একটা প্রচুর সমস্যায় পড়ে আজ লিখতে বসেছি। এই কলামের পাঠককুলের মতামত চাই (এখানে ঘুরিয়ে ধরে নিলাম যে এই কলামের পাঠক আছে)।
সমস্যাটার কথা বলি। এতদিনে হয়ত বুঝে গেছেন যে এই কলাম কোনো সময়ক্রম ধরে এগচ্ছে না, যখন যেমন মনে হচ্ছে সেই অনুযায়ী সময়ের আগুপিছু হয়ে যাচ্ছে। লেখাটা যবে শুরু করেছিলাম সেখান থেকে প্রায় তিন বছর পেরিয়ে এসেছি। এই তিন বছরে একটা প্রেমে পড়েছি এবং তার থেকে উঠেছি। সাধারণত জীবনের নানা ওঠাপড়া গায়ে লাগে না কিন্তু এইবার কেন জানি না গায়ের ব্যথা মরছে না। প্রেম থেকে ওঠার পর প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে কিন্তু এখনো অন্যমনস্ক হয়ে পা ফেললে একটা ছোট্ট কাঁটা কোথাও খোঁচা মারছে। কে জানে, বোধ হয় বয়স বাড়ার ফল। সবথেকে মজার ব্যপার হল, এইটা ছিল আমার জীবনের সবথেকে স্বল্পস্থায়ী প্রেম। ভালভাবে বুঝে ওঠার আগেই দেখি পাখি ফুড়ুত, খালি খাঁচা তারে দোল খাচ্ছে। গুলজার তাঁর একটা ছোটগল্পের বই রাখীকে উৎসর্গ করেছিলেন এই ভাবে, “আমার জীবনের সবথেকে দীর্ঘস্থায়ী ছোটগল্পের উদ্দেশ্যে”। মনে হচ্ছে এটাও আমার জীবনের দীর্ঘস্থায়ী ছোটগল্প হতে চলেছে। এই দেড় বছরে সম্ভবত এমন এমন একটাও দিন যায় নি, যেদিন ওর কথা মনে পড়ে নি। ধরা যাক এই ‘ও’টির নাম সুখ। সংক্ষেপে বলতে পারি, গত দেড় বছরে প্রায় প্রতিটি দিনই আমার সুখে কেটেছে।
‘ও’র সাথে আলাপ ফেসবুকে। একটি ফেসবুক ক্যুইর গ্রুপে আমরা দুজনেই আছি। সেই সুত্রেই আলাপ। প্রথমে গ্রুপের মধ্যেই নিতান্ত মামুলি কথা চালাচালি, তারপর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো ও বন্ধুত্ব স্বীকার, তারপর চ্যাট, স্কাইপ ও ফোন। মানে স্টেপ বাই স্টেপ যা যা হয় আর কি। একেবারে সাধারণ গপ্পো। এর মধ্যে অসাধারণত্ব এইটুকুই যে আমি এই বয়সে এসে আন্তর্জালিক প্রেমে পড়ব সেটা ভাবি নি। প্রেমের বয়স হয় না জানি, কিন্তু ইন্টারনেটে আলাপের সূত্রে না দেখে না শুনে প্রেমে পড়ার অবশ্যই বয়স হয়। অন্তত হওয়াটাই উচিত। কিন্তু জীবনে কি সবকিছু ঔচিত্য মেনে হয়? হয় না, এবং সেই হয় না বলেই আমাদের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের গণ্ডী পেরিয়ে বেশ একটা প্রায়-প্রেম প্রায়-প্রেম দিকে এগোতে শুরু করল।
কিন্তু আমি বসে রয়েছি বস্টনে আর সে ছোঁড়ার বাস হস্তিনাপুরে।
দূরত্বটা শুধু স্পেসেই নয়, টাইমেও বিদ্যমান। শুধু ভৌগোলিক দূরত্বই নয়, আমাদের বয়সের পার্থক্য প্রায় বারো বছরের। আমি বড় (অথবা বুড়ো), তিনি পঁচিশের যুবক। মাঝে প্রায় প্রজন্মান্তর ব্যবধান। এবং আমার সুগার ড্যাডি হওয়ার কোন ইচ্ছা আপাতত নেই।
তবে হে পথিক, কেন এ পথ হারানো? কেন মিছে ঘুরে মরা? কেন বুক পেতে নেওয়া এ অনল বাণ?
প্রেমের যদি কার্য-কারণ জানা যেত, তাহলে এই পৃথিবীর অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। জানা যেত কেন শত অপমানের পরেও দ্রৌপদী ভালবেসে গেলেন অর্জুনকে, কেন লবকুশের হাত ধরে সীতা ফিরে এলেন রামের কাছে, কেনই বা কৃষ্ণের প্রেমে পড়ে নারীরূপ গ্রহণ করলেন বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন আর রাধাভাবে ভাবিত হয়ে ঘর ছাড়লেন শ্রীচৈতন্য।
কার্য-কারণ যখন নিশ্চিতভাবে জানার কোনও উপায় নেই, তখন কিছু অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়াই একমাত্র উপায়। আমার ধারণা, এই ছোঁড়ার ম্যাচিওরিটিই আমাকে এর প্রেমে ডুবাইলি-ভাসাইলি করেছিল। ছেলেটি রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ, সমাজ সচেতন এবং আমাদের ভাবনাচিন্তায় যথেষ্ট মিল রয়েছে। ক্লাসের বইয়ের বাইরেও যথেষ্ট পড়াশুনো করেছে। সবথেকে স্বস্তিদায়ক ব্যাপার হল, এই সম্পর্কের প্রবাবিলিস্টিক অসম্ভাব্যতাটা বোঝে এবং অযথা কোনও স্বপ্নবাস্তব তৈরি করে না।
আর কি সাঙ্ঘাতিক আশর্যের কথা, ছেলেটি দিল্লী নিবাসী জাঠ। আমাদের সযত্নে লালিত স্টিরিওটাইপিং-এর বিপ্রতীপে ওর অবস্থান। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, উস্কোখুস্কো চুল, কালো ফ্রেমের চশমা, কুর্তা পাজামা সহযোগে খুবই মার্জিত চেহারা। যাকে বলে বাড়ি নিয়ে গিয়ে মায়ের সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়ার মত রূপ। জে এন ইঊ-র ছাত্র।
আমাদের কথাবার্তা ফেসবুক ছেড়ে ধীরে ধীরে ফোনে পৌঁছল। আমার ফোন আমেরিকার টাইমে সন্ধে সাতটা থেকে সকাল ছটা অবধি ফ্রি, ইন্টারন্যাশনাল কল সমেত। একেবারে নিখাদ বন্দোবস্ত। ল্যাব থেকে ফিরে ঠান্ডা হয়ে (অথবা গরম হয়ে), ডিনার হাতে করে ফোন নিয়ে কথা শুরু, কথার শেষ বিছানায় ঘুম পাড়ানী মাসি-পিসির আগমনে। আবার সকালে ছটার আগে উঠে একটু কথা বলে নিয়ে দিনের শুভারম্ভ।
এই দৈনন্দিন রুটিনে কিছুদিনের মধ্যেই একটা সমস্যা দেখা দিল। রাত্রে সাকুল্যে তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমোনোর ফলে আমি ল্যাব-এ গিয়ে ঢুলতে শুরু করলাম। একদিন তো একেবারে অপ্রস্তুতের একশেষ। একজনের সাথে একটি বিজ্ঞানের সমস্যা নিয়ে কথা বলছি। তিনি বেশ বিস্তারিতভাবে বোর্ডে ছবি টবি এঁকে বুঝিয়ে যখন পেছন ফিরলেন, দেখলেন আমি ঘুমোচ্ছি। ভদ্রলোক তো ভীষন লজ্জিত টজ্জিত হয়ে আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন। আর আমার মনে হল, এর থেকে চাট্টি গালি দিলে বোধহয় ভালো ছিল। আরেকদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমার স্টেশন হার্ভার্ড স্কোয়ার পেরিয়ে পরের স্টেশনে গিয়ে নামলাম। বুঝলাম কিছু একটা করা দরকার। অন্যদিকে ওরও সকালে ক্লাস মিস হয়ে যাচ্ছে। আমরা ঠিক করলাম, কথা বলা কমাতে হবে। বুঝলাম, ফোন কল ফ্রী হতে পারে, দিনের ঘন্টাগুলো ফ্রী নয়।
কিন্তু কমাবো ভাবলেই কি আর কমানো যায়? শুধু ভাবলেই যদি কাজ হত তাহলে গ্রীনহাউস গ্যাস আর জিনিষের দাম ক-অ-বে কমে যেত। আমরা ভাবি, প্ল্যান করি, সময়সীমা নির্দিষ্ট করি আর তার পর সব বিধিনিষেধ কেমন যেন আদরের নৌকা হয়ে হৃদ্সাগরে ভেসে যায়। পরের দিন আবার ওর ক্লাস মিস হয়ে যায়, আরো একবার আমি ল্যাবে বসে কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি।
এই সমস্যার কথা একদিন গণেশকে বলায় আমি ওর কাছে তুমুল বকুনি খেলাম। আমি বড় কিন্তু আমার কোনও দায়িত্বজ্ঞান নেই, আমি কচি ছেলেটার মাথা খাচ্ছি, নিজের তো ইহকাল এমনিতেই ঝরঝরে ওই ছেলেটারও পড়াশুনোর বারোটা বাজাচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি। সব শেষে এক্কেবারে ইয়শ্রাজ ফিলিমের কায়দায় বলল, আমি যদি সত্যিই ‘ও’কে ভালোবাসি, তবে ওর পড়াশোনার দিকে আমার খেয়াল রাখা উচিত। গণেশের এই উপদেশ মাথায় রেখে আমিও কথা বলা কমিয়ে দিলাম এবং ওর পড়াশোনার দিকে ভয়ঙ্করভাবে খেয়াল রাখা শুরু করলাম। এই খেয়াল রাখার ফল যে কী মারাত্মক হয়েছিল সে গল্প পরে কখনো করা যাবে। তবে সেই গল্পের নীতিকথাটুকু এখানে বলে রাখি। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি যেই হোক না কেন (এবং যত বয়সেরই পার্থক্য থাক না কেন), সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং নিজের ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা তার আছে। তার ওপর গার্জেনগিরি ফলানোর কোনও প্রয়োজন নেই। (বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই নীতিকথা সার্বজনীন এবং সর্বকালীন, এমন কোনও প্রমাণ আমার কাছে নেই।)
সমস্যা এটা নয় যে আমি ওকে ভালোবেসেছিলাম অথবা কালক্রমে আমাদের ভালবাসা কম পড়ে গেল। সমস্যা অন্য জায়গায়। আসছি সে কথায়।
সুখের সঙ্গে সম্প্রতি আবার দেখা হল। ওর সাথে যোগাযোগ এই দেড় বছরে কখনওই বন্ধ হয় নি। কিছু না কিছুতে মাসে একবার ফোনাফুনি হয়েই যেত। কখনো আনন্দের মুহূর্তে অথবা কখনো প্রাণে দুঃখ হলে আমরা একে অন্যকে ফোন করে নিতাম। তাছাড়া ফেসবুক তো আছেই। সত্যি কথা বলতে কি, যেহেতু আমাদের মধ্যে বেশ শান্তিপূর্ণ ভাবে টা টা বাই বাই হয়েছিল তাই সম্পর্কে তিক্ততার কোনও প্রশ্নই ওঠে নি। আর সে কারণেই হয়ত একটা মধুর রস কোথাও রয়েই গেছে। তবে একটা বিষয় আমরা দুজনেই সবসময় আলোচনা থেকে এড়িয়ে চলেছি, সেটা হল প্রেম ভালবাসা। বিস্বশ্তসূত্রে জানতে পেরেছিলাম, সে আবার প্রেম করছে এবং এইবার স্থান এবং কাল দুটোই অনেক কাছাকাছির বেছেছে। তবুও কোথাও যেন মনে হত, হয়ত কোনওদিন ওর সেই ঘরে ফেরার কথা মনে পড়বে যে ঘর শেষ পর্যন্ত আমাদের আর বানিয়ে ওঠা হয় নি।
অনেক সময় নিজেকেই প্রশ্ন করি, এ কি সত্যিই ভালোবাসা না কি যুদ্ধে হেরে যাওয়ার গ্লানি? সব ভালোবাসাই কি অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই?
এবার যখন দেখা হল, ঠিক এই প্রশ্নটাই ও আমাকে করল, “পেয়ার মে হক জমানা জরুরী হ্যায় ক্যায়া?”
কোনো এক বৃষ্টিভেজা পূর্ণিমার রাতে, আমরা দেখা করলাম দিল্লীর রাস্তায়। তারপর ঘুরে বেড়ালাম শহরের এদিকে ওদিকে, ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ফেলে আসা ঐ অল্প কয়েকদিনের এলোমেলো স্মৃতিকটাকে। তারপর একথা সে কথার পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ কি এসেছে জীবনে? প্রচণ্ডভাবে চাইছিলাম যে ও না বলুক, কিন্তু দেখা গেল বিস্বশ্তসূত্রের খবরটাই ঠিক। কী আর করা, বুক ভরা আশা ধুকপুক করেই নিভে গেল।
ও বোধ হয় আমার মুখ দেখে ব্যপারটা বুঝতে পারল। আর তারপরেই ছুঁড়ে দিল ওই অমোঘ প্রশ্নটা- ভালোবাসায় অধিকার অর্জন করাটা কি খুব জরুরি?
আমি জানি না। আমি নিজেও এর উত্তর খুঁজে চলেছি। এই যে কাউকে আমার, এবং শুধুমাত্র আমার করে পাওয়ার একটা ইচ্ছা, এটা কতটা যৌক্তিক আর কতটা সামাজিক নির্মাণ? প্রেম কি ভাগ করে নেওয়া যায়?
সুখ বলল, তোমার কি মনে হয় যে আমি তোমাকে ভালবাসি না? অথবা কম ভালবাসি? যখন আমার বন্ধু পথ দুর্ঘটনায় মারা গেছে, রাত তিনটের সময় আমার অন্য কাউকে ফোন করার কথা মনে পড়ে নি, আমি তোমাকেই ফোন করেছি। আমার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হয়েছে, আমি তোমাকে সব্বার আগে জানিয়েছি। এগুলো কি ভালোবাসা নয়?
আমি একটু অসহিষ্ণু হয়েই বললাম, তুমি খুব ভালোই বুঝতে পারছ যে এগুলো সব মিলিয়েও আমরা সেখানে পৌঁছতে পারছি না, যে ভালোবাসার কথা আমি বলছি। তোমাকে আমি আমার করে পাচ্ছি না।
সুখ হাসল। তারপর বলল, ঠিক সেই কথাটাই তো আমি বলছি স্যরজী। ‘আমার করে পাওয়া’ মানেটা কি? মানেটা হল অধিকার। যতক্ষন না পূর্ণ অধিকার পাচ্ছি, ততক্ষণ মনে হয় যেন পাওয়াটা ঠিক পুরো হল না। আর পূর্ণ অধিকার মানেটা কি? কিসের অধিকার? একজনের দেহের ওপর অন্যজনের অধিকার? একটা পিতৃতান্ত্রিক হেটেরোনর্মাটিভ সামাজিক কাঠামো, সেইটাকে কপি পেস্ট করে সমস্ত সম্পর্কের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অধিকার?
-এর মধ্যে পিতৃতন্ত্র কোথা থেকে এল?
-কোথা থেকে এল, সেটা যে তুমি বুঝবে না এমন তো নয়।
-তার মানে তুমি বলতে চাইছো, কাউকে নিজের করে চাওয়াটা ভুল?
-নিজের করে চাওয়া আর একমাত্র, শুধুমাত্র আমার করে চাওয়া, এই দুটোর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই?একজন মানুষ কি একই সময়ে দুজন বা তার থেকে বেশি মানুষকে ভালোবাসতে পারে না?
-দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয়।
-যার হয় তার হয়, আমার হয় না।
আমার হঠাৎ করে শেষের কবিতার দাড়িওয়ালা লেখককে বড় বেশি আধুনিক, বড় বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হল।
দিল্লী থেকে ফিরে এসেছি অনেকদিন হয়ে গেল। এর মধ্যে আমেরিকায় গে ম্যারেজ লিগাল হয়ে গেছে। সামাজিক সাম্যের লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ। কিন্তু অনেকেই বলছেন যে এটা একটা আপাত সাম্য, হেটেরোনর্মাটিভ সমাজের ছুঁড়ে দেওয়া রুটির টুকরো। অনেকে মনে করছেন, সম্পর্কের বহু রঙ কে অস্বীকার করে এটাও একধরনের চাপিয়ে দেওয়া কপি পেস্ট। আমেরিকার সুপ্রীমকোর্টের রায়ের শেষ অনুচ্ছেদ পড়লে তাদের বক্তব্যকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না। ওই রায়ে বলা হচ্ছে, “No union is more profound than marriage, for it embodies the highest ideals of love, fidelity, devotion, sacrifice, and family. In forming a marital union, two people become something greater than once they were.” অর্থাৎ, বিবাহের থেকে গভীর আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন, কি করে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি ঠিক করে দিতে পারে কোন সম্পর্কটা প্রোফাউন্ড আর কোনটা নয়? কোন নিক্তিতে মাপা যেতে পারে, সুখের ভালবাসা কার জন্য বেশী গভীর, আমার জন্য না কি তার নতুন প্রেমিকের জন্য? অবয়বহীন ভালবাসার কি গভীরতা মাপা যায়? যারা ভাবতে পারেন “বিয়ের প্রয়োজন যার হয় তার হয়, আমার হয় না”, তাঁদের সম্পর্কের গভীরতা মাপতে যাওয়ার আমরা কে?
তবুও, এই রায়ে আমি খুশি। আমার এই কলামের একটা প্রথম দিকের লেখায় লিখেছিলাম, “যারা ভাবছেন, বিয়ের অধিকার না পাওয়া গেল তো কী এসে গেল, ইকুয়াল ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ তো দেওয়াই হচ্ছে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট সওয়াল। ধরুন কোন স্কুলে বলা হল, সবাইকে সমান ভাবে পড়ান হবে, একভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, খাতা দেখা হবে, শুধু খাওয়ার জলের কলটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হবে, মেনে নেবেন? জল একই থাকবে, শুধু কলটাকে সবুজ রঙ করে দেওয়া হবে?” আমি খুশি, কেন না এতদিন বাদে অন্ততঃ অধিকারটুকু পাওয়া গেল।
যে সমস্যাটার কথা বলে লেখা শুরু করেছিলাম, সেই প্রশ্নটা রেখে শেষ করব। একজন মানুষ কি সত্যিই একসাথে একাধিক ব্যাক্তিকে ভালোবাসতে পারে? না কি, সেটা শুধুই সাময়িক সান্ত্বনা?