অর্থনীতি যত এগোয় ততো লেবার ফোর্সের কৃষিনির্ভরতা কমে। ভারতীয় লেবার ফোর্সে কৃষিনির্ভরতা কমছিল, তারপর হঠাৎ উল্টে গেছে। ২০০৪-০৫ আর্থিক বর্ষে ৫২% লোক কৃষি সংক্রান্ত জীবিকায় ছিল, তারপর ২০০৯-১০এ ৪৯%, ২০১৪-১৫এ ৪৬%,
২০১৮-১৯এ ৪৩%,
২০১৯-২০এ ৪৬%,
২০২০-২১এ ৪৭%,
২০২১-২২এ ৪৬%।
২০১৯এ উল্টোপুরাণ শুরু হয়েছে, যার সঙ্গে কোভিডের কোনো সম্পর্ক নেই, কারণ কোভিড তার পরের বছর শুরু হয়। কোভিডের পর অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। এই উল্টোমুখী ধারার কারণ:
এক, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের অনুপাতে মূল্য সংযোজন (value added to output ratio) ভারতে অন্য যে কোনো শিল্পের চেয়ে বেশি। অন্য শিল্পে কেন কম সেটা প্রশ্নযোগ্য।
দুই, শ্রমক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
তিন, মহিলাদের মধ্যে কৃষিজীবীর অনুপাত চিরকালই পুরুষের চেয়ে বেশি।
চার, মহিলাদের মধ্যে কৃষিজীবীর অনুপাত ২০১৮র পর দ্রুত বেড়েছে। ২০১৮তে যেখানে মহিলাদের ৪৯% কৃষিজীবী ছিল, ২০১৯ থেকে সেটা ধারাবাহিক ভাবে ৫৫%এর উপর।
মোটকথা ২০১৯ থেকে ভারতের নূতন লেবার সাপ্লাইয়ের সিংহভাগই কৃষিজীবী মহিলা। নূতন লেবার যোগ হচ্ছে, কিন্তু কৃষি সেক্টরে। এর দুটো কারণ সম্ভব , এক, ২০১৭র পর থেকে ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং আউটপুটে স্থবিরতা দেখা দেয়- জিএসটি ও অন্যান্য কারণে। দ্বিতীয়তঃ, ২০১৯এ পিএম কিসান যোজনা চালু হওয়া এর একটা কারণ হতে পারে। তবে এই যোজনা শুধু সেই চাষীদের জন্য যাদের নিজস্ব জমি আছে, তবে পাঁচ একরের কম। অন্যদিকে এই নূতন মহিলা লেবার সাপ্লাইয়ের সিংহভাগই জমির মালকিন নন। অতএব তারা পিএম কিসান যোজনা থেকে পরোক্ষ বেনিফিট পেয়ে থাকতে পারেন- এই সম্ভাবনা আছে।
লক্ষণীয় হল, সাধারণভাবে মহিলাদের মধ্যে বেতনভুকের সংখ্যা ২৬% থেকে কমে ২১% এ নেমেছে ২০১৮ থেকে ২০২১এর মধ্যে, আর "সেল্ফ এমপ্লয়েড" মহিলার সংখ্যা বেড়েছে - ৫০% থেকে ৬০% হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো আনুপাতিক পরিবর্তন হয়নি। "সেল্ফ এমপ্লয়েড মহিলা" শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু এদের ৫৩% হল "unpaid helper", মাত্র ১% হল "এম্প্লয়ার"! অন্যদিকে, পুরুষ সেল্ফ এমপ্লয়েডদের মাত্র ১৮% হল unpaid helper। যারা পেইড তাদেরও আয় পুরুষের তিন-চতুর্থাংশ মাত্র। অর্থাৎ লেবার ফোর্সে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে কিন্তু শস্তার শ্রম হিসেবে।
শ্রমক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়া ভালো লক্ষণ, কিন্তু এই বাড়তি মহিলা শ্রমের সিংহভাগই কৃষিতে যাচ্ছে, শস্তার শ্রম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে- এগুলো সুবিধার লক্ষণ নয়। কৃষিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অটোমেশন বাড়ার কথা- সেটা হচ্ছে না। ভারতীয় অর্থনীতির চলমান স্থবিরতার একটা বড় কারণ এই কৃষিনির্ভরতা।
তথ্যসূত্র:
- বার্ষিক PLFS সমীক্ষার রিপোর্ট
- Decoding women’s labour force participation in 2021-22: What the Periodic Labour Force Survey shows- Dhruvika Dhamija, Akshi Chawla (Asoka University)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।