেখিনা কতকাল হয়ে গেল। শুধু সারা দিন, সারা রাত, জল খাও, ওষুধ খাও, খাবার খাও, ঘুমাও। কেননা ক্রিয়েটিনিন কমছে না বলে ইন্ট্রাভেনাস দেওয়া যাচ্ছে না। অন্য যে ওষুধটা দেওয়া যেতে পারতো ভোরিকোনাজল, সেটাও সিরোসিস পেশেন্টের লিভার অ্যাফেক্টেড হয়ে যেতে পারে ভয়ে দিতে পারছে না।
সেদিন ডক্টর সাহা আসতেই বল্লাম আমি একটু দেখতে পারছি। তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। বল্লেন কোন চোখে ? যেটায় কিচ্ছু দেখতে পান না ? সেদিন যে বল্লেন টর্চের আলোও দেখতে পাচ্ছেন না ? আজ মনে হচ্ছে পাবো। ডানচোখ চেপে বন্ধ করে প্রথমে একটু দেখতে পেলাম মোবাইল টর্চের আলো। আলোটা নড়ছে। দ্বিতীয় পরীক্ষার দিনে, চোখের সামনে কিছু একটা ধরলেন, বল্লেন রংটা বলুন। বল্লাম সম্ভবত নীল। প্রতিটি পরীক্ষার পর একটা হুইল চেয়ার চাপিয়ে নিয়ে যেতো আমাদের দিনের অ্যাটেনডেন্ট রাওদা…. আর.আই.ও তে। শেষ দিন ডক্টর সাহা যখন ঢুকেছেন খেয়াল করিনি। ভোরিকোনাজল চালু হয়ে গেছে। লোডিং ডোজ দেওয়া হয়েছে তিন দিন আগে। বাঁ চোখ ঠিক হয়নি, চেষ্টা করছি, এমন সময় সদলবলে তাঁদের প্রবেশ। ডক্টর সাহা বললেন অবাক হয়ে, বই পড়তে পারছেন ? আমি বল্লাম অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু চেষ্টা করছি। ঠিক আছে শুয়ে পড়ুন। সব দেখলেন, মাথা ব্যথা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। বল্লাম করছে না। এবার চোখ। সেই ডান হাত দিয়ে ভাল চোখ চেপে ধরে বল্লেন চেনা কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? বল্লাম ঐতো ইন্দ্রাণী। ভাল করে তাকিয়ে দেখুন। দেখলাম যেখানে ইন্দ্রাণী দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে নেই। তবে কি অন্য কোথাও দাঁড়ালো? লুকোচুরি। দেখলাম ডাক্তারের পিছন থেকে ইন্দ্রাণীর শাড়ী। বল্লাম আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। শিশুর মত হাততালি দিয়ে উঠলো সব ডাক্তারেরা। আমি বল্লাম ঠিক বলতে পেরেছি? ডক্টর সাহাও উচ্ছ্বসিত কিন্তু সংযত। বল্লেন ইমপ্রুভ তো করেইছে দেখা যাচ্ছে। আমি বল্লাম তবে আমাকে ছেড়ে দিন, আর ভাল্লাগছে না হাসপাতালে থাকতে। গভীর আলোচনায় নিমগ্ন হলেন ডাক্তাররা। শেষপর্যন্ত ঠিক হলো শনিবার ছেড়ে দেওয়া হবে। আর ভোরিকোনাজলের মত দামি ওষুধ? কিন্তু সরকারী কতৃপক্ষ সহায়। ঠিক হলো দশ দিনের ওষুধ দিয়ে দেওয়া হবে। তারপর। তারপর আমরা দেখছি কী করা যায়। অবশেষে শনিবার। আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে…..
ফিরে আসার পর থেকে এখনও অ্যাসপারজিলেসিস আমায় ছেড়ে গেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। ভোরিকোনাজল খুব কম ডোজে খেতে হচ্ছে। তাতেই সারা শরীর সানবার্ণ হয়ে যাওয়া আটকানো যায়নি। বাঁ চোখে দেখতে পাচ্ছি বটে কিন্তু দু চোখে দু রকমের ভিশন, ডাবল ইমেজ দেখছি। পড়তে লিখতে অসুবিধা তো হচ্ছেই। হাত পা গুলো ল্যাগব্যাগ করছে, দু দিন সিঁড়িতে স্টেপ মিস হয়ে পড়েও গেলাম। কিন্তু লাস্ট ল্যাপ যত এগিয়ে আসছে উত্তেজনা বাড়ছে।