" সে ডাকে আমারে/
বিনা সে সখারে রহিতে মন নারে..."
একা হওয়াটাও একটা জার্নি। একা হতে হতে এই নিঃসঙ্গ পথের মাঝে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশটিকে দেখবে, সেও একাকী পথিকের মত নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে তোমার সঙ্গে। মুগ্ধ এই দৃশ্য আরও একাকী, আরও নির্জন এবং নিঃসঙ্গ পৃথিবীর দিকে ঘুরিয়ে দেবে পথ। আর এই একা একা পথ, একা হওয়ার নেশা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাবে যাপনে, অন্তরাত্মায়। আর ঠিক তখনই আবিষ্কৃত নিজেকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তুমি কী বলে উঠবে না--- আমি কে?
এখানে পথটুকুই পছন্দের। পথটুকুই শান্তি। থেমে থাকা নেই। বিলাস নেই, ব্যসনটুকুও অপর্যাপ্ত যেখানে সেখানে এসে থামবে নিজের চোখ, আত্মা! ততদিনে উপড়ে ফেলেছে কেউ তাঁর চোখ, তার দৃশ্য। আর একা আমি পৃথিবীর প্ররোচনায় উৎসাহিত হয়ে মোড় নেব কী জীবনের অন্য খাতে? অথবা অন্য কেউ বেছে নিতে পারেনি এই পথ ভেবে হাপিত্যেশ করে মরবো! ততদিনে শিখে নেওয়া গেছে আলোআঁধারির খেলা, মোচড় এবং বাঁক নেওয়ার কৌশল। এই একা পথ, তোমাকে সাহস দেবে, প্রেরণা দেবে, সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে হাঁটতে শেখাবে, ভেঙেও ফেলবে তোমাকে আর এই অপরিচিত, অপরিসীম গণ্ডিতে দিশেহারা করে...তখন চু কিৎ কিৎ এর ঘর পেরিয়ে, উঠোনের পেয়ারা গাছ ডিঙিয়ে সেই হাতছানি দেওয়া পথের ভেতর সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে... এক আনন্দময় নদী, মাঠ, গভীর বনের মধ্যে।
একা মানুষের শত্রু হচ্ছে সে নিজে। তার একলা মন চাইবে পথে এসে মিশুক অন্য কেউ... হাত ধরুক... পায়ে পায়ে জুতো লেগে গতি হোক ধীর, মৃদু... অথচ কেউ আসে না, কেউ আসবে না হয়ত কখনো, কোনদিন, শুধু একটা দমকা বাতাস সবসময় ভিজিয়ে রাখবে তোমাকে... অধীর করে তুলবে... আর এই একলা জার্নি যোগ হবে দু'টো শালিকের শান্ত চেহারা। মন্দ ভেবে, আড়াল ভেবে যতই তাকে এড়িয়ে যাওয়া না কেন, ঠিক এসে ভাব জমাবে তোমাকে সঙ্গে।
আর নির্জনতা ভেঙে, বিপুল এক কোলাহলের জগতে সেই না পা রাখবে, সমস্ত মায়ার, অবাস্তবের পরমানু তোমাকে গিলে ফেলবে মুহুর্তে। যার কোনও শেষ নেই, প্রাপ্তি নেই... নেই কোনও নির্জন কোণ। তখন এই কোলাহলের দুনিয়া ছুরি উঁচিয়ে লোভ দেখাবে সেই ফেলে আসা, ভেঙে ফেলা একা হওয়ার জার্নিটুকুকে...
নিজের কাছে অচেনা তুমি তখন কী তাকে গতজন্ম বলে বিশ্বাস করবে!