ইতিহাসে নোবেল পুরস্কার হয় না, কিন্তু এবারের অর্থনীতির নোবেল অনেকটাই ইতিহাস ঘিরে। গত কয়েক দশক ধরে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারে গাণিতিক বিষয়েরই প্রাধান্য- রাশিবিজ্ঞান, গেম থিওরি, ফিনান্সিয়াল ম্যাথমেটিক্স। ২০২৪এ অর্থনীতির নোবেল পেলেন দারন আসেমোগলু (Daron Acemoglu), জেমস এ. রবিনসন (James Robinson) আর সাইমন জনসন (Simon Johnson)। বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন - সাধারণ মানুষের সুখসমৃদ্ধিতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানব্যবস্থা কী ধরণের ভূমিকা পালন করেছে এবং করতে পারে।
এঁদের মধ্যে প্রথম দুজনের লেখা একটা উল্লেখযোগ্য বই হল "Why Nations Fail: The Origins of Power, Prosperity, and Poverty"- অর্থনীতির চেয়ে বইটিকে ইতিহাসের বইই বেশি করে বলা যায়। বইটিতে দারন আসেমোগলু এবং জেমস এ. রবিনসন দেখিয়েছেন কেন কিছু রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়, আর অন্যরা দারিদ্র্যের জালে আটকে থাকে। তাঁদের মতে, একটি দেশের সাফল্যের মূল কারণ হল তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমন্বয়মূলক প্রতিষ্ঠান (inclusive institutions) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেয়, এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করে, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনে। এর বিপরীতে, শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান (extractive institutions) ক্ষমতা ও সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত করে, আর সমাজকে অসাম্য, স্থবিরতা এবং ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়।
বইটিতে লেখকরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ এবং তথ্য ব্যবহার করেছেন, যেমন রোম সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে আধুনিক উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ, ইংল্যান্ডের গ্লোরিয়াস রেভলিউশন।
রোম সাম্রাজ্যের স্থাপনার মধ্যেই তার পতনের বীজ কিভাবে লুকিয়ে ছিল সেটা তাঁরা দেখিয়েছেন, যদিও তার উত্থান আর পতনের মধ্যে প্রায় পাঁচশো বছরের ব্যবধান। রোমের প্রজাতন্ত্রকে নস্যাৎ করে অগাস্টাস রোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম খ্রিস্টপূর্ব শতকে। প্রজাতন্ত্রের পাশাপাশি স্থানীয় গণপরিষদগুলিকেও (Plebeian Assembly) ভেঙে ফেলা হয় বা দুর্বল করা হয়, আর ক্ষমতা হস্তান্তর হতে থাকে রোমান সেনেটের দিকে। (ধরা যাক, ভারতের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে, রাজ্য বিধানসভাগুলিকে দুর্বল করে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কুক্ষিগত করা হল- তাহলে যেরকম জনরোষ তৈরী হতে পারে)। রোমান নাগরিক-সেনার চেয়ে বেশি ক্ষমতাশীল হতে থাকল সম্রাটের প্রাসাদরক্ষীরা (praetorian guard)- এরা এতটাই ক্ষমতাশীল ছিল যে সম্রাট এদের ভয় পেয়ে চলতেন- এরা একাধিক সম্রাটকে হত্যা করে নূতন সম্রাটকে সিংহাসনে বসিয়েছিল- অনেক ক্ষেত্রে সম্রাট নির্বাচিত হত প্রাসাদরক্ষীদের মধ্যে থেকেই। মোট কথা ক্ষমতা এত বেশি কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছিল যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলো অসহায় বোধ করত।
লেখকদের মতে, রোম যে দুর্দান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল তার বেশির ভাগটাই ছিল প্রজাতন্ত্রের যুগে- পাম্প, সিমেন্টের বাস্তুশিল্প, জলচাকা, জাহাজের প্রযুক্তি। সাম্রাজ্যের যুগে সেগুলোর কিছু উন্নতকরণ ও প্রসার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু উদ্ভাবনের গতি মন্থর হয়ে পড়েছিল। প্রযুক্তি-গবেষণা অতিরিক্ত মাত্রায় সরকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এক ব্যক্তি অভঙ্গুর কাচ আবিষ্কার করে যখন সম্রাট টাইবেরিয়াসকে প্রদর্শন করে, সম্রাট পুরস্কারের বদলে উল্টে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন- এরকম কাহিনী প্লিনি দা এল্ডার লিপিবদ্ধ করেছেন। লেখকরা আরও একটা উদাহরণ দিয়েছেন- এক ব্যক্তি সহজে পাথর পরিবহন করার জন্য নূতন যন্ত্র আবিষ্কার করে যখন সম্রাট ভেস্পাসিয়ানকে দেখায় সম্রাট তাকে বলেন- এইরকম যন্ত্র আবিষ্কৃত হতে থাকলে আমি সাধারণ মানুষকে রোজগার কিভাবে দেবো? অর্থাৎ তখন একটা বিশাল মজুর শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছিল, যাদের কাজে ব্যস্ত রাখা জরুরি ছিল- কাজের মধ্যে না রাখলে মানুষের মধ্যে গণরোষ তৈরী হতে পারে- এরকম ভয় সম্রাট ভেসপিয়ানের মনের মধ্যে ছিল।
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সঙ্গে সঙ্গে ভূসম্পত্তির উপর নাগরিকদের অধিকার ধীরে ধীরে অস্থায়ী হতে থাকে- রোম সাম্রাজ্যে অনেক সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে ভূমিদাস হয়ে উঠতে থাকে। এই উদাহরণগুলোর মাধ্যমে লেখকেরা দেখিয়েছেন কিভাবে একটা শোষক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে আর তা কিভাবে মানুষের অবস্থাকে প্রভাবিত করে।
বইটিতে তাঁরা উদাহরণ দিয়েছেন ইংল্যান্ডের গ্লোরিয়াস রেভোল্যুশনের (১৬৮৮) আগের ও পরের সময়কাল থেকে। এই বিপ্লবের ফলে রাজার ক্ষমতা হ্রাস পায়, এবং রাষ্ট্রচালনার শক্তি অনেকটাই হস্তান্তরিত হয় পার্লামেন্টের কাছে। এর ফলে স্থাবর সম্পত্তি এবং বৌদ্ধিক সম্পদের অধিকারের উপর নিশ্চয়তা তৈরী হয়, যা আগে ছিল না। তার আগে ইংল্যান্ডের রাজারা পেটেন্টকে নিজেদের রাজকোষের জন্য অর্থ-সংগ্রহের একটা মাধ্যম হিসেবেই দেখত। যার ফলে পেটেন্ট বরাদ্দ হওয়া নির্ভর করত রাজার খেয়ালখুশির উপরে- উদ্ভাবনের দিকে রাজাদের বিশেষ নজর ছিল না। গ্লোরিয়াস রেভোল্যুশনের পরে এটা বদলায়, যার ফলে কয়েক দশক পরেই শিল্পবিপ্লব শুরু হয়। লেখকেরা দেখিয়েছেন পেটেন্ট আর সম্পত্তির নিশ্চয়তা জেমস ওয়াট সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদদের উদ্ভাবনী শক্তিকে ত্বরান্বিত করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে লেখকেরা দেখিয়েছেন যে ঊনবিংশ শতাব্দীতে আশি শতাংশ পেটেন্টের অধিকারী ছিল সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা উদ্ভাবকেরা- আর সেটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল।
নোগালিস নামে একটি ছোট্ট সীমান্ত-শহর যার একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর অন্য অংশ মেক্সিকোতে- অর্থাৎ একই শহর যার দুটি অংশ দুরকম আলাদা আলাদা প্রাশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে চালিত হয়েছে। দুটো অংশের গড় আয়, গড় আয়ু, শিক্ষাব্যবস্থা, গণস্বাস্থ্য- এগুলোর পার্থক্য তাঁরা বিশদে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক পার্থক্য কিভাবে মানুষের জীবনধারণের মানকে প্রভাবিত করেছে।
এই বইটি ছাড়া আরেকটা পেপারের কথা বিশেষ উল্লেখযোগ্য, যেটি এই তিনজন নোবেল বিজয়ী একসাথে লিখেছেন - The Colonial Origins of Comparative Development। এখানে তাঁরা দেখিয়েছেন ঔপনিবেশিকীকরণের সময়কার মৃত্যুহারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল ইউরোপীয় সমাজের কোন অংশ কোন উপনিবেশে কী পরিমাণে বসত করবে আর সেখান থেকে নির্ধারিত হয়েছে উপনিবেশগুলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে কেমন রূপ নেবে, আর সেখান থেকে নির্ধারিত হয়েছে তাদের বর্তমান গড় আয় ও জীবনযাত্রার মান।
এবার আমরা একঝলক দেখব নোবেল কমিটির প্রেস রিলিজের দিকে। এখানে এই তিনজনের গবেষণার বিষয়ে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এঁদের বক্তব্য- হিংস্র প্রতিবাদের চেয়ে অহিংস প্রতিবাদকে শাসকগোষ্ঠী বেশি ভয় পায়। কারণ সশস্ত্র প্রতিবাদে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে না, অন্যদিকে অহিংস অভুত্থানে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ যোগ দেয়। যেসব সংস্কৃতিতে সেই অর্থে গণতন্ত্র নেই- সেখানেও গণ-অভ্যুত্থানের একটা চাপ শাসকদের উপরে থাকে। শাসকগোষ্ঠী চেষ্টা করবে কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণকে শান্ত করতে। কিন্তু জনতার মধ্যে একটা অবিশ্বাস কাজ করে যে সবকিছু শান্ত হবার পর শাসকগোষ্ঠী পুরোনো শোষণব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে পারে। অর্থাৎ জনতার দিক থেকে অবিশ্বাস কাজ করে আর তারা পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের জন্য চাপ দিতে থাকে। অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠী মনে করে তারা যে সুযোগ সুবিধাগুলো জনগণকে ছেড়ে দিচ্ছে তার প্রতিদান তারা জনতার কাছ থেকে পাবে না- অতএব শাসকগোষ্ঠীর দিক থেকে প্রচেষ্টা থাকে যাতে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র না আসে। এই দুমুখো চাপ আর পারস্পরিক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা থেকেই একটা প্রতিষ্ঠান তার রূপ পায়। এই মডেল ব্যবহার করে তাঁরা দেখিয়েছেন গ্রেট ব্রিটেনে কিভাবে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর কেন কিছু দেশ গণতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে বারবার দুলতে থাকে।
এবারের নোবেলও সমালোচনা এবং বিতর্কের বাইরে নয়। অনেক অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীই বেশ কিছু ত্রুটি পেয়েছেন নোবেল প্রাপকদের ব্যবহৃত তথ্যে, তাঁদের মেথডোলজিতে এবং তাঁদের সিদ্ধান্তে। অনেকেই দেখিয়েছেন গণতান্ত্রিকতার সঙ্গে সবসময় সমানতালে অর্থনীতির বিকাশ হয়, তা নয়- যেমন গণতান্ত্রিক ভারত আর স্বৈরতন্ত্রী চীনের উদাহরণ এক্ষেত্রে অনেকেই দেখিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে শুধু অর্থনীতির বিচারে নয়, মানবসূচকের ব্যাপারেও চীন গণতান্ত্রিক ভারতের চেয়ে এগিয়ে- অমর্ত্য সেন এক দশক আগে সেটা দেখিয়েছেন। আর ভুললে চলবে না, উদ্ভাবনশীলতার বিচারেও চীন প্রথম সারিতে। পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট বো রোথস্টেইন ভারত ও চীনের পাশাপাশি উদাহরণ দেখিয়েছেন গণতান্ত্রিক জামাইকা আর স্বৈরতান্ত্রিক সিঙ্গাপুরের মধ্যে তুলনা করে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ভারতের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন এই বিষয়ে ভালো মন্দ দুই দিক পর্যালোচনা করে একটি আর্টিকেল লিখেছেন । অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন নিজে সরাসরি সমালোচনা করেননি, বরং এবারের নোবেলজয়ীদের সম্পর্কে যে সমালোচনাগুলি শোনা গেছে, সেগুলি লিপিবদ্ধ করেছেন।
অরবিন্দ দেখিয়েছেন যে এঁদের মেথডোলজি এবং তথ্যের সম্পূর্ণতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সেই প্রসঙ্গে যাবার আগে কয়েকটি বিষয় বোঝা দরকার। এক্সপেরিমেন্ট দুরকম- র্যান্ডমাইজড আর ন্যাচারাল। একটা নূতন ওষুধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকরী কিনা, আর তামাক সেবন থেকে ক্যান্সার হয় কিনা - দুটো প্রশ্নের উত্তরে কিন্তু দুরকম এক্সপেরিমেন্ট ব্যবহার হয়। একটা ওষুধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় কাজে লাগবে কিনা সেটা পরীক্ষা হয় র্যান্ডমাইজড এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে, যেখানে দুই দল রোগীকে দুরকম ওষুধ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। একদল রোগীকে পরীক্ষীয়মান ওষুধটি দেয়া হয়, অন্যদের প্রচলিত কোনো ওষুধ বা প্লাসিবো (ছদ্ম-ওষুধ) দেয়া হয়। দুই দলের বয়স, শারীরিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, লিঙ্গ-অনুপাত ইত্যাদি একই রকম রাখা হয়। অর্থাৎ এটি একটি সুনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা। এবার ধরুন পরীক্ষা করতে হবে তামাক সেবন থেকে ক্যান্সার হয় কিনা। সেখানে কিন্তু একদলকে তামাক সেবন করালেন আর আরেকদলকে তামাক-বর্জিত রেখে পর্যবেক্ষণ করলেন- এটা সম্ভব নয়। নীতিগতভাবে সম্ভব তো নয়ই, তামাকের প্রভাব পড়তে যত বছর লাগে তত বছর এই লোকগুলোও আপনার স্টাডিতে থাকবে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে অতীতের তথ্য থেকে সমীক্ষা করা হয়- যারা এতদিন তামাক খেয়েছে এবং খায়নি, যাদের ক্যান্সার হয়েছে এবং হয়নি এরকম বিভিন্ন জনসংখ্যা খুঁজে বার করে তাদের অতীতকে সমীক্ষা করা। দুই দলের বয়স, শারীরিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, লিঙ্গ-অনুপাত ইত্যাদি একই রকম হয়তো হবে না, কিন্তু কিছু রাশিবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই সমস্যাগুলোর জন্য অ্যাডজাস্টমেন্ট করা যায়। এই ধরনের ছদ্ম-পরীক্ষাকে বলা হয় “ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্ট”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অভিজিত ব্যানার্জি, এস্থার ডুফলো আর মাইকেল ক্রেমার ২০১৯এ নোবেল পেয়েছেন অর্থনীতিতে র্যান্ডমাইজড এক্সপেরিমেন্টের প্রয়োগ দেখিয়ে, আর ২০২১এ David Card, Joshua Angrist আর Guido Imben নোবেল পেয়েছেন শ্রম অর্থনীতিতে ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্টের প্রয়োগ করে। এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজটাও ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্টই বলা যায়। প্রতিষ্ঠান নিজের ছন্দে গড়ে ওঠে, তাকে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা যায় না, ইতিহাস যা তথ্য দেয় সেটা নিয়েই কাজ করতে হয়।
এই ধরনের কাজে সমস্যা অনেক। ভালো প্রতিষ্ঠান, খারাপ প্রতিষ্ঠান আলাদা করার জন্য কিছু প্রক্সি ভ্যারিয়েবল আপনাকে নিতে হবে - এখানে নেয়া হয়েছে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাতাদের মৃত্যুহারকে। আরো অর্থপূর্ণ ও বেশি সংখ্যক প্রক্সি ভ্যারিয়েবল নেয়ার সুযোগ হয়তো ছিল বলে অনেকে মনে করে, আবার অনেকে এই অভিনব প্রক্সি ভ্যারিয়েবলের প্রশংসাও করেছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কনফাউন্ডিং ভ্যারিয়েবল - অর্থাৎ উপনিবেশগুলির নিজস্ব যে বৈশিষ্ট্যগুলো (সেখানকার অতীত সংস্কৃতি, জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি) এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে - সেগুলোকে কীভাবে ধর্তব্যের মধ্যে আনা হল, সেটা খুব স্পষ্ট নয়।
অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন যে সমালোচনাগুলিকে তালিকাভুক্ত করেছেন তার মধ্যে একটি হল এই ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্টের পদ্ধতি নিয়েই-
“...their strategy of teasing causation out of the natural experiment of colonisation is debatable because it cannot distinguish between the places that colonisers went to and the human capital they brought along with them; the data for their key variable, namely ‘settler mortality,” is flawed and selectively chosen”।
ঔপনিবেশিক বসতকারীদের মৃত্যুহার - এই সূচকটির ব্যবহারযোগ্যতা আর তার তথ্যের নির্ভুলতা- দুটো নিয়েই যে অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছে- সেটাও অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন বলেছেন। তবে নোবেলজয়ীদের গবেষণাটিকে অরবিন্দ ব্যক্তিগত ভাবে প্রশংসা করেছেন তার ব্যাপ্তি, আন্তর্জাতিকতা, আর জটিলতাবর্জিত প্রচেষ্টার জন্য। প্রশংসা করেছেন ইতিহাস এবং মানবোন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য, আর অবশ্যই ইতিহাসকে অর্থনীতির গবেষণা পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসার জন্য।
লেখক পরিচিতি: সুদীপ্ত পাল পেশায় ডাটা সায়েন্টিস্ট, শিক্ষাগতভাবে পরিসংখ্যানবিদ- আইএসআই থেকে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এবং নিয়মিতভাবে আনন্দ বাজার পত্রিকায় ইতিহাস বিষয়ে লেখেন।