ফোন বেজে উঠতেই শ্যামশ্রীর গলা ভেসে এলো। ছটফটে, তরতরে শ্যামশ্রীর গলা নয়। রাগী, কড়া শ্যামশ্রীর গলাও নয়। চটপটে, স্মার্ট নয়। একটু ভেজা ভেজা। দরদী। নরম।
ত্রিলোকেশের এখন ঠিক যেমন দরকার তেমনটি।
যখন যেমন দরকার, তেমনটি।
যখন খোলামেলা চাই তখন খোলামেলা।
যখন লাজুক চাই তখন লাজুক।
যখন লাস্য চাই তখন লাস্য।
এইভাবেই। ঠিক এইভাবেই প্রোগ্রাম করা আছে।
কন্ঠস্বর, চলাফেরা, ওঠাবসা, ফুড হ্যাবিট, যৌনতা , এমনকি পটি টাইমিং পর্যন্ত।
শ্যামশ্রী না। শ্যামশ্রীর ক্লোন। শ্যামশ্রী দত্তগুপ্ত টু। হাইট পাঁচ পাঁচ। রঙ মাজা। চুল স্ট্রেইট। গোল্ডেন হাইলাইট।
অবিকল ওরিজিনাল শ্যামশ্রী।
শ্যামশ্রীর চেহারা নিয়ে তো কোন সমস্যাই ছিল না ত্রিলোকেশের। এককথায় ভেরি অ্যাট্রাকটিভ। হাইলি ডিজায়ারেবল। শ্যামশ্রীর নিজের অবশ্য সেক্সি শব্দটা বেশি পছন্দ।
এটা ত্রিলোকেশের একেবারে হজম হত না। যদিও পরের বৌকে সে হামেশা সেক্সি বলে কমপ্লিমেন্ট দিয়ে থাকে কিন্তু শ্যামশ্রী সম্পর্কে সে ভীষণ সেনসিটিভ ছিল। তার নিজের মতে। শ্যামশ্রীর মতে শব্দটা হবে পজেসিভ। ওভার পজেসিভ। সাফোকেটিংলি পজেসিভ।
ছয় ফিট এক ইন্চির ত্রিলোকেশ দত্ত এইসব মতান্তর বরদাস্ত করে না। তার কথাই শেষ কথা। তার মা শুনেছে। ঠাকুমা শুনেছে। বাবা অবশ্য শোনেনি। ত্রিলোকেশের মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি গত হয়েছেন। ত্রিলোকেশ সেল্ফ মেড ম্যান। আই টি সেক্টরে প্রিটি ফেমাস। শ্যামশ্রীকে সে নিজেই পছন্দ করেছিল। শী ওয়জ আ ট্যালেন্টেড সিংগার।
ওয়জ।
ছিল। এখন নেই। কেন নেই?
ত্রিলোকেশ তো কখনও শ্যামশ্রীকে গান ছাড়তে বলেনি!
বরং সে বলেছে গো ফর রেকর্ডিংস। টেক মিউজিক লেসনস। প্রোগ্রাম করো।
আসলে শ্যামশ্রী ঠিক প্রোগ্রাম বা রেকর্ডিং এর মেয়ে নয়।
কেন নয় সেটা ত্রিলোকেশ ঠিক বুঝতে পারতো না।
অথচ অসম্ভব ভালো টোনাল কোয়ালিটি। মসৃণ অথচ দানাদার গলা।
ত্রিলোকেশ অত গান টান বোঝে না। কিন্তু সবাই বলতো শ্যামশ্রীর গলা অসামান্য।
সো ডু রিওয়াজ। অনুষ্ঠান করো। নাম কামাও। লেট পিপল নো ইওর ট্যালেন্ট।
ত্রিলোকেশের অফিসে হিউজ অ্যানুয়াল প্রোগ্রাম হয়। নাচ,গান। খানা পিনা। পার্টি টপ লেভেলের।।
শুভা মুদ্গল আসেন। রশিদ খান এসেছেন। রেখা ভরদ্বাজ কি খুশি শ্যামশ্রীর গান শুনে।
আরে ওয়াহ! ক্যা কোমল নিখাদ লগায়া।
ব্যস। ঐ একবার।
শ্যামশ্রী আর কখনো অ্যানুয়াল ইভেন্টে গেলই না।
নাও হু কুড টলারেট দিস?
পরের দুবছর একা গেল ত্রিলোকেশ।
অ্যান্ড সাচ এমব্যারাসিং কোয়েশ্চনস!
তিলুকে তাই ডিসিশনটা নিতেই হল।
তিলু। হ্যাঁ।ঐ নামেই ত্রিলোকেশকে ডাকতো শ্যামশ্রী।
অ্যান্ড হি হেটেড দ্যাট।
আফটার টু ইয়ারস।
এর বেশি ধৈর্য্য রাখা অসম্ভব।
লং ড্রাইভে যেতে যেতে হুট করে গাড়ি থামিয়ে দিত শ্যামশ্রী। মাঠ। পুকুরের ধার। বাঁশঝাড়।
ড্রাইভ করতে ভালোবাসত নিজে।
ত্রিলোকেশ রিল্যাক্স করতো।
শ্যামশ্রী ওয়ান।
ওর দীঘল শরীর ঘিরে সাদা হলুদ ইক্কতের আবরণ।
পায়ের রূপোর পায়জনিয়া।
ও গেয়ে উঠতো..দেখিয়া সজলঘন...অথবা দূরে কোথায় দূরে দূরে....
কেমন পেনসিভ সুর। ত্রিলোকেশের এসব ভালো লাগত না।
ফাঁকা মাঠে কাকে গান শোনাচ্ছে তার বৌ?
আরে বাবা, গাইতে হলে ইউ নিড অডিয়েন্স। হ্যায় না?
চিরদিনের টপার ত্রিলোকেশ। পরীক্ষাতে টপার। চাকরিতে টপার। বৌয়ের সিলেকশনেও টপার হতে হবে। তাই তো শ্যামশ্রী ওয়জ সিলেক্টেড।
কিন্তু এরকম বৌ নিয়ে সংসার প্রিটি ডিসগাস্টিং। এত মুডি। এত আনপ্রেডিকটেবল।
একদিন শ্যামশ্রী নিজেই বললো।
আমি চলে যাচ্ছি তিলু।
হাউ অফেনসিভ!
ত্রিলোকেশ দত্তকে কেউ ছেড়ে যেতে পারে!
ইজ ইট পসিবল?
রিসেপ্টিভ এন্ডে কখনো থাকেনি সে।
কিন্তু শ্যামশ্রীকে আটকানো গেল না। মুম্বাই, তিনহাজার স্কোয়ার ফিটের দুপ্লে, শাঁসালো বর, পার্টি, কন্টিনেন্টাল ট্যুওর ছেড়ে সে চলে গেল বৃষ্টিগুড়ি নামে একটা জায়গাতে। সেখানে নাকি স্কুলে মাষ্টারি করে সে।
পিওর ননসেন্।
কিন্তু ডিভোর্স উড বি আ স্ক্যান্ডাল।
রাম, শ্যাম, যদু, মধু নয়। ত্রিলোকেশ দত্ত। সি ই ও। আরহানহাসিস।
শ্যামশ্রীকে লুজ করা যাবে না। শী ইজ আ প্রাইজ পিস।
তাই গ্যাস, অম্বল, বদহজম নয়। ফোন কলস। মানি। এবং ক্ষমতা।
অ্যাজ আ রেজাল্ট- শ্যামশ্রী টু।
কেউ জানল না। বুঝল না। ত্রিলোকেশের মাও না।
একদিন শ্যামশ্রী টু উবের করে চলে এলো ত্রিলোকেশের
বাড়িতে।
ত্রিলোকেশ বললো- নাচো। রাম্বা হো রিমিক্স।
শ্যামশ্রী টু নাচে
ত্রিলোকেশ বললো- আজ অফিস পার্টিতে তোমাকে গজল গাইতে হবে। চুলে ফুল দেবে।
শ্যামশ্রী টু চুলে ফুল দিয়ে গাইল।
বললো, তোমাকে কি বলে ডাকবো?
ত্রিলোকেশ একটু ভেবে বললো- টিডি।
শ্যামশ্রী টু ঘাড় নাড়লো।
শ্যামশ্রী ওয়ানকেও ও তাইই ডাকতে বলেছিল। সে হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছিল, মাগো, তুমি কি আমার অনার্স ক্লাসের স্যর নাকি তিলু?
ওর এই হেসে উড়িয়ে দেওয়া ব্যাপারটা জঘন্য লাগতো ত্রিলোকেশের। জঘন্য লাগতো ওর ইচ্ছেগুলো। অনিচ্ছেগুলো।
ত্রিলোকেশ মধ্যরাতে শ্যামশ্রীর নাইটির স্ট্র্যাপ খুলতে চাইলে, কতরাত শ্যামশ্রী বলেছে, আজ ইচ্ছে করছে না।
ত্রিলোকেশ নোংরা লোক নয়। কিন্তু তার ইগো হার্ট হত।
শ্যামশ্রী টু কখনো না বলে না।
ত্রিলোকেশ চাইলে সে আপেল কেটে দেয়, রসালো করে ভেজে দেয় সসেজ।
শ্যামশ্রী ওয়ান ত্রিলোকেশ কফি খেতে চাইলে, তাকে কফি দিয়ে নিজে চা নিয়ে বসতো। ত্রিলোকেশ আপেল খেতে চাইলে একগাদা পেয়ারা কেটে নিয়ে এসে বলতো, বেশি ভিটামিন আছে। খাও।
শ্যামশ্রী টু কখনো অবাধ্য হয় না।
সে ত্রিলোকেশকে কখনো তিলু বলে না। চা চাইলে দুজনের জন্যই চা করে।
অ্যাভোকাডো আর ব্রকোলি স্যালাড চাইলে মুড়িমাখা নিয়ে আসে না শ্যামশ্রী ওয়ানের মতো
শরীর উন্মুক্ত করতে বললেই সে ত্রিলোকেশের জন্য বিছিয়ে দেয় তার মখমলসদৃশ দেহ।
অতিথিদের সামনে গান গাইতে বললে সে গান গায়। রেকর্ডিং করবে জানুয়ারিতে।
টিডির অফিস প্রোগ্রামে সে নিয়মিত গায়িকা।
শুধু তার টোনাল কোয়ালিটি একটু সরু হয়ে গেছে।
তার কোমরও সরু।
ত্রিলোকেশের ইরিটেশন হয় না।
আজ ফোন করে টিডি শ্যামশ্রী টু কে বললো, এমা দাৎসি খাবো। রেড ওয়াইন সহযোগে।
শ্যামশ্রী টু মধুর কন্ঠে বললো, ইট উইল বি রেডি।
বাড়ি ফিরে টিডি বললো , ওয়েস্টার্ণ শুনবো আজ।
আর লেট আস প্ল্যান বেবি নেক্স্ট ইয়ার।
শ্যামশ্রী টু একটা জেরেমি লোপেজের স্যাক্সোফোন চালিয়ে দিল।
তারপর পুতুলের মতো ঘাড় নেড়ে বললো, ওকে। নেক্সট ইয়ার হুইচ মান্থ?
টেবল পরিস্কার হয়ে গেলে শ্যামশ্রী টু স্নানে গেল। যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো, টিডি, আজ কোন রঙের নাইটি পরবো?
ত্রিলোকেশ দত্ত আজ কেমন যেন অন্যমনস্ক। অথচ সবকিছু তার পছন্দমতোই হয়ে চলেছে।
আজ ঝিবঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। নভি মুম্বাইতে বৃষ্টি বড়ো সুন্দব।
কিন্তু স্যাক্সোফোনের শব্দ পার হয়ে কি একটা সুর ত্রিলোকেশের কানে চলে আসছে।
সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না।
অন্যমনস্কভাবেই বললো, পিংক। বেবি।
গানটা কি শ্যামশ্রী ওয়ান গাইতো?
সে সুরটা ভাঁজবার চেষ্টা করলো। পারলো না।
শ্যামশ্রী টু বাথরুমে চলে গেছে।
ত্রিলোকেশ ফোনটা নিয়ে শ্যামশ্রী ওয়ানকে পেতে চাইল।
যাস্ট ওয়ান্স। মাত্র একবার।
ত্রিলোকেশকে মনে করতেই হবে।
কিন্তু বৃষ্টিগুড়ি একটা ধ্যাধ্ধেড়ে গ্রাম।
সেখানে কিছুতেই ত্রিলোকেশের কল পৌঁছালো না।
স্যাক্সোফোন আরো জোরে করে দিল ত্রিলোকেশ।
মুখ বিকৃত করে বললো. ডিসগাস্টিং!