বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO)-র ৬.০৩.২০২০-র রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের সংখ্যা – ১,২১০,৯৫৬ এবং মৃতের সংখ্যা ৬৭,৫৯৪। যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী (৭.০৪.২০২০) সংক্রমিত এবং মৃত উভয় সংখ্যাই অনেকটা বেশি – আক্রান্ত ১৩,৫৯,৩৯৮, মৃত ৭৫,৯৪৫ এবং সুস্থ হয়ে উঠেছে ২,৮৯,১০৯। আমেরিকার সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৭,৬৫৯, মৃত্যু ১০,৯৪৩ এবং সুস্থ হয়েছে ১৯,৮১৪।
আবার একটি নতুন দেশ দক্ষিণ সুদানে নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে – সব মিলিয়ে ২০০-র বেশি আক্রান্ত। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হাসপাতালের আইসিইউ বেডে। ভেণ্টিলেটর চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। আমেরিকা ভারতকে হুমকি দিয়েছে (অনেকটা মস্তানদের মতো) হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন না পাঠালে ভারতকে আমেরিকা দেখে নেবে।
আমাদের হাতে এই মারণান্তক ভাইরাসকে মারার কিংবা প্রতিহত করার জন্য হাতিয়ার নিতান্ত সীমিত। এজন্য অ-সামান্য এই নিতান্ত কম-জানা ভাইরাসকে নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণাপত্র আসছে, চিকিৎসাপদ্ধতি খোঁজা হচ্ছে এবং, সর্বোপরি এর ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা চলছে বিপজ্জনক (breakneck) গতিতে। যদি একটি কার্যকরী ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয় তাহলে এই মারণ রোগ থেকে মানুষের পরিত্রাণ আছে – যেমনটা হয়েছিল স্মল পক্স বা গুটি বসন্তের ক্ষেত্রে। আমরা ভ্যাক্সিনের আগে আনুষঙ্গিক আরও কিছু বিষয় আলোচনা করতে পারি।
লান্সেট-এ (২.০৪.২০২০) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের শিরোনাম “Global coalition to accelerate COVID-19 clinical research in resource-limited settings”। এখানে হিসেব পাচ্ছি ২৪.০৩.২০২০ পর্যন্ত প্রাসঙ্গিকতযুক্ত যতগুলো ট্রায়াল রেজিস্টার করা হয়েছে তার সংখ্যা ৫৩৬। খুব সামান্য ট্রায়াল হয়েছে আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায়। এখানে মন্তব্য করা হয়েছে এতই অপ্রতুল বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কাঠামো যে যদি এই বিপুল সংখ্যক করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হয় তাহলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে – “The capacity of weak health-care systems to manage a surge of severe pneumonia is limited, and the low availability of appropriate personal protective equipment (PPE) for front-line health-care staff means that these key staff are likely to be disproportionately affected by COVID-19. Disruption or complete breakdown of those health-care systems would result in high direct and indirect mortality since care of all illness would be affected.”
কেন হচ্ছেনা উপযুক্ত ট্রায়াল? সবসময়েই এক টানাপোড়েন চলছে “maximum recommended” এবং “minimum essential requirements”-এর মধ্যে। এজন্য পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় এবং বিজ্ঞানের চোখে ভালো ট্রায়ালের সংখ্যা এত কম। দেশগুলোর যদি সঙ্গতিই না থাকে তাহলে ট্রায়াল করবে কিভাবে? আমরা তো অনেকদিন আগেই আলমা-আটা কনফারেন্সে (১৯৭৮ সালে সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরে যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছিলো) গ্রহণ করা একটি সাধারণ কথাকে ভুলে গিয়েছি ইচ্ছাকৃতভাবে। ১৯৭৮-এর সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সনদে বলা হয়েছিল - A genuine policy of independence, peace, détente and disarmament could and should release additional resources that could well be devoted to peaceful aims and in particular to the acceleration of social and economic development of which primary health care, as an essential part, should be allotted its proper share. এ বক্তব্য থেকে নিতান্ত পরিষ্কার হয় যে যুদ্ধখাতে ব্যয়বরাদ্দ স্বাস্থ্যকে সঙ্কুচিত করে এবং প্রথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে হলে শান্তির জন্য প্রচেষ্টাও একটি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, যুদ্ধখাতে ব্যয়-বরাদ্দ কমিয়ে জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানোর মতো ঘোরতর রাজনৈতিক বার্তাও ছিলো এ ঘোষণাপত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট। কিন্তু আমরা কোন সময়েই এগুলো গ্রহণ করি নি। ফলে প্রায় সব দেশেই যুদ্ধখাতে ব্যয়বরাদ্দ বেড়েছে। এবং সে তুলনায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং সরকারি স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমেছে।
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ১৯ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় হল – Covid-19 – The Search for Effective Therapy. এ লেখায় খানিকটা বেদনার স্বরেই বলা হয়েছে - What we lack is a specific antiviral agent to treat the infected and, optimally, decrease viral shedding and subsequent transmission. ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় (১৮.০৩.২০২০) একটি খবর বেরিয়েছে “Flu drug Avigan speeds up coronavirus recovery in early trials”। কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও!
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর (২৬.০৩.২০২০) সম্পাদকীয়র শিরোনাম – Covid-19 Navigating the Uncharted. শিরোনামেই স্পষ্ট যে আমরা অজানা পথে হাঁটছি, খুঁজে বেড়াচ্ছি। সম্পাদকীয়তে লেখা হচ্ছে – “A robust research effort is currently under way to develop a vaccine against Covid-19. We anticipate that the first candidates will enter phase 1 trials by early spring. Therapy currently consists of supportive care while a variety of investigational approaches are being explored. Among these are the antiviral medication lopinavir–ritonavir, interferon-1β, the RNA polymerase inhibitor remdesivir, chloroquine, and a variety of traditional Chinese medicine products. Once available, intravenous hyperimmune globulin from recovered persons and monoclonal antibodies may be attractive candidates to study in early intervention.” অর্থাৎ, সম্ভাব্য যতরকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষকে সুস্থ করে তোলার জন্য। কিন্তু এর সাথে বিজ্ঞানের কঠোর পরীক্ষাকে (open label, randomized controlled trial) যুক্ত করতে হবে, যুক্ত করতে হবে নৈতিকতাকে। সম্পাদকীয়র মন্তব্য – “Critical to moving the field forward, even in the context of an outbreak, is ensuring that investigational products are evaluated in scientifically and ethically sound studies.”
