-জীবনানন্দ দাশ
কয়েক বছর ধরেই বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ন’তলার ক্যান্টিন থেকে কলকাতা ঢেকে যাওয়া কালো ধোঁয়ার স্তর দেখে ভাবতাম সবকিছু কদিনের জন্য বন্ধ হয় না কি! তারপর আচমকাই এল ২০২০ সালের এই লকডাউন। এর মধ্যে 'নেচার' গবেষণাপত্র জানিয়ে দিল ১৭ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমেছে পৃথিবী থেকে। কলকাতার আকাশও যে তার সাক্ষী। গত ক’দিন ধরেই হোয়াটস অ্যাপের স্টেটাসে স্টেটাসে কলকাতার সান্ধ্য-আকাশের ছবি দেখছি, মন যে আনন্দঘন আবেগে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে না, সে কথাই বা বলি কী করে!! আগের মাসেই তো, এই-ই প্রত্যাশা-বাণীর মঁ-মঁ গন্ধে হাত স্যানিটাইজড করে অ্যাত্ত বড় পোবন্দ শানালাম, কিন্তু আহা, তারপর থেকে যে আর রাতে ঘুম নাই, চোখের তলায় ইয়া চওড়া কালো দাগ তড়বড় তড়বড় করে ফুটে উঠছে রোজ। কেননা এক মাসের মধ্যেই, ১১ই জুলাইতে, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ক্যারিবীয় সাগরের পলি থেকে সংগৃহীত ক্ষুদ্র জীবাশ্মের রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করে প্লিওসিন যুগের সময়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের এর ঘনত্বকে পুনর্গঠন করেন, তাঁরা জানিয়েছেন ২০২৫ সালের মধ্যে, বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বিগত ৩.৩ মিলিয়ন বছরের উষ্ণতম সময়ের চেয়েও বেশি হবে।
সাম্প্রতিকতম সময়ে, 'I can't breathe' কথাটি শ্বেতাঙ্গ বনাম কৃষ্ণাঙ্গের বর্ণবৈষম্যের জেরে উচ্চারিত হলেও পরিবেশ-বিজ্ঞানীরা কিন্তু একে বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বলেই মনে করেছেন। বায়ুদূষণ, জলদূষণ, জলবায়ু-পরিবর্তন থেকে বর্জ্য-নির্গমণের প্রেক্ষিতে যে অদূররবর্তী দুনিয়া দুদ্দার গতিতে এগিয়ে আসছে তা ডিস্টোপিয়ান। হতাশার কথা কে বলতে চায়? সবাই তো আনন্দ-উচ্ছল জীবনের প্রত্যাশী। কিন্তু সদ্য পেরিয়ে আসা পাঁচ মাসের মধ্যেই যে নতুন ও ভয়াবহ সময়ের অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করলাম এবং করছি, তাতে বিন্দুমাত্র বাড়াবাড়ি না করে এটাই বলতে চাই যে, পিকচার আভি বাকি হ্যায়। একটি নতুন ভাইরাসের উৎস-সন্ধানে গিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পিন্ডি চটকানোই যায়, কিন্তু তার চেয়ে বরং খানিক নিজেদের দিকে ফিরে তাকানো যাক।
পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে। পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে । এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে। কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি। ১৯৯৩ সাল থেকে ইটালির প্রেসেনা হিমবাহের প্রায় এক তৃতীয়াংশ গলে গেছে ইতিমধ্যেই। গতবছর নভেম্বরেই হ্যানওভার শহরে অনুষ্ঠিত একটি বিজ্ঞান সম্মেলনে এই পার্মাফ্রস্টে গলন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, “The increase in the active layer started in the 1990s and the long-term thawing of the permafrost only started very recently, the last 10 years or so. It’s just the beginning. But it will accelerate with time, and we should expect the degradation of permafrost to pick up over the next few decades”। এখন প্রশ্ন একটাই, এই বরফ গলে গেলে কী হবে? জলস্তর বাড়বে, নয়তো আরেকটু গরম বাড়বে – এই তো। একদমই ঠিক কথা, বরফ গলে জল হয়ে সমুদ্রের জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে আর সূর্যের আলো প্রতিফলনে ফিরে না গেলে পৃথিবীর উষ্ণতা আরও খানিক বেড়ে যাবে। আসলে, প্রশ্নটা এখানেই শেষ হয়ে গেলে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না, কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরও অমোঘ একটা প্রশ্ন, সেটা হল, এর ফল কী হবে ? ফল হবে এই যে, আমরা একটা অপ্রতিরোধ্য চক্রব্যূহে আটকা পড়ব, যেখান থেকে মৃত্যু ছাড়া বেরিয়ে আসার কোনও উপায় নেই।
(সূত্রঃ এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়)
বিশ্ব-উষ্ণায়ণের কারণে পার্মাফ্রস্ট গলে গেলে দুটো মারাত্মক ফল হবে – এক, এই সব হিম-মৃত্তিকায় অন্তরিত থাকা জৈব-পদার্থের উন্মুক্তকরণ, যা পরোক্ষে বিশ্ব-উষ্ণায়ণের সুহৃদ গ্রিন-হাউস গ্যাস মিথেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড পৃথিবীর আকাশে ছড়াবে যা আরও পার্মাফ্রস্ট গলিয়ে দেবার পক্ষে কাজ করবে। দুই, জৈব-পদার্থের উন্মুক্তকরণের ফলে পৃথিবীর বুকে বেরিয়ে আসবে হাজার হাজার বছর আগের আদিম, অপরিচিত ও অজানা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার দল এবং সমুদ্রের জলে গিয়ে মিশবে তারা। হোস্টের সন্ধানে গিয়ে আক্রমণ করবে মানব শরীরকে, এরকমই এক নভেল করোনা ভাইরাসের মত। টমাস গিলস্পি, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বলেছেন, “I am not at all surprised about the coronavirus outbreak. The majority of pathogens are still to be discovered. We are at the very tip of the iceberg”। এখন কেউ কেউ বলতেই পারেন, এতদিন আগের ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া কি আর বেঁচে থাকতে পারে? উত্তর হল হ্যাঁ, দিব্যু পারে। পার্মাফ্রস্ট থেকে লক্ষ বছর আগের বীজানুমুক্তি সম্ভব কিনা প্রসঙ্গে, আইস-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ডা. ক্লেভোরি বলেছেন যে, “you can revive bacteria from deep permafrost.’’।
(সূত্রঃ Ars Technica)
শুধুমাত্র তাই-ই নয়, এগুলির কার্যকারিতা অক্ষুন্ন আছে কিনা দেখার জন্য একটি পরীক্ষাতে, একটি ডিএনএ ভাইরাস সফলভাবে একটি অ্যামিবাকে আক্রান্ত করেছে বলেও জানা গেছে। ডা. ক্লেভোরির সহযোগী ডা. অ্যাভারজেল জানাচ্ছেন যে, “This is a proof of principle we are running in the lab. We are able to revive viruses out of ancient permafrost samples. So far we have not been able to go up to 30,000 years, but it may come at some point.”। এ তো গেল ডিএনএ ভাইরাসের কথা, কিন্তু করোনার মত আরএনএ ভাইরাসেরও কি এভাবে উত্থান সম্ভব? সে ব্যাপারে বিজ্ঞানিদ্বয় জানাচ্ছেন, “Nobody has ever tried to revive RNA viruses from the permafrost because RNA viruses, for example, do not infect amoeba or other things. And the only way you can assess the survival of viruses is using hosts. The viruses come into contact with a proper host then they will reactivate. So if you put a human in a place with frozen viruses associated with pandemic then those humans could be infected and replicate the virus and start a new pandemic. This is a warning from nature and it’s going to happen again and again and again, I’m sure.”। স্পিলওভার: অ্যানিম্যাল ইনফেকশন অ্যান্ড নেক্সট প্যান্ডেমিকের লেখক ডেভিড ক্যোয়ামেন সাম্প্রতিককালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, “আমরা বৃক্ষনাশ করেছি ; আমরা প্রাণীহত্যা করেছি কিংবা তাদের খাঁচাবন্দী করে বাজারে অথবা চিড়িয়াখানায় পাঠিয়েছি। আর এভাবেই আমরা বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত করে অজস্র অজানা ভাইরাসদের তাদের প্রাকৃতিক আশ্রয়দাতার শরীর থেকে আলাদা করেছি। এমতাবস্থায় ভাইরাসদের প্রয়োজন হচ্ছে একটি নতুন আশ্রয়দাতার এবং দুর্ভাগ্যক্রমে প্রায়শই, সেটা আমরাই”। সুতরাং, এ ব্যাপারে যে আরএনএ ভাইরাসের বিন্দুমাত্র অসুবিধা হবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য, আর হচ্ছেও তো না। কিন্তু তাই বলে কি এটা বলা যায় যে, আর্কটিক অঞ্চল বা পার্মাফ্রস্ট অঞ্চলের ডিএনএ ভাইরাস অতিমারি সক্ষম নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, “The two that we know could come out of the permafrost are anthrax and that’s pox viruses, other than that it’s Pandora’s box”। এখন প্রশ্ন ওঠে, এই যদি অবস্থা হয়, তবে আমাদের দীর্ঘ বিজ্ঞান সাধনার সুফল কোথায়? ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা ভ্যাকসিনের তাৎপর্য কোথায়? আমাদের সমাজে যেভাবে চিকিৎসার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকে একটা বানিজ্যিক নির্লজ্জতায় পরিণত করা হয়েছে তাতে একথা তো প্রায় প্রমাণিত হয়েই গেছে, আমরা ক্রমাগত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্ট হয়ে যাচ্ছি, এমতাবস্থায় যদি একটা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্ট অতিমারির আক্রমণ চলে তবে যেটা হবে তাকে ডা. ব্রিজিটা ইভেনগার্ডের কথায় বললে, “The antibiotic resistance pandemic will kill annually more than the coronavirus pandemic.”।
এ তো গেল অতিমারির অশনি সংকেতের কাহিনী। অন্যদিকে যে বিশ্ব-উষ্ণায়ণের নিমিত্ত গ্রিন-হাউস গ্যাসের নির্গমণের কথা বলেছিলাম, সে প্রসঙ্গে আসা যাক। কেননা অতিমারী যদি ফল বা রোগলক্ষণ হয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যতম কারণ। একথা আমরা জানি যে, পার্মাফ্রস্ট এ পৃথিবীর প্রায় ১৬০০ গিগাটন কার্বন সঞ্চয় করে রেখেছে বুকের ভেতরে, যা প্রকৃতিতে বর্তমানে যা আছে তার প্রায় দ্বিগুণ। আজ অব্দি গলনের কারণে যতটা বেরিয়ে এসেছে, তা মাত্র ১০% । বর্তমানের গতি অব্যাহত থাকলে আর মাত্র ৮০ টা বছর রয়েছে, বাকি কার্বন উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ায়। কিন্তু, গতি যে ক্রমবর্ধমান, স্থির নয়। অন্যদিকে আরও আছে, মিথেন যা কার্বনের থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি শক্তিশালী, তার কাহিনীও নেহাত কম রোমাঞ্চকর নয়। পার্মাফ্রস্ট গলনের ফলে যত হিম-মৃত্তিকা সমুদ্রের স্থির জলে মিশবে, ততই বাড়বে পলির পরিমাণ। সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে মিথেনের বুদবুদ। সাইবেরিয়া অঞ্চলেও এখন নাকি সামান্য মাটি খুঁড়েই আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে, কেননা মিথনের স্তর ক্রমশ আকাশচুম্বী।
(সূত্রঃ নিউজিল্যান্ড জিওগ্রাফিক)
এমনকি সমুদ্রের বরফ যত গলবে ততই সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত না হয়ে বাড়িয়ে তুলবে উষ্ণতা, আর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে আরও বরফ গলে যাবে। এই পার্মাফ্রস্ট গলে যাবার ফলে, উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চলে কোলইমা নদী এবং তদসংলগ্ন দুভান্নি ইয়ার অংশ থেকে উদ্ধার করা যাচ্ছে আদিযুগের ডালপালা, অন্যান্য উদ্ভিদজ পদার্থ এবং বরফ যুগের প্রাণীর দেহাবশেষ অর্থাৎ বাইসনের চোয়াল-শিং, ঘোড়ার ফিমারস ইত্যাদি সব ম্যামথের বিশাল হাড়গোড়। ৩রা জুন, ২০২০, উন্নয়নের রথচক্রে সুমেরুবৃত্তের ১৮০ মিটার ওপরে - রাশিয়ার উত্তরাংশের একটি বিচ্ছিন্ন শহর নরিলক্সে - খনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি কোম্পানির জ্বালানি তেলের ট্যাঙ্ক ফেটে নদীর জলে মিশে গিয়েছে সাড়ে সতেরো হাজার টন ডিজেল। আমবারনয়া এবং দাদিকান নদীর জল এখন রক্তরাঙা। পুতিন সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষনা করেছেন আর ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন যে, রাশিয়ার ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুর্ঘটনা নাকি এটাই। এখন এটা রাশিয়ার ইতিহাসের কথা নাকি পৃথিবীর, সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। কেননা, এর ফলেও যে ঐ অঞ্চলের উষ্ণতা-বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে, একথা বলাইবাহুল্য, প্রমান মিলতে শুরু করেছে ১৭ জুলাই, ২০২০ এর একটি রিপোর্টে - সাইবেরিয়া অঞ্চলে গত ছ’মাসে অতিরিক্ত পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ১১ লক্ষ হেক্টর বনভূমিতে দাবানল হয়েছে, যা থেকে পরিবেশে মিশেছে প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং তা ভবিষ্যতের জন্য বাড়িয়েছে আরও কিছুটা তাপমাত্রা। এই সব হিমাঞ্চল বাঁচাতে এখন নাকি বড় বড় ত্রিপল আর বালির বস্তা চাপিয়ে সূর্যকিরণ আটকানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ব্যাপারটা হাস্যকর নাকি স্তম্ভিত শিহরনের সত্যিই জানি না।
(সূত্রঃ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক)
তাছাড়া এসব তো আজকের কথা নয়। ২০১৫ সালের প্যারিস কনফারেন্সে জানানো হয়েছিল যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বর্তমানে ১.৫ চলছে)। এর ফলে প্রায় ৪২০ মিলিয়ন মানুষ তাপপ্রবাহের শিকার হচ্ছেন, বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘ক্লাইমেট মাইগ্রেসন’। হারাচ্ছি, বহু প্রাণী এবং প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ। এমনকি প্রবাল প্রাচীরসহ ৭৭০,০০০ বর্গমাইলের পার্মাফ্রস্টে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। আমরা যদি ২০৩০ এর মধ্যে ৪৫ % গ্রিন-হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস না করতে পারি ও ২০৫০ এর মধ্যে পরিবেশকল্যানকর প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটাতে না পারি তবে ফলাফল হবে চরম বিনাশ। আর্কটিক রিসার্চ স্টেশনের প্রধান নিকিতা বলেছেন, “Fighting climate change needs multiple actions from multiple different fronts. Only if we combine them all can we make the future not entirely miserable.”।
কিন্তু, গর্তজীবীর আলোকপ্রাপ্তির সাধ যে ততটাই বেমানান যতটা মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন। প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, “The Paris accord would have been shutting down American producers with excessive regulatory restrictions like you would not believe, while allowing foreign producers to pollute with impunity. What we won't do is punish the American people while enriching foreign polluters. I'm proud to say it - it's called America First.” এবং তিনি ট্যুইট করে বলেছিলেন, “The Paris Agreement isn’t working out so well for Paris. Protests and riots all over France. People do not want to pay large sums of money, much to third world countries (that are questionably run), in order to maybe protect the environment. Chanting “We Want Trump!” Love France.”। অ্যামাজনে আগুনের দৃশ্য আমরা দেখেছি ইতিমধ্যেই, সেখানকার প্রেসিডেন্টের ভূমিকাও। আর, ভারতবর্ষেও, ওয়েস্টার্ন ঘাটে যেখানে বিজ্ঞানীদের মতে, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে গত ১০০ বছরে ৩৩,০০০ বর্গকিলোমিটার বা বনভূমির ৪০% হ্রাস পেয়েছে সেখানে, রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় হিন্দুস্তান টাইমস একটি রিপোর্টে বলছে যে, “A 20-year-old rail line project in the Western Ghats in Karnataka, which was rejected by several statutory bodies in the past and remained shelved amid fears the extent of irreparable damage it could cause to primary forests and unique biodiversity, has got the State Board for Wildlife (SBWL) authorities’ nod March 20, reversing its rejection move 11 days earlier.”।
(সূত্রঃ Johanna Anjar Photography)
সুতরাং, কাকস্যপরিবেদনা। আজ কত বছর ধরে যে আমরা বিশ্ব-উষ্ণায়ন, অরণ্যনাশ, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কে শুনে আসছি ইয়ত্তা নেই, রচনা লিখে লিখে রায়-মার্টিন-পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের হাতে চড়া পড়ে গেল, অথচ না ঘুম ভেঙেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের না কর্পোরেট মহামহিমদের, আর মধ্যবিত্ত (নিম্নবিত্ত নয় কেননা চরম অসাম্যের সমাজে যাদের পেটের ভাত জোটাতে হিমসিম অবস্থা, তাদের পরিবেশ নিয়ে ভাবতে বলার মত নৃশংস কদর্যতা আর হয় না) সাধারণ মানুষের তো ‘আমরা চা খাব না, খাব না আমরা চা’-ধারার মিমসর্বস্ব রোজনামচা থেকে ফুরসৎ মেলা ভার। তবুও, এখন জনমানসে একটাই স্বপ্নসত্যির প্রার্থনা - করোনার ওষুধ এলেই নিশ্চিন্ত মাস্কবিহীন জীবনযাপন ফেরত চাই। কিন্তু এইখানেই জানিয়ে রাখা জরুরি যে, পৃথিবীর সামগ্রিক জ্বর প্রতিরোধে একটি অ্যান্টিবডি হল এই নভেল করোনা, তাতেই প্রায় দশ লক্ষ অ্যান্টিজেনের জীবন চলে গেছে এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়েছে সযত্নলালিত বিশ্ব-অর্থনীতির স্পাইক-প্রোটিন। সুতরাং, আসছে দিন মানুষের জন্য পৌনঃপুনিক-অতিমারির প্রাবল্যের সম্ভাবনার দিক থেকেও মোটেই আচ্ছে নয়, একেই কি বলে সাইটোকাইন-স্ট্রম? ইয়ুকাঘির কাউন্সিল অফ এলডারস এর প্রধান ব্যাচেস্লাভ শাদরিন বলেছেন, ‘Nature doesn’t trust us any more’ । সুতরাং, করোনা অতিমারি যে আগামী দুনিয়ার যথার্থ ট্রেলর, বোল্ড অ্যান্ড আন্ডারলাইন করে বলে দিতে হবে কি?
Science, state and society, এই তিনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই, আদৌ যদি আমরা বাঁচতে পারি।
Sir,
The "trailer" to the dystopian world ahead, its underlying cause and the implications that follow are alarming indeed, as evident from your introspective study.
Though it is now proven that environmentalism has only been on a tailspin through all these years, I firmly believe that there's still reason enough for us to keep hope, no matter how unrealistic it may seem because going by your words from the June 13, 2020 article uploaded on this site (কোভিড-১৯ ও CO2 অবনমনের প্রত্যাশা—প্রাপ্তি নাকি প্রত্যাখ্যান), "hopefulness is what keeps this human race going, we haven't given in to nihilism yet" ["আপাতত জনজীবনে প্রত্যাশাই মূল স্রোত, আমরা এখনও নিহিলিস্ট হয়ে যাইনি।"].
We, as a society ought to keep faith in our student community, the prospective game-changers of tomorrow. It rests upon the state to come up with a well chalked out education policy (of course, free from any political bias) so that our future corporate giants and policymakers are well equipped to tackle even the gravest of environmental issues. Needless to say, the existing laissez-faire policy in this regard would be of no help. Environmental Studies (or, as we popularly call it, EVS) has to be an ever encompassing and inclusive field of study at schools and colleges alike and not just a topic to prepare a mundane project on at the end of each academic year. The fault with the present system lies in the very way EVS as a subject or any part of it thereof in any other discipline is dealt with in any given course curriculum, be it the weightage assigned in terms of marks or the chronology of appearance in the course structure. Students, like any other participant in a market-economy, respond to incentives and therefore should be provided with the appropriate impetus directed towards achieving the desired goal. This social introspection, in my opinion, is the need of the hour.
Last but not the least, I shall remain ever thankful to you for coming up with an article that questions the very basis of our existence on this planet and serves as an exemplary eye-opener to the grim future awaiting humankind in the path ahead.