
আহিরীটোলার চৌমাথা, জোঁড়াসাকোর গলি, সোনাগাছির চত্বর, গ্রে স্ট্রীট আর সেন্ট্রাল এভিন্যু মোড়ের আকাশে একটি করে তারা দেখা যাচ্ছে। তিমির বাড়লে, বাড়ছে তারার সংখ্যাও। এদের নাম ব্রাউহ্যাম, সেলফ ড্রিভেন বডি, ফিটন...
বাঙালি চলেছে বাগানে। রিলকের ভাষায় মাধ্বী মহোৎসবে! দূরন্ত তাদের সাজ। কফ ও কলারওয়ালা কামিজ। রূপোর বকলস আঁটা শাইনিং লেদারে যেন মুখ দেখা যায়। রেস্ত যাদের কম, তাদের পায়ে ইন্ডিয়া রাবার ও চায়না কোট। এলবার্ট ফ্যাশানের বাঁকা টেরি তে কাটা সিঁথি। উত্তুরে হাওয়া যদি দেয় তবে ক্রেপ বা এন্ডির চাদরও।সদ্য পাশ হওয়া আইনের চুলোর দোরে আগুন। মদের দোকানের সদর দরজা সন্ধ্যের পর বন্ধ, তো হয়েছেটা কী? সেই দুঃখে বঙ্গপুঙ্গবেরা কি খালি হাতে ফিরবেন নিজ গৃহে? নিজ শয্যায়? নিজ স্ত্রী সান্নিধ্যে? এমন অলুক্ষুণে কাজ হয় নাকি বাপু! না, খদ্দেররা খালি হাতে ফিরছেন না। পাঠক এ সেই সুসময়, যার বর্ণনায়, টেকচাঁদ ঠাকুর জানিয়েছিলেন, ‘কলিকাতার যেখানে যাওয়া যায়, সেইখানেই মদ খাওয়ার ঘটা। কি দুঃখী, কি বড় মানুষ, কি যুবা, কি বৃদ্ধ সকলেই মদ পাইলে অন্ন ত্যাগ করে’।
জোড়াসাঁকোর ঠেকের দরজা খোলা অনেক রাত পর্যন্ত। মেছোবাজারেরও। সর্বত্র ফরফর করে ফুটছে ইংরেজি মিশেল বাংলার খই। ফুটছে রাতচরা হুল্লোড়, বটকেরা। শৌখিন কুঠিওয়ালা সাহেবরা একটু জলযোগ সেরে বসেছেন এস্রাজটি নিয়ে। রেস্তহীন গুলিখোর গেঁজেরল মাতালরা আর করে কী। লাঠি হাতে তাদের অনেকেই কানা সেজে ঘুরছে মৌতাতের সম্বলটুকু খুঁজতে। ‘অন্ধকে কিছু দান করো গো বাপ’ – তাদের সেই করূণ কন্ঠস্বর ছাপিয়ে যাচ্ছে রাস্তার দুপাশের বাড়ীর কিছু খেমটার তালিমের আওয়াজে। তা তা ধিন তা। শনিবার মহারাত এগোচ্ছে রবিবার ভোরের দিকে। সুতানুটির পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসে মিলে মিশে গিয়েছে কোহল, বেলি আর আতরের গন্ধ।
এরাই তো আজকের ‘আফাঁ তেরিবল’ বোতল-বাঙালির প্রাতঃস্মরণীয় পূর্বপুরুষ। এরাই তো সেই, যারা সুতানুটি গোবিন্দপুর, কলকাতার ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর। হীরাকাটা লেন থেকে শাখারিটোলা লেন পর্যন্ত যাদের ফুটপাথ বদলের সাক্ষী থেকেছে কত না গভীর চাঁদ। যাঁদের রেস্ত জমজমাট তাদের ডিকাউন্টারে ব্র্যান্ডিটুকু অক্ষয় থেকেছে আমৃত্যু। সে যুগেই এরা ‘টেবিল খান কমোডে হাগেন এবং কাগজে পোঁদ মোছেন!
কুঠি ও কলেজ। আজকের ভাষায় যাকে বলে ‘লিথাল কম্বো’! অষ্টাদশ শতকের গোড়া থেকেই এই যু্গলবন্দীর সঙ্গে যত আশনাই বাড়ল বাঙ্গালির, ততই যেন ফাটতে লাগল বোতল বোমা! ওই শতকের দ্বিতীয় দশকের একটা ঘটনার কথা শোনা যাক। সেবার তো কেচ্ছা কেলেঙ্কারির মত গরম পরেছে। ঘরে ও বাইরে – কোথাও যার দাপটে থাকা দায়। বাবু ধনুকর্ণ ছিলেন ঠগবাগানের কলেজে পড়া, একজামিন ফেল করা, আর্টিকেল লেখা বাঙালি। কলকাতার আদিকথা ও ইতিবৃত্তি বলেছে, এই ধনুর্ধরের বাবা মিত্তিরবাবু ছিলেন ন্যাটড্রাইভ ম্যানকিনসন কোম্পানির বাড়ির মুৎসুদ্দি। পরে কোম্পানির কাগজের ব্যবসাও ধরেন। সাবেক মানুষ, বাপ দাদা না ধরেই নিজ পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। সামান্য বাজে খরচও তিনি বরদাস্ত করতে পারেন না।
তারই সুপুত্র ধনুর্ধর। এগজামিন পাশ করার আগেই চার ছেলের বাপ! স্কুল ফ্রেন্ডদের সঙ্গে লুকিয়ে চুরিয়ে সিদ্ধিটা চরসটা মাজমের বরফিটা চলছিল –তবে মন যা চায় তা ঠিক পেরে উঠছিল না। মনে সাধ, একটু শ্যাম্পেন শেরি চেখে মানবজন্মের জ্বালা জুড়ানো! রসকষহীন বিষয়ী পিতার পাল্লায় পাল্লায় জীবনটা ছাই হয়ে গেল গা। এমনই এক সময় সুযোগ এল সামার ভ্যাকেশন-এ। কলেজ ছুটি। মিত্তির মশাই কার্যোপলক্ষে বাইরে। বলে গিয়েছেন ফিরতে রাত হবে। ধনুবাবু বসলেন চক্রে, স্টাডিরুমে, সপার্ষদ। পার্ষদ মানে খানদুই স্কুল ফ্রেন্ড। এক উদ্যোগী বন্ধু (আজকের ভাষায় জুগাড়ু) চাদর চাপা দিয়ে এনেছেন দু’বোতল মদ। শেরি ও ব্র্যান্ডি। সেই উদ্যোগী বন্ধু যার নাম প্যারীবাবু, ঢুকেই দরজা বন্ধ করেছিলেন। বেড়াল যে ভাবে দুধ খায় সেভাবেই চুকচুক করে শেষ হল প্রথম বোতল। একে ওই অশৈলী দাবদাহ তায় ব্র্যান্ডি, বাবুরাও গরম হয়ে উঠতে লাগলেন। কিন্তু মেজাজ হয়ে উঠল তরর। খুলে দেওয়া হলো গবাক্ষ, চড়ল হুল্লোড়, টেবিল চাপড়ে স্পিচের বন্যা বইতে লাগল পলিটিক্সের। এমনই এক ঘনঘোর সময়ে এন্টিক্লাইমেক্সের মত হটাৎ ফিরে এসেছেন মিত্তিরবাবু। ছেলের ঘর থেকে বিকট গন্ধ আর চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখেন বাবুরা মত্ত। ভয়ঙ্কর চটে কত্তাবাবু গালিগালাজ শুরু করতেই আরক পেটে পরা একটি ফ্রেন্ড গেলেন চটে। কেলোর ষোলকলা হল, যখন টলমলায়মান ধণুবাবু তেড়ে এসে বাপকে মারলেন এক ঘুষি।
কত্তার বযস হয়েছিল। ওই ইয়ংবেঙ্গলি ঘুষি খেয়ে সহ্য করতে না পেরে পড়ে গেলেন। এরপর ভিতর বাড়ী থেকে গিন্নির আগমন, কান্নাকাটি, ভর্ৎসনা ইত্যাদি। বন্ধুরা গোলমাল দেখে পিটটান দিলেন পুলিশের ভয়ে। ধনুবাবু তখনও রামধনুতে ডুবে আছেন। ঈষৎ জড়ানো কন্ঠে মায়ের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে পরে বললেন, ‘মা আমাদের বিদ্যাসাগর বেঁচে থাক। তোমার ভয় কী? ওই ওল্ডফুল মরে যাক। ওকে দিয়ে কি হবে। নতুন বাবা এনে দেব। কোয়াইট রিফর্মড বাবা চাই। একসঙ্গে আমি তুমি আর নতুন বাবা ড্রিঙ্ক করব।
শহর সে সময় যেন সাঁঝ হলেই মাতাল। বড়দিনের প্রিয় পানীয় এক পাঁচমেশালি আরক। নাম পাঞ্চ। আশা করা ওই একটি পাঞ্চ খেলে জমি ধরতেন ঋত্বিক শক্তির মতো সুপারম্যানেরাও। তখনকার জনপ্রিয় পাব আজকের খালাসিটোলা। এছাড়া ছিল তাড়ি, গেরি, বাস, আলপস- আরও কত রকমের না আরক। আজ শুনতে অবাক লাগলেও একথা সত্য যে সাহেবদের তরল আমোদ বাড়তি ঘনঘোর জোগাত বাঙালি বাবুরাই। হুইস্কি ছেড়ে আরেক ডুবেছেন এমন সাহেব সুবো তখন সুতানুটির হাটে বাটে। যীশুপুজার সময় বাঙ্গালীর মোচ্ছব এতটাই বেড়ে যেত যে গোরারাও তার সঙ্গে পাল্লা দিতে চেয়ে ন্যাযে গোবরে হতেন অনেকসময়। কথিত আছে, কোলকাতার এক বুনিয়াদি আরকখেকো বাঙালির বাড়ীতে তার চাকর মূত্রবেগে অধীর হয়ে কম্মো সারছিল রাতে ছাদ থেকে। মাতাল বাবুর মাথায় তা পড়তেই তিনি হুঙ্কার দিলেন। কি পড়ল রে মাথায়? পাসের মোশাহেব বললেন, চাকরের কীর্তি। মত্ত বাবু শুনে খানিকটা নিশ্চিন্তের গলায় বললেন, ‘ওহ তাহলে তো ভালো। আমি ভেবেছিলাম জল’।
সেকি কান্ডটাই না হয়েছিল মেছুয়াপট্টির বাগানবাড়ীতে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম ভাগ। বড়দিনের ঠিক আগে এক মোহাসেব এসে কালীঘাটের চরণবিলাসী বাবুকে মোক্ষম উস্কানি দিলেন। ‘মোশাই কাল বড়দিন। ইংরেজটোলায় তো ধুম লেগে গ্যাচে। বাড়ি যা সাজাচ্ছে কি বলব’। রোখ চেপে গেল চরণবিলাসী বাবুর। সায়েবদের যথেষ্ট ডালি পাঠিয়েছেন কিন্তু সুখ হচ্ছে না। ঠিক করলেন তিনিও পালন করবেন বড়দিন। বিপুল ধুমধাম আর খরচ। কেননা চরণবিলাসী বাবুর আতেঁর ব্যাপার। দশজনকে ডাকতে হবে, সঙ্গে তাদের মেয়েমানুষ রয়েছে। দু’তরফা বাই, চারতরফা খ্যামটা চাই। আসর বাড়ির থেকেও ভালো জমে বাগানে। সেই বাগান সাজাতে দশ বারো মন গাঁদাফুল চাই।
আয়োজন হল এলাহি। দশজনকে ডাকলে কুড়িজন আসবে ধরে নিয়েই। আর সবকটি যে একই রকম নেশা করবে তা তো নয়। শ্যাম্পেন ব্র্যান্ডি লিকর বিয়র তো রয়েছেই, শেরি জিনও যেন মজুদ থাকে। আবার এমনও রয়েছেন যারা এইসব মদ দেখলে নাক কুচঁকাবেন, কিন্তু এদিকে জল ভিস্তির (তাড়ি) বাঁক খালি করে দেন। তাঁদের জালাপেট ভরানোর জন্য তাড়িও চাই ছ’জালা। গাঁজা চন্ডু চরস মাজম খাট্টা গুলকদ ও টকপাতও রাখতে হবে। লোক যেন কিছু চেয়ে ‘পেলুম না’, না বলে। এতেই শেষ নয়। নেশা হলেই অনেকেই জমি ধরবেন। তাদের ঠান্ডা করতে রাখতে হবে তেঁতুল গোলা, কাঁঠালপাতার রস, লেবুর শরবৎ।
রাস্তা আলো করে সব রওনা দিলেন নেমন্তন্যে। নাচছে বোতল নাচছে বাঈজী। সাহেবদের স্পেশাল ডিমান্ডে প্রথম রাতে খেমটা। একের পা দু’য়ের পা ছয়ের পা কাওয়ালি আড়খেমটার পর তারা শুরু করেছে বেদেনি উড়েনি ও মগের নাচ। উড়ছে রুমাল উড়ছে ব্রেভোধ্বনি। গোলাপি হয়ে উঠছে চারপাশ। মাঝরাতে মদ দেওয়া হল ক্লান্ত শরীর বাঈজী আর খেমটাওয়ালিদের। মজলিশে খিচুরির হাঁড়ি আসতেই তার উপর ঝাপিয় পড়লেন কোন কোন ঘনঘোর বাবু, সে এক মাখামাখি অবস্থা। কার হাত কোথায় তার ঠিক নেই। খেমটাওয়ালিদের ওড়না গায়েব, বাঈজীদের পোশাকের দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছে। কার কোথায় কী পড়ছে কোন হুঁশ নেই। কেউ জমি ধরেছে, কেউ গাছতলায় শয্যা নিয়েছেন। কারও পা ধরে টানছে বাগানে ঢুকে আসা শেয়াল, কারও মুখ শুঁকে পেচ্ছাপ করে চলে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানী কুকুর।
এখানেই স্বর্গ এখানেই নরক। মলমূত্রের গড়াগড়ি। চাকররা এসে এক একবার এক একদিকে টানছে। রাত শেষ। ভোলানাথ মুখোপাধ্যায়ের জবানিতে ‘বেলা আটটা বেজে গ্যালো, চাদ্দিক রোদ্দুরে ভরে গ্যাচে, নেশা হতে যারা মজলিশ থেকে বেড়িয়ে এসে গাচতলাতে মড়ার মতো এসে পড়েচে তাদের বুকের উপর কাকগুলি বসে ঠোকরাবার উজ্জুগ কোত্তেই একটু চেতন হোচ্চে। যত বেলা হচ্চে ক্রমশঃ মৌতাত এবং নেশা ছুটে যাচ্চে। এক এক করে ধন্বন্তরেরা উঠতে লাগলেন। কেহ তামাক চাচ্চে কাহার খোঁয়াড়িতে বুক পর্যন্ত শুঁকিয়ে গেচে কেবল জল জল করে চ্যাঁচাচ্চে। পাকা মাতালরা খোঁয়াড়ির সময় মদ খেয়েই খোঁয়াড়ি ভাঙ্গেন, আদপাকা ও নতুন বাবুরা জল খেয়ে পেট জয়ঢাকের মতন কোচ্চেন। তেষ্টাও যাচ্চেনা, গায়ের ঘোঁৎঘোতানিও যাচ্চেনা, একবার সুচ্চে, একবার বোসচে, যত আমোদ আহ্লাদ খোয়াড়িতেই মাটি কোল্লে’।
পুন্ন্যিমে থাকলে যেমন অমাবস্যে, মৌঁতাত থাকলেই খোঁয়াড়ি। এই সারসত্যটি বাঙালি জেনে এসেছে তার জন্মলগ্ন থেকেই- তবু আজও তাদের মদালসা যাত্রায় কোন যতি নেই। আজকের সিঙ্গল মল্ট ওড়ানো, পার্ক স্ট্রীট দাপানো, নাইট ক্লাব মজানো বাঙালিদের যদি বলা হয় একটু পেছন ফিরে তাকাতে? তাহলে কী দেখতে পাওয়া যাচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, ব্যস্ত কোলকাতার বন্দরে একে একে এসে ঢুকছে অসংখ্য পালতোলা জাহাজ। পিছনে পিছনে স্টিমারও। বিলাতি জার্মান স্প্যানিশ ইতালিয়ান মার্কিন প্রভৃতি নানা জাতের সেলর তখন কোলকাতায় আমদানি হত। সেলর হোম ছিলে লালবাজারের উত্তর পূর্ব কোণে। আর লালবাজারের পূর্ব দিকে, এখন যেখানে বৌবাজার স্ট্রীট, তাকে সাহেবরা বলত ফ্লিট স্ট্রীট। বেন্টিক স্ট্রীটের খানিকটা আর ফ্ল্যাগ স্ট্রীটের মাঝামাঝি পর্যন্ত সার জুড়ে ছিল মদের দোকান। যেন এক মদ মহামেলা। শুঁড়ির মেলাও কি নয়? ফরাসি ইতালিয় জার্মান স্প্যানিশ শুঁড়িরা দোকান সাজিয়ে বসত। সেই সব দোকানের নামও ছিল বাহারি- ওল্ড ট্যাভার্ন, হোয়াইট হর্স, রেড লায়ন। রসিক পাঠক – দৃশ্যটা ভাবতেই কি চনমন করে উঠছে না আপনার লিভারের হৃদয়! আরও শুনুন। প্রতিটি দোকানের সামনে বিভিন্ন দেশের শুঁড়িরা নিজেদের দেশের ফ্ল্যাগ লাঠির আগায় ওড়াতো। বাঙালিরা কোন ছার, হোমের মালিকদের দৌরাত্মে ফিরিঙ্গিরাও ওই রাস্তা দিয়ে যেত ভয়ে ভয়ে। তারা হোমের একতলা ছাদের আলসেতে বসে বাঁদরের মত পা দোলাচ্ছে, লাফাচ্ছে, টেলিগ্রাফের পোষ্ট বেয়ে নেমে আসছে, আপিস ফেরতবাবুদের চাপকানে হাত গলিয়ে দিচ্ছে – এক টোটাল ক্যাওরামি। কোন দুর্দান্ত সেলর কে চার পাঁচ জন গোরা পুলিশ ধরে হাজতে নিয়ে যাচ্ছে – এই দৃশ্য দেখা যেত হামেশাই। তব তৎকালীন বাঙ্গালিদের সঙ্গে এদের সম্পর্কটা ছিল অম্ল মধুর। বাঙ্গালি বড়লোকদের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামায় যে যার পক্ষ ভারী করার জন্য এই সেলরদের ভাড়া করত। তবে এই সেলররাও কিন্তু জব্দ ছিল রাধাবাজারের শুঁড়িদের কাছে। রাধাবাজারে এখন যেখানে সার দিয়ে ঘড়ির দোকান, আগে সেখানে ছিল সার দেওয়া বিলিতি মদের দোকান। হোলসেল ব্যবসা করতো তারা। কলকাতার অনান্য মদের দোকান, হোটেল, ক্লাব, কেল্লা, মেসগুলি পাইকারি হারে মদ কিনত এখান থেকে। এখানে প্রায় সব প্রাতঃস্মরণীয় শুঁড়ি-যদু, অখিলেশ চন্দ্র, অবিনাশ সেনদের রাজত্ব। কেউ ট্যাঁ ফো করলেই দশ মন ওজনের ঘুষি ফ্রীতে পাওয়া যেত! এই গোরা ঠ্যাঙ্গানো বাঙ্গালিরা নাকি নারকোল মাথায় ভেঙ্গে খেতেন।
তবে এইসব মারদাঙ্গা পাইকারি বিক্রিবাট্টা ছাড়াও খোদ লন্ডনের ধাঁচে মনোরম ট্যাভার্ন আর পাবও ছিল বিস্তর। পাঞ্চ হাউস, ট্যাঙ্ক স্কোয়ার, (এখন যা পরিচিত ডালহৌসি নামে) লালবাজার, কসাইতলা (বেন্টিংক স্ট্রিট) কে ঘিরে ছিল আদি যুগের পাঞ্চ হাউস। ১৮৭১ সালে ফেব্রুয়ারীতে ইন্ডিয়া গেজেট পত্রিকায় এক বৃদ্ধ ক্যাপ্টেন লেখেন যে তৎকালের কৌন্সিলের সেক্রেটারিরা মশার কামড় থেকে বাঁচতে লং ড্রয়ার পরতেন। সঙ্গে থাকত ‘আ কেস অব গুড আরক এন্ড গবলেট অব ওয়াটার’। যা সেক্রেটারিরা ঘন ঘন মিশিয়ে পাঞ্চ করতেন। পরে যা বাঙালিও আয়ত্ব করে। জন্ম নেয় পাঞ্চ হাউস।
ওই ‘পাঞ্চ’ এখনও আবডালে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বঙ্গসন্তান চালিয়ে যাচ্ছে পিকনিকে, লং ড্রাইভে, হস্টেলে, কলেজ ফেস্ট-এ, পার্ক-এ, গলিতে। সেই ট্র্যাডিশন আজ বাঙালির লাইফ স্টাইল। তার প্রেম এবং বিরহ, বর্ষা এবং গ্রীষ্ম, উৎসব অথবা শোক, পর্যটন কিংবা একাকীত্ব, শিল্প অথবা বাণিজ্য, গিটার কিম্বা সনেট, জন্মদিন বা অন্নপ্রাশন—সর্বত্র শতাব্দীবাহিত এই সুরের ঝর্ণাধারা বইছে। বোতলের দৈত্য ঠিক ক’পেগের পর বোতলের বন্ধু হয়ে যায়- এই ম্যাজিক প্রশ্নের কোনও ঐক্যমতের সম্ভাবনা যদিও নেই। দরকারও নেই। আসুন আপাতত কবি বিপ্লব চৌধুরির সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ ‘মদ’ এর কয়েকটি পংক্তি তুলে আজকের মত চিয়ার্স বলা যাক –
‘আপনি খান কিনা তা জিগ্যেস না / করেই সোজাসুজি ঢেলে দিচ্ছ গ্লাসে.../ তারপর আপনি যখন চুমুক দিয়ে, / গ্লাস নামিয়ে মুখে বলছেন আঃ/ যখন আর আপনি আদপেই খান কিনা / এ নিয়ে কোনওই সন্দেহ থাকছে না---/ তখন তোমাকেই পড়াই আমার লিখা...’
কারিগরী সহায়তা- বুবুন বোস
purono matal | unkwn.***.*** | ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৮:৩২88980
dd | unkwn.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৩88981
ranjan roy | unkwn.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫৩88984
শিবাংশু | unkwn.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৭:৫১88982
PM | unkwn.***.*** | ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ১১:৪০88983
agni roy | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৩৭88988
b | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪88989
agni roy | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৪১88985
তমাল রায় | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৫৮88986
সে | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ১২:০৪88987
নভেরা হোসেন | unkwn.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:১৪88990
সুখেন্দুশেখর রায় | unkwn.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:১১88991
শঙ্খ | unkwn.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৫:৫৮88992
Tapanta Chatterjee | unkwn.***.*** | ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৮88993