এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • লেখালিখি পড়াঃ দ্বিতীয় কিস্তি

    ছোটা চণ্ডাল লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৬৩৭ বার পঠিত
  • এবার একটু গদ্য হোক:

    গদ্য নিয়ে বলতে গেলে কী দিয়ে শুরু করা যায় বলুন দেখি! আচ্ছা বেশ, আমাদের সবার চেনা কিছু লেখককে দিয়ে শুরু করা যাক, একথা মনে রেখে যে আমরা সকলেই দেশকে ভালোবাসি। সাগরময় ঘোষ যখন একজন করে নতুন লেখককে দেশ পত্রিকার পূজা সংখ্যায় উপন্যাস লেখার সুযোগ দিচ্ছেন, সেই সময়ে এক এক করে তিনজন লিখলেন উপন্যাস, এবং প্রত্যেকেই অচিরেই বা কিছু পরে পরেই প্রতিষ্ঠা পেলেন। "আত্মপ্রকাশ', "ঘুণপোকা' এবং "দৌড়'। নি:সন্দেহে ভালো লেখা, (যদি আপনার ভালো না লেগে থাকে) অন্তত সেই সময়ে একেবারে ফেলে দেওয়ার মত লেখা ছিল না। মজাটা হল এই, যে এই লেখাগুলোর (এর সাথে যোগ করে নিন "প্রতিদ্বন্দ্বী') মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে, সেটা পরপর পড়ে ফেললেই ঠিক বোঝা যায়। হতাশা, বেকারত্ব, দূর্নীতি (এবং তার প্রতি ঘৃণা) আর বোহেমিয়ান জীবন যাত্রা। এর প্রভাব কিছুটা পরবর্তী সময়ের যুবমানসেও পড়েছিল বই কি। এইখানে আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, এঁরা কি তখন ই "মাল্যবান' পড়ে ফেলেছিলেন! জানি না। যদিও বলে রাখা ভালো যে "মাল্যবান' ও তার সঙ্গী সাথীদের খুঁজে পেতে ছাপা না হলে যে বাংলা সাহিত্যের বিরাট কিছু ক্ষতি হয়ে যেত, এরকমটা আমার মনে হয় নি। এরপর এঁদের আর কোন লেখাতে এই জিনিসগুলো এইরকম প্রবলভাবে আর আসে নি, প্রতিষ্ঠা এসে গেলে মানসিকতা বদলে যেতেই পারে, তাতে আখেরে ক্ষতি কিছু হয়নি, সিকোয়েল তৈরি হয়নি ভালোই তো। আর একজনকে নিয়ে না বললেই নয়, কারণ এই নয় যে তিনি আমার খুব পছন্দের, কারণ এই যে, তাঁকে নিয়ে লোকজন অনর্থক এবং বিস্তর মাতামাতি করে থাকেন। নাম সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। পড়েছিলুম কিছু কিছু, খুব খারাপ লেগেছিল, তাও নয়, মনেও ছিলেন তিনি অল্প অল্প। পরে যখন মার্কোয়েজ/মার্কেজ কিছু কিছু পড়লাম তখন প্রথমেই যা মাথাতে এল তা হল : "যা: শালা!' ভীষণ প্রভাব এবং ততখানি গভীরতার অভাব (কিছুটা তার গভীরতা, কিছুটা আরোপিত)। তাহলে আছে কী, আছে রাগ (বন্ধুদের উপর, প্রতিষ্ঠানের উপর এবং আরও কি কি জানা সম্ভব নয়), লিখনভঙ্গী, শব্দ চয়ন, নিজস্ব ভঙ্গীতে বাক্য গঠন। এদের তাকে বাঁধিয়ে রাখা যেতে পারে, বুকে নয়। "ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড'-এর প্রভাব "মিডনাইটস চিলড্রেন'-এও পাই, কিন্তু সেক্ষেত্রে রুশদির টানটান গল্প বলার পটুত্ব বেঁধে রাখে শেষ অব্দি। প্রভাব থাকেই, কিন্তু তার সাথে থাকে কিছু নতুনত্ব, বক্তব্যে এবং লিখনভঙ্গীতে, সামঞ্জস্য প্রয়োজন তাদের। অন্যথায় বিপদ, যা ঘটেই থাকে। বন্ধুবর বলেছিল দেবর্ষী সারগি পড়তে, নাকি দারুণ! পড়ে ফেললুম, মনে হল মন্দ না, অন্য রকম ভাবে লিখছেন, ভালো কথা, কিন্তু কী লিখছেন, কথা নয় কাহিনি নয়, দর্শন, ঈশ্বর-মনুষ্য চিন্তা, গভীরতা কতখানি, ডোবা যায় না, চুল ভেজে না, শুধু গায়ে একটু ছিটে লাগে মাত্র। "দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং' পড়ে বুঁদ হয়ে ছিলুম কয়েক মাস, এই পার্থক্য, আমি বরং কুন্দেরায় ফিরে যাব বার বার। স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র বা অনিল ঘড়ুই খুব একটা খারাপ না লাগলেও সেই অনূভুতি আসেনি যা প্রথম এবং মাঝের দিকের শীর্ষেন্দু পড়ে আসত। শুধু মোটামুটি, খারাপ না, ঠিকঠাক, এসব পড়ে আর শুনে হতাশ! পাগল করে দেবে কে, আবার?

    এবার দেখা যাক আর একটা প্রয়োজনীয় দিক, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং সমান্তরাল লেখালিখি। শুধু যারা লেখক হিসাবে একটু আধটু নাম করেছেন তারাই নয়, আমরা যারা লিখে টিখে থাকি মাঝে মধ্যে, তারাও এর ই মধ্যে পড়ি। কাজেই কিছুটা আত্মসমালোচনাও বলা যেতে পারে। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে যে সাহিত্য (?!) পত্রিকাটি বের হয় তা এখন আমরা অনেকেই হয়ত আর আগের মত অতটা উৎসাহ নিয়ে পড়ি না। অনেককেই বলতে শুনেছি যে এর থেকে অমুকদা বা অমুক দিদি অনেক অনেক ভালো লেখে (কী আর করা যাবে, হর্ষ দত্ত বা সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য এক্ষুনি এক্ষুনি রিটায়ার করবেন সে রকম কোন খবর নেই)। কিন্তু ঘটনা হল লিটল ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত অনেককে আমি এইরকম প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এবং সমান্তরাল লেখালিখির কথা বলতে দেখেছি। সেই লেখালিখি কিছু কিছু পড়ে মাঝে মধ্যেই মনে হয় যে এ তো আর একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, এক ধাঁচে লেখা, আট দশটা লিটল ম্যাগাজিনের গদ্য লেখা পড়তে পড়তে সব গুলিয়ে যেতে থাকে, যেন একই স্যারের নোট মুখস্থ করে পরীক্ষায় লেখা হচ্ছে। তারই মধ্যে ভাল মন্দও আছে, সে তো থাকবেই, একই স্যারের সব ছাত্রই কি সমান নম্বর পায়! অথচ, কতকিছুই তো করা যেতে পারে, হচ্ছে না। সারল্য বিসর্জন গেছে, সর্বত্র চলছে কঠিন করে দেওয়ার খেলা, অদ্ভুত ঘোরের মত ভঙ্গীতে (মাঝে মধ্যে একটু ফিচলেমো মিশিয়ে, অনেক পাবলিক খায়) ন্যারেটিভ, অথব অসংলগ্ন কথা ওলট-পালট করে সাজিয়ে পরিবেশন করা। অথবা নিছক ফিচলেমি করে যাওয়া, "পান' মিশিয়ে দেওয়া মাঝে মধ্যে, এরই মাঝে সিরিয়াস বিষয় বস্তু নিয়ে কথা বলা-ছেঁড়া ছেঁড়া অনুভূতি সাজিয়ে যাওয়া, এবং আম্মো পারি ভাবখানি সযত্নে টেবিলের তলাতে রাখা । বহু আগে পড়েছিলাম যে বুদ্ধদেব বসু দুজন সাহিত্যিক সম্পর্কে একটু সমালোচনা করেছিলেন: একজনের জন্য বলেছিলেন যে কিভাবে লিখতে হয় তিনি খুব ভাল জানেন, কিন্তু তাঁর লেখার কিছুই নেই; আর একজনের জন্য বলেছিলেন যে এনার লেখার অনেক কিছু আছে, কিন্তু কিভাবে লিখতে হয় উনি জানেন না। প্রথম জন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এবং দ্বিতীয় জন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা নিজেদের কোনটা বলব, ভাবি। লিখনভঙ্গী আয়ত্ত্বÄ করার খেলাতে আর কতদিন কাটাব, অনেক পাঠক শুধু আপনাদের লেখাই পড়ে না আরও অনেকের লেখাই পড়ে, সেটুকু ভুলে গেলে বিপদ।

    সার্বিক ডিসক্লেমার: এ লেখার উদ্দেশ্য নিছক সমালোচনা মাত্র নয়, যদি আপনি লেখালিখি করেন বা করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে একটু ভাবুন, একটু কষ্ট করুন, শুধু এইটুকু অনুরোধ। আমরা সঙ্গে আছি, অপেক্ষায়।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৬৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কপোতাক্ষ | ***:*** | ২৬ মার্চ ২০১৩ ০৬:৪৮89157
  • ভাই, আর যা হোক, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় হজম করার যোগ্যতা তোমার নেই। জেলুসিলেরও অভাব। কী করা যাবে!

    চাপ নিও না, তোমার মতো অনেকেরই এ-জিনিশ নেই। তো কী হয়েছে? বাতেলা আর নামের তো অভাব নেই। অনলাইন ঝেড়ে দিলেই হয়। তুমি আরো মন দিয়ে কুন্দেরা আর 'মার্কোয়েজ' পড়তে চেষ্টা করো, বুইলে।
  • কৃশানু | ***:*** | ২৬ মার্চ ২০১৩ ০৮:১৬89158
  • লেখাটা পছন্দ হয়েছে :-)
    অচিন্ত্য-র জায়গায় কমল ভেভেছিলুম :-)
  • sosen | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৩ ০২:৫৮89159
  • ভালো লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন