এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  সিরিয়াস৯

  • ‘নির্বাচন বয়কট’ কতটা প্রাসঙ্গিক?

    অভিজ্ঞান
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩২০১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • সিরিয়াস৯-র এবারের বিষয় ভোট। আসন্ন বা বিগত কোনও ভোটের কথা নয়, ভোট নামক ধারণা, অনুশীলন ও অভ্যাসের কথা। ভোট সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণাকে ধারণাগতভাবেই বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্য এই সংখ্যার। এবারে গণভোট নিয়ে লিখেছেন শুভময় মৈত্র, ভোট বয়কট নিয়ে লিখেছেন অভিজ্ঞান ও নোটা নিয়ে লিখেছেন কল্লোল।

    লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পৌরনির্বাচন, উপনির্বাচন ইত্যাদি নানাবিধ বোতাম টেপার উৎসবে বছরভর মাতোয়ারা ভারতবর্ষ। প্রজাতান্ত্রিক ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নির্বাচন, ভারতীয় নাগরিকরা বিভিন্ন সময় তাদের এই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন ও রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন বা ক্ষমতাচ্যুত করেন - এই বিশ্বাস রয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের। ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থা যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক, নির্বাচনে জয়লাভ নিশ্চিত করতে যতই অনৈতিক পদ্ধতি গৃহীত হোক, নির্বাচিত শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পরে যতই জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করুক – বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে আস্থা হারানো পাপ – সংসদীয় নির্বাচন ও তথাকথিত অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র সমার্থক। কাদের জন্য গণতন্ত্র ও কিসের নির্বাচন সেই প্রশ্নগুলি এত পিছনে চলে গেছে যে 'নির্বাচন বয়কট' এর স্লোগানটি প্রায় জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, গণতন্ত্রবিরোধী প্রান্তিক কন্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে। মিডিয়া, রাষ্ট্রীয় আদর্শগত প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক কায়েমি স্বার্থের রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে রাষ্ট্র নির্বাচিত বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী, অভিনেতা, খেলোয়াড় একযোগে প্রচার করে চলেছেন নির্বাচনের মাহাত্ম্য, আজ থেকে নয়, শতাধিক বছর ধরে। বিস্ময়ের বিষয় হল এই নির্বাচনী গণতান্ত্রিকতার অমোঘতায় বিশ্বাস ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিগুলিও আছে; সিপিআই, সিপিআই(এম) মায় নকশালপন্থীরাও (লিবারেশন, কানু সান্যাল গ্রুপ ও অন্যান্য) নির্বাচনের মাধ্যমে বিপন্ন ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে মরিয়া।

    লক্ষ করবেন, ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধতাকারী বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ বা সশস্ত্র সংগ্রামলিপ্ত নকশাল গোষ্ঠীগুলির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বিবেকবান অংশের আহ্বান শোনা যায় যে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করে তারা মূল স্রোতে ফিরে আসুক, 'ভুল পথ' ছেড়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক- সিপিআই, সিপিএম বা লিবারেশনের তরফ থেকেও এইরূপ আহ্বান শোনা যায়। ভারতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কমিউনিস্টদের এই আহ্বান তাদের রণনীতির দিক থেকে সঠিক, তারা বিশ্বাস করেছেন যে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন কিছু করা সম্ভব। সিপিএমের চার দশক আগের স্লোগান যদি দেখি - 'ভোট দিন বাঁচতে, তারা হাতুড়ি কাস্তে', বোঝা যায় ভোট দেওয়াটাকে শ্রমজীবী মানুষের বাঁচার সংগ্রামে একটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বানিয়েছেন তারা, মানুষের মধ্যে এই চেতনাকে ক্রমাগত চারিয়ে দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের গত চার দশকের ভোটের হার দেখলে খানিক আন্দাজ করা যায় তাদের এই রণনৈতিক স্লোগান যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে, বিধানসভা হোক বা লোকসভা, পশ্চিমবঙ্গে ভোট দেবার হার প্রায় সত্তর শতাংশের বেশি। যদি ধরে নিই সিপিআই-সিপিএমের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার জায়গা থেকে তারা ভারতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেশি করে ভোটার অংশগ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন তাহলে অসুবিধাটা কোথায়? নির্বাচনের মাধ্যমে বেশি বেশি করে মানুষকে গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ করানোটা তো ভাল ব্যাপার - যদি ধরে নিই এই নির্বাচন গণতন্ত্রের দ্যোতক। উল্টোদিকে, সিপিআই-সিপিএম বা লিবারেশন যাদের রাজনৈতিক শিক্ষক হিসাবে ছবি টাঙিয়ে মালা দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তাদের কী মতামত ছিল নির্বাচন সম্বন্ধে সেটা খানিক ঝালিয়ে নেবার প্রয়োজন আছে।

    প্রায় দেড়শ বছর আগে, ১৮৭১ সালে কার্ল মার্ক্স 'পার্লামেন্টারিয়াজিম' এর আক্রমণাত্মক সমালোচনা করেন, চাঁচাছোলা ভাষায় তিন বা পাঁচ বছর অন্তর পার্লামেন্টে শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি পাঠিয়ে শোষণ চালানোর প্রক্রিয়াকে আক্রমণ করেন, সেই প্রথার বলপূর্বক উচ্ছেদ ও কমিউন গড়ে তোলার মাধ্যমে সার্বজনীন ভোটাধিকার সুরক্ষিত হবার ইঙ্গিত ঘোষণা করলেন (কমিউন মানে কিন্তু যাদবপুর কমিউন বা প্রিয়নাথ মান্না কমিউন নয়)। মার্ক্স ঘোষণা করলেন 'The first decree of the commune, therefore, was the suppression of the standing army, and the substitution for it of the armed people'। বুর্জোয়া পার্লামেন্ট থেকে শাসক প্রতিনিধিদের টেনে নামাতে প্রথমে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের স্টেট মেশিনারিকে (পুলিশ, সামরিক স্থায়ী বাহিনী) বিলোপ করার প্রস্তাব রাখলেন, কমিউনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা বাতিল ও তাদের বেতন শ্রমিকের মজুরির সমান রাখার কথা বললেন, বুর্জোয়া আমলাতন্ত্রকে 'রাষ্ট্রীয় পরজীবী বাহিনী' ঘোষণা করে এদেরও বিলোপ চাইলেন, এবং এসবের মাধ্যমে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বদলে সর্বহারার গণতন্ত্রের মুল সূত্র হাজির করলেন (দি সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স দ্রষ্টব্য)। এসব কথা আমাদের বর্তমান বামপন্থীদের সংসদে কখনও বলতে শুনেছেন?

    ১৯১৯ সালে লেনিন বিলাপ করছেন যে মার্ক্সের উপরোক্ত বক্তব্যগুলি মার্ক্সবাদীরা ভুলে মেরে দিয়েছে, ওই বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে লেখা ‘দি স্টেট অ্যান্ড রেভলিউশন’ বইতে লিখছেন-'this remarkable criticism of parliamentarism, made in 1871, also belongs now to the "forgotten words" of Marxism. The professional Cabinet Ministers and parliamentarians, the traitors to the proletariat and the “practical” socialists of our day, have left all criticism of parliamentarism to the anarchists, and, on this wonderfully reasonable ground, they denounce all criticism of parliamentarism as “anarchism”!!'

    গোটা গোটা অক্ষরে লেখা কার্ল মার্ক্সের পার্লামেন্টারিসিমের কঠোর সমালোচনার সুর দেখতে পাওয়া যায় সিপিএমের তাত্ত্বিক মুখপত্র 'দি মার্ক্সিস্ট' পত্রিকার এপ্রিল-জুন সংখ্যায়, ১৯৮৪ সালে। রামদাসের লিখিত 'ওয়ার্কিং ক্লাস অ্যান্ড বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি ডেমক্রেসি' শীর্ষক লেখাটিতে ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রটিকে একটি বুর্জোয়া গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, লেনিনের উদ্ধৃতি দিয়ে মুখোশ খুলে দেবার চেষ্টা হয়েছে সেই সব ব্যক্তির যারা সর্বহারা মানুষকে রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্র ভুলিয়ে দিতে চায়, পার্লামেন্টারিসিমকে কেন 'ঐতিহাসিক অবলুপ্তি'র পথে বলেছিলেন লেনিন তার উল্লেখ করে সিপিএম যে সর্বহারার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের নন-পার্লামেন্টারি পথের সম্ভাবনাও জিইয়ে রেখেছে সেই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ সর্বহারা বিপ্লবের একটি হাতিয়ার, সেই অস্ত্র ব্যবহারে কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে কিছু সাফল্য এসেছে, কিন্তু এই অস্ত্রই শেষ অস্ত্র নয়, এ কথাই সেখানে সুস্পষ্ট ভাবে লেখা।

    সেই লেখার পর প্রায় সাড়ে তিন দশক অতিক্রান্ত, লোকসভা বিধানসভায় নানা ভাবে রগড়ে রগড়ে চলার পর পশ্চিমবঙ্গ গত দশবছর হাতছাড়া, আরএসএসের নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায়, প্রায় হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে 'সংসদীয় গণতন্ত্রের'' মাধ্যমে, সিপিএম নেতৃত্ব কি কিছু ভেবে দেখেছেন 'বুর্জোয়া সংসদীয় গণতন্ত্র'র বিকল্প পন্থা নিয়ে? বা সিপিআই নেতৃত্ব? এই দুই বামপন্থী দলেরই ছয় দশকের সংসদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা আছে - সারসংকলন কিছু কি আছে এতদিনের 'পার্লামেন্টারিসম'-এর? বুর্জোয়া গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে রক্তপাতহীনভাবে ফ্যাসিস্ট শক্তির ক্ষমতা দখলের ইতিহাস আগেও ছিল। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে হিটলার ক্যু করে ব্রাভারিয়া দখলের চেষ্টা করে, সেই সময় যখন জার্মানির কমিউনিস্টরা পার্লামেন্টের ভিতরে ও বাইরে যথেষ্ট ক্ষমতাশালী ছিল। পরবর্তীতে হিটলার ফিরত যায় সাংবিধানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, জাতিবিদ্বেষ ও কমিউনিস্ট বিরোধী সন্ত্রাসের ভিত্তিতে রাইখস্ট্যাগ (সেই সময়ের পার্লামেন্ট) দখল করে বুর্জোয়া অংশের সমর্থনে। ভারতবর্ষে হিন্দু ফ্যাসিস্টদের একই ধরণের উত্থান ও ক্ষমতাদখলের প্যাটার্ন লক্ষ করা যায়। বিজেপির পিতৃ সংগঠন আরএসএস এই দেশের বুর্জোয়া গণতন্ত্রে বিন্দুমাত্র আস্থা রাখেনি কখনও, ভারতীয় সংবিধানে তাদের কোনো সমর্থন নেই, তবুও ক্ষমতা দখল করতে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে চমৎকার ভাবে ব্যবহার করল। বুর্জোয়া সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সহায়ক, কিন্তু শ্রেণি অবস্থানের কারণে কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের উপযোগী নয়।

    সিপিএমের বিগত কয়েক দশকের প্রবল নির্বাচনমুখিনতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? একটি কমিউনিস্ট পার্টি যদি ধার কমে যাওয়া একটি ভোঁতা অস্ত্র (এখানে সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ) ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে যদি ক্রমাগত সমাজ বিপ্লবের বুলি আউড়ে যায়, একটি কায়েমি স্বার্থ রক্ষাকারী ব্যবস্থার মধ্যে জনতাকে ও জনতার সংগ্রামকে ঠেলতে চায়, শ্রেণি শোষণের যন্ত্র বুর্জোয়া গণতন্ত্রে মানুষকে মোহগ্রস্ত করার দায়িত্ব পালন করে চলে এখনও, তাহলে বলতে হয় সিপিএম বা সিপিআই শাসকশ্রেণির, বুর্জোয়া রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কাজ করছে।

    ভারতের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থা ভারতের শাসক শ্রেণির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারতবর্ষকে দাবি করার ক্ষেত্রে এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মহিমামণ্ডিত রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। সরকারবিরোধী রাগ ক্ষোভ বা বিদ্রোহের বহি:প্রকাশের রূপ হিসাবে ভোটদানকে অত্যন্ত পবিত্র, জনগণের ক্ষমতার রূপ হিসাবে দেখাবার চেষ্টা করা হয়। যদিও ভোটদানের মুহূর্তটুকু বাদ দিয়ে বৃহৎ জনগণকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শামিল করার কোনও উদ্যোগ কোনওদিন ভারত রাষ্ট্রের ছিল বলে জানা নেই। ভোট দানের পরমুহূর্ত থেকে শাসক শ্রেণির রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের (নাগরিকদের) বিচ্ছিন্নতা শুরু হয় - পরবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা পর্যন্ত তাই চলে, মাঝের সময়টুকু শাসক শ্রেণির সাথে মানুষের ছায়াযুদ্ধের পালা – সে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক হোক বা কৃষক ভাগচাষি বা ছাপোষা কেরানি, রাষ্ট্র সকল অংশের বিরুদ্ধে অদৃশ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ। নির্বাচিত সরকার তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে যা যা লেখা থাকে তার ঠিক বিপরীত কাজগুলি করে, আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে সাম্রাজ্যবাদী, সামন্তবাদী ও কর্পোরেট স্বার্থে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। লক্ষ্য করবেন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরে মোদীর ক্যাবিনেটে যে সকল বিল পাস হয়েছে, সেগুলির সিংহভাগ কংগ্রেসের আমলে তৈরি। নয়া উদারীকরণ হল ১৯৯১ সালে কংগ্রেসের আমলে, ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় এসে একটা মন্ত্রকই তৈরি করে ফেলল, যার নাম ছিল বিকেন্দ্রিকরণ মন্ত্রক, যে মন্ত্রকের কাজ ছিল বেছে বেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলিকে বিক্রির ব্যবস্থা করা। নয়া উদারীকরণের শেষ পর্যায়ে আজ কৃষিবিল পাস হচ্ছে, শিক্ষা বিল, শ্রম আইন বিল লাগু হচ্ছে, কংগ্রেস আজ মিউ মিউ করছে সেসবের বিরুদ্ধে – মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকার এই কৃষি থেকে শিক্ষায় এই সব সংস্কারের প্রস্তাব ছিল ইউ পি এ সরকারের।

    উপরোক্ত রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক দ্বিচারিতা, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ইত্যাদি কোনো অজানা বিষয় নয়, দিস্তে দিস্তে লেখা হয়েছে এই সব নিয়ে, তা সত্ত্বেও নির্বাচনের সময়ে এই সর্বভারতীয় দল বা বিশেষ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলিকে বেছে নেওয়াটা আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়, কারণ 'সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থা'' এই রাজনৈতিক দলগুলির ক্লেদত্রুটি থেকে দূরে, পবিত্রভাবে আরাধ্য ও স্বতন্ত্র, গণতন্ত্রের পরমপীঠ। ভাবুন, একটা সিস্টেমের কলকব্জা সব গোলমেলে, কিন্তু সিস্টেম নাকি ঠিক! প্রায় দেবত্বের পর্যায়ে চলে যাওয়া নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঘিরে ভক্তির ভাবাবেগ আরও বেশি করে ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সন্দেহ জাগায়।

    ভোটপন্থী নকশালরা বলেন পরিস্থিতি পাল্টেছে, সত্তরের ভোট বয়কট আজ অপ্রাসঙ্গিক। একজন বরিষ্ঠ নকশাল নেতা বুঝিয়ে ছিলেন, ভারতবর্ষের মানুষ ভোটের দিন সেজেগুজে ভোট দিতে যান, এতটাই গভীরে ঢুকে আছে নির্বাচনী চেতনা। একথা অনস্বীকার্য যে ভোট নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়, তা চোখে লাগার মত। আবার সেই উন্মাদনার একঘেয়ে বাৎসরিক পুনরাবৃত্তিও তার অন্ত:সারশূন্যতাকে প্রকাশ করে - মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, বিজ্ঞাপন, কোটি কোটি টাকার প্রচার, হেলিকপ্টারের ধুলো মিলে যে আয়োজন তা মানুষকে বিস্মিত ও আগ্রহী করে তুলবেই, আইপিএল যেই ভাবে মানুষকে টানে। এসবের সঙ্গে মানুষের বিপ্লবী রাজনৈতিক সংগ্রামের চেতনার সম্পর্ক আছে কিনা সে সম্বন্ধে নকশাল দাদা কিছু বলেননি. ভারতীয় গণতন্ত্রের চৌহদ্দির মধ্যে তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক কার্যক্রর্মকে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন, ফলে চৌহদ্দির বাইরের প্রশ্নগুলিকে তাঁরা এড়িয়ে যান।

    মানুষ কেন ভোট দেয়? নব্বই কোটি ভোটারের দেশে এ প্রশ্নের অন্তত এক কোটি আলাদা উত্তর পাওয়া যাবে। বছর পাঁচেক আগে চমকে দিয়েছিলেন একজন রেলের হকার, বলেছিলেন ভোট না দিলে ভোটার কার্ড ভ্যালিড থাকবে না. পরবর্তীতে জানতে পারি এইরকম অদ্ভুত গুজব গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত, এমনকি শহরেও। ভোটার কার্ড ভ্যালিড না-থাকাটা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এক দু:স্বপ্নের ব্যাপার। যে কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে ভোটার কার্ড থাকাটা সাধারণ মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজন। নিচের তলার মানুষের মধ্যে এইরকম রাজনৈতিক গুজব ছাড়াও অসংখ্য ফ্যাক্টর রয়েছে যা সাধারণ মানুষকে ভোটের বুথে যেতে বাধ্য করে – খতিয়ে দেখলে আন্দাজ করা যায় সেই ফ্যাক্টরগুলি আদ্যৌ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মধ্যে পড়ে না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা রকম সামাজিক প্রকল্প রয়েছ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য (দলিত, আদিবাসী, অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল অংশ)। প্রকল্পগুলি অবশ্যই সামাজিক সেফটি ভালভ, চরম সামাজিক অশান্তি, খাদ্য দাঙ্গা, ভয়াবহ বেকারিত্বর সমস্যা ঠেকিয়ে রাখতে এই রাষ্ট্রীয় প্রকল্পগুলি চালু রাখতেই হয়, এবং এমন ভাবে চালু রাখতে হয় যাতে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বিন্দু মাত্র ব্যাহত না হয়, সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণ পরিপূর্ণ ভাবে বজায় থাকে। রাষ্ট্রীয় সামাজিক প্রকল্প ও সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে কোথাও কোনোদিন শ্রেণিশোষণের অবসান হয়নি, সমষ্টি স্তরে সোশ্যাল আপওয়ার্ড মোবিলিটি হয়নি (দলিত, আদিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রকট উদাহরণ) কিন্তু সামাজিক ক্ষোভকে দান খয়রাতির মাধ্যমে প্রশমিত করার চেষ্টা করেছে শাসকশ্রেণি। মজার ব্যাপার হল, এই রাষ্ট্রীয় খররাতিও এমনি এমনি মেলে না, ক্ষমতাসীন শাসক দল বা ক্ষমতাদখলে আগ্রহী বিরোধীদলের প্রতি ভোট আনুগত্যের বিনিময় মূল্যে প্রকল্পের সুবিধা মেলে। গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে প্রবল ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র. যদি বর্তমান তৃণমূল সরকারের রাজ্যপাট পরিচালনার বিষয়টি দেখা যায়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলা-নির্ভরতা প্রবল ভাবে নজরে আসবে। শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায় বিডিও স্তর পর্যন্ত আমলাদের চেনেন, একের পর এক প্রকল্প রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছেন, বিডিওদের দায়িত্ব হচ্ছে সেইসব প্রকল্পে প্রান্তিক মানুষদের নথিভুক্ত করা, আর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কাজ হচ্ছে সেই প্রকল্পের টাকা থেকে কাটমানি খাওয়া, বা প্রকল্প পাইয়ে দেবার বিনিময়ে ভোট নিশ্চিন্ত করা। তৃণমূল বাদ দিন, যে কোনও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কার্যকারিতার ধরন এইরকমই- আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক শাসক দল, পুলিশের সম্মিলিত নজরদারির মধ্যে গোটা ব্যবস্থাটি কাজ করে, একটি অতি কঠোরভাব নিয়িন্ত্রিত শাসন ব্যবস্থা, যাকে গণতন্ত্র বলে বড়াই করা হয়। এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর নেই, নীতিনির্ধারণের কোনো ভূমিকা নেই, অংশগ্রহণ ওই ভোট দেবার সময়টুকু ছাড়া শূন্য।

    শাসক কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্র নীতিসমূহের সক্রিয় বিরুদ্ধতা করলে কী ঘটে? এক কথায় ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় আক্রমণ জনগণের উপরে নেমে আসে। সাম্রাজ্যবাদের কথায় ওঠবোস করা ভারতরাষ্ট্র একের পর এক জনবিরোধী নীতি নিয়েছে, কোম্পানির স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ, মাইনিং আইন পরিবর্তন, শ্রম আইন থেকে কৃষিবিল তার উদাহরণ। সেই আন্দোলনগুলিকে নির্মম প্রক্রিয়ায় দমন করা হয়েছে উন্নয়নের নামে, সব সরকারের আমলে। ভারতীয় সংবিধানে মিটিং মিছিল ও মতপ্রকাশের অধিকার আছে, বিরোধিতার অধিকার আছে, কিন্তু মজার ব্যপার হল থানার দারোগাও ১৪৪ ধারা জারি করে সেই সব অধিকার কেড়ে নিতে পারে। সংবিধান নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে আবার সংবিধান সংশোধনের নামে সেগুলি কেড়ে নেবার ব্যবস্থাও রয়েছে। আফস্পার মত দমনমূলক আইন যখন তখন প্রয়োগ করে এক একটি বিক্ষুব্ধ প্রদেশকে চুপ করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সংবিধানেই রয়েছে। কোনও ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দলকে দেখেছেন ভয়াবহ দমনমুলক আইনগুলির বিলোপের দাবি নিয়ে সংসদীয় লড়াই করেছে? যাঁরা এই সব দাবি নিয়ে বিন্দুমাত্রও লড়াই করেছেন তাঁরা কস্মিনকালেও ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।

    নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলির দুর্নীতি ও অসভ্যতা নিয়ে তিতিবিরক্ত মানুষের ক্ষোভবিক্ষোভ ধারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের তরফে ‘নোটা’র অপশন রাখা হয়েছে – নোটায় ভোট দেবার অর্থ কাউকেই নির্বাচিত করার যোগ্য মনে করছেন না ভোটাররা। ধারাবাহিক আইনি লড়াই ও নাগরিক আন্দোলনের ফলে নোটার অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে ২০০৯ সালে, এবং ২০১৩ সাল থেকে এর প্রয়োগ শুরু হয়। বহুক্ষেত্রেই ‘নোটা’র শতকরা পরিমাণ বিপুল সংখ্যক মানুষের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি অনাস্থা প্রদর্শনের নিদর্শক। প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন কি সংসদীয় কাঠামোর অভ্যন্তরে কোনও পরিবর্তন করাচ্ছে নাকি গণতান্ত্রিক উদারতার মুখোশ পরে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভকে আত্মসাৎ করে নিচ্ছে ‘নোটা’? আইনত নোটার নির্বাচনী মূল্য নেই, নোটার শতকরা পরিমাণ সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীর পরিমাণের চেয়ে বেশি হলেও সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রের কেটে দেওয়া গণ্ডির মধ্যে ক্ষোভবিক্ষোভ উগরে দেওয়ার অঞ্চল হল ‘নোটা’, যা কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক নয়। উল্টোদিকে নির্বাচন বয়কটের স্লোগান সক্রিয় ও বিপদজনক, গণতান্ত্রিক বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসে। নির্বাচন বয়কট অনেক সময়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনতার মধ্যে উঠে আসে, রাস্তা হয়নি বলে বা বিদ্যুৎ আসেনি বলে মানুষ আঞ্চলিক ভাবে বয়কটের ডাক দেন। সংবাদমাধ্যমে খবর হয়, আমলাতান্ত্রিক আধিকারিক-নেতা-মন্ত্রীরা ছুটে আসেন, তড়িঘড়ি ক্ষোভ বিক্ষোভ মেরামতের চেষ্টা করা হয় - কারণটা হচ্ছে এই বয়কটের ডাক ছোঁয়াচে। এই বয়কটের ডাক স্বতঃস্ফূর্ত না হয়ে যদি সংগঠিত হয়, কাশ্মীর বা মণিপুরের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকামী সংগঠনের পক্ষ থেকে হয়, মাওবাদী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে হয়, সেই মুহূর্তে পরিস্থিতি ভিন্ন হয়ে যায়, পুলিশ, মিলিটারি, আধা সামরিক বাহিনী নামে ভোট করাতে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট লহমায় পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। বয়কটপন্থীদের নির্বিঘ্নে প্রচার করতে দেবার গণতান্ত্রিক অধিকার কি সংসদীয় গণতন্ত্র অনুমোদন করে?

    বস্তুত ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রটাই উপর থেকে চাপানো। কোনো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের সংসদ প্রতিষ্ঠা হয়নি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি। ঠগ জাতীয়তাবাদী ব্রাহ্মণ্যবাদী জমিদার কংগ্রেসিরা ব্রিটিশদের সাথে একপ্রকার চুক্তি করে, ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনটিকে প্রায় অবিকৃত রেখে ঔপনিবেশিক জমানার আইনগুলিকে বহাল রেখেছিলেন। এমনকি সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয় যা সংবিধানের প্রগতিশীল অংশ, সেটিও ঔপনিবেশিক আমলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব খারাপ কিছু নয়, সেরকম কিছু হলে সেই বিপ্লব সনাতন ভারতীয় মূল্যবোধের ঘেঁটি ধরে নাড়িয়ে দিত, জাতপাতভিত্তিক শ্রমবিভাজন সামাজিক বিভাজন বুর্জোয়ারা পাত্তা দিত না, মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে গৃহপরিচারিক/ গৃহপরিচারিকা রাখার অভ্যাস ছুটে যেত।

    ঔপনিবেশিক শাসকের দেওয়া গনতন্ত্রের পিটুলিগোলা জল খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা সংসদপন্থীদের বর্তমানে হাল খারাপ করে দিয়েছে হিন্দুত্বের রাজনীতি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে হিন্দুত্বের পরিভাষায় কথা বলতে বাধ্য করেছে, নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকেও গোশালা খুলবার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হনুমান চালিশা পড়তে হয়, রাহুল গান্ধীকে পৈতে দেখাতে হয়, সিপিএমকে দিল্লির দাঙ্গায় বিজেপি-আরএসএসের পাশাপাশি এসআইও আর জামাত ই উলেমা হিন্দ-কে দায়ী করতে হয়! ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতি আগে দুর্নীতি, মিথ্যাচার, দালালির আখড়া ছিল, এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে খোলাখুলি ধর্মীয় লুচ্চামি, হিন্দুত্বের প্রতি আনুগত্য. আরএসএসের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সফল হয়েছে, মোহন ভাগবত তো বলেই দিয়েছে যে বিজেপি ক্ষমতায় না থাকুক, হিন্দুত্ব যে সর্বভারতীয় নির্বাচনী অ্যজেন্ডা হয়ে উঠেছে এটাই তাদের সাফল্য. ভারতীয় গণতন্ত্রের ফানুস ফাটিয়ে দিয়েছেন মোহন ভাগবতরা, গণতান্ত্রিক সাংসদীয় পথ ব্যবহার করে। মোহন ভাগবতরা অবশ্য এই জায়গায় আসতে পারত না যদি না তাদের পিছনে সাম্রাজ্যবাদের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকত - বৃহৎ পুঁজি তাদের নিজস্ব স্বার্থে, পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে আরএসএস-এর মতাদর্শকে বা আরএসএসের মত ফ্যাসিবাদী দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শগুলিকে সমর্থন জুগিয়েই চলেছে, পশ্চিমের দেশগুলিতে যথেষ্ট উদাহরণ বর্তমান।

    পশ্চিমবঙ্গে কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচন আসছে, এবং আবার এই নির্বাচনকে ঘিরে নানা আশা আশঙ্কার দ্বন্দ্ব চলেছে। ভারতীয় কমিউনিস্টদের মক্কা বাংলায় বিজেপি আর এস এস ক্ষমতা দখল করবে কিনা সেটা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। আবার মমতার অপশাসন সরিয়ে সংকল্পে সুদৃঢ় শাসকের দাবিও উঠেছে। এই সুশাসন, অপশাসন, গণতন্ত্র, জনতার রায় ইত্যাদি শব্দগুলি নির্বাচনী ফলাফল বেরানোর পরেই অন্য রূপ নেবে, ঘোড়া কেনাবেচার খেলায় পরিণত হবে, শাসকরা কর্পোরেট শিল্পপতিদের স্বার্থরক্ষায় মনোনিবেশ করবেন। বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে জয়লাভ করে, রাজনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতির আরো খানিক অবক্ষয় ঘটবে।

    তবে অবক্ষয়েরও একটা শেষ থাকে - ইতিহাসের আস্তাকুঁড় বলে একটা বিষয় থাকে। সেই আস্তাকুঁড়ে অনেক রাজাগজা স্থান পেয়েছেন, হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টরাও সেখানেই যাবে। নির্বাচনের ভড়ং দিয়ে সেটা হবে না, নির্বাচন ব্যবস্থাটাই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের অনূকুলে। পাঞ্জাবের কৃষক আন্দোলন কিছুটা হলেও মোদি-অমিত শাহের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার পথ নিয়ে। এ পথেই ক্রমমুক্তি আসতে পারে, এ পথে লড়ে যাওয়া ছাড়া, লড়াইটাকে শক্তিশালী করা ছাড়া উপায় নেই।



    অভিজ্ঞান তথ্যচিত্র নির্মাতা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৩২০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arghya Chowdhury | 2409:4060:210e:4d88:3d9:d3a7:6711:***:*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১৬101431
  • কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা রকম সামাজিক প্রকল্প রয়েছ সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য (দলিত, আদিবাসী, অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল অংশ)। প্রকল্পগুলি অবশ্যই সামাজিক সেফটি ভালভ, চরম সামাজিক অশান্তি, খাদ্য দাঙ্গা, ভয়াবহ বেকারিত্বর সমস্যা ঠেকিয়ে রাখতে এই রাষ্ট্রীয় প্রকল্পগুলি চালু রাখতেই হয়, এবং এমন ভাবে চালু রাখতে হয় যাতে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বিন্দু মাত্র ব্যাহত না হয়, সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণ পরিপূর্ণ ভাবে বজায় থাকে।


    চতুর্থ কারিগরি বিপ্লব নিয়ে তোমাদের অবস্থান ❓ যে ভাবে অটোমেশন চলছে তার সেভটি ভাল্ব হিসেবে অনেক দেশেই ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম শুরু হয়েছে। ভারতেও হবে। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর তৎকালীন বেকারত্বের হার কি হবে? এমনকী তোমরাও যদি ক্ষমতায় আসো, সেই পদ্ধতি ই নেবে

  • Arghya Chowdhury | 2409:4060:210e:4d88:3d9:d3a7:6711:***:*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১৭101432
  • The first decree of the commune, therefore, was the suppression of the standing army, and the substitution for it of the armed people'। বুর্জোয়া পার্লামেন্ট থেকে শাসক প্রতিনিধিদের টেনে নামাতে প্রথমে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের স্টেট মেশিনারিকে (পুলিশ, সামরিক স্থায়ী বাহিনী) বিলোপ করার প্রস্তাব রাখলেন, কমিউনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা বাতিল ও তাদের বেতন শ্রমিকের মজুরির সমান রাখার কথা বললেন, বুর্জোয়া আমলাতন্ত্রকে 'রাষ্ট্রীয় পরজীবী বাহিনী' ঘোষণা করে এদেরও বিলোপ চাইলেন, এবং এসবের মাধ্যমে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বদলে সর্বহারার গণতন্ত্রের মুল সূত্র হাজির করলেন (দি সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স দ্রষ্টব্য)। এসব কথা আমাদের বর্তমান বামপন্থীদের সংসদে কখনও বলতে শুনেছেন?


    চীন বা সোভিয়েত এ এরম কিছু হয়েছে কি? সোভিয়েত বিলুপ্ত আর চীন ও যত তাড়াতাড়ি ভাঙে, তত ভালো।

  • Ranjan Roy | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৪৪101434
  • উক্ত প্রবন্ধটি হতাশ করল । মনে হয় সত্তরের দশকে লেখা কোন প্রবন্ধ পড়ছি । সেই জার্গন, সেই গোলগোল কথা।


      আমার মত নির্বোধের দুটো প্রশ্নঃ


    ১ স্টেট এন্ড রেভোলুশ্ণ এবং মার্ক্সের পারি কমিউনের কথা মাথায় রেখে জানতে চাইছি সোভিয়েত রাষ্ট্র ১৯১৯ থেকে ১৯৫৭ পর্য্যন্ত দীর্ঘ সময়ে কি মার্ক্স লেনিন কথিত পথে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে দুর্বল হয়েছে ? " withering away' তো দূর কী বাত! নাকি ক্রমশঃ আরও দৃঢ় আরও কেন্দ্রীকৃত ক্ষমতার স্তম্ভ হয়েছে?


      ২ "বৃহৎ পুঁজি তাদের নিজস্ব স্বার্থে, পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কারণে আরএসএস-এর মতাদর্শকে বা আরএসএসের মত ফ্যাসিবাদী দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শগুলিকে সমর্থন জুগিয়েই চলেছে"।


    --একটু বুঝিয়ে দেবেন পুঁজিবাদের বর্তমান আভ্যন্তরীণ সংকটটি ঠিক কী ? এবং মনমোহন সিঙয়ের নিও-লিব্যারাল ইকনমিক পলিসিতে ওদের কী এমন অসুবিধে হচ্ছিল যে আজ আর এস এসকে আনতে হচ্ছে?

  • Ranjan Roy | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৫১101435
  • আর একটি কথা। 


    অভিজ্ঞানের মনে পড়ছে কি যে সেই একই লেনিন স্তলিপিন প্রতিক্রিয়ার সময় ডুমাতে অংশগ্রহণ করতে বলেছিলেন এবং নির্বাচন বয়কটের সমর্থকদের বিপ্লবী না বলে শিশুসুলভ চপলতা ( অ্যান ইনফান্টাইল ডিসঅর্ডার)  আখ্যা দিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন?


    আজ কি আমরা বিপ্লবী আন্দোলনের জোয়ার দেখতে পাচ্ছি?

  • santosh banerjee | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৩৬101436
  • ""বিপ্লবী আন্দোলনের জোয়ার"" .......দেখতে পাচ্ছি না।..কারণ .. আমাদের দেখতে দেয়া হয় না ।..সুদূর কোনো গ্রামে ।.কোনো জঙ্গলে ।..কোনো মুফফসল ক্ষেত্রে ওরা দানা বাঁধছে ।..মরছে ।।আবার বেঁচে উঠছে ।..মিডিয়া ।..বাজারি পত্রিকা।।.মন  কি বাত ।.কোনো কিছুতেই এরা দৃশ্যমান নয় ।।.তবু আছে ।...ওরা আছে ।...বিদ্রোহের শমী বৃক্ষে অস্ত্র খুঁজছে ওরা !!!!কাব্য করছি না।.. আসল কথা বললাম !!!!

  • dc | 2401:4900:33b9:f736:d9d7:44e1:19f7:***:*** | ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১৮101437
  • আমার ভোট বয়কটে কোন আপত্তি নেই। এমনিতেও অনেক নির্বাচনেই ভোট দিই নি স্রেফ ল্যাদ খেয়ে, লম্বা লাইনে দাড়াতে ইচ্ছে করে নি বলে। তবে তামিল নাড়ুতে, বা চেন্নাইতে ভোট প্রতি দু থেকে আড়াই হাজার টাকা দেয়, সেটা একটা ভালো ইনসেনটিভ। আর কিছু না হোক এক বোতল বাকার্ডি ব্ল্যাকের পয়সা তো উঠে আসে! আমার সোজা  কথা, পয়সা পেলে ভোট দেবো।  

  • Ranjan Roy | ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৮:২৫101440
  • ঠাকুমার গান মনে পড়ল:


    "সেকী তোমার মত আমার মত রামার মত শ্যামার মত, 


    ডালাকুলো ধামার মত,  পথেঘাটে দেখতে পাবে"!


    তবু আছে , ওরা আছে! খালি  z আনতি পারো না,


    জোয়ার আসলে টের পাওয়া যায় না?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন