‘মামা মেশিন আছে কিন্তু বিচি নাই’- মক্তারের কথা শুনে বাজে টাইপের কিছু একটা গালি দিত কুক্কুরু-মতিন। কিন্তু তখন ওর মাথা দপদপ, পায়ের রগগুলান কেমন যেন থেকে থেকে খিইচ্চা উঠতেছিল।
কী করে ঘটল ব্যাপারটা?
বিন্দুর সাথে ওর গড়াগড়ির ভিডিও কিপটা যখন জামিল আর গাণ্ডু হেলালের হাতে যায় তখন তো তার কিছু মনে হয়নি। বরং অপোন্যান্ট গ্রুপের মেজবাহ যখন নজরানার মতোন এক গ্যালন ডাইল উপহার দিল, তাতেই সবাই বুঁদ। ভার্সিটির অপোন্যান্ট গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেসবাহ। সেনপাড়া টেন্ডারবাজিতে খুব পেইন দিছিল। সেই বিলা-মেজবাহ যখন বলল, বস অহন থেইক্কা আপনেরাই আমার মা-বাপ, তখন কী যে পিনিক লাগছিল!
ডাইলের পিনিক মিহি, দুধারি, কাটারি, খালি এককাপ চা, লগে লগে রিচার্জ।
ছুট ঘোড়া ছুট, ল্যাওড়া বাগায়া ছুট!
দোস্ত আমার খালি ভেব্দা লাগতাছে! এখনো সেই কথা কানে ভাসে। তখন মতিন ওরফে কুক্কুরু-মতি নিজ থেকেই বলেছিল—‘খারাও, ঠাঠানির ব্যবস্থা করতাছি’।
এখন মনে হয় সেই দিন যদি বাহাদুরি দেখাতে না যেত, যদি বিলা-মেজবাহ জারকিনভর্তি ডাইল না আনতো তাহলে বিষয়টা অন্যরকম হইতে পারত। কিন্তু বিষয়টা এমন ঘটবে, তা তো পূর্বনির্ধারিত। বিন্দুও তো কিছু বলেনি। খালি বলছিল— ‘দেইখো কারো হাতে যেন না পড়ে’।
প্রথম দেখায় বিন্দুরে বুকিং দিছিল মতি। এমন মাল না চাখলে জিবলা কাইট্টা ফালান্ উচিত। কিন্তু বিন্দু তো আটটা-দশটা বাজারী মাইয়্যার মতো না। হলে সিট পাওয়ার জন্য একটু তদবীরে এসেছিল। পরে অবশ্য কৃতজ্ঞতাবশত দলের বড় মিছিলগুলানে অ্যাটেন্ড করত। সেই থেকে শুরু।
যা হোক, মতিন ওরফে কুক্কুরু-মতি সেইদিন সাক্ষাত মোরগা-মতি। দুধচিনি বেশি কিং সাইজ চা খেয়ে কথা উঠছিল, কী করে অপোন্যান্ট গ্রুপকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা যায়? তখন গাণ্ডু-হেলালের টেম্পার দেখার মতো। বলে, ‘অত কওনের কাম নাই, ল সেন্ট্রাল মাঠে যাই, কাটারি হান্দায়া দেই। ব্যস ফাইনাল।’
‘কিন্তু বিন্দু যে আমারে টাসকি দিলো দোস্ত!’
‘হ, কঠিন মাল একখান।’—এখনও নিজের কথা কানে বাজে কুক্কুরু-মতির। কী করে পারত সে? যার সাথে একটা লটরপটর চলতেছে তারে নিয়া এমন ছালবাকলাহীন কথা! এখন মাথা দপদপ করে। শেষে রাগ বাড়ে নিজের ওপরই। ওর নাম কুক্কুরু-মতিন না হয়ে গাণ্ডু-মতিন হওয়া উচিত ছিল। বুঝতেই পারেনি এই বিন্দুর প্রেমে পড়ে যাবে, আর ওর গলার কাটা হয়ে উঠবে বিলা-মেজবাহর ডাইল উৎসবের রাত। কারণ, শুধু দেখে খান্ত হয়নি, সেদিন রগরগে কিপটা ব্লুটুথ দিয়ে নিজেদের মোবাইলে নিয়ে যে যার মতো ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বিদিক নাচ-গানা করেছিল। সেদিন ঘুরেফিরে একই কথা—মামা কইও না, কইও না, শহীদ হয়া যাই! সেদিন ‘ম্যায় দুধারি তলওয়ার হু’ গান গাইতে গাইতে তারা ভাগ করে নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ দিকের টেন্ডারবাজি—‘বকশিবাজার তোর, গিরিঙ্গি লেন গাণ্ডুর আর গেদু-আলিমের হইল কোর্টচত্বর।’
কোর্টচত্বর পার হয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখে বাইকটাকে পঙ্খিরাজ ঘোড়া বানানোর চেষ্টা করে মতি। গাণ্ডু-হেলাল আর জামিল হলে থাকে না, থাকে পাশের মহল্লার একটা ফ্যাটে। এইখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় পলেটিক্স। মাঝেসাজে মাইয়াগো কলেজের নেত্রীরা আসে, লগে ফাস্টিয়ারের নতুন কুঁড়ি। সবাই মিইলা কুঁড়িরে ফুল বানায়া পুষ্পভিলা বাড়ির নাম সার্থক করে।
পুষ্পভিলা যে কঠিন জায়গা তা বুঝতে দেরি হয়নি কুক্কুরু-মতির। এত চেষ্টা করেও ওরা বিন্দুর ভিডিও কিপটা দিতে রাজি হয়নি। এমনকি নাইন এমএমটা বের করার পরও না। উল্টো ব্রেনওয়াশ। এটা নিউকামারদের সাথে খুব করতো কুক্কুরু-মতি আর গাণ্ডু-হেলালরা। হলে নতুন কেউ আসলে তাদের কমনরুমে নিয়ে টারজান বানানোর মজাই আলাদা। কত রকমের জাইঙ্গা যে জগতে আছে, আর পোলাপাইন যে কত মগা হইতে পারে তার প্রমাণ মিলত অইসব রাতে। রেগিংয়ের বেলায় মতিন ছিল অন্য যে কারো থেকে নৃশংস। ওর ফেভারিট ছিল নিউকামারদের খালি জাইঙ্গা পরা অবস্থায় পায়ের নিচ দিয়ে মাথার চুল ধরিয়ে রাখা। পায়ের নিচ দিয়ে কান ধরার কথা সবাই জানে, ছেলেবেলায় পড়া না পারলে সুন্দরী মিস এইরকম মোরগা বানাত। কিন্তু মিলন ছিল আরো স্যাডিস্ট, ও ধরতে বলত চুল। এই অবস্থাকে নাম দেয়া হয়েছিল মুরগি হওয়া। আর যেহেতু মতিন এইটা আবিস্কার করেছিল সেহেতু উপাধি হিসেবে তার নামের আগেই বসিয়ে দেয়া হয়েছিল কুক্কুরু শব্দটি—কুক্কুরু-মতিন। সেই কুক্কুরু মতিনকেই... !
নাইন এমএমকেও ভয় পায়নি গাণ্ডুরা। উল্টো মতিনকে ধরে মুখে পলেথিন বেঁধে হাত পিছমোড়া করে কমোডে মুখ ডুবায়া ফাশ চালায়া দিল। নগদে ব্রেনওয়াশ!
‘হ্যাঁ শালার মাথা নষ্ট। মেশিন দেখায়। গাণ্ডু শালার হাত ধর। ধর!’
দশ মিনিট ধরে ব্রেনওয়াশের পর আর সহ্য করতে পারেনি মতিন। মুখে প্যাঁচানো পলেথিনটা গলার দিকে আরো চেপে ধরে মতির মুখ জোর করে কমোডে ঠেসে ধরে গাণ্ডু এন্ড কং।
‘চুদির ভাই যেই টেবিলে বার্গার খাও সেই টেবিলে সু করো! শালা তোরই খালি চ্যাট আছে? আমাগো নাই?! এই স্টেনগান, দে শালার প্যান্ট খুইলা দে! ওরে ন্যাংটা কইরা ব্রেনওয়াশ দেই’।
মতিন বুঝতেও পারেনি পাশের ঘরে ইয়ং স্টাররা আছে। যথারীতি মেশিনটা বের করার পর যেই বলেছে ‘বিন্দুর কিপটা কৈ? এখনই ডিলিট কর।’—আর যায় কৈ! ‘বানচোদ কী বলে রে! ধর শালারে!
আরেকজন বলে, ‘বস্ হালায় পিরিতে পড়ছে মনে হয়!’
হা হা হা। পিরিত! কিন্তু আমার মুখে মেশিন ধরলি কেমনে? কুন সাহসে?
মুহূর্তেই সবাই মিলে জাপটে ধরে মতিনকে। লগেলগে কট বিহাইন্ড।
‘হাবিব-ইমরুল এইদিক আয় তো, তগো দেখাই কেমনে ব্রেনওয়াশ করে’
কোথায় নাইন এমএম? লজ্জায়, রাগে কুক্কুরু-মতিন নিজেই চুনকাম হয়ে যায়। আর ভাবতে পারছে না সে। পলেথিনের ব্যাগে মুখ ঢাকা সত্ত্বেও পানির তোড়ে চোখ খুলতে পারে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ন্যাংটা হয়ে কমোডে মাথা গোঁজানো অবস্থায় ছটফট করে সে।
ফাঁপর লাগে
উহঃ ঠ্যাং ভাংলো, ঠ্যাং ভাংলো
মা-আ-আ, ওহঃ
বিন্দু আর পারি না রে
কুক্কুরু-মতিন মনে মনে বলার চেষ্টা করে। পায়ের রগে টান, ঘাড়ে ব্যথা, যেন ওকে জবো দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শান্তি একমাত্র বিন্দু। বিন্দু উল্টা-কেরিমচি ভালোবাসে, কোমরে বসে লাফাইতে লাফাইতে দম বের করে দেয় মতিনের। সেই বিন্দু পরে কেমন বিড়ালের বাচ্চার মতো ওর শরীলে গুটিশুটি লেপ্টে থাকে। এই এতটুকুন মুখ, যেন শ্যামা পাখি! কিন্তু সেই মিছরি-মাইয়া যখন কামে নামে... তখন! স্রেফ হাঁপানি উঠায়া দেয় মতিনের।
মতিন হাঁপায়। নিচে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে অন্ডকোষ। নতুন কোনো ক্যাডার এককাঠি আগায়া স্কেল দিয়ে বিচিতে কোপ মারে। সাথে সাথে ঘরময় হাসাহাসির শব্দ। একটা মেয়ের গলা পায় মতিন। মনে মনে বলে, বিন্দু আমারে মাফ দে।
কুক্কুরু যখন ছাড়া পায় তখন তার বীর্যস্খলন হয়ে গেছে। অত্যধিক দমবন্ধ অবস্থায়, কী ভয় পেলে মানুষের স্নায়ু উত্তেজিত হয়, কখনো হয়ে পড়ে শীতল। দেখা যায়, কয়েদির ফাঁসির পর তার বীর্যস্খলন হয়ে গেছেজ্জসেই রকম। ভারি দম নিয়ে সামলে উঠতে উঠতে আরেকটা ধাক্কা খায় কুক্কুরু-মতি। দ্যাখে, বিন্দুর বান্ধবী সোহানা একদম গাণ্ডু-হেলালের কোলে বসে আছে। বিন্দু আর সোহানা এক ডিপার্টমেন্টেই পড়ে। সোহানার মুখটা খানিক ম্রিয়মান। কামিজের ডান হাতটা টেনে নিচে নামানো, ওখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে তার ট্রেডমার্ক তিলটা, বেশ বড়; ভোটরা সাইজের। গাণ্ডু-হেলাল নীরবতা ভাঙে—‘ডাল্লিং এইবার এই নাগররে সামলাও‘—মতির নিম্নাঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে বলে— ‘দ্যাখছো, কেমন রসের নাগর!’
এবার বিষয়টা হালকা করার জন্য জামিল বলে—‘রাজনীতি করোছ, জানোস না, শেষ কথা বইলা কিছু নাই! ক্যান বিলা-মেজবাহর কথা মনে নাই? সবকিছুর সেটিং আছে, খালি ফিটিং হইতে হয়, বস্।’
এমন সময় নতুন রিক্রুট সুরুজ, মতিনের আনা নাইন এমএমটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে—‘বস্ মেশিনে তো বিচি নাই!’
‘কৈ? দেখি দেখি!’
‘আরে শালা তো দেখি জেমস বন্ড! ফাঁপরের উপর দিয়া কাম চালাইতে চাইছিল! আর এইদিকে শালার বিচি নাই!’
হাহাহা
বিচি নাই!
হাহাহা বিচি নাই!
হাসির রোল পড়ে যায় পুষ্পভিলার ৬ তলার ফ্যাটে।
‘শালা ক্যালাস নাকি?’
‘আরে বুর্বক, তোর কপাল ভাল। আইজকা সোহানা না, বিন্দুর আসার কথা আছিল, তারে দেখলে তো সুস্যাইড খাইতি!’—গাণ্ডুর এমন কথায় আবারো হাসির রোল পড়ে পুষ্পভিলায়।
জামিল বলে—‘এতোদিনের দোস্ত আমরা! সেই আমাগো বুকে নল ঠেকাইলি! কার লাইগা? বিন্দু! আরে তিন মাস আগে থেইকা বিন্দুর লগে আমাগো ফিটিং চলতেছে।’
জামিল আরো কতো কী বলে, টিটকারি করে। কিন্তু কুক্কুরু-মতির নিজের কানকে বিশ্বাস হয় না। বিন্দু! না হইতে পারে না। শালারা মজা লইতাছে! আবার ভাবে, সত্যি না তো?
আসলে কুক্কুরু-মতি তখন ভিজা-কাউয়া। গলা-বুক ফ্যাশের পানিতে ভেজা। খানিক ভেজা প্যান্টটা কোমরে তুলতে তুলতে তাকে খুব স্থির দেখায়; যেন গদাই লস্করি। না ঠিক হলো না। ওর তখন দাবড়ানি খাওয়া মুরগীর দশা। দৌড়াইতে দৌড়াইতে শেষে একসময় মুরগী যেমন হাল ছেড়ে ঝুপ করে বসে পড়ে, ধরা দেয়; কুক্কুরু-মতিও এখন সেই রকম ফিউজ। নিজের কানও যেন শুনতে না পায় এমন নিচু স্বরে সে শুধু আওড়ায়—‘আমারে মাফ দে...আমারে মাফ দে’। কিন্তু কার কাছে খত দেয় কুক্কুরু-মতি—বন্ধু, রাজনীতি, ম্রিয়মান বিন্দু নাকি অন্যকিছু—ঠিক বোঝা যায় না।