

অলংকরণ: রমিত
অনেক সকালে যখন মানুষ-দুনিয়ার চোখ ভালো করে খোলেনি তখন ওদের শুনতে পাই। পাখ-পাখালী। ""কিচির মিচির- রাতি গেলো রাতি গেলো-ওঠো ওঠো ওঠো।'' আবার দিনের সারাটা জুড়েও ওরা এখানে ওখানে বিছিয়ে থাকে, বাদামী কাঠবেড়ালী হয়ে লেজ তুলে বারান্দার রেলিং বেয়ে ওঠে নামে, উমুর ঝুমুর কুকুরবাচ্ছা হয়ে পায়ে পায়ে ঘোরে, ধূসর মোটা রাশভারী বিল্লি হয়ে রান্নাঘরে খবরদারি করে বেড়ায়, লাল সোনালী মাছ হয়ে লেজ পাখনা নেড়ে নেড়ে কাঁচের বোয়ামে জলের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। ওরা। পশু, পাখী,মাছ..... আমাদের সারা দিনমান জুড়ে। শুধু দিনমান জুড়ে বললে খুব ভুল বলা হবে। আসলে কিন্তু ওরা আরো অনেক বেশিতে ছেয়ে আছে। আমাদের পুরাণে দেখুন, লোকগল্পে দেখুন, আমাদের ঝিকিরমিকির রূপকথায় দেখুন। সেই পশু, পাখী,মাছ। দেশবিদেশের মাইথোলজিতে ওদের আনাগোনা নিয়ে আমার কাবিল ভাইবন্ধুরা লিখছেন। দেখতে পাবেন পাতা ওল্টালেই। এই পাতাতে আমি বরং রূপকথার ঝাঁপিটাই উপুড় করি।
রূপকথার পুরো জগতটা জুড়েই রাজপুত্তুর কোটালপুত্তুরদের সাথে সমান জাঁকিয়ে আছে এই সব না-মানুষরা। সে আমাদের দেশের গল্পেই বলুন আর অন্য দেশের কাহিনীতেই বলুন। রূপকথার জাদু দুনিয়ায় জন্তু জানোয়ার, পাখিপক্ষীরা যে মানুষের মতই কথা বলতে পারবে তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। ভালুক এসে চাষীর সাথে ফসলের ভাগ নিয়ে ঝগড়া করবে, শেয়াল আর সারস এ ওর বাড়ি নেমন্তন্ন যাবে, খরগোশ আর কচ্ছপ দৌড়ের বাজি ধরবে এসব ওখানে হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু আজ আমি সেই সব না-মানুষদের কথা বলব নানান দেশের রূপকথায় যারা এক্কেবারে মানুষের মত হয়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে আসুন দেখি আমাদের নিজেদের দেশের আঙিনায়। বাংলার রূপকথায় সেই যে ছিলো এক হীরেমন পাখি। এই হীরেমন দুনিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর জানতো, তে¢ত্রশকোটি দেবদেবীর নাম বলতে পারতো। পাখিটা এমনকি পক্ষীরাজ ঘোড়ার জাত নির্ণয়ও করতে পেরেছিলো। নিজে নিজে নিপুণ পরিকল্পনা করে রাজাকে পক্ষীরাজ ঘোড়া করে সাত সমুদ্দুর পারের রাজকন্যার কাছে নিয়ে গেছিলো। আবার রাজার নিজের দোষেই যখন ঘোর জঙ্গলের মধ্যে পক্ষীরাজের ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে গেলো, রাজার চোখ অন্ধ হলো, কোথাকার এক দুষ্টু রাজপুত্র এসে ঐ সুন্দরী রাজকন্যেকে তুলে নিয়ে গেলো তখন এই হীরেমন পাখিই বুদ্ধি করে সব্বাইকে উদ্ধার করলো। রাজা-রাজকন্যের এমন বন্ধুর কাজ কোনো মানুষ করতে পারেনি কিন্তু।
তারপর ধরুন "ক্ষীরের পুতুল' গল্পের সেই বাঁদরের কথা। অবন ঠাকুরের এই গল্প আঁকা ছবি লেখার মধ্যে একবার ডুব দিয়ে দেখুন তো। দুখিনী দুয়োরাণীকে রাজা বিদেশ থেকে কানাকড়ি দিয়ে কিনে এনে দিয়েছিলেন একটা বাঁদর। রাণী থাকেন জীর্ণ কুঁড়েতে, খেতে পান কি পান না, রাজার কাছে অনাদর আর অবহেলা পেয়ে পেয়ে শুধু কেঁদেই তাঁর দিন যায়। কিন্তু এই বাঁদর এসে কি করলো? প্রথমে রাণীর ভাঙা কুঁড়েঘর সারানোর ব্যবস্থা করলো। তারপর রাজার কাছে গিয়ে বুদ্ধি করে বন্দোবস্ত করলো যাতে রাণীর জন্য রোজ রাজপাকশালা থেকে খাবার যায়। শুধু খাওয়া থাকা দিয়ে কি হয়? রাজা যাতে রাণীকে আগের মর্যাদায় ঘরে আনেন তাই বাঁদর গিয়ে রাজাকে বলে এলো যে "মহারাজ, মায়ের আমার খোকা হবে।' সেখানেই শেষ নয়। দুয়োরাণী তো ভয়েই অস্থির ছিলেন যে ধোঁকা দিয়ে মিথ্যে কথা বলে যদি শেষরক্ষা না হয়? বাঁদরের কিন্তু কোন ভয়ডর নেই। সে একেবারে খাস মা ষষ্ঠীকে ব্ল্যাকমেল করে তাঁর কাছ থেকে "ষেঠের বাছা' চাঁদপানা রাজপুত্তুর এনে দিলো। হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে মিথ্যে কথা বলেছে বাঁদর, ব্ল্যাকমেল করেছে, একটু ডার্ক ওর কাজ করার ধরণটা। কিন্তু তাই দিয়ে যদি দু:খী রাণীর দু:খ ঘোচে, নি:সন্তান রাজা কোলজুড়োনো ছেলে পান তাহলে ক্ষতি কী?
তবে বাংলা রূপকথায় সব্বার ওপরে ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমী। তাঁরা কত রাজপুত্রকে গুপ্তধনের হদিশ দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। আর শুধু ধনের খবর কেন? চিকিৎসাবিদ্যায়ও ওঁদের অসীম ব্যুৎপত্তি। কোন পাতার রস লাগালে অন্ধ চোখ সারবে,কোন গাছে শিকড়বাটা খেলে জন্তু-জানোয়ারের ভাষা বোঝা যাবে, কোন পাখির ময়লা শুকিয়ে গুঁড়ো করে গায়ে মাখালে দুরারোগ্য অসুখ সেরে যাবে স-ব বলে দিতেন ওঁরা। তাছাড়া দুনিয়ার নাড়ি নক্ষত্র এই ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর নখদর্পনে। নইলে কি আর এতশত রাজার ছেলেরা জানতে পেতো কোন পাহাড়ে কোন রাক্ষস কাকে বন্দী করে রেখেছে? কোথায় কোন রাজার মেয়েকে ডাইনীবুড়ি ধরেছে?
এবার দেখুন রুশদেশের রূপকথায়। হাভরোসেচকা বলে ছোট্ট অনাথ মেয়েকে ওর সৎমা,আর তিন সৎ বোন রাতদিন খাটাতো, মারতো, খেতে দিতো না। কিন্তু খুকুমণি হাভরোসেচকার নিজের মায়ের দাগফুটকি গরু ওর জন্যে কি না করেছিলো? গরু জাদু কঞ্চরে ওর সব কাজ করে দিতো (কেমন মজার জাদু দেখুন,তার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে আসলেই সব কাজ সারা হয়ে যায়!),বিপদের সময় পরামর্শ দিতো, দিনের শেষে খুকুমণি কাঁদতে বসলে মিষ্টি কথায় ওর সব দু:খ ভুলিয়ে দিতো। শেষে যখন সৎমার ফিকিরে গরুকে মেরে ফেলা হলো তখন তার হাড় থেকে জন্মালো এক সোনার আপেলগাছ, তাতে রূপোর পাতা। সে আপেলগাছ আবার শুধু হাভরোসেচকার কথাতেই আপেল দেয়, অন্য কারুকে তোয়াক্কা করেনা। শেষে যখন এক সুন্দর বীর এলো, সে হয়তো রাজপুত্তুর বা অমন কেউ হবে... তখন ঐ আপেলগাছ দেখে বড় পছন্দ হলো তার। বললো যে ওকে সোনার আপেল পেড়ে দেবে তাকেই সে বিয়ের কনে করে নিয়ে যাবে। তা গাছ তো হাভরোসেচকা ছাড়া কারুর কথা শোনেনা। কাজেই সে ছাড়া আর কেউই পারলো না আপেল পাড়তে। দাগফুটকি গরুটা বেঁচে থাকতে হাভরোসেচকার পাশে সবসময় স্নেহময়ী মায়ের মত থেকেছিলো, আর এখন এই আপেলগাছ হয়ে গিয়েও ও খুকুমণির জন্য বীর তরুণ, রূপে অরুণ বর জোগাড় করে আনলো। আর ছিলো সেই রাজপুত্র ইভানের গল্পে পাঁশুটে নেকড়ে। খোলামাঠে থাকতো নেকড়ে, রাজপুত্রের ঘোড়া খেয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু নেকড়ে হয়েও সে কি জ্ঞানী, কি গুণী। কেউ যে খবর বলতে পারেনি সেই আগুনপাখি কোথায় থাকে তা ইভানকে বলে দিয়েছিলো নেকড়ে। শুধু তাইই নয়, কেমন করে তাকে নিয়ে আসা যায় তাও বলে দিয়েছিলো। জাদুও জানতো নেকড়েটা। রূপ বদলে ও কখনো হয়ে যেতে পারতো রূপসী রাজকুমারী ইয়েলেনা, কখনো বা স্বর্ণকেশরী ঘোড়া। ঐ রূপ বদলানো আর বুদ্ধি জ্বলজ্বলে পরিকল্পনার জোরেই রাজপুত্র ইভান তিন তিনজন ডাকসাইটে রাজার থেকে নিয়ে আসতে পেরেছিলো আগুনে পাখি, সোনালী ঘোড়া আর রূপসী ইয়েলেনাকে। শেষে ইভানের দুষ্টু দাদারা ওকে মেরে ফেলল। কিন্তু অমন নেকড়ে বন্ধু থাকতে আর ভাবনা কি? সে কোথা থেকে জীয়ন জল এনে ইভানকে বাঁচালো, দুষ্টু দাদাদের উচিৎ শাস্তিও দিলো।
গ্রীমভাইদের গল্পেও বারবার দেখি পশু-পাখি-মাছ মানুষের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে,বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে। সেই যে কোন এক রাজার মেয়ে তাঁর বাগদত্ত রাজাকুমারের বাড়ি যাচ্ছিলেন। রাস্তায় দুষ্টু দাসী ওঁর জামাকাপড় কেড়ে নিয়ে নিজে রাজকুমারী সেজে ওঁকে দাসী সাজিয়ে নিয়ে গেলো। রাজকুমারীর ঘোড়া ফালাডা সব দেখে কত দু:খ পেয়েছিলো। বলেছিলো কিছু করে এর প্রতিকার করবে। সেই শুনে ভয় পেয়ে দুষ্টু দাসী আবার ষড়যন্ত্র করে বেচারা ফালাডার মাথা কাটিয়ে ফেললো। প্রতিকার কিছু করতে পারেনি বটে, কিন্তু ফালাডার কাটা মাথা রাজকুমারীর দু:খে দীর্ঘশ্বাস ফেলতো। ওঁর মন্দভাগ্যের জন্য কষ্ট পেয়ে বলতো "রাজকুমারী গো রাজকুমারী, হায় গো তুমি হাঁস চরাও এখানে।' রাজার মেয়েকে দাসী ভেবে ওখানে হাঁসচরুনী মেয়ের কাজ দেওয়া হয়েছিলো। পরে যখন নানা ঘটনার পর সব জানাজানি হয়ে গেলো তখন ফালাডা সব ঘটনার সাক্ষী দিয়েছিলো।
আবার আরেক গল্পে এক যাদুকর মাছ গরীব জেলেকে কত কিছুই না দিয়েছিলো। জেলের জেলেনীর কথামতো প্রথমে নতুন কুঁড়ে ঘর, তারপর তা বদলে বড় কোঠাঘর, তারপরে বাগানবাড়ি। নিয়ে এমনকি তাকে দেশের রাজাও বানিয়ে দিলো। শুধু রাজাও নয়, একে একে আব্দার শুনে শুনে মাছ ওকে সম্রাট বানালো, পোপ বানালো। অবশ্য শেষে জেলেনী এমন বাড়াবাড়ি শুরু করলে যে মাছ আবার সেই আগের পুরোনো গরীব জেলেই করে দিলো ওকে। সে শুধু দিতেই পারে তা নয়,বেশি লোভ করলে কি শাস্তি হওয়া উচিৎ সে বিষয়েও মাছের বুদ্ধি বড়ই সচেতন।
এই সব গল্পেই দেখি পশু পাখিরা যেন ঠিক মানুষের মত ব্যবহার করছে। আবার এর উল্টো দিকের ঘটনাও আছে বৈকি। সেখানে মানুষই জন্তু জানোয়ার হয়ে গিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ নিজের পাপের ফলে। কেউ কেউ হয়তো কোনো অভিশাপ কিম্বা তুকতাকের প্রভাবে। কিরকম আসুন দেখা যাক একটু। রূপকথার জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই গল্পেই দেখতে পাবেন এই ঘটনা। গ্রীমভাইদেরই রূপকথা। এক গল্পে রাজার ছেলে ডাইনীর অভিশাপে ব্যাং হয়ে গেলো। একমাত্র কোন রাজকুমারী ওকে ভালোবেসে চুমু খেলে তবেই সে শাপ কাটবে। আরেক গল্পে অহংকারী অত্যাচারী রাজপুত্র হয়ে গেলো ভয়ংকর এক জানোয়ার, বীস্ট। এখানেও দেখি ঐ অভিশাপ কাটার একমাত্র উপায় হলো কোনো মেয়ের ভালোবাসা। সুখের বিষয় ভালোবাসার অভাব হয়না কোন গল্পেই। আবার যদি সামোভারের দেশ, স্তেপ আর তুন্দ্রার দেশে যান সেখানেও দেখবেন কেমন করে মানুষ বদলে গিয়েছে না-মানুষে। জাদুবিদ্যায় দারুণ পারদর্শী ছিলো ভাসিলিসা। তার বাবা অমর কাশ্চেই নামকরা জাদুকর, কিন্তু মেয়ের বিদ্যা তাকেও ছাড়িয়ে যায় আর কি। রেগেমেগে অমর কাশ্চেই মেয়েকে বানিয়ে দিলো ব্যাং। জাদুকরী ভাসিলিসা সারাদিন ব্যাং হয়ে থাকতো। রাত্রি হলেই বারান্দায় গিয়ে ব্যাং এর চামড়া খসিয়ে বেরিয়ে আসতো। হাততালি দিয়ে জাদুর দুনিয়ার দাসীবাঁদীদের জাগিয়ে বানিয়ে ফেলতো কারুকার্য্য করা জামা, দারুণ সুন্দর রুটি। শেষ অব্দি অবশ্য তারও ব্যাংদশা ঘুচেছিলো। তার স্বামী অমর কাশ্চেইকে ঢিট করে ভাসিলিসার অভিশাপ কাটিয়ে দিয়েছিলো।
রুশ রূপকথাতেই আরো ছিলো ঝলমলে বাজ ফিনিস্ত। আসলে সে কিন্তু রাজপুত্তুর। কোনো এক জাদুকরীর ডার্ক ম্যাজিকে হয়ে গেছিলো বাজপাখি। সারাদিন উড়ে বেড়াতো ঝলমলে বাজ হয়ে। রাত হতেই মাটিতে আছাড় খেয়ে হয়ে যেতো সুন্দর কুমার, ফিনিস্ত। লক্ষ্মী মেয়ে সাহসী মার্যুশকা অনেক কষ্ট করে, অনেক দুর্গম রাস্তা পেরিয়ে জাদু কাটিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলো ফিনিস্তকে। একই রকম কোনো কালোজাদুর জেরে আরেক গল্পে ছোট্ট খোকন ইভানুশকা হয়ে গেলো ছাগলছানা। তার দিদি আলিওনুশকা কত রকম কান্ডই না পোয়ালে। শেষ অব্দি জাদু কেটে গিয়ে ইভানুশকা আবার মানুষরূপ ফিরে পেয়েছিলো।
এইরকম ভাবে মানুষ থেকে পশুপাখি হয়ে যাবার গল্প আমাদের দেশের রূপকথাতেও আছে বৈকি। ঠাকুমার ঝুলিতেই দেখুন না, বুদ্ধু-ভুতুম দুই ভাই, রাজপুত্র তারা, কিন্তু বুদ্ধু হলো কিনা বাঁদর, আর ভুতুম হলো প্যাঁচা। বুদ্ধিতে সাহসে কিন্তু পাঁচ পাঁচজন মানুষ রাজপুত্র তাদের কাছে হার মেনে গেলো। শেষে দেখা গেলো যে ওরা মোটেই বাঁদর প্যাঁচা নয়কো। আসলে দুই ফুটফুটে রাজকুমার,নাম তাদের বুধকুমার আর রূপকুমার। অমনি সেজে থাকতো ওরা বাঁদরের ছাল, প্যাঁচার পাখ গায়ে দিয়ে। কেন তা কে জানে? দুইভাইয়ের দুই বুদ্ধিমতি রাজকুমারী স্ত্রী সেই বাঁদরের ছাল,প্যাঁচার পাখ প্রদীপের আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেই ওদের পশুপাখি সেজে থাকা ঘুচলো। আর সেই যে শীত-বসন্তর গল্প। শীত-বসন্তও দুটি ভাই। রাজার ছেলে। কিন্তু তাদের সৎমা সুয়োরাণী বড্ড দুষ্টু। ওদের মা যে দুয়োরাণী, তার মাথায় একদিন ওষুধের বড়ি টিপে দিলো সুয়োরাণী। আর অমনি সোনার এক টিয়াপাখি হয়ে উড়ে যেতে হলো দুয়োরাণীকে। কোন এক দেশের রাজকন্যে রূপবতীর কাছে সোনার খাঁচায় রইলেন তিনি। অনেক দিন পর, অনেক ঘটনার শেষে রাজকুমারী যখন দুধ-হলুদ দিয়ে সোনার টিয়াকে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন, তখন তাঁর আঙুল লেগে সেই ওষুধের বড়ি খসে গেলো। দুয়োরাণী নিজের চেহারা ফিরে পেলেন।
এই সব গল্পেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু না কিছু করে অভিশাপ কেটে যায়, কালোজাদু হার মানে। পশু পাখি হয়ে যাওয়া মানুষেরা তাদের নিজেদের চেহারা ফিরে পায়। তবে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যেতেই পারে যা ঠিক স্পষ্ট করে বুঝে ওঠা যায়না। আমি একটা গল্প জানি। তাতে কোনো রাজা রাণী নেই ,পরী বা রাক্ষসও নেই, তবুও সেটা রূপকথাই। সে গল্পে ছোট্ট ভাইবোন বোগি আর রুমু শুনেছিলো একরকম হলদে পাখির পালক খেলে কুকুর শেয়ালেরা মানুষ হয়ে যায়। সেইসব মানুষদের ছুঁচলো কান, চোখের মণিতে পাটকিলে রং। বিকেল বেলা ওদের দুষ্টু কুকুর ভুলোর মুখের কোণে ওরা দেখতে পেয়েছিলো ঠিক সেই রকম হলদে পালক। পরদিন থেকে ভুলোকে আর পাওয়া গেলোনা। তার বদলে দেখতে পেলো ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলেকে। তার কানের ওপরদিকটা ছুঁচলো, তার চোখের মণি পাটকিলে। ওরা শুনেছিলো সোনারুপোর মাদুলি আর পাঁচঠেঙো মাকড়সা দিয়ে নিদুলী মন্ত্র করে আবার ঐ হলদে পাখি খেয়ে মানুষ হওয়া কুকুর শেয়ালদের নিজের রূপ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। সব ভয় ভুলে গিয়ে রুমু পাঁচঠ্যাং মাকড়সা এনেছিলো, মাদুলিও জুটে গেছিলো একটা। পরদিন দেখলো ছোট্ট কালো বাচ্চাটা আর নেই। ওর মা বাবা নাকি ওকে বাড়ি নিয়ে গেছে। বিকেলবেলা ভুলো ফিরে এসেছিলো।
সত্যি করে কি হয়েছিলো এখানে? ভুলো কি সত্যি মানুষ হয়ে গেছিলো? হলদে পাখি তাহলে কি সত্যিই আছে? কে জানে? স্বপ্ন যে কোথায় শেষ হয়, আর সত্যি যে কোথায় শুরু হয় তা তো আসলেই কেউ জানতে পারেনি।
&/ | 151.14.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:৫৮526320
&/ | 151.14.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:০৭526321
kk | 2607:fb91:89d:9cdb:d93d:3ff2:1a91:***:*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:২০526324
&/ | 151.14.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৫526330