এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • দ্বিভাষী তত্ব

    বোধিসত্ব দাশগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ মে ২০০৯ | ৮৩৪ বার পঠিত
  • আজ (১৭ মে) সকাল থেকে খবরের কাগজপত্রে বাঘা বাঘা কলমচিদের লেখাপত্র যা পড়লাম, তাতে মনে হল, একটুও বাড়িয়ে বলছিনা, যেন দুটো নির্বাচনের খবর পড়ছি। জোড়ায় জোড়ায়। একটা ইংরেজি একটা বাংলা , একটা কেরল লাইন একটা বেঙ্গল লাইন, একটা আবাপর প্রথম পাতার একটা আবাপর তৃতীয় পাতার, একটা আবাপর একটা বর্তমানের, একটা টেলি একটা কাগুজে, একটা প্রণবের একটা মমতার, একটা মা-মাটি-মানুষের একটা স্থায়িত্বের বা গ্রোথের, একটা গ্রামের একটা রাজ্যের, একটা অন্ধ্র প্রদেশের চালের, একটা আসামের বাড়া ভাতে ভাগ বসানো অনুপ্রবেশকারীর, একটা প্রকাশ কারাতের একটা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, একটা বিজয়নের একটা অচ্যুতানন্দনের, একটা নন্দীগ্রামের একটা অধীরবাবুর, একটা কবীর সুমনের নাগরিক প্রতিবাদের, একটা শতাব্দী রায়ের ডুরে পাড়ে ঘরোয়া মেনে নেওয়ার, একটা রুপচাঁদ পালের একটা তড়িৎ তোপদারের, একটা মুম্বাই একটা অন্ধ্র , একটা নীতিশের একটা নবীনের, একটা মনমোহন-সোনিয়াজির দিল্লীর আর একটা রাহুল গান্ধীর উত্তর প্রদেশের, একটা চন্দ্রবাবুর একটা করুণানিধির। তবে কাগজেরা একটা বিষয়ে ঢোঁক গিলেছেন, ভোটের আগের দিন বলেছিলেন, এ ভোট নন্দীগ্রামের বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের। ওটা হয়নি। ওটাতে নন্দীগ্রাম এবং সিঙ্গুর একসঙ্গে ছিলেন ডালহৌসী আর লালবাজারের বিরুদ্ধে।

    বাংলা কাগজে মানুষের আশীর্বাদ, আবেগ, ভালবাসায় ভেসে গিয়ে জিতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ী হয়েছে গত বছর দুয়েকে তাঁর জীবন জীবিকা রক্ষার লড়াই। ঘৃণায় উড়ে গেছেন সিপিএম ইত্যাদি। আর ইংরেজি কাগজে জিতেছেন ক্রমশ: আরো বেশি দায়িত্ত্ব পাওয়া রাহুল গান্ধী অথবা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং। একটা সমন্বয় আনার চেষ্টা করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা। তাঁরা দিনের সবচেয়ে বড় খবরের প্রথম তিনটে বাক্যে, 'জোট' শব্দটা ব্যবহার করেছেন চারবার। এবং সেই সূত্র ধরেই ছবি ছেপেছেন প্রণববাবুর। এবং বাছা রাহুলের। মনমোহনের ছবি নেই। আর হেরো পার্টি বামফ্রন্টের খবরটা আরো মজার। ইংরেজি কাগজ এবং আবাপতে হেরেছেন প্রকাশ কারাত। আবাপর ভেতরের পাতায় এবং বাকি বাংলা কাগজে সবদিনই হেরেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এছাড়া জাতীয় ইংরেজি কাগজ বা চ্যানেলে কিন্তু জিতেছেন মনমোহন এবং হেরেছেন মোদী নন, আদবানী। ১৬ ই মে রাত্রে তৃতীয় ফ্রন্ট এবং ভারতীয় জনতাপার্টির হেরে ভুত হয়ে যাওয়াকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রখ্যাত এক সাংবাদিক বলেই ফেললেন, দিস ইজ আ ডিফিট ফর বোথ অ্যান্টি আমেরিকানিজম অ্যান্ড ইসলামোফোবিয়া। তাঁদের সাহস বলিহারি, সুইপিং স্টেটমেন্ট দিতে তাঁরা পিছপা হন না।

    সুভাষ চক্রবর্তী বললেন, এটা জাতীয় রাজনীতির জয় (মানে পড়ুন ইউপিএ ছাড়া ঠিক হয় নি!), নিরুপম সেন বললেন, এতে রাজ্যের কোন বিষয় ছিলনা, জাতীয় বিষয় গুলি নিয়ে ভোট হয়েছে (মানে পড়ুন, শিল্পায়ন পদ্ধতি ঠিক ই আছে!), সীতারাম ইয়েচুরি বললেন, ইউপিএর জয় হয়েছে, তার কারণ আমাদেরই চাপে যে ইউপিএ র যে নীতি অভিমুখ ছিল প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে তার লাভ পেল কংগ্রেস (মানে পড়ুন গরীবের কথা বাসি হলে ফলে অথবা হায় হায় আমরা কোথায়, এনরেগ শেষে তুমিই ডুবাইলা, দীর্ঘশ্বাস। )। দীনেশ ত্রিবেদী, বারাকপুরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টে দাঁড়িয়ে বললেন, এ মা মাটি মানুষের জয়। প্রণববাবু মুর্শিদাবাদ থেকে সরাসরি বললেন, সোজা কথা কংগ্রেস গ্রামীণ মানুষের জন্য একশো দিনের কাজ এনেছে, কৃষকদের 'পঁয়ষট্টি হাজার কোটি টাকার' ঋণ মকুব করেছে ( বাই দ্য ওয়ে এটা মাস খানেক আগেও তিরিশ হাজার কোটি টাকা ছিল, বিভিন্ন নাগরিক হোর্ডিং এ, একটু কালচার করতে হবে) , জনমুখী নীতি নিয়েছে, তাই জন্য মানুষ আমাদের জোটকে সমর্থন করেছেন। সবাই এরকম একটা আপ্লুত হয়ে যা পারছেন ব্যাখ্যা করছেন, দলে দলে লোকে হয় প্রকাশ কারাত নয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মাথা নিয়ে টানাটানি করছেন, এমন সময়, এম জে আকবর, একটি অসাধারণ মন্তব্য করে ফেল্লেন, বল্লেন, কেরালা বা বাংলায় হয়তো বামেদের কেউ মিস করবে না, কিন্তু দিল্লী তে ওদের মিস করবো, ওরা ভুল করুক আর ঠিক করুক বাপু, তর্ক টর্ক করতো (অর্থাৎ পড়ুন, কবে যে আবার ওদের সঙ্গে চা-কফি খাওয়া হবে, হতেও পারে আগের বার দাম দিয়েছিলেন আকবর নিজে, বেঙ্গল লাইনের লেভির সারপ্লাসের পয়হায় চা খেতে গেলে এখন কদিনের অপেক্ষা কে জানে;-) )। কে না জানে হেরো আর মৃত আর বৃদ্ধ চলৎশক্তিহীন বামপন্থীরা সব সময়েই একটা স্নেহ আর ভালবাসা, একটা মহৎ আশকারা পেয়ে থাকেন, কাগজে কিন্তু টেলিতে নয়, অথবা তাঁদের জন্য লোকের মন হুহু করে, অন্তত সকালের দিকটা। আর তাঁরা ভোটে জিতলেই শেয়ার ইন্ডেক্স ছুটি নিয়ে বিলেতে বেড়াতে যায়, ভায়া আমেদাবাদ।

    তো এই সব যাচ্ছেতাই ব্যাখ্যা ট্যাখ্যা শুনে আর পড়ে সেদিন আস্তে আস্তে রেগে যাচ্ছি, ইশানমামুর উপরে রাগ হচ্ছে, কত লোক কত ভাট বকে আর লিখে, টু পাইস কামিয়ে নিল, আমাদের বেলায় দেড়েল মামু তো ব্যানানাটা বা র‌্যাডিশটা দেয়ই না, উল্টে লেখা দিতে দেরী হলে মেলে বা ফোনে কি চোটপাটটাই না করে; মামীটি তো মনুষ্য না, উপহার বলতে স্মাইলি আর ভার্চুয়াল খ্যাংরা, সে দু:খের কথা কারেই বা বলবো, সুজনদাও হেরে গেলেন; আর মনের মধ্যে ট্রেনের আওয়াজ টা যেমন অনেকদিন ট্রেনে না চড়লেও ঘুরে ঘুরে আসে, সেই রকম ভাবে ঘুরছে তিনটে শব্দ,মা-মাটি-মানুষ মা-মাটি-মানুষ, কিন্তু বাজারে কি পোলারাইজেশন, সেটা অবচেতনের তালে তালেও, কখনো ইনকিলাব জিন্দাবাদের তালটার সঙ্গে গুলিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছেনা, নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকেও আলাদাই থাকছে; তাছাড়া লাইভ টেলিভিসনে নিজের কৈশোর আর যৌবনের মৃত্যু দেখতে কার আর ভাল্লাগে, আমারো না, প্রভাকরণেরো না, এমন সময় একটা ব্যাপক জিনিস ঘটলো। কোন একটা চ্যানেলে কোন একজন রাজনৈতিক নেতা পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সব্বার আগে, আড়চোখে নোটস্লিপ দেখে নিয়ে, তাড়াহুড়ো করে একটা অভিনব তত্ত্ব বলেই ফেল্লেন। মোদ্দা এই, যে কলকাতার আশে পাশে বামফ্রন্টের খারাপ ফলের মূল কারণ হল, চাষীরা মেট্রো রিটেলের কাছে কৃষিজাত দ্রব্য বিক্রি করতে ফরোয়ার্ড ব্লকের কাছে শুরুর দিকে কিছুটা রাজনৈতিক বাধা পেয়েছেন তাই, তাঁরা বামফ্রন্টকে এই লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেন নি। লাও ঠ্যালা। আমার কলা এবং বিশেষত: মুলোর দু:খটা, এই ব্যাখ্যাটি শুনে কোন লেভেলে পৌঁছেছে কিছু বুঝতে পারছেন, এই ডিস অ্যাফেকশন কে সামলাবে, বিজয় মাল্য ছাড়া এ গরীবের কেই বা আছে;-)

    এই সব ব্যাখ্যাগুলোর মজা হল, সকলেই জানেন, সকলেই গুল দিচ্ছেন, কিন্তু এ এক আজব পোকার খেলা, কেউ কাউকে কিছু বলে দিচ্ছেন না। ধরুন সিপিএম এর রাজ্য নেতারা জানেন, শিল্পায়ন নীতি ও পদ্ধতি ছড়িয়েছে, গুলি আর আগুন লেগেছে মানুষের গায়ে, মানুষ তাঁদের অনেক জায়গাতেই স্রেফ প্রত্যাখ্যান করেছেন, গভর্নেন্স ছড়িয়েছে, মানুষ বিরক্ত হয়ে বলেছেন অনেক হয়েছে, মামা কাটা, কিন্তু বলছেন, জাতীয় ভোট, বা বোঝাতে পারিনি। ইংরেজি কাগজ ও আবাপ জানেন সেটা, কিন্তু বলছেন, শিল্পায়ন নীতি ঠিক ছিল অথবা অন্তত প্রথমেই রাজ্য সরকার বা তার প্রধানকে দায়ী করতে পারছেন না, বলছেন প্রকাশ ইউ পি এ ছাড়াতেই এই সর্বনাশ, মানে সর্বনাশ কথাটা ঠিক বলতে পারছেন না,শুধু বলছেন আলিমুদ্দিন রেগে গেছেন, কারণ তাহলে ফ্যাকশনাল স্পেকুলেশন নিয়ে দিনের পর দিন মাইল মাইল কলাম নিশ্চিন্ত। আর সিপিআইএম ভেঙে গেলে ল্যাঠা চোকে। 'সর্বনাশ' কথাটা সরাসরি বলছেন না, কারণ তাহলে নতুনেরা রেগে গেলেও যেতে পারেন। বাংলা কাগজ সিপিএম ও রাজ্য সরকারকে মূলত: টার্গেট করছেন, শাসন পদ্ধতি এবং নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ঘটনার জন্য, কিন্তু বলছেন না, এলাকা দখলের মারামারির রাজনীতিতে তাঁরাও শামিল কিম্বা এস ই জেড আইনের কোন পরিবর্তন গুলো তাঁরা চান, বা তাঁদের মতে বন্ধ কলকারাখানা খোলার জন্য মূল শর্ত ইউনিয়নহীনতাই কিনা অথবা ঘুরে ফিরে সেই এস ই জেড ই কিনা বা বলছেন না বড় শিল্পের জন্য টানা জমি পাওয়ার মূল সমস্যা হয়েছে ভূমি সংস্কারে, রেটোরিকে জমি বর্গাদারদের দেওয়ার বিরোধিতা সরাসরি না করে বলছেন, গ্রামীণ ভদ্রলোক সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। অথবা ধরুন বলছেন না, অন্তত: ব্যারাকপুরে বা হাওড়ায়, তাঁরা ইউনিয়ন ব্যাপারটার-ই বিরোধী কিনা, তাঁদের জমানায়, লোকে পিএফ না পেলে কারে নালিশ করবে, সংগঠিত কর্মচারী ছেড়ে দিন, ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড , দোকানের সেলসের ছেলেমেয়েরা রা দাবী দাওয়া করবেন কিনা, মাইনে না পেলে ছাঁটাই হলে, বলছেন না, রাজ্য সরকারী কর্মচারী দের ইউনিয়ন করার ব্যাপারটাই তুলে দেবেন কিনা, কারণ তাঁরা তো 'মেশিনারি'। বলছেন না, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আর ন্যানো জাতীয় কারখানার মধ্যে পার্থক্য তাঁরা করবেন কিনা, কিম্বা কর্পোরেটগুলিকে ভর্তুকী দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করবেন কিনা, বা কতটা কী দেবেন সে সম্পর্কে মূল নীতি কি। বলছেন না মহানগরের রিটেলমল সিপিএমের দম্ভ আর দক্ষিনপন্থার পরিচায়ক হলেও, ছোট শহরে বা উপকন্ঠে রিটেলমল মানেই কৃষিভিত্তিক শিল্প কিনা। বলছেন না, শিল্পায়নের না হোক অধিগ্রহণের বিরোধিতার সঙ্গে নগরায়নের বা ব্যয়সাপেক্ষ নগর উন্নয়নের বিরোধিতা করবেন কিনা, বা উন্নয়নে স্বচ্ছতাই শেষ ও একমাত্র কথা কিনা, নাকি অভিমুখ বলেও কিছু থাকছে, বলছেন না ১৮৯৪ এর আইনের ঠিক কী পরিবর্তন চাইছেন। আসলে বলাটা মুশকিল -ও, সময় ও বেশি পান নি, প্লাস নানা বিতর্কে , টার্ফ ওয়ারে অনেকটা সময় গেছে। আমি ভোটার হিসেবে এবং রাজনৈতিক বিরোধী হিসেবেও সত্যি বলছি, বেনিফিট অফ ডাউট দিতে রাজি, দিদি সময় নিন, কিন্তু এড়াবেন না। বা এড়ালে চাপ হবে কয়ে রাখলাম। আমাকে পার্সোনালি বিজয় মাল্য বলেছেন, মাল খাবে কিন্তু রেসপন্সিবলি খাবে আর খাওয়ার সময়, সব সময় দেশের জন্য গভীর ভাবে ভাববে। সব বৌমাদেরি বলেছেন কিনা সেটা বলবেন সেই অতুলনীয় শেকার ও স্টারার, জিরো জিরো পৌনে সাত, পি আর বিক্রম।

    ইয়ার্কি ছেড়ে দুটি কথা সিরিয়াসলি বলে যাই, আর মাত্র ঘন্টা খানেক সময় নেব, যেহেতু গরীব নই, তাই ফলার সম্ভাবনা কিম্বা যেহেতু বিখ্যাত নই, তাই শোনানোর সম্ভাবনা অবশ্য কম, তবু কিরকম একটা লাগছে, না বলে পারছিনা। অনেক লোক, বাম ডান, ইংরেজি বাংলা, জাতীয় মিডিয়ার শাইনিং, লোকাল মিডিয়ার পাইনিং সকলেই বলছেন দক্ষিণ বঙ্গের মুসলমানরা বামফ্রন্টকে ভোট দেয় নি বলেই এই ভরাডুবি, সাচার রিপোর্টে তাঁরা অসন্তুষ্ট। আমি একমত নই। ধরুন সরকারী চাকরিতে মুসলমানেদের শতকরা সংখ্যা বেশি বাড়লো না, কিন্তু সকলের মতই, সব গরীব মানুষের সংগেই তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হল, এলাকায় অভাবনীয় উন্নয়ন হল, সরকারী আন্তরিকতার নজির অনেক গরীবের সঙ্গেই মুসলমান, নিম্নবর্ণ গরীবরাও পেলেন। দৈনন্দিন ঘরোয়া বা বাজারি পার্থক্যীকরণ একটু কমলো, ১০০ দিন নয়, দুশো আড়াইশো দিন কাজ পেলেন, ন্যুনতম হারে নয়, আরো বেশি সম্মানজনক হারে, তাহলে কিন্তু সরকারী চাকরির শতকরা ভাগ নিয়ে মাথা ঘামানিটা অতটা থাকতো না। হ্যাঁ অস্বীকার করার কিছু নেই, মুসলমানরা শুধু মুসলমান বলেই নানা ভাবে অস্বচ্ছ দেওয়ালে ধাক্কা খান, আমাদের গোটা দেশেই। মাঝে মাঝে মারা যান, শুধু মুসলমান বলেই, কিন্তু তাঁরা এই নির্বাচনে, দক্ষিণবঙ্গে অন্তত:, আমার মতে যদি এক সঙ্গে ভোট দিয়েও থাকেন, তাহলেও সেটা ঘটনাচক্র মাত্র, কারণ রাজ্য সরকারের কাজকর্মে তাঁরা অনেকেই ঠিক হিন্দু প্রতিবেশীদের মতই অসন্তুষ্ট। হতেই পারে তৃণমূল কংগ্রেস আইডেন্টিটি পলিটিক্সভিত্তিক প্রচার করেছেন, কিছু অভিযোগ মিডিয়াতেই এসেছে, অন্তত: স্থানীয় ভাবে, যদি করেই থাকেন তাহলে ভুল করেছেন, আর না করে থাকেন তাহলে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন (কারণ কোন মিডিয়াকেই বিশ্বাস করার বিশেষ কোন কারণ পাইনা), কারণ রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্ম বা জাতিভিত্তিক বিভাজন হলে আর যাই হোক সুস্থমস্তিষ্ক কোন মানুষের কোন সুবিধে হবে না। সাচার কমিটির রিপোর্টকে নিয়ে আলাপ আলোচনা হোক, পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন দরকার কিনা দেখা হোক, কিন্তু নাকের বদলে নরুণের ন্যায়, মন্ডলের বদলে অযোধ্যা পেয়েছিলাম কিনা জৈবনে, তাই ঘর পোড়া গরু একটু ভয় পাই। সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা সকলকেই অনুরোধ করি, একটু ভেবে চিন্তে রাজ্যে রাজনীতিটা করবেন।

    আর হ্যাঁ সিপিআইএম নেতা কর্মী দের বলি, পার্টিটা ভেঙ্গে দেবেন না। অনেক প্ররোচনা সত্ত্বেও, বিতর্ক সত্ত্বেও, পার্টি ভেঙ্গে গেলে জেনে রাখবেন জিতবেন শুধুই কিছু ব্যুরোক্রাট আর এলিট। এমনকি সম্ভবত তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসকে এই ভোটে যাঁরা জিতিয়েছেন তাঁরাও জিতবেন না। পার্টি ভেঙে গেলে বিভাস চক্রবর্তীদের, বেচারাম মান্নাদের এমনকি শেখ সুফিয়ানদেরো লাভ হবে বলে মনে করি না, তাঁদের হঠকারী হিসেবে দেখেন সিপিআইএম সমর্থকরা, দৈনন্দিনে হয়তো তাই, কিন্তু বড় করে দেখলে, ইতিহাস দেখলে, তাঁরাও বেসিকালি হেরো পার্টি, আপনাদের অনেকেরি মত, এমনকি এই 'স্থায়িত্বে'র নির্বাচনেও, তাঁরা রেগে গেছেন বা ঝগড়া মারামারি করেছেন মানেই জিতে গেছেন নাও হতে পারে, সকলের কাছেই পৌঁছনো দরকার। কথাটা ভেবে দেখবেন।

    আর শেষ কথা, একটা সত্য ও সংহতি কমিশন গঠিত হোক। ধীরে ধীরে কাজ শুরু করুক। একটা আইনি কাঠামো তৈরী হোক। সকলকে নিয়েই হোক। রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিপাত যাক। এই নির্বাচনে যাঁদের জেতার বা হারার কোন সম্ভাবনাই নেই, সেই সব মৃত মানুষ গুলোর স্মৃতি এইভাবেই রক্ষা হোক। জমি বা চাকরি, রাজনীতি বা ধর্ম, সংগঠন বা বিক্ষোভ, আশংকা বা হর্ষ, কোন কারণেই যেন মানুষের প্রাণ আর না যায়,আর যেন ঘর বা গা না পোড়ে, সমস্ত অস্ত্রে জং ধরুক, রেটোরিকের উত্তেজনা হেরে যাক, সন্দেহের নিরসন হোক। সময় লাগুক কিন্তু হোক।

    মে ২৪, ২০০৯


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ মে ২০০৯ | ৮৩৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন