চরিত্রলিপি
বিরাট রাজা – বিরাটগড়ের রাজা
সোহাগ – মহারানী/ বড় রানী
মারিয়া – ২য় রানী
রুমকি – তৃতীয় রানী
সালমা – ছোট রানী
বিশাল- – মহারানীর ছেলে
ইস্কাপন – মারিয়ার ছেলে
টিঙ্কা- – সালমার ছেলে
পাভেল – রুমার ছেলে
দেবশঙ্কর (হালদার Type Surname ) – মহামন্ত্রী
সীমান্তবাবা – অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন সাধু
জিরো – ড্রাগনদের মৃত্যুর দেবতা (যমের মত)
ইউনিকর্ণ – জিরোদের রাজা/ দেবাদিদেব ড্রাগন
চারু, জীজা ও ন্যানা – দেবতা জিরোর তিন স্ত্রী
ময়না – কুচক্রী/মহারানীর খাস বাঁদী
গোলাপ – খোজা, মেয়েদের পোশাক পরা মারিয়ার আপন ভৃত্য
পামেলা – এক জন গণিকা
আলফা, বিটা, গামা, ডেলটা, পাই, সাই, সিগমা, থিটা, পাঁচু ও কেষ্টা – দশজন বামন সমুদ্রবিজ্ঞানী/গবেষক
সূচনা দৃশ্য-
স্ক্যান প্লেটের মধ্যে জাপানী কমিক চরিত্র নারোটোর মাথা। সেটা বাঁই বাঁই করে ঘুরতে থাকে শব্দ করে। বিপ বিপ করে বিভিন্ন গোলাপী আলো।
স্ক্রিনে সাদা হাতের লেখা ফুটে ওঠে – ছোটবেলাতেই নারোটোর মাথার মধ্যে অমিত সম্ভাবনার দৈত্যকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
লেখা রঙ বদলে গোলাপী হয়ে যায়। স্ক্যান প্লেট থেকে দৃশ্যপট গঠিত হয়। ঢাকা শহর। শাহবাগ চত্বর, উপর থেকে। ট্রাফিক জ্যাম। মঞ্চে বক্তৃতা। ফাঁসি চাই স্লোগান। প্রচুর রিক্সা। ভিড়। নারোটোকে দেখা যায় রিক্সা চালিয়ে সাঁই সাঁই করে চলেছে। স্ক্রিনে নারোটোর রিক্সা বাদে বাকি সব সাদা কালো হয়ে যায়। নারোটো-নারোটো উচ্ছ্বাস ভেসে আসে।
দেওয়ালে লেখা হচ্ছে – মারব এখানে, লাশ পড়বে পাকিস্থানে।
গলি থেকে দৃষ্টি ঘুরে আকাশের দিকে যায়। ফ্রেম জুড়ে অর্ধেক আকাশ, তার মধ্যে হাউই এর মত উড়ে যায় একটা মানুষ। পার্ক সার্কাস অঞ্চলের টালির খুপরি-খুপরি বাড়ি। টালির চালের ওপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলেছে স্পাইডারম্যান, মেগা সিরিয়ালের টাইটেল এসে দলা পাকায় শব্দে। সেখান থেকে স্পাইডারম্যান লাফ মারে, নীচ দিয়ে ট্রেন চলে যায়। সে শহিদ মিনারে এসে পড়ে। নীচে ব্রিগেড লালে লাল, ছেয়ে আছে মানুষ আর লাল পতাকায়। হুইল চেয়ারে বসে এক বৃদ্ধ বক্তৃতা দিচ্ছেন, গোঙানির মত। ভাষা রাশিয়ান।
আমরা কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখি কোন শব্দ শুনি না, কাঁচের ভতরের এফেক্টটা পটে কোন মানুষ নেই, মিস্টার ইন্ডিয়ার রিভার্স। মাইক, হুইল চেয়ার ফ্ল্যাগ সবই পাই মানুষ অদৃশ্য। বক্তা শ্রোতা জনশূন্য। কাঁচের গায়ে লেখা হয়, লিপস্টিক দিয়ে।
লেখা – মোট টেস্ট রান – ১৫,৯২১
লেখা শেষ হতেই কাঁচের ওপাশ ভ্যানিশ। একটা ক্রিকেট বল এসে কাঁচটা ভেঙে দেয়।
বিস্তীর্ণ বালুচরে অরণ্যদেব একটা মশারির মধ্যে শুয়ে দুইপাশে শুয়ে দুই নারী। বিধবা বলে অনুমান হয় পোশাকের সাদায়। তারা দুই ফালি তরমুজ খাইয়ে দিচ্ছে অরণ্যদেবকে। দূরে জাহাজের ভোঁ শোনা যায়। অরণ্যদেব মশারি তুলে বেরিয়ে এসে হাত নাড়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে। সমুদ্রের বুকে। সমুদ্রের বিন্দু এক ক্রমশ বড় হয় জেট স্কিয়িং এ ডায়না পামার। সমুদ্র বা গাড়ির কোন শব্দ নেই। একদম চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় হুস করে। একটা লেখা ফুটে ওঠে বালুচরে।
লেখা – একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, কন্যার দোহাই দিয়ে। এ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি...
সমুদ্রতটের উপর কাঠি দিয়ে লেখা। লম্বা। ঢেউ প্রায় ছুঁই ছুঁই। লেখার উপর বৃষ্টি নামে। ঝাপসা দৃশ্যপট।
জল স্থির হলে বোঝা যায় রঙ্গিন মাছেদের খেলা। অ্যাক্যুরিয়ামের মধ্যে হাঁটু অবধি ডোবানো দুটি শীর্ণ পা। হারবার্ট সাদা ওভারকোট পরে বসে আছে পা ঢুবিয়ে। কিসিং ফিস মাসাজ নিচ্ছে। কাঁধে একটা কাক। কাকটা মুখ খুল্লেই, বল হরি হরি বোল, শোনা যাচ্ছে রিং টোনের মত। তার মাথার উপর দৃষ্টি গেলে দেখা যায় ফ্রেমে আটকানো সার সার বিগতদিনের নায়িকাদের ছবি- মাধুরী, দিব্যা ভারতি, মীনাকুমারী, মধুবালা। শ্রীদেবী, রেখা, সুচিত্রা সেন ও অন্যান্য। আরও উপরে গ্লো-সাইন – মৃত যৌবনের সহিত কথপোকথন।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি। এক চিলতে মাঠে স্পোর্টস। মাইকে ঘোষণা হচ্ছে। নীল সাদা ডুরে ব্লাউজ-স্কার্টের মেয়েরা ঘিরে ধরেছে বেগুনী শার্ট পরা সুনীল গাঙ্গুলিকে। তিনি অটোগ্রাফ দিতে দিতে দৃষ্টি মেয়েদের পেছন দিয়ে ঘুরে এলে দেখা যায় অটোগ্রাফ দিচ্ছেন সুনীলের পরিবর্তে সৃজিত মুখার্জি; একই বেগুনী শার্ট পরা। আস্তে আস্তে পিছিয়ে লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় রজনীকান্ত হলুদ লুঙ্গি পরে ইজিচেয়ারে শুয়ে পা দোলাচ্ছে, পায়ে লাল জুতো। রিডিং রুমে ইজিচেয়ারে রজনীকান্ত মোটা সানগ্লাস চোখে পা দুলিয়েই যাচ্ছে। বই বিভিন্ন তাক থেকে বেরোচ্ছে, পর্দার বিভিন্ন তাক থেকে আবার সেগুলি ঢুকে যাচ্ছে। পর্দা জোড়া সানগ্লাসের উপর কাফকা, বোর্হস, হুমায়ুন আহমেদ, ক্যামু, মিলান কুন্দেরা, জীবনানন্দ, বোর্দলেয়র, স্বপনকুমার, দস্তয়েভস্কি, মাও দে জঙ, মার্কেজ, কোয়েৎজি, জয়েস, পামুক। নামগুলি দ্রুত আসে ও দ্রুত মিলিয়ে যায়। ট্রামের ঘন্টি শোনা যায়।
উপর থেকে দেখা, কলকাতা মহানগর। বিবিধ কেবলের তারের মধ্যে দিয়ে দেখা।
এক মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মানুষ প্রবাহমান। ভিস্তিওয়ালা ধুইয়ে দিচ্ছে রক্ত।
লেখা ফুটে ওঠে, রক্ত দিয়ে লেখা, আবার আসিব ফিরে।
জলে ধুয়ে যায় তা। এখন জনশূন্য রাস্তা। কোলাহলের শব্দ মিলিয়ে যায়। দৃষ্টি দ্রুত নেমে আসতে থাকে।
কালো ট্রাম লাইনে লেখা ফুটে ওঠে, চুন দিয়ে লেখা –
কল্পনা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সিনেমা ক্যান্সারের কারণ।
Imagination is injurious to helth. Cinema causes canser.
কুয়োর মধ্যে বালতি পড়ার আওয়াজ হয়। পর্দা কালো হয়ে পড়ে।
কালো পর্দায় সাদা লেখায় ফুটে ওঠে –
রূপকথা
শীর্ষ সঙ্গীত ‘প্রলয় আসছে’ শুরু হয়। একে একে সাদা ও কালোয় টাইটেল ভেসে আসে।
রচনা সূত্র
দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার/ গুলজার/ নীতিশ রায়
রচনা
সুমেরু মুখোপাধ্যায়
বাকি টাইটেল পরে আসবে।
দৃশ্য- ১
পাহাড়ের পাদদেশ, দিন।
পাহাড়ের কোলে গাছের ঝুলন্ত সিংহাসনরূপী দোলনায় মৃতপ্রায় মুমুর্ষু ড্রাগন রাজা শুয়ে। তার বয়েস হয়েছে। ততোধিক বৃদ্ধ চার-পাঁচজন তার শুশ্রষা করতে ব্যস্ত। গণৎকার আকাশের দিকে তাকিয়ে গণনা করে। জানা যায় ড্রাগন রাজ আর বেশিদিন নেই। হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। সবাই গাছে গাছে ঝুলতে থাকে। একটা গাছ ভেঙ্গে পড়ে। রাজার দোলনা প্রচণ্ড দুলতে থাকে, মনে হয় যে কোন মুহূর্তে সেটা ছিঁড়ে পড়বে। রাজা পাংশু মুখে তাদের ইষ্টদেবতা জিরোকে ডাকতে থাকে।
দৃশ্য- ২
মেঘের রাজ্য। দিন।
ড্রাগন দেবতা জিরোর চেহারা ফড়িং এর মত। সে মৃত্যুর দেবতা। বাঁচা মরা সব তার হাতে। তার চেহারার বেঢপ শুধু মাথার সংখ্যা ৬। সে মেঘের রাজ্যে সোনার পদ্মফুলের ওপর তিন স্ত্রী নিয়ে গল্প করছিল। ড্রাগন রাজত্ব ধংস হয়ে গেলে কেউ আর তাদের পুজো করবে না। তারাও সমান ভাবে বিপন্ন। ড্রাগনদের মত কেউ প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই সৌরজগতের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাদের স্বর্গের কয়েক লক্ষ সোনার পদ্ম ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। এর পর তাদের মহাশূন্যে ঝুলে থাকতে হবে।
দেখা যায় বিভিন্ন সোনার পদ্মের উপর বিভিন্ন দেবতা বসে। কারো ৪ টে মাথা আবার কারো ১০ টা। কেউ তানপুরা নিয়ে শরীর চর্চা করছে, কেউ চারটে হাতি নিয়ে জাগলিং করছে।
ড্রাগন রাজার আর্ত চিৎকার ভেসে আসে মহাশূন্য থেকে।
তানপুরা ও হাতিগুলি ছিটকে পড়ে মহাশূন্যে।
ভেসে এক নারীর ভয়ঙ্কর হাসি। সব কিছু কেঁপে ওঠে।
সোনার পদ্মফুলগুলো পাগলের মত দুলতে শুরু করে। দেবতা জিরোর এক স্ত্রী (কনিষ্ঠ স্ত্রী ন্যানা) ছিটকে ফুল থেকে নীচে পড়ে যায়। বাকিরা ফুলের পাপড়ি আঁকড়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে।
দৃশ্য- ৩
রাজপ্রাসাদের সভাকক্ষ। দিন।
রাজপ্রাসাদ। দাবার মত দেখতে সবুজ-মেরুন ছক কাটা বোর্ড। গুটিতে বিভিন্ন মহিলার আকৃতি। ‘বশ’ নামের এক খেলায় মত্ত রাজা ও মহামন্ত্রী। সন্তানহীনতা নিয়ে মন্ত্রীর কাছে দুঃখ করেন বৃদ্ধ রাজা। মন্ত্রী খেলায় মত্ত, সে সুর করে করে বশ-শ্লোক আউড়ে দান দেয়। রাজা আসন্ন হার দেখে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন।
মন্ত্রী রাজবৈদ্যকে হাঁক পাড়েন। দেখা যায় রাজবৈদ্য, দ্বাররক্ষী সবাই তাদের পাশ দিয়ে উড়ে উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সবাই চেঁচামেচি শুরু করে – বাঁচাও, বাঁচাও। ভূমিকম্প। মন্ত্রী বশ খেলায় মত্ত। রাজা তাকে কটাক্ষ করেন। রাজ্যের দিকে মন্ত্রীর হুঁশ নেই। রোজ একবার রাজাকে হারাতে পারলেই সুখ।
তাদের চারপাশে জিনিসপত্র উড়ে উড়ে চলে যেতে থাকে।
বশ খেলার গুটিগুলো নানা দিকে ছিটকে পড়ে। রাজা সেগুলো কুড়াতে থাকেন, মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে।
বশ খেলার বোর্ড উড়ে বেরিয়ে চলে যায়, মন্ত্রী তার পিছনে ধাওয়া করে।
দৃশ্য- টাইটেল
বাগানে গাছেরা দুলতে থাকে। ঝড় শুরু হয়। বাগানে নিজে দাঁড়িয়ে ফুলের পরিচর্যা করছিলেন ছোট রানী সালমা। ঝড়ে তার হাতে ডালিয়া ফুল ধরা থাকে কিন্তু গাছ সমেত টব উড়ে চলে যায়।
‘প্রলয় আসছে’ থিমের সংগীত *গানের বিষয়-ধংসের অনিবার্যতা* শুরু হয়। বাকী টাইটেল আসতে শুরু করে।
সালমাকে দেখা যায় বিভ্রান্ত হয়ে দৌড়াচ্ছে। তার প্রিয় গাছ, ফুলওয়ালা ডালিয়া গাছ ভেঙ্গে মাড়িয়ে সে দৌড়ায়।
সে যুবক মালির দেখা পেয়ে তার হাত ধরে দৌড়ায়।
কোথা থেকে একটা তরোয়াল উড়ে এসে যুবা মালির বুকে ঢুকে যায়।
সালমা থর থর করে কাঁপতে থাকে।
সে উলটো দিকে এবার দৌড় দেয়। বজ্র বিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়।
বশের বোর্ড উড়ে বেরিয়ে যায় বাগান দিয়ে। মন্ত্রী তার নীচে দৌড়ান। সালমার ডাকে ফিরেও তাকান না।
সখীদের নিয়ে দিঘীতে স্নান করছিল মারিয়া ও রুমকি। তাদের ও জামা-কাপড় উড়ে গেলে সখিরা সেগুলো ধরতে দৌড়ায়।
প্রবল ঝড়- বৃষ্টির মধ্যে মারিয়া ও রুমকি দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ক্রমশ জলস্তর বাড়তে থাকে। কোমর থেকে বাড়তে বাড়তে গলা অবধি জল উঠে আসে।
বিদ্যুৎ চমকায়।
গাছ ভেঙ্গে পড়ে।
সালমা ভাঙ্গা গাছ ডিঙ্গিয়ে এগোয়। হোঁচট খেয়ে পড়ে। আবার এগোয়। দেখা যায় সে একটা কবরখানায় এসে পৌঁছেছে।
ভূমিকম্পে কবরগুলিতে ফাটল ধরে। ভাঙ্গা কফিনের টুকরো, হাড়-গোড় চারপাশে ছিটিয়ে পড়ে থাকে।
সালমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
জলস্তর বাড়তে বাড়তে এক সময় মারিয়া ও রুমকি ডুবে যায়। তারা ডুব সাঁতার দিয়ে পাড়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে তলিয়ে যায়। জলের ভেতর তারা ক্রমশ ডুবে যেতে থাকে। ডুবতে ডুবতে দুজনে আলাদা হয়ে যায়। রুমকি জলের নিচে সন্ধান পায় এক স্বর্ণপুরীর। তবে সেখানে সবাই পাথর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কাউকেই সে ডেকে জাগাতে পারে না। সিংহাসনে বসে এক রানী। রানীর পাশে রাখা বিশাল ঘন্টায় সে পাথর দিয়ে আওয়াজ করলে সবাই জেগে ওঠে। রাজদরবার চালু হয়ে যায়। রক্ষীরা রুমকিকে ধরতে ছুটে আসে। রুমকি আবার তাড়াতাড়ি ঘন্টাটা বাজালে সবাই ফ্রিজ হয়ে যায়।
মারিয়া জলের তলায় এসে পৌঁছায় এক ছোট্ট জাহাজের কাছে। তার চারপাশে ১০ জন ডোয়ার্ফ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে গবেষণা করছে। জাহাজের গায়ে লেখা টাইটানিক দেখে সে খুব অবাক হয়। সে তাদের জিজ্ঞাসা করলে বোঝা যায় গবেষকরা তার ভাষা বুঝতে পারছে না।
একটি আয়নায় দেখা যায়- রুমকিকে আর সঙ্গে ক্ষুদ্র শ্যাওলা পড়া টাইটানিক ঘিরে দশজন বামন গবেষক। রাজপ্রাসাদের ছাদের ঘরে মহারানী প্রার্থনা করছে। ষড়ভুজাকৃতি অদ্ভূত ঘরে চেয়ার –টেবিল সব আয়না দিয়ে তৈরি। আরো অনেক নাম না জানা আসবাব, আয়না দিয়ে বানানো। মিউজিকের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলো পরিবর্তন হয়। মহারানী তার তর্জনী তুলে যে আয়নার দিকে নির্দেশ করেন সেটা শব্দ করে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়। একটি আয়নায় দেখায় গোরস্থানে হাড়ের বিছানায় শুয়ে সালমা। এক ঋষি তাকে ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করে তোলে। মহারানী আয়নায় তর্জনী নির্দেশ করলে তা ভেঙ্গে যায়।
একটি আয়নায় দেখা যায়, রুমকি একটি বিশাল মাছের পিঠে চেপে সমুদ্রের ভিতর চলেছে। অশান্ত সমুদ্র। বজ্র বিদ্যুত সহ বৃষ্টি হচ্ছে। রুমকি অকুতোভয়। মহারানী তর্জনী নির্দেশ করেন অমনি সেই আয়না ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
একটি আয়নায় দেখা যায় বশ বোর্ডের পেছন পেছন মন্ত্রীর দৌড়। রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন সভাগৃহ, বারান্দা সিঁড়ি পেরিয়ে সে এসে পৌঁছায় ষড়ভুজাকৃতি ঘরের সামনে। রানী একটি দেওয়ালে তর্জনী দেখালে পুরো দেওয়ালটাই ভেঙ্গে পড়ে। বশ খেলার বোর্ড সদ্য ভাঙ্গা জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে রানীর সামনে রাখা টেবিলে পাতা হয়ে যায়। মহামন্ত্রী থমকে ঘরের বাইরে থেকে সব দেখতে থাকেন।
মহারানী খালি হাত মুঠো করে বোর্ডের উপরে ছুঁড়ে দিলে ম্যাজিকের মত সব বশ খেলার গুটি চলে আসে। অদ্ভূত ব্যাপার বশ খেলার এই গুটিগুলির মুখাবয়ব পুরুষের। মন্ত্রী চমকে ওঠেন। মহারাণী অদৃশ্য সুতোর সাহায্যে যেন বশ খেলতে থাকেন। গুটিরা নিজের থেকে সরে সরে যায়।
টাইটেল এইখানে শেষ হয়। সঙ্গীত চলতে থাকে।
দৃশ্য- ৪
ছাদের ষড়ভুজাকৃতি ঘর। রাত।
মহারানী বশ খেলায় মত্ত। তার মুখে ক্রুরতা। ছন্দ কেটে বশ খেলার মন্ত্র বলে বলে অদৃশ্য ভাবে চাল দিতে থাকেন। আলো বদলায়। তার দেহের উপরিভাগ ক্রমশ ড্রাগনের মুখাবয়ব ধারণ করে। মহামন্ত্রী বিস্মিত। ড্রাগন রানী নিজেই নিজেকে হারিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন। বশ খেলার গুটিরা নিজেরাই বোর্ডের উপর চলতে থাকে।
আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। আরও জোরে বৃষ্টি নামে। রাজপ্রাসাদ বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। ছাদে দাঁড়িয়ে মহামন্ত্রীও ভিজতে থাকেন।
দৃশ্য- ৫
সীমান্তবাবার আশ্রম। ভোর।
ছোটরানী সালমার ঘুম ভাঙ্গে পর্ণকুটিরে। যে ঋষি সালমাকে উদ্ধার করেছিল গোরস্থান থেকে তাকে দেখা যায় আশ্রমের বাইরে ছাগলের বাচ্চার শুশ্রূষা করছেন কিছু পাতা খলে বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে। সালমার সঙ্গে সীমান্তবাবার কথোপকথনে তাদের পরিচয় জানা যায়। সীমান্তবাবা বলেন, রাজপরিবারের উপর এক অশুভ শক্তি ভর করে আছে, তাকে বিনাশ করতে পারে একমাত্র রাজার ঔরসজাত পুত্রসন্তান।
দৃশ্য- ৬
রাজপ্রাসাদের মূল সভাকক্ষ। দিন।
রাজা, মহামন্ত্রী ও রাজবৈদ্য পরামর্শরত। অন্যে সিংহাসনগুলি খালি। অন্য মন্ত্রী, সেনাপতি, গণৎকার, বিদূষক ছেড়ে চলে গেছেন বিরাটগড়, জানা যায় মহামন্ত্রী দেবশংকরের কথায়। রাজ বৈদ্য বলেন সবাই আসন্ন পতন অনুমান করে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে বিরাটগড়। রাজার দুশ্চিন্তা সন্তানের জন্য। বয়স হয়ে যাচ্ছে তার। একে একে ৪ জনকে বিয়ে করলেন তবুও সন্তানের মুখ দেখলেন না। শেষ আশা ছিল সালমা, তাও সে তিন দিন হল নিঁখোজ। সঙ্গে আরো দুই রানী। রাজবৈদ্য বলেন যেমন করে হোক সালমাকে খুঁজে বার করুন। সন্তান ধারণের পক্ষে সেই সর্বোত্তম।
দৃশ্য- ৭
সমুদ্রতট। দিন।
রুমকি পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছে দশজন বামন গবেষককে। রুমকি তাদেরকে বলে, রাজার কাছে তাকে পৌঁছে দিলে তাদের রাজা কী কী উপহার দেবেন। রুমকির পরিচয় জানা যায়, সে রাজার তৃতীয় স্ত্রী। রাজার পক্ষ থেকে সে নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেয়। জমি, বাড়ি, ধন-দৌলত সব। তারা জানতে চায়, রাজকন্যা আছে কী না। রুমকি জানায় দুঃখের কথা। রাজার কোন সন্তানাদি নেই। গবেষকেরা জানায় তাদের কথা। দীর্ঘদিন জলের তলায় রোদ-হাওয়া না পেয়ে বড় হয় নি। অথচ তাদের সকলেরই সখ তাদের সন্তান দীর্ঘাঙ্গী হবে।
দৃশ্য- ৮
পাহাড়ের ঢাল, ড্রাগন রাজের ডেরা। দিন।
গাছে ঝুলন্ত সিংহাসনে শুয়ে বৃদ্ধ ড্রাগন রাজ। সবাই তাদের দেবতা জিরোর জন্য প্রার্থনারত। গাছের আউটলাইন বরাবর আলোর বিভা ফুটে ওঠে। ডানাওয়ালা সাদা ঘোড়া করে দেবতা জিরো গাছতলায় উড়ে এসে দাঁড়ান (ইমেজ- প্রফেট/ জিব্রান)। প্রতিটা গাছ থেকে দোলনায় ঝুলতে ঝুলতে ড্রাগনেরা দেবতা জিরোকে অভ্যর্থনা জানায়।
দেবতা জিরো লাফ দিয়ে ঘোড়া থেকে নামেন।
তার পায়ের উপর সোনালী পদ্মফুল এসে পড়তে থাকে।
দেবতা জিরো আবার একটা লাফ মেরে ড্রাগন রাজার কাছে একটা ডালের উপর উঠে বসেন।
সবাই দেবতার কাছে অনুযোগ করতে থাকে তার কথামত ড্রাগন রাজকুমারীকে মানুষ বানিয়ে বিরাটগড়ের রাজার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু দশ বারোটা সন্তান দূরে থাক একটা বাচ্চাও তো জন্মাল না।এই ভাবে ড্রাগন বংশ শেষ হয়ে যাবে এটা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
দেবতা জিরো জানান, সময় হয়ে এসেছে। ড্রাগন রাজকুমারী বিরাটগড়ের মহারানী হয়েও ড্রাগন সত্তা বদলাতে পারছেন না। বারবার অশুভ শক্তির প্রয়োগ করছেন নিজের রাজ্যের উপর। রাজার উপর। অন্য রানীদের ওপর। এর জন্যে মানুষদের দেবতা তার উপর রুষ্ট। এটাই সন্তান বিলম্বের কারণ।
রাজা কথা দেন সন্তান ধারণের আগে সে আর এই অপবিদ্যা প্রয়োগ করবে না। বালিশের তলা থেকে একটা ক্রিস্টালের গোলক বের করে, তিনি মহারানীর নাম ধরে ডাকামাত্র, গোলকটিতে মহারানী এসে হাজির জয়।
তিনি তাকে সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলেন।
মহারানী তাকে কথা দেয়।
এবং আস্তে আস্তে গোলক থেকে তার বিম্ব মুছে যায়।
রাজা গোলক বালিশের নিচে ঢুকিয়ে দেখেন, দেবতা জিরোও অদৃশ্য হয়ে গেছেন। ডানাওয়ালা ঘোড়াটিও নেই।
সবাই দেবতা জিরোর নামে জয়ধ্বনি করে ওঠে।
দৃশ্য- ৯
বিরাটগড় বাজার। দিন।
বাজারে ঢেড়া পেটানো হয়। যে ছোট রানী সালমার সন্ধান দিতে পারবে তাকে দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে। সবাই ফিসফিস করতে থাকে দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ঠিক কত। কেউ বলে দশটা রাজপ্রাসাদের দাম। কেউ বলে পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী আরব/ আমেরিকা মহাদেশের দশ বছরের বাজেট।
দৃশ্য- ১০
মহারানীর শয়নকক্ষ। দিন।
মহারানীর খাসবাঁদি ময়না পায়ে সর মাখাচ্ছে মহারানীর। সে জিজ্ঞাসা করে সালমা কি সত্যি ফিরবে? অন্য রানীদের নিয়েও আলাপ হয়। মহারানী বালিশের নিচ থেকে ক্রিস্টাল বল বের করে তিনবার সালমার নাম করতেই গোলকের মধ্যে সালমাকে দেখা যায়। সে সীমান্তবাবার পিঠে দুর্গম পাহাড়ী পথ অতিক্রম করছে। ময়না উত্তেজিত। পরামর্শ দেয় ওই তো ওই তো মেরে দিন ওকে। সাধুরা অনেক অলৌকিক মন্ত্র জানে। ফিরে এলে কিন্তু বাচ্চা হওয়া আটকাতে পারবেন না।
রানী হাতের গোলকটা ঘোরাতেই দেখা যায় এক বিশাল অজগর সাপের বিম্ব সেই গোলকের মধ্যে।
দৃশ্য- ১১
দুর্গম পাহাড়ী রাস্তা। দিন।
এক বিশাল অজগর এসে পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে সীমান্তবাবার। সীমান্তবাবা সালমাকে পিঠ থেকে নামিয়ে বুনো লতার সাহাজ্যে কাবু করে ফেলে হিংস্র অজগরকে। গাছের সঙ্গে অজগরকে বেঁধে রেখে সালমাকে নিয়ে শুরু হয় পথ চলা। কখনো পিছন পিছন কখনো পিঠের উপরে তারা পার হয়ে যায় পাহাড়ী ঝরনা, ঝুলন্ত সেতু, দাঁতাল হাতির দঙ্গল।
দৃশ্য- ১২
মহারানীর শয়নকক্ষ। দিন।
ময়না ও মহারানী। দুইজনের চোখ ক্রিস্টাল বলের মধ্যে সালমার বিম্বে।
প্রতিবারই ময়নার মনে হয় এইবার ঠিক মারা যাবে সালমা। কিন্তু সীমান্তবাবার পরাক্রান্ত কৌশলে ঠিক বেঁচে যায় সে। হতাশা ছড়িয়ে পড়ে দুইজনার মধ্যেই। রাগে ক্রিস্টাল বল ছুঁড়ে মারেন মহারানী। সেটা গড়িয়ে গিয়ে থামলে আবার ভেসে ওঠে সালমার বিম্ব। ঝরনার ধারে বসে ফল খাচ্ছে সাধুর সঙ্গে। আলাপ করেছে, রাজার সন্তানের বিষয়ে। সীমান্তবাবা অভয় দেন। তিনি জানেন জাপান দেশের এমন এক শিকড়ের সন্ধান, যা খেলেই সন্তান আসবে পেটে।
দৃশ্য- ১৩
রাজার শয়নকক্ষ। রাত।
রাজা শয্যাশায়ী। রাজবৈদ্য পরীক্ষা করছেন রাজাকে। নিচু টুলে বশ খেলার গুটি সাজিয়ে একা একা চাল দিচ্ছেন মহামন্ত্রী। আর বিবরণ শোনাচ্ছেন রাজ্যের নানা সমস্যার। রাজা ধমকে ওঠেন। সালমার কোন খবর এলো না কেন? পুরস্কারের অর্থ দ্বিগুণ করে দেওয়া হোক।
দৃশ্য- ১৪
সমুদ্রতট। সকাল।
সমুদ্রের ধারে ঢেড়া পেটানো হয়। ঘোষণা হয় সালমার সন্ধান দিতে পারলে বিশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে। তাঁবুর মধ্যে বসে রুমকি শোনে এই ঘোষণার কথা। ছুটে বেরিয়ে কথা বলে রাজ কর্মচারীদের সঙ্গে। বামন গবেষকরা আর যেতে চায় না তার সঙ্গে। রুমকির জন্য কোন অর্থই ঘোষণা হয় নি। সবাই নিজের কানে শুনেছে। তারা তাঁবু গুটিয়ে ফিরে যায় হতাশ হয়ে। রুমকির মন খারাপ হয় তাদের জন্য। উঠের পিঠে করে সে রওনা হয়ে যায়। রাজকর্মচারীরা চলে পেছন পেছন ঢেড়া পিটিয়ে।
দৃশ্য- ১৫
মেঘের রাজ্যে জিরো গডের আস্তানা। দিন।
সোনার পদ্মের উপর দুই স্ত্রী নিয়ে জিরো গড। জিরো দেবতার কাছে সতীনরা জানতে চান তার কনিষ্ঠ স্ত্রী ন্যানার খবর। জিরো বলেন, সে পড়ে যাওয়ার পর থেকে এখন সেখানেই থাকবে, দেবরাজ ইউনিকর্ণের ইচ্ছায় সে এখন ভিন্নরূপে মর্তে অবস্থান করছে। উষ্ণায়নের জন্যে সোনার পদ্ম একে একে সব গলে যাবে। সবাইকেই হয়ত মর্তে নেমে আসতে হবে।
দেখা যায় তাদের সোনার পদ্মের আশে পাশে পদ্মের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমে গেছে। অন্য দেবতাদের মাথার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে।
দৃশ্য- ১৬
মহামন্ত্রীর বাসস্থানের ফটক। রাত।
ঘরে ঢোকার মুখে সুন্দরী কন্যা (একেই আমরা ন্যানা হিসেবে দেখেছি সোনার পদ্ম থেকে পড়ে যেতে) দেখে অবাক হয় মন্ত্রী। সে তার কাছে কর্মপ্রার্থী। মন্ত্রী বলে কাল রাজদরবারে আসতে। সে যেতে চায় না। বলে সে এসেছে অন্য দেশ থেকে। এখানে থাকার কোন জায়গা নেই। মন্ত্রী তাকে অন্দরমহলে নিয়ে আসে। দাস-দাসীরা ফিসফিস করে। মেয়েটি সারা বাড়ি আলো করে ঘুরে বেড়ায়। তার রূপে মন্ত্রী মুগ্ধ। সে যেকোন কাজ নিমেষে করে ফেলে, আর তা নিঁখুত ভাবে। জীবনে প্রথম সে প্রেম অনুভব করে। চোখে হারায়। বশ খেলায় হেরে যায় মেয়েটির কাছে। এই রাজ্যে সে এই প্রথম হারল বশ খেলায়। সারা রাত তার ঘুম আসে না।
গান- ১
গানের কথা- (অবিবাহিত মহামন্ত্রীর মনে হয়) এর জন্যই সে অপেক্ষা করেছিল।
দৃশ্য- ১৭
সমুদ্রতট। দিন।
মাছের পিঠে চেপে মারিয়া এসে হাজির দেশের নিকটবর্তী সমুদ্রতটে। তাঁবু গুটিয়ে বামনদের দেখে জিজ্ঞাসা করে রাজপ্রাসাদের কথা, পরিচয় দেয় রানী বলে। তারা জানতে চায় সেই সালমা কিনা? যার জন্য রাজা ২০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা ঘোষনা করেছেন। রানী মারিয়া তাদের মিথ্যা কথা বলে। নিজেকে পরিচয় দেয়, ছোটরানি সালমা বলে। তারা আনন্দে আবার যাত্রার অভিমুখ বদলায়। মারিয়া উপকার করা মাছটাকে ফিরে যেতে দেয় না সমুদ্রে। তাকে মেরে তুলে দেয় বামন গবেষকদের মাথায়।
মারিয়ার পেছন পেছন দশ জন বামন বয়ে নিয়ে যায় সেই বিশাল মাছ। মারিয়াকে লাগে মারমেডের মত (ইমেজ-Glenn van der Knijff )।
দূর থেকে ভেসে আসে ঢ্যাঁড়া পেটানোর আওয়াজ। সালমার জন্য পুরস্কার ঘোষণা।
দৃশ্য- ১৮
পাহাড়চূড়া। দিন।
ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে জানানো হয় রাজার ঘোষণা। রাজা তার ছোটরানী সালমাকে ফিরিয়ে দিলে পুরস্কার দেবে ৫০ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। নীচ থেকে দেখা। প্রতিধ্বনি হয়ে থাকে।
দৃশ্য- ১৯
পাহাড়ের পাদদেশ, ড্রাগন রাজার ডেরা, দিন।
হ্যামকে শুয়ে মৃতপ্রায় ড্রাগন রাজা। অন্য ড্রাগনদের ডেকে বলছেন, সালমাকে ফিরিয়ে আনার কথা। সালমাকে না পেলে বিরাটগড়ের রাজা মৃত্যু শয্যা থেকে উঠবেনও না, রাজার সন্তানাদিও হবে না। তারা আরও দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে। সকলে হায় হায় করে ওঠে। সকলে জিরো দেবতার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে সালমাকে রাজার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
দৃশ্য- ২০
ষড়ভুজাকৃতি ছাদের ঘর। দিন।
ময়না মহারানীর মাথায় ঘৃতকুমারীর পাতা ভেঙে ভেঙে ঘসছে আর সালিশি করছে। দেশে যেন আর রানী নেই। দেশে যেন কুমারী মেয়ের অভাব, যদি কচি মেয়েই দরকার আর দু-চারটি বিয়ে করলেই তো মিটে যায়। মহারানী গজগজ করতে থাকেন। ময়না জানতে চায় রানীদের কোন খবর জানে কিনা।
এক আয়নায় ফুটে ওঠে ঊঠের পিঠে চেপে রুমকি প্রবেশ করছে সিংদুয়ার দিয়ে।
এক আয়নায় ফুটে ওঠে মারিয়ার পেছনে এক বিশাল মাছ টেনে রাজপ্রাসাদে ঢুকছে দশজন বামন।
ময়না ও মহারানী দুজনেই হেসে ওঠে।
এক আয়নায় ফুটে ওঠে সালমা ও সাধু মরুভূমির ভেতর।
মহারানী তর্জনী তুল্লেই সেই আয়নাটা সশব্দে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
দৃশ্য- ২১
মরুভূমি। সন্ধ্যা।
সীমান্তবাবা ও সালমা পথভ্রষ্ট। তারা কিছুই চিনতে পারছে না। বালির ঝড় ওঠে। সাধু মন্ত্র পড়ে ঝড় শান্ত করেন। সালমা জল খেতে চায়। সাধু পান্থপাদপ গাছ ভেঙ্গে সালমার জলের ব্যাবস্থা করেন। সালমা সাধুকে জিজ্ঞাসা করে, তার আশ্রমে যেতে এত সময় তো লাগেনি। ফিরতে এত সময় কেন লাগছে। সাধু বলেন কোন অশুভ আত্মা বারবার পথ ঘুরিয়ে দিচ্ছে। তিনি সঠিক দিক নিরূপণ করতে পারছেন না।
দৃশ্য- ২২
পাহাড়তলি, ড্রাগন রাজার ডেরা। সন্ধ্যা।
গাছে ঝুলন্ত সিংহাসনে ড্রাগন রাজা। গাছের চারপাশে রূপালী বিভা ফুটে ওঠে। ডানা ওয়ালা সাদা ঘোড়া করে জিরো দেবতা এসে পৌঁছান। ড্রাগনদের প্রার্থনার উত্তরে তিনি জানান, মহারানী এখনও অশুভ শক্তি প্রয়োগ করছে তাই সালমার ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
ড্রাগন রাজা রেগে গিয়ে আবার তার ক্রিস্টাল গোলক বার করে মহারানী ধরেন। তাকে অবিলম্বে এই অশুভ শক্তি প্রয়োগ বন্ধ না করলে সমস্ত ড্রাগন আত্মহত্যা করবে। রানী ক্ষমা চান। জানান তিনি ক্ষমতার লোভ সংবরন করতে পারেন নি। আর করবেন না।
ড্রাগনরা সবাই খুব খুশি হয়ে আনন্দ করতে থাকে। জিরো দেবতা বা ঘোড়াটিকে দেখা যায় না।
দৃশ্য- ২৩
মরুভূমি। সন্ধ্যা।
সীমান্তবাবা ও সালমা পথভ্রষ্ট। এমন সময় ঢ্যাঁড়া পেটানোর আওয়াজ শোনা যায়। বিরাটগড়ের রাজা সালমাকে যে ফিরিয়ে দেবে তার জন্য এক কোটি স্বর্ণমুদ্রা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন।
সালমা আনন্দে সমস্ত ক্লান্তি ভুলে সেই দিকে ছুটতে শুরু করে।
দৃশ্য- ২৪
রাজার শয়নকক্ষ। রাত।
রাজা মৃতপ্রায়। রাজবৈদ্য নাড়ি পরীক্ষা করছেন। মাথার দুই পাশে মারিয়া ও রুমকি রাজার সেবা করছে। পালঙ্কের নীচে রাখা টুলে সাজানো বশ খেলার বোর্ড। মহারানী ও মহামন্ত্রী খেলছেন। প্রতিবারই মহারানী হেরে যাচ্ছেন। মহারানী কোমরের ঘুনসি থেকে সবার অলক্ষে ক্রিস্টাল বল বের করে হাতের আড়াল করে দেখেন, ক্রিস্টাল বলে ফুটে ওঠা বিম্বে মহামন্ত্রীর হয়ে অদৃশ্য হাতে চাল দিচ্ছে এক সুন্দরী নারী, ন্যানা। বারবার হেরে রেগে যান মহারানী সোহাগ।
রাজা মন্ত্রীকে কিছুক্ষণ বাদে বাদেই জিজ্ঞাসা করেন সালমার কথা। না এখনো তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। মারিয়ার খুব রাগ হয়, মহারানীর সঙ্গে সেও রাগ করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
দৃশ্য- ২৫
রাজপ্রাসাদের অতিথিশালা, রাত।
দশজন বামন গবেষক পান- ভোজনে ব্যস্ত। তারা আলোচনা করছে পুরস্কারের পরিমাণ ঠিক কতটা। কে কত নেবে। কে আগে দেখেছিল সালমা পরিচয় দেওয়া মারিয়াকে।
একেকটি ফ্ল্যাশে দৃশ্য ফিরে যায় সমুদ্রতীর, প্রত্যেকেই দাবি করে সেই প্রথম দেখেছে সালমাকে।
মহামন্ত্রী এসে ঘোষণা করে অতিথিদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গান- ২
আইটেম সঙ।
এর মধ্যেই হ্যালুসিনেশনে আইটেম গার্ল রাজরাণী সদ্য সমুদ্র থেকে স্নান করে ওঠা মারিয়া হয়ে ওঠে কাঁখে স্বর্ণকলস। রাজা এসে কলসি কলসি স্বর্ণমুদ্রা দিতে থাকেন, সবাই পাগল হয়ে যায়।
দৃশ্য- ২৬
বিরাটগড়ের বাজার। রাত।
সবাই ঘুমিয়ে। শুড়িখানায় কয়েকজন মাতাল তর্ক করছে সালমা বেঁচে আছে না মরে গেছে। বাজীতে টাকা লাগাচ্ছে।
শুনশান রাস্তা দিয়ে, তাদের সামনে দিয়ে হাঁটছে সীমান্তবাবা ও সালমা।
দৃশ্য- ২৭
মহারানীর শয়নকক্ষ। রাত।
মারিয়া ও মহারাণী রাগে গজরাচ্ছে। মারিয়া জানতে চায় সালমাকে মেরে ফেলা যায় কি না? মারিয়ার খাস চাকর শাড়ি পরিহিত খোঁজা গোলাপ এই আলাপ শুনে লজ্জা পেয়ে বাইরে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা টেনে দেয়।
মহারানী বালিশের তলা থেকে ক্রিস্টাল বল বের করে সালমাকে খোঁজেন।
বলের মধ্যে দেখা যায় সালমা সাধুর সঙ্গে রাজপ্রাসাদের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করছে।
দুইজনে চুপিচুপি কিছু প্ল্যান করে।
দৃশ্য- ২৮
রাজপ্রাসাদের সিংহদরজা। রাত।
রাজপ্রহরীরা সালমাকে দেখে আনন্দে চেঁচাতে থাকে।
সারা প্রাসাদে আলো জ্বলে ওঠে।
ভেরী বেজে ওঠে।
তোপধ্বনি হতে থাকে।
একের পর এক দরজা খুলে যেতে থাকে।
সালমা ও সাধু রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে।
দৃশ্য- ২৯
রাজার শয়নকক্ষ। রাত।
মৃত্যুশয্যায় শায়িত রাজার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল রুমকি। দরজা দিয়ে সালমাকে প্রবেশ করতে দেখে সে চেঁচিয়ে ওঠে। যে রাজা মরার মত পড়ে ছিল এইকদিন সে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে সালমাকে জড়িয়ে ধরে। রুমকি, সালমা ও রাজা সকলে আনন্দে কাঁদতে থাকে। বাইরে ঘন ঘন তোপধ্বনি হয়।
দৃশ্য- ৩০
মহামন্ত্রীর অন্দরমহল। রাত।
বশ খেলায় রত মহামন্ত্রী ও পরমা সুন্দরী ন্যানা। তোপধ্বনির আওয়াজে মহামন্ত্রী জানালা/ অলিন্দে গিয়ে দেখেন রাজ প্রাসাদ আলোয় আলোকিত। আতসবাজি পুড়ছে। তোপধ্বনি চলছে ক্রমাগত।
ন্যানা উঠে আসে। মহামন্ত্রী তাকে জানান সালমা ফিরে এসেছে, তাই উৎসব বিরাটগড়ে। আনন্দে জড়িয়ে ধরেন ন্যানাকে। এইপ্রথম মানুষের স্পর্শে কেঁপে যায় ন্যানা। ঠোঁট বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে মহামন্ত্রীকে। মহামন্ত্রী গভীর চুম্বন এঁকে দেন ঠোঁটে।
জানলার বাইরে প্রবল বেগে বৃষ্টি নামে। রাজপ্রাসাদের আলোকমালা ঝাপসা হয়ে আসে।
দৃশ্য- ৩১
রাজপ্রাসাদের অতিথিশালা, রাত।
দীর্ঘাঙ্গী গণিকাদের কোলের মধ্যে সন্তানের মত শুয়ে একেকজন বামন গবেষক। সাধু সীমান্তবাবাকে রাজপ্রহরীরা বিশ্রামের জন্য নিয়ে এসেছে অতিথিশালায়। গণিকা ও অতিথিদের কাপড়-চোপড়ের দশা দেখে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারাই দ্রুত গণিকাদের গায়ে চাদর টেনে দিতে থাকেন। গণিকারা স্পর্শ পেয়ে মুখ খারাপ করে ওঠে। সাধু বিরক্ত হয়ে হটাৎ অদৃশ্য হয়ে যান। রাজপ্রহরীরা ভয় বা লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়। সাধুকে সবাই খুঁজতে থাকে।
দৃশ্য- ৩২
বিরাটগড় বাজার। রাত।
শুনশান রাস্তায় আছড়ে পড়ছে বৃষ্টি। তার মধ্যে ভেসে ওঠেন সীমান্তবাবা। হেঁটে চলে যেতে থাকেন দূরে।
মাতালরা সালমা ফেরার আনন্দে আরো মদ খাচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজছে। কাদায় লাফাচ্ছে। টাকা- মদ বাজী ধরছে।এন্তার। সালমাকে নাকি এক সাধু ফিরিয়ে দিয়েছে সে কি এক কোটি স্বর্ণমুদ্রা নেবে না নেবে না! সত্যি সাধু না নকল সাধু। এর মধ্যে দেখে এক সাধু ভিজতে ভিজতে এগিয়ে আসছে। সবাই ঘিরে ধরে তাকে। প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে। হরেকরকম। সাধুদের টাকা লাগে কি লাগে না? সেই সাধুটা স্বর্ণমুদ্রা নেবে কি নেবে না!
সীমান্তবাবা কোন জবাব না দিয়ে তাদের মাঝখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান।
মাতালরা প্রথমে হতবাক হয়। তারপর জলকাদার মধ্যে আছড়ে আছড়ে কাঁদে। তারা কী হারাল! এ ভগবান না যাদুকর। হায় হায়!
আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে বাজী ধরতে শুরু করে- এই সেই সালমার সাধু না অন্য কেউ। টাকা, মদ, বাড়ি, নিজের স্ত্রী সবই বাজী ধরে তারা।
দৃশ্য- ৩৩
রাজপ্রাসাদের ভোজনকক্ষ। রাত।
লম্বা টেবলের দুই প্রান্তে বসে মহারানী সোহাগ ও মারিয়া। চাকা লাগানো ট্রেচারে করে এক বিশাল রান্না করা মাছ গোটা ট্রেচার জুড়ে, সেটা নিয়ে ঢোকে ময়না। মারিয়া তাড়াতাড়ি উঠে মহারানীকে পরিবেশন করতে জান। মহারানী মাছটা দেখে চমকে ওঠেন, মারিয়াকে জানান এ তার বাবার পোষা দুই তিমির একটি। একে মেরে সে ভাল কাজ করেনি। মারিয়া ভয় পায়। গোলাপ দ্রুত পায়ে এসে জানায়, ছোটরানী সালমাকে নিয়ে বৃদ্ধরাজা দরজায় খিল দিয়েছেন। সে আড়ি পেতে শুনে এসেছে, তারা আলাপ করছে সন্তান নিয়ে। বলেই, ভীষণ লজ্জা পায় সে।
দৃশ্য- ৩৪
রাজার শয়নকক্ষ। রাত।
ছোটরানী সালমার বুকের উপর শুয়ে বৃদ্ধ রাজা। বাহুবেষ্টিত। সালমা তাকে জানায় সে সন্ধান পেয়েছে সন্তানধারণের। সীমান্তবাবার কথা জানায়। তার আশ্রমের কথা জানায়। তার বিভিন্ন ওষধি গাছের কথা বলে। বলে সেই জাপানি শিকড়ের কথা। রাজা উঠে বসেন। আনন্দে। তারপর ছোটরানীকে পাগলের মত চুমু খেতে থাকেন। মুখে ও দেহের অন্যান্য স্থানে।
দৃশ্য- ৩৫
ষড়ভুজাকৃতি ঘর। রাত।
সকলের দৃষ্টি মহারানীর হাতের ক্রিস্টাল গোলকে স্থির। চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে আছে মারিয়া, ময়না ও গোলাপ।
ক্রিস্টাল বলে দেখা যায়, বৃদ্ধ রাজা চুম্বন এঁকে দিচ্ছেন সালমার কপালে ও ঠোঁটে।
তারা পরিকল্পনা করে এই শিকড় তাদেরও চাই। তাদের সকলেরই প্রয়োজন সন্তান।
তারা পরকল্পনা করে রুমকি ও সালমাকে বশীকরণ করে তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করবে।
মহারানী ঘরের একটি আয়নায় রুমকির খোঁজ করেন। সেখানে দেখা যায় রাজার শয়ন কক্ষের বাইরে রুমকি। জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আলুলায়িত সালমা এসে দরজা খোলে।
মহারানী মন্ত্র উচ্চারণ করে হেসে ওঠে। আয়নাটা ভেঙ্গে যায়।
ঘরের আলো পালটে সবুজাভ ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
মারিয়া, ময়না ও গোলাপ লক্ষ্য করে মহারানীর মুখটা হয়ে উঠেছে সবুজাভ গিরিগিটির মত। তার দ্বিখণ্ডিত সরু জিভ লোভে লকলক করছে।
দৃশ্য- ৩৯
মহারাজের শয়নকক্ষ। রাত।
রুমকি হাঁফাতে হাঁফাতে জানায় সাধুবাবাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। রক্ষীরা উৎসব বন্ধ করে সবাই ভয় পেয়ে পালিয়েছে। রাজপ্রাসাদ প্রতিরক্ষীশূন্য। তারা সব গর্দানের ভয়ে লুকিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
সালমা ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
হতচকিত রাজা পোশাক পরতে থাকেন। রুমকি সাহায্য করে পোশাক পরতে। রাজা রুমকিকে বলেন সাধুর খোঁজ পাওয়াটা খুব খুব জরুরী, সে জানে সন্তান লাভের ওষুধ।
দৃশ্য- ৪০
রাজপ্রাসাদের সভাকক্ষ। রাত।
সভাকক্ষ জনশূন্য। আলুলায়িত ছোটরানী সালমা ত্রস্ত পায়ে প্রবেশ করে। (ইমেজ- তিলোত্তমা- রাজা রবি বর্মা)। চিৎকার করে সীমান্তবাবার নাম ধরে। রক্ষীদের ডাকে। কেউ সাড়া দেয় না। তার কথাই প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে।
দৃশ্য- ৪১
রাজপ্রাসাদের অতিথিশালা। রাত।
ঘোষণা হয়, মহারাজা বিরাট রাজ আসছেন।
কক্ষে কক্ষে আলো জ্বলে ওঠে। গণিকারা ধড়ফড় করে উঠে বসে। খুলে রাখা শাড়ি-জামা নিয়ে দৌড়ে স্নানাগারে ঢুকে যায়। পামেলা নামে একজন গণিকা থেকে যায়, সে বিছানা গোছাতে থাকে, একের পর এক। ঘটনাটি প্রচলিত গতির থেকে দ্রুত(হাইস্পিডে) ঘটে।
বামন গবেষকরা তাড়াতাড়ি উঠে জামা কাপড় পরে। কেউ কেউ ঘরের মেঝেয় পড়ে থাকা ভুক্তাবশেষ ও পানীয় দ্রুত সরাতে উদ্যোগী হয়। ঘটনাটি প্রচলিত গতির থেকে দ্রুত(হাইস্পিডে) ঘটে।
বৃদ্ধ বিরাটরাজা ও রুমকি এসে প্রবেশ করে অতিথিশালায়।
পরিচিত রুমকির দেখা পেয়ে বামন গবেষকরা দৌড়ে আসে।
রাজা তাদের কাছে সাধুর খোঁজ জানতে চান। কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ দেখেনি তাকে।
পামেলা নামের গণিকাটি এগিয়ে এসে মহারাজ ও রানীকে প্রণাম করে জানায়, সে মাঝরাতে এক সাধুকে দেখেছিল বটে অতিথিশালায়। কিন্তু এখানে সে রাত্রিবাস করেনি।
আলুলায়িত সালমা এসে প্রবেশ করে, জানায় সে রাজপ্রাসাদের সর্বত্র খুঁজেছে, কিন্তু সাধু কোথাও নেই। তিনি চলে গেছেন।এখনও যদি বেরোনো যায় তাহলে সাধুকে ধরে ফেলা যাবে। সালমা বেরোতে চায় সাধুর খোঁজে। রুমকি বলে সেও সঙ্গে যাবে।
রাজা দ্বিধাগ্রস্ত। অনেকদিন পর সালমা ফিরেছে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে। স্বাভাবিক ভাবে সেও ক্লান্ত। রাস্তা চিনে কি যেতে পারবে সে?
সালমা কাঁদতে থাকে, বোঝায় সন্তানলাভের এটাই শেষ সুযোগ। সঙ্গে কিছু রক্ষী দিয়ে দিলে সে নিশ্চিত ধরে ফেলবে সাধুকে। কতটাই বা দূরে যাবে সে পায়ে হেঁটে।
মারিয়া প্রবেশ করে গোলাপকে নিয়ে। হাততালি দিয়ে জানায়, রাজার প্ল্যান সে ধরে ফেলেছে। বুদ্ধি করে দুইরানীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিকড় খাওয়ার জন্য। তাদেরই সন্তান হবে আর ভবিষ্যতে তারাই হবে বিরাট গড়ের রাজা।
গোলাপ তার হয়ে নেচে নেচে হাততালি দেয়। আর সুর করে বলে, অ্যাটেনশন, নো টেনশন। বিরাট রাজের বিরাট প্ল্যান।
রাজা তাদের কাছে জানতে চান, শিকড়ের কথা সে/তারা জানলো কী করে?
সে সালমার চোখে চোখ রেখে জানায়, সীমান্তবাবার আশ্রম, ভেষজ ওষধি, সন্তান প্রাপ্তি শেকড়, ঠিক যেমনটা সালমা রাজাকে বলেছিল।
রাজা রাগে থর থর করে কাঁপতে থাকেন।
সালমা ভেঙ্গে পড়ে কান্নায়।
অন্য রানীরা বিবাদ করুক কিন্তু সে এখনই যাবে। সঙ্গে কেউ যাক আর না যাক।
গোলাপ জানায় কোন রক্ষী আর রাজপুরীতে নেই যে তার সঙ্গে যাবে।
বামন গবেষকরা সবাই বলে তারা যাবে ছোটরানীর সঙ্গে। রক্ষী হিসাবে।
পামেলা বলে সেও যাবে।
রুমকি বলে সেও যাবে।
রাজা থরথর করে কাঁপতে থাকেন। গোলাপ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
দৃশ্য- ৪২
অতিথিশালার স্নানাগার। রাত।
এক বিশাল চৌবাচ্চা। ৯ গণিকা স্নানরতা। চারপাশের দেওয়াল পাথরের। সর্বদা ঝরনার মত জল পড়ছে সেখান দিয়ে। তারা কথা বলে মহারাজের সন্তানহীনতা নিয়ে। তাদের কথায় বোঝা যায়, তারা চায় মহামন্ত্রী দেবশংকরকে ভাবী রাজা রূপে। সেই তাদের সকলের ইপ্সিত পুরুষ। লাস্যে ফেটে পড়ে সবাই।
নিজেরা অভিনয় করে বৃদ্ধ রাজা ও রানীদের ভূমিকায়।
তারা পরিকল্পনা করে রাজাকে খুন করে দেবশংকরকে সিংহাসনে বসানোর। সবাই সিদ্ধান্ত নেয় রাজার কিছুতেই সন্তান হতে দেওয়া যাবে না।
রানী-গণিকা সমান সমান। কারুরই সন্তান নেই। সবাই পরিহাসে মেতে ওঠে। বাইরের কোন ঘটনা/আওয়াজই ভেতরে প্রবেশ করে না।
দৃশ্য- ৪৩
ষড়ভূজাকৃতি ঘর। ভোর।
হাসিতে ফেটে পড়ে একটি দুটি আয়না। মহারানী সোহাগের ওপর দিকটা গিরগিটির মত। সবুজ। চেরা জিভ লকলক করছে। ময়না অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে পায়ের কাছে।
ময়নার মুখের ওপর সবুজ আলো পরিবর্তন হয়ে হয় বেগুনী। সে চোখ মেলে ধড়ফড় করে উঠে বসে।
ততক্ষণে মহারানী ফিরে গেছেন নিজের মুখশ্রীতে। শুধু মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে আগুনের গোলা। ধীরে ধীরে সে শান্ত হয়। দুই জনে বাইরে এসে দেখে ভোর হচ্ছে।
দৃশ্য- ৪৪
রাজপ্রাসাদের সিংহদরজা। ভোর।
যুদ্ধসাজে সজ্জিত সালমা ও রুমকি দুটি ঘোড়ায়। তার পেছনে চলেছে দুটি উটে টানা মাথা খোলা গাড়ি। দুই গাড়িতে ভাগ হয়েছে ৫ জন করে বামন গবেষক। একটিতে গণিকা পামেলা। অন্যটিতে অনিচ্ছুক গোলাপ। হাতে এক খাঁচা পায়রা। মারিয়া এসে তাকে বলে প্রতিদিনের আপডেট পায়রার পায়ে বেঁধে পাঠাতে। গোলাপ মুখ ভার করে বসে মারিয়াকে জানায় এইরকম বেঁটে বেঁটে পুরুষ তার একদম পছন্দ নয়। মারিয়া জানায় তাকে পাঠানো হচ্ছে কাজে। মধুচন্দ্রিমা করতে নয়।
সালমা ও রুমকি বিদায় নেন রাজার থেকে।
সিংহদুয়ারে রাজা দাঁড়িয়ে। তাকে দুই দিক থেকে ধরে আছে মারিয়া ও রাজবৈদ্য। তার দৃষ্টি ঘোলা। শরীরেও আর কোন জোর নেই। গবেষকদের তিনি মনে করিয়ে দেন, সাধুর সঙ্গে দেখা হলে আগেই যেন তাকে এক কোটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দেওয়া হয়।
যুদ্ধসাজে সজ্জিত পাঁচ বামন গবেষকের মধ্যমণি হয়ে বসে গণিকা পামেলা প্রথম গাড়িটিতে। তার কোলের মধ্যে এক সুদৃশ্য সোনার ট্রাংক। সে সেটা আগলে রেখেছে নিজের দেহের সঙ্গে।
ধীরে ধীরে তারা চলতে শুরু করে।
রুমকি ও সালমা পিছন ফিরে হাত নাড়ে।
রাজার দৃষ্টি ঝাপসা সে কিছু দেখতে পায় না।
মারিয়া মিথ্যে বলে, রুমকি ও সালমা কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় নি। তারা নাকি নিজেরদের মধ্যেই হাসিতে মশগুল।
রাজবৈদ্য খেয়াল করেন তার এই মিথ্যে বলা। মারিয়া চোখ টেপে তাকে।
সালমা রাজার দিকে বারে বারে হাত নাড়ে। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে।
রাজপ্রাসাদের ছাদ থেকে হাত নাড়ে মহারানী সোহাগ ও ময়না।
দৃশ্য- ৪৫
পাহাড়তলী। সকাল।
গাছ থেকে ঝুলছে ড্রাগন রাজার খাটিয়া। তার উপরে টানানো বরফের চাঁই থেকে ফোটা ফোটা জল পড়ছে তার গিরগিটির মত চামড়ার শুকনো দেহে।
একটা প্রমাণ সাইজের মানুষের মাপের বরফের চাঁই দড়ি দিয়ে বাঁধা। নিচে দাঁড়িয়ে দড়ি ধরে টানছে দুই প্রবীন ড্রাগন। বরফ গলা জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে পড়ছে তার শরীরে।
ড্রাগন রাজা চিৎকার করেন, জোরে আরো জোরে। আরো কিছুদিন তাকে বেঁচে থাকতেই হবে। নাতির মুখ দেখে তিনি মরতে চান।
নিচের ড্রাগনরা জোরে জোরে দড়িতে টান দেয় আর হাঁফায়। জানায় তারা আর পেরে উঠছে না। অন্য কেউ এসে হাল ধরুক।
দৃশ্য- ৪৬
মেঘের রাজ্য। দিন।
মেঘের মধ্যে ভাসছে মাত্র চার/ পাঁচটি সোনার পদ্ম। কুড়ি বা পাতা কিছুই দেখা যায় না। দু’টি সোনার পদ্ম নতমুখী, ডাঁটি ভাঙ্গা। টপটপ করে গলে পড়ছে সোনা।
একটা সোনার পদ্ম নৌকার মত বেয়ে আসছেন দেবতা জিরো। দুই স্ত্রী বৈঠা চালিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসছে সোনার পদ্মটি নৌকার মত।
দেবতা জিরো খুবই চিন্তিত। পাশের পদ্ম থেকে কেউ তাকে নাম ধরে ডাকে।
অন্য সোনার পদ্মে আধশোয়া তিন মাথাওয়ালা এক দেবী জিরোকে জিজ্ঞাসা করেন, মেঘে পর্দা দেওয়া আদৌ সম্ভব কি না? সব সোনা যে মর্তে চলে যাচ্ছে তার কী হবে? জিরো হাসেন। যখন একেক জন দেবতা মর্তে ঠাঁই নিতে বাধ্য হচ্ছেন তখন সামান্য সোনা নিয়ে ভাবার মত সময় তার নেই।
আবহসঙ্গীত ভেসে আসে, পাবি সামান্যে কী তার দেখা (গীতিকার- লালন সাঁই)
তার সোনার পদ্ম নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে থাকেন।
একটা ভেঙ্গে পড়া সোনার পদ্ম দেখিয়ে তিনি আঁতকে ওঠেন। হায় হায় এবার দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ ধরাধামে।
তার বড় স্ত্রী বলেন , প্রভু আমরা এখনই ধরাধামে চলে যাই। জায়গা দখল করি গে? পরে গেলে কিছুই আর পাবো না। উদ্বাস্তুদের মত জীবনটা কাটাতে হবে।
মধ্যম স্ত্রী বলে, দিদি এত সোনা ছেড়ে তুমি সত্যি সেখানে গিয়ে থাকতে পারবে মানুষের মতন। আমি বাবা পারব না।
দেবতা জিরো আরো গভীর চিন্তায় ডুবে যান। তার মুখের ওপরেই দুই স্ত্রীর কথা আসতে থাকে। বড় স্ত্রী বলে, কখন তার পদ্ম গলে পড়বে সেই ভাবনাটা আর তিনি নিতেই পারছেন না। প্রবল টেনশন। কাড়ি কাড়ি ঘুমের ওষুধ গিলেও ঘুম আসে না। তিনি একদিন ঠিক ঝাঁপ মেরে দেবেন, সেটা আত্মহত্যাই হোক আর অন্যকিছুই হোক। বেঁচে থাকলে আবার একদিন সব হবে। মধ্যম স্ত্রী বলে, তোমরা গেলে যাও। আমি অন্য ফুল থেকে সোনা সংগ্রহ করবো। সেগুলো গলিয়ে আবার নতুন পদ্ম বানাবো। এই সাম্রাজ্য ধ্বংস হতে পারে না। আবার তাকে নতুন করে গড়তে হবে।
নৌকার মত তাদের সোনার পদ্ম মেঘের মধ্যে দিয়ে চলতে থাকে।
দৃশ্য- ৪৭
মহারাজের শয়নকক্ষ। দিন।
বিরাট রাজ বিশাল পালঙ্কে শুয়ে। রাজবৈদ্য নাড়ি পরীক্ষা করছেন। নিচে রাখা টুলে বশ খেলছেন মহারানী সোহাগ ও মহামন্ত্রী দেবশঙ্কর। মহারাণী হারছেন আর বিরক্ত হচ্ছেন। দেবশঙ্করকে বলেন, রাজা আর কখনো উঠতে পারবেন? মহামন্ত্রী বলেন, সালমা ফিরলে আবার ঠিক উঠে দাঁড়াবেন। মহারানী বিকট হাসতে থাকেন সেটা শুনে। জিজ্ঞাসা করে, সালমা আবার ফিরে আসবে বলে মনে হয়? রাজবৈদ্য বিষম খান। হাঁপাতে হাঁপাতে বলেন,সালমা না ফিরলে আপনারা সন্তান পাবেন কী করে মহারানী। মহারানী সোহাগ যায় চোটে। রানী মহামন্ত্রীকে হুকুম দেন, নতুন রাজ বৈদ্যের জন্য ঘোষণা/বিজ্ঞাপন দিন। হেঁপো রুগী দিয়ে কিছু হবে না। মহারাজাই যদি মারা যায়, সালমা শিকড় নিয়ে ফিরলেও বাচ্চা পাওয়া যাবেনা। মহারাজের অন্য চিকিৎসা দরকার। পরলোকে তাদের সকলের লোক-লজ্জার ভয় থেকে বাঁচার জন্য সন্তান না হওয়া অবধি রাজাকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।
রানীর হুকুম শুনে রাজবৈদ্য অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। হাঁপের টানে সে এমনিতেই কাবু। ময়না এসে তাকে ধরে ধরে নিয়ে যায় বাইরে।
দৃশ্য- ৪৮
রাজপ্রাসাদের পিছনের বাগান, বিকেল।
পায়রার পা থেকে চিঠি খুলে পড়ে মারিয়া। চিঠি থেকে জানা যায়, সালমারা মরুভূমিতে পথ হারিয়ে ফেলেছে। সে দিক আর ঠিক করতে পারছে না।
মারিয়া বাগানের মধ্যেই আনন্দে নেচে ওঠে।
সালমার প্রিয় ডালিয়া ফুলগুলোকে আঘাত করে। যা তোরা সালমার কাছে। মর সবাই মর।
দৃশ্য- ৪৯
রাজার শয়নকক্ষ। বিকেল।
মুমূর্ষু বিরাট রাজ পালঙ্কে শুয়ে।
নিচে রাখা টুলে বশ খেলছেন মহারানী সোহাগ ও মহামন্ত্রী।
আনন্দে লাফাতে লাফাতে মারিয়া এসে ঢোকে। রাজার কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে জোরে বলে সালমা প্রায় পৌঁছে গেছে আশ্রমে। আর কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসবে সে। বলেই আবার লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে যায়।
মহারানীও চলে যায় তার পেছন পেছন।
মহামন্ত্রী উঠে এসে বসেন রাজার মাথার কাছে।
মহারাজা গোঙাতে থাকেন- সালমা সালমা।
মহামন্ত্রী রাজার মাথার কাছ থেকে মারিয়ার ফেলে যাওয়া কাগজটা পান।
দলা পাকানো কাগজটা খুলে অবাক হয়ে যান। সেটা মারিয়াকে গোলাপের পাঠানো চিঠি, সালমাদের পথ হারানোর খবর।
দৃশ্য- ৫০
ষড়ভূজাকৃতি ঘর। বিকেল।
মহারানীর হাতে ক্রিস্টাল গোলকে ফুটে উঠছে এক দিশাহীন মরুপ্রান্তর।
হাসতে থাকেন মহারানী। চুম্বন করেন ক্রিস্টাল গোলককে। সেটা হাতে নিয়ে ঘুরতে থাকেন পাগলের মত। ঘরের সমস্ত আয়নায় একই ছবি ফুটে ওঠে। মরু প্রান্তরে যুদ্ধসাজে সালমা ও রুমকি। পিছনে উঠের গাড়িতে অন্যরা।
মহারানী স্কেটিং এর মত প্রবল গতিতে ঘুরতে থাকেন ঘরের মধ্যে।
আয়নার ছবি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে জুড়ে যায়।
দৃশ্য- ৫১
মরুপ্রান্তর। বিকেল।
সালমা একটা পান্থপাদপ গাছ দেখিয়ে বলে এই তো সেই গাছ। এখান থেকে সীমান্ত বাবা আমায় জল খাইয়ে ছিলেন।
রুমকি জানতে চায় আর কত দূর। সালমা বলে আর মাত্র দুইদিনের পথ। সে সব চিনতে পারছে। অবশ্য শেষদিনের পথ খুবই দুর্গম। ঘোড়া বা উটের গাড়ি সেখানে চলবে না।
সবাই পান্থপাদপ গাছ থেকে জল বের করে খায়।
১০জন বামন গবেষক তাঁবুর সরঞ্জাম বার করে তাবু পোঁতে।
সোনার টিনের তোরঙ্গের/ ট্রাঙ্কের উপর উঠে বসে আছে রাজপুরীর গণিকা পামেলা।
গোলাপ ব্যস্ত চিঠি লিখতে। চিঠি লিখে সে পায়রার পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দেয়।
বাতাস বইতে শুরু করে।
গান-৩
গানের মূল বিষয়- আমরা দুই বন্ধু কখনই আলাদা হব না। একসাথেই আমরা জয় করে আনব সকলের হাসি।
গান শুরু হয় মরুভূমিতে।
রুমকি ও সালমা মরুসাজে সজ্জিত হয়ে নাচে।
বামনরা বাজনা বজায়।
একজন গণিকাকে নিয়ে অনেকে টানাটানি করে।
ভুল করে কখনও গোলাপকে নিয়েও টানাটানি করে।
পামেলাকে সোনার মুদ্রার বৃষ্টিতে স্নান করায়।
ক্যাম্প ফায়ারে গোলাপ নাচে। সকলে মজা করে। সারা রাত চলে পান আহার। সূর্য ওঠে। রুমকি আবিস্কার করে গোলাপ সকাল বেলা কাকে চিঠি লিখছে লুকিয়ে। পায়রার পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দিচ্ছে, চিঠি।
বামনরা নিজেদের মধ্যে টাকার ভাগ করে। টানাটানি করে গণিকা পামেলাকে নিয়ে।
তাঁবু গুটানো হয়। সবাই আবার গাড়িতে রওনা দেয়।
ছইয়া ছইয়া স্টাইলে গাড়িতে নাচে পামেলা। সবাই সোনার কয়েন ছোড়ে।
ঘোড়ায় করে তর তর করে এগিয়ে যায় রুমকি ও সালমা।
শোভাযাত্রার মত দলবল এসে পৌঁছয় সমুদ্র তটে।
সমুদ্রের ধারে দেখা যায়, সন্ধ্যের আলোয় ক্যাম্পফায়ার।
সমুদ্রে স্নান করে ঝুমকি ও সালমা।
সমুদ্রতীরে ঝিনুকের মত সোনার টাকা কুড়িয়ে ফেরে দশজন বামন ও গোলাপ।
সোনার কলস নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে আসে পামেলা।
ঊঠের গাড়ি করে পিপে পিপে মদ নিয়ে আসে বামনেরা।
গড়িয়ে গড়িয়ে চার জন করে বামন পিপেগুলো নিয়ে আসে তাঁবুতে।
একটা পিপে থেকে বেরোয় গোলাপ।
সে কাঁদতে থাকে।
সবাইকে মদ্যপান করায় রুমকি।
সালমা নাচে মদের খালি পিপের ওপর দাঁড়িয়ে।
বামনরা পাগলের মত ছোঁড়াছুড়ি করে মদ। গান শেষ হয়।
একএক তাঁবুতে এক এক করে বাতি নিভে যায়।
দৃশ্য- ৫২
মন্ত্রীর বাসভবনের অন্দরমহল। রাত।
বশ খেলার বোর্ডের দুইপাশে মহামন্ত্রী ও পরমা সুন্দরী ন্যানা। মন্ত্রী বারবার চালে ভুল করছে। ন্যানা বিরক্ত হয়। তার সমস্যার কথা জানতে চাইলে, মন্ত্রী বলেন নতুন রাজবৈদ্য চাই। কিন্তু কর্মপ্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই জানে বিরাটগড় ধ্বংসের মুখে। রাজা আর বেশীদিন নেই। তিনি মারা গেলে রানীদের ও সন্তান হবে না আর রাজত্বও শেষ হয়ে যাবে। সবাই বিরাটগড় ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ন্যানা বলে চিকিৎসা বিদ্যা তার জানা। সে চিকিৎসা বিদ্যা নিয়েই পড়াশুনো করেছে। মহামন্ত্রী অনুগ্রহ করে যদি তাকে রাজবৈদ্য হিসাবে বিবেচনা করেন তাহলে দিনের বেলাটা তাকে ঘরে শুয়ে বসে কাটাতে হয় না।
মন্ত্রী অবাক হয়ে যান ন্যানার কথা শুনে। আবার স্বস্তির নিস্বাস ফেলে খেলতে বসে যান।
দৃশ্য- ৫৩
সমুদ্রতট। ভোর।
তাঁবুর মধ্যে সালমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে রুমকি। বাইরে হালকা আলো ফুটছে। নিজে যুদ্ধসাজে তৈরি। সালমাকে তৈরি হতে বলে নিজে তাঁবুর বাইরে আসে। একটি তাঁবুতে উঁকি দেয়। সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। দেবী দুর্গার মত দুই দিকে দুটো দুটো করে বামন গবেষক পামেলার হাতের পরে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।
অন্য তাঁবুতে উঁকি মারে রুমকি।
সেখানে গোলাপ শুয়ে আছে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে সোনার তোরঙ্গটা মাথার নিচে দিয়ে। তার শাড়ি জড়িয়ে শুয়ে আছে ছয়জন বামন গবেষক।
রুমকি পায়রার খাঁচাটা বাইরে নিয়ে সব কটা পায়রা উড়িয়ে দেয় দরজা খুলে।
সালমা বেরিয়ে আসে যুদ্ধ পোষাক পরে।
দুজনে চুপি চুপি ঘোড়ায় করে রওনা হয়ে যায়। তাঁবুতে সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। সমুদ্রের ধারে সূর্য বিভা ছড়িয়ে জেগে ওঠে। মোরগ ডেকে ওঠে।
বিস্তির্ণ সমুদ্রতটে দুই ঘোড়ায় সওয়ারী হয়ে সালমা ও রুমকি ক্রমশ ছোট হয়ে মিলিয়ে যায়।
দৃশ্য- ৫৪
মহারাজের শয়নকক্ষ। দিন।
মহারাজ বিরাট বিছানায় শয্যাশায়ী। নতুন রাজবৈদ্য ন্যানা তাকে পরীক্ষা করছে। নিচে টুলে রাখা বশ খলার বোর্ডে গুটি সাজিয়ে কথা বলছে মহারানী ও মহামন্ত্রী দেবশংকর। মহারানীর সন্দেহ ন্যানাকে আগে কোথাও দেখেছেন। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারেন না। তিনি মহামন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ন্যানা এর আগে কোথায় কর্মরত ছিল। কী কী রোগ সারিয়েছে ইত্যাদি। মহামন্ত্রীকে প্রশ্নে ক্ষত বিক্ষত করলেও, ন্যানা সব জবাব দিয়ে দেয়। মহারানী চমৎকৃত। মহামন্ত্রীর অস্বস্তি কেটে গিয়ে হাসি ফুটে ওঠে।
রানী যতবারই অন্যমনস্ক হন ততবারই দেখেন তার চাল কেউ পালটে দিয়েছে। অদৃশ্য হাতে। তিনি বশ খেলায় জিতে যান। প্রথমবার মন্ত্রীকে হারিয়ে খুব খুশি হন। ন্যানাকে সহজেই গ্রহণ করে নেন।
মারিয়া এসে প্রবেশ করে। হাতে গোলাপের পাঠানো চিঠি। মারিয়া সবাইকে শুনিয়ে মিথ্যে মিথ্যে বলে, সালমারা পৌঁছে গেছে সীমান্তবাবার আশ্রমে। চোখ টিপে দেয় মহারানীকে।
মারিয়া জানায় এইবার সালমারা বিরাটগড়ে ফিরে আসবে সন্তান ধারণের ওষুধ নিয়ে। বলে নাচতে নাচতে বেরিয়ে যায়।
মহারানী ডাকে, মারিয়া মারিয়া বলে পিছু নেয় তার।
বৃদ্ধ রাজা তন্দ্রা ভেঙ্গে বলে ওঠেন সালমা সালমা। ন্যানা তাকে জোর করে ঊঠিয়ে বসায়। বলে, আপনি উঠুন, আপনি পারবেন।
দৃশ্য- ৫৫
মহারানীর শয়নকক্ষ। দিন।
মহারানীকে ময়না এসে বলে, সালমারা যদি পৌঁছেও যায়। নিজেরা নিজেরাই শিকড় খাবে। আপনাদের জন্য কিছুই আনবে না। আপনি কিছু ব্যবস্থা করুন।
মহারানী বালিশের নিচে থেকে ক্রিস্টাল বলটা বার করে, গোলাপ গোলাপ বলে ডাকে সে খানে ফুটে সমুদ্র তটের তাঁবুগুলি, গোলাপ একটি তাঁবুতে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। তাকে ঘিরে কতগুলি পুরুষ। মহারানী চোখ দিয়ে আগুন বের হতে থাকে, মহারানী ক্রিস্টাল গোলকে প্রচন্ড জোরে একটা ফুঁ দেন।
দৃশ্য- ৫৬
সমুদ্রতট। দিন।
ঝড়ে তাঁবু সব উড়ে চলে যায়। উটেরা খালি গাড়ি নিয়ে দৌড়ায়। পিপেগুলি গড়াতে থাকে। সবাই দিশেহারা হয়ে দৌড়াতে থাকে। গোলাপী ব্লাউজ পরেই দৌড়ায়। সোনার তোরঙ্গ কাগজের ঠোঙার মত সমুদ্রতীরে উড়ে বেড়ায়। স্বর্ণমুদ্রা সব ছিটিয়ে পড়তে থাকে। শূন্য পায়রার খাঁচা আছড়ে পড়ে সমুদ্রে।
প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। সকলেই সাঁতরাতে সাঁতরাতে ডুবে যায়।
সমুদ্রতীর দিয়ে ইউনিকর্ণ দেবতাকে চলে যেতে দেখা যায়।
দৃশ্য- ৫৭
পার্বত্য উপত্যাকা। দিন।
ঘোড়া নিয়ে সালমা ও রুমকি পাহাড়ি নদী পেরিয়ে। গাছে ঘোড়া বেঁধে রেখে পাহাড়ে উঠতে থাকে।
মন্তাজ দৃশ্যে
তারা পাহাড় বেয়ে বেয়ে ওঠে। অন্ধকার গুহার মধ্যে দিয়ে দুই জনে হাতড়ে হাতড়ে চলে।
গাছে ঝোলানো এক মস্ত অজগর দেখে রুমকি ভয় পেয়ে যায়।
সালমা বলে সীমান্তবাবা তাকে বেঁধে রেখে গেছে।
দুজনে তার সামনে দিয়ে চলে যায়।
অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করে অবশেষে তারা পাহাড়ের ওপরে সীমান্ত বাবার আশ্রমে এসে পৌঁছায়।
দৃশ্য- ৫৮
সীমান্তবাবার আশ্রম। দিন।
সীমান্তবাবা সালমাকে দেখে খুব খুশি হন।
পর্ণকুটিরে রাখা এক বনসাই থেকে এক ইঞ্চি শিকড় কেটে সালমার হাতে দেন। তিনি বলেন এটা বেটে পায়েসে মিশিয়ে খেতে হবে। যে যে নারী এই পায়েস খাবে তাদেরই পুত্র সন্তান হবে। কিন্তু একটাই শর্ত। শিকড় কাটার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এই শিকড় না খেলে তার গুণ নষ্ট হয়ে যাবে।
রুমকি ভয় পায়। তিন দিনের পথ একদিনে পেরোনো কীভাবে সম্ভব!
সালমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
।। বিশ্রাম।।
দৃশ্য- ৫৯
পাহাড়ের পাদদেশ। দিন।
ড্রাগন রাজাকে শোয়ানো হয়েছে একটা বরফের চাঁই-এর পরে; তার চামড়া ফেটে সবুজ রক্ত বেরোচ্ছে। জোরে জোরে তার দীর্ঘশ্বাস পড়ছে।
তিনজন বৃদ্ধ ড্রাগন ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের মত ফাঁকা জাল দেওয়া বিশাল সাইজের তিনটি পাখা দিয়ে তাকে বাতাস করছে আর হাঁফাচ্ছে।
একজন বৃদ্ধের সবুজ গিরগিটির চামড়া ফেটে সবুজ রক্ত বেরোতে শুরু করে।
অন্য দুজন পাহাড় থেকে একটা বরফের চাঁই এনে তাকেও শুইয়ে দেয়।
দুইজনে অনেক পরিশ্রম করে বরফের চাঁই-এর উপর শোয়ানো দুই জনকে হাওয়া করতে থাকে।
তারা আলোচনা করে তাদের অবিলম্বে উচিত পাহাড়ের উঁচুতে কোন হিমবাহতে গিয়ে থাকা। যে কটা দিন আর বাঁচবে যেন শান্তিতে বাঁচতে পারে।
দৃশ্য- ৬০
রাজপ্রাসাদের অতিথিশালার স্নানাগার। দিন।
নয়জন গণিকা স্নানরতা। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রাজ্য নিয়ে। নতুন রাজবৈদ্য ন্যানা আসার পর তাদের প্রিয় মহামন্ত্রী সর্বক্ষণ তার সঙ্গে আঠার মত লেগে রয়েছে। লক্ষণ সুবিধার নয়।
একজন বলে একদিনের চিকিৎসায় বৃদ্ধ রাজা যখন উঠে বসছে তখন আর সোমত্থ মহামন্ত্রীর দোষ কোথায়।
একজন বলে ন্যানা বুঝি কামাখ্যা থেকে পাশ দিয়ে এসেছে। এবার সব পুরুষের মাথা খাবে।
এমনিতেই গণিকাদের এখন বাজার মন্দ। মহামন্ত্রী ছাড়া অন্য সব মন্ত্রী তো পালিয়েছে। সেনাপতি পালিয়েছে। দ্বাররক্ষী, সেনাবাহিনী, বিদুষক, গণৎকার সবাই তো পালিয়েছে। এই পোড়া দেশে আর তাদের ব্যাবসাটার আছে কী?
তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। মারামারি করে। একজন অন্যজনের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদে। পাথরের মত বসে থাকে মানুষের অপেক্ষায়। (ইমেজ- daughters of Avignon- Picasso)
দৃশ্য- ৬১
রাজপ্রাসাদের পিছনের বাগান। দিন।
সবুজ ঘাসের উপর মারিয়া উবুড় হয়ে শুয়ে কথা বলছে তার পোষা পায়রাদের সঙ্গে।
তারা সব একসঙ্গে ফিরে এসেছে গোলাপের কাছ থেকে। কিন্তু কোন চিঠি নেই তাদের পায়ে। নিশ্চিত অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে সবার। কথা বলে পায়রার সঙ্গে।
মারিয়া আনন্দে গড়াগড়ি খায় ঘাসে।
দৃশ্য- ৬২
মহারানীর শয়নকক্ষ। দিন।
ঘর ফাঁকা। চুপি চুপি দরজা খুলে প্রবেশ করে ময়না।
বিছানার কাছে এসে বালিশের তলা থেকে ক্রিস্টাল গোলকটি বের করে ভয়ে ভয়ে।
সেটা সামনে এনে তিনবার মৃদু স্বরে উচ্চারণ করে ছোটরানী সালমার নাম।
ক্রিস্টাল গোলকে কোন বিম্ব ভেসে আসে না।
এবার একটু জোরে জোরে আওড়ায় সালমার নাম। তিনবার।
ক্রিস্টালের গোলকে কিছুই ভেসে ওঠে না।
এবার বেশ জোরে তিন বার বলে, রুমকি রুমকি, রুমিকি।
ক্রিস্টাল বলে কিছুই দেখা যায় না।
ময়না চেঁচিয়ে ওঠে। মরেছে মরেছে। সবাই মরেছে।
দৃশ্য- ৬৩
ষড়ভূজাকৃতি ঘর। দিন।
মারিয়া ও ময়না একই সঙ্গে দুটি পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।
দেখে ঘরে মহারানী নেই কিন্তু একটা পূর্ণাবয়ব সবুজ রঙের ড্রাগনের খোলস সেখানে মেঝেতে পড়ে। দুজনেই সেটা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়। মারিয়া ময়নাকে আদেশ করে কেউ কিছু দেখার আগেই সেটা যেন ময়না বাগানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।
ময়না খুব ভয়ে ভয়ে সেটা টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
দুই জনেই আসলে খুব ভয় পেয়েছে সেটা বোঝা যায়।
দৃশ্য- ৬৪
রাজপ্রাসাদের সভাকক্ষ। দিন।
সিংহাসনে বসে বৃদ্ধ রাজা বারে বারে হাই তোলেন। মহামন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের সিংহাসন সব খালি পড়ে।
তার সামনে বশের ছকে গুটি সাজিয়ে খেলছে মহামন্ত্রী ও রাজবৈদ্য পরমা সুন্দরী ন্যানা।
প্রতিবার মহারাজা হাই তুললে ন্যানা তাকে ধমকায়। কই আপনি আমায় চাল বলে দিচ্ছেন না, আমি খেলব কী করে আপনার ধুরন্ধর মন্ত্রীর সঙ্গে!
রাজা চোখ বড় বড় করে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে চাল বলে দেন।
মহামন্ত্রীর চালে হেরে যায় ন্যানা।
সে রাগ করে মহারাজার উপর, না না দেশের রাজার হেরে যাওয়া ভাল দেখায় না। প্রজারা তার উপর নির্ভর করবে কী করে।
সে আবার গুটি সাজায়। রাজাকে রাগ দেখিয়ে বলে, নিন ঠিক করে চাল বলুন তো , হারাতেই হবে এবার পাজী মন্ত্রীটাকে।
রাজা চোখ রগড়ে বলেন, আচ্ছা দেখি আরেকবার। বলে বলতে থাকেন চাল।
এইসময় সভাকক্ষে পপ ইন করে সাধু সীমান্তবাবা তার দুই হাত ধরে আছে দুই রানী রুমকি ও সালমা।
বৃদ্ধ রাজার সম্বিত ফিরতেই উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সালমাকে।
ন্যানা রাজাকে ভর্ৎসনা করে। এটা রাজদরবার মহারাজ। ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশের জায়গা এটা নয়। সবার আগে মহারাজনের প্রয়োজন সাধুবাবাকে কৃতজ্ঞতা জানানো। সেবা গ্রহণের অনুরোধ করা।
রাজা চোখ মুছতে মুছতে পুতুলের মত ন্যানার আজ্ঞাবহ হয়।
সাধু বলেন, তার পক্ষে তা সম্ভব নয়। সালমার কাছে শিকড় দেওয়া আছে। ভক্ষণের নীতিও সে জানে। খুব শীঘ্রই রানী ও রাজার সমস্ত অভিলাষ পূর্ণ হবে।
এই বলে সাধু উপরে উঠতে উঠতে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ( ইমেজ- The Temptation of Saint Anthony by Salvador Dali )
সবাই হাঁ করে ছাদের দিকে চেয়ে থাকল।
দৃশ্য- ৬৫
বিরাটগড় বাজার। দিন।
দুই বস্ত্র ব্যাবসায়ী আলাপ করছে। গাধার পিঠ থেকে মাল নামাতে নামাতে।
শুনলাম ছোটরানী সালমা নাকি ফিরে এসেছে।
অন্যজন, আগের বার তো তাই শুনেছিলাম। রাতেই এল আবার অন্ধকার থাকতেই বেরিয়ে গেল। রাজপরিবারের ব্যাপার সত্যি মিথ্যে বোঝাই ভার।
শুনেছি দজ্জাল সব সতীন। বাচ্চা পেটে এলেই বিষ খাইয়ে মেরে দেয়। হয়ত ছোট রানী সালমাকেও মেরে কবর দিয়ে দিয়েছে।
তাই হবে। আগেরবার তো রাজা কাড়ি কাড়ি টাকা ঘোষণা করল। এবার তো কিছু শুনতে পেলাম না। হয়ত নিজে হাতে মেরে অসুস্থতার ভান করে শুয়ে আছে।
ধীরে ধীরে আরো লোক সেখানে জড়ো হয়। যোগ দেয় তাদের সঙ্গে আলোচনায়।
শুনেছি রাজবৈদ্যটাকে মেরে তাড়িয়েছে। এসব খুনের খবর গোপন রাখার ছক।
যা বলেছেন। আগের বার তো আদরের ছোটরানী ফিরতেই তোপধ্বনি হল, ভেরী বাজল, বাজী ফাটল এইবার শুনলে কিছু?
এই মৃত নগরীতে আর আছেটা কে? রাজার কর্মচারীরাই ত সব পালিয়েছে। ওসব বাজাবে টাজাবে কে?
দুই ব্যবসায়ী ঠিক করে এই রাজ্যে আর থাকবে না। সবাই পালাচ্ছে। তাদেরও পালাতে হবে। সবাই তাদের কথায় সায় দেয়।
দৃশ্য- ৬৬
রাজপ্রাসাদের ভোজনকক্ষ। দিন।
রাজা রানীদের সঙ্গে খেতে বসেছেন।
ময়না চারটে বাটিতে পায়েস এনে রানীদের পরিবেশন করে।
মহারানী ময়নাকে চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞাসা করেন। ময়না ইশারায় তাকে আস্বস্ত করে তার কথা মতই কাজ হয়েছে।
সবাই চেটে পুটে সেই পায়েস খায়।
মহারাজা খাওয়া শেষ করে পরিতৃপ্তির সঙ্গে রানীদের খাওয়া উপভোগ করেন। (ইমেজ-The 'Last Supper' by Jacopo Bassano (1542) তুলনীয় )
দৃশ্য- ৬৭
গোরস্থান। সন্ধ্যা।
কবরের উপর পা ছড়িয়ে বসে ময়না একবাটি পায়েস খায়।
গাছের আড়াল থেকে দুইজন গণিকা সেটা লক্ষ্য করে।
দৃশ্য- ৬৮
মেঘের রাজ্য। সময় অবাস্তব।
মেঘের মধ্যে পাশাপাশি দুটি সোনার পদ্মফুলে দেবতা জিরো আলোচনা করছেন দেবতা কাঁঠালীর সঙ্গে।
তিন মাথাওয়ালা দেবতা কাঁঠালীর কাজ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গাদা ডিপার্টমেন্ট তাকে সামলাতে হচ্ছে।
দেবতা জিরো তাকে বোঝান এখন মাল্টিটাস্কিং এর যুগ। বিভাগ টিভাগ বলে কিছু নেই। সব কাজই এখন সবাইকে করতে হবে।
দেবতা কাঁঠালী তা মানতে রাজী নন। এই স্বর্গে সোনার যা স্টক তাতে ১৫/১৬ পুরুষ হেসে খেলে চলে যাবে, যতই পদ্ম গলুক। কিন্তু শিল্পী ছাড়া নতুন পদ্ম বানাবে কে? মাল্টিটাস্কিং দিয়ে তো আর শিল্পী হয় না! বানাতে গেল পদ্ম তৈরি হল, পাতকুয়া তখন? তারপর ধরুন, বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হলেই তো হল না- কেমিক্যাল, সিভিল, মেকানিকাল- এই সব লাগবে, আই টিতে হবে না। সেইগুলো যে কেউ হতে পারে?
দেবতা জিরো, আমতা আমতা করেন। শুনেছি তো নিচের দিকে জয়েন্টে নাম থাকলে কলেজে ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ যে কেউ ভর্তি হতে পারে। প্যাঁচা, হনুমান, গরু, গাধা- যে কেউ।
তাই করুন । মর্ত্য থেকে কিছু গাধা-গরু ইম্পোর্ট করার ব্যাবস্থা করুন।
দেবতা জিরো রেগে যান, মুখ সামলে দেবতা কাঁঠালী। গরু-ছাগল আমার ডিপার্টমেন্ট নয়। আমরা শুধু ড্রাগন নিয়েই ডিল করি।
কুল দেবতা জিরো। কুল ডাউন। শুধু হাতে গোনা কয়েক পিস ড্রাগন নিয়ে বসে থাকলে চলবে? মাল্টিটাস্কিং করুন। মাল্টিটাস্কিং।
এই বলে দেবতা কাঁঠালী রণপা করে এক সোনার পদ্ম থেকে অন্য সোনার পদ্মে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যান।
দেবতা জিরো রাগে কাঁপতে থাকেন, দূরে দেবতা কাঁঠালী চলে যেতে থাকে। রাগতে রাগতে দেবতা জিরো’র একেকটি মাথা একেক রঙের হয়ে যায়- ভিবজিয়র মার্কা।
দৃশ্য- ৬৯
রাজপ্রাসাদের আঁতুরঘর। রাত।
পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে মহারানী সোহাগ, মারিয়া, রুমকি ও সালমা ক্রমান্বয়ে সন্তান প্রসব করে।
৯ জন আগে দেখা গণিকাকে দেখা যায় রাজবৈদ্য ন্যানার পরামর্শে দাই-এর ভূমিকা পালন করছে।
সোহাগ বালিশের তলা থেকে ক্রিস্টাল গোলক বার করে তিনবার, বাবা বলে ডাকলে, গোলকের মধ্যে মুমূর্ষু ড্রাগন রাজার ছবি ভেসে ওঠে। সোহাগ তাকে পুত্রলাভের সংবাদ দেয়।