মদ বিষয়ে আমার প্রথম আগ্রহের জন্ম সেই ছেলেবেলায়। খাজুরে পাকা ছিলাম না, ছিলাম কৌতুহলী... সেখান থেকেই এই আগ্রহের জন্ম!
ছোট বেলাটা আমার কাটছে ফরিদপুরে। সেখানে অনেক খেজুর গাছ। সিজনে গাছ কাটা হয়, গাছি এসে কত কিছু করে... আমরা তার ছেনি ধারানো দেখি... বালির কিচ কিচ ঘষা শব্দ শুনে ছোটবেলার গা শিরশির করে!
খেজুরের রস এক রহস্যময় পানীয়!
আমার প্রথম মুড চেঞ্জিং সাবসটেন্স!
আগরাতের আধো তন্দ্রায় প্রথম প্রহরের রস এক অপার্থিব মিষ্টতায় ঘুম পাড়ায়ে দিত... সকালের রসের সঙ্গে যুক্ত হত নানা প্রকার মুড়ি ও হি হি হি করা শীতের শিহরণ... ! বিকালের ঝরা হয়ে যেত তাড়ি... ওসবে আমাদের আগ্রহ নাই..
যাই হোক, একবার আরব্যরজনী পড়ে জানলাম সিন্দবাদ সফরে দেখতে পেল এক দ্বীপের লোকেরা লাউয়ের ভিতরটা পচাইয়া মদ বানাইয়া খায়। তখন আমার ভিতর এক আইডিয়া খেলে গেলঃ যে, আচ্ছা, খেজুর রস পচাইলে কী মদ হৈবেনা?
একটা শিশি যোগাড় করলাম টম সয়্যারের মত অনেক কৌশল কৈরা।
তাতে বিকালের ঘোলা রস ভরে ছিপি লাগাইলাম।
বাসার পাশে শুকনা খালে লুকাইয়া রাখলাম সেই শিশি। প্রতিদিন কয়েকবার করে দেখে আসি।
কয়েকদিন পর মনস্থির করতে পারছিলাম না আর কয়দিন রাখবো?
যতই দিন যাচ্ছিল... ততই ঘোলা বর্ণ ধারন করছিল... একদিন আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না... দেখা যাক... বলে আমার জীবনের প্রথম পচানি সৃষ্টি হল! বিশ্রী দুর্গন্ধকে জয় করতে পারলাম না... মাঠে ফেলা গেল সেই চেষ্টা...
আমার শৈশবে মদের তেমন কোনো প্রত্যক্ষ সংযোগ নাই। তবে একটা মর্মান্তিক গল্প মনে পড়ে গেল। প্রাইমারি স্কুলের মাঠের পাশে ছিল খেজুর গাছের বনানী। বিকালে আমরা মাঠে খেলছিলাম... হঠাৎ এক শোরগোলে অনেক মানুষকে সেখানে দৌড়াইতে দেখলাম.... বিপুল উত্তেজনা...টানটান গতি... দেখা গেল সবার চেনা এক ঘোড়ার গাড়িচালক সেখানে মরে পড়ে আছে...ঐ খেজুর বীথির মধ্যে... ঘোড়া দৌড়াচ্ছিল... আর সে ছিল মাতাল... কোন কারণে ঘোড়া ক্ষেপে গিয়ে ঐ খেজুর বনে দৌড়াতে গিয়ে তালবিদিক হয়ে গেছিল... আর তাতেই...। তখন সবাই মদ পানকে যাচ্ছেতাই বলছিল! তবে এতে আমার কৌতূহল খানিকটা বেড়ে গেছিলই মনে হয়।
হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার শেষ দিন শিকদার ওদের মেসে গেলে একচুমুক ‘মৃত সঞ্জীবনী সুরা’ খাওয়ালো। কি ব্যাপার? এইটা নাকি একপ্রকার মদ... বিশেষ দিনে খেতে হয়...। জঘন্য লাগল আমার কাছে... এইটা কোন উদযাপন হৈল? তারচে জ্যোসনা রাতে গ্রামের দিকে হাঁটতে থাকা অনেক মজার...
আমার জীবনে সত্যিকারের মদ প্রথম খাই ‘শ্যালে’ নামক এক বারে। সেই পানশালার চেহারাটা আমার ভিতর বিশিষ্ট একটা ছাপ রেখে গেছে। এখনকার গ্রিন রোড-পান্থপথ ইন্টারসেকসনের কাছে ছিল শ্যালে, রাস্তা পিচ ফেলতে ফেলতে উঁচা হয়া গেছে... শ্যালের মেঝে নিচু... ঢুকতে গেলে মনে হয় আণ্ডারগ্রাউণ্ডে ঢুকতেছি। ঢুকতেই বিশাল এক এক্যুরিয়াম... সেখানে লালনীল মাছ... আর দেয়ালে মোগল যুগের সুন্দরীদের বাধানো পিক। ভিতরে গিয়া ২পেগ খাইলে বেশ একটা শাহি ভাব তৈরি হয়। যা বাঙালীর মদ্যপানের প্রধান আকর্ষণ বলে সেদিনই আমি আবিষ্কার করি!
দুই
ঢাকায় তরুণ কবি জীবনে আমাদের পছন্দ ছিল শুষ্কমঞ্জরী আর সেখান থেকে আমরা ঢুকে পড়ি ড্রাগজে। তাই পুরা আশি দশক থেকে শুন্য দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমার মদযাপন মূলতঃ সামাজিক। কবিদের সঙ্গে কম দামি ধাঙর পল্লীর নিশাদল মেশানে চোলাই বা তারকা হোটেলে অফিস-পার্টি পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। তবে যাই করতাম দিন শেষে ফিরে যেতে হত ধুম্রধামে! আমাদের নীলক্ষেত বস্তির ডেরায়...।
হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরির সঙ্গেই ছিল বিরাট ধাঙর পল্লি। বিরাট চোলাই বার! ঘরে ঘরে...! কয়েক ঘরে রুদ্র-কে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতোঃ ‘আহেন বাবু... এখানে রুদ্র কবি আহে...’ এই ভাবে। ঢাকার প্রায় সবাই সেখানে যেতেন। টিপু সুলতান রোডের দেশি মদের দোকান ও মশহুর। দিনের বেলায় অনেক মাতালকে ফুটপাতে ঘুমাতে দেখছি।
ছাত্র জীবন। ১৯৮৫। ৩১ তারিখ, ডিসেম্বর। খৃষ্টিয় বছর শেষের উন্মাদনা তখনো প্রবল হয় নাই। কেউ কেউ করতো! কফিল ও অন্য বন্ধুদের টানে সারাদিন কাটালাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে... কবিতা পড়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর ফিরলাম ঢাকা... আজিমপুরে আড্ডা দিতে দিতে তরুণ কবি নিয়া আসলো সুরা... ৯টার দিকে হঠাৎ আমার মনে ময়মনসিংহ ক্যাম্পাসে ফেরার প্রবল ইচ্ছা হল। কবিকে বললাম, পারবেন কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাইয়া দিতে। ও তখন ওর সাইকেলটার দিকে তাকাল। সূরার বাকিটা সহ বোতল বগলদাবা করে বললঃ চলেন তো দেখি!
তখন ঢাকার রাস্তা অনেক সরু সরু... তবে খালি খালি... ইচ্ছা করলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়...। একটু পর পর গলা ভেজায় আর সাইকেলে দম দেয়... সেই সুরায় হোক, আমার ইচ্ছায় হোক আমরা ট্রেন ডিপার্চারের সময়ই স্টেশনে পৌঁছলাম। সাইকেলের রডে বসে। দৌড়াইয়া বাহাদুরাবাদ মেল ধরলাম, রাত এগারটায়! টিটি কন্টাক্টে (ঐ রাতে টিটি আর আসে নাই) ১ম শ্রেনীতে শুয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ পৌঁছলাম। মরাখোলার পাশ দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ধার দিয়ে রিকশায় হলে পৌঁছলাম। নাইটগার্ড বলল সারা বিকাল ছোট ভাই বসে ছিল আমার আশায়... কি যেন জরুরি খবর ছিল। কাল সকালেই যেন বাড়ি যাই।
পরদিন ঘুম ভাঙল ভোরেই। ক্যান্টিনে নাস্তা করতে গেলাম, ওখানেও ম্যানেজার একই কথা বলল। বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। তখন নদীর উপর ব্রীজ হয় নাই... নৌকায় পার হয়ে শম্ভুগঞ্জ থেকে বাসে চড়তে হয়। কিশোরগঞ্জ পৌঁছে দেখি বাসার সামনে বাশের টুকরা টাকরা পরে আছে। আমি তখন সব বুঝে যাই। গেট দিয়া ঢুইকা দেখি মা শাদা কাপড় পরে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।
আব্বা আর নাই। আমি গতকাল লাপাত্তা ছিলাম বলে আমাকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই। তার সঙ্গে দেখা হল না... বাঁশের টুকরাগুলির সঙ্গে দেখা হল।
তিন
মদ খাইতো মুস্তফা [আনোয়ার] ভাই। অবশ্য ষাটের কবিদের অনেকেই খাইতো... তবে তার পানের একটা আদর্শ ছিল...। খুব গোছানো ছিলেন উনি। সেই যুগেই মদের পারমিট ছিল ওনার। যদিও এখনও ঢাকা শহরে মুসলমানদের লিগ্যালি মদ খাইতে পারমিট লাগে। স্বাস্থ্যগত কারণে এখন মাসে ৭ ইউনিট অনুমোদিত। কেনার সময় ডিলার সই-সিল দেয়।
মুস্তফা ভাই শুরু করতেন সাকুরা থেকে (তখনকার কোয়ালিটি বার, শেরাটন হোটেল সমীপে)... আর শেষ হত টিপু সুলতান রোড বা শাখারি পট্টিতে। কোনও কোনও রাতে পুলিশ সযতনে বাসায় পৌঁছাইয়া দিয়া যায়... উনি তো আবার বিশিষ্ট কবি, রেডিওর ডাইরেক্টর... দেখতে আইনস্টাইন...। একসময় তার টেবিলের উপর ফাইলের স্তূপ দেখে বুঝা যেত কয়দিনের জার্নি চলছে...। তার পিয়ন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলত, স্যার আছে... এইতো... আসবে...। কিন্তু সারাদিনও তাকে পাওয়া যাবে না। মুস্তফা ঘরে নাই...
বাউ ক্যাম্পাসে আমরা খেতাম নেপালি গার্ডদের বানানো চোলাই। বা শহর থেকে আনা সিলগালা বাংলা। ৪০ টাকা এক পাইট। কখনো বাগানে... নদীর পাড়ে কোন দোতরা বাজানো ঠেকে। ইউনি বাসের কন্ডাক্টর খোকা ছিল আমাদের একনিষ্ট! পিকনিকে জেরিক্যান ভর্তি ৫ গ্যালনের ভার ওর উপরই থাকতো! তবে অন্ধকার বা আড়াল ছিল সেই সব পানের জন্য অপরিহার্য শর্ত! তবে আমার ১৩৫নং রুমটা এই হিসাবে কিছুটা ঘরোয়া ছিল। সবাই আসতো। পানাহার হত। মুক্তা, মুরাদ, আতিক – এই ত্রিভুজ আমার সেই দিনগুলিতে সব রকমের ঘুড্ডি ওড়ানোর সাহচর্য দিত।
২০০৮ এর দিকে আমি আবার বারে যেতে থাকি। সাধারনত কবিদের এড়িয়ে চলি... এদের সঙ্গ কিছুক্ষণের মধ্যেই একঘেয়ে বা মারমুখি হয়ে যায়...। তারচে ভাল তরুণ ফটোগ্রাফার, চিত্রশিল্পী, এপার্টমেন্ট দালাল, ২নম্বর এন্টিক সপের মালিক... কোয়ান্টি করে কেরুর ৭৫০মিলি ভদকা নিয়ে ঠাণ্ডা পানি, বরফ আর লেবু চিপে গ্লাশের মুখে একটু লবনের ছিটা দিয়ে ‘উল্লাস’ ধ্বনিতে প্রথম পেগের উৎসব মুখরতা মন্দ লাগতো না। ধানমণ্ডির এক রাজ্যহারা যুবরাজ (কোনদিন রাজত্ব পাবে না জানে!) বাবু ভাই অনেক সময়ই থাকত... বারে বসলে আর উঠতে চাইতো না... আর তার বান্ধবও অসংখ্য... লেজে লেজে জোড়া দিয়ে বহুদূর ব্যাপি বন্ধুত্বের একটা জটাজাল তৈরি হয়ে যেত কোন কোন দিন... কে যে কাকে খাওয়াচ্ছে বোঝার আগেই আরো দুপেগ হয়তো হাজির... শেষ মেষ অবশ্য লাভ হত ওয়েটারদের... দেদার বখসিস বিলানো হতো।
শাহবাগের কমদামি বারটা বৃহস্পতিবার গমগম করতো...। তবুও মুস্তফা ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন লাস্টম্যান হয়েছি আমি...। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলে হঠাৎ একসময় দেখা যেত কোথাও কেউ নাই... কিছু নড়ছে না... শুধু ফ্যানের বাতাস টেবিলে পড়ে থাকা খালি গ্লাশের মুখে বারি খেয়ে একটা শি শি শব্দ তৈরি করছে...। মুস্তফা সেই দিকে চেয়ে থাকে... মাথা নুয়ে আছে বাঁকা হয়ে আর কোনাচে দৃষ্টিতে আমি তার পিছনের বাকি সব খালি টেবিল পর্যবেক্ষণ করি বিনা বাক্যে...
মদ খেয়ে দুচার বার আহত হয় নাই এমন মানুষ কম। আমি এ থেকে প্রায় মুক্ত ছিলাম। তবে সমূহ সম্ভাবনা ছিল ফটোগ্রাফারের বাইকে রাতে বাসায় ফেরার পথে কিছু ঘটতে পারতো... তা হয় নাই।
যা হয়েছে বাসায়। বা কোন ঘরে।
একবার ধানমন্ডি ১১/এ র বাসায় বেশ রাতে কান্ডটা ঘটে... শরীরের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে টি টেবিলের কাঁচের টপে হাতটা দিয়ে ভর নিতে যাই। কিন্তু কাঁচ যে আমার ভর নিতে পারবে না, এইটা ভুলে যাই। ফলে প্রথমে উপরের 8mm মোটা কাচটা ভেঙ্গে পরে নিচের পেপার রাখার 6mm কাচটাও ভাঙ্গি। উঠে ঠিকঠাক হতে গিয়া আমি যে সত্যি সত্যি নিজেকে সামলাতে পারি... এসব নিয়া যখন ভাবতেছি, দেখি বা হাতের বুড়া আঙ্গুলের প্যাডে বেশ রক্তারক্তি ব্যাপার।
রাত একটার দিকে বাংলাদেশ মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে গেলাম। ছোট ভাই সহ। ওরা গম্ভীর ও বিরক্ত। আর ওদের গম্ভীর ভাব দেখে আমার খুব হাসি পেল। তরুণ ডাক্তারের সাথে দ্রুতই বন্ধুত্ব হয়ে গেলে সবাই দেখল ডাক্তার আমাকে দিব্যি এনেসথেশিয়া ছাড়াই ঘজঘজ করে সেলাই দিতে শুরু করেছে। আমি বললাম, ডাক্তার দেখেন, এইটা কী আপনার জীবনের সেরা ঘটনা না যে একজন কবিকে ড্রাংক করে আপনি সেলাই করলেন... হা হা হা। তরুণও তার গল্পগাছা দিয়ে আমাকে প্রায় আধাঘন্টা ভুলাইয়া রাখলো। কথা দিলাম আবার আসবো! হি হি হি। বৌ মহা বিরক্ত হয়ে বলল... এই ছেলেটারও তুমি মাথা খাইতে চাও?
ড্রাগের জীবন আর মদ্যপানের জীবন একেবারেই আলাদা! মদ্যপানের একটা সামাজিক লেনদেন আছে। তবে ঢাকা আর দেশের বাদবাকি শহরগুলির মধ্যে এক বিরাট ড্রিংকিং-ডিভাইড শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় থেকে ভাবাই যায় না বাইরের বিভাগীয় শহরগুলির (চট্টগ্রাম স্পেশাল) কী নিদারুণ অবস্থা... জেলা বা উপজেলা তো আবছা... ধনী বা গোছানো কর্পোরেট তরুনদের কথা আলাদা... কিন্তু বাকি মদ্যবিত্তদের কত যে নিপিড়নের আর না পাওয়ার ভিতর দিয়ে যে দিন যাপন করতে হয়! তবে কয়েকটা হটস্পট আছে... একটু যোগাযোগ করলে কেরুর একনম্বর বাংলা মদ পাওয়া যেতে পারে... যা এক কথায় অপূর্ব! আমি যে কয়টার কথা জানি: প্রথমেই স্বয়ং দর্শনা (যেখানে কেরুর ফ্যাক্টরি), কুষ্টিয়া, পার্বতীপুর...বগুড়া/ময়মনসিংহ/টাঙ্গাইল। তবে এই জিনিসটাই বহুহাত ঘুরে প্রান্তিক জনপদে গিয়ে কি হয়, তার একটা নমুনা পাইছিলাম কফিল এর সঙ্গে গিয়ে... কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সদর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরে এক নির্জন গ্রামে বসে পান করতে গিয়ে! কই মিল গেটের মিষ্টি গন্ধযুক্ত দেশি সখি... আর কই পলিথিনে আনা কলের পানির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা হোমিওপ্যাথি গন্ধ। চেনা লোকের কাছ থেকে আনা বলে এতে সে ঘুমের ঔষধ মেশায় নাই। কিন্তু কোনই মেরিট নাই।
এসব ক্ষেত্রে কমদামি চোলাই ভরসা! কিন্তু তা অতিঝুকি! দলে দলে মারা যাবার সম্ভাবনা সামনে রেখে টানতে হয়। যেন ঝড়ের রাতে কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে ঢাকা আসবেন বলে সন্ধ্যায় সাধারণ লঞ্চে উঠছেন! যে কোন সময় একটা রোলিং হলেই কাম হারছে!
সুমেরুকে নিয়া একবার গেছিলাম পুরানো ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী সঙ্গমে! মরা স্রোতের ফেলে যাওয়া কোমর পানি... কচুরি ঠেলে ঠেলে আগাতে হয়...। মানুষ আর এরকম বিশাল নদীর মৃতদেহ পছন্দ করে না বলে আমাদের মন খারাপ হল। চাষবাস দিয়ে ভরে ফেলেছে... আমরা সেই চরের মাটিতে নামলাম। তারার আলোতে চষা ক্ষেত মনে হল নদীর ঢেউ... আশেপাশেই লাঙলবন্দ... এখানেই পৌরানিক পরশুরামের খেলা হয়েছিল...
এমন সময় দেখা গেল আমাদের স্টক শেষ!
সঙ্গে আরো কিছু পানীয় থাকলে, মনে হল, আমরাও একটা পৌরানিক লাঙল খুইজা পাইতাম...
সেই হাহাকার আজো মনে আসে... যখনই শেষ পেগ ঘনায় আসে! লাঙলটা কবে পাইবো?