কর্ণাটকে বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে ট্রাইবালরা। পনেরোটা এসটি আসনের চোদ্দটা কংগ্রেস জিতেছে, একটা জেডিএস। বিজেপি শূন্য। কিন্তু বিজেপির সামাজিক ন্যায় নীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ট্রাইবালরা পেয়েছিল, তাদের জন্য সংরক্ষণ ৩% থেকে ৭% করা হয়েছিল। এরকম উল্টো ফল কেন হল?
একটা উত্তর হতে পারে, কোটাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় শহরাঞ্চলের ট্রাইবরা। অন্যদিকে ট্রাইবাল আসনগুলোর সবই গ্ৰামাঞ্চলে। তাদের কাছে কংগ্রেসের পাঁচটি গ্যারান্টি বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়ে থাকতে পারে।
কংগ্রেসের পাঁচটি গ্যারান্টি কী কী ছিল? গৃহলক্ষ্মী, গৃহজ্যোতি, অন্নভাগ্য, সখী, যুবনিধি। দরিদ্র, মহিলা এবং বেকার যুবক যুবতীদের জন্য আর্থিক অনুদান বা খাদ্যের প্রতিশ্রুতি। পঞ্জাব, হিমাচল ও কর্ণাটকের পর এটা জোর দিয়ে বলা যায়, ভোটাররা অনুদানের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু মানুষ তো আর এমনি এমনি অনুদান চায় না। বেকারত্ব বাড়লে, নিয়মিত আয়ের আশ্বাস না থাকলে অনুদানের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
সরকারি চাকরি যেহেতু সংখ্যায় কম আর তফসিলি কোটা যেহেতু মধ্যবিত্তদের মধ্যে সীমিত, ট্রাইবালরা বিজেপির কোটার রাজনীতিতে ভরসা করতে পারেনি। কিন্তু সংরক্ষণ শুধু চাকরির জন্য নয়, উচ্চশিক্ষার জন্যও। যে কোনো কারণেই হোক, ট্রাইবালরা উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণের বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি।
নিম্নবিত্তরা অনুদানের সপক্ষে ভোট দিয়েছে কিন্তু মধ্যবিত্তরা দেয়নি। সেটা শহরাঞ্চলের ভোটে কিছুটা চোখে পড়ছে। ব্যাঙালোর শহরে এবার উল্টো ফল হয়েছে। গতবার ব্যাঙালোরে কংগ্রেস এগিয়ে ছিল, বাদবাকি রাজ্যে বিজেপি। এবার ঠিক উল্টোটা। অন্য তিনটি বড় শহর- হুব্বলি, ম্যাঙালোর আর মাইসোরের মধ্যে একমাত্র মাইসোরে কংগ্রেস এগিয়ে। অর্থাৎ মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিজেপির গ্ৰহণযোগ্যতা কিছুটা বেশি ছিল।
কংগ্রেসের অনুদানের আশ্বাসগুলোর মধ্যে প্রয়োগের দিক থেকে সবচেয়ে কঠিন হবে যুবনিধি। বেকারদের জন্য আর্থিক অনুদান। স্নাতক বেকারদের জন্য ৩০০০ প্রতি মাসে, আর ডিপ্লোমাদের জন্য ১৫০০, সর্বোচ্চ দুবছর অবধি। প্রশ্ন হল বেকারের কীভাবে সংজ্ঞা ঠিক করা হবে। ধরুন কেউ পারিবারিক ব্যবসা সামলাচ্ছে কিন্তু payrollএ নেই, সে কি বেকার বলে ধরা হবে? কেউ অসংগঠিত সেক্টরে ফ্রিলান্সিঙ (যেমন টিউশন বা প্লাম্বারের কাজ) করলে সে কি বেকার হবে? সংগঠিত সেক্টরের ফ্রিলান্সিঙের তথ্য অবশ্য সুইগি, জোমাটো এদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে।
কর্ণাটকে যে কোনো পেশায় মাসে তিন হাজারের থেকে অনেক বেশি আয় হয়, অতএব কেউ ভাতার জন্য অহেতুক বেকার হয়ে বসে থাকবে না, তবে প্রচুর ফ্রড এক্ষেত্রে হতে পারে। বরং শর্তহীন অনুদান যেমন গৃহলক্ষ্মী, গৃহজ্যোতি, অন্নভাগ্য এগুলোর ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম। শেষেরটাতে অবশ্য বিপিএল সংক্রান্ত ফ্রড আর মিসম্যানেজমেন্ট হতে পারে যেটা এদেশে নূতন নয়।
তবে এটার ভালো দিক হল, সরকারের উপর জীবিকা তৈরির এবং বেকারত্বের ব্যাপারে নির্ভুল ডাটা সংগ্রহ করার একটা চাপ সবসময় থাকবে। কর্ণাটকের অনেক আগে থেকে রাজস্থান আর হিমাচলে এই বেকার ভাতা আছে, সেখান থেকে কর্ণাটক সরকার আইডিয়া নিতে পারে। দুটি রাজ্যেই, বিশেষ করে রাজস্থানে বেকারত্বের হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি দেখায়। সেটা আশ্চর্যের নয়, কারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকারত্বের হার হল কতজন নিজেকে employable হিসেবে চিহ্নিত করছে আর তার মধ্যে কতজন নিজেকে বেকার হিসেবে চিহ্নিত করছে। বেকারত্বের জন্য ভাতা না থাকলে অনেক বেকারই নিজেকে employable এবং বেকার হিসেবে চিহ্নিত করবে না এবং বেকারত্বের ব্যাপারে তথ্য জোগাবে না।
গড় আয়ের বিচারে কর্ণাটক দিল্লি, হরিয়ানা আর তেলঙ্গানার পরেই (খুব ছোট রাজ্যগুলো বাদ দিলে)। টেক ইন্ডাস্ট্রির দ্রুত বৃদ্ধি এবং চড়া বাড়িভাড়ার ফলে ব্যাঙালোর শহরের অর্থনীতি ভালো অবস্থায়ই ছিল, কিন্তু গ্ৰামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে ততোটা ভালো কথা বলা যায় না। সেটা ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।