এজন্য হু-র তরফে ১৮.০৩.২০২০-তে Solidarity Trial বলে একটি আলাদা সাইট খুলেছে যেখানে পৃথিবী জুড়ে যেসমস্ত ট্রায়াল হচ্ছে – সে ৫ জন রোগীকে নিয়েই হোক বা বড়ো কন্ট্রোলড ট্রায়ালই হোক – সমস্ত ট্রায়ালকে আপলোড করা যাবে। পৃথিবীর এবং হু-র বিজ্ঞানীরা সেগুলো খতিয়ে দেখবেন। “পেলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন” – বাস্তবিকই এরকম ভয়ঙ্কর এক অজানা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যার যা অভিজ্ঞতা আছে সব দুনিয়ার মানুষের সামনে আসা দরকার। কিন্তু গুজব এবং ভ্রান্তি যেন তৈরি না হয়। হু-র সাইটে আমেরিকা এবং বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত যেসব ওষুধগুলোর নাম উল্লেখ করা আছে সেগুলো হল – Remdesivir, Mavrilimumab, Convalescent plasma, Hydroxychloroquine (Plaquenil) and chloroquine (Aralen), Lopinavir-ritonavir (Kaletra), Tocilizumab, Sarilumab, Favilavir। এর মধ্যে Convalescent plasma বা করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা রোগীর রক্তের প্লাজমা ছাড়া বাকি সবগুলো ওষুধ নিয়েই নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে মতামত দেওয়া হয়েছে।
JAMA (Journal of American Medical Association – ২৭.০৩.২০২০)-তে একটি “Preliminary Communication”-এর শিরোনাম – “Treatment of 5 Critically Ill Patients With COVID-19 With Convalescent Plasma”। করোনা সংক্রমণমুক্ত রোগীর রক্তের অ্যান্টিবডি প্রবল শ্বাসকষ্টের রোগীকে দেবার পরে তারা সেরে উঠেছে - In this preliminary uncontrolled case series of 5 critically ill patients with COVID-19 and ARDS, administration of convalescent plasma containing neutralizing antibody was followed by improvement in their clinical status. কিন্তু সতর্ক করা হচ্ছে - The limited স্যাম্পল size and study design preclude a definitive statement about the potential effectiveness of ঠিক treatment, and these observations require evaluation in clinical trials. অর্থাৎ, এত কম স্যাম্পেল এবং দুর্বল ট্রায়াল ডিজাইনের জন্য এ চিকিৎসার পরবর্তী এবং উপযুক্ত মূল্যায়ন দরকার। যেকোন চিকিৎসার কথা যে কেউ বললেই সেটাকে ধর্ম বিশ্বাসের মতো সাথে সাথে গ্রহণ করার প্রশ্ন নেই। নানারকম উপকথা, অতিকথার বাইরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিধি, পদচারণা।
অ্যানালস অব ইন্টার্নাল মেডিসিন-এ (৩১.০৩.২০২০) একটি প্রবন্ধে বলা হচ্ছে - In the desperate search to find effective treatments for coronavirus disease 2019 (COVID-19), 2 generic drugs, used largely by rheumatologists and dermatologists to treat immune-mediated diseases, have entered the spotlight. কিন্তু প্রবন্ধটির মন্তব্য – “The antimalarials hydroxychloroquine (HCQ) and chloroquine (CQ) have demonstrated antiviral activity against severe acute respiratory syndrome–coronavirus 2 (SARS–CoV-2) in vitro and in small, poorly controlled or uncontrolled clinical studies”। অর্থাৎ, এখনো অব্দি যে কতিপয় ট্রায়াল হয়েছে তা এত ছোট এবং অনির্ভরযোগ্য যে এগুলো নিয়ে এখনো নির্দিষ্ট মতামত দেবার সময় আসেনি। সর্বশেষ মন্তব্য – দেশের নেতারা অপ্রমাণিত চিকিৎসাতে উৎসাহিত না করলেই ভালো হবে। এর একটি বড়ো কারণ হল মূলত রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এসএলই (systemic lupus erythematosus)-র মতো যেসব রোগে এ ওষুধ একান্ত আবশ্যক সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলবে না। (Public figures should refrain from promoting unproven therapies to the public, and instead provide clear messages around the uncertainties we face in testing and using experimental treatments during the current pandemic, including the risk for serious adverse events.)
আরেকটি ছোট প্রেক্ষিত এখানে যোগ করি। আমেরিকার পরিচিত ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায় (১৮.০৩.২০২০) একটি গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম ছিল - The Coronavirus Could Reshape Global Order - China Is Maneuvering for International Leadership as the United States Falters। অর্থাৎ, বিশ্ব কর্তৃত্বে কি কোন পরিবর্তন আসছে?
এরকম পটভূমিতে আমরা করোনার প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন তৈরির যাত্রাপথে প্রবেশ করছি।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ (৩০.০৩.২০২০) প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের শিরোনাম - Developing Covid-19 Vaccines at Pandemic Speed। এ প্রবন্ধে বলা হচ্ছে ২০০৩ (SAARS-COV-1), ২০১২ (MERS) এবং ২১১৩-১৬ (এবোলা)-র যে অতিমারি হয়েছিল তার থেকে বর্তমান করোনা অতিমারির পার্থক্য রয়েছে – “Vaccines for the severe acute respiratory syndrome (SARS), Ebola, and Zika did not follow a similar path. The SARS and Zika epidemics ended before vaccine development was complete” এখানে যে নতুন পদ্ধতিগুলো নেওয়া হচ্ছে সেগুলো ঐ প্রবন্ধের ভাষায় - Multiple platforms are under development. Among those with the greatest potential for speed are DNA- and RNA-based platforms, followed by those for developing recombinant-subunit vaccines. RNA and DNA vaccines can be made quickly because they require no culture or fermentation, instead using synthetic processes. যে প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে এই আরএনএ বা ডিএনএ ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয় তাতে কোন কালচার মাধ্যম বা ফার্মেন্টেশন (সন্ধান) করতে হয়না। ফলে অনেকটা সময় বাঁচে।
পূর্বোক্ত প্রবন্ধে আরও দুটি সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এগুলো এতটাই টেকনিক্যাল টার্ম যে এর বাংলা করা প্রায় দুঃসাধ্য। আমি পাঠকদের বিবেচনার ওপরে ভরসা রেখে হবহু জার্নাল থেকে তুলে দিই – Even with novel platforms, SARS-CoV-2 vaccine development poses challenges. First, although the virus’s spike protein is a promising immunogen for protection, optimizing antigen design is critical to ensure optimal immune response. Debate continues over the best approach — for example, targeting the full-length protein or only the receptor-binding domain. Second, preclinical experience with vaccine candidates for SARS and the Middle East respiratory syndrome (MERS) have raised concerns about exacerbating lung disease, either directly or as a result of antibody-dependent enhancement. সহজ বাংলায় বললে, প্রথম সমস্যা হল, যদিও কোভিড-১৯-এর স্পাইক প্রোটিনকে ধরে নেওয়া হচ্ছে ইমিউনোজেন হিসেবে, কিন্তু একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের প্রোটিন কিংবা যে রিসেপ্টরের শরীরে যে অংশটি বাঁধবে সেদুটির মধ্যে কাকে টার্গেট করা হবে। দ্বিতীয় সমস্যা, আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ভ্যাক্সিনের শরীরে প্রবেশের ফলে ফুসুফুসের অসুখকে তীব্র করে তোলে। এসব সমস্যা মাথায় রেখে নতুন ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা চলছে।
এখানে একটা চিত্র দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হতে পারে।
CanSino Biological Inc এবং Beijing Institute of Biotechnology উদ্ভাবিত নতুন ধরনের ভ্যাক্সিন ইঁদুর এবং অন্য প্রাণীর ওপরে পরীক্ষা পার হয়ে মানুষের শরীরে পরীক্ষার স্তরে এসেছে। এছাড়া আমেরিকার বায়োটেক ফার্ম মডার্না এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যলার্জি অ্যন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (NIAID) পরীক্ষার প্রথম স্তরে প্রবেশ করেছে। আরেকটি জার্মান কোম্পানি CureVac-ও অনেকদূর অগ্রসর হয়েছো অগ্রসর হয়েছে একটি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি। এছাড়াও দু-তিনটি ভারতীয় কোম্পানিও ভ্যাক্সিন তৈরির প্রচেষ্টার মধ্যে আছে। এখানে ফেজ-১, ২ এবং ৩ কিভাবে হয় জেনে নেওয়া ভালো। ফেজ-১-এ কয়েক ডজন স্বাস্থ্যবান ভলান্টিয়ারকে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফেজ-২-এ নেওয়া হয় কয়েক’শ মানুষকে। ফেজ-৩-এ সে পরীক্ষা করা হয় কয়েক হাজার মানুষের ওপরে – ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এখনও অবধি জেনেটিক মেটেরিয়াল – আরএনএ কিংবা ডিএনএ – থেকে তৈরি ভ্যাক্সিন FDA-র অনুমোদন লাভ করেনি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একধরনের ইমার্জেন্সি অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য সমস্ত সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে - pandemics will generate simultaneous demand for vaccines around the world.
এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটির একাধিক গবেষকের লেখা ল্যান্সেটের EBioMedicine জার্নালে প্রকাশিত (২.০৪.২০২০) একটি গবেষণাপত্র - Microneedle array delivered recombinant coronavirus vaccines: Immunogenicity and rapid ট্রান্সলেশনাল development। এ গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে - The coronavirus spike (S) protein, a characteristic structural component of the viral envelope, is considered a key target for vaccines for the prevention of coronavirus infection. ইঁদুরের ক্ষেত্রে ত্বকের মধ্যে (intracutaneously) microneedle arrays (MNAs) ঢুকিয়ে দ্রবীভূত করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২ সপ্তাহের মধ্যে শক্তিশালী antigen-specific antibody-র প্রতিক্রিয়া বা স্বাভাবিক প্রতিরোধের ক্রিয়া শুরু হয়েছে – MNA delivered MERS-S1 subunit vaccines induced potent and long-lasting antigen antigen-specific immune responses. Notably, MNA delivery of these vaccines generated significantly stronger immune responses than those administered by traditional subcutaneous needle injection, indicating the improved immunogenicity by skin-targeted delivery.
আমাদের মনে সঙ্গত প্রশ্ন উঠবে এই Microneedle array ব্যাপারটা কি? সহজ করে বললে একজন মানুষের আঙ্গুলের ডগায় একটি প্যাচ (ছোট ব্যান্ডএইডের টুকরোর সাথে তুলনীয়) লাগিয়ে দেওয়া হবে। এতে ৪০০টি ছোট ছোট স্পাইক প্রোটিনের নিডল বা সূঁচ থাকবে। এই সূঁচগুলো ত্বকের উপরিস্তরে দ্রবীভূত হবে – কারণ আমাদের চামড়ায়, আগে যেমন বলা হয়েছে – ইমিউন রিঅ্যাকশন সবচাইতে শক্তিশালী। এই সূঁচগুলো সবকটাই শুগার এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ফলে সহজেই ত্বকে দ্রবীভূত হয়ে যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল একবার তৈরি হলে “MNA-embedded vaccines have the potential to remain stable for an extended period of time without expensive “cold chain” requirements” অর্থাৎ “কোল্ড চেইন” রক্ষা করার কোন প্রয়োজন নেই, ঘরের তাপমাত্রায় থাকতে পারবে। এবং, দ্বিতীয়, “previous animal and clinical studies suggest that MNAs could provide a safe and well-tolerated delivery platform for efficacious immunization strategies”। আশ্চর্য লাগতে পারে শুনতে যে এই পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাক্সিন গামা রশ্মি দিয়ে স্টেরিলাইজ করা হলেও এর শক্তিহ্রাস ঘটেনা।
এরপরেও এ ভ্যাক্সিনের মানুষের ব্যবহারোপযোগী হয়ে বাজারে আসতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় নেবে। তদ্দিন আমাদের (১) ব্যক্তিগত দূরত্ব (৩-৬ ফুট), (২) হ্যান্ড হাইজিন, (৩) হাঁচি-কাশি-কফের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলা (যেমন ভারত সরকার এবং হু বলেছে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক) এবং (৪) লকডাউন – এগুলো বজায় রাখতেই হবে। এছাড়া অন্য কোন পন্থা আমাদের কাছে নেই।
উল্লেখিত গবেষণাপত্রের লেখকেরা বলছেন – Combining emerging biotechnology methods with bioengineering advances in vaccine delivery strategies, it may now be possible to rapidly produce clinically-translatable vaccines against novel pathogens for human testing and subsequent global distribution in time to significantly impact the spread of disease.
করোনা সংক্রমণ আমাদের সামনে সম্ভবত বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করার মুখে। আমরা আশায় বুক বাঁধি। একসাথে লড়াই চালাতে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে সমান গুরুত্ব ও সম্মান দিয়ে, খাদ্য ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
ব্যস্ততার জন্য উত্তর দিতে দেরি হল বলে দুঃখিত। মাইক্রোনিডল পদ্ধতিতে ইইনফ্লুয়েঞ্জা, ইয়েলো ফিভার এবং হেপাটাইটিস বি-র ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে।