ভালোবাসার কাছে
ভালোবাসার কাছে যদি পারো, খুলে রেখো
তোমার মুখোশ ও দস্তানা
এসব এমন, এমনই একটা সময়
যখন নিজের কাছে নিজের উপস্থিতি সন্দিগ্ধ ঠেকছে খুব
খানিক তফাত রেখে তোমায়
নিরীক্ষণ করছে তোমারই পাথরের অবয়ব, ওই
তার চোখের মণিহীন চাউনি, ধারালো
পেরেকপ্রবণ দৃষ্টিতে দূরের নীলাকাশে, অনাগত মেঘের
মত ওই তোমার ছায়া লম্বালম্বি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে
দেখো, সবুজাভ দেওয়ালের গায়ে লেগে থাকা তার
টুকরো হাতের ছাপ, অঙ্গ ও মাংসপেশি,
পড়ে আছে অবিন্যস্ত, নকশাকাটা স্ক্রু ও সেতারের
সুরের মত এতদূর অবধি হেঁটে এসে এসে এইখানে তার
পা’টুকু থেমে গিয়ে অবশেষে প্রকাণ্ড ও প্রস্তরের
হয়ে দেহ অবধি বিচ্ছিন্ন হয়েছে আজ, দেখো এমনই
চৈত্রের দিনে তার কালো ও মসৃণ জ্যামিতি, দেখো নষ্ট ফুল,
পড়ে থাকা ধূসর আতাফল দেখো,
এবং তোমার এ নশ্বর হৃদয়ে অনুরূপ আকৃতির
ক্রমশ বেড়ে ওঠা গোল, গভীর একটা গর্ত…
ট্যুরিস্ট কাহিনী
সানগ্লাস পরে নাও বন্ধুরা, পারলে সাথে রেখো টুপি ও টর্চ
দেখো এখানে ঠিক একটা নদী ছিল, এখন শুকিয়ে গেছে
আর একটা হরিণছানা এসব না জেনেই চলে এসেছে
এত দূর – পাহাড়ের গায়ে তার খুরের ঘষা লেগে সেই নুন
ও ধুলোর খানিক খাদে চলকে পড়ল – সেদিকে তাকিও না তুমি,
আত্মহত্যার আগে, শোনো, আর কোনোদিকে তাকিও না তুমি
বরং উঠে যাও সোজা, দ্রুততর এগিয়ে আসা একরৈখিক ট্রেন
মুখোমুখি হওয়ার কথা মনে কর, মধ্যাহ্নের কালে তোমার সেই
দারুণ জঙ্গম স্মৃতি, এতদিন পর কি পিছুটান জানাতে সক্ষম?
এভাবে অন্যমনস্ক রাখো অপর ও নিজেকে, যেভাবে অহেতুক
দুর্বোধ্যতা আমাদের আড়াল করেছে, পাতলা টিনের আস্তরণ
আমাদের মুখ ও ঠাণ্ডা খাবারের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবধান
আজ ভাবলে হাসি পায়, কেবলই শ্রী শ্রী কালীমাতা সহায়
সম্বল করে ওই প্রৌঢ় দম্পতি পরবর্তী পদক্ষেপটুকু নেবে কিনা,
ভাবতে ভাবতে পিচ্ছিল স্মৃতির মত নীলচে কাদায় তাদের আঙুল
ডুবে যায় ওই, এ পৃথিবীতে সম্ভবত বিশুদ্ধ নীল বলে কিছু নেই-
তবু ভেঙে পড়ার আগে পুরাতন গাছের নীরবতা লক্ষ্য কর তুমি
লক্ষ্য কর, রাতের নিভু নিভু উত্তাপ জিইয়ে রাখতে তার টুকরো
শরীর, হাড় এবং বিশুষ্ক মজ্জা অনায়াসে আগুনে গুঁজে দেয় যারা,
যে প্রজন্ম এতদ্বারা খানিক উল্লাস করে, অধিকতর জটিল হওয়ার
জন্য তাদের আলাদা করে পাহাড়ের আর কোনো প্রয়োজন নেই …
এপ্রিল অবধি অপেক্ষা করা ভালো-
আধো ঘুমে যে অস্বস্তিকর সংলাপ হানা দেয় মাথার ভেতর
আমি তাকে সন্দেহ করি, অপ্রস্তুতের মত
তার শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে চাই
আর পেরিয়ে যেতে চাই বিষণ্ণ মার্চের দেওয়ালে
সযত্নে টাঙানো ওই নীল পর্দার সারি -
বড় পর্দার আড়ালে আরেকটা ছোট পর্দা
সেখানে চলে যাওয়া একটা সংশয়ী মানুষ,
ঘরের মধ্যে তার পরিত্যক্ত পোশাক হয়ে
শেষপর্যন্ত রয়ে গেল- ঠিক সময় হলে নিজেকে
খুব ভালবাসবে, এই ভয়ে ওরা তার হাতগুলো
বেঁধে দিয়েছিল একদিন– সেসব বরফ ঋতুর কাল
আর কাঠগুলো একটু পরেই আগুনে চলে যাবে
জেনেও তাদের সন্নিকটে ওই তার তুমুল ভালবাসাবাসি
আড়চোখে দেখে ফেলে, বলতে নেই, ভালো লাগে
ভালোই লাগে যখন দুহাতে কেউ কুড়িয়ে আনছে ফল,
সাজিয়ে রাখছে গ্লাস, কিংবা বৃষ্টি নামার আগেই
হাতছানি দিয়ে ঘরে ডেকে নিল কেউ- আসন্ন এপ্রিলের
দুপুরে নদীর কিনার থেকে উঠে আসছে ওই নীরক্ত
একজোড়া জঙ্ঘা ও জানু, মাটিতে উজ্জ্বল পদছাপ তার
ভালো লাগে এই - তবু কেন এ’সকল চিন্তার প্রেক্ষিতে
একটি বেপরোয়া উদ্ধত ঘোড়া দেখি বারেবারে
অনায়াসে পিষে চলে যায় যা কিছু, আজ হয়েছে ফলন্ত
নীলাভ বসতজমি, ওই পড়ে থাকা সবুজ আপেল…