'একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।' আজ ই খবরে প্রকাশিত।
যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামাতের নিবন্ধন বাতিলের ঘোষণা অবশ্যই একটি নৈতিক বিজয়। কিন্তু জামাত দল হিসেবে এখনো নিষিদ্ধ নয়। জামাতের ব্যানারে রাজনীতি করতে এখনো বাধা নেই। আদালতের আদেশেই জামাতের রাজনীতি আপাতত শেষ হচ্ছে না। তবে জামাতের ব্যানার ব্যবহার করে ঘাতক দল আর নির্বাচন করতে পারছে না, ন্যায় বিচারের প্রতীক ‘দাঁড়ি-পাল্লা’ নির্বাচনী মার্কাটিও তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এটি খুব সাধারণ কথা নয়।
হাইকোর্টের রায় বহাল থাকলে এটি অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর জামাতের জন্য এটি একটি বড়ো ধরণের চপেটাঘাত। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনও বিএনপি-জামাত-হেফাজত ইশকে মহব্বতি চক্রেই ঘুরপাক খাবে, এটি বলাই বাহুল্য।
তবে জামাতিরা চাইবে আরো এক ধাপ এগিয়ে থাকতে। বিএনপি’র ধানের শীষ বা হেফাজতের হাত পাখা নিয়ে নির্বাচন করলেও যেসব আসনে তাদের ভোটে জেতার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত, সেখানে জামাত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করানোর মরিয়া চেষ্টা করবে নিজেদের হিম্মত প্রমানের জন্য। সেক্ষেত্রেও বিএনপি- হেফাজত তাদের ব্যক-আপ হিসেবে থাকতে পারে। অর্থাৎ ছুপা রুস্তমী রাজনীতিতে জামাতের যাত্রা শুরু এখান থেকেই। অবশ্য এরই মধ্যে রাজনীতির খবর ভিন্ন। অদূর ভবিষ্যতে জামাত বাদে নতুন দলের নামে নিবন্ধন আদায়ে এখন থেকেই পেয়ারে পাকি দলটি তোড়জোড় শুরু করেছে বলে রাজনীতির বাজারে জোর গুজব রয়েছে।
মিশরের জেহাদি দলের আদলে ‘মুসলিম ব্রাদার হুড’ এবং ‘ফ্রিডম ইন জাস্টিস’ নামে তারা নতুন আরেকটি দল খুলতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে নতুন নামে দল খুললেও এই দলের নিবন্ধন জামাত খুব শিগগিরই পাচ্ছে না। কারণ নির্বাচন কমিশনের সংস্কারকৃত বিধানে নতুন দলের নিবন্ধন প্রাপ্তির শর্ত বেশ কঠিন। দলটির অন্তত পর পর তিনটি নির্বাচনে প্রার্থীদের এক -তৃতীয়াংশের জয়লাভ আবশ্যিক শর্ত।
এ পর্যায়ে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে নতুন দলে সাবেক জামাতের জয়ী প্রার্থী যোগও দিতে পারবেন না। এমনকি জামাতে তো নয়ই। কারণ সংবিধানের ৭০ (১) অনুচ্ছেদ বড়ই বাধা। ফ্লোর ক্রসিং এর দায়ে সে ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। জামাত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হলে কেবল নতুন দলে যোগ দেয়ার সুযোগ আছে ।
সব মিলিয়ে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর এই প্রথম যুদ্ধাপরাধী-ঘাতক দলটি আইনী যাঁতাকলে পড়েছে। দলের আপীলে সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের আদেশটিকে বহাল রাখলেই আপাতত কেল্লা ফতে। অবশ্য এর পর দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি নিতে হবে জামাত-হেফাজত-হুজি-জেএমবি-হিতা’র মতো সব ধর্ম ভিত্তিক দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য। সে লড়াইটি দীর্ঘ, তবে ১৯৭১ এর রক্তস্নাত বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব নয়।
এদিকে, বহুদিন পর জামাতকে লেজে খেলাতে পেরে বিএনপি নিশ্চয়ই ভেতরে ভেতরে মহাখুশী। আশা করা যায়, বাচাল রাজনীতিতে নেতা-নেত্রীরা এই দিলখুশ মনোভাব চেপে রাখবেন না, খুব শিগগিরই প্রকাশ করবেন। তেঁতুল শফির ক্ষেত্রেও একই কথা। তারাও চাইবেন জামাতকে নিজ হেফাজতে রাখতে, অভয় দিতে। তবে বাকা কথায় অভ্যস্তরা বলতে চান, গভীর প্রেমে সফলতার মাত্রাটা বেশি, যেহেতু বিএনপি নেত্রীর জামাত প্রেম অনেক গভীরে তাই আদালতের রায়ে জামাত বিএনপিতে বিলীন হবে নাকি বিএনপি জামাতে বিলীন হবে তা দেখতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।