শব্দহীন সাইকেল আসে৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। ঘরঘর করে আহ্লাদে ডেকে ওঠেনি পোষা মাদীটা। টের পায় সাড়ে তিন বছর৷ খুলে দেয় কাঠের পৌনে চার ফুটে হুড়কা আর চেয়ার টেনে ছয় ফুট উঁচুতে লোহার ছিটকিনী৷ "আব্বু আসছে"৷ এইবার গলাগলি ঘুম-ফজর আমার..
ফিশফিশানি দুপুর আসে৷ রঙিন ফড়িং, বোয়ামে নীল চোপড়া মাছ! ঘুম আর ভলো লাগে না৷ মনে হয় দিনমান খেলি "ঘুঘু'র তোর তরকারি"। খেলতে খেলতে জহর গড়িয়ে আছর৷ পালানো বাছুর। সুতো ছিড়া ঘুড়ি৷ সন্ধ্যায় রুলটানা খাতা বেঁকে বেঁকে যায়৷ ক্লাস ফাইভের পদ্য লেখার রোগ…
আব্বা আমাকে কি আর মারবা না কুত্তা বিলাইয়ের মতো? আমাকে দিয়ে কি আর নিজ হাতে আর ছেড়াবে না সেইসব বিভ্রান্তি? কথায় কথায় বলবা না- "তুই কুলাঙ্গার, তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর"৷ কান্না মাগরিবের আযান আমার…
এখন আমি তেতাল্লিশটি ঘোড়ার মিলিত হ্রেষা, তবু কান্নাকে তুড়ির মতো বাজাতে পারি না৷ এখন আমি বুঝি- কী কষ্ট পরের বাড়িতে বেড়ে ওঠা, প্রতি পদে প্রতারিত হতে হতে ঘরের বউটিও যখন প্রেমনগর থেকে অন্য কোথাও রিক্সা করে চলে যায়, তখন বুঝি কতটা অসহায় তুমি! ক্লান্তি তোমার এশার জামাত…
তবু পাঁজরের বাতাস ফুঁকে বড় করেছ নিদয় চৈত্র- পুত্র তোমার৷ আরেক পুত্র তাকে তো ঠিক ত্রিশ দিনের মাথায় রেখে এসেছিলে মসজিদ, পুকুর আর সরু রাস্তা বেষ্টিত নিরালায়। একটা নামফলকও জোটেনি ওর।
বাবা, এখন আমি চল্লিশ এবং প্রথম হার্টএট্যাক নিয়ে ভাগ্যবান৷ মেয়ের মুখে দেখি কুসুম ও কণ্টক৷ এখন আমি বুঝতে পারি- মাটিতে থাকলে পোকামাকড়, মাথায় রাখলে উকুন শকুন, জলে দাওদেনো, উনুনে ফোসকা পড়ার ভয়! তাই "পাড়ার বাইরে কখনোই নয়, পাড়ার বন্ধু থেকে শত হাত দূর"!
বাবা, আমি তো চোখফাঁকি দিয়ে সেই কবে চলে গেছি ডিপটিপাড়া, কাউগা-পাঁচবাড়ি, দশমাইল৷ এখন আমি অর্থহীন পথে ছিটিয়ে দিতে চাই অর্থের বীজ৷ বাবা, তুমি আর বলো না- "বিসিএস দে বিসিএস দে৷ দশ বছর ধুমায়া কামাবি, তারপর হজ করে তওবা-তাছির-সুফি"৷
খোদার কসম বাবা, আমার দ্বারা হবে না এইসব৷ আমি তো আইএসএসবি'র দেয়াল টপকে পালিয়ে এসেছিলাম কবিতা লিখব বলে৷ এসে দেখি তুমি আব্বু থেকে আব্বা, আব্বা থেকে বাবা, এখন কেবলি শূন্যস্থান...
একটা শব্দহীন সাইকেল৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। তুমি এলে আমি স্বেচ্ছায় ছিড়ে ফেলব এইসব খর্বাকৃতি পংক্তি, কারুবাসনা, বেহেস্ত দোজখ আমার…