১) সর্বমঙ্গলের রাজনীতি
একটা সময় ছিল, যখন রাজনীতি ছিল মহান ব্যাপার। রাজনীতি করা মানে যাকে বলে দেশের কাজ করা। বড়োলোক বাড়ির অনেকগুলো ছেলের মধ্যে একজন দেশের কাজে যাবে। দেশের দারিদ্র্য, অসাম্য দূর করার কাজে ব্রতী হবে। রাজনীতি মানে ছিল, যাদের নিজেদের জীবনে কোনো বিগ্রহ নেই, অর্থাৎ ফর্সা, পুরুষ, সম্পত্তিবান, উঁচুজাত, সুশিক্ষিত ইত্যাদিদের দেশের মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী, শ্রমিক ভারতবাসী, কৃষক ভারতবাসী, হাভাতে ভারতবাসী, আদিবাসী ভারতবাসী, নারী ভারতবাসী ইত্যাদিদের উদ্ধার করার কাজে ব্রতী হওয়া। সেই কাজের বাম-দক্ষিণ ছিল। একই পরিবারের এক ভাই কংগ্রেস তো আরেক ভাই সিপিআই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও ছিল। দেশোদ্ধারের কাজে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার মধ্যে গৌরব ছিল।
সরাসরি রাজনীতিতে না থেকেও এই দেশোদ্ধারের কাজ করা যেত। যেমন করতেন মহাশ্বেতা দেবী। এবং তার মতো আরো অনেকে। মহাশ্বেতা লিটল ম্যাগাজিনে বের করতেন আদিবাসী গ্রামগুলোর কথা, দুর্দশার কথা। গল্প লিখতেন তাদের জীবনের। নিজের বাসনার রঙ দিয়ে রাঙিয়ে নিতেন তাদের চাওয়া পাওয়া। পাঠক ছিল অনাদিবাসীরা। কারা তারা? হ্যাঁ, তারাও দেশোদ্ধারের রাজনীতির লোক, অথবা পৃষ্ঠপোষক, অথবা তেমন কিছু হয়ে উঠতে চাওয়া। তাদের কাছে যাতে আদিবাসীদের সংলাপ পৌঁছনো যায়, তার জন্য সম্পূর্ণ এক ধরনের ভাষা আবিষ্কার করেছিলেন মহাশ্বেতা, তার চরিত্রদের মুখের আদিবাসী ভাষা। যা বোঝার জন্য জন্য আদিবাসী ভাষা জানার দরকার পড়ে না। কুমার রানা বারোমাস পত্রিকার বড়োদিন ২০১৫ সংখ্যায় এই প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “তাঁর বিরসা মুন্ডা, কোচি মুন্ডা, দোপদী মেঝেন একই ভাষায় কথা বলে – যে ভাষা তাঁর নিজের আবিষ্কার, যদিও ভূ-ভারতের কোনো লোকগোষ্ঠীতেই সে ভাষার প্রচলন নেই। আর যেহেতু তিনি আদিবাসী বিষয়ে শেষ কথা, অতএব, বঙ্গীয় সাংবাদিকও আদিবাসীদের উদ্ধৃত করেন, সেই ভাষাতেই, সুযোগ পেলেই লাগিয়ে দেন, 'মুরা হাঁড়িয়া খাই বটে ...!’ এই আদিবাসী নিরক্ষরতা থেকেই লালগড়ে আন্দোলনের কারণ হিসাবে চালু হয়, 'আদিবাসীরা বড়ো গরিব, বেচারারা পিঁপড়ের ডিম খায়!’ যাঁরা একথা বলেন, তাঁরা হয়ত জানেন না যে, পিঁপড়ের ডিম গোপীবল্লভপুর বা ঝাড়গ্রাম বাজারেই চারশো টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়, পিঁপড়ের ডিম লোকে পেট ভরানোর জন্য নয়, খায় একটা বিশেষ পদ হিসাবে এবং তার ওষধি গুণের কারণে। অবশ্য দাম বাড়ার একটা কারণ বাব্য মৎস্য শিকারিরা – পিঁপড়ের ডিম ছিপ দিয়ে মাছ ধরার একটা উৎকৃষ্ট 'চার' হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে, শিয়ালদা বাজারেও বিক্রি হয়! আসলে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে দারিদ্র্যকে গুলিয়ে ফেলাটা অজ্ঞতা নয়, এটাও ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত। বাঙালি সাংস্কৃতিক আধিপত্যে ভাত-মাছটাই খাদ্য, অথবা প্রভু দেশ বা অন্য দেশ থেকে আসা খাবারগুলো সুখাদ্য, কিন্তু আমাদের গরিবদের খাবারগুলো অখাদ্য। ...”
দেশ সময় এদিক ওদিক করে আরেকটা আইকনকে ধরা যাক। কমিউনিস্টদের মধ্যে এই সর্বমঙ্গলের রাজনীতিকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা ছিল। মার্ক্স বলে গেছিলেন, শ্রমিকশ্রেণী নিজেদের মুক্তি নিজেরাই আনবে। বলেছিলেন, সকলের মুক্ত উন্নতির পূর্বশর্ত প্রত্যেকের মুক্ত উন্নতি। এটা রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ। লেনিনদের ব্যাপারস্যাপারগুলো কি সাধারণভাবে সর্বমঙ্গলের রাজনীতির ফ্রেমওয়র্ক-কে অতিক্রম করতে পেরেছিল? না, চেষ্টা সত্ত্বেও পারেনি। মেয়েদের বিপ্লবী রাজনীতিতে অনীহা, বিপ্লবী রাজনীতির বিষয়ী হয়ে ওঠার ব্যাপারে অনীহা, এসবই লেনিন ধরতে পেরে গেছিলেন। কিন্তু তাদের নানা কসরৎ করে টেনে আনতে চেয়েও পারেননি। ক্লারা জেটকিনের লেখায় রয়েছে, ১৯২০ সালে লেনিন বলছেন, অঙ্গভঙ্গী করে, পার্টির মহিলা কর্মীদের উদ্দেশ্যে "বাচালদের মতো ক্যাঁচরম্যাচর কোরো না, চিৎকার করে এবং পরিষ্কার করে বলো যেমনভাবে সংগ্রামীদের বলা উচিত"। ওই লেখায় আছে, লেনিন মেয়েদের সম্পর্কে বেশ কিছু খারাপ খারাপ কথা আর বেশ কিছু ভালো ভালো কথা বলেছেন। এবং শেষে মেয়েদের টানতে ব্যর্থ হয়ে কেমন যেন শপথের মতো করে বলেছেন, "এবং তাই এতদিনকার ঘুমিয়ে থাকা মেয়েদের শেষমেশ গতিতে নিয়ে আসতেই হবে"।
আমরা কী দেখেছি? বাম দক্ষিণ রাজনীতি মিলিয়ে? পার্টি দেখেছি। আর পার্টির মতো গ্রুপ দেখেছি। তারা কী করে? তারা তাদের বারো দফা কর্মসূচীতে ঘোষণা করে দলিত, মহিলা, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি সব্বার কর্মসূচী। পার্টির উইং থাকে। শ্রমিক উইং, নারী উইং, দলিত উইং, আদিবাসী উইং। ইত্যাদি। যাই হোক। কেউই স্বাধীন নয়। সবাই পার্টির অস্তিত্ব, পার্টির বিকাশ, পার্টির মূল কর্মসূচীর (বিপ্লব, সমাজতন্ত্র, স্বাধীনতা, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি) অধীন। আচ্ছা, তাহলে পার্টি বা গ্রুপ কাদের দিয়ে তৈরি? দেখলে দেখা যাবে, সেখানে যারা সংখ্যাগুরু তারা ওই সমস্ত আইডেনটিটির কেউ নয়, অথবা, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ – তারা ওই আইডেনটিটির হলেও ওই আইডেনটিটির ঊর্ধে। এরকমভাবেই পার্টি রাজনীতি একটা সাধারণ সার্বজনীন মঙ্গলের কিছু বিষয়ী তৈরি করত। যার মূল কথাটাই হলো, নিপীড়িতদের এমপাওয়ারমেন্ট বা ক্ষমতায়ন, কিন্তু তার বিষয়ী নিপীড়িতরা নয়। অন্য বিষয়ী আছে। যার নাম পার্টি। প্রচ্ছন্ন বিষয়ী রাষ্ট্র। আমার তো "পার্টি অফ গভর্ননেন্স" কংগ্রেস পার্টিটাকে দেখলে সেরকমই মনে হয়। সিপিএম-এর একটা অংশে ক্লাস লাইন, নকশালদের কিছু কিছু অংশের মধ্যে মাস লাইন, কলকাতায় সুভাষ রায়দের স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নের লাইন, আম্বেদকরবাদীদের দলিত লাইন, জাতিসত্ত্বার আন্দোলন, ফেমিনিস্ট আন্দোলন ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সর্বমঙ্গলের রাজনীতিকে অতিক্রম করার চেষ্টা হয়েছে।
সর্বমঙ্গলের রাজনীতির মূল কথা – গ্রেটার কমন গুড। অর্থাৎ বৃহত্তর সাধারণ মঙ্গল। এই সাধারণ বা সার্বজনীন মঙ্গলের ধারণা বিংশ শতকেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বিশ্বায়ন আসার আগেই। রাষ্ট্র মোটামুটি নিজেকে এই সার্বজনীন মঙ্গলের আইডিওলজিক্যাল অ্যাপারেটাস বা রক্ষাকর্তা (এবং স্থিতিশীল) হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়ে ফেলেছিল। মানবাধিকার ইত্যাদি সংবিধানে ঢুকিয়ে টুকিয়ে রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল সর্বোত্তম আইডিয়া, কিসের? এই গ্রেটার কমন গুডের। পার্টিগুলো রাষ্ট্রের সেই হয়ে ওঠাকে মদত করেছিল। একই সাথে তারা নিজেরাও কীভাবে ওই সার্বজনীন মঙ্গলের আইডিওলজির গতিশীল পার্টনার বা অংশীদার হয়ে উঠতে পারে, সেই ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ন হয়েছিল। এখনও হয়।
২) পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি
সর্বমঙ্গলের রাজনীতির বিষয়ী ছিল যারা, তারা ছিল সবরকমের ভালনারেবিলিটি বা বিগ্রহের ঊর্ধে। যার ভালনারেবিলিটি বেশি সে কিছুতেই ওই রাজনীতিতে বেশিদিন টিঁকতে পারত না। উঁচুতে উঠতে পারত না। লজিকটা সেরকমই। যে অন্যদের জন্য করে। নিপীড়িতদের জন্য করে, তাদের কথা বলে।
পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির শুরুর কথা হলো এটার থেকে স্পষ্ট ফারাক টানা। পরিষ্কার করে বলা: অন্যের দাবি তোলা মানে রাজনৈতিক ভন্ডামো, মাতব্বরী। সর্বমঙ্গলের রাজনীতির পতন এবং পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির পরিব্যাপ্তির একটা পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতির বিষয়ী আর বিষয়ের মধ্যে ভেদ নেই। সেই পরিচয় বেশিরভাগ সময়ই হয়ত তৈরি করতে হচ্ছে। শ্রমিক কৃষক হিন্দু মুসলমান নারী পুরুষ ইত্যাদি, যা কিনা ছিল অন্যের চোখে (সর্বমঙ্গলের রাজনীতির বিষয়ীর চোখে) পরিচয়, তাকে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। করা হচ্ছে বিষয়ী হিসেবে। ফলে শ্রমিক কৃষক হিন্দু ইত্যাদির আগে যা যা করণীয় ছিল, এখন সেগুলোর বদলে নতুন করে করণীয়গুলোর পুনর্নির্মাণ হচ্ছে। কখনও অতীত খুঁড়ে জাগিয়ে তুলতে হচ্ছে। এই তৈরি করার মধ্যেই এই রাজনীতি সমসাময়িক। এই তৈরি করার মধ্যেই নতুন নতুন পরিচয় তৈরি করারও উপাদান আছে। এবং এই পরিচয় নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণের একমাত্র উপায় অন্যের সঙ্গে বিভেদরেখা টানা। আমি যে তুমি না, এইটা তৈরি করা। তবে আমি কে? এইটা একটু ঝাপসা রাখা। ইচ্ছে করেই। কারণ আমি যদি আমি কে তা খুব স্পষ্ট করে দি, তাহলে মুশকিল আছে। কেউ একটা আমাদের মধ্যে থেকেই বলে উঠবে, আমি তো ওরম না! ভাঙন ধরে যাবে! :) পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি মানেই কিন্তু পরস্পর বিরোধিতা। মানে মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপার আছে। একটা কথা চালু ছিল আগে, অল খাই কংগ্রেস আই। সেটা হবে না। অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে চলার ব্যাপারটা আর থাকছে না।
৩) জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের রাজনীতি
জাস্টিস বা ন্যায়বিচারের রাজনীতির বিষয়ী কে? একজন জাজ। জাস্টিস রাজনীতি মানবাধিকার রাজনীতিকে তার নিজের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। মানবাধিকার রাজনীতির ভূমিকা আমরা আগে একটু আলোচনা করেছি। মানবাধিকার রাজনীতি কোনো স্বাধীন রাজনীতি নয়। সর্বমঙ্গলের রাজনীতির যে মাতব্বরী, যে গায়ে পড়া ভাব, তার কমপ্লিমেন্টারিটি বা পরিপূরক। জাস্টিস রাজনীতির একটা অবশ্যম্ভাবী পূর্বশর্ত আক্রমণ। অভিজিত নন্দী ফেসবুকে লিখেছিলেন, “কখনো একটি মেয়ে, কোন পুরুষ দ্বারা আক্রান্ত হলে, তার পরিচয় হয়ে ওঠে সেটাই। সেই পরিচয়টা তখন তাকে ধারণ করে। মেয়েটি তার সবকিছুকেই সেই ছাঁচে ফেলতে বাধ্য হয় – অনেক সময় বাধ্য হচ্ছে না জেনেই। তার চারিপাশের পৃথিবীটা সম্বন্ধে তার ধারণা গড়ে উঠতে থাকে একটি আক্রান্ত মেয়ের প্রাসঙ্গিকতা থেকেই। যাবতীয় ব্যক্তিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা এবং সহানুভূতিও তাকে সেদিকেই ঠেলে দেয়। একই ঘটনা ঘটে যখন একটি দলিত মানুষ বা একজন মুসলমান যদি আক্রান্ত হয় কোন বর্ণহিন্দু দ্বারা। 'আক্রান্তের দর্শন' একটি অবশ্যম্ভাবী এবং বিপজ্জনক সম্ভাবনা আধুনিক পৃথিবীতে।" এইখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোনো একজন ব্যক্তি (বা দশজন ব্যক্তি) র 'আক্রান্ত' নামে একটা পরিচয় গড়ে ওঠা বা গড়ে তোলা এবং তার মধ্যে দিয়েযেন বা পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি হিসেবে জাস্টিস রাজনীতির অনুপ্রবেশ। কিন্তু এইবার আসল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা। আক্রান্ত কি রাজনীতির বিষয়ী? সে নিজেকে বিষয়ী মনে করলেও সে কি আদৌ বিষয়ী? নাকি এখানেও কোনো ছুপা বিষয়ী আছে? না, আক্রান্ত বিষয়ী না। কেন? কারণ সে তো স্বাধীন চরিত্রই না। সে আক্রমণ নামক একটি সম্পর্ক দিয়ে আক্রমণকারী কর্তৃক নির্ধারিত। এখানে ছুপা বিষয়ী একজন অদৃশ্য জাজ। জাস্টিস রাজনীতির সমস্ত কুশীলব যেন সেই মহামহিম সুপ্রিম জাজের ক্লোন। জাস্টিস রাজনীতিতে এই বিষয়ী আক্রান্তের নামে তার এজেন্সির নামে তাকে প্রতিস্থাপন করে। জাস্টিস রাজনীতির এই অদৃশ্য বিষয়ী – সুপ্রিম জাজ – এও তো রাষ্ট্র-ই।
এতক্ষণ তত্ত্ব কথা হলো। কিন্তু বাস্তবে যখন জাস্টিস আন্দোলন হয়, এবং তার মধ্যে যখন জাস্টিস পলিটিক্স একেবারে ভেতর থেকে খেলা করতে শুরু করে তখন কী হবে? যেমন, জি ডি বিড়লা স্কুলের ক্ষেত্রে। যৌনহিংসার শিকার বাচ্চাটির বাবা তার বক্তব্যে একবারের জন্যও অভিযুক্ত দুই জন শিক্ষকের শাস্তি কী হতে পারে তাই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। বরং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার দায়ে দোষী করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু আশপাশ থেকে এবং অনেক অনেক গার্জেনের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠছে ফাঁসির সাজা দেওয়া হোক, পিটিয়ে মেরে ফেলা হোক। একটা পিটিশনও ঘুরছে মার্কেটে। কিন্তু অন্য আওয়াজ কি নেই? আছে। আমার ধারণা বিস্তর আছে। জিডি বিড়লায় সারা রাত বিক্ষোভ করা এক অভিভাবক শিলাদিত্য মুনশি ফেসবুকে লিখেছে, "I can read the future of this case.. two convicted will have to face the hardest consequences as an individual but the school authority will never be chased...It's Birla after all. The shameless inaction, ultimate lack of responsibility and a mammoth chain of negligence which were promoted by a school will turn to an individual crime."
দশ কথার এক কথা বলে দিয়েছেন শিলাদিত্য মুনশি: ব্যক্তিগতভাবে শাস্তি হবে। ব্যক্তিগতভাবে অপরাধী। ব্যক্তিগত অপরাধ। ব্যক্তিগত। জাস্টিস রাজনীতিতে 'আক্রান্ত' বা 'আক্রমণকারী'-র পরিচয়করণ করা হয় বলে আমরা আগের প্যারাগ্রাফে বলেছি। পরিচয়করণ করা হয় কি? না। তার ব্যক্তিগতকরণ করা হয়। ইন্ডিভিজুয়ালাইজেশন করা হয়।
ওই ব্যক্তিগত আক্রমণকারী এবং ব্যক্তিগত আক্রান্তদের আমরা সামাজিকীকরণ করতে পারি। সামাজিকীকরণ মানে নিখিলায়ন বা ইউনিভার্সালাইজেশন নয়। সামাজিকীকরণ মানে পরিচয়করণ বা সনাক্তকরণ অর্থাৎ আইডেনটিফিকেশন করতে পারি। সেটা করার সময় হয়ত এক জন একভাবে করবে। কেউ হয়ত বলবে বিড়লা, কেউ বলবে ইংলিশ মিডিয়াম, কেউ বলবে প্রাইভেট স্কুল, কেউ বলবে পুরুষ টিচার, কেউ এমনকি বলবে টিচার, কেউ এমনকি বলবে পুরুষ – এই আইডেনটিফিকেশন বা পরিচয়করণ নিয়ে তুল্যমূল্য তর্ক হবে। বাক বিতণ্ডা হবে। এমনকি জাত তুলে ধর্ম তুলে গালাগাল হবে। কিন্তু যেভাবেই করা হোক না কেন এই সামাজিকীকরণ, তাতে জাস্টিস পলিটিক্স যে দুর্বল হবেই, সন্দেহ নেই।
[কৈফিয়ত: বলাই বাহুল্য, কোনো ব্যক্তি বা দলকে নিন্দামন্দ করার জন্য এই লেখায় তাদের নাম নেওয়া হয়নি – লেখক]