এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • তোমার পিঠের কুঁজে বাংলা অক্ষরের সামান্য আহার্য জল

    সুমেরু মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১১ মার্চ ২০১২ | ১৪৭১ বার পঠিত
  • লেখাটি পড়ার আগে লেখকের এই লেখাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। এরা একেকটি পর্ব না হলেও, কোথাও তো যোগ আছেই।

    কোন দূর কালে, এক দূর দেশে,
    একদিন ফুলেরা অনেক ফোটে
    গাঢ়তম গন্ধ নিয়ে ফোটে
    এমন বোল আসে আম গাছে-
    পাতারা ঢাকা পড়ে যায়।
    খুব জোছনা আসে।
    আকাশে আঁটে না আর- এতো জোছনা!
    গন্ধরাজ ও বেলির ঝাড় তখন নিয়ে নেয়
    বাড়তি জোছনাটুকু
    ফুল হয়ে যায় সেই জোছনা-
    গন্ধরাজ ফুল- ফিকফিক বেলী-
    ধুম মেঘ করে সেইখানে,
    শুধু সেইখানে ঝাঁকে ঝাঁকে ভাসে গজারের পোনা-
    তুর তুর তুর।
    ঘাসেরা অনেক বড়ো সেই দেশে,
    সাদা মেঘ ছুঁয়ে ফেলা বড়ো।


    ( যখন ঘাসেরা আমার চেয়ে বড়ো- বইএর ব্লার্ব/ আকিমুন রহমান/ অঙ্কুর প্রকাশনী/২০০৮)

    ব্রহ্মপুত্র ধরে আমরা চলব, এমনটাই কথা গাইবান্ধা থেকে চলতে চলতে চিলমারিতে সামান্য রাত্রিবাস, আবার ভাসতে ভাসতে মানুষ মারার চর ছুঁইয়ে পৌঁছে যাব রৌমারি। রাতটুকু থেকে আবার ব্রহ্মপুত্র, আবার ভোর আর নৌকা। মধ্যাহ্নে পৌঁছে যাওয়া আরমারি, যেখানে কোন কাঁটাতার নেই। পরিকল্পনা সর্বদা সার্থক হয় না। সে যাত্রায় আমাদের আরমারি যাওয়া হয়নি। বহ্মপুত্রে ভাসতে শুরু করা ইস্তক বোঝা যেতে থাকে আমরা কোথাও একটা পৌঁছাব ঠিক, কিন্তু কতদিনে আর কোথায় তা বলা আমাদের সাধ্য ছিল না। কলম্বাস হওয়ার দায় আমাদের নেই কিন্তু চারপাশে ঘাসে ঢাকা সাদা বালির চরগুলির আন্তরিকতায় আমরা নামি এবং তা বারেবারেই। ঘুরে বেড়াই সেইসব দেশে যেখানে কোন ঝান্ডা পোঁতা নেই আর ঘাসেরা অনেক বড়ো সেই দেশে, সাদা মেঘ ছুঁয়ে ফেলা বড়। ঠিক যেন একেকটি বিশাল কাছিমের পিঠ। সবুজের আঁকিবুকি সে পিঠ জুড়ে, কোথাও নানান ঘাস, কোথাও রাবন লতা, ঝুমকো লতায়, যুক্তি গাছে। ছোট ছোট ঝোপ ঝাড়, আয়োজন বড় পরিপাটি। আহা কত চেনা–অচেনা গাছ লতা আর ফুল সে যে কী মায়াময়, কী তার আলো ক্যামেরাও বুঝি হার মানে। বটচারাও মত যুক্তি পাতার ডগটা অশ্বত্থের। ঝুমকো ঝুমকো সবুজ রঙের ফুল ঠিক যেন ঝাড়বাতিগুলি সারসার। অত ঝাড়বাতি চোখের সামনে ঝুলতে দেখলে এমনিতেই ঢাকের শব্দ ভেসে আসে। দৃশ্যপট জুড়ে জুড়ে যায়। শুরু হয় উৎসব।

    আমরা জলে পা ডুবিয়ে বসি। আমরা আলকুশি গাছের তীব্র বেগুনী ফুল হাতে রগড়ে হাত মেহেন্দি করি, নোয়া লতার ডাল ভেঙ্গে বালিতে লিখি নাম, আর লজ্জাবতির ঝোপ সরিয়ে খোলা ভেঙে বার করে আনি কাঁচফল, ঠিক তিনটি করে সাদা মুক্তদানা আর কালো ফোঁটা আঁকা চোখের মত, একেকটি খোলায় ঠিক তিনটি, যেন ব্যাটারা জানত ঠিক আমরা তিনজনেই পা দেব সেখানে আজ। নৌকার মাঝি আমাদের পাগলামি দেখে তাড়া দেয়, যেতে হবে দূর বহুদূর। তাকে ভুলনো হয় নানা প্রশ্ন করে, মিলিয়ে দেখতে হবে না আমাদের কাঁটাঝোপে মোড়া আর ধুলোমাখা আগাছা ভরা ছেলেবেলাটাকে। আলকুশিকে তারা বলে নেউস। বেশ শক্ত, ঝোপে রাজার মত সবাইকে কাটিয়ে এগিয়ে সে চড়ে বসে ঝোপের মাথায়, শিরোমণি। সে গাছ হিসাবে লতা কিন্তু কোন আকর্ষ বা স্প্রিং নেই তার। অপরাজিতার মত অভিজাত ফুল ও ফল। ফলগুলি রোমে ঢাকা, যেন এক একটি শুয়োপোঁকা। হাতে লাগলে চুলকায় শোনার পর থেকে আমাদেরও হাত চুলকাতে থাকে। চুলকানোর কারনেই গ্রামের মানুষ পছন্দ করে না, তাই অভিমান করে সে আজ এই নির্বাসনে। সে এমন ভাবেই প্রকৃতির পাঠশালায় নুরুল মিয়া হয়ে ওঠে আমাদের শিক্ষক, বলে যেতে থাকে নেউস থেকে কী কী ওষুধ-বিষুধ হয়। আমরা নেহাতই আমনযোগী, তাই অনেক অনেক রাতে যখন চিলমারি বন্দরে আমাদের সোনার তরীটি ভেড়ে কোন লন্ঠনই আর জেগে নেই।

    আবার সকালে ব্রহ্মপুত্র, নদী, নৌকা আর আমরা বিভূতিভূষণ। তখন ফিরছে ডিঙি নৌকারা রাতের মৎসাভিযান শেষে। কারুবা হাতে আর একটু সময় আছে, চরে নৌকা লাগিয়ে জাল সাফ করে। মাছ শুকতে দেয় কেউ কেউ। কয়েকজন এসেছে ঘাস কেটে নিতে যেখানে বসতি সেখানে তার দাম, সে বেচে দুটি চাল কিনবে হয়ত। কুশল বিনিময় ও তামাক সেবনের পর কত গল্প শুনি, কোন চর ভাঙল, কে হারাল বউ বাচ্চা, গাই বাছুর, কেই বা নাম দিল এই নতুন দ্বীপের। কেউ ঠিক চিনে চিনে তুলে এনেছে হাড়জোড়া লতা প্রায় একই দেখতে বাজবরন বা তেশিরার কাঁটা বা নিছক ফনি মনসার ঝোপ থেকে নিজগুণে চিনে, কেউটের হাত থেকে বাঁচিয়ে, সে সব সহজ কথা নয়। সবুজ বা সামান্য লালচে চার শির আর ফেত্তির মত সব সাদা সুতো ছড়ানো সেই হাড়ভাঙা লতা এত্ত এত্ত যে, ভরে গেছে তার ছোট ডিঙি, আর তাড়াও আছে তার, দুই ঘন্টা দূরে কোন সুন্দর নামের গ্রামে আজ হাট, তাকে গিয়ে ডাক্তারখানা খুলে বসতে হবে, চিকিৎসকের একতা দায়িত্ব আছে না! আমরা ডিঙি আর ডাঙা ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে চলে আসি মানুষ মারার দ্বীপে। বসতি আছে এখানে, কিঞ্চিত চাষবাস, তবে এই বছর চরের কোন পাশ ভাঙবে সেটা জানা নেই কারো। কাজেই এন জিও ও দু-একটি ঝান্ডা লাগানো ঘর। নিয়মরক্ষা।

    সাত ভাঙির মায়ের গলায় গান শুনি, ভাঙ্গনের গান। আমরা নিজেদের মধ্যে তর্ক করি, ভাওয়াইয়া না চটকা সেটা, ততক্ষণে তিনি অন্য গান ধরেন, রাধারমন। সবই শুনে শুনে শেখা মায়ের কাছে, তিনি ছিলেন বারোভাঙির মা। সবাই নিরক্ষর, স্কুল-টুল নেই ঐ স্রেফ এন জিও আর পার্টি অফিস অর থেকেই যা জ্ঞান পাওয়া যায়, বিদ্যুত বা রেডিও এখান থেকে ৫ ঘন্টার পথ সেই চিলমারি। তাই বাবু-টাবু আসেন সরকারী বোটে। আমরাও বাবু-টাবুদের গান শুনি, বাবু-টাবুদের মত খাই দাই। ডাঁটি ভাঙ্গা কাপে থকথকে জেলি বা দইএর মত দৈখৈয়ে খাই। এরা বলে হুয়ের । বাবুরা শিখিয়েছে, দৈখৈয়ে। আমরা দেখি দদ গাছ। নদীর ধারে শীতলতায় কেমন তর করে বসতি পাকিয়েছে তারা। কমজোরী লতা, মাটিতে লতিয়ে চলে, তাই বোধ হয় একত্রিত। এদের পাতা ধুয়ে জলে ভিজিয়ে চটকালে লালচে ঘন থকথকে রস বার হয়, কিছুক্ষণ অন্ধকারে ঠান্ডায় রাখলে তা জমে যায় দৈ এর মত। একটু চিনি বা গুড় মিশিয়ে পাতলে দিব্যি খেতে, ম্যাজিক-ট্যাজিক যে রকমই হয় আর কী। আবার আমরা ব্রহ্মপুত্রে। ভাসতে থাকি, কত দ্বীপ, চর, অজানা তরু লতা ঝোপ ঝাড় পিছনে ফেলে,দ্রুত এগোতে থাকি। যেন বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের। পরদিন তখনো জানিনা আরমারির বদলে আমরা যাব মানকের চরে(মেনকার চর), নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে উঠিয়ে নেবে বি এস এফ শহিদুলকে, আমি আর কাশেম সারা বিডি আরের হেফাজতে, ধান নাড়ার সিংহাসনে বসে, মশাদের গুণকীর্তনে ধৌত হব, এমনই কপাল চারপাশে নিকষ অন্ধকার, সৌন্দর্য তাই অস্তমিত। এই লেখা পড়ার জন্য প্রিয় পাঠিকা আর বসে থাকার কারণ নেই, রোমহর্ষক কিছু ঘটলেও তা এই লেখায় নেই। বি এস এফ-বি ডি আরের কোন গাল গপ্পো নয় এটা, নিতান্তই আজ ধুলো পড়া কাঁটা, লতা ঝোপ ঝাড়, আগাছা নিয়ে লিখতে বসেছি, সেনারা যেমনটা সাধারণ মানুষকে মনে করে বলেই জনশ্রুতি।

    এই আমার রাংচিতের বেড়া, এই আমার রজনীগন্ধার ঝোপ
    এখানে রোদ্দুর আসে, প্রাতিদিন প্রথম রোদ্দুর
    এইখানে খেলা করে চড়াই-শালিখ।

    এসো, এই আমার ছেলে বয়সের ছবি, প্রথম চেয়ে দেখার চোখ
    এই আমার সর্বস্বজয়ের স্মৃতি, আমার ভুল-করা প্রেম,
    এখানে প্রত্যহ বৃষ্টিমাস, স্বপ্ন-ভাঙা ঘুম।

    এই দেখো, পুরোনো আর্সির কাচে জলছোপ
    আমার দিন-রাত্রির ছবি,
    এখানে শেওলা-মোড়া উঠোন,
    আমার ঈশ্বরের জন্মভূমি।


    ( একুশ বছর/ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা/ প্রমোদ বসু/ ১৯৮৮)

    ছোটবেলাকে এখন যেমনটা ভাবি তেমনটা ছিলনা মোটেই। সাইকেল পেয়েই রাজপুত্তুরের মত তাকে শাসন করেছি এমনটা নয়। বরং উল্টোটাই। আমার নুন-ছালের ওপর আমার চাইতে বেশি অধিকার ছিল সাইকেল আর পিচ রাস্তার। কানগুলি আঁটালুর, নাহ চুলে উকুন ছিলনা, ওগুলো পিটপিটে শয়তানদের হয়। খেলার মত মাঠ ছিল, লুকোনোর মত ঝোপ। তখন তো এত্তটা বড় হইনি তাই, সেগুলো সব ছিল বিশাল বিশাল। তবে সবই যে ঠিকঠাক জানতে হবে এমন কোন কথা নেই। আর দশটা বখাটে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে টইটই করে ঘুরতাম সে সত্তরের শেষ-আশির শুরু, মফস্বলের নামটি চুঁচুড়া। রান্নাবাটি থেকে শুরু করে লাললাঠির লাঠি খুঁজতে আমরা বীরপুরুষের মত জঙ্গলে ঢুকে কত বিচিত্র সব ফুল, ফল পাতা পেড়ে আনতাম। আমাদের সব থেকে সহায় ছিল সেই সব ঝোপ যেখানে, কাঁটা কম, ভাম বা বেজী নেই। বেজী থাকাটাই যে অধিক নিরাপদের কারণ হত সেই সম্পর্কে কোন আন্দাজ ছিল না। এক পাটি জুতো কুড়িয়েই বিহ্বল থাকতাম, সুতোর পেছনে যে সিন্ডারেলা থাকতে পারে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না। যেমন বহুদিন ধরেই চোতরা বা গুয়ে গাঁদাকে বিচুটি বলেই ধরে নিয়েছিলাম। সেই একরত্তি মফস্বলে এই গাছ ছিল বিস্তর, সারা বছর ফুলও হত অজস্র। সারা গায়ে ছোট ছোট কাঁটা, ডিমের মত পাতা, খাঁজকাটা, খসখসে। ফুল সব, ফোটে থোকায় থোকায়। গ্রাডিয়েন্ট দেওয়া সব রঙ, মানে মাল্টি শেডেড ইন সিঙ্গল থোকা। কখনো কমলা, পিঙ্ক বা সাদা, বাসন্তি, ফুল ধরেও অগুন্তি, সবুজ দানা দানা ফল, সে সব স্মৃতির মতই অনেক অনেক।

    দেওয়ানজি বাগানের বাড়িতে ছিল খাটা পাইখানা আর শ্যাওলা গিজিগিজে কলতলা। আহা কী আনন্দের সেই মখমল খচিত ওপেন এয়ার স্নানাগার। ভিজে অবস্থায় রোদ পড়ে কী সুন্দরই না দেখাত। সেইগুলো একমাত্র তোলা হত ঝুলনের সময়। অমূল্যদা এসে কোদালে বা খুরপিতে করে কেটে বসিয়ে দিতেন ইঁট পাতা পাহাড়ে। গুহায় থাকত বাঘ-সিঙ্ঘি, ঐ বনে থাকে বাঘ গাছে থাকে পাখি। অনেক সময় ঘাস শুদ্দু মাটির চাঙড় দিয়েও পাহাড় বানানো হত, অটমেটিক গাছ ও থাকত দু-একটা। এর মধ্যে থাকত ঝাঁটি গাছ, ঘেঁটু বা ভাটের চারা আর বন হাস্নুহানা। বা শিয়াকুলও থাকত। শিয়াকুল বা কাশখুলি ছিল বন কুল, বনকুল আরো মেলা রকমের আছে স্বয়ং বরিশালেই আমি ৫/৬ রকমের দেখেছি, শীতে পাকলে ভারি মিষ্টি, কিন্তু আকারে এট্টুস। ইয়া বড় বিচি তাতে, খুব পাখি আসত আর পিঁপড়ে লেগেই থাকত। ফুলগুলি মিনিয়েচার আকারে স্থলপদ্ম হয়ে গাছে ঝুলত, হ্যাঁ আমাদের পিচ্চি পাহাড়ের পিচ্চি গাছেও থাকত, পিঁপড়ে ও হলদে মথ সমেত। বন হাস্নুহানা কিন্তু হাস্নুহানার মত মেলা বড় নয়, ধুতুরার শেপে ন্যানো সাইজে থোকায় থোকায় সাদা ফুল হত, মনে হয় সারা বছর। রাতে ফুটত আর কেটে রাখলেই নেতিয়ে পড়ত। নজর করলে হালকা মিষ্টি গন্ধও পেতাম আমরা। ফল হত গোল গোল বেগুনী রঙের, বুলবুলি খেত মনে আছে, কেননা আমাদের এক বন্ধু সন্দীপ ( গোস্বামী )ওরফে গদুকে বুলবুলিকে নিয়ে খেপাতাম বিস্তর সে সময়, ওয়ার্ক এডুকেশন ক্লাসে, আজ মঙ্গলবার জঙ্গল সাফ করবার দিন, সেইদিনই সন্ধের টিউশনে দুইজনার দেখা হত।

    মাধুরী (পুং) এর নেতৃত্বে আমাদের সাফ করতে হত আগাছা। আমাদের স্কুলে ঘাসহীন খেচো ন্যাড়া মাঠ আর হুদো হুদো সব কৃষ্ণচুড়া-রাধাচুড়া, য়আগাছার জঙ্গল বলতে ড্রেনের ধারে আকন্দ দু-এক পিস। ধুতরো ও ফনি মনসা। গঙ্গার ধার-বরাবর যে আমাদের নীচু জমি তাতে ওয়ার্ক এডুকেশন ক্লাস ব্যতীত নামার যো ছিল না। আমাদের দপ্তরী বাদলদা সেখানে কলা, কচু এই সব চাষ করত। সে ক্লাস শেষের ঘন্টা বাজানোর জন্য ঘড়ির থেকে বেশি নজর রাখত আমাদের উপর। সেখানে ছিল ওবিশ্য সাফ করা যুগগী বন হাস্নুহানা, ঝাঁটিফুল, আকন্দ ও আঁককুলি গাছ। আঁককুলি কাঁটা ওয়ালা গাছ, কুন্দের মত ফুল হত, দুটো দুটো করে ফল হত, পাকলে লাল হলদে রঙ ধরত। সেগুলি খেতাম আমারা, টক টক করমচার মত। ঘেঁটু বা ভাট ছিল দেওয়াল ঘেসে। লাল বৃতিতে সাদা হয়ে ফুটে থাকত সারা বসন্ত কাল। এর সঙ্গে সকলেরই কম-বেশি পরিচয় আছে, রেল লাইন বা পুকুর পাড়ে এখনও দেখতে পাই গাদা গাদা এর ঐ শালা হতচ্ছাড়া পারথেনিয়ামের দল কারশেডে, সব খেয়ে নিলে গো। এগুলিই আমাদের কাজ ছিল, ভোঁতা কোদাল তা দিয়ে কেটে ফেলার। প্রোমোটার রাজ আসার আগেই সরকার বাহাদুরের বদন্যতায় শিক্ষামূলক অভিযানই হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা, তাই নিয়ে কাউকে কোনদিনই প্রতিবাদ করতে শুনিনি। ঐ সেই আজিজুল হক, কবে কে জেল ভেঙে পালাল, আর ট্রাম ভাড়া ৫ পয়সার বৃদ্ধিতে গল্প লিখলে রাজনৈতিক সচেতনতা প্রকাশ পায়-তা পাক, কে আর কবে রাঙাচিতা, শিয়াকুল, ঘেঁটু আর আঁককুলি চলে গেল এই শ্রীমান কলকাতা থেকে বলে পা ছড়িয়ে কেঁদেছে বা বৈঁচি, ওলট চণ্ডাল পুরোপুরি হাপিস এপারের গোটা বাংলা থেকেই তা নেহাতই রোমান্টিক চর্চা বলেই সবার অনুমান। সেই যে যেবার ঝড়ে ভেঙে পড়ল সাতবাড়ি মসজিদের চিয়ন গাছ বা যেবার বানে ভেসে গেল গোটা একটা ঞ্ছনা-মানুষিঞ্জ উত্তরা চর তা নিছকই গ্রাম্যতা, কোন বছর বলতো ঠিক এমার্জেন্সি? না-মানুষি ইতিহাস আসলে কোন ইতিহাসই নয়।

    যেসব বিকেলে ফড়িঙেরা উড়ে বেড়ায়, সেই বিকেলগুলি হাওয়ার।
    হাওয়াগুলি টুং টাং শব্দের।
    টুং টাং শব্দ গুলি গীর্জার।
    গীর্জাগুলি পাথরের, অনেক পুরনো পাথরের।
    পুরনো পাথরগুলি শ্যাওলা আর নতুন ঘাসের।
    ঘাসগুলি ফড়িঙের।

    যেসব বিকেলে ফড়িঙেরা ধরা পড়ে, সেই বিকেলগুলি আত্মহত্যাপ্রবণ।


    (আত্মহত্যাপ্রবণ কিছু লেখা/ ঋতম সেন/পৃ-২০/ পরাবাস্তবিক আত্মহত্যাপ্রবণ কিছু লেখা ও আড়াল/ হুডিনির তাঁবু)

    একের পর এক বাসাবদলে সবুজ, মাঠ ঝোপঝাড় কিছুই কমেনি মার জীবন থকে গোটা ছেলেবেলায়, কেবল পাল্টেছে। কয়েকদিনের বিষন্নতা কাটিয়ে আবার মেতে উঠেছি নতুন খেলায়। বয়েসের সঙ্গে বদলে গেছে সেই সব খেলাও। আর সম্পর্কের বাঁধন ত তখন জোরদার। গরমের লম্বা ছুটি বা শীতে, মাসির বাড়ি বা মামা বাড়ি। কখনো ইছামতির ধারে বনগাঁ, চাকদা, পলাশির আমবাগানে বা হরিণঘাটায়। তুতো দাদা দিদি সবাই বড়, বদমায়েসিতেও দড়। গাছে চড়ে ফল পাড়া বা খেঁজুর রসখাওয়া নিছকই দস্যিপনা, তা কখনই চুরি নয়। এমনটাই জানতাম। এমন কী পুকুরে ছিপ ফেলাও। আরে বাবা পুকুর তো আর চুরি করছি না! পুকুর পাড়ে আগাছারা ঠিক বেড়ে উঠত গুড গার্লের মতন। ধুলো বালি কম। চাপ ছিল স্বর্ণলতার। অসামতার ঝোপ বেশ ঘন থাকলেও গাছটা লতানে ছিল। আমরা হিসি-টিসির সময় ঐ আড়ালটাই বেশী পছন্দ করতাম। হালকা বেগুনী-সাদা ফুল, প্রচুর ফুটত থোকায় থোকায়। ফুল শুকোলে ফল থেকে সাদা রোয়া বাতাস ময় উড়ে বেরাত। আমরা ফু দিয়ে দিয়ে সেগুলো আরো উপরে তুলে দিতাম। শিমুলের তুলো বীজ ফাটার আগে এ তো আমাদের লম্বা রিহার্সাল। ওলট চণ্ডাল লতানে গাছ, শুকিয়ে গেলেও আবার হত প্রত্যেক বর্ষায়। লতানে গাছ পুকুর পাড়ে নিশিন্দা বা চিয়ন গাছে পেঁচিয়ে ঝুলে থাকত। নটরাজের মত ঢেঊ খেলানো ফুল। লালাভ হলুদ ফুল। লম্বা লম্বা পুংকেশর বেরিয়ে থাকত, তাই দিয়ে প্যাঁচ প্যাঁচ খেলা হত। রামদাঁতন ফুল ছিল বুড়ির চুলের মত, পুকুর পাড়ের লতানে গাছ, আহা হরেন দাসের উডকাট হয়ে থাকত গোটা পুকুরটা, রোদ্দুর আর ছায়ার মাস্টার স্ট্রোকে। সবুজ রঙের ফুল কী দারুন যে লাগত শিয়ালকাঁটার ঝোপে হলুদ ফুলের সঙ্গে এরা দুলে দুলে খেলা করত। প্রচুর ফড়িং আসত, দাদারা ফড়িং ধরে ল্যাজে গিঁট মেরে হাতে ধরিয়ে দিত দাদাদের মতই। মারা যাওয়া পর্যন্ত সে চেষ্টা করত অবিরত, সবুজ থোকা ফুলগুলিতে ফিরে যাওয়ার। আমরা কাঁটা ঝোপে যেতে চাই না বারবার, টেনে আনতে চাইতাম পুকুর ধারের কচু বা ঘ্যাঁটকোল পাতার দিকে, কদাচ নিমরাজি হয়ে তারা বসত গিয়ে ছিপের মাথায়, কী পেত সেখানে কে জানে হয়ত মৃত্যুকেই আরেকটু কাছ থেকে দেখতে চাইত সে।

    আবার ধূলোর ভিতর দিয়ে যাই, যেতে যেতে দেখি
    রমেলারা থানকুনি পাতার বাতাস নিচ্ছে গার্হস্থ শরীরে,
    উবু হয়ে ঢেলে দিচ্ছে সমস্ত ধর্ম, হাতের আঙুল থেকে
    ঝরে পড়ছে ঘাসের নিবিড় দুধ- এমন সময় ওমা
    কে যেন ডাকল আমাকে, এই আমাকেই!

    ইতিমধ্যে সমস্ত সবুজ খেয়েছে রৌদ্রবাঘ, বাতাসের
    অবিবাহী গর্ভ ছিঁড়ে ধূলো উঠল বিপুল সন্ত্রাসে,
    বন্দি আমি শুনি আমকে ডাকছে কেউ, ডেকে
    নিয়ে যাচ্ছে জোর করে রমেলাদের থানকুনি ধর্মের আসরে।


    ( থানকুনি ধর্মের আসরে{অংশ}/পৃ২৩/ আম্রকানন থেকে মাভৈঞ্চ কলের গান/ শামসেত তাবরেজী/ জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ/ ২০০৬)

    আগাছাকে আমাদের ঠিক আগাছা বলে কখনই মনে হয়নি, উপযোগীতা আর উপকারীতার একটা লম্বা বন সব বাড়িতেই চাউর ছিল। আশৈশব জেনে এসেছি তুলসি শিবলিঙ্গ আর চন্দনবাটার চাইতে সর্দির সঙ্গেই ভাল যায়। এটা ভিজিয়ে, ওটা বেটে আর সেটা সিদ্ধ করে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মায়েদের অন্ত ছিল না, ঠাকুমারা অবশ্য খুব মন দিয়ে তদারক করতেন। এমনকি লতা, কাঁটা ঝোপ সবই আমরা খেয়ে দেখার চেষ্টা করেছে, মাটির নিচে কয়লা বা অন্য আকরিক সন্ধান করার মতই স্বাভাবিক তা, নতুন কিছু নয় বরঞ্চ পেটের তাগিদ বড় তাগিদ। বৈঁচি, খামালু, চুপড়ি আলু, গোয়ালে লতা, হরেক কুল, কুলে খাড়া, বাকসপাতা, থানকুনি, পিপুল। যুক্তি ফুল হলুদ ফুল, লতানে গাছে আকন্দের মত ফুল, অনেকেই খেয়েছেন। চোদ্দ শাকের শাক-ভাজায় সর্বত্র পড়তে দেখেছি। কচি ধুঁধুল বেশ মিষ্টি, ঝিঙের থেকেও মিষ্টি এমনটাই ছিল প্রবচন, আদা-জিরেবাটার মাছের ঝোলে বেশ সুস্বাদু অথচ একই রকম দেখতে তিতপল্লা বেশ তিতো তো বউমার পরে নির্দেশ আসবে সেটা শুক্তুনিতে দিতে। তখন ভাবতাম এত চেনেই বা কী করে, সব নির্ঘাত বনমানুষ। তেলাকুচো কাঁচায় মানুষ খায় আর পাকলে টিয়া, সবাই খেয়ে থাকে তা বলে বন্য কুন্দ্রী, বহুলপ্রচলিত সব ঝোপে এখনো দেখা যায়, হাওয়া টাওয়া দিলে দোলে এখনও। কিন্তু এই যে আমাদের ডিগ্রি-টিগ্রি দিয়ে আয়ুর্বেদ চর্চা ঝোপ-ঝাড়গুলোর কারই বা আয়ু বাড়াতে পাড়ল। বাড়ি বাড়ি বাড়ি। ঝোপ কমে যাচ্ছে। পাখি, পতঙ্গ, ভাম, বনবিড়াল, শিয়াল সবই অবশ্য। ঝোপ-ঝাড়ের অভরন্য বলতে এখন বোটানিক্যাল গার্ডেন বা মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল। পুজো-আচ্চায় সেইভাবে বনফুলের ( ডাক্তার বলাই নয় বলাই বাহুল্য) চর্চা হয়নি। কাটোয়ার কাছে এক গ্রামে এখনো শুনেছি বনফুলের মালা গাঁথা হয়, বোকার মত প্রশ্ন করে লাভ কী? গাঁথা যে হয়, সে নেহাত কোন গুরুদেবের ব্যক্তিগত অভিলাষে হয়ে থাকবে। সবেতেই গুরুদের গুরুত্ব আছে।

    আগুণ পথকে আঁকো। পথ যার একমাত্র নেশা
    তোমাকে চুমুক দিয়ে দাহপর্বে চিরকাল ক্ষত
    নিজেকে গুঁড়িয়ে ফেলে ভুলে যায় রক্ষার কবচ-কুন্ডল
    সেও দগ্ধ তবু তুমি যাবতীয় নির্বাপন ঘিরে
    সাজাও শিমুলতলা ঝরোঝরো অগ্নিরেণু
    কৃষ্ণচুড়ার নীচে চন্দ্রদোষে সমস্ত সন্ত্রাসমাখা
    পাগলের পথ চলো পায়ে পায়ে নিষেধ বাড়িতে

    বালিপথ পাথগুল্ম মরুদ্যান ছেড়ে হাহাকার রাত্রিদিন
    তোমার পিঠের কুঁজে বাংলা অক্ষরের সামান্য আহার্য জল
    অতীতের দিকে দীর্ঘ এক সরীসৃপ রেখা
    বাক্যবন্ধে মরুরঙ জীবিত ক্যাকটাস
    একমাত্র রৌদ্রস্নান, অসহ্য আলোর ওপরে আলো
    সে চাইছে মেঘ বাস্প সে চাইছে ঝুলকালি যা হোক মাখিয়ে
    নিজেকে আড়াল করে
    সে লিখছে নিজের ভেতরে পথ
    রোদমাখা খোলা খাম ফেলে সে দেখছে ছোট ছায়া
    মধ্যাহ্নে গুটিয়ে আছে
    সে লিখছে তাঁবুর জীবন ছেড়ে ছায়া... ছায়ামাখা স্বকীয় হনন


    ( বাংলা অক্ষরের সামান্য আহার্য জল/ কেবিনম্যানের চিঠি/ পৃ-৪৪/মিহির বন্দ্যোপাধ্যায়/ গাঙচিল ২০০৬)

    ঘুরে ঘুরে বেড়াতে থাকলে দেখাটা হয়ে ওঠে সুন্দর। বঙ্কিমের মাকাল ফল দেখেছি ঝুলে থাকে বরিশাল, নোয়াখালি, দক্ষিন বাংলাদেশে, আমাদের ছেলেবেলায় কখনও দেখিনি তা। লাল চকচকে পাকা পাকা মাকাল ফলের লতানে গাছ জঙ্গল সাজিয়ে রাখে ঠিক অলঙ্কার পরানোর মতন। ছাগল ঝুঁটিও এমন গাছ অসামলতা বা রাবনলতার সঙ্গেও ঝোপ তৈরি করে, আর তা দেখতে সত্যিই সুন্দর, এখনো কিছু দেখা যায় এই পোড়া দেশে মালখানগিরি-টিরি। আর যদি হেঁটে যাও ইউনানি বা হিমছড়ি, যাদের ক্যাকটাস বলে ভাবছ তারা আঁচে শয়ে শয়ে। শান্তিনিকেতনের শ্যামলী থেকে লালবাঁধের দিকে যেতে সেই মস্ত মস্ত কেয়া গাছ , সর্বরীদার বাড়ির সামনে, এই দেখলাম সেদিন কলাভবনের জীজা যখন উড়ে বেড়াচ্ছিল তার চারপাশে নাচ করছিল সেইসব কেয়া ঝোপ, সেই মধ্য রাত্রির কুয়াশায়। আর সবুজের ভেতর যাত্রার মত নরসিংদির গ্রামের এ রাস্তা সে রাস্তা, খালের ধার বরাবর মনে হয় সার সার মাচায় কত কী না ফলে রয়েছে। চম্‌ৎকার সব বেড়া। সেবার আমি চারুকলার মুনের সঙ্গে, একবারই গেছি তার দেশের বাড়ি- লোকে যা যা গল্প করে দেশ নিয়ে সব-, যেমন সবজি বাগান মাচা, চালে লাউমাচা, কুমড়ো তেমন সব নাম না জানা গাছে লতানে লতানে কাঁটা গাছ, থোকা থোকা ফুল, বাড়ির সীমানায় কি সুন্দর সব বেড়া। গুলঞ্চ এদের মধ্যে সব থেকে কমন। বেড়ায় ফেমাস অবশ্যি বিক্রমপুর। সেখানে নানান পাতাবাহারের সঙ্গে কাঁটা গাছ মিশিয়ে ডিজাইন, ঐ গান-টান যেমন হয়। কাঁটা ও কাঁটা গাছ তুমি তাহলে ফেলনা নও। এ সব ঝোপের মধ্যে সব চেয়ে শক্ত পোক্ত লতানে কাঁটা গাছ হচ্ছে বেত, ঝোপের রাজা বেত আর বনের রাজা শিয়াল, এর ব্যবহার সন্মন্ধে সকলেই উত্তম-মধ্যম জানেন, অনেক রকম স্মাইলিও। তবে বেতের ফল শুকনো খোলার মধ্যের লালচে শাস ছোটরা মজা করেই খায়, পাখি-টাখি তাড়িয়ে, যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে। আর বাংলাদেশের মানুষ চাইলে ঢাকা শহরে বসে তা পায়। বৈঁচি, কুচ আরো কত্ত বনজ ফল ঝুড়ি করে নিয়ে নিয়ে হাঁকে ফেরিওয়ালা, আমরা লেবু কামরাঙ্গি মরিচ তো আছেই। সে সবের পরিমান দেখে ঝোপঝাড়ের পরিমাণটা তাও আন্দাজ করা যায়। হ্যাঁ, ওসব দেশে জন্মানো কবি-টবিদের লেখা পড়েও আন্দাজ হয়, যদিও তা খুবই গড়িত কাজ, মানে ভরসা করাটা।

    পা টেনে টেনে ক্লান্ত সারাদিন শেষে
    সামনে একটা শুকনো দেহের নদী
    তারপর ইতিহাসের সর্বশেষ সতীদাহ মাঠ।

    নরসুন্দার পাড়ে বহু পুরানো গ্রাম
    জংলা টংলা সরিয়ে এখনো ভ্যাপসা নৈ:শব্দে
    কয়েক ঘরের লোকালয়
    কেবলই বলে না না না না না।

    পড়ো পড়ো বাড়ি, জম্বুরা গাছ অবনত টকফলে
    নিয়তির অনুরোধে দীঘি আজ মজা বিষপুকুর
    বড় ভিটায় ছোটছোট ঘর
    দিনের বেলায়ই রাত দেখে যারা রোজ
    মস্ত উঠান, লম্বা অন্ধকার
    একটি বালিকা ঝাঁটায় রৌদ্র তুলে
    এইবাড়িটার অসুখ সারাতে রত।

    আমরা কোন খবর দিয়ে আসি নাই
    তবু কাকাবাবু তার হুকাটা নামায়ে
    কিছুক্ষণ বসে থাকেন উঠোনটার দিকে তাকায়ে বলেন:
    গান শুনতে এসেছেন... মজা পুকুরে মাকড়সার বুদবুদি...
    গান তো সব আপনাদের ঘরে... এ বাড়িতে গৌরিকে উঠান ঝাঁট দিতে হয়
    ... খোলের কিরন চটা, তাছাড়া হাঁপানি হার্মনিয়ামের...
    বলে আবার জম্বুরা গাছের দিকে তাকান।

    অবশেষে সে গাইতে এল
    খালি পায়ে হাটতে হাটতে ছড়িয়ে যাওয়া পা দুটা
    কোন রকমে লুকিয়ে রেখে বসে
    হার্মনিয়ামে শ্যামলা হাওয়া দিল।

    ফেরার সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা
    ঘন্টা বাজো বাজো। গৌরি বিদায় দেবে
    আমাদের এক প্রবীণ কবি বললো:
    তোমার সবই তো ভাল শুধু উচ্চারণটা ঠিক করা চাই।
    অপমান ভাসল ওর চোখে
    শক্ত হাতে বিদায় ভা-ররী হয়
    কবি তো কী হয়েছে, এক্কেবারে মাথা কেটে নেবে?
    থামরে কুলাঙ্গার এখুণি তুই আত্মহত্যা কর!
    আমারা দাঁড়ায়ে যাই।
    দাঁড়াও গৌরি! তোমাকে অপমানের ফল
    ভুলের কবি চিত্ত থেকে কেমন করে প্রায়শ্চিত্ত করে, দেখো!

    ঠিক হল কেদো পুকুর পাড়ে ইঁটের উপর মাথা রাখবে বৃদ্ধ কবি
    আমাদেরই কেউ আরেকটা ইঁটে যতক্ষণে পারে
    গুড়াগুড়া করে উড়িয়ে দেবে ওর নিরেট মাথাটা।

    গৌরি তখন বলে:
    চাইনা যে একা যেতে দিতে কবিকে কোথাও, অপমানে
    সাজাও চিতা, সাথে যাব আমি।


            (সঙ্গীত পরিবারে সতীদাহ{অংশ}/ আমার শ্বাসমূল/ পৃ-১২/ কাজল শাহনেওয়াজ/ফ্রি স্ট্রীট স্কুল প্রকাশনী/ ২০০৭)

    আর বেশী কিছু লেখার নেই। সবই শেষ হয়। এখন মৃত্যু পরবর্তী শূন্যতা। উপরের কবিতাটিতে গৌরির স্থানে উপরের লেখায় বর্ণিত যে কোন আগাছা আর বৃদ্ধ কবির স্থানে হে প্রাজ্ঞ পাঠিকা নিজের নামটি উচ্চারণ করুন কেবল। অত:পর এই ভাবে শেষ হচ্ছে আমাদের ঝোপঝাড়,বুনোফুল আর আগাছার বৃত্তান্ত, এবারের মতন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১১ মার্চ ২০১২ | ১৪৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Su | ***:*** | ০৭ মে ২০১২ ০৪:১৬90304
  • ভীষন ভালো লাগলো
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন