আমরা আপনাদের কাছে ডাক পাঠিয়েছিলাম তাদের খপ করে ধরে ফেলে, ঝপ করে লিখে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে। এসে গেছে তারা। আগামী কয়েকদিন ধরে রোজ দুটি-তিনটি করে তারা এসে হাজির হবে বুলবুলভাজার পাতায় - টাটকা ভাজা, গরমাগরম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে বা না লাগলে দুই বা আরো অনেক লাইন মন্তব্য লিখে জানিয়ে দিন সে কথা। মন চাইলে, গ্রাহক হয়ে যান লেখকের। ... ...
মীরজাফর তো শুনে হাঁ। কুচ মানে? এ কি রাজকার্য না ফুক্কুড়ি, যে সক্কালবেলা একটু মেজাজ খারাপ হয়েছে বলে লালমুখোদের সঙ্গে একদম যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে? রাজা-বাদশাদের খেয়ালকে একটু তোয়াজ করতে হয়—সবাই জানে, কিন্তু এই আস্ত গাছপাঁঠাটা যেমন আহাম্মক, তেমনই বদমেজাজি—রাজনীতি তো বোঝেই না, আদবকায়দাও না। নবাব না হনুমান বোঝা মুশকিল, ওদিকে ধড়িবাজি আছে দুশো আনা। কোন এক ভাগাড় থেকে তুলে এনে মোহনলালকে মহারাজা বানিয়ে মাথার উপর বসিয়েছে, সেটা আবার ওর চেয়েও এককাঠি বাড়া। সে মালটা বিষ খেয়ে অবশ্য এখন আধমরা, দরবারে নেই—এই এক রক্ষে। ... ...
মানুষকে কখনো কখনো শার্দূল হয়ে উঠতে হয় / বাড়িতে তখন পোষ মানানো হচ্ছে / কুকুরের বাচ্চা / পোষ্য এবং পোষক দু'জনেই লোভনীয় / খোঁড়া পা নিয়ে আমার বিপ্লবী জেঠু / শার্দূলকে ভেবে বসছে কুকুর / কুকুর নিজেকে জেঠু ভেবে / সেজে উঠছে অযোধ্যায় যাবে বলে / পোষ্যদের খাদ্য প্রয়োজন / প্রয়োজন সঠিক সময়ে / সঠিক সমস্যা বোঝা / একটা হাড়ের লোভে শার্দূল ছুটছে / পেছনে পা খুঁড়িয়ে জেঠু / হাড় এবং / লোভ এবং / খোঁড়া পা / হো হো করে হেসে উঠছেন / আমাদের প্রণম্য / সন্তোষ রাণা ... ...
সকাল সকাল একটা আম পাই। তার গায়ে সদ্য পাড়া আঠার গন্ধ। যাঁরা এই গন্ধ জানেন, তাঁরা মানবেন, কীভাবে মাতাল করে তোলে এই গন্ধ। কোনও কৃত্রিম গন্ধ একে প্রতিস্থাপন করতে এখনও পারে নি। অন্তত আমার জানা মতে। সোঁদা মাটির গন্ধ একেক জায়গায় একেক রকম। একেকটা আমের জাতের একেক রকম গন্ধ। কিন্তু আঠার গন্ধ বোধহয় এক। নাহলে ৬-১০ বছরের এক বালকের নাকে স্মৃতিতে ডুব মেরে থাকা গন্ধ কীভাবে আজ ঝড় তুলে দিলে প্রৌঢ় মনে! মায়ের গায়ের গন্ধ যেমন শিশুকে চিনতে শেখায়, তেমন আমের গন্ধ সাবালকত্বকে। একা একা আম পাড়া ঢিল মেরে, গুলতি ছুঁড়ে, আঁকশি দিয়ে, আরেকটু বড় হলে গাছে উঠে--সাবালকত্বের লক্ষণ। বয়স নয়, আনন্দের। পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়া যেমন আরেক আনন্দ। আনন্দের কী কোনও ব্যাঙ্ক আছে? এআই কী এই আনন্দ কোনও দিন দিতে পারবে? পারবে লিখতে সহজ সহজ সুখ আর অতি সরল আনন্দের গন্ধের কথা। মায়ের হলুদ মাখা আঁচলের, গায়ের গন্ধ কি দিতে পারবে কোনও রোবট? ... ...
জলের মধ্যে গোলা নীল রংটা নিজের গালে ঘষছে সুদাম।ঘষতে ঘষতে একটা মুখ মনে পড়ছে। সিনেমার মত। তারপর হঠাৎ নিজের আয়না দেখা মুখটা মনে পড়েছে। শুষ্ক, খড়খড়ে। একটা যন্ত্রণা ঠেলে উঠে আসছে। রংটা জোরেই ঘষে দিচ্ছে ও। হঠাৎ ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে। ওঠারই কথা। তবে গালের ব্যথায় নয়, মনের ব্যথায়। গৌরী যদিও ইচ্ছে করে মারেনি। সুদাম এক বুক কাদার মধ্যে একেবারে পা ডুবিয়ে সিনেমার হিরোদের কায়দায় গৌরীকে কথাটা বলতে চেয়েছিল। "এখুনি আন্ধার নামবে, তুই পাড়ার ওই ম্যাদামারা ছেলেটা না! কথা বলার মুরোদ নেই, এমন গায়ের কাছে এসেছিস কেন? দেখছিস লা কাজ করতিছি ক্ষেতে! যা এখান থেকে!" কথাগুলো বলেই কোদালটা হাতে তুলে নিয়েছিল গৌরী। কাজ করার জন্যে। সুদাম এত কাছে এসে পড়েছিল যে কোদালের বাঁটের আঘাত লাগতে একটুও দেরী হয়নি। ... ...
ফোন বেজে উঠতেই শ্যামশ্রীর গলা ভেসে এলো। ছটফটে, তরতরে শ্যামশ্রীর গলা নয়। রাগী, কড়া শ্যামশ্রীর গলাও নয়। চটপটে, স্মার্ট নয়। একটু ভেজা ভেজা। দরদী। নরম। ত্রিলোকেশের এখন ঠিক যেমন দরকার তেমনটি। যখন যেমন দরকার, তেমনটি। যখন খোলামেলা চাই তখন খোলামেলা। যখন লাজুক চাই তখন লাজুক। যখন লাস্য চাই তখন লাস্য। এইভাবেই। ঠিক এইভাবেই প্রোগ্রামড করা আছে। কন্ঠস্বর, চলাফেরা, ওঠাবসা, ফুড হ্যাবিট, যৌনতা , এমনকি পটি টাইমিং পর্যন্ত। শ্যামশ্রী না। শ্যামশ্রীর ক্লোন। শ্যামশ্রী দত্তগুপ্ত টু। হাইট পাঁচ পাঁচ। রঙ মাজা। চুল স্ট্রেইট। গোল্ডেন হাইলাইট। অবিকল ওরিজিনাল শ্যামশ্রী। ... ...
তার স্ত্রী তাকে ফিরে আসতে না করেছিল, অনেক অনুনয় করেছিল, কিন্তু সে শোনেনি। বিমানবন্দরে নামামাত্রই তাকে আটক করা হয়েছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল রাজধানী থেকে বহু দূরে এই বন্দিশিবিরে। সে জানত এরকমই হবে। সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো অন্য একটি ঘরে, পার হতে হতো একটি করিডর, এক পাশে দেয়াল, অন্য পাশে পর পর আটটি কামরা, এর মধ্যে একটি ছিল তার। কিন্তু সেটা সে বুঝতে পারত না, কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকত চোখ। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলে বুঝতে পারত বাড়িটি থেকে সে বের হয়েছে। এর পরে ত্রিশটি পদক্ষেপ, অন্য একটি বাড়িতে ঢোকা। সেখানে একটি ঘরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে চোখের বাধন সরিয়ে নেওয়া হতো। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আসত কমিসার। প্রথম দিন সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি কে আপনি জানেন?’ কমিসার বলেছিল, ‘আমি জানি আপনি জনগণের শত্রু, এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।’ বেশি জানা কমিসারের জন্য ভালো নয়। ... ...
গলির শেষ প্রান্তে একসময় বাজত সুরের রজনীগন্ধা গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে, শীতের মিঠে রোদে ছাদে উঠে মেলে দিত ছাপা কাপড়, ছড়িয়ে যেত রেক্সোনা সাবানের চেনা গন্ধ কৈশোর চাইত আরো একটু গায়ের কাছে যেতে ঘেঁষে যেত ঝুঁকে আসা গাব গাছের পাতা কাটা কাটা ছায়ায় বসে ফিসফিস করে কানের কাছে কেউ বলত নিষিদ্ধ গল্প – একের পর এক শীতের চাদরের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা দুধ সাদা হাতে আলতা চুঁয়ে পড়া দেখতে বলত মিঠে ফিনফিনে গলা বলত চাদরে জড়িয়ে রাখা আছে সিন্দবাদের গল্পের ঝুলি আলাদিন হবার প্রলোভন দেখাত দুপুরের ছাদ – ... ...
যারা ভোর-ভোর উঠে স্বাস্থ্যচর্চা করে পার্কে দৌড়ায় ঠিক করে দেখলে আসলে তারা মৃত্যুভয়ে দৌড়ায় একথা লিখেই মনে পড়লো— তুমিও তো ঠিক করে দ্যাখোনি কখনো আমি কেন এভাবে দৌড়ে গেছি তোমার দিকে পড়ে গিয়ে, হোঁচট খেয়ে, আবার হেঁটে গেছি এক বর্ষা আগুনের ভিতর দিয়ে শুধুই তোমার পাবার জন্য! ... ...
কলকাতার মানুষজনেরা এইসবের হুজ্জোতির খবর রাখে না। তাদের মন ভুলোবার হরেক চিজ আছে। এইরকম ঝামেলাওয়ালা জায়গায় দুদিনের ছুটি কাটাতেও কেউ আসে না, যতই জাগ্রত তীর্থস্থান হোক না কেন! এটা একেবারেই সীমান্ত-এলাকা, কাঁটা তারের এ পাশে লাল নিশান ওড়া ভ্রামরী দেবীর মন্দির, খুব জাগ্রত জ্যান্ত তীর্থ, ওপাশে সবুজ মাথাওয়ালা গম্বুজ, সোনা পীরের থান। মানত রাখলে নাকি কেউ খালি হাতে ফেরে না। দুপাশেই যতদূর চোখ যায় সবুজ খেত, যার বুক চিরে দৌড়ে চলে গেছে মানুষ সমান কাঁটাতার। ছুঁচলো কাঁটা, খুব শক্ত তার, আর দবেজ। সেই ছুটন্ত তারের লাইন বরাবর রাতবিরেতে বুটজুতোর মসমস, সন্দেহ জাগলেই ঘন ঘন হুইসিলের আওয়াজ। তবে তাতে কী আর কিছু বন্ধ থাকে! যার যা করার সে তাই করে যায়, কাজের মতো কাজকাম চলে, নদীর মতো নদী বহে যায়। শুধু মাঝেমধ্যে কাঁটাতারের এপাশে ওপাশে আচমকা দুম শব্দের সঙ্গে লাশ পড়ে। চাপা আর্তনাদ, দৌড়োদৌড়ির শব্দ। তারপর সব চুপচাপ। ... ...
হলুদ ফুল ছিলো চোখের পাতা ছুঁয়ে শহরও আলোময় পাপে ও উত্তাপে সে ছিলো মধুমাস, মেলাতে কত লোক কেনো যে স্মৃতিরতি, কেনো যে নীরবতা কেনো যে মনে পড়ে, পাথুরে অবকাশে ... ...
প্রশ্নটা হল, কিভাবে নিকেশ করবে আমায় ? গলা টিপে শ্বাসরোধের সাবেকি পন্থায়? আমার কুতকুতে চোখগুলো কি তখন বল্লমে গাঁথা শুয়োরের মতো ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে ? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিস্ফারিত দৃষ্টি প্রাণপণে ধরে রাখতে চাইবে আততায়ীর শেষ ছবি? নাকি মরবো খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো দীর্ঘ যন্ত্রণাময় কদর্য কায়দায়? কাটা পাঁঠার মতো জগঝম্প জুড়ে, শ্বেত পাথরের তেলা মেঝেয় বমি -পায়খানায় একাকার হয়ে ? আর নাকি প্রকাশ্য রাস্তায় পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জের গরম বুলেট ফুঁড়ে দিয়ে যাবে মগজ? কিছু রক্তমাখা ঘিলু ছিটকে গিয়ে লাগবে কি কোন বেনামী ল্যাম্পপোস্টের গায়ে? কে জানে হয়তো দু একটা অশ্লীল স্মৃতিও তখন গড়িয়ে নামলো পোস্টের গা থেকে। আমার পড়ে থাকা নিথর লাশের দিকে চেয়ে রাস্তার লোক কি চমকাবে খুব? খুব ? বোধহয় পুরনো প্রফেসিকে সমর্থন জানিয়ে বলে উঠবে, – এ তো জানাই ছিল! আজ নয়তো কাল এটা হওয়ারই কথা! বেশ হয়েছে শালা! ... ...
সলিলের পড়াশোনায় মাথা ছিল না। তাই মাধ্যমিকের পর কাকা ওকে একটা বিলেতি মালিকানাধীন ফ্যাক্টরিতে হেল্পার হিসাবে ঢুকিয়ে দিলেন। সুপারিশ ছাড়া ওখানে ঢোকা মুশকিল। কাকা বলেছিলেন, পড়ায় যখন তোর ইচ্ছা নেই ভালো করে হাতের কাজটা শেখ। সেটা মন দিয়েই শিখেছিল সলিল। ফলে ক্রমশ হেল্পার থেকে মেকানিকে পদোন্নতি হোলো। মাইনে, ওভারটাইম মিলিয়ে রোজগার মন্দ নয়। তিনকূলে ঐ কাকাই সলিলের একমাত্র আপনজন। কাকার বাড়ীতেই ছোট থেকে মানুষ। কাকার অবস্থা ভালো। মনটাও দরাজ। তাই চাকরি পাওয়ার পরেও সলিলের থেকে এক পয়সাও নিতেন না তিনি। বলতেন, আমি আর কদিন, পয়সা জমা, তোর একটা নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই তো দরকার। ... ...
‘আমি কক্ষনো অন্য কারুর জন্য কাঁদি নি জানো। যতবারই কেঁদেছি তা কেবল নিজের জন্য, নিজের না পাওয়া, ক্ষোভ, দুঃখ থেকে চোখে জল এসেছে। বাবা মা মারা যাওয়ার পরেও না, দাদা বৌদি সম্পর্ক কেটে চলে যাওয়ার পরেও না।‘ প্রায় একদমে বলে ফেলে একটু থমকে যায় ও, আঁচল ঘুরিয়ে এনে মুখটা মোছে। মাঝারি হাইটের গাঁট্টাগোট্টা মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘আমি’। ... ... ‘তুমি যেমন অন্যের জন্যে কাঁদো নি কখনো আমার ঠিক তার উলটো। আমি নিজের লোকদের জন্য মাসের পর মাস কেঁদেছি, পাড়ার লোক যাদের রোজ দেখি তাদের কারুর কিছু হলেও কেঁদেছি। এমনকি কাগজে, টিভিতে কোথাও আগুন লেগে, জলে ডুবে, বিল্ডিং ভেঙে, ঝড়ে বন্যায় মানুষ মারা যাবার খবরেও হাউ হাউ করে কেঁদেছি। সেই থেকেই আমার নাম হয়ে গেছে খোলাকল। ... ... লম্বা চওড়া খেলোয়াড়ি ধরণের চেহারার মেয়েটির নাম দেওয়া যাক ‘তুমি’। ... ... সে মুখে একটা মিচকে হাসি ঝুলিয়ে চুপচাপ দেখছিল এদের। আমি বা তুমি কেউ কোন কথা বলছে না দেখে আস্তে করে গলা খাঁকারি দিল। ... ...
শব্দহীন সাইকেল আসে৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। ঘরঘর করে আহ্লাদে ডেকে ওঠেনি পোষ মাদীটা। টের পায় সাড়ে তিন বছর৷ খুলে দেয় কাঠের পৌনে চার ফুটে হুড়কা আর চেয়ার টেনে ছয় ফুট উঁচুতে লোহার ছিটকিনী৷ "আব্বু আসছে"৷ এইবার গলাগলি ঘুম- ফজর আমার.. ফিশফিশানি দুপুর আসে৷ রঙিন ফড়িং, বোয়ামে নীল চোপড়া মাছ! ঘুম আর ভলো লাগে না৷ মনেহয় দিনমান খেলি "ঘুঘু'র তোর তরকারি" খেলতে খেলতে জহর গড়িয়ে আছর৷ পালানো বাছুর। সুতো ছিড়া ঘুড়ি৷ সন্ধ্যায় রুলটানা খাতা বেঁকে বেঁকে যায়৷ ক্লাস ফাইভের পদ্য লেখার রোগ… ... ...
থাইল্যান্ডে দোল নেই। কিন্তু নববর্ষের দিনে আছে জল ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা। এপ্রিল মাসে বেজায় গরম। লাওস কামবোদিয়া থাইল্যান্ডের পথে ঘাটে সেদিন জল আক্রমণের ধুম পড়ে যায়; মারো পিচকারি! সেটা ছবিতে মাত্র দেখেছি। আমাদের এই মন্দিরে তার একটা ছোটো এডিশন আছে – এক ভিক্ষু ঝ্যাঁটা দিয়ে সবার মাথায় জল ছড়িয়ে দেন। দুঃখের বিষয় যে থাইল্যান্ড বা লাওসের স্টাইলে আমরা তাঁকে জল কামান দিয়ে আক্রমণ করতে বা তাঁকে পাল্টা ঝাপটা মারতে পারি না! নববর্ষের পরবের অন্য রিচুয়ালগুলি মোটামুটি অনুসরণ করা হয়ে থাকে ন্যাপহিলের অনুষ্ঠানে - যেমন প্রার্থনার পরে ভিক্ষুদের খাদ্য দ্রব্য দান। সকলে আনেন কিছু না কিছু, সার দিয়ে বসে থাকেন দানের জন্য, ভিক্ষু সেটি গ্রহণ করলে পরেই স্থান ত্যাগ করতে পারেন। অল্প বয়েসি ছেলে মেয়েরা বয়স্ক নারী ও পুরুষের পা ধুইয়ে দেন, পিতা মাতার গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক সেটি। পুণ্য অর্জনের আরেকটি পন্থা - বুদ্ধ মন্দির বা স্তূপ নির্মাণে শ্রমদান। মাঠের মধ্যে বালি দিয়ে তৈরি স্তূপ মন্দির আছে, দূরে এক কোনায় রাখা বালির পাহাড়; সেখান থেকে পাত্র ভরে কিছুটা বালি এই নির্মীয়মাণ মন্দিরে পৌঁছে দেওয়াটা একটা সিম্বলিক সহায়তা। নববর্ষের এই দিনে নতুন জামা পরা আবশ্যিক, নিজের বা পরিবারের জন্য অর্থ ব্যয় কম,দান বেশি এবং মদ্যপান বারণ! ... ...
আমরা দেশের বাড়ি যেতুম ২৯ শের রোজায়। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ নয়ত আর একদিন মানে তিরিশটি রোজা সম্পূর্ণ করে ঈদ পালন। তখন আর চাঁদ দেখার ঝামেলা নেই। হাদিস মোতাবেক তিরিশটি রোজা হয়ে গেলে অবশ্যই পরদিন ঈদ। এখন যেমন,"যাহ! সৌদিতে আগে ঈদ হয়ে গেল। আমাদের হল না কেন?” বলে বিভিন্ন বিতণ্ডার শুরু তখন সেসব কেউ ভাবতও না। চাঁদ দেখা গেলে ঈদ হবে সেই অঞ্চলে নয়ত রেডিওয় কান পেতে থাকতেন মুরুব্বিরা- নাখোদা মসজিদের ইমামসাহেব যা ঘোষণা করবেন মেনে নিতেন সবাই। ... ...
সে আমাদের ভুল বানানের চিঠি, সে আমাদের মুগ্ধ চেয়ে থাকা। পাখির ডানায় শেষ বিকেলের আলোয় রাখাল সাজার পাতার বাঁশি রাখা। সে আমাদের গোপন বনলতা, সে আমাদের লুকিয়ে রাখা আলো। ... ...
“বহনোঁ অওর ভাইয়োঁ...আজ আমরা যে বিষয় শিখবো – সে বিষয় প্রত্যেক লেডিস ও জেন্টসের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী শিক্ষণীয় বিষয়। পরন্তু আমাদের দেশে যে শিক্ষাবেওস্থা আছে, তাতে এই শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের বাচ্চারা পচ্চিমদেশের অনুকরণ করে যে শিক্ষা লাভ করে, তাতে তারা যে শুধু ভোগময় জীবনের প্রতি লালচি হয় তাই নয়, বরং পাপের দিকে নিরন্তর দৌড়তে থাকে। তারা কদাপি মনমে শান্তি পায় না, দিনরাত পয়সা, প্রমোশন, আলিসান ফ্ল্যাট, লেটেস্ট মডেলের দামি গাড়ি, বছরে একবার ফোরেন টুরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে, অন্দরসে খোকলা হয়ে যায়, পরেসান হতে থাকে। বাড়তে থাকে স্ট্রেস – মান্সিক চাপ। মেরেকো আকসর পুছা যাতা হ্যায়, বাবা, ইস সে ক্যায়সে মিলেগি ছুটকারা? কেয়া মুক্তি কি কোই ভি উপায় নেহি হ্যায়? আমি বলি, কিঁউ নেহি, বেটা, অবশ্য উপায় হ্যায়। .." ... ...
অহনা হাঁটতে আরম্ভ করে দিল। সে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের খাঁজে চলে গেল। দু পাহাড় যেখানে জোড় খেয়েছে আর দুটো দেশ তৈরি হয়েছে গাছেদের। হ্যাঁ, গাছেদের আর বৃষ্টিদের। সেখানে প্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেইখানে অহনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখব বলে বলে ভাবছি আর দেখি সে অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটা দিয়েছে। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেকটা পাহাড় দেখার মত এক দূরত্ব। মনে হয় কাছে কিন্তু দূরত্বটা বেশ। যত কাছে যাওয়া যায় ততো দূরত্বটা থেকে যেতে থাকে, থেকে যেতে থাক – দূরত্বটা শেষ হয় না। বোঝা যায় না পাহাড়টা দূরে, বোঝা যায় না পাহাড়টা কাছে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়। সে রকমই হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না জোরে কথা বলব না আস্তে কথা বলব। তাই দেখতে লাগলাম। প্রথমে গাছেদের এ ওর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তারা ফুল দেয় না আর দিলেও দেখাতে চায় না যে ফুল দিয়েছে। ছোট ছোট গাছ না কিন্তু তাদের ছোট ছোট লাগে। পাশে একটা বড়ো গাছ ছিল। সেই গাছ দেখে আশ্বস্ত হয়েছি, সেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম গাছ কথা কইছে আর আওয়াজ হচ্ছে কথাদের। ... ...