আমার এক দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধু আকাশ থেকে পড়েছিল আমি দুপুরে নন-ভেজ খেয়ে বিকেলে মন্দির গেছি শুনে। যদিও আমি নাস্তিক হয়ে কেন মন্দিরে গেছিলাম সেটা নিয়ে তার তেমন বিস্ময় ছিল না। এই গল্পে যাবার আগে কিছু রাজনীতির কথা হোক।
২০১৮তে বিজেপি থেকে কংগ্রেসের হাতে তিনটি রাজ্য এসেছিল - ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান। প্রথম দুটো পনেরো বছর পর। ঐতিহাসিক জয়। কিন্তু ছয়মাস পরে দেখা গেল এই তিনটি রাজ্যে কংগ্রেস লোকসভায় মোট তিনটি আসন পেয়েছে! উড়িষ্যায় একই দিনে নির্বাচনে লোকসভা আর বিধানসভার ফলে বিশাল ফারাক। কারণ হিসেবে সবাই একবাক্যে বলে লোকসভা আর বিধানসভায় ইস্যু আলাদা থাকে। কিন্তু এই একবাক্যের উত্তর যথেষ্ট নয়। এই পার্থক্যের কারণ সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে কংগ্রেসের গ্ৰাউন্ড স্তরের কর্মীরা।
প্রশ্ন জাগে - হিমাচল আর কর্ণাটক এই দুটি রাজ্য সম্প্রতি বিজেপি থেকে কংগ্রেসের হাতে গেল। এই ট্রেন্ড কি অক্ষুণ্ণ থাকবে, নাকি আগের বারের পুনরাবৃত্তি হবে? ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থানে কংগ্রেসের লোকসভা বিপর্যয়ের কারণ বলা হয় তিনটি- ঐ রাজ্যগুলোয় অনেকেই কেন্দ্রে মোদি রাজ্যে অন্য কাউকে দেখতে চাইছিল, উজ্জ্বলা প্রকল্প, আর অবশ্যই পুলোয়ামার বেধড়ক আবেগ।
আরেকটা কারণ আমার মনে হয়, কংগ্রেস ঐ ছয়মাসে উগ্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করেনি। কংগ্রেসের নিজের মুখ্যমন্ত্রীরাই যেখানে হিন্দুত্বের বাহক! কমলনাথের নাম ১৯৮৪র দাঙ্গায় যুক্ত ছিল, গেহলোট সরকার তো মনে করে বিয়ের উদ্দেশ্যই পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়া আর পিতৃপুরুষের উদ্ধার করা- আর এটা কোনো আর্বিড প্রেস কনফারেন্স নয়, লিখিত বক্তব্য আদালতের উদ্দেশ্যে। মধ্যপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী তো পা বাড়িয়েই ছিলেন বিজেপিতে যোগ দেয়ার জন্য।
কর্ণাটকের সদ্যোনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দরামাইয়া অবশ্য হিন্দুত্বের বাহক নন। রাজনৈতিক মহলে তিনি নাস্তিক হিসেবে পরিচিত। তবে তিনি নিজেকে নাস্তিক বলেন না, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে পরিচয় দেন। এটাও বিশাল ব্যাপার কর্ণাটকের রাজনীতির প্রেক্ষিতে, কারণ বিজেপি নেতারা তো বটেই কংগ্রেস ও জেডিএসের (যার পুরো নাম জনতা দল সেক্যুলার!) নেতারাও জ্যোতিষীদের কাছে ছোটে এখানে। বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে সমঝোতায় এলেন জ্যোতিষীর পরামর্শে, তাঁর কুণ্ডলীতে আপাতত রাজযোগ নেই বলে! বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী য়েদুরাপ্পা তিন রাত্রি নগ্ন হয়ে মেঝেতে শুয়েছিলেন জ্যোতিষীর পরামর্শে - কালো জাদুর প্রভাব কাটাতে। ব্যাপারটা ভেবেই কেমন বমি বমি পাচ্ছিল!
সেই বিচারে সিদ্দরামাইয়া অনেকটাই ব্যতিক্রম, তবে হিন্দুত্বের প্রেসার তাঁর উপরে সবসময় থাকে।
এবার ঐ মজার গল্পটায় ফেরা যাক। সতেরো বছর ধরে ব্যাঙালোরবাসী আমি। বছর পনেরো আগে, আমার দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধু আকাশ থেকে পড়েছিল আমি দুপুরে নন-ভেজ খেয়ে বিকেলে মন্দির গেছি শুনে। বাঙালিদের তো নন-ভেজের সাথে ভেজ ঠেকালে ভেজটা এঁটো হয়ে যায়। সাউথে ব্যাপারটা এক কাঠি উপরে। নন-ভেজ খেলে সারাদিনের মতো শরীর এঁটো হয়ে যায়। সিদ্দরামাইয়ার উপর একাধিক বার অভিযোগ এসেছে নন-ভেজ খেয়ে মন্দিরে যাবার। এবারের নির্বাচনে দেখলাম সিদ্দরামাইয়াও বিজেপি নেতাদের উপর একই অভিযোগ তুলেছেন।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরি। কর্ণাটকে কংগ্রেস যে পাঁচটি অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলো পূরণ করতে চলেছে। সঙ্গে আরেকটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের ইশতাহারে। পিএফআই ও বজরঙ্গ দলকে নিষিদ্ধ করার। সেটা কবে হবে? কংগ্রেস কথা রাখবে তো?
কংগ্রেস সরকার এরই মধ্যে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে গেরুয়া পোশাক না পরার এবং মরাল পোলিসিং বন্ধ করার, যেটা প্রশংসনীয়।
চিকমাগালুর আর কুর্গের মতো হিন্দুত্ববাদী জেলায় কংগ্রেস একশো শতাংশ আসন পেয়েছে, আর ধারবাড় আর উত্তর কানাড়ার মতো হিন্দুত্ববাদী জেলায় তারা লীডে আছে। সফ্ট হিন্দুত্ব দিয়ে আর চলবে না, উগ্র হিন্দুত্বকে উৎখাত করার দায়িত্বও ভোটাররা কংগ্রেসকে দিয়েছে- সেটা কংগ্রেসকে মাথায় রাখতে হবে, আর তার জন্য সক্রিয়তা ও সৎসাহসও দেখাতে হবে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